তবু_সুর_ফিরে_আসে ৪১ পর্ব

0
176

#তবু_সুর_ফিরে_আসে

৪১ পর্ব

দোতলা থেকে পারুল নিচে নেমে দেখে আনারের মা গোসল করে । সে নিজের কাপড় চোপড় যখন ব্যাগে ঢুকাচ্ছে তখনই বীথি ফোন দিলো। দুপুরে যখন হেরা ওর ভাইয়ের মেয়েকে বাড়িতে পাঠাতে বলেছে তখনই সে বীথিকে ফোন দিয়েছিল । সে এই বাসায় আসার পর থেকে ছুটিতে যাওয়ার আগে পরে সব সময় বীথিকে জানিয়েই যায় আসে । এটা একটা অলিখিত নিয়ম‌ই । বীথি তাকে বলল , মেয়েটাকে বাড়িতে পাঠানোর দরকার নেই আমার পরিচিত একজনের বাসায় দিব নিয়ে আয় আমার বাসায় ।
পারুল খুশি হয়ে গেল, তাইলে তো ভালোই হয় খালাম্মা ।
আর একটা কথা শোন পারুল , এটা হেরাকে বা আনারের মা কে বলার দরকার নেই । আনারের মা আশেপাশে নেই তো ?
না খালাম্মা আনারের মা গোসল করে আর আম্মার কাছ থেইকা বিদায় নিয়া নিসি, আম্মা গেছে স্টোর রুমে আমার সাথে আর দেখা হ‌ইতো না ।‌
হেরা স্টোর রুমে কি করে আপার জিনিসপত্র , শাড়ি এসব ধরে নাকি ?
খালাম্মা, কি করে না করে জানি না আলমারি থেইকা জিনিসপত্র নামায় মনে হয় ।
সঙ্গে কে ?
কেউ না আনারের মা রে যাইতে ক‌ইছে কিন্তু হে তো গোসলে, পারুল বলল।
তখন‌ই বীথি পারুল কে বলল ওর ভাস্তি পুতুল কে দিয়ে স্টোর রুমের দরজা টা আটকে দিয়ে আসতে।
বীথির খুব অনুগত পারুল। আজকেও বেতিক্রম করেনি।
পারুল শুধু একবার বলল, খালাম্মা আম্মার ক্ষতি হ‌ইতো না তো ?
তোকে এত কিছু ভাবতে কেউ বলেছে, পারুল যা বলছি কর।
আম্মার কাছে মোবাইল থাকলে তো সঙ্গে সঙ্গে ফোন দিব ।
শোন তোদের ভেতরের স্টোর রুমটাতে জীবনেও নেটওয়ার্ক কাজ করে না ফোন থাকলেও কোন লাভ নাই। আর ফোন দিলে দিবে ।
তোকে যা করতে বলেছি সেটা কর যা।
শোন তুই করবি না ঐ মেয়েকে দিয়ে করাবি খুব সাবধানে।
ঠিক আছে খালাম্মা।
হেরা ছবি গুলো যখন আলমারির সামনে দাঁড়িয়ে দেখছিল সে খেয়াল করেনি পিছনে কেউ খুব সাবধানে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে শুধু একবার খুট করে একটা শব্দ হয়েছে সে ভেবেছে আনারের মা এসেছে।
পিছনে না ফিরেই হেরা বলে উঠলো , আনারের মা নিশালের ছোটবেলার ছবি গুলো কোথায় ?
আনারের মায়ের কোন সারা শব্দ না পেয়ে হেরা পিছন ফিরে তাকালো। দরজা বন্ধ দেখে একটু অবাক হলো! দরজা কি সে বন্ধ করেছিল মনে করার চেষ্টা করলো।
হেরা ছবি গুলো গুছিয়ে নিয়ে যখন বের হতে নিলো দেখে দরজা বাহির থেকে আটকানো। কি আশ্চর্য ! বাহিরে কে আছো দরজা খোলো? হেরা দরজা ধাক্কা দিলো।
কিন্তু কারো কোন সাড়াশব্দ পাচ্ছে না সে ।
আনারের মা ? আনারের মা !
হেরা দুই তিন মিনিট দাঁড়িয়ে র‌ইলো। চিন্তা করছে সে কার কাজ হবে এটা ? কেউ কি ভুল করে দরজা লাগিয়ে দিল নাকি ? পারুল গিয়ে কি আনারের মাকে বলেনি এখানে আসার কথা। হেরা নিজের ভেতরে অস্থিরতা অনুভব করা শুরু করেছে। সে জানে এই অস্থিরতা একটা সময় তার হৃদপিন্ডটাকে খামচে ধরবে আর তার খারাপ লাগা শুরু হবে শ্বাস কষ্ট শুরু হবে। না সে আজ কোন ভাবেই অস্থির হবে না । ভয় পাওয়া যাবে না আজ। কোন সমস্যা নেই একটু পর আনারের মা ঠিকই দরজা খুলে ভেতরে ঢুকবে ভয়ের কিছু নেই। হেরা নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। ফারহান ভাইয়া বলেছিল এরকম পরিস্থিতিতে পড়লে মনোযোগ অন্য দিকে সরিয়ে রাখতে। হেরা আলমারি খুলে সব ছবি বের করলো ।‌ সে ছবি দেখাতে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু কোন লাভ হলো না , সে কোন ভাবেই অস্থিরতা কমাতে পারছে না । ধীরে ধীরে হেরা ঘামতে শুরু করলো। এত গরম কোন বাতাস নেই এই ঘরে ওর দম বন্ধ ভাবটা শুরু হয়ে গেছে।‌ এক পর্যায়ে হেরা চিৎকার করা শুরু করলো।
আনারের মা ? কোথায় তুমি তাড়াতাড়ি এসো আমার খারাপ লাগছে।
দরজা খোলো । কে আছো ? এলিন, নাহিন তোমরা কি এসেছো ?
হেরা চিৎকার করেই যাচ্ছে, দরজা ধাক্কা দিচ্ছে কিন্তু ওর আওয়াজ স্টোর রুমের বাহিরে আসছে না। হেরা ঘেমে ভিজে গেল। মাটিতে বসে পড়লো একটা সময়। এক মনে দোয়া ইউনুস পড়া শুরু করলো। নানাভাই সব সময় বিপদে পড়লে এটা পড়তে বলতো।
হেরা নিজের পেটে হাতটা স্পর্শ করলো। মনে পড়ে গেল গতকাল রাতেই ন‌ওশাদ ওর পেটে হাত রেখে খুব আবেগপ্রবণ হয়ে গিয়েছিল। ওর পেটে হাত রেখে বলল,জানো হেরা নিশাল যখন পেটে ছিল আমি গীতিকে সময় দিতে পারিনি । তখন প্রতিটা বিজনেস দাঁড় করানোর জন্য আমি রাত দিন খেটে যাচ্ছি। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ফ্যাক্টরিতে পড়ে থাকতাম। বিকালে অফিসে ঢুকে অফিসিয়াল কাজে ব্যস্ত হয়ে যেতাম। বাসায় ফিরতাম অনেক রাতে। চলে যেতাম দেশের বাহিরে সাত দিন দশ দিনের জন্য। গীতি কখনো একা কখনও ওর মায়ের সঙ্গে ডাক্তারের কাছে যেতো। রাতে ক্লান্ত আমি ঘুমিয়ে যেতাম গীতি কত রাত নির্ঘুম পার করতো আমি ওকে একটুও সঙ্গ দিতে পারতাম না। কিন্তু আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি আমার এই সন্তানের প্রতিটি মুহূর্ত আমি তোমার পাশে থেকে অনুভব করবো। ও তোমার ভেতরে একটু একটু করে বড় হবে আমি ওকে স্পর্শ করে সেটা হৃদয় দিয়ে অনুভব করব। আমি তোমাদের রেখে এই মুহূর্তে দেশের বাহিরে যাব না যতটা সম্ভব তোমাদের দুজনের সঙ্গে থাকব কথা দিচ্ছি। তোমার সব কষ্ট, সব যন্ত্রণা আমি ভাগ নিতে না পারি তোমার পাশে থেকে সাহস তো দিতে পারব কি বলো হেরা। তুমি শুধু ডাকবে আমাকে যে কোন সমস্যা ফীল করলেই। আমি ঘুমাচ্ছি নাকি ব্যস্ত কিছু চিন্তা করবে না। মনে থাকবে।
হেরা ন‌ওশাদের হাত ধরে বলেছে , মনে থাকবে।
আপনি কোথায় নিশালের পাপা তাড়াতাড়ি আসেন আমরা খুব ভয় পাচ্ছি।
হেরা দরজায় দুই হাত দিয়ে জোরে জোরে বাড়ি দিচ্ছে। নিজের সর্ব শক্তি দিয়ে চিৎকার দিতেই সেদিনের মত তলপেট চিনচিন করা শুরু করলো এবং আজ যেন চিনচিন টা বেশি করছে।
হেরা আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না ওর মাথা ঘুরাচ্ছে। চোখে ঝাপসা লাগছে। মস্তিষ্কে অক্সিজেনের সরবরাহ কমে গেলে যা হয় তাই হচ্ছে। পানি তৃষ্ণায় বুক ফেটে যাচ্ছে ওর।
নিশালের পাপা ,নিশাল নিশাল কোথায় তোমরা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে এসো প্লিজ।
হেরার সেই আত্মচিৎকার‌ ছোট্ট স্টোর রুমের দেয়ালের ভেতরেই আটকে আছে ।
চিৎকার করতে করতে একটা সময় হেরা অজ্ঞান হয়ে গেল।

ন‌ওশাদের খুব ইচ্ছে করছে আজ হেরাকে নিয়ে বাহিরে খেতে যেতে। সন্ধ্যা টা হেরার সঙ্গে ওর পছন্দের রেস্টুরেন্টে বসে কাটাবে। রুফটপ রেস্টুরেন্ট গুলো হেরার খুব ভালো লাগে। এই মুহূর্তে হেরা যত আনন্দে থাকবে তত বেশি সুস্থ থাকবে । বেবিও হেলদী হবে। এখন হেরাকে সব সময় আনন্দে রাখতে হবে ওর। অফিস তাড়াতাড়ি শেষ করে ন‌ওশাদ যখন বাসায় ফিরেছে তখন মাগরিবের আযান দিয়ে দিয়েছে। সে বাসার কাছাকাছি মসজিদে ঢুকে নামাজ পড়লো । সেখানে প্রতিবেশী ইমতিয়াজ সাহেবের বাবার সঙ্গে দেখা। আংকেলের সঙ্গে মসজিদে আর কবরস্থানে গেলে দেখা হয় গীতির কবরের কাছাকাছি উনার স্ত্রীর কবর। প্রতি শুক্রবার জুম্মার পর ন‌ওশাদ গীতির কবর জিয়ারত করতে গেলে আংকেলের সঙ্গে দেখা হয়।
কেমন আছো ন‌ওশাদ ?
ভালো আছি আংকেল । আপনার শরীর কেমন ?
বয়সের তুলনায় বলব অনেক ভালো রেখেছেন আল্লাহ আমাকে বুঝলে।
তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ আংকেল ।
সেটাই । তোমার আব্বার শরীর কেমন ইদানিং বারান্দায় দেখি না যে।
তাই বারান্দায় বসে না ! শরীর ভালো কিন্তু কিছুই মনে থাকে না।
এটাই বয়সের কষ্ট বুঝলে।
জ্বি আংকেল।
বৌমা কে নিয়ে বাসায় এসো ন‌ওশাদ ।
আসব আংকেল। চলেন আপনাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে যাই।
না আমি এসময় একটু হাঁটাহাঁটি করি ।
ঠিক আছে আংকেল ভালো থাকবেন।
ন‌ওশাদ বাসায় ঢুকেই দেখে এলিন, নাহিন ও গাড়ি থেকে নামছে।
কোথায় গিয়েছিলে তোমরা ?
ভাইয়া একটু শপিং এ , নাহিন বলল।
তোমাদের বৌমনিকে নিলে না সঙ্গে ?
এলিন বলল, না ভাইয়া ওর শরীর ভালো না তাই ওকে ইচ্ছে করেই নিলাম না।
মাঝেমাঝে নিয়ে যাবে তাহলে মন, শরীর দুটোই ভালো থাকবে ওর। শপিং করলে মেয়েদের মন এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।
ভাইয়া বৌমনি তো শপিং করতেই যায় না ও আমাদের মতো না । ও আপনার টাকা সেইভ করে বলেই নাহিন হেসে দিলো।
ন‌ওশাদ ও হাসছে তাহলে তো আমি ভাগ্যবান হাজব্যান্ড কারণ আমার ব‌উ এর শপিং ভালো লাগে না।
ন‌ওশাদ ওদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে ড্রয়িং রুমে এসে ঢুকলো। আনারের মা কে দেখে প্রশ্ন করলো, তোমার আম্মা কোথায় ?
আম্মা নিজের ঘরে ঘুমায় বলেই আনারের মা জিব কাটলো । হায় হায় মাগরিবের আজানের সময় নামাজ পড়ার জন্য ডাকতে বলছিল ,ভুইলা গেছি আমি ! দৌড় দেই।
দাঁড়াও আনারের মা এখন মাগরিবের নামাজের সময় পার হয়ে গেছে, আর ডাকতে হবে না আমিই যাচ্ছি। তুমি চা দাও আমাকে ।
জ্বি স্যার।
ন‌ওশাদ নিজের ঘরে এসে ঢুকলো। ঘর পুরো অন্ধকার । সে বেড সাইড ল্যাম্প টা জ্বালিয়ে অবাক হলো হেরা বিছানায় নেই ! ওয়াসরুমে নাকি। অন্ধকারের মধ্যে ওয়াসরুমে গেল ! ন‌ওশাদ শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে কি মনে করে ওয়াসরুমে উকি দিয়ে দেখে হেরা ওয়াসরুমে নেই ! কিন্তু মোবাইল তো বিছানার পাশে চার্জে দেয়া !
ন‌ওশাদ রুম থেকে বের হয়ে হেরার নাম ধরে ডাকলো, হেরা হেরা !
কিন্তু কোন সাড়াশব্দ নেই।
আনারের মা ন‌ওশাদের গলা শুনেই উপরে উঠে এলো ।
তোমার আম্মা তো রুমে নেই কোথায় ?
স্যার দুপুরে খাওয়ার পর দুই আফা গেল মার্কেটে আম্মা তো উপরে আ‌ইসা নিজের ঘরে ঘুমায় ঐসময় । আমি আর উপরে আসি নাই ছাদে গেল নাকি ঘুম থেইকা উইঠা?
দেখো তো গিয়ে যাও ।
আনারের মা হেরাকে খুঁজতে ছাদে ছুটে গেল। কিছুক্ষণ পর ছাদ তিন তলার প্রতিটা ঘরে খুঁজে এলো।
এলিন প্রশ্ন করলো ,কি হয়েছে আনারের মা ?
আম্মারে খুজি, স্যার ডাকে।
ন‌ওশাদ আব্বার রুম থেকে বের হয়ে এলো । কোথায় তোমার আম্মা ছাদে ?
স্যার আম্মা তো ছাদে, তিন তলায় নাই !
কি বলো আমি তো নিশালের রুম, আব্বার রুম, স্টাডি রুম , গেস্ট রুম সব দেখলাম এখানেও নেই। যাও দেখো নিচে আছে কিংবা লনের দিকে।
আনারের মা দৌড়ে নিচে নেমে এলো । দুই মিনিটের মধ্যে নিচের সব জায়গা দেখে ফেলল। দারোয়ান কে জিজ্ঞেস করলো আম্মা বাসার বাহিরে বের হয়েছে কিনা ?
দারোয়ান বলল, গাড়িই তো ছিল না বাসায় আম্মা কি হাইটা বাইরে যাইব আনারের মা ?
আনারের মা ভয়ে ভয়ে দোতলায় উঠে এলো ।‌‌ন‌ওশাদ লিভিং রুমের সামনে দাঁড়ানো । স্যার আম্মা নিচেও নাই ! আবার দারোয়ান বলল, আম্মা বাসার বাহিরে যায় নাই বাসার ভিতরেই আছে ।
আশ্চর্য আনারের মা এতো খোঁজা খুঁজি করছি তাহলে দেখতে পেতাম না, এলিন বলল।
ন‌ওশাদ বলল, পারুল কোথায় আর একটা ছোট মেয়ে ছিল যে ?
পারুল ছুটি নিয়া বাড়িত গেছে দুপুরে স্যার ।
সবাই মিলে প্রতিটা ঘরে হন্যে হয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করলো। ন‌ওশাদের নার্ভাস লাগছে ‌হেরা অসুস্থ হয়ে গেল নাকি কোন রুমে।
সব ওয়াসরুম গুলো দেখো ন‌ওশাদ বলল।
তিন তলায় উঠে হঠাৎ ন‌ওশাদ স্টোর রুমের দরজা টা খুলল। না ওখানে নেই । বের হয়ে আসার সময় মনে হলো লাইট জ্বলছে কেন রুম গুলোতে সে আবার ভেতরের স্টোর রুমটার দরজা খোলার জন্য ধাক্কা দিতে নিলো সঙ্গে সঙ্গে দেখে নিচে হেরা পরে আছে !
ন‌ওশাদের শরীর ঝাড়া দিয়ে উঠলো ভয়ে ,ইয়া আল্লাহ হেরা হেরা কি হয়েছে তোমার ?
কোন রকমে পাঁজাকোলা করে তুলে নিলো হেরাকে ন‌ওশাদ ।স্টোর রুম থেকে বের হতেই চিৎকার দিলো ন‌ওশাদ, আনারের মা পানি আনো।
দোতলায় নামিয়ে হেরাকে সোফায় শুয়ে দিয়ে সোজা হয়ে দাড়াতেই এলিন ন‌ওশাদের দিকে আঙ্গুল তুলে বলল, ভাইয়া আপনার বাম হাতে শার্টে রক্ত কেন ?
ন‌ওশাদ নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে আকাশ থেকে পড়ল হালকা গোলাপি শার্টের হাতায় কিছু জায়গায় তাজা রক্ত ভরে আছে।
নাহিন হেরার চোখে মুখে পানি ছিটাচ্ছে বৌমনি এই বৌমনি ?
ভাইয়া হসপিটালে নিতে হবে বৌমনিকে এলিনের কথায় ন‌ওশাদের হুশ হলো।
গাড়িতে করে যখন ওরা সবাই হেরাকে নিয়ে হসপিটালে যাচ্ছে ন‌ওশাদ বুঝতে পারছে না হেরাকে ঐ ঘরে আটকে রাখলো কে ? এই বাসায় কার এত বড় সাহস হলো হেরাকে স্টোর রুমে আটকে রাখলো। এত বড় ভুল তো হ‌ওয়ার কথা না কারো ! তাহলে ?
মিলা আর ফারহান হসপিটালের রিসিপশানেই দাঁড়িয়ে ছিল। স্টেচারে করে হেরাকে যখন নিয়ে যাচ্ছে ন‌ওশাদের মনে হলো ওর প্রাণটা কেউ কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে।

অবজারভেশন রুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে ন‌ওশাদ। একটু দূরে এলিন, নাহিন দুই বোন আর আনারের মা দাঁড়িয়ে আছে । আনারের মা তখন থেকেই কাঁদছে। নিজেকে দোষারোপ করছে । কেন সে আম্মা ঘুমাচ্ছে ভেবেও একবার দেখতে এলো না আজ ।
সুমনা, রেজোয়ান, নাদিয়া, আরমান সবাই চলে এসেছে।
সুমনা কাছে এসে বলল, ন‌ওশাদ হঠাৎ কি হলো ?
আমিও বুঝতে পারছিনা সুমনা বাসায় এসে দেখি ও কোথাও নেই । সারা বাড়ি খুঁজে ওকে সেন্স লেস অবস্থায় পেলাম স্টোর রুমে । জানোই তো ওর ক্লাস্টোফোবিয়া আছে । বদ্ধ রুমে থাকলে ওর দম বন্ধ হয়ে আসে । যা মনে হচ্ছে ব্লিডিং হচ্ছে এখন কি হবে আমি ভাবতে পারছিনা কিছু !
রেজোয়ান ন‌ওশাদের পিঠে হাত রাখলো । চিন্তা করিস না আল্লাহ ভরসা।
নাহিন আনারের মাকে প্রশ্ন করলো , আচ্ছা আনারের মা আমরা যখন বের হয়ে গেলাম তখন তো পারুল রা বাসায় তুমি এর পর আর উপরে উঠোনি ?
আনারের মা কাঁদতে কাঁদতে বলল, আফা আমি গোসল থেইকা বাহির হ‌ইছি পারুল তখন ওর ভাস্তিরে নিয়া বিদায় নিলো । আমার সামনে দিয়া গেছে। এর পর আমি একবার গিয়া দাদার রুমে দাদারে দেইখা আসলাম দাদা ঘুমে। আম্মার রুমে যাই নাই দরজার শব্দে যদি আম্মার কাঁচা ঘুম নষ্ট হয় । আম্মা কখন স্টোর রুমে গেছে আর কেডা বাহির থেইকা দরজা লাগায় দিসে আমি তো বুঝতেই পারতেছি না ।
মিলা অবজারভেশন রুম থেকে বের হয়ে ন‌ওশাদের সামনে দাঁড়ালো। ভাবির সেন্স এসেছে কিন্তু খুব উইক। অক্সিজেন চলছে । আল্ট্রাসনোগ্রাম করে তারপর বোঝা যাবে বাচ্চা টা ঠিক আছে কিনা ? ভাইয়া আপনি আসেন ভাবির কাছে এসে দাঁড়ান ।
ন‌ওশাদ মিলার পিছনে পিছনে হেরাকে যেখানে রাখা হয়েছে সেখানে এসে ঢুকলো।
মুখে অক্সিজেন লাগিয়ে সাদা বিছানায় হেরা শুয়ে আছে । হেরাকে দেখেই ন‌ওশাদের বুকের ভেতরে ধাক্কা লাগলো সাত বছর আগে এরকম একটা রাতে এরকমই সাদা বিছানায় একজন শুয়ে ছিল হসপিটালে নিথর হয়ে । আবার সেই হসপিটালে ভালোবাসার মানুষ কে এভাবে অসহায়ের মত পড়ে থাকতে দেখতে হচ্ছে । কেন কেন বারবার এমন হয় আমার সঙ্গে?
ন‌ওশাদ চোখের পানি টা মুছলো। হেরার মাথার কাছে গিয়ে হেরার হাতটা ধরে কপালে চুমু খেলো ।
তারপর কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, কাঠবিড়ালী এই কাঠবিড়ালী কি হয়েছে তোমার ?
হেরা চোখ বন্ধ করে আছে চোখের কোণ বেয়ে পানি পড়ছে ।
উঁহু ,কেঁদো না আমি চলে এসেছি তো । আর কোন ভয় নেই ।
হেরা ন‌ওশাদের হাতটা নিয়ে নিজের পেটে ধরলো !
বেবি ঠিক আছে তুমি চিন্তা করো না ডাক্তাররা আছে, তোমার কিংবা বেবির কিছু হবে না।
ব্যথা হচ্ছে , খুব মৃদু গলায় বলল হেরা।
ডাক্তার ওষুধ দিয়েছে সব ঠিক হয়ে যাবে ।
হেরার চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে । ন‌ওশাদ চোখের পানি মুছিয়ে দিলো। কাঁদে না ।
মিলা কাছে এসে বলল , ভাইয়া আলট্রাসাউন্ড করাতে নিব এখন আপনি যাবেন সঙ্গে ?
অবশ্যই।
আল্ট্রাসাউন্ড করার সঙ্গে সঙ্গে ই মিলা ন‌ওশাদকে ডেকে নিয়ে বলে দিলো ইনকমপ্লিট এবোরশন সরি ভাইয়া ।
ন‌ওশাদ মিলার দিকে তাকিয়ে আছে । ফারহান এসে ভাইয়ের পিঠে হাত রাখলো। ভাইয়া এত আপসেট হয়ো না । আজকাল দশটা মেয়ের মধ্যে আট জনের মিসক্যারিজ এর হিস্ট্রি থাকে এটা কোন ব্যাপার না। আর ভাবির সঙ্গে এরকম একটা ঘটনা ঘটেছে বলে না অনেক সময় আর্লী স্টেজে মিসক্যারিজ হয় কোন কারণ ছাড়াই।
ন‌ওশাদের খুব বলতে ইচ্ছে করছে ফারহান কে, তুই তো ডাক্তার তোর কাছে ব্যাপার না কিন্তু আমার তো সন্তান ছিল। হোক মাত্র তের সপ্তাহের তবুও আমার নিজের সন্তান । ন‌ওশাদ হঠাৎ ফীল করলো বুকের ভিতরে কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।

হেরাকে ডিএন্ডসি করিয়ে কবিনে রেখেছে। ঘুমাচ্ছে হেরা‌ এখনো কিছু বলেনি কেউ ওকে। ওর সঙ্গে এলিন, নাহিন দুই বোন আছে । ন‌ওশাদ করিডোরে দাঁড়িয়ে আছে। রেজোয়ান এসে পাশে দাঁড়ালো। বন্ধু এত ভেঙে পড়লে হয় ?
আমি ভেঙে পড়িনি রেজোয়ান। কি জানিস সপ্তাহ তিনেক আগে জানলাম খবরটা এর মধ্যে মনে মনে অনেক কিছু ভেবেছিলাম । কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল।
কিছুই শেষ হয়নি । আজেবাজে কথা বলিস না, হেরা ঠিক আছে ইনশাআল্লাহ আবার কনসিভ করবে। জীবন চলমান তুই তোর জীবনের দিকে তাকা একটা সময় কতটা একা হয়ে গেলি তারপর দেখ কত সুন্দর তুই, হেরা আর নিশালকে নিয়ে তোদের জীবনটা। হ্যাঁ একটা দূর্ঘটনা ঘটেছে আবার দেখবি কত সুন্দর সময় আসবে তোদের জীবনে ।
আল্লাহর উপর ভরসা রাখ সব ঠিক হয়ে যাবে দেখবি। রেজোয়ান ন‌ওশাদের কাঁধে হাত রেখে বলল।

কিছু রাত অনেক লম্বা হয় অনেক বেশি কষ্টে ভরা। ন‌ওশাদের খুব আম্মার কথা মনে পড়লো। আম্মা সব সময় বলতো, বিপদের রাত লম্বা হয়। মনে হচ্ছে রাতটা কাটছে না। মনে হচ্ছে কেন, রাতটা পার হলে যে সকাল আসবে সব কষ্ট কমে যাবে? কিন্তু সকাল হলেই হেরাকে বলতে হবে ও যার জন্য অপেক্ষা করছে সে ওদের কাছে কখনোই আসবে না।
রাতেই বুবু ফোন দিয়েছে। ন‌ওশাদ ভেবেছিল বুবু কান্নাকাটি করবে । উল্টো বুবু ওকে সাহস দিলো । কিভাবে হেরাকে সামলাবে সেই কথাই বলল।
পরদিন ন‌ওশাদ হেরাকে কোন রকম ভনিতা না করে বলল কথাটা ।
হেরা চুপচাপ চোখের পানি ফেলল শুধু। ন‌ওশাদ ভেবেছিল হয়তো অনেক কান্নাকাটি করবে কিন্তু হেরা স্বাভাবিক কান্নাকাটি করলো।
সরি নিশালের পাপা আমি সামলে রাখতে পারিনি আমাদের বাচ্চাকে বলে হেরা কাঁদে উঠলো।
এসব কি বলো হেরা ! প্লিজ তুমি এভাবে বলো না ন‌ওশাদ হেরাকে জড়িয়ে ধরে স্বান্তনা দিচ্ছে।
তুমি ঠিক আছো এটাই আমার জন্য যথেষ্ট।

ন‌ওশাদ হসপিটাল থেকে সোজা হেরাকে নিয়ে সিলেট যেতে চেয়েছিল। প্লেনের টিকিট কাটা ছিল। গাড়িতে উঠার সময় ন‌ওশাদ যখন বলল, তোমার ভালো লাগবে । আমাদের সেই কটেজে হেরা । আমরা বিয়ের তিন মাস পর গিয়েছিলাম মনে আছে। এখন রিসোর্ট কমপ্লিট চলো কয়দিন ঘুরে আসি। শুধু তোমার সঙ্গে কয়টা দিন থাকব। আগের মতো কেমন! আগের মতো নৌকা দিয়ে ঘুরব,ছবি আঁকবো, আগের মত দুষ্টামি করব ফিসফিস করে বলল ন‌ওশাদ।
আমি বাসায় যাব নিশালের পাপা, আমাকে বাসায় নিয়ে চলেন।
ঠিক আছে চলো যেখানে তোমার ভালো লাগে ।
নিজের ঘরে ফিরে হেরা চুপচাপ আলমারি থেকে নিজের ড্রেস বের করে ওয়াসরুমে ঢুকে গেল। ন‌ওশাদ অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছে কেমন জানি বেশি নরমাল হ‌ওয়ার চেষ্টা করছে হেরা।
ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে ন‌ওশাদের দিকে তাকিয়ে বলল, আমি একটু ঘুমাব ।
হ্যাঁ হেরা তোমার যা ইচ্ছে এসো আমিও তোমার পাশে শুয়ে থাকব তোমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেই ।
হুঁ।
ন‌ওশাদ হেরার মাথায় হাত রাখলো। হেরা চোখ বন্ধ করে আছে। অনেক কষ্ট পাচ্ছো তুমি আমি জানি হেরা । তুমি দেখো খুব তাড়াতাড়ি আমরা আবার বেবি নিব কেমন । ডাক্তার বলেছে আমরা তিন মাস পড়েই চেষ্টা করতে পারি।
ন‌ওশাদ হেরাকে শক্ত করে বুকের কাছে টেনে নিলো ।
নিশাল কে বলেছেন?
ন‌ওশাদ একটু থেমে গেল , নিশালের কথা মনে ছিল না ছেলেটা কত এক্সাইটেড হয়ে আছে ।
আপনি তো সব জানেন আমি জীবনে কত খারাপ খারাপ সময়ের মুখোমুখি হয়েছি আমি। কত কিছু হারিয়েছি জীবনে কিন্তু আজ আমার কেন জানি মনে হচ্ছে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে দামী একটা কিছু হারিয়ে ফেলেছি। আমি গত তিন সপ্তাহে এতটা অনুভব করিনি বাচ্চা টাকে, আজ সব শেষ হয়ে যাওয়ার পর যতটা করছি। আমার খুব কষ্ট হচ্ছে খুব।‌
ন‌ওশাদ হেরাকে বুকে জড়িয়ে রাখলো।
রাতে আনারের মা হেরার কাছে এসে বলল, আম্মা আজকে স্টোর রুমে এই টাকাটা পাইছি এইটা কি আপনার টাকা ?
আনারের মা হেরার সামনে এক হাজার টাকার একটা নোট এগিয়ে দিল ।
হেরা টাকাটার দিকে তাকিয়ে র‌ইলো কিছুক্ষণ তারপর চোখ বন্ধ করলো, ড্রয়ারে রেখে দাও ।
পরদিন এলিন ন‌ওশাদকে বলল, ভাইয়া আমার মনে হচ্ছে কাজটা পারুলের ।
স্টোর রুমের দরজা লাগানোটা ?
হ্যাঁ ভাইয়া ।
পারুল কেন এই কাজ করবে এলিন ও অনেক বছর এই বাসায় কাজ করে আর হেরা কখনো কারো সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেনি।
ভাইয়া আমার মনে হচ্ছে পারুল, কিন্তু কেন মনে হচ্ছে বলতে পারবো না। আপনি পারুল আসলে ওকে জিজ্ঞাসা করুন আর ও যদি এবার না আসে বুঝবেন কাজটা ও ই করেছে শিওর।
তাহলে আসুক আগে । তোমাদের বৌমনির সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলার দরকার নেই। ও এমনিতেই খুব আপসেট হয়ে আছে।
হেরা দুই তিন দিনের মধ্যে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছে। ও মন খারাপ করে থাকলে ন‌ওশাদ‌ও মন খারাপ করে থাকে। এই কয়দিন অফিস যায়নি সারাক্ষণ হেরার সঙ্গে সঙ্গে ছিল। উনি সঙ্গে থাকলে হেরার আরো বেশি কান্না পায়। বারবার মনে হয় আগের দিন‌ই তিনি বাচ্চা টা কে নিয়ে কত কিছু বলল আর পরের দিন সব শেষ হয়ে গেল।
সকালে উঠে হেরা ন‌ওশাদকে ঠেলেঠুলে অফিস পাঠালো। হেরা নিজেই নিজেকে সামলাতে চাইছে। নিজের ঘরে একা চুপচাপ বসে ছিল তখন‌ই নাহিন এসে ঢুকলো,
বৌমনি আসব ?
হ্যাঁ এসো আজ তোমার ক্লাস নেই নাহিন ?
ইচ্ছে করলো না যেতে । তুমি কি করো ?
কিছু না বসে আছি ।
তুমি কবে থেকে ক্লাসে যাবে ?
যাব এই সপ্তাহটা যাক তারপর যাব ।
বৌমনি তোমার কি মনে হয় এই কাজটা কে করেছে ?
আমি ওসব নিয়ে ভাবতে চাইনা নাহিন।
এত বড় সাহস কে দেখাবে ?
হেরা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল, যার আছে সাহস সেই দেখাবে । চিন্তা করোনা নাহিন সময় আসুক তখন দেখবে যার কাজ সে তার উপযুক্ত শাস্তি পাবে।
তুমি অনেক কষ্ট পাচ্ছো বৌমনি ।
আমার ভেতরে কি হচ্ছে আমি জানি কিন্তু তোমার ভাইয়ার সামনে কাঁদতে পারছি না আমার কষ্টটা মেলে ধরতে পারছি না । উনার কষ্টের মুখটা দেখলে আমার আরো বেশি কষ্ট হয়। সারাক্ষণ আমার কাছে মন খারাপ করে বসে আছে তাই আজ অফিসে পাঠিয়েছি। আমি জানি দুপুরেই চলে আসবে । উনার জন্য‌ই আমাকে তাড়াতাড়ি স্বাভাবিক হতে হচ্ছে।
তুমি আগের থেকে অনেক স্ট্রং একটা মেয়ে হয়ে উঠেছো বৌমনি নাহিন হেরার গালে হাত রেখে বলল।
নাহিন আমি একটা জিনিস খেয়াল করলাম মেয়েদের স্ট্রং না হয়ে উঠলে ওদের কষ্ট আরও বাড়ে ওদের আরও বেশি মানুষ কষ্ট দিতে সুযোগ পায়।
ঠিক বলেছো ।

একটা সপ্তাহ ঘুরতেই হেরা নিজেকে সামলে নিলো। স্বাভাবিক জীবন শুরু করলো। ক্লাসেও যাওয়া শুরু করলো । একটা জিনিস সবাই ধীরে ধীরে খেয়াল করলো ও আর আগের মত নরম , সহনশীল টাইপের নেই। হঠাৎ করেই যেন একটা কাঠিন্য ওর মাঝে চলে এসেছে।
আজ ক্লাস এর ফাঁকে নাহিন নিয়ে এলো জোর করে ওদের আড্ডায়। হেরা চুপচাপ বসে ছিল খুব একটা কারো সঙ্গে কথা বলছিল না । মাহাদি তার স্বভাবসুলভ বিভিন্ন ভাবে ওকে খোঁচাচ্ছে । হেরা বুঝেও না বোঝার ভান করলো কিছুক্ষণ।
একটু পর ওর কাছে এসে মাহাদি বলল, কি ব্যাপার এত চুপচাপ কেন বসের সঙ্গে ঝগড়া করে আসছো নাকি ?
সরি বুঝলাম না কি বললে ?
বললাম তোমার হাব্বির সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে নাকি ?
মাহাদি একটা কথা বলি , তুমি নিজেকে খুব স্মার্ট ভাবতেই পারো এটা তোমার ইচ্ছা তাই বলে সবার সঙ্গে অযথা স্মার্টনেস দেখানোর তো দরকার নেই। হেরার গলায় এমন একটা কিছু ছিল সব বন্ধুরা তাকিয়ে আছে ।
আমি কি বলেছি আমার হাজব্যান্ডের সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে ? কোন কারণে মানুষ চুপচাপ থাকলেই হাজব্যান্ড ওয়াইফের সম্পর্কিত মন খারাপ ছাড়া আর কিছু হতে পারে না? অন্য কোন কারন থাকতে পারে না? তুমি ও তো দেখি মুরব্বি মহিলাদের মত কথা বলো একটা বিবাহিত মেয়ের আনন্দ, কষ্ট সব তার হাজব্যান্ড কে ঘিরে হবে এর বাহিরে ভাবতে পারো না। তাহলে আর নিজেকে এতটা স্মার্ট দাবি করো কেন ? আমার সঙ্গে এভাবে ঠ্যালা ধাক্কা দিয়ে কথা বলবে না নেক্সট টাইম মনে থাকে যেন।
মাহাদি অবাক চোখে তাকিয়ে আছে হেরার দিকে সে কল্পনাও করতে পারেনি হেরা এত গুলো কথা শুনিয়ে দিবে ওকে।
হেরা উঠে দাঁড়ালো নাহিন আমি যাচ্ছি বাসায় তোমরা গেলে চলো যাই । তা না হলে আমি গিয়ে গাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি । হেরা উঠে চলে গেল।
ওদের বন্ধু মুনা এলিনকে বলল, হেরার কি হয়েছে রে ?
কিচ্ছু হয়নি শরীর খারাপ আর মাহাদির ও কথা বলার আগে চিন্তা ভাবনা করা উচিত।
এলিন, নাহিন হেরার সঙ্গে বাসায় যাওয়ার জন্য চলে এলো ।
বৌমনি চলো এক জায়গায় যাই তোমার মন ভালো হয়ে যাবে , নাহিন বলল।
আমার মন ভালো আছে নাহিন।আর কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে না ।
দেখো কোথায় নিয়ে যাচ্ছি সত্যি তোমার মন ভালো হয়ে যাবে প্লিজ বৌমনি। কথাটা বলেই নাহিন ফিসফিস করে ড্রাইভার সবুজ কে কি বলল। সবুজ গাড়ি বাসায় না এনে গুলশানে ন‌ওশাদের অফিসের নিচে নিয়ে এসে থামালো।
হেরা অবাক হয়ে বলল, অফিসে এসেছো কেন ?
শোন বৌমনি ভাইয়া কখনো কখনো হঠাৎ দুপুরে লাঞ্চ করতে বাসায় চলে এসে সারপ্রাইজ দেয় না তোমাকে, আজ প্রথমবার তুমি অফিসে এসে সারপ্রাইজ দিলে ভাইয়াকে।
উনি অফিসে নাও থাকতে পারেন কত ব্যস্ত থাকেন প্লিজ চলো বাসায়।
আমি শোয়েব মামার কাছ থেকে খোঁজ নিয়েছি ভাইয়া অফিসেই আছে নিজের কেবিনেই আছে চলো তো , নাহিন হেরাকে এক রকম টেনেই লিফটে তুলল।
হেরা আজ‌ই প্রথম অফিসে এলো । আগে অফিসের নিচে এসেছে কিন্তু কখনো উপরে আসেনি। হঠাৎ ওর ভালোই লাগছে ন‌ওশাদকে সারপ্রাইজ দিতে যাচ্ছে ভেবে ! অনেক দিন পর মনটাতে একটা ভালো লাগা কাজ করছে।
মনে মনে হেরা নাহিনকে ধন্যবাদ দিলো।

( চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here