#তবু_সুর_ফিরে_আসে
৩৯ পর্ব
নিশাল ভেকেশন টা খুব দারুন কাটাচ্ছে। অহির সঙ্গে ওর দারুন ভাব হয়েছে। অহিকে সঙ্গে নিয়ে সাইকেল চালাচ্ছে, সুইমিং করছে, কখনো বীচে গিয়ে ফুটবল খেলছে, শপিং করছে। এর মাঝে দুই দিনের জন্য ওরা ক্রুজে গিয়েছিল।
বিশাল বড় জাহাজ দেখে হেরা পুরো হতভম্ব! নিশালও এই প্রথম এত বড় জাহজ দেখলো। দুই দিন ওরা চারজন আটলান্টিকের নীল জলের উপর ভেসে বেড়ালো।
জাহাজ বড় হয় শুনেছি তাই বলে বড় এত বিশাল ! হের অবাক হয়ে নওশাদকে বলল।
নওশাদ হেরাকে বলল, এর চেয়েও বড় জাহাজ আছে। এটা তো মোটামোটি বড় একটা জাহাজ।
আচ্ছা আপনার তো জাহাজ আছে সেগুলো কি এটার মত ?
না হেরা আমার গুলো মাঝারি সাইজের বানিজ্যিক জাহাজ। এগুলো তো বিলাসবহুল জাহাজ।
আমার কাছে এটাকে একটা শহর মনে হচ্ছে !
বলতে পারো এটা একটা শহর, কি নেই এখানে সুইমিং পুল, বার, মুভি থিয়েটার, ক্যাসিনো, রেস্টুরেন্ট সব আছে।
তাই তো দেখছি , হেরা অবাক হয়ে জাহাজের চারিদিকটা ঘুরে ঘুরে দেখছে।
সন্ধ্যায় নিশাল ইরফানের সঙ্গে থ্রি ডি মুভি দেখতে চলে গেল।
নওশাদ হেরাকে নিয়ে ক্যাসিনোতে এসে ঢুকলো।
এখানে কি হবে ?
হেরা এখানে তুমি ইচ্ছে করলে তোমার ভাগ্য যাচাই করে দেখতে পারো ।
কিভাবে ?
জুয়া খেলে ।
কি বলছেন ছিঃ ! জুয়া খেলে ভাগ্য যাচাই করব কেন ?
আরে এসো তো দেখি কি হয় ! আমি নিজেও কোনদিন খেলিনি কিন্তু খুব ইচ্ছে করতো। গীতিকে নিয়ে একবার লাস ভেগাসে ঘুরতে গেলাম কিন্তু ও আমাকে একটা ডলার নিয়েও ক্যাসিনোতে ঢুকতে দিলো না । ওর ভয়েই এই ইচ্ছে টা আমার অপূর্ণ রয়ে গেছে। চলো তোমার সঙ্গে আমার এই ইচ্ছে পূরণ করব।
না এত কষ্টের টাকা জুয়া খেলে উড়ানোর দরকার নেই হেরা বলল ।
প্লিজ হেরা প্লিজ চলো । এক স্লট খেলব !
এক স্লট শুধু মনে থাকে যেন।
ঠিক আছে আমি এক স্লট তুমি এক স্লট।
ঠিক আছে চলুন।
নওশাদ পরপর তিন বারে আঠারোশ ডলার হারলো । কিন্তু তার খেলার নেশা জিদে পরিনত হয়েছে। না জিতা পর্যন্ত নাকি সে থামবে না। হেরা টেনেও তাকে আনতে পারছে না।
এখন তুমি খেলবে হেরা এসো ।
না আমি খেলব না খেলব না , হেরা অনড় হয়ে রইলো।
কেন ?
আপনি আমার কথা শুনছেন না আমিও শুনব না । হেরা গাল ফুলিয়ে ফেলল।
আচ্ছা ঠিক আছে তুমি একবার খেলবে তারপর আর একবার খেলব আমি তারপর হারি জিতি আর খেলব না প্রমিজ।
সত্যি !
একদম জেন্টলম্যান প্রমিজ।
ঠিক আছে ।
আলো ঝলমলে ক্যাসিনো । আশেপাশে পুরুষ, মহিলা ডলার হাতে নিয়ে স্লট মেশিনের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। হেরা নওশাদের খেলা দেখেছে। হেরে নওশাদ আরো বেশি ডলার বাজি রাখতে চাইছিল । হেরার চোখ রাঙ্গানি দেখে আঠারশো ডলারেই আপাতত স্থির আছে।
হেরা খেলার জন্য দাঁড়ালো। নওশাদ খুব এক্সাইটেড হেরার ভাগ্যে কি আছে দেখার জন্য ! কয়েন দিয়ে স্লট মেশিনে খেলা শুরু হলো। হঠাৎ মেশিনের উপর লাল বাতি জ্বলে উঠলো আর বিকট শব্দে সাইরেন বাজা শুরু হলো। হেরা ভয় পেয়ে গেল! সে নওশাদের দিকে ভীত চোখে তাকাচ্ছে। নওশাদ হেরাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে উঠলো, তুমি জ্যাকপট জিতেছো হেরা !
হেরা হাসছে , সত্যি আমি তো ভাবলাম ভুল কোন বাটনে চাপ দিয়ে ফেলেছি আর সাইরেন বাজছে।
ক্যাসিনোর দুজন চাইনিজ মহিলা এসে চাবি দিয়ে সাইরেন বন্ধ করলো আর মেশিন থেকে একটা প্রিন্টেড কুপন বের করে হেরার হাতে দিয়ে বলল কাউন্টার থেকে ভাঙ্গিয়ে আনতে। হেরা নয়শ ডলারের কুপন জিতে গেল। হেরার চেয়ে বেশি নওশাদ এক্সাইটেড !
এবার জিতা হয়েছে চলেন প্লিজ।
আর একবার শুধু একবার।
না।
প্লিজ প্লিজ শেষবার।
শেষ , সত্যি করে বলছেন তো নিশালের পাপা?
সত্যি।
হেরা আর নওশাদ আবার এসে দাঁড়ালো মেশিনের পাশে। মেশিন ঘুরছে।
হেরা আর একবার সবাইকে চমকে দিয়ে এবার সে দুই হাজার ডলারের জ্যাকপট জিতে গেল। নওশাদ হেরাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মত লাফাচ্ছে ! আমি জানতাম কাঠবিড়ালী তুমি জিতবেই।
কুপন ভাঙ্গিয়ে ঊনত্রিশ শো ডলার নিয়ে হেরা ক্যাসিনো থেকে বের হতে নিলো। নওশাদ হেরাকে টানছে ! হেরা প্লিজ দান দান তিন দান আর একবার।
অসম্ভব। আপনি থাকেন এখানে যা খুশি করেন আমি এই জুয়া খেলায় আর নেই।
একবার !
একদম চুপ সোজা আমার সঙ্গে উপরে আসেন। অনেক হয়েছে আপনার ভাগ্য নির্ধারণ।
তুমি এত বেরসিক কেন হেরা ! আজ কিন্তু তোমার দিন ছিল।
আমি এমনই। কোন দিন টিন না আজাইরা কথা বলবেন না তো। আসেন আমার সঙ্গে। হেরা টেনে নওশাদকে ক্যাসিনো থেকে বের করলো।
আপনার মত নামাজী মানুষ এই জুয়া খেলে ! আল্লাহ কত গুনাহ দিবে।
একটু মজা নিলাম।
এই মজা নিতে গিয়েই পাপ টা হয় বুঝলেন।
আচ্ছা আপনি পানির মত ডলার খরচ করছেন এই দেশে এসে ,এই ঊনত্রিশ শো ডলার তো আপনার কাছে কিছু ই না তবুও আপনি খুশিতে লাফাচ্ছে। আর আঠারোশ ডলার হারাতে রাগে পাগল হয়ে আরো খেলতে চাইছিলেন কেন ?
এটাই তো ক্যাসিনোর মজা ! দেখবে মধ্য প্রাচ্যের শেখ রা আসে ব্যাগ ভরে ডলার নিয়ে তারপর হেরে চোখ মুখ চুপসে ভোর বেলায় হোটেলে ফিরে, পরদিন আবার আসে। এটা একটা নেশা।
আপনি ওদের মত না। আপনার কষ্টের একটা টাকাও আমি চাইনা জলে পড়ুক। অন্তত পাপ কেনার জন্য তো অবশ্যই না।
জীবনে প্রথম খেললাম আজ হেরা।
এটাই জীবনের শেষ বার। নিশালের পাপা, দেখুন দেশে কত বাবা মা আছে টাকার অভাবে সন্তানের চিকিৎসা করাতে পারে না ওদের কাছে এই আঠারশো ডলার অনেক টাকা ! আপনার কাছে যা কিছুই না।
সরি বললাম তো আর খেলব না। নওশাদ হেরার হাত ধরে ব্রীজ সাইডে উঠে এলো।
আমি এই পাপের ডলার কিছু করব না তারচেয়ে কোন অভাবগ্রস্ত মানুষ কে দিয়ে দিব।
তুমি যা বললে সেরকম কোন বাবা মা কে দিয়ে দিও দেশে গিয়ে ঠিক আছে।
হুম ঠিক আছে।
এখন মুড ঠিক করো। হাসো।
হুঁ।
রাতের বেলায় আলো ঝলমলে জাহাজটাকে একটা দ্বীপের মতো লাগছে। কত দেশের কত রকম মানুষ। ঘুরছে। আনন্দ করছে।
ওরা হাঁটতে হাঁটতে পুল সাইডে এসে রেলিং এর পাশে দাঁড়ালো। অনেক বাতাস এই জায়গায় । হেরার চুল উড়ছে। নওশাদ হেরার হাত ধরে গল্প করছে । হেরা কখনো হাসতে হাসতে ওর গায়ে গড়িয়ে পড়ছে নওশাদের কথা শুনে।
একটুপর নিশাল আর ইরফান মুভি দেখা শেষ করে ওদের কাছে এসে হাজির হলো। নওশাদ ছেলেকে দেখে বলল, তোমার মামনি আজ দারুন কাজ করেছে !
কি পাপা ?
ক্যাসিনোতে পর পর দুইটা জ্যাকপট জিতেছে । কিন্তু আমি হেরেছি আঠারোশ ডলার।
ওয়াও মামনি গ্রেট, নিশাল দারুন এক্সাইটেড হয়ে গেল।
মামি আপনি তো দারুন লাকি ! আমি জীবনে যতবার খেলেছি শুধুই হেরেছি।
পাপা আমি কি খেলতে পারব ? নিশাল অনুরোধে র স্বরে বলল।
না নিশাল জুয়া খুব বাজে একটা খেলা তোমার পাপাকেই আমি বকেছি।
না বাবা ওখানে বাচ্চাদের যেতে দেয় না , তুমি বড় হয়ে যেও।
নিশালের পাপা কেমন বাবা আপনি , ছেলেকে বুদ্ধি দিচ্ছেন বড় হয়ে ক্যাসিনোতে যেতে ? ছিঃ!
হেরা আমি আমার ছেলের বন্ধুর মত আমি চাই ও একবার হলেও এই মজা টা নিক। এক কাজ করব আমরা ,আমি আর নিশাল একসঙ্গে খেলব !
আপনি না প্রমিজ করলেন আর কখনো ঢুকবেন না ক্যাসিনো তে।
নিশাল আমার সঙ্গে এসো বাবা পাপার কথা শুনতে হবে না জুয়া খেলা ভালো না । আল্লাহ গুনাহ দিবে। হেরা ছেলেকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
মামনি মামনি আমি এখন তো যাচ্ছি না ক্যাসিনোতে । তুমি চিন্তা করো না। আগে বড় হই তারপর দেখা যাবে।
বড় হলেও যাবে না। তোমার পাপা শুধু দুষ্ট বুদ্ধি দেয়।
নওশাদ আর ইরফান হেরাকে দেখে হাসছে।
দুই দিন খুব আনন্দ করে ওরা বাসায় ফিরে এলো। নওশাদের ছোট ভাগ্নে ইশরাক নেপোলস থেকে বউ বাচ্চা কে নিয়ে এসেছে সবার সঙ্গে দেখা করতে ছুটি কাটাতে।
ওরা আসার পর বাসার আনন্দ যেন আরো বেড়ে গেল। সবাই মিলে মিয়ামি বীচ থেকে শুরু করে বিখ্যাত সব জায়গায় ঘুরে বেড়ালো।
দেখতে দেখতে ওদের ফিরে যাওয়ার সময় হয়ে এলো। বুবু ঘোষণা দিলো আর বাহিরে ঘোরাঘুরি র দরকার নেই। এখন বাকিদিন গুলো বাসায় থেকে সবাই মিলে সময় কাটাবে।
ইরফানের স্ত্রী মৌ ব্যাঙ্কার। কিন্তু ওর খুব বেকিং এর শখ। সে বেকিং এর উপর বিভিন্ন কোর্স করেছে। তার খুব ইচ্ছে একটা কেক, পেস্ট্রির শপ দিবে। ব্যাঙ্কের চাকরি তার ভালো লাগে না।
সে প্রতিদিন নানান রকমের কেক বানিয়ে খাওয়াচ্ছে সবাই কে। হেরা ওর কাছ থেকে দেখে শিখার চেষ্টা করছে।
একদিন হেরা মৌ এর কাছ থেকে শিখে কেক বানিয়ে খাওয়ালো সবাই কে। নওশাদ তো মুগ্ধ হেরার বানানো কেক খেয়ে!
বুবু বলল, তোর বউ প্রথম বানিয়েছে খুব ভালো হয়েছে এখন ওকে একটা গিফট দিতে হয় তো আমাদের। তুই কি দিবি বাবু?
আমি গিফট তো একটা দিবই , কিন্তু সেটা হেরাকে যে শিখিয়েছে তাকে। নওশাদ ঘোষণা করলো মৌ তুমি পেস্ট্রি শপ যখন দিবে আমি ফিন্যান্স করব তোমাকে। ইনভেস্টমেন্ট আমার , বাকি কাজ তোমার।
মৌ খুব খুশি হয়ে গেল, থ্যাংকস মামা আমি আপনাকে জানাব ।
ঠিক আছে।
ওদের চলে আসার দুই দিন আগে থেকেই জান্নাত আজমী চোখের পানি ফেলা শুরু করলেন।
বাসাটা আনন্দে ভরে ছিল! আবার খালি হয়ে যাবে।
নওশাদ বলল, তুমি চলো আমাদের সঙ্গে।
বললেই কি যেতে পারি নাতি টা ছোট ওকে রাখবে কে ? ডে কেয়ারে দিব না এত ছোট বাচ্চা।
আচ্ছা ঠিক আছে ও একটু বড় হোক তখন ওকে নিয়ে তুমি চলে এসো বুবু।
বাবু আমি যে কথাটা বলে এসেছিলাম মনে আছে তোর ?
কোন কথা ?
ঐ যে তোর আর হেরার বাচ্চা নেয়ার কথা ।
বুবু হেরার গ্রেজুয়েশন টা আগে হোক ,সময় তো রয়েছেই!
ঠিক আছে মাথায় রাখিস তুই।
আচ্ছা বুবু আমার মাথায় না থাকলেও তুমি ফোন দিয়ে দিয়ে মনে করিয়ে দিবে আমাকে আমি ভালো করেই জানি, নওশাদ হাসতে হাসতে বলল।
তোকে নিয়ে চিন্তায় থাকি !
আর কেন দুশ্চিন্তা করো আমাকে নিয়ে আমি তো এখন ভালো আছি বুবু ? তুমি খালি খালি চিন্তা করে ব্লাড প্রেসার বাড়াও।
শোন হেরা কোন গুড নিউজ দিলেই আমি সঙ্গে সঙ্গে দেশে চলে যাব !
কেন , নওশাদ অবাক হয়ে তাকালো বোনের দিকে?
কেন আবার ওর যত্ন করার জন্য । তোর বাসায় একটা কেউ আছে ওর খেয়াল রাখার জন্য।
কি বলো বাসা ভর্তি কাজের লোকজন !
কাজের লোকজন রাখবে ঐ অবস্থায় হেরার খেয়াল ? কি যে বলিস বাবু ! গীতির সময় আম্মা বেঁচে ছিল, গীতির মা ছিল বোনরা ছিল কিন্তু হেরার তো ইহ দুনিয়ায় তুই ছাড়া কেউ নেই । তুই রাখবি খেয়াল তাহলে তো হয়েছে !
কেন আমি খেয়াল রাখতে পারব না , তোমার কি মনে হয় ?
পারবি না । তুই ওকে রেখে দেশ বিদেশ করে বেড়াবি সে আমি ভালো করেই জানি !
ঠিক আছে বুবু যখনের টা তখন দেখা যাবে । ওসব অনেক দেরি আছে । আর একটা কথা তুমি এসব কথা হেরাকে বলতে যেও না ও খুব লজ্জা পাবে ।
আচ্ছা বলবো না যাহ।
কিন্তু দেখ কি খারাপ লাগছে চলে যাবি তোরা এটা ভেবেই।
যেতে তো হবেই বুবু ! তুমি মন খারাপ করো না ।ভিডিও কলে দেখা হচ্ছে তারপর আর কেন মন খারাপ করে থাকা বলো ।
হুম এখন তো ভিডিও কল ই ভরসা ।
দেশে চলে আসার পর নওশাদ তার বিজনেস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল। হেরার ভার্সিটিতে সামার ভেকেশন চলছে। এলিন, নাহিন গিয়েছে ওর বাবা মায়ের কাছে। নিশাল আর বীথির অস্ট্রেলিয়া যাওয়া আপাতত মনে হয় হচ্ছে না। ওরা দেশে আসার আগেই বীথির স্বামী হাসিব সিঁড়িতে পিছলে পড়ে পা ভেঙ্গে গেছে। দেশে এসে নওশাদ হেরা আর নিশালকে সঙ্গে নিয়ে বীথির বাসায় গিয়ে দেখে এসেছে হাসিব কে ।
ডাক্তারের ভাষ্যমতে মাস দেড় মাস লেগে যেতে পারে প্লাস্টার খুলতে ।
বীথির সঙ্গে নিশালের আর যাওয়া হলো না অস্ট্রেলিয়া ।
নিশালকে তবুও নওশাদ বলল, তুমি যদি যেতে চাও নানুকে দেখতে তাহলে আমি প্লেনে তুলে দেই মামা তোমাকে রিসিভ করতে তো আসবেই । যাবে তুমি ?
থাক পাপা । পরে যাওয়া যাবে ।
নিশাল তার বাকি ভেকেশন বাসায় অলস সময় পার করেই কাটাচ্ছে। হেরা আর ও প্রায় সময়ই ঘুরতে বের হয়। শপিং করে।
এলিন, নাহিন ছুটি শেষ করে বাসায় আসতেই আবার বাসায় হৈচৈ শুরু হয়ে গেল।
নওশাদ একদিন ওদের হৈচৈ দেখে হেরাকে বলল, তোমরা যা করছো এবার নিশাল কলেজে গেলে ওর খারাপ লাগবে । ওর মন পরে থাকবে তোমাদের এই হৈচৈ করাতে।
আমারো তাই মনে হচ্ছে । আমার যে কি খারাপ লাগবে নিশাল চলে গেলে।
ভার্সিটি খুলতেই হেরাও ক্লাস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেল। এলিন, নাহিনদের সঙ্গে ক্যাফেতে বসে আড্ডা দেয়া হচ্ছে না তার। একদিন ক্লাস শেষে বাসায় আসার সময় ডিপার্টমেন্টের সামনে মাহাদীর সঙ্গে দেখা ।
কি খবর লজ্জাবতী তুমি এভাবে ডুব দিলে যে দেখাই পাচ্ছি না ! মেসেঞ্জারে মেসেজ ও সীন করো না ।
হেরা কি বলবে বুঝতে পারছে না । শুধু বলল,আমি ফেসবুকে খুব একটা বসি না ।
তোমার ফ্লোরিডা ট্রীপের ছবি দেখলাম দারুন ইনজয় করেছো দেখে ই বোঝা যাচ্ছে।
ফ্যামিলি সঙ্গে থাকলে এনজয়মেন্ট অনেক বেশি হয় এটাই তো স্বাভাবিক।
আমি অবশ্য এত কিছু দেখিনি ,আমি মুগ্ধ হয়ে তোমার ছবি দেখেছি !
জ্বি !
কিছু না। তোমার ক্লাস শেষ চলো ক্যাফের দিকে যাই ।
না আমাকে বাসায় ফিরতে হবে , তাড়া আছে ।
তোমার বিজনেস ম্যান হাজব্যান্ড নিশ্চয়ই এই দুপুর বেলা তোমার পথ চেয়ে বসে নেই , তাহলে এত তাড়া কিসের ?
হাজব্যান্ড ছাড়াও তাড়া থাকতে পারে না। বাসায় আমার ছেলে আছে লাঞ্চে ও অপেক্ষা করবে আমার জন্য।
তোমার ছেলে, দারুন বলেছো । কথাটা বলেই মাহাদী হো হো করে একটা ব্যঙ্গ অট্টোহাসি দিলো।
হেরা তাকিয়ে রইলো তীব্র চোখে । গাড়ি নিয়ে সবুজ চলে আসতেই সে গাড়িতে উঠে গেল।
মাহাদি ওখানেই হাসি মুখে দাঁড়িয়ে রইলো ওর দিকে তাকিয়ে।
সন্ধ্যায় হেরা এলিন, নাহিনের সঙ্গে মাহাদীকে নিয়ে ওর অস্বস্তির প্রসঙ্গ তুলল। সব শুনে ওরা খুব একটা পাত্তা দিলো না ।
বৌমনি দেখো ও অনেক ভালো একটা ছেলে তুমি চিন্তা করো না ও সবার সঙ্গে এমন করে, নাহিন বলল।
কিন্তু আমার ভালো লাগছে না নাহিন।
আশ্চর্য তুমি এভাবে রিয়েক্ট করছো কেন বন্ধুর সঙ্গে একটু মজা করেছে ! আর তোমার কত সুন্দর ছবি তুলেছে দেখো। ইসস ও যদি এত সুন্দর একটা ছবি আমাকে তুলে দিতো তাহলে তো আমি খুব খুশি হতাম।
আমি কেন জানি খুশি হতে পারছি না নাহিন ।
এলিন হেরাকে বলল, ঠিক আছে আমি বলে দেবো ও যেন তোমার অনুমতি ছাড়া ছবি না তোলে ।
আর এমন মেসেজ যেন না পাঠায় , তোমাদের মত নিশালের পাপাও পাত্তা দিলো না ব্যাপারটা !
কি ! বৌমনি তুমি এই কথা ভাইয়ার সঙ্গেও বলে ফেলেছো ? নাহিন অবাক হয়ে বলল!
হ্যাঁ উনার কাছে আমি কিছু গোপন করি না !
তাই বলে এগুলোও বলতে হবে ?
নাহিন আমি সম্পর্কের মধ্যে স্বচ্ছতা থাকাটাকে বেশি প্রাধান্য দেই।
বৌমনি তোমাকে কি জান্নাতুল ফেরদৌসেই যেতে হবে আর কোন ছোটখাটো বেহেস্তে গেলে হবে না , হাসতে হাসতে নাহিন বলল ?
হ্যাঁ আমাকে ওখানেই যেতে হবে বলে হেরাও হেসে দিলো।
নিশালের যেদিন রেজাল্ট বের হলো সেদিন ছিল গীতির মৃত্যুবার্ষিকী । অন্য বার নওশাদ দিনটা নিজের মতো কাটায়। সকালে কবরস্থানে যায়। অনেকক্ষণ গীতির কবরের পাশে বসে থাকে। তারপর বাসায় এসে চুপচাপ নিজের ঘরেই থাকে। শোয়েব সেদিন খুব ব্যস্ত থাকে। কারণ তাকেই করতে হয় এতিমখানায় এতিমদের খাবার পাঠানোর জন্য সব কিছু । নওশাদের সকল ফ্যাক্টরিতে লেবারদের সেদিন খাবার দেয়া হয় দোয়া পড়ানো হয়। নওশাদ ওসব কিছুর মধ্যে থাকে না সে নিজের ঘরে একা থাকতেই পছন্দ করে। ওকে সেদিন কেউ ডাকাডাকি করে না। যুথী,বীথি বাসায় আসে নওশাদ সেদিন ওদের সামনেও আসে না। কিন্তু নিশাল বাসায় থাকলে ছেলেকে নিয়ে যায় কবরস্থানে। নিশাল তার পাপার মতো এতটা শোকাহত হয়ে থাকে না। সে তার স্বাভাবিক জীবনযাপনই করে ।
আজ সকাল থেকে হেরা একটু বিচলিত সে কি করবে তাই চিন্তা করছে। সকালে তার পরীক্ষা ছিল তাই সে ভার্সিটিতে চলে গিয়েছিল। যাওয়ার আগে দেখেছে নওশাদ ফোনে কথা বলাতে ব্যস্ত তাই সে আর কোন কথা বলেনি। কাছে দাঁড়িয়ে শুধু বলেছে, আমি আসলাম।
নওশাদ চোখে শুধু ইশারা করলো আর কিছু বলেনি।
পরীক্ষা শেষে বাসায় এসে দেখে নওশাদ আর নিশাল বাসায় নেই ওরা কবরস্থানে গিয়েছে।
আনারের মা ওকে দেখে কাছে এসে বলল, স্যার সকাল থেকে খায় নাই কিছু আম্মা।
নিশাল খেয়েছে ?
ভাইয়ারে জোর কইরা খাওয়াইছি আমি।
আনারের মা আমি বুঝতে পারছি না তোমার স্যারকে কি বলব ? খাওয়ার কথা বললে কি উনি রাগ করবেন ?
না আম্মা রাগ করতো না তবে খাওয়ার সম্ভাবনা নাই। স্যারের আজ মনডা খারাপ। এদিকে পারুল শয়তান মাইয়া, দাদারে কইছে আজ আম্মার মৃত্যুবার্ষিকী স্যার কবরস্থানে গেছে কিন্তু দাদা শুনছে আইজ আম্মা মারা গেছে সবাই কবর দিতে গেছে এখন দাদা কানতাছে কবরস্থানে যাইব ডাকাডাকি করতাসে সবাইরে। কি করতে মন চায় পারুলরে কন আম্মা ?
থাক আজ বাসায় চিল্লাচিল্লি করো না ,আমি আব্বার সঙ্গে কথা বলে ঠান্ডা করছি।
হেরা শ্বশুরের রুমে গিয়ে শ্বশুর কে বুঝিয়ে বলল আজকে কোন দিন। হেরার কথা শুনে শ্বশুর বুঝেছে কিন্তু কান্নাকাটি করতে করতে বললেন, তুমি যাও বাবুকে এখানে আসতে বলো আমি ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেই আজ ওর অনেক কষ্টের দিন।
জ্বি আব্বা আমি আপনার ছেলেকে পাঠিয়ে দিচ্ছি কিন্তু আপনি কাঁদলে উনি কষ্ট পাবেন আপনি আগে কান্না বন্ধ করুন।
আমার দাদু ভাই কে আসতে বলো ওর ও আজ অনেক কষ্টের দিন।
সবাই কে আসতে বলব আপনি শান্ত হোন আগে।
ঠিক আছে বৌমা।
হেরা শ্বশুরের রুম থেকে বের হয়ে দেখে নিশাল লিভিং রুমের সোফায় শুয়ে মোবাইলে গেমস খেলছে।
তোমার পাপা চলে এসেছে, হেরা নিশালের পাশে বসতে বসতে বলল ?
হ্যাঁ পাপা রুমে ।
হেরা নিশালের মাথায় হাত রাখলো, তোমার কি অনেক বেশি মন খারাপ বাবা ?
অনেক বেশি না কিন্তু খারাপ লাগছে মামনি। এই জন্য না যে আজ মাম্মার মৃত্যুবার্ষিকী !
তাহলে কেন মন খারাপ ?
আমার রেজাল্ট দিয়েছে মামনি কিন্তু মাম্মা সেটা জানতে পারলো না তাই মন খারাপ। আজ মাম্মা থাকলে অনেক খুশি হতো। অনেক হৈচৈ করতো। কিন্তু দেখো মাম্মার মৃত্যুবার্ষিকীর দিনই রেজাল্ট পাবলিশ হতে হলো !
তোমার মাম্মা ঠিকই জানতে পেরেছে তোমার রেজাল্ট ।
কিভাবে ? নিশাল উঠে বসে হেরার দিকে তাকালো।
যেসব বাচ্চাদের মা তাদের ছোট রেখে মারা যায় তারা বড় না হওয়া পর্যন্ত তাদের মায়েদের আত্মা বাচ্চাদের কাছাকাছিই থাকে ।
সত্যি ?
হুঁ।
তাহলে তো বড় হয়ে যাওয়াটা ঠিক হবে না কি বলো?
কখন শুনলে রেজাল্ট ?
মাত্রই ফ্রেন্ড ফোন দিয়ে বলল।
পাপাকে বলেছো ?
না , পাপার মন খারাপ থাক এখন বলার দরকার নেই।
এক কাজ করো নিশাল, তুমি পাপার কাছে গিয়ে পাপাকে বলে এসো দেখবে পাপার মন ভালোও হয়ে যেতে পারে ।
আজকে পাপা অনেক আপসেট মামনি ।
সেজন্যই বলছি চলো আমরা যাই ভালো খবরটা দিয়ে আসি।
হেরা নিশালকে নিয়ে নিজের ঘরে ঢুকলো ! ঘর অন্ধকার করে নওশাদ ইজি চেয়ারে শুয়ে আছে।
হেরা নওশাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো নিশালকে সঙ্গে নিয়ে। নওশাদ চোখ মেলে দুজনকে দেখে বলল, কিছু বলবে ?
নিশাল একটা সুখবর দিতে এসেছে আপনাকে । শুনলে আপনার মন ভালো হয়ে যাবে।
সুখবর , কি ?
পাপা আমার রেজাল্ট দিয়েছে আমি গোল্ডেন ফাইভ পেয়েছি ।
নওশাদের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল ছেলের মাথায় হাত রাখলো কনগ্রচুলেশন বাবা । এটাতো দারুন খবর তোমার কি লাগবে বলো। পাপা তুমি যা চাও তাই দিবে ।
আমার কিছু লাগবে না পাপা ।
এটা কেমন কথা কিছু লাগবে না ! ভালো রেজাল্ট করেছো তোমাকে অবশ্যই আমি একটা ভালো গিফট দিব।
পরে দেখা যাবে । পাপা তুমি রেস্ট নাও আমি রুমে যাচ্ছি।
ঠিক আছে।
নিশাল বের হয়ে যেতেই হেরা নওশাদের পাশে এসে বসল। মাথায় হাত রাখলো।
নিশাল কিছু খেয়েছে হেরা ?
সকালে ব্রেকফাস্ট করেছে আপনি তো সেটাও করেননি।
ইচ্ছে করছে না।
নিশালের খুব মন খারাপ। আমাকে বলল, আজ মাম্মা থাকলে রেজাল্ট শুনে খুব আনন্দ করতো, হৈচৈ করতো ।
নওশাদ চুপচাপ শুনছে কথা গুলো।
হেরা কিছুক্ষণ চুপচাপ নওশাদের পাশে বসে থেকে উঠে গেল। নওশাদের ডাকে আবার কাছে এসে দাঁড়ালো ।
হেরা ।
জ্বি।
একটা কাজ করবে ।
বলুন।
ছেলেটার জীবনে একটা বিশেষ দিন আজ এত ভালো রেজাল্ট করলো তুমি কিছু একটা করবে যেন ওর মন ভালো হয়ে যায়।
আমি বলি কি আপনি ওকে কাছে ডেকে ওর সঙ্গে স্বাভাবিক একটা দিনের মত সময় কাটান দেখবেন ওর মন ভালো হয়ে যাবে। ছেলের সঙ্গে বসে লাঞ্চ করেন ওর মাম্মাকে নিয়ে দুইটা কথা বলেন দেখবেন ওর মন খারাপ টা কমে যাবে। আপনার যেমন কষ্টের দিন আজ তো ওরও কষ্টের দিন । দুজন একসঙ্গেই কষ্টটা ভাগাভাগি করে নিন তাহলে দেখবেন ওর ভালো লাগবে।
আমার কিছু করতে ইচ্ছে করছে না হেরা।
আপনি চাইছেন ছেলের মন ভালো করতে আর ছেলে মন খারাপ করে বসে আছে কারণ তার পাপার মন আজ খুব খারাপ । তাহলে কিভাবে হবে?
ওর রেজাল্ট দিলো তাই বলছিলাম হেরা।
ঠিক আছে কি করা যায় দেখি। হেরা রুম থেকে বের হয়ে এলো।
একটুপর নওশাদ নিজেই রুম থেকে বের হয়ে নিশালকে ডেকে নিয়ে একসঙ্গে লাঞ্চ করলো। হেরা তাকিয়ে দেখছে এত বছর যে মানুষটা নিজের কষ্ট নিজের মাঝে নিয়ে দিন কাটাতো আজকের দিনে । সেই মানুষটা ছেলেকে নিয়ে স্বাভাবিক দিনের মত খাচ্ছে গল্প করছে। নিশালও তার পাপার সঙ্গে স্বাভাবিক ভাবেই কথা বলছে।
সন্ধ্যার আগে আগে সুমনা আর রেজোয়ান একটা কেক নিয়ে এলো নিশালের জন্য।
সুমনা নিশালকে জড়িয়ে ধরে বলল, মিষ্টি মুখ না করাই কেক মুখ তো করাতেই পারি ছেলেটাকে ।
নওশাদ তাকিয়ে দেখে নিশালের চোখে মুখে আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে। ওর ভাইয়েরাও তাদের ফ্যামিলি নিয়ে এসেছে নিশালকে কনগ্রাচুলেট করতে।
সুমনার কাছে এসে নওশাদ বলল, থ্যাংকস সুমনা আমার ছেলেটা খুব মন খারাপ করে ছিল তোমরা এসে ওর মন ভালো করে দিলে। আমার সামনে নরমাল দেখাচ্ছিল নিজেকে কিন্তু আমি তো জানি ওর ভেতরে কত কষ্ট হচ্ছিল।
নওশাদ থ্যাংকস আমাকে না হেরাকে দিও , ও আমাকে ফোন দিয়ে বলল নিশালের জন্য একটা কেক নিয়ে যেন আসি আমরা । ওর খুব মন খারাপ।
নওশাদ দূর থেকে হেরাকে কৃতজ্ঞ চোখে তাকিয়ে দেখছে । হেরা নিশালের মুখে কেক তুলে দিচ্ছে। নওশাদের মনে হচ্ছে গীতি থাকলেও আজ হয়তো এভাবেই ছেলের মুখে মিষ্টি তুলে দিতো। নওশাদের বারবার মনে হচ্ছে ,ভেতরে ভালোবাসার অনুভূতি টুকু ধারন করতে পারলেই সম্পর্কের নাম যাই হোক একটা ভালোবাসার বন্ধনে বাঁধা পড়বেই।
হেরা ভেবেছিল অনেকদিন গ্যাপ ছিল তার পড়াশোনার তাই হয়তো সে খুব একটা ভালো করতে পারবে না । কিন্তু প্রথম সেমিস্টার টা কোন রকম রেজাল্ট করলেও দ্বিতীয় সেমিস্টারে সে আশানুরূপ ভালো রেজাল্ট করলো। আজ রেজাল্ট দেখে ওর এত খুশি লাগছে তার ইচ্ছে করছে নওশাদের কাছে দৌড়ে এসে খবর টা দিতে । কিন্তু উনি অফিসের কাজে চায়না গেছেন। এবার যাওয়ার সময় হেরাকেও নিয়ে যেতে চেয়েছিল কিন্তু নিশালের পেরেন্টস মিটিং ছিল তাই ইচ্ছে করে হেরা যায়নি। হেরা কখনো নিশালের পেরেন্টস মিটিং গুলো মিস করতে চায় না। নওশাদও যায় সঙ্গে। অনেক দিন পর নওশাদ এবার থাকতে পারেনি। খুব ইচ্ছে ছিল তার কিন্তু কোনভাবেই চায়না ট্রীপটা পোস্টপন করা গেল না।
গত এক বছরে নওশাদ বিজনেস এর কাজে দেশের বাহিরে যেখানে যায় হেরাকে সঙ্গে নিয়ে যায়। হেরার ও খুব ভালো লাগে নওশাদের সঙ্গে নতুন নতুন দেশে ঘুরতে। অফিসের কাজে যে সময়টা নওশাদ ব্যস্ত থাকে সেই সময়টুকু হেরা হোটেলেই কাটায় বাকি সময়টা দুজন ঘুরে বেড়ায়। নওশাদ যদি কোন কারণে হেরাকে না নিয়ে যায়, নিশাল খুব রাগ করে পাপার উপর। তার খুব ভয় করে বীথি খালামনি কে নিয়ে।
ইদানিং খালামনির হাবভাব সে বুঝতে পারে না। নিশাল যে তার কাছ থেকে দূরত্ব তৈরি করে নিয়েছে সেটা দেখে মনে হচ্ছে খুব সহজে মেনে নিয়েছে কিছু বলছে না। তাই আরো বেশি ভয় হচ্ছে নিশালের।
গত ছুটিতে নিশাল বীথির বাসায় একদিন সারাদিন ছিল। বীথি তাকে একবারও কেন ছুটির সময়টা বেশি বেশি ওর কাছে কাটাচ্ছে না এসব কিছু বলেনি। খুব নরমাল ব্যবহার করেছে।
নিশালই আগ বাড়িয়ে বলল, বুঝলে খালামনি কলেজে উঠে দেখি অনেক পড়া। পড়তে পড়তে আমার জীবন শেষ।
বীথি হেসে বলল তাই বুঝি ?
কি বলবো এই যে বাসায় এসেছি কোন ছুটি আছে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি, ম্যাথ টিচারদের কাছে পড়তে পড়তে দিন পার হচ্ছে।
ভালো রেজাল্ট করতে হলে পড়াশোনা তো করতেই হবে নিশু।
সেটাই।
হেরার রেজাল্ট দেখে এলিন, নাহিন খুব খুশি হলো।
বৌমনি ট্রীট দাও । দুইবোনের সঙ্গে ওদের বন্ধুরাও হেরার পিছনে লেগে গেল। চলো আজই খাওয়াবে।
হেরা অবাক হয়ে বলল, আজ !
কোন সমস্যা বৌমনি , এলিন প্রশ্ন করলো?
না কোন সমস্যা নেই।
মাহাদি কাছে এসে বলল, তোমাকে খাওয়াব , না আমাদের খাওয়াবে কোনটা বলো যা হবে আজই।
হেরার এই ছেলের এই অধিকার বোধ নিয়ে কথা বলাটা ভালো লাগে না।
আমিই খাওয়াবো সমস্যা নেই চলো তোমরা কোথায় খাবে।
সবাই মিলে হৈচৈ করতে করতে রেস্টুরেন্টে চলে গেল।
মাহাদি হেরার কাছে এসে বলল, তুমি বড়লোকের বৌ তাই দামী রেস্টুরেন্টেই নিয়ে এলাম সমস্যা নেই তো ?
না সমস্যা নেই । তুমি মনে রেখো কথাটা আমি কারো বৌ তাহলেই হবে মাহাদি ।
ও মাই গড লজ্জাবতী ফুল দেখি কথা জানে ? মাহাদি হেসে বলল।
মাহাদি লজ্জাবতী ফুল দেখেছো ওর গায়ের কাঁটা গুলো দেখোনি ? প্রয়োজনে ও কিন্তু কাঁটা ফুটিয়েও দিতে পারে হেরা হেসে বলল।
আমি ভয় পাচ্ছি হেরা।
কিছুটা ভয় থাকা ভালো মাহাদি। এলিন বলে উঠলো হয়েছে হয়েছে আর তর্ক করতে হবে না। এখন খাবারের মনোযোগ দাও তোমরা।
হেরা এখন আর মাহাদি কিংবা কারো কথাই গুটিয়ে যায় না। সম্ভব হলে কিছু উত্তর দিয়ে দেয় সে।
নাহিন এগিয়ে এসে বলল, কোল্ড ড্রিংকস তো কোকই খাবে তুমি বৌমনি। ঠান্ডা কোক খাও মেজাজ ঠান্ডা হবে।
মেজাজ ঠান্ডা আছে আমার আমি কোন কোল্ড ড্রিঙ্কস খাব না কয়েকদিন থেকে কোল্ড ড্রিঙ্কস, পানি খেতে অসহ্য লাগছে। মনে হয় গলা দিয়ে নামছে না। পানি দেখলেই রাগ লাগছে। তোমার বন্ধু মাহাদিকে দাও ঠান্ডা কোক ওর মাথা হয়তো গরম হয়ে গেছে।
ও কঠিন চীজ তোমার এসব কথায় ওর কিছু হবে না। নাহিন হাসছে।
তুমি লেমোনেড নাও অন্তত , নাহিন হেরার দিকে গ্লাস এগিয়ে দিলো।
এগুলো আরো অসহ্য লাগছে খেতে।
আমার মনে হয় বৌমনি তোমার ঠান্ডায় টনসিল ফুলেছে তাই পানি গিলতেও অসহ্য লাগছে।
হতে পারে।
কি জানি ভাইয়া দেশে নেই সেই বিরহে তুমি আবার অসুস্থ হয়ে গেছো হয়তো। বলেই নাহিন হেসে দিলো ওর সঙ্গে বাকি সবাইও হাসছে । শুধু মাহাদি ছাড়া।
( চলবে)