#রোদরঞ্জন
#পর্ব_১৩
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা
[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ। কার্টেসি সহ কোনো পেজেও কপি করা যাবে না।]
.
.
ঘুম থেকে উঠে নিজেকে জেহফিলের বুকে আবিষ্কার করে ইনান। জেহফিলের দুই হাত ইনানকে দড়ির মতো পেঁচিয়ে রেখেছে যাতে সে পড়ে না যায়। ইনান চোখ আধবোজা রেখেই অপরপাশে ফিরল। ফেরার পথেই দেখতে চাইল জেহফিলের চোখ বন্ধ কিনা। যখন দেখল বন্ধ তখন ধীরে ধীরে জেহফিলের হাত সরাল পিঠ থেকে। তারপর আস্তে করে উঠে যেতে লাগল। তখনো ইনানের দুই পা জেহফিলের দুই সাইডে এবং ইনান জেহফিলের পেটের উপর বসে ছিল। যখন সে এক পা একটু নাড়ালো তখনই জেহফিল চোখ খুলল এবং সময় ব্যয় না করেই বাঁকা হেসে বলল,
‘পজিশনটা পারফেক্ট।’
ইনান বোকা বোকা চোখে তাকিয়ে ছিল, কথাটার মানে বোঝামাত্রই তড়িৎ গতিতে খাট থেকে নেমে গেল। তার গাল রাঙা হয়ে উঠেছে। এই জেহফিল তাকে প্রতিটা সময় এত লজ্জা দেয় কেন?
‘আবার একটু বসো বাটারফ্লাই, ভালোই লাগছিল দেখতে।’
জেহফিলের টিজ করা কথা শুনে ইনান কোনোমতে কথা পাশ কাটনোর জন্য বলে, ‘আপনিও তো দেখি আজ ঘুমের ঘোরে হাঁটতে গেলেন না, ব্যাপার কী?’
‘কাল সারারাত একজন পরী আমাকে শক্ত করে চেপে ধরে রেখেছিল, পরীর এত শক্তি দেখে ঠিক করেছি প্রতি রাতে হানি নাটস খাব পরীকে শান্ত করার জন্য।’
জেহফিলের ডাবল মিনিংয়ের কথা শুনে ইনানের কান ঝাঁ ঝাঁ করতে লাগল, জবাব না দিয়ে দৌঁড়ে বাথরুমে ঢুকে দুই হাতে কান চেপে ধরল। কান থেকে যেন ধোঁয়া বেরোচ্ছে এতটা গরম। ফাজিল বদ লোক একটা, এত ঠোঁটকাটা লোকটা, খালি ইনানকে লজ্জায় ফেলবে।
ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে জেহফিলকে রুমে দেখল না। নিচে গিয়ে দেখল জেহফিল আর তার বাবা বসে বসে চা খাচ্ছে আর রাজনৈতিক আলাপ আলোচনা করছে। জেহফিলের মার্জিত ভঙ্গিতে বসা দেখে ইনান মনে মনে নিজেকে বকল। একা একা বড় হয়েও জেহফিলের মধ্যে ম্যানার্সের কমতি নেই, আর সে, আলালের ঘরের দুলালি, ম্যানার্সের জন্য সবসময় বাবার কাছে বকা খায়।
ইনান ব্রেকফাস্ট তৈরি করতে গিয়ে দেখল সব টেবিলের উপর সাজানোই আছে। খাবার সাজানোর ধরণ এলিগ্যান্ট দেখেই বুঝল জেহফিল তৈরি করেছে। ইশ কী লজ্জা, জেহফিল ঘরের জামাই হয়ে ব্রেকফাস্ট তৈরি করেছে আর সে কিনা ঘন্টা ধরে ফ্রেশ হচ্ছিল। এত উচ্ছৃঙ্খল চলাফেরা কেন তার??
.
.
গাড়ির জানালায় হাত রেখে তাতে মাথা দিয়ে বসে আছে ইনান। গুণগুণ করে গান গাইছে আর গোধুলির রাঙা মেঘ উপভোগ করছে। মনটাও ফুরফুরে লাগছে। তার এই সুন্দর ক্ষণ হঠাৎ বাঁধা পায় জেহফিলের কথায়,
‘তুমি তোমার ফ্রেন্ডদের বলোনি আমাদের বিয়ের কথা?’ রাস্তায় দৃষ্টিপাত করেই সে প্রশ্ন করে।
ইনান চুলগুলো ভাঁজ করে কানে পেছনে গুঁজে। সোজা হয়ে বসে সিটে হেলান দিয়ে বলে, ‘না।’
‘কারণ কী?’
ইনান ইতস্ততবোধ করে। কারণ তো অনেকগুলোই আছে, কয়টা বলবে।
‘কেউ প্রশ্ন করলে তার জবাব না দেওয়াটা অভদ্রতা। এসব আমি পছন্দ করি না।’ জেহফিলের গম্ভীর কণ্ঠ।
‘ইশে..মানে..’
জেহফিল ব্রেক কষে সজোরে। ইনান প্রশ্নাতুর চোখে তাকায়।
‘বাটারফ্লাই। তুমি কি কোনো কারণে এই বিয়ে নিয়ে হ্যাপি না?’
জেহফিলের চোয়াল শক্ত। চেহারা আবেগশূন্য। স্টিয়ারিংয়ে রাখা হাত শক্ত হয়। ইনান জানালার বাইরে তাকায়। একটু পর আকাশ তিমিরে ছেঁয়ে যাবে।
ইনান প্রথম প্রথম এই বিয়েতে সত্যিই খুশি ছিল না। জেহফিলের জোরজবরদস্তি করে হুমকি দিয়ে বিয়ে করাটা কেউই কখনো অ্যাপ্রিশিয়েট করবে না। কিন্তু তার বাবার থেকে যখন জেহফিলের অতীত জানল, নিজেকে জেহফিলের জায়গায় চিন্তা করল তখন কিছুটা হলেও তার হৃদয় নরম হয়েছে। ভাবল যা হওয়ার হয়ে গেছে, যেহেতু জেহফিলের কোনো স্ক্যাম নেই, বাবারও সম্মতি আছে তাই জেহফিলকে মেনে নেওয়াই যায়। তবে জেহফিলের সাথে এই এক সপ্তাহ থেকে বুঝেছে, জেহফিল প্রচণ্ড কেয়ারিং এবং লাভিং। সকাল হতে রাতের রান্নাটাও পর্যন্ত সে করে। ইনানের যা যা পছন্দ সব এনে দেয়। তার কোনো বাজে অভ্যাস ইনানের চোখে পড়েনি। একজন গার্ডিয়েনের মতো ইনানকে আগলে রাখছে। আর সবচেয়ে বড় কথা ইনানকে এই কয়দিন ভুলেও জেহফিল বাজেভাবে ছোঁয়নি। যদিও ইনানকে টিজ করার জন্য দুষ্টু দুষ্টু কথা বলে, তবে এটা স্বাভাবিক হাজব্যান্ড ওয়াইফের মধ্যে। এই স্বভাবগুলোর জন্যই জেহফিলের প্রতি ইনানের আকর্ষণ বাড়ছে।
ইনানের সম্বিত ফিরল যখন দেখল জেহফিল হাইস্পিডে গাড়ি চালানো শুরু করেছে। তার মুখ থমথমে। ইনান দ্রুত কৈফিয়ত দেয়ার ভঙ্গিতে বলল,
‘আপনি যা ভাবছেন তার কিছুই না, আমি আসলে ওদের বলতে চাইছি না.. কারণ.. কারণ আমি আপনাকে নিয়ে ফান করেছি ওদের কাছে।’
গাড়ি আচমকা থামল। তাল সামলাতে না পেরে ইনান পড়ে যেতে নিচ্ছিল আর জেহফিল ইনানের মাথায় এক হাত দিয়ে ধরে ফেলল। তাকে বসিয়ে দিয়ে শীতল কণ্ঠে বলল, ‘এক্সপ্লেইন।’
‘আসলে আপনাকে যখন ফার্স্ট ক্লাসে দেখেছিলাম তখন আমাদের সবার কাছেই আপনাকে উইয়ার্ড অ্যান্ড অ্যারোগেন্ট লেগেছিল। আমাদের সার্কেলের সবাই-ই আপনাকে নিয়ে ঠাট্টা করত, অবশ্য তার জন্য আমিই..মানে আমি দায়ী ছিলাম, আপনাকে নিয়ে মজা করতাম আমিই বেশি, ওরা যদি এখন জানে সেই আপনিই আমার হাজব্যান্ড ব্যাপারটা আমার জন্য খুবই এম্বারাসিং। ওর আমাকে নিয়ে মজা করবে.. আর আমি তো ওদের ফ্রেন্ড তাই জানি ওদের মজা করার ওয়েটা খুবই জঘন্য তাই এই ব্যাপারে বলিনি।’
ইনান মাথা নিচু করে গড়গড় করে বলে দিলো।
‘দ্যাট মিনস আমাকে নিয়েও তুমি জঘন্য মজা করেছিলে?’
ইনান চোখ উপরে তোলার সাহস পেল না, আসলে ওর মধ্যে ভালো খারাপ সব গুণই আছে। যেহেতু গ্রুপের লিডার ইনান, তাই তার আশকারাতেই ফ্রেন্ডরা জেহফিলকে নিয়ে মজা করার সুযোগ পেয়েছিল।
‘আরেকটা কারণও আছে।’ ইনান মিনমিন করে বলল।
জেহফিল চুপ করে রইল। কিন্তু তার কঠিন চোখ ইনানকে আদেশ দিচ্ছে বলা চালিয়ে যেতে।
‘আরেকটা শর্ত ছিল কেউ যদি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার আগেই বিয়ে করে বা রিলেশনে জড়ায় তাহলে সে লুজার।’
‘ডোন্ট টেল মি তুমি নিজেই এই শর্তটা দিয়েছিলে!’
ইনান গলার সাথে চিবুক মিশিয়ে রাখে। জেহফিলের আর বুঝতে বাকি রইল ন।
‘এখন… ওরা যদি জানে আপনার কথা আমার মানসম্মান সব ধুলোয় মিশে যাবে।’
ইনানের লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। সে যে কার ফাঁদে পড়ে এসব গ্রুপ রুলস বানাতে গেল খোদা মালুম!
গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার আগে ইনানের কানে শুধু জেহফিলের তিরস্কার পৌঁছাল, ‘তোমার ফ্রেন্ড সার্কেলের প্রতিটা ছেলেমেয়েই অসভ্য এবং বেয়াদব।’
অপমানে ইনান কাঁচুমাচু মুখ করে বসে রইল। সার্কেলের প্রতিটা ছেলেমেয়ের মধ্যে সেও তো পড়ে, তারমানে কি জেহফিল তাকেও অসভ্য এবং বেয়াদব বলল? তবে ভুল কিছুই তো বলেনি, আসলেই তো সে অসভ্য। কিন্তু জেহফিলের মুখ থেকে এই কথাটা শুনতে ইনানের এত খারাপ লাগছে কেন? ইনান ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করল। জেহফিল যখন গম্ভীর হয়ে যায় তখন এত ভয়ঙ্কর লাগে দেখতে যে কেউ বিশ্বাসই করবে না এই লোকটা যে দুষ্টুমিও করতে জানে। জেহফিলের থেকে এতদিন এত ভালোবাসা পেয়ে হুট করে এই কথাটা শুনতে একটু কষ্টই লাগছে।
জেহফিলের বাড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতে আটটা বেজে গেল। সারা রাস্তা ইনান একটা কথাও বলল না। বাতাসে দমবন্ধ করা অস্বস্তি এড়াতে ইনান ঘুমানোর ভং ধরে পড়ে রইল। জেহফিলের বাড়ির সামনে গাড়ি থামলেও সে একইভাবে শুয়ে রইল, এখন হুট করে উঠে পড়লে তার অভিনয় ধরে ফেলবে সে। তাই অপেক্ষা করতে লাগল জেহফিলের তাকে জাগানোর।
জেহফিল ইনানকে না জাগিয়ে যখন গাড়ি থেকে নেমে গেল, ইনানের এত কষ্ট লাগল! বুকের ভেতর ছুরি গাঁথার মতো অনুভূতি হতে লাগল। ইনান আসলেই বাড়াবাড়ি করে সবসময়, কী দরকার ছিল জেহফিলকে নিয়ে মজা করার?
জেহফিলকে তার পাশের দরজা খুলতে দেখে চোখ বন্ধ করে নিলো আবার। জেহফিল তাকে কোলে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ঘরে। যাক, একা এই জঙ্গলে তো আর ফেলে যায়নি। কিন্তু জেহফিল কি আসলেই রাগ করে আছে? তার স্বাভাবিক মুখ দেখে বোঝার উপায় নেই। সরি বলতে হবে।
জেহফিল ইনানকে খাটে শুয়িয়ে তার রুমে চলে গেল। জেহফিল যেতেই ইনান উঠে বসল। মাথা চেপে ধরে রাখল কিছুক্ষণ। সে কেন জেহফিলকে সত্যি কথা বলতে গেল? মিথ্যে বলায় তো সে পি এইচ ডি ডিগ্রী অর্জন করেছে, তখন মিথ্যে বলল না কেন? তবে তখন জেহফিলের শীতল অথচ কঠিন কথার তোপে পড়ে ইনান মিথ্যে বলার সাহস পেল না। যেন সে তখন টিচারকে পড়া না দিতে পারার জন্য কৈফিয়ত দিচ্ছিল।
তখন ইনানের ফোন বেজে উঠল তারস্বরে। দেখল তার ফ্রেন্ডরা গ্রুপ কল দিয়েছে। ইনান হ্যালো বলার সাথে সাথেই ফারার চিৎকার করা কিছু তিক্ত কথা কানে বাড়ি খেল,
‘এতটা সেলফিশ কীভাবে হতে পারলি তুই ইনান? তোর ফ্রেন্ড হাসপাতালে শুয়ে কাতরাচ্ছে একদিন হলো আর তুই দেখতেও আসলি না? হসপিটালে তো আসতে পুরো একদিন লাগে না, আর না তোর কোনো ব্যস্ততা আছে। তাহলে মৃ’ত্যুর সাথে লড়াই করা বন্ধুর কথা একটাবারও তোর মনে পড়ল না?’
ফারার কথা শেষ হতেই মুগ্ধর কথা শোনা গেল, সেও একই সুরে বলছে,
‘তোর তো কোনো ব্যস্ততা নেই ইনান, খালি রেস্টুরেন্টে গিয়ে বাপের টাকা উড়ানো ছাড়া। গাড়ি করে আসতেও তো দশমিনিটের বেশি লাগত না। তাও কেন আসলি না? না আসলি, একটা ফোনও তো করতে পারতি শরৎএর খবর নেয়ার জন্য, নাহয় একটা মেসেজ, নাকি সেটা করারও সময় ছিলো না তোর? তুই এত সেলফিশ কীভাবে হতে পারলি? কালকে তো শরৎএর দুর্ঘটনা শুনে পারিস না কেঁদে দেস, তাহলে একটা দিন চলে গেল ওর খবর নিলি না কেন? এত গিরগিটির মতো রং বদলাচ্ছিস কেন?’
বন্ধুদের ঝাঁঝালো কথা শোনার সাথে সাথেই ইনানের চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল। ফারা কেন, তার ফ্রেন্ডদের কেউই এই পর্যন্ত তার সাথে এত শক্ত ভাষায় কথা বলেনি। এখন হঠাৎ দুই ফ্রেন্ডের কঠিন কথাগুলো শুনে ইনানের নিজেকে কেমন দিশেহারা লাগছে। ইনানকে কথা বলার সুযোগটাতো অন্তত দিবে? গলায় কান্নারা দলা পাকিয়ে গলা ব্যথা করছে, বহুকষ্টে ইনান বলতে চাইল শরৎএর তাকে ধাক্কা দেওয়ার কথা, ফ্রেন্ড হয়ে তার ক্ষতি করার কথা। তাকে সেই সুযোগও দেয়া হলো না।
তার আগেই ফারা চেঁচিয়ে হুমকি দিলো, ‘রাত দশটার মধ্যেই হসপিটালে আসবি। যেখানেই থাকিস না কেন, যদি না আসিস তাহলে সত্যিই বুঝব তুই গিরগিটি, সেলফিশ আর ফেক।’
ফারা লাইন থেকে চলে গেল, ইনান কান্নারত চোখে বিদ্রূপ হাসল, ইতোমধ্যে তাকে গিরগিটি সেলফিশ তো বলেই দিয়েছিল, নতুন করে আবার কী বলবে?
মুগ্ধ বলল, ‘তোর থেকে এটা আসা করিনি ইনান। সিরিয়াসলি, আমরা সবাই সবার বিপদে এগিয়ে আসি। যেখানে শরৎ গুরুতর আহত সেখানে তোকে দেখি ফেসবুকে খাবারের পিক পোস্ট করতে। তোর কি আসলেই বিবেক বলতে কিছু আছে? নিজেকে নিজে প্রশ্ন করিস।’
এই বলে কেটে দিল সে। ইনান ফোন হাতে নিয়ে পাথরের মতো বসে রইল। ফ্রেন্ড হিসেবে শরৎএর জন্য যতটা মায়া লেগেছিল, ওর বাজে উদ্দেশ্য শোনার পর ততটাই ঘৃণা লেগেছিল। তাই ইচ্ছে করেই সে শরৎকে দেখতে যায়নি। যদি গিয়ে শরৎএর গায়ে হাত তুলত সেই ভয়ে। ইনানের ফোন আবার বেজে উঠল।
রোবটের মতো রিসিভ করল সে, প্রথমেই শুনতে পেল দীর্ঘশ্বাস, তারপর মিহি কণ্ঠের এক মেয়ের শান্ত গলা,
‘শরৎ তোমাকে দেখতে চাইছে, তাড়াতাড়ি চলে এসো।’
ফোন কেটে গেল আবার। এই কণ্ঠ চিনতে তার অসুবিধা হয় না। টিভিতে সারাদিন এই মেয়ের এড দেখতে পায় সে। শরৎএর বোন রুহি। ইনান থম মেরে বসে রইল, ফ্রেন্ডদের কথাগুলো তার হজম হচ্ছে না, মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে বারবার। শরীর অবশ হয়ে যাচ্ছে তার। ইনান খাটে মাথা হেলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইল।
জেহফিলের কথাটা তার কাছে এখন সত্যি মনে হলো, “ভার্সিটিতে উঠেছ, তাই প্রথম প্রথম সব ফ্রেন্ডকেই এমন আপন লাগবে, ধীরে ধীরে বুঝবে, সবাই-ই স্বার্থপর।”
আসলেই সব স্বার্থপর। তাকে তার ফ্রেন্ডরা অলরেডি সেলফিশ,গিরগিটি বলেই দিয়েছে, তাও ইনানের পক্ষের কথা না শুনে। ইনান যাবে না। কিছুতেই যাবে না। এমন বাজে ফ্রেন্ড তার লাগবে না। কে কী বলে সে দেখে নিবে। ভার্সিটি গেলে যদি তারা ইনানকে কথা শুনাতে আসে তবে সেও রেডি থাকবে শরৎএর ড্রাগ নেওয়া ছবি দেখাতে। সে ভেবেছিল শরৎয়ের সম্ভ্রান্ত পরিবারের দোহাই দিয়ে ছবিটা কাউকে দেখাবে না। কিন্তু যদি ওরা বাড়াবাড়ি করে তবে সে বাধ্য হবে শরৎএর ছবিটা দেখাতে। ইনান মাথায় হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে শুয়ে রইল। কান্না থামাতে পারছে না সে। এত আঘাত সহ্য করতে পারছে না। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল সে। বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে লাগল নিরবে।
জেহফিল দরজা খুলতে নিয়েছিল ইনানকে খেতে ডাকার জন্য। ইনানের ফোনে কথা শুনে দরজা পুরোটা না খুলেই হালকা ফাঁক করে দাঁড়িয়ে চুপচাপ শুনতে লাগল। লাউডস্পিকারে থাকায় তার বন্ধুদের প্রতিটা কথা জেহফিলের কানে আসল। চোখের চশমা এক হাতে ঠিক করে নিঃশব্দে দরজাটা আটকে দিলো। টেবিলে খাবার গুছিয়ে চাবি হাতে বেরিয়ে গেল। মেইন দরজায় তালা মেরে নিচের তলার অন্ধকার গোডাউন থেকে বড় ভারী একটা ব্যাগ নিয়ে গাড়ির পেছনের সিটে রাখল। ড্রাইভিং সিটে বসে ঘাড় দুইদিকে কাত করে ঘাড়ের হাড় ফুটাল। রিল্যাক্স হয়ে বসে গাড়ি চালানো শুরু করল হাইস্পিডে।
.
.
চলবে…
[নাইস নেক্সট ছাড়া একটা লাইনে তো মন্তব্য করা যায়, নাকি?]