রোদরঞ্জন #পর্ব_১১ #আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

0
416

#রোদরঞ্জন
#পর্ব_১১
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ। কার্টেসি সহ কোনো পেজেও কপি করা যাবে না।]
.
.

গভীর রাত। মেঘেদের তান্ডবে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। ক্ষণে ক্ষণে ডেকে উঠছে আকাশ, বিস্ফোরণের মতো আওয়াজ করে। বারান্দার কাঁচে আছড়ে পড়ছে বৃষ্টির ছাঁট। ফেইরি লাইট জ্বালানোর কারণে রুমটাকে স্বপ্নের মতো লাগছে। ইনান ঘুমে আচ্ছন্ন। কিছুক্ষণ পরপরই ঘুমের ঘোরে কিছু বিড়বিড় করে আবার কোমল বালিশে মুখ তলিয়ে দিচ্ছে। বিড়বিড় করার সময় ইনানের লাভ শেপের গোলাপী ঠোঁট দুটো হালকা ফাঁক হয়ে আবার ওষ্ঠাধর মিলিত হচ্ছে। আর এই সম্মোহনকারী ঠোঁটের দিকে পলকহীন চেয়ে আছে জেহফিল। তার ইচ্ছে করছে ইনানের ঠোঁটদুটো নিজের মাঝে নিয়ে নিতে। তন্দ্রায় আচ্ছন্ন ইনানকে তার কাছে আকাশ থেকে নেমে আসা লিটল ফেইরি মনে হয়। যদিও ইনান সুপারম্যানের প্রিন্ট করা ওভারসাইজড টি-শার্ট আর শর্ট প্যান্ট পরে আছে, তাও ইনানের সৌন্দর্যকে জেহফিলের চোখ হতে আড়াল করতে পারছে না।

জেহফিল ইনানের খাটের পাশে বসে। এক হাত ইনানের চুলে, আরেক হাতে ইনানের হাত আলতো করে চেপে ধরে আছে। জেহফিলের ইচ্ছে করছে ইনানের হাতটা নিয়ে তার এলোমেলো চুলে রাখতে। জাগ্রত অবস্থায় ইনানের সন্নিকটে না আসতে পারলেও, ঘুমন্ত অবস্থায় ইনানের সান্নিধ্য নাহয় একটু পেলো! কিন্তু জেহফিলের অভীপ্সা মন নামক অদৃশ্য কুঠুরিতেই বন্দী থেকে গেল। পাছে ইনানের ঘুম ভেঙ্গে যায়!

ম্যাসেজের টুং টাং শব্দ জেহফিলকে ঘোর থেকে বেরিয়ে আনে। ইনানের মাথার কাছে মোবাইলে অনবরত ম্যাসেজ আসছেই আসছে। জেহফিলের সুন্দর সময়টা নষ্ট করায় মোবাইলের উপর এত রাগ উঠল যে প্রায় আছাড়ই দিয়ে ফেলছিল। তবে নিজেকে সামলায় তার বাটারফ্লাইয়ের ঘুম ভেঙে যাবে বলে। জেহফিল সাবধানে ইনানের মোবাইলটা হাতে নেয়। ব্রাইটনেস কমিয়ে লক খুলে। আড়চোখে ইনানের ফোনে সবসময় উঁকি দেওয়ায় লক খুলতে কষ্ট হয়নি। হোয়াটসঅ্যাপে একটার পর একটা নোটিফিকেশন আসছে। এসব আসছে ইনানের ফ্রেন্ডরা মিলে তৈরি করা গ্রুপ থেকে। সেখানে তিনজন এই মধ্যরাতেও মেসেজ করছে। “বেয়াদব অসভ্যদের চোখে ঘুম নেই?” বিরক্তির সাথে মনে মনে বলল জেহফিল।

যতগুলো মেসেজে ইনানের রিপ্লাই ছিল সবগুলো কনভারসেশন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ল জেহফিল। হোয়াটসঅ্যাপে কার কার সাথে কথা বলে সব দেখল, ম্যাসেন্জার আর ইন্সটাও বাদ গেল না। ইনানের ফ্রেন্ডের অভাব নেই। সবার সাথেই তার ভাব। তাদের সাথে এত কথা দেখে জেহফিলের কপালের রগ ফুলে উঠল। এত কথা কিসের এসব আলতু ফালতু ফ্রেন্ডসের সাথে? কাজের তো কোনো কথা খুঁজে পেল না। কে কোথায় বেড়াতে গিয়েছে, কে ইন্ডিয়ায় কী খেয়েছে, কে জাপানে শপিং করেছে, এসব ইউজলেস কথাবার্তায় ভর্তি। জেহফিল খেয়াল করল ইনান এখনো কাউকেই তাদের বিয়ের খবরটা জানায়নি। কেন, তা জানতে হবে ইনানের কাছ থেকে? তারমধ্যে কিছু সংখ্যক ছেলে ইনানের সাথে ফ্লার্ট করার চেষ্টা করছে। ইনান যদিও রিপ্লাই দেয় না তাও জেহফিলের রাগ উঠে গেল।‌ বাটারফ্লাই কেন এদের ব্লক করল না? কেন কিছু বাংলা গালি দিলো না?

ইনানের হয়ে জেহফিল সবগুলো ছেলেকে ব্লক করে দিলো, এমনকি ফ্রেন্ডদেরকেও। যত গ্রুপ আছে সবগুলো থেকে লিভ নিলো।

ইনানের মোবাইল পরীক্ষা করা শেষে জেহফিল খাটের উপরে ছুঁড়ে মারল মোবাইলটা‌। রাগে দাঁত খিঁচে রেখেছে সে। ইনানের ঘুমন্ত মুখে নজর দেওয়ার সাথে সাথেই তার রাগ গলে পানি হয়ে গেল। ঝুঁকে পড়ে ইনানের কপালে চুমু খেল। পাতলা চাদর জড়িয়ে দিলো ইনানের গায়ে‌। চুলগুলো এক সাইডে নিয়ে ভাঁজ করে রাখল যাতে ইনানকে তারা বিরক্ত না করে। কী মিষ্টি একটা মেয়ে!! জেহফিল মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে রইল। তার ইস্পাতের মতো শক্ত হাতের আঙুল ইনানের নরম তুলতুলে গালে স্লাইড করতে লাগল।

ফিসফিস করে বলল,’ইউ আর সো প্রীটি মাই বাটারফ্লাই। প্রীটি লাইক অ্যান এঞ্জেল।’

জেহফিল ইনানকে গুড নাইট চুমু দিয়ে ইনানের পায়ের কাছে মাথা রেখে শুয়ে পড়ল। ইনানের পায়ে নিজের হাত প্যাঁচাতে ভুলল না।
.

.

ইনানের ঘুম ভাঙল কঠিন বজ্রপাতের শব্দে। ধড়ফড় করে উঠে বসল সে। তার বুক এখনো ঢিপঢিপ করছে। এখনো রুম অন্ধকার। ইনান মোবাইল হাতে দেখল সাড়ে সাতটা বাজে, অথচ বাহিরে তাকালে মনে হয় এখনো নিশিরাত। ইনান হাই তুলে খাট থেকে নামতে গিয়ে পায়ে বাঁধা পেল। দেখল জেহফিল তার পায়ের কাছে পা জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। ইনান ভ্রু কুঁচকে তাকালো। তাদের বিয়ের এক সপ্তাহ রানিং। তবে ইনান জেহফিলের সাথে এক রুমে থাকে না। পাশের রুমটা জেহফিলের। ইনান মূলত সময় চেয়েছে, হুট করেই তো কিছুদিনের পরিচয়ের ছেলের সাথে বেড শেয়ার করতে পারে না। তার আনইজি ফিল হয়। নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার জন্য ইনান সময় চেয়েছে। আর এই এক সপ্তাহের প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই জেহফিলকে তার পায়ের কাছে দেখতে পায়।

ইনান চাদরে নিজের পা ভালো করে ঢেকে নিলো। তারপর জেহফিলের দিকে এগিয়ে তাকে উঠানোর চেষ্টা করল। মুখ দিয়ে আওয়াজ বের করতে গিয়েও হঠাৎ থমকায় সে। জেহফিলকে দেখে চোখ আটকে যায়। জেহফিলের গায়ের রং শ্যামলা, ইনানের কাছে মনে হয় এই রংটা একমাত্র জেহফিলের জন্যই পারফেক্ট। জেহফিলকে দারুণ মানিয়েছে এই চাপা রং। শ্যামসুন্দর সুপুরুষ! না চাইতেও ইনানের হাত জেহফিলের খোঁচা খোঁচা দাঁড়িতে চলে গেছে। সূচের মতো হাতে ফুটলেও ভালো লাগছে। জেহফিলের ঘাড় অবধি সিল্কি চুলগুলো বাতাসে উড়ছে। জেহফিলের চোখ দুটো ইনানের সবচেয়ে পছন্দের। বিশেষ করে চোখের পাপড়িগুলো। বড় বড় পাপড়িতে আবদ্ধ ধূসর চোখজোড়া। ইনানের তো মাঝে মাঝে হিংসে হয় জেহফিলের আইল্যাশ দেখে। ছেলেদের এত সুন্দর চোখ কেন হতে হয়?

আবারও বজ্রপাতের শব্দে ইনানের ভাবনার সমাপ্তি ঘটে। কাঁধ ঝাঁকিয়ে জেহফিলকে ঘুম থেকে উঠায়। ঘুম ঘুম চোখে জেহফিল যখন ইনানের দিকে তাকালো ইনানের ইচ্ছে করল বুকে হাত দিয়ে সিনেমার নায়কদের মতো পড়ে যেতে! হায়!! সব ছেলেরাই কি এত সুন্দর করে ঘুম থেকে উঠে?

‘গুড মর্নিং বিউটিফুল বাটারফ্লাই।’

জেহফিলের ঘুম জড়ানো কণ্ঠে ইনান আরেকবার কুপোকাত হলো! ওহ গড!‌ সব ছেলেদের ঘুম জড়ানো কন্ঠ কি এত আবেশিত? এত সুন্দর একটা ছেলেকে কি সত্যি সৃষ্টিকর্তা তার জন্য পাঠিয়েছে? নাকি এই রাজকুমার গল্প থেকে টুপ করে বাস্তবে চলে এসেছে? ইনানের পেটে প্রজাপতি উড়তে লাগল। মনে হয় তাদের এক রুমে থাকার দিনটা বেশি দূরে নেই!

‘কোথায় হারিয়ে গেলে বেবিগার্ল?’

উফফ! জেহফিল বোধহয় ইনানকে সত্যি সত্যি মে’রে ফেলবে। ডিপ ভয়েসে বেবিগার্ল ডাকাটা যে কত সেনশুয়াল জেহফিল কি বুঝে না? ইনান পেট চেপে ধরে আছে। কিছুতেই বাটারফ্লাইগুলো উড়াউড়ি থামাচ্ছে না।

ইনানকে পেট চেপে ধরে দেখে জেহফিলের ঘুম ছুটে যায়, অস্থির হয়ে ইনানের কাছে এসে বসে, ‘কী হয়েছে সোনা? পেটে ব্যথা করছে?’

ইনান এবার সোজা হয়ে বসে। গলা খাঁকারি দিয়ে নিজের ভেতরকার ডেল্যুশনাল চিন্তাভাবনা দূর করে‌।

‘নাথিং। এমনিই বসে ছিলাম।’ তারপর কিছুটা চিন্তিত সুরে বলে, ‘আপনার কি সিরিয়াস স্লিপওয়াকিংয়ের প্রবলেম? কবে থেকে?’

জেহফিল উপর নিচ মাথা ঝাঁকায়, ‘ছোটো থেকেই। কেন?’

‘না মানে, প্রতিদিনই দেখি আপনি আমার পায়ের কাছে ঘুমিয়ে আছেন, আমি তো দরজা আটকেই ঘুমাই। আপনার সমস্যাটা সিরিয়াস না হলে তো এমনটা হবার কথা না, এমন হলে তো ঘরের বাইরেও চলে যেতে পারেন!’ ইনানের চিন্তিত সুর।

জেহফিল ঠোঁট চেপে ইনানের দিকে তাকায়। মনে মনে হাসে। তারপর অসহায় কণ্ঠে বলে,

‘সরি সোনা যদি তোমাকে বেশি ডিস্টার্ব করে থাকি। আজকে থেকে হাত বেঁধে রাখব খাটের সাথে। তাহলেই আর ঘুমের ঘোরে তোমার রুমে ঢুকে পড়ব না।’

ইনান বিচলিত হয়। দুহাত দিয়ে মাথা নাড়িয়ে বলে, ‘না না, এসব করতে যাবেন না, শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দেওয়ার মানে হয় না। আর আমি তো বলিনি আমার সমস্যা হচ্ছে। আপনি তো ঘুমের ঘোরে এসে আবার ঘুমিয়েই পড়ছেন। বোধহয় এটা নরমাল, আমার বাবাও ঘুমের ঘোরে ড্রয়িংরুমে চলে যায়‌।’

জেহফিল চুলগুলো ব্যাকব্রাশ করে। ভেতরে ভেতরে সে হাসছে, তার বাটারফ্লাইয়ের মনটা কত সরল!

.

.

ইনান ফ্রেশ হয়ে বেরোনোর পর দেখল খাটে অনেকগুলো প্যাকেট রাখা। প্যাকেট খুলতেই দেখল ভেতরে কিছু ঔষধ আর কতগুলো স্যানিটার প্যাড রাখা‌। ইনান কপালে হাত ঠেকিয়ে হাসল। জেহফিল ভেবেছে তার মান্থলি চলছে??

প্যাকেট সব আলমারিতে রেখে রুম থেকে বের হতে নিচ্ছিল। দরজার নব ঘুরানোর আগেই ওপাশ থেকে দরজা খুলল জেহফিল। হাতে তার খাবারের ট্রে। ইনানকে দেখে জেহফিল হালকা ধমকের সুরে বলল,

‘তুমি কষ্ট করে আসলে কেন?‌ আমি নিজেই তো খাবার নিয়ে আসছিলাম!’

ইনানের হাত টেনে তাকে খাটে বসায়। নিজ হাতে খাইয়ে দিতে উদ্যত হলে ইনান তাকে থামায়।

‘আপনি যা ভাবছেন তার কিছুই না। তখন খিদে পেয়েছিল দেখে পেট চেপে ধরেছিলাম।’

জেহফিল বাঁকা চোখে তাকালো, ‘সত্যিই তো? নাকি বলতে লজ্জা পাচ্ছ?’

‘আজব। লজ্জার কী আছে? যা সত্যি তাই বললাম।’

জেহফিল তাও একইভাবে তাকিয়ে রইল। বিড়বিড় করে বলল, ‘আমাদের যদি নরমাল হাজবেন্ড ওয়াইফের সম্পর্ক থাকত তাহলে…’

বিড়বিড় করে বললেও ইনান সব শুনতে পেল, ‘তাহলে কী?’

জেহফিল ঠোঁট কামড়ে হাসে। এই অবস্থায় জেহফিলকে দেখতে এত হট লাগছিল যে ইনানের পেটে আবারও শুরু হয়ে যায় উড়াউড়ি। ঢোক গিলল সে।

‘বললে তুমি লজ্জা পাবে।’ জেহফিলের দুষ্টু কণ্ঠ।

ইনান চোখ উল্টায়। ‘আমি এত সহজে লজ্জা পাই না। আমার মধ্যে লজ্জা কম।’

‘তাহলে…’

‘হুম বলেন বলেন।’

বাঁকা হাসে জেহফিল, চোখ টিপে বলে, ‘তাহলে নিজের চোখে চেক করতাম, মেবি হাত দিয়েও..’

ইনানের কাশি উঠে যায়। আর তা দেখে জেহফিলের হাসি আরো চওড়া হয়। লজ্জায় কান গরম হয়ে যায় ইনানের, গাল লাল হয়। জেহফিল এত ঠোঁটকাটা! কীসব বাজে বাজে কথা! ইনান কাশতে কাশতে জেহফিলের দিকে চায়, আড় নজরে।

ইনান দ্রুত টপিক চেঞ্জ করে। নাহলে এই লোক আরো লজ্জা দিবে, ‘শুনুন, ভেবেছি আজ অথবা কাল আমরা বাড়িতে যাব। বাবাকে দেখি না অনেকদিন।’

জেহফিলের হাসি থেমে যায়‌। মুখ থমথমে হয়ে যায়‌। কিন্তু ইনান দেখার আগেই মুখটাকে স্বাভাবিক করে।

‘আমার কয়েকটা পেইন্টিং বাকি। সামনের মাসে ইউকেতে সেন্ড করতে হবে‌। সামনের মাসে নাহয় যাই সোনা?’

ইনান ভারাক্রান্ত মনে জেহফিলের দিকে তাকাল,

‘বাবা আমাকে ছাড়া কখনো থাকেনি, আমিও না। হুট করেই বিয়েটা হওয়ায় বাবার আর আমার দুজনেরই পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে কষ্ট হচ্ছে। তাহলে এক কাজ করি। আমি নাহয় যাই আজকে। কয়েকদিন থাকি। আপনার কাজের চাপ কমলে নাহয় যাবেন, তারপরের দিন চলে আসব আমরা!’

জেহফিল বাহিরে দৃষ্টিপাত করল। ফ্যাকাশে গলায় স্বগোতক্তি করল, ‘এই কয়েকদিন আমি আবার একা হয়ে যাব..আগের মতো।’

জেহফিলের কথা শুনে ইনানের খারাপ লাগল। এই কয়েকটা দিনে যা বুঝল জেহফিল তার সারাজীবন একাকীত্বের সাথে লড়েছে। ইনান আসার পর তার রেশ কিছুটা কমেছে। এখন যদি আবার ইনান তাকে একা করে চলে যায় তাহলে কি ইনান স্বার্থপর হয়ে গেল না? কিন্তু তার বাবাকে যে সে খুব মিস করছে, চোখের দেখা দেখেনি এক সপ্তাহ।

ইনান জেহফিলের বিবর্ণ মুখের দিকে তাকাল। কী করবে ভেবে পাচ্ছে না।

বিমর্ষ কণ্ঠে বলে, ‘সকালে গিয়ে বিকেলে আসলেও কি সমস্যা হবে?’

পারফেক্ট! এটাই চেয়েছিল জেহফিল। কিছু সময়ের জন্য ইনান বাড়িতে গেলে কিছু হবে না, অন্যদিকে বাটারফ্লাইয়ের মনও রক্ষা করা গেল। কিন্তু দুই তিনের জন্য ইনানকে সে দূরে রাখতে পারবে না, একটা মুহূর্ত যেখানে ইনানকে ছাড়া থাকতে পারে না সেখানে একটা দিন তো অনেক!

জেহফিল কখনো কারো বাসায় থাকেনি, তার অবশ্য কোনো আত্মীয়ও নেই। তাই নিজের বাসা ছাড়া অন্য কোথাও থাকাটা তার জন্য আনকম্ফর্টেবল। ইনানের বাড়িতে ইনানকে সে কাছে পাবে না কোনোভাবেই, সে সারাক্ষণ তার বাবার কাছেই পড়ে থাকবে…. ওয়েট ওয়েট, জেহফিল মনে মনে গভীর চিন্তা করল, তারপর শয়তানি হেসে কিছু একটা ভেবে বলল,

‘একদিনের জন্য যাওয়া যায়।’

ইনানের মুখ উজ্জ্বল হলো। চোখ চকচক করে উঠল খুশিতে। তা দেখে জেহফিল হাত মুষ্টিবদ্ধ করল। ইনানের প্রফুল্লিত চেহারা দেখে জেহফিলের ভেতরটা তাকে তাড়া দিচ্ছে ইনানকে জড়িয়ে ধরে কঠিন চুমু খেতে।

‘সত্যি? কবে যাচ্ছি? কখন?’ উত্তেজিত কণ্ঠে বলল ইনান।

‘আজকে বিকেলেই চলো।’

ইনানের কী যে খুশি খুশি লাগছে! জেহফিল এত ব্যস্ততার মাঝেও যাওয়ার জন্য সময় বের করল, তাও একদিনের জন্য?

তারমধ্যে ইনানের ফোন বেজে উঠল। স্ক্রীনে দেখল ইনানের ফ্রেন্ড ফারা কল করেছে। জেহফিলের নজর গেল ফোনের দিকে‌। শিট! সে তো কালকে বড় একটা কাজ করতেই ভুলে গিয়েছিল। সবগুলা ফ্রেন্ডের নাম্বার ব্লক করা!

ইনান দুইমিনিট কথা বলে ফোন রেখে দিল। জেহফিল যদিও সব শুনেছে কান‌ খাড়া রেখে তাও ইনানের উদ্বিগ্ন মুখ দেখে বলল,

‘কিছু হয়েছে বাটারফ্লাই?’

‘হুম। আপনাকে বলতে তো ভুলেই গিয়েছিলাম। আমার এক ফ্রেন্ড, শরৎ নাম। কিছুদিন আগে ও’কে কে বা কারা নাকি মেরে ওর বাসার সামনে ফেলে রেখে গিয়েছে। দুই হাতের হাড় ভেঙে গেছে, পায়েও সেইম। চিকিৎসা চলছে। আহারে! বেচারা ইদানিং কেন যেন খালি মা’রই খায়।’

জেহফিল ছোট্ট করে বলল, ‘ওহ।’

তারপর ইনানকে খাইয়ে দিতে লাগল।

.
.
চলবে…

[সবাই মন্তব্য করবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here