এক ম্লান রক্তসন্ধ্যার গান লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান ৪৯.

0
190

এক ম্লান রক্তসন্ধ্যার গান
লেখনীতে : নাফিসা তাবাসসুম খান
৪৯.

দু মাসের দুটো বাচ্চার কান্নায় ঘর তখন মুখোরিত। জমজ হওয়ার দরুণ এই একটা দারুণ কানেকশন রয়েছে তাদের মধ্যে। একজন কান্না শুরু করলে অপরজনও তার দুঃখে সামিল হতে তাল মিলিয়ে কান্না শুরু করে। কিন্তু তাদের এই গলা ফাটিয়ে কান্নায় সবথেকে নাজেহাল অবস্থা যার হয়, সে হলো বাচ্চা দুটোর মা এবং অফিসার শোভন মুহতাসিম চৌধুরীর স্ত্রী মধুমিতা। সে কাকে ফেলে কাকে ধরবে বুঝতে পারে না। তার শাশুড়ী মা সাদিকা বেগম নাতি নাতনির কান্না শুনেই রান্নাঘর থেকে দৌড়ে আসে। মধুমিতা তখন নিজের মেয়ে মহুয়াকে কোলে তুলে কান্না থামানোর চেষ্টায় মত্ত। সাদিকা বেগম নাতি সোহানকে কোলে তুলে নিয়ে বলে,

“ ছেলেটা কখন ফিরবে? জানিয়েছে কিছু? “

মধুমিতা অভিযোগের সুর তুলে বলে,

“ আপনার ছেলে শপিং মলে গিয়েছে। ছেলে মেয়ের জন্য নাকি কি কিনবে। এরকম একটা আতঙ্কিত পরিস্থিতির মধ্যে বাহিরে থাকার কোনো মানে হয় আম্মা? “

সাদিকা বেগম পুত্রবধূর সাথে সুর মিলিয়ে বলে,

“ শান্তি দিবে না এরা আমাকে। এদের চিন্তায় তোমার শশুর আর আমি শেষ হয়ে যাচ্ছি। এদের সেদিকে ধ্যান নেই। “

নিচ থেকে তখন ঘরের কর্তা আফজাল সাহেবের আওয়াজ ভেসে আসে। সে গলা উঁচু করে ডাকছে,

“ পার্থর আম্মা! “

সাদিকা বেগম মৃদু রাগ দেখিয়ে বলে,

“ এই লোকটাও আমাকে শান্তি দিলো না। দেখলো নাতির কাছে এসেছি। এখন ডাকার কোনো মানে হয়? “

মধুমিতা মৃদু হেসে বলে,

“ হয়তো আব্বার কিছু লাগবে। আপনি একটু বাচ্চাদের কাছে বসুন মা। আমি দেখে আসছি। “

মহুয়া ও সোহানকে শাশুড়ীর পাহারায় রেখে মধুমিতা নিচে যায়। লিভিং রুমের কাছে যেতেই তার মুখের হাসি মিলিয়ে যায়। আফজাল সাহেবের মনযোগও তখন টিভিতে চলমান নিউজের পানে। হেডলাইনে তখন বড়ো বড়ো অক্ষরে লেখা ‘এইমাত্র পাওয়া খবর। রাজধানীর বসুমতী শপিং কমপ্লেক্সে আতঙ্কবাদীদের হামলা। শপিং মলের ভেতর থেকে ভেসে আসছে গোলাগুলির শব্দ।’

মধু অস্ফুটে বলে উঠে,

“ আপনার ছেলে এই শপিং মলে আছে আব্বা। আরো একবার… “

আফজাল সাহেব পুত্রবধূর কথা শুনে বিস্ফোরিত দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে রয়। পরপর এলোমেলো হাতে ছোট ছেলের নাম্বার ডায়াল করে। অপর পাশ হতে কলটা রিসিভ হয় না। আফজাল সাহেব দ্রুত নিজের বড়ো ছেলের নাম্বারে কল করে। এবার মুহুর্তের মধ্যেই কল রিসিভ হয়। আফজাল সাহেব এলোমেলো নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,

“ তোমার ভাই ওই শপিং মলটায় আছে, যেখানে হামলা হয়েছে। ভাইকে যেভাবে পারো বাড়ি ফিরিয়ে আনো। “

__________

দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেড়ে ভাতঘুম দিয়েছিলো জেসি। আচমকা কানের কাছে তীব্র চেঁচামেচিতে তার ঘুম ভেঙে যায়। ঘুম কাতুরে ফোলা ফোলা চোখ মেলে তাকিয়ে সে দেখে ভাবী তার বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে কেমন চিন্তার রেশ লেপ্টে আছে। জেসির ঘুম তড়াক করে উধাও হয়ে যায়। সে বালিশ ছেড়ে উঠে বসে প্রশ্ন করে,

“ কি হয়েছে ভাবী? “

চারু বলে,

“ টিভিতে নিউজ দেখাচ্ছে। ঢাকার কোন শপিং মলে নাকি হামলা হয়েছে। সেনাবাহিনীরা ওখানে পৌঁছেছে। প্রত্যয়ও ওই সেনাদের মধ্যে আছে। “

জেসি অবাক হয়। বিস্মিত গলায় বলে,

“ ও ঢাকায় আছে? “

জেসির থেকেও বেশি অবাক হয় চারু। পাল্টা প্রশ্ন করে,

“ তুমি জানো না? এই কয়দিন তোমাদের কথা হয় নি? “

জেসি কেবল ডানে বামে মাথা নাড়ায়। চারু চরম বিরক্ত হয়। সে কাকে খবর দিতে এসেছে? যে কিনা নিজের ভবিষ্যৎ বাগদত্তা কোথায় আছে সেই খবরটা পর্যন্ত জানে না! চারু বিরক্তিকর মুখ নিয়ে বলে,

“ তুমি ঘুমাও। তোমার কিসের চিন্তা! ছেলেটার বেঁচে ফেরার জন্য আমাদের দোয়াই যথেষ্ট। “

বলেই চারু রুম থেকে চলে যায়। জেসি চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে থাকে। ভাবী তার উপর এরকম চটে গেলো কেনো? ওই ছেলেটা যেহেতু একজন আর্মি, সেহেতু এসব সিচুয়েশনে পড়াটা ওর জন্য স্বাভাবিক বিষয়। এতে জেসির কি দোষ? সে কি ওই প্রত্যয়কে বলেছে যে তুমি আর্মি হও? জেসি বিরক্তিতে বলে,

“ হাও রুড! “

বলেই সে বালিশ দিয়ে মুখ ঢেকে শুয়ে পড়ে। একটু পর নিজেই আবার উঠে বসে। ঘুম আসছে না আর। অস্থিরতা আর টেনশন হলো একটা ছোঁয়াচে রোগ। এইযে ভাবী এইমাত্র এসে টেনশনের বীজ জেসির ভেতর রোপণ করে দিয়েছে। এখন জেসির অস্থির অস্থির লাগছে।

সে অস্থিরতা নিয়েই ফোনটা হাতে নেয়। কি মনে করে যেনো গ্যালারিতে প্রবেশ করে। স্ক্রল করে কিছুটা নিচে যেতেই চারমাস আগের কিছু ছবি তার সামনে আসে। সেদিনকার ছবি যখন প্রত্যয় নামক ছেলেটা প্রথম তাকে দেখতে এসেছিলো।

কি নিখুঁত হাসি মুখে ফুটিয়ে ভদ্র ছেলে সেজে জেসির আব্বু আর ভাইয়ার পাশে বসে আছে। চেহারা দেখে বুঝা যায় ছেলেটা একটা মিচকে শয়তান? পরমুহূর্তেই জেসির ফরহাদের বলা কথাগুলো মনে পড়ে যায়। সে ছবি কিছুটা জুম করে প্রত্যয়ের চেহারা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে থাকে। আনমনে বলে উঠে,

“ মেবি ইউ আর নট রং ওর মেবি আ’ম নট রাইট। “

পরপর সে প্রত্যয়ের নাম্বারে একটা ছোট খুদেবার্তা পাঠায়,

“ আব্বুর অতি পছন্দের সুপাত্র,
স্টে সেফ। “

__________

তীক্ষ্ণ বোমা বিস্ফোরণের শব্দে সবার কান ঝিম ধরে আসছে। সৈন্যরা একতলা একতলা করে চেক করে উপরের দিকে এগিয়ে আসছে। চতুর্থ তলায় পৌঁছাতেই সৈন্যের দল দূর হতে দেখে পিলারের আড়াল হতে সিভিল ইউনিফর্ম পরিহিত একজন পুলিশ অফিসার নিজের পিস্তলের জোরে একা দু’জন আতঙ্কবাদীকে প্রতিহত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সৈন্যদের মধ্যে একদম সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষটা ইশারা দিতেই সৈন্যদল দু ভাগে বিভক্ত হয়ে দুটো ভিন্ন রাস্তা ধরে চলে যায়। এদের এক দল উল্টো পথ দিয়ে ঘুরে এসে আতঙ্কবাদীদের মোকাবেলা করবে। আর বাকি একদল উপরের ফ্লোর গুলোয় যাবে।

দুটো দল প্রস্থান করতেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষটা অতি কৌশলে এক একটা পিলারের পিছনে আড়াল হয়ে পৌঁছে যায় অফিসার শোভন মুহতাসিম চৌধুরীর কাছে। আড়াল হতে আতঙ্কবাদীদের উদ্দেশ্যে গুলি ছুড়তে ছুড়তে শীতল স্বরে বলে,

“ লং টাইম নো সি অফিসার শোভন। “

শোভন অবাক হয়ে পাশ ফিরে তাকায়। পরপর উজ্জ্বল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,

“ অবশেষে আমাদের আবার দেখা হয়েই গেলো মেজর। “

দূর্জয় তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আতঙ্কবাদীদের দিকে স্থির রেখেই বলে উঠে,

“ নিচে অল ক্লিয়ার। আপনি চাইলে আমি ব্যাক আপ দিয়ে আপনাকে এস্কালেটর পর্যন্ত পৌঁছে দিতে পারি। ইউ ক্যান গো হোম। “

শোভন আত্মবিশ্বাসের সুরে বলে,

“ বাসায় অবশ্যই ফিরবো। পরিবার অপেক্ষায় আছে। তবে আগে অসভ্য গুলোর শেষ দেখতে চাই। “

দূর্জয় আর কিছু বলতে পারে না। তার হাত আপনাআপনি কাজ করলেও মস্তিষ্কটা এখনো কাজ করছে না। ফিরতে তো তার-ও হবে। দুটো মানুষের অবস্থা জানার জন্য তার ফিরতে হবে। মানুষ দুটো আদৌ বেঁচে আছে নাকি সেই খবরটুকুও দূর্জয়ের জানা নেই। সেই সুযোগটুকুও পেলো না। বেছে নিলো নিজের দেশের প্রতি দায়িত্বকে। আর ওই দুটো মানুষকে আল্লাহর ভরসায় উনার আমানতে ছেড়ে দিলো। কিছু ঘন্টার অপেক্ষা শুধু!

__________

সাইফ, সাদাত, জুনায়েদ ও প্রত্যয় দ্বিতীয় দলের অংশ। তারা পঞ্চম তলা পাড় করে ষষ্ঠ তলায় এসে পৌঁছাতেই দেখে চারিদিকটা ফাঁকা। কেবল একটা আউটলেটের ভেতর থেকে ভেসে আসছে মৃদু গুঞ্জনের এবং ফোপাঁনোর শব্দ। সাইফরা সেদিকে আগায়। একটা বিশাল ম্যানস শু কালেকশনের আউটলেটের ভেতর লুকিয়ে আছে প্রায় পঞ্চাশের অধিক সাধারণ মানুষ। উপরের তলা গুলো থেকে ভেসে আসছে বোমা বিস্ফোরণের শব্দ। নিচের তলা থেকে ভেসে আসছে গোলাগুলির শব্দ। এরা সবাই কোনো পথ খোলা না পেয়েই বাধ্য হয়ে এখানে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু সৈন্যদের দেখতেই সবার চোখে আশার আলো ফুটে উঠে।

সাইফ পরিস্থিতি আন্দাজ করে দ্রুত নিজের হ্যান্ডহেল্ড ট্রান্সিভারটা কানেক্ট করে বলে,

“ ডুমস ফোর কলিং। “

ট্রান্সিভারের অপর পাশ হতে শীতল স্বরটা ভেসে আসে,

“ ডুমস ওয়ান হেয়ার। “

“ স্যার, সিক্সথ ফ্লোরে পঞ্চাশ জনের অধিক সিভিলিয়ান আছে। দেই আর নট সেফ হেয়ার। উপরের ফ্লোরের আতঙ্কবাদীরা এনিটাইম এই ফ্লোরে এসে পৌঁছাবে। “

দূর্জয় দ্রুত আদেশ বর্তায়,

“ ইমারজেন্সি স্টের ওয়ের পথটা সেফ। আমি এদিকে কাভার করছি। দ্রুত সবাইকে স্টের ওয়ে ধরে নিচে পাঠানোর ব্যবস্থা করো। “

“ রজার দ্যাট স্যার। “

সাইফ ট্রান্সিভারটা রেখে নিজের দলের সদস্য সংখ্যার দিকে তাকায়। সে সহ পুরো দশজন সৈন্য আছে। সাইফ দ্রুত প্ল্যান কষে নিচু গলায় সবার উদ্দেশ্যে বলে,

“ আপনাদের সেফলি এখান থেকে নিয়ে যাওয়া হবে। ইমারজেন্সি স্টের ওয়ে ধরে আপনারা নিচে যাবেন। একটুও শব্দ করবেন না দয়া করে। আমাদের চারজন সৈন্য আপনাদের সেফটি নিশ্চিত করার জন্য সঙ্গে যাবেন। প্লিজ কো অপারেটর উইথ দেম। আর হট্টগোল না করে সবাই একটা সিকুয়েন্স মেইনটেইন করে দাঁড়ান। মহিলা আর বাচ্চাদের মাঝখানে যায়গা দিন। পুরুষরা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে যান। অর্ধেক সামনে থাকুন, বাকি অর্ধেক পিছনে থাকবেন। “

বাঁচার আশায় কেউ টু শব্দ করলো না। মুহুর্তেই সবাই সাইফের কথা মতো সিকুয়েন্স মেইনটেইন করে দাঁড়িয়ে পড়ে। সাইফ জুনায়েদ এবং সাদাত সহ আরো দু’জন সৈন্যকে সিভিলিয়ানদের নিচে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বটা বুঝিয়ে দেয়। সাদাত যাওয়ার আগে কেবল বলে,

“ ছয়জন যথেষ্ট হবে? তোরা সামলে নিতে পারবি? “

সাইফ আত্মবিশ্বাসের সুরে বলে,

“ উই আর মোর দ্যান এনাফ। “

জুনায়েদ বলে,

“ হোল্ড অন। সবাইকে নিচে পৌঁছে দিয়ে আমরা দ্রুত ফিরে আসবো। “

সিভিলিয়ানদের নিয়ে সাদাতরা প্রস্থান করতেই সাইফরা উপরের ফ্লোরের দিকে রওনা হয়। নিচের ফ্লোর গুলোর মানুষরা দ্রুত বেরিয়ে যেতে পারলেও উপরের ফ্লোরের মানুষ গুলো আটকা পড়েছে। তাদের উদ্ধার করার উদ্দেশ্যেই সৈন্যরা পা বাড়ায়।

__________

নিশার বুক কাঁপছে। টিভির দিকে বড়ো বড়ো চোখ করে তাকিয়ে আছে সে। আব্বুর মুখে যখন শুনলো ঢাকায় এট্যাকের খবর তখন থেকেই অদ্ভুৎ এক ভয় আর শূন্যতা তাকে জেঁকে ধরেছে। সেই ভয়ের রেশ ধরেই সে সাইফকে কল করেছিলো। সেই মলে প্রবেশের পূর্বে মানুষটাকে জানিয়েছে যে সে অপেক্ষায় থাকবে। ছন্নছাড়া, লাগামহীন মানুষটা কি নিশার উৎকণ্ঠা বুঝতে সক্ষম হয়েছে? সে কি বুঝেছে নিশা কতটা কাতর হয়ে পথ চেয়ে আছে?

গত ক’টা দিন নিশার মনে যে ভূমিকম্প বয়ে গিয়েছে সম্পর্কে কি তার ধারণা আছে কোনো? নিশা ভেবে রেখেছিলো মানুষটা ফিরলে সে মুখোমুখি কথা বলবে। কিন্তু পরিস্থিতির জন্য তার আর তর সইলো না। আজই কল করে সাইফকে জানিয়ে দিলো সবটা। ছোট বাক্যে, ছোট পরিসরে।

নাঈমা অবাক হয়ে মেয়ের চিন্তিত মুখশ্রী পরখ করছে। জুলফিকার চট্টগ্রামের বাহিরে যাবে বলে নিশাকে সে ক’টা দিনের জন্য নিজের কাছে নিয়ে এসেছে। কিন্তু এখানে আসার পর থেকেই সে মেয়ের মধ্যে অদ্ভুৎ এক অস্থিরতা টের পাচ্ছে। আর আজ তো তার মেয়ে আরো বেশি অদ্ভুৎ আচরণ করছে। বিকেল বেলা থেকে টিভির সামনে থেকে সরছেই না। ছলছল করা চোখ দিয়ে যেকোনো সময় অশ্রু গড়িয়ে পড়বে।

নাঈমা মেয়ের কাধে হাত রেখে বলে,

“ এই নিশা! কান্না করে দিবে মনে হচ্ছে। কি হয়েছে? “

নিশা মায়ের দিকে তাকায় করুণ মুখ করে। জানতে চায়,

“ আব্বু যখন মিশনে যেতো তখন তুমি কিভাবে শান্ত থাকতে আম্মু? “

নাঈমা অবাক হয়। পরমুহূর্তে তার মনে পড়ে যায় অতীত। জুলফিকার যখন মিশনে থাকতো, তখন কি বিভৎসকর দিন-ই না পাড় করতে হয়েছে তার! সেই দিনগুলো এখন কেবল অতীত। নাঈমা নরম গলায় বলে,

“ আব্বুর জন্য চিন্তা হচ্ছে? “

নিশা আনমনে বলে উঠে,

“ আরেকজনের জন্যও। “

নাঈমা অবাক হয়ে জানতে চায়,

“ কে? “

নিশা সম্বিত ফিরে পায়। নিজেকে সামলে নিয়ে বলে,

“ দূর্জয় ভাইয়া। “

নাঈমা আর ঘাটায় না বিষয়টা। সে মনে মনে কেবল দোয়া করে সৈন্যরা সকলেই যেনো অক্ষত অবস্থায় নিজ নিজ নীড়ে ফিরে যেতে পারে।

__________

অষ্টম তলায় তিনজন আতঙ্কবাদী ছিলো। তাদের দলে আরো দু’জন ছিলো। তারা উপরের ফ্লোর গুলোতে সফলভাবে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ করতে সক্ষম হয়েছে। এই অষ্টম তলায় বোমা বিস্ফোরণ করাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য এখন। এই ফ্লোরে বেশ অনেকজন সিভিলিয়ানই আছে। সবাই কোথাও না কোথাও লুকিয়ে আছে। লুকানো ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার তাড়া নেই তাদের মধ্যে। বোমা বিস্ফোরিত হলে আশেপাশে লুকিয়ে থাকা একজনও বাঁচবে না। সবাই মরবে। একসঙ্গে মরবে।

তিনজন আতঙ্কবাদী তিনটা ভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে যখন নিজেদের হাতের রিমোট চাপতে প্রস্তুত ঠিক সেই মুহুর্তে ছয়জন সৈন্য সুকৌশলে পিছন থেকে এসে তাদের উপর ঝাপিয়ে পড়ে।

সাইফ যার উপর ঝাপিয়ে পড়েছে সে এক আত্মঘাতী বোমার পোশাক পরিধান করেছিলো। হাতে ছিলো তার রিমোট। রিমোটের লাল রঙা বাটনটায় চাপ দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অবিরত। সাইফ একহাতে সেই আতঙ্কবাদীর ঘাড় পেঁচিয়ে ধরে রেখে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“ নট ইয়েট চান্দু। আজকে একদমই মরার মুড নেই আমি। বউ এক কবুল বললো আজ। বাকি দুই কবুল না শুনে তাকে কিভাবে বিধবা হতে দেই? “

কথাটুকু বলেই অপর হাতের সাহায্যে সেই যুবকের হাতের রিমোটটা নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় সাইফ। অত:পর রিমোটটা দূরে ছুড়ে ফেলেই সেই যুবককে নিজের দিকে ফিরিয়ে এলোপাথাড়ি ঘুষি মারতে শুরু করে। নিজের শক্ত হাতের শক্তি দ্বারা মুহুর্তেই আতঙ্কবাদীর মুখের নকশা বদলে দেয়।

ঠিক সেই মুহুর্তেই অষ্টম তলার অন্য প্রান্তে একটা বিকট বিস্ফোরণ হয়। সাইফ সহ সকলেই সেদিকে চমকে তাকায়। তাদের থেকে ঠিক আনুমানিক পঞ্চাশ/ষাট হাত দূরে যেই আতঙ্কবাদী ছিলো বিস্ফোরণটা তার মাধ্যমেই হয়েছে। সাইফ এক ঘুষিতে সেই অর্ধ চেতনাহীন আতঙ্কবাদীকে অজ্ঞান করে এলোমেলো দৃষ্টি মেলে চারিপাশে তাকায়। দ্বিতীয় আতঙ্কবাদীর শিওরে দু’জন সৈন্য আছে। বাকি একজন সৈন্য ওয়াশরুম এরিয়ার ধারে সিভিলিয়ানদের খুঁজতে ব্যস্ত। নেই কে? চকিতে সাইফের মস্তিষ্কে দুটো নাম আলোড়িত হয়। তাদের সঙ্গে আসা ব্যাক আপ টিমের হারুন এবং প্রত্যয়!

মুহুর্তেই থমথমে হয়ে গেলো সাইফের মুখ। সামনে কিছুই দেখা যাচ্ছে না স্পষ্ট। ধোঁয়ার ভীড়ে লুকিয়ে আছে দুটো মানুষের জীবন প্রদীপের সত্যতা।

চলবে…

[ কপি করা কঠিনভাবে নিষিদ্ধ ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here