এক ম্লান রক্তসন্ধ্যার গান
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
৪৮.
আজ শুক্রবার দিন। স্কুলে যাওয়ার কোনো তাড়া নেই আজ। তাই ঘুমটাও ভাঙলো বেশ দেরি করে। ঘড়িতে সময় তখন সকাল এগারোটা। সকালের নাস্তা বানাবে নাকি দুপুরের রান্না চড়াবে ভাবতে ভাবতে বাণী চুলোয় ভাত বসিয়ে দেয়। অত:পর বহ্নিকে পাওরুটিতে অরেঞ্জ জ্যাম মাখিয়ে খাইয়ে দেয়।
বহ্নিকে নাস্তা করিয়েই বাণী রান্নাঘরে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। জীবনে কোনো দিন রান্নার ধারে কাছে না ঘেঁষা মেয়েটা গত কয়েক মাসে একটু একটু করে রান্নাটা আয়ত্তে এনেছে। খুব যে ভালো হয় তা না। তবে খাওয়ার অযোগ্যও না।
ভাতের মাড় গালতে তার সমস্যা হয় বিধায় বিকল্প হিসেবে বসা ভাত রান্না শিখেছে। এতে আর এতো ঝামেলা হয় না। রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে মুরগী ম্যারিনেট করতে ব্যস্ত বাণী। প্রতি শুক্রবারে যতই কষ্ট হোক মেয়েটার জন্য স্পেশাল কিছু রান্নার চেষ্টা করে সে। আজকে ভেবে রেখেছে মুরগীর কোরমা, ভাত আর সালাদ রান্না করবে।
ভাতের পাশের চুলোটা অন করে আগুন ধরাতে নিবে ঠিক এমন মুহুর্তেই বেড রুম থেকে বহ্নির আর্তনাদের শব্দ ভেসে আসে। বাণী বিস্মিত হয়। হাতের ম্যাচটা ফেলে দ্রুত দৌড়ে যায় মেয়ের কাছে।
বহ্নি তখন ফ্লোরে বিছানো পাটির উপর বাম হাত চেপে ধরে বসে আছে। দু চোখ বন্ধ করে চিৎকার করে কাঁদছে। বাম হাতের তালু থেকে তার গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। তার কোলের কাছেই পড়ে আছে বাণীর পকেট নাইফটা, সেই সঙ্গে খেলনা রান্না পাতি। মেয়ের হাতে রক্ত দেখে বাণী হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে। কোনো প্রশ্ন না করে সোজা মেয়েকে কাছে টেনে কোলে তুলে নেয়। কোনো মতে নিজের ওড়নাটা মাথায় টেনে পার্স আর বাসার চাবি নিয়ে সে দ্রুত বেরিয়ে পড়ে।
__________
শীতের চাদরে মুড়িয়ে আছে গোটা চট্টগ্রাম শহরটা। ভার্সিটি প্রাঙ্গণে বসে আছে এক বন্ধুমহল। হাসি থাট্টায় মাতিয়ে রেখেছে চারিপাশটা। বন্ধুমহলের আড্ডাটা যে কখন জেসির বিয়ের ব্যাপারে এসে স্থির হলো তা জেসি নিজেও বুঝতে পারলো না। কথায় কথায় জেসির ঘনিষ্ঠ বান্ধবী মুন সবাইকে জানায় জেসির বিয়ে করতে না চাওয়ার ব্যাপারটা।
বন্ধুমহলের সবথেকে বিচক্ষণ ছেলে ফরহাদ সবটা শুনে সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে,
“ এমন না যে তুই এখন বিয়ে করতে চাচ্ছিস না আবার পাশাপাশি তোর কোনও সম্পর্কও নেই। তাহলে বিয়ে করতে সমস্যাটা কোথায়? “
জেসি মুখ কালো করে বলে,
“ ছেলেটা অসভ্য। আমার একবিন্দুও পছন্দ না। “
ফরহাদ মুখের সিরিয়াসনেস এর মাত্রা আরেকটু বাড়িয়ে জানতে চায়,
“ কি অসভ্যতামি করেছে তোর সাথে? “
জেসি দ্রুত মুখ চালিয়ে কিছু বলতে নিয়েও জবাব খুঁজে পায় না। মুখ কালো করে বসে রয়। মুন নিজেই বলে,
“ একবার লাইব্রেরীতে একটা সিলি ম্যাটারে এদের ঝগড়া হয়েছিলো। আর আরেকবার এক্সিডেন্টলি রাস্তায় দেখা হয়েছিলো এদের। সেইবার জেসি ইঞ্জুরড হয়েছিলো সামান্য। কিন্তু ভাইয়া ইনটেনশন্যালি ওকে ইঞ্জুরড করে নি। আর এই সামান্য বিষয়কে কেন্দ্র করে এই বলদি এতো তামাশা করে বেড়াচ্ছে। সবকিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি স্বভাবটা এখনো ছাড়তে পারছে না। “
জেসি চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই মুন বলে,
“ এভাবে তাকাচ্ছিস কেন? ভুল বলেছি আমি? “
ফরহাদ এবার বিজ্ঞের ন্যায় বলে,
“ তুই আমার দিকে তাকা জেসি। আমার কথা মন দিয়ে শোন। তুই নিজেই না সবসময় বলতি যে আংকেল যাকে পছন্দ করবে তুই তাকেই বিয়ে করবি? তুই ভুল পাত্র চুজ করতে পারিস কিন্তু আংকেল কখনো নিজের মেয়ের জন্য খারাপ কাউকে চুজ করবে না। এই বিশ্বাস মনে রেখেই কিন্তু তুই কখনো কোনো প্রেম ঘটিত বিষয়ে জড়াস নি। আর আজ যখন আংকেল সত্যি সত্যিই তোর জন্য কাউকে সুযোগ্য মনে করলো তখন তুই তাকে রিজেক্ট করার জন্য কেনো উঠে পড়ে লেগেছিস? তোর এই রিজেকশনের পিছনে কোনো স্ট্রং ভ্যালিড রিজনও নেই। ইট ইজ নাথিং বাট ইউর চাইল্ডিশ ইগো। গেট অভার ইট। যতদূর শুনলাম আই থিংক হি ইজ এ গুড গাই। নিজের এই ছোট সামান্য বিষয় ঘিরে বাড়াবাড়ি করার স্বভাবটা একপাশে রেখে গিভ হিম এ চান্স। “
ফরহাদের কথা শুনে জেসি চুপ রয়। উদাস চোখে আকাশ পানে তাকায়। সে কি আসলেই বেশি বেশি করে ফেলেছে? জেসি পুরনো ঘটনা গুলো চোখের সামনে রিওয়াইন্ড করার চেষ্টা করে। অত:পর মনে করে নিজের আপুর কথা। জাহানারা আপুও তো আব্বুর পছন্দের ছেলেকেই বিয়ে করেছে। আপু তো এখন দুলাভাইয়ের সঙ্গে বেশ ভালোই আছে। সে-ই একই আব্বু কি নিজের ছোট মেয়ের জন্য ভুল কাউকে পছন্দ করবে? এটাও কি আদৌ সম্ভব? নাকি জেসিই কোথাও ভুল করছে?
বহু ভেবেও উত্তর খুঁজে পায় না জেসি। উত্তরের বদলে মাথাটা ভারী অনুভব করতে শুরু করে। উদাস ভঙ্গিতে ব্যাগ নিয়ে আড্ডা থেকে প্রস্থান করে। ফরহাদ একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনে দোয়া করে মেয়েটার যাতে একটু সুবুদ্ধি হয়।
__________
চমৎকার এক বিকেল। ছুটির দিন হওয়ায় শপিং মলে উপচে পড়া ভীড়। সৈন্যদের দেওয়া এলার্টকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সাধারণ জনগণ নিজেদের সাধারণ জীবনধারাকে অব্যাহত রেখেছে। স্কুল কলেজ বাদে বাকি সব চলছে আপন নিয়মে। আর দশটা সিভিলিয়ানের মতোই শপিং মলে প্রবেশ করে এক পুরুষ। শার্ট প্যান্ট পরিহিত পুরুষের মুখে খোচা খোচা দাঁড়ির আভাস। ডান হাতে কানে ফোন চেপে ধরে হাস্যজ্বল গলায় কাউকে বলছে,
“ তুমি কিন্তু দিনদিন গুন্ডাদের মতো আচরণ শুরু করেছো। “
ফোনের অপর পাশ হতে এক নারী গলা বলে উঠে,
“ একশো বার করবো। ক’টা দিন ছুটি নিয়ে বাসায় বসে থাকলে কি হয় তোমার? তুমি যতক্ষণ বাহিরে থাকো আমার উপর দিয়ে কি তুফান বয়ে যায় তুমি জানো? আজকে বাসায় আসো। তোমাকে রুম বন্দী করে রেখে দিবো। “
পুরুষটা এসকালেটর উঠে দাঁড়িয়ে হাসি চেপে বলে,
“ অন ডিউটি অফিসারকে হুমকি দিচ্ছেন ম্যাডাম। আপনার নামের পাশে চার্জ শিট বসাবো? “
ফোর্থ ফ্লোরে পৌঁছে কিডস সেকশনের দিকে ঘুরে বেড়াচ্ছিলো অজ্ঞাত পুরুষটা। তখনও ফোনালাপে মশগুল সে। নির্দিষ্ট শপটা খুঁজে পাওয়ার জন্য চারিদিকে সূক্ষ্ণ দৃষ্টি মেলে দেখতে থাকে। আচমকা কাধে বিশাল ব্যাগবাহী এক ছেলের পানে তার দৃষ্টি স্থির হয়। গোয়েন্দাপূর্ণ দৃষ্টিতে মুহুর্তেই ভাজ পড়ে। ফোনের অপর পাশ হতে ভেসে আসা কথাগুলোর দিকে আর তার ধ্যান থাকে না। শান্ত গলায় বলে,
“ পরে কথা বলছি। “
বলেই ফোনটা পকেটে ভরে ফেলে। ব্যাগ বাহী যুবক দূর হতে ইশারায় লাল শার্ট পরিহিত আরেকজন যুবককে কিছু একটা ইঙ্গিত দেয়। তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন পুরুষের দৃষ্টি এড়ায় না তা। সে সেই যুবকদের অনুসরণ করতে এগিয়ে যায়। লাল শার্ট পরিহিত যুবকটা এবং অপর যুবকটা দ্রুত ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে যায়। পুরুষটা ওয়াশরুমের দরজার কাছে গিয়েই দেখে দরজাটা ভেতর থেকে লকড।
মনে মনে পুরো হিসাবটা মেলাতেই সেই পুরুষ ভেতরে আতংক এবং উত্তেজনা অনুভব করে। তবে তা বাহিরে প্রকাশ না করে দ্রুত নিজের পকেট থেকে ফোন বের করে কাউকে কল লাগায়। ফোনটা রিসিভ হতেই তাড়া দিয়ে বলে,
“ বসুমতী শপিং কমপ্লেক্সে এখনই টিম পাঠাও। ইট’স এন ইমারজেন্সি। “
অর্ডারটা বুঝিয়ে দিয়েই কলটা কেটে নিজের কন্ট্যাক্ট লিস্ট হতে আরেকটা নাম্বার ডায়াল করে সে। অপর পাশ হতে ফোনটা রিসিভ হতেই পুরুষটা স্পষ্ট গলায় বলে,
“ অফিসার শোভন মুহতাশিম চৌধুরী বলছিলাম। টু সাসপেক্টেড পারসন ইজ ডিটেক্টেড। সন্দেহ করছি যেই ডুমস ডে এট্যাকের হুমকি দেওয়া হয়েছিলো সেই এট্যাক ঘটতে চলেছে। লোকেশন বসুমতী শপিং কমপ্লেক্স। দ্রুত আসুন। আপনার এবং আপনার টিমের অপেক্ষায়। “
__________
শপিং মলের সর্বত্র এনাউন্সমেন্ট করে চেঁচিয়ে বলা হচ্ছে,
“ আপনারা দ্রুত শপিং মল ছেড়ে বেরিয়ে যান। এখানে আতঙ্কবাদীদের আনাগোনার আশংকা করা হচ্ছে। “
মানুষ জন যে যেভাবে পারছে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করছে। মিনিট একের মাঝেই একধরনের হট্টগোল বেধে গেলো। অফিসার শোভন নিজের পিস্তল হাতে এক পিলারের আড়াল হতে নজর রাখছে বাথরুমের দরজার পানে। তীব্র উৎকণ্ঠায় তার শরীর মৃদু কাপছে। চোখের সামনে ভেসে উঠছে পুরনো স্মৃতি।
আচমকা ওয়াশরুমের দরজাটা খুলে যায়। বেরিয়ে আসে চারজন যুবক। গায়ে ঝুলে আছে তাদের আত্মঘাতী বোমা। লাল শার্ট পরিহিত পুরুষটা নিজের হাতের রিমোট জাতীয় যন্ত্রটা আঙুল দ্বারা চেপে ধরতে নিলেই শোভন দ্রুত আড়াল হতে তার কপালের মাঝ বরাবর গুলি ছুড়ে।
যুবকটা মুহুর্তেই ফ্লোরে লুটিয়ে পড়ে। মানুষ জনের চেঁচামেচি আরো বেড়ে যায় ফায়ারিং এর শব্দে। বাকি তিনজন আতঙ্কবাদী ততক্ষণে তিনদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। শোভন দিশেহারা। কোন দিকে যাবে সে? একা হাতে সম্পূর্ণ সিচুয়েশনটা সামলানো তার পক্ষে সম্ভব নয়। তবুও সে মনবল হারায় না।
আর কিছুক্ষণ! আর কিছুক্ষণ শুধু তার ট্যাকেল দিতে হবে। পুলিশ বাহিনী আসছে। সেনাবাহিনীও আসছে। সবটা সামলে নিবে সবাই মিলে। কিচ্ছু হবে না।
__________
সড়ক পথে দাপুটে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে সেনাবাহিনীর গাড়ি। গন্তব্য বসুমতী শপিং কমপ্লেক্স। উৎকণ্ঠায় সবার হাত পা কাপছে। হিরণের বলা সেই ডুমস ডে এট্যাকটা তবে সত্যি হতে চলেছে। শপিং কমপ্লেক্স হতে তাদের দূরত্ব আর কেবল পাঁচ মিনিট।
গাড়ির পেছনে বসে যখন প্ল্যান সাজাতে ব্যস্ত লেফটেন্যান্টরা, ঠিক সেই মুহুর্তে সাইফের ফোনটা স্ব শব্দে বেজে উঠে। বাকি পাঁচ জন তার দিকে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকায়। সাইফ বলে,
“ ধুর বাল। তাড়াহুড়ায় সাইলেন্ট করার কথা খেয়াল ছিলো না। ওয়েট। “
ফোন সাইলেন্ট করার উদ্দেশ্যে পকেট থেকে বের করতেই স্ক্রিনের নামটা দেখে সাইফ অবাক হয়। পরপর কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে কলটা রিসিভ করে কানে ধরে। অপর পাশ হতে একটা রমণী ব্যস্ত গলায় বলে,
“ আপনি আমায় সেদিন প্রশ্ন করেছিলেন আপনি আমার যোগ্য কিনা। সেই প্রশ্নের কোনো উত্তর খুঁজে পাই নি আমি। তবে একটা নতুন প্রশ্ন সেই রাতের পর থেকে আমাকে খুব বিরক্ত করছে। “
সাইফ বিস্ময়তা চেপে গিয়ে জানতে চায়,
“ কি প্রশ্ন? “
“ আমাকে কি আপনার নিজের যোগ্য মনে হয় লেফটেন্যান্ট তামজিদ সাইফ? “
সাইফ অবাক হয়। বাকরুদ্ধের ন্যায় বসে থাকে। ফোনের অপরপাশের রমণী আবার তাড়া দিয়ে বলে,
“ আমি আপনার শেকড় হতে রাজি। যদি আপনি আমাকে নিজের যোগ্য মনে করেন। বলুন না, আমি কি আপনার যোগ্য? “
সাইফ এলোমেলো গলায় আওড়ায়,
“ হ্যাঁ। আপনি যোগ্য। একটু বেশিই যোগ্য। “
রমণী এবার লাজুক হেসে শান্ত গলায় বলে,
“ দ্রুত ফিরে আসুন। অপেক্ষায় থাকবো। “
অপর পাশ থেকে ফোনটা কেটে গেলেও সাইফ অবিশ্বাস্যকর দৃষ্টি মেলে বসে রয়। বাকি পাঁচ জন অবাক হয়ে তাকে দেখছে। জুনায়েদ সাইফের পাশে বসা ছিলো। সে ওকে সামান্য ধাক্কা মেরে বলে,
“ কে কল করেছিলো? “
সাইফ ফ্যালফ্যাল দৃষ্টি মেলে জুনায়েদের দিকে তাকায়। পরপর অস্ফুটে উচ্চারণ করে,
“ আমার এই মিশন শেষ করে ফিরতে হবে। “
আর কিছু বলতে পারে না সাইফ। শব্দ গুলো তার গলার কাছে এসে দলা পাকিয়ে যায়। পিছুটান হীন সাইফ যে কিনা প্রতিটা অপারেশনে যাওয়ার সময় দোয়া করতো যেনো সে শহীদের মর্যাদা লাভ করতে পারে, সে প্রথমবারের মতো বেঁচে থাকার স্পৃহা অনুভব করে। কেউ একজন আছে যে এখন তার অপেক্ষায় পথ চেয়ে থাকবে। তার তাগিদে সাইফের ফিরতে হবে।
__________
সেনাবাহিনী তিনটা গাড়ি বসুমতী শপিং কমপ্লেক্সের সামনে এসে থামতেই সৈন্যরা গাড়ি থেকে ঝাপিয়ে নিচে নামে। দৌড়ে এগিয়ে যায় কমপ্লেক্সের এন্ট্রেন্সের দিকে। সবুজ ও খাকি রঙের মিশেলের ইউনিফর্ম পরিহিত মেজর শাহরিয়ার দূর্জয়ও যখন এন্ট্রেন্সের দিকে পা বাড়াতে নিবে ঠিক এমন মুহুর্তে তার ফোন ভাইব্রেট করে উঠে। জুলফিকার মুজতবার কল হতে পারে ভেবে দূর্জয় দ্রুত পকেট থেকে ফোন বের করে। কিন্তু সেভ করা নাম্বারটা দেখতেই তার কপালে ভাজ পড়ে। চেহারায় অদ্ভুৎ উদ্বেগ ফুটে উঠে। দ্রুত কলটা রিসিভ করে কানে চেপে ধরতেই অপরপাশ হতে এক পুরুষ তীব্র উৎকণ্ঠা মিশ্রিত স্বরে বলে উঠে,
“ স্যার। মিস বাণীর এপার্টমেন্টে সিলিন্ডার ব্লাস্ট হয়েছে। আগুনে দাউদাউ করছে। মিস বাণী আর বহ্নি… “
বাকিটা আর শুনতে পেলো না দূর্জয়। শপিং কমপ্লেক্সের ভেতর হতে বোমা বিস্ফোরণের তীব্র শব্দে চারিদিকটা ভারী হয়ে উঠে। মেজর শাহরিয়ার দূর্জয় থমকে রইলো। বিচক্ষণ মস্তিষ্ক শূন্য তখন তার। অদ্ভুৎ ভাবে সারা শরীর টলে উঠলো। পাশ ঘেঁষে দৌড়ে যাওয়া এক সৈন্যের ধাক্কায় ফোনটা হাত থেকে পড়ে গেলো। দূর্জয় নিষ্পলক স্ক্রিন চুরমার হয়ে যাওয়া ফোনটার দিকে তাকিয়ে থাকে। আচমকা উপলব্ধি করে সে গন্তব্য নিয়ে দোটানায় আছে। একজন সৈন্য হিসেবে এই শপিং কমপ্লেক্সের ভেতরের মানুষগুলো তার দায়িত্ব। অপরদিকে অন্য শহরে থাকা ওই মানুষ দুটোও তার অঘোষিত দায়িত্বের অংশ। কোনদিকে পা বাড়াবে সে? শক্ত মানব খ্যাত মেজর শাহরিয়ার দূর্জয় প্রথম বারের মতো নিজেকে চরম দিশেহারা আবিষ্কার করে।
চলবে…
[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]