#রোদরঞ্জন
#পর্ব_১৬
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা
[প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য]
[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ। কার্টেসি সহ কোনো পেজেও কপি করা যাবে না।]
.
.
টেবিলে ব্ল্যাক কফি দেখে চোখ মুখ কুঁচকে ফেলল ইনান। টয়া চোখ বন্ধ করে কফির মগে চুমু দিচ্ছে যেন সে অমৃত খাচ্ছে। ইনান ব্যস্ত ক্যাফেতে চোখ বুলায়। কেউই এখানে সিঙ্গেল নেই। হয় ফ্রেন্ডদের সাথে নয়তো পার্টনারের সাথে আড্ডায় মশগুল সবাই।
ক্লাস শেষে ইনান এসেছে টয়ার সাথে দেখা করতে। আশার কথা ছিল না তার। টয়া হঠাৎ ফোন দিয়ে বলে ক্যাফেতে দেখা করতে। জেহফিল একটু পরেই গাড়ি নিয়ে চলে আসবে ভার্সিটির সামনে। কিন্তু এই মুহুর্তে টয়ার সাথে কথা বলাটাও জরুরী।
‘তো কী খবর?’ টয়া কফির মগে হাত ঘুরাতে ঘুরাতে বলে।
ইনান দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাস্তায় দৃষ্টিপাত করে। সে কিছু বলার আগেই টয়া তাকে থামিয়ে বলে,
‘খবরাখবর ভালোই চলবে তোর। টেনশনমুক্ত আছিস কিনা।’
‘শরৎকে দেখতে যাইনি বলে এই কথাটা বললি?’
টয়া জবাব দিল না। তার চিকন ঠোঁটে অবহেলার হাসি ফুটে উঠল।
‘শুন টয়া। তোদের সবার একটা স্বভাব আছে ঘটনা পুরোটা না জেনেই জাজ করা। এতে বিপরীত দিকের মানুষটা হার্ট হবে কিনা তা ভাববার প্রয়োজনবোধ করিস না।’
‘তোর একটা বন্ধু হাসপাতালে ভর্তি। এই চব্বিশ ঘন্টার একটা ঘন্টা হাতে ছিল না তোর ছেলেটার খোঁজ নেয়ার?’
‘উফ টয়া। আমার কথা না শুনে তোরা কেন আমাকে ব্লেইম দিচ্ছিস বলতো?’ বিষণ্নতা ঘিরে ধরল ইনানকে, ‘এমন বিহেভ করছিস যেন আমি তোদের বন্ধু না! শরৎ অসুস্থ বলেই সবার চিন্তা এখন ওকে নিয়ে। দোষ যখন দিবি জেনেশুনে তারপর দিবি।’
‘আচ্ছা আচ্ছা বল তো। কী হয়েছে তোর শুনি।’ টয়া অবজ্ঞার ভঙ্গিতে বলল। হতাশ হলো ইনান। সে শরৎকে দেখতে যায়নি বলে মনে হয় কোনো মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে গিয়েছে!
‘বলছিস না কেন? তোর ভাঙ্গা ক্যাসেট চালু কর। আমার হাতে সময় নেই। যেতে হবে।’
‘শরৎ যে ড্রাগ অ্যাডিক্টেড জানিস?’
টয়া ভ্রুকুটি করে তাকাল। ইনান শরৎএর মার খাওয়া ছবিটা দেখাল। টয়া চোখ ছোট ছোট করে ছবিটার দিকে তাকিয়ে আবার ভ্রু মসৃণ করে তাকাল। তাচ্ছিল্য সহকারে বলে,
‘তো?’
‘তো?’ ইনান অবাক গলায় বলল, ‘তো মানে কী? বুঝতে পারছিস ও একজন ড্রাগ অ্যাডিক্টেড তাও আবার এই বয়সে!’
‘এই শুন, এসব এই বয়সে একটু আকটু হয়ই, বয়সের দোষ এগুলো। কারো ক্ষতি তো আর করছে না সে?’
টয়ার কথা শুনে ইনান সাত আসমান থেকে পড়ে। টয়া শরৎকে সাপোর্ট করছে?
‘তুইও কি এসব করিস নাকি?’
টয়া প্রশ্ন এড়িয়ে বলল, ‘তুই আসলেই একটা পাগল। শরৎ সামান্য নেশা করেছে বলে ওর বিপদে পাশে থাকবি না?’
ইনান মাথায় হাত দিয়ে বসে, টয়া আবারও পুরোটা না জেনে মন্তব্য করা শুরু করেছে।
‘ভাই লিসেন। ও শুধু ড্রাগ অ্যাডিক্টেডই না। ও আমাকে মা’রার চেষ্টা করেছে।’
টয়া হঠাৎ ধাক্কা খায় যেন, ‘মানে?’
‘মানে, ঐদিন আমরা সাইক্লিং করতে গিয়েছিলাম না? সেদিন ও আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়েছিল। হি ট্রাইড টু মার্ডা’র মি!’
‘তুই নিজ চোখে দেখেছিস ও তোকে ধাক্কা দিয়েছে?’
ইনান থমকায়, ‘না।’
টয়া চোখ উল্টায়, ‘তাহলে কোন ভিত্তিতে এসব বলছিস? আবার তুই আমাকে সেটা বিশ্বাসও করতে বলছিস?’
বিস্ময়ে ইনানের মুখ হা হয়ে গেল, ‘তুই বলছিস আমি মিথ্যা বলছি?’
টয়া কাঁধ ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ বলল, ‘ইনান, তুই বোধহয় জানিস না, বাট শরৎ লাইকস ইউ। ও তোকে প্রথম থেকেই পছন্দ করত আর আমরা সবাই তা আঁচ করতে পেরেছি শুধু তুই গাঁধী বাদে। ও হয়তো নেশা করতে পারে, বাট মার্ডা’র? পছন্দ করা মানুষকে হার্ট করে কোন পাগলে? তুই হয়তো কারণ দেখাতে পারিস যে তোর বাবা ও’কে মে’রেছে বলে তার শোধ তুলতে চেয়েছে তোর উপর, কিন্তু শরৎ এমন ছেলে না। এসব ওর সাথে যায় না। যদি তুই এই কারণেই শরৎএর সাথে দেখা করতে চাইছিস না তাহলে বলব তুই যা ভাবছিস তার সবটাই ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা।’
ইনান উঠে দাঁড়ায়, ‘আমি গেলাম, ভাল্লাগছে না আমার।’
টয়া বাঁধা দিলো না, শুধু বলল, ‘হসপিটালের বেডে শুয়েও কিন্তু ও তোকে দেখতে চেয়েছে। স্বার্থপর হোস না। ও এখন ওর বাড়িতে, সময় পেলে দেখা করে আসিস।’
ইনান পার্স হাতে তড়িৎ গতিতে বেরিয়ে গেল। কেউ তার কথা বিশ্বাস করছে না! শরৎ তাকে লাইক করে এটা সবার চোখে পড়েছে আর মার খাওয়ার পর থেকে শরৎ যে ও’কে তীব্র ঘৃণার চোখে দেখত সেটা কারো চোখে পড়েনি? ও যে ঝারি মেরে কথা বলত ইনানের সাথে সেটা ওরা দেখেনি? আশ্চর্য বন্ধু বান্ধব! শরৎএর সাইড কেন নিচ্ছে? শরৎএর ফ্যামিলি সম্ভ্রান্ত বলে? শরৎ ইনানের থেকেও বড়লোক বাপের ছেলে বলে? প্রতিবার ট্রিট আর দামী দামী গিফ্ট দিচ্ছে বলে?
ইনান রাস্তার কাছে আসতেই দেখল জেহফিলের গাড়ি। এগিয়ে গেল। হয়তো পনেরো মিনিট ধরে জেহফিল অপেক্ষা করছে! গাড়িতে কাউকেই দেখতে পেল না। ইনান ফোন বের করল জেহফিলকে কল দেয়ার জন্য। কানের কাছে মোবাইল ধরা মাত্রই কেউ হেঁচকা টানে ইনানকে নিজের দিকে ঘুরায়। মোবাইল সশব্দে পিচ ঢালা রাস্তায় পড়ে যায়। শক্ত হাতে বাহু আঁকড়ে ধরা মানুষটার দিকে তাকায় ইনান। জেহফিল! কেমন উন্মাদের মতো লাগছে জেহফিলকে!
‘কোথায় ছিলে এতক্ষণ? কোথায় গিয়েছিলে?’ দাঁতে দাঁত চেপে বলল জেহফিল।
‘এত রেগে আছেন কেন?’ ইনান হাত ছাড়াতে লাগল।
জেহফিল দুইহাতে ইনানের দুই বাহু চেপে ধরল, ‘আগে বলো কোথায় গিয়েছিলে?’
‘ঐ পাশের ক্যাফেতে গিয়েছিলাম।’
‘কার সাথে?’
‘ফ্রেন্ড।’
‘ছেলে না মেয়ে?’ অধৈর্য হয়ে বলে জেহফিল।
বিরক্তির শ্বাস ফেলে ইনান, ‘টয়া ছিলো।’
‘কেন গিয়েছিলে? কী কথা হয়েছে?’
‘আরেহ, দেখা হয়নি এতদিন তাই দেখা করতে গিয়েছিলাম, বাকি সবার খোঁজ নিতে। এবার বলুন আপনি এতো রেগে আছেন কেন?’
জেহফিল চোখ বন্ধ করে ঘাড় পেছনে নিয়ে শ্বাস ফেলে। গাড়ির দরজা খুলে ইনানকে বসিয়ে নিজেও ড্রাইভিং সিটে এসে বসে।
ইনান অপেক্ষা করছে জেহফিল নিজ থেকে কিছু বলবে এই আশায়। জেহফিলের ঘাড়, কপালের রগ ফুলে গেছে, শরীর শক্ত রেখে শ্বাস ফেলছে সে। জেহফিল বসামাত্র ইনান তার হাতের উপর হাত রাখল। জেহফিল মাথা হেলিয়ে তাকায়। ইনান কিছুটা ভড়কায়। জেহফিলের চোখ লাল।
জেহফিলের হাতে রাখা ইনানের হাত শক্ত হয়। জেহফিলের গালে হাত রেখে বলে,
‘রিল্যাক্স, এত টেন্সড কেন?’
ইনানের হাতের ছোঁয়া পেয়ে জেহফিল চোখ বন্ধ করে, শান্ত হওয়ার চেষ্টা করে বলে, ‘কাজের চাপ বেশি।’
এই বলে জেহফিল ইনানের কোমর ধরে তাকে নিজের কোলে বসায়। গাড়ি অটোমোশনে দিয়ে বলল,
‘একটু জড়িয়ে ধরো আমাকে, টেনশন কমবে।’
ইনানের লজ্জা লাগল প্রথমে এভাবে বসেছে দেখে। তবে লজ্জা কমে গেল জেহফিলের চিন্তিত মুখে তাকানোর পর। জেহফিলের কাঁধে হাত রেখে হালকা ভাবে জড়িয়ে ধরল, জেহফিলের তাতে মন ভরল না। দুইহাতে ইনানকে হঠাৎ করে নিজের সাথে চেপে ধরল যে ইনানের মুখ থেকে মৃদু চিৎকার বেরিয়ে আসল।
‘আর কোনোদিন আমাকে না বলে কোথাও যাবে না। এমনিতেই কাজের চাপে থাকি তার উপর তুমি হুটহাট কোথাও চলে গেলে কোথায় যাবো বলো তো?’
ইনান জোরে জোরে শ্বাস নিতে লাগল, ‘জ..জেহফিল, আলগা করে ধরুন।’
জেহফিল হিতে বিপরীত করল। ইনানকে আরো জোরে চেপে ধরল। যেন সে বুকের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলবে ইনানকে। ইনানের হাতের নখ দেবে গেল জেহফিলের পিঠে, এবার তার সত্যি দম বন্ধ হয়ে আসছে। মোচড়ানো শুরু করল সে, তাকে এমন করতে দেখে জেহফিল অগ্নিঝরা কণ্ঠে বলল,
‘তুমি আমার থেকে ছুটতে চাইছো কেন বাটারফ্লাই? এই কয়দিনেই আমার প্রতি বিতৃষ্ণা জন্মে গেছে? আমাকে একা করে দেয়ার প্ল্যান করছো…’
জেহফিল আরো বকবক করতে শুরু করল, ইনানের কানে কিছু ঢুকছে না, তার এখন অক্সিজেন প্রয়োজন। সেই মুহুর্তেই জেহফিল ইনানকে সামনে আনল, ইনান হাঁপাতে লাগল, বুক ভরে শ্বাস নিতে লাগল। স্বাভাবিক হওয়া মাত্রই জেহফিলের হাত ঝট করে সরিয়ে দিলো, রাগী চোখে তাকাল,
‘এখনই তো আমাকে মে’রে ফেলছিলেন, বুদ্ধিসুদ্ধি আছে নাকি গেছে? এভাবে কেউ জড়িয়ে ধরে? আপনি আমাকে মে’রে ফেলার প্ল্যান করেছেন নাকি আগে সেটা বলুন।’
জেহফিলের কণ্ঠ নরম হয়, ‘তুমি আমাকে জড়িয়ে ধরোনি ঠিকমতো, তাইতো..’
‘তাই বলে জড়িয়ে ধরে ভর্তা করতে হবে?’
জেহফিল মৃদু গলায় বলে, ‘ বেশি ব্যথা দিয়েছি? সরি সোনা, আর এমন হবে না। ভেবেছি তুমিও আমাকে আবার একা করে চলে যাবে।’
জেহফিল আকুতি ভরা কথা দেখে ইনান শান্ত হয়,
‘আপনি আমার হাজব্যান্ড জেহফিল, আপনাকে কেন একা রেখে যাব আমি?’
‘সরি।’
‘আর সরি বলা লাগবে না, ভবিষ্যতে এমন দম বন্ধ করে ধরবেন না।’
‘আচ্ছা।’
.
রাতের বেলা কারেন্ট চলে যায়। ইনান মোম জ্বালিয়ে জেহফিলের আর্ট রুমের দরজায় নক করে। জেহফিল দরজা খুললে ইনান ভেতরে ঢুকে। ইনান কখনো জেহফিলের পেইন্টিং রুমে আসেনি। মোমের আলোতে রুমটা ভালো করে ফুটেনি, তবে ইনান আন্দাজ করল এই রুমটা সবচেয়ে বড় রুম।
‘কিছু বলবে বাটারফ্লাই?’
ইনান জেহফিলের দিকে তাকায়। ডেকেছিল ডিনারের জন্য। জেহফিলের হাতে চিকন একটা তুলি।
‘ছবি আঁকছিলেন?’
জেহফিল মাথা উপর নিচ করে। রুমের একসাইডে দেয়ালের বদলে ফ্লোর থেকে সিলিং পর্যন্ত কাঁচ। তার ওপাশে খোলা বারান্দা। কতগুলো লম্বা লম্বা টেবিল খুব সুন্দর করে রুমে রাখা। প্রত্যেকটা টেবিলে আলাদা আলাদা জিনিসপত্র। একটায় মাটির ব্যাগ আর স্কাল্পচারের প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি রাখা। আরেকটায় আর্ট করার রং তুলি। রুমের দেয়ালে জুড়ে তাক, আর সেগুলোতে বিভিন্ন ধরনের রং আলাদা করে সাজিয়ে রাখা। মোমবাতির আলোয় ইনান যতটুকু দেখছে তাতেই মুগ্ধ হচ্ছে। কী সুন্দর গুছিয়ে রাখা।
কাঁচের দেয়ালের সামনে একটা বড় ইজেল রাখা। ইনান সেদিকে এগিয়ে গেল। তাতে বড় একটা ক্যানভাস আটকানো। ক্যানভাসে আঁকা ছবিটা দেখে ইনানের চোখ বড় বড় হয়ে গেল। ছবিটা তার! ছবিতে ইনান দুই হাতের উপর মাথা রেখে আবেদনময়ী নেত্রে চেয়ে আছে, তার লম্বা মসৃণ চুলগুলো পিঠময় ছড়িয়ে। পরনের জামাটা মনোমুগ্ধকর বেশি। বুক অবধি কতগুলো প্রজাপতি একত্রিত হয়ে ইনানের জামা হিসেবে তার শরীরে বসেছে, গলা এবং বুকের উপরিভাগ খালি। তার চুলেও কতগুলো প্রজাপতি, ঠোঁটের কোণে ছোট্ট একটা ডেইজি ফুল, আর সবগুলো প্রজাপতির রং পার্পল, পিংক আর রেড ভেলভেট কালারের। আশেপাশে উড়ছে অসংখ্য প্রজাপতি। কী নিখুঁত কাজ! চোখ জুড়ানো! এমনি এমনি তো আর জেহফিল ইন্টারন্যাশনালি পরিচিতি পায়নি!!
চিত্রের জামার নিচের অংশ এখনো কমপ্লিট হয়নি। সেটাই বোধহয় এতক্ষণ আঁকছিল জেহফিল, কারেন্ট চলে যাওয়ায় স্থগিত রেখেছে।
জেহফিল কখন ইনানের পেছনে এসে দাঁড়িয়েছে তা মুগ্ধ ইনান খেয়াল করেনি।
‘বাটারফ্লাই।’
ইনান ঘোর লাগা গলায় বলল, ‘আসলেই বাটারফ্লাই।’
জেহফিল হাসল, ইনানের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল, ‘পছন্দ হয়েছে?’
‘ভীষণ।’
আলতো করে ইনানের কানে ঠোঁট ছোঁয়াল জেহফিল, ‘কারেন্ট আসুক, সারপ্রাইজের পর্ব তো এখন মাত্র শুরু।’
ইনান জেহফিলের দিকে ফিরল, মোমের আলোয় তার চোখের তারা চিকচিক করছে, ‘আপনি আমার আরও ছবি এঁকেছেন?’
ইনানের হাতের উল্টো পিঠে চুমু দিলো জেহফিল, ‘কারেন্ট আসলেই দেখবে।’
জেহফিল টুলের উপর বসে ইনানকে নিজের কোলে বসাল। মোমবাতিটা ক্যানভাসের পাশে রাখল। রঙে তুলি ডুবিয়ে ইনানের হাতে দিলে ইনান দ্বিধাগ্রস্ত চোখে তাকায়।
জেহফিল চোখের ইশারায় ক্যানভাসে আঁকতে বলল।
ইনান মাথা নাড়ায়, ‘না না, আমি আঁকতে পারব না। এত সুন্দর চিত্রে আঁকলে এটা নষ্ট হয়ে যাবে।’
জেহফিল ইনানের মেদহীন পেটে হাত রাখে। হালকা চাপ দিয়ে ইনানকে নিজের দিকে টেনে আনে। মৃদু হাসল সে, ‘কিছুই হবে না, আমি শিখিয়ে দিচ্ছি।’
জেহফিল ইনানের হাত ধরে তুলিটা চিত্রের উপর রাখে। চিত্রে ইনানের বুকের উপর সবচেয়ে বড় প্রজাপতি আঁকার ইন্সট্রাকশন দিচ্ছে। ইনান কাঁপা কাঁপা হাতে তুলি চেপে ধরেছে। তার ধারণা তার হাতের ছোঁয়া পেয়ে ছবিটা নষ্ট হয়ে যাবে।
জেহফিল ইনানের কানের কাছে এসে হালকা গলায় বলল,
‘কাঁপছো কেন? এখনো তো কিছুই করলাম না।’
‘হুম?’ জেহফিলের কথাটা বোঝার জন্য ইনান মাথা ঘুরিয়ে তাকায়।
জেহফিল ইনানের গালের সাথেই মিশে ছিল, যেই না ইনান মাথা ঘুরিয়ে তাকালো অমনি জেহফিলের ঠোঁটের সাথে তার ঠোঁটের মিলন ঘটল। সেই মুহুর্তে বারান্দা থেকে ধেয়ে আসা শীতল বাতাসে মোমবাতি নিভে গেল। সাদা পর্দা উড়তে লাগল নিরবচ্ছিন্নভাবে।
ইনান কেঁপে উঠল, হিমশীতল বাতাস নাকি জেহফিলের স্পর্শের কারণে বুঝতে পারল না।
ঝড়ো বাতাসে পর্দার সাথে লেগে মোমদানি পড়ে গেল। ইনান আবারও কেঁপে উঠল, জেহফিলের শুষ্ক নরম ঠোঁট থেকে আচমকা নিজেকে সরিয়ে নিলো। দ্রুততার সাথে মুখ সামনে ফিরিয়ে আনল। কান দিয়ে তার উষ্ণ ধোঁয়া বেরোচ্ছে। বুক এত জোরে ধুকপুক আওয়াজ করছে যে মনে হয় জেহফিলও শুনতে পাবে। ইনান দুই ঠোঁট চেপে চোখ বন্ধ করে নেয়।
জেহফিল ইনানের শরীরের উষ্ণতা টের পায়। আবারো ইনানের কানে কানে বলল, ‘সরি বাটারফ্লাই, আমারই ভু..’
জেহফিলের কথা কেটে যায় ইনানের আচমকা আক্রমণে। ইনান আবারও ঘুরে জেহফিলের ওষ্ঠাধর নিজ দখলে নিয়ে ন্যায়। ঘটনা এত দ্রুত ঘটেছে যে নিজের কাণ্ডে নিজেই প্রায় পড়েই যেতে নিচ্ছিল জেহফিলের কোল থেকে, জেহফিল ইনানের পেট ধরে নিজের সাথে ঠেকায়। ওষ্ঠাধরের লড়াইয়ে নেমে পড়ে ইনানের সাথেই। ততক্ষণে ইনানের হাত বিচরণ করছে জেহফিলের সৌষ্ঠব দেহে। ইনানের এত উন্মাদনা দেখে জেহফিল ওর দুইহাত ধরে থামায়। ইনানকে ছাড়িয়ে নিয়ে মুখের সামনে নিয়ে আসে। এক হাতে ইনানের থুতনি চেপে মাথা উঁচু করে। ইনানের ঠোঁট লাল হয়ে ফুলে কাঁপছে।
ইনান তখন দিশেহারা। দেহে আগুনের ঝড়। ইনানের চোখের আবেদন জেহফিলের নজর এড়ায় না। সে নিজেকে যে কত কষ্টে ইনানের থেকে দূরে থাকছে সেটা সেই জানে।
ইনান জেহফিলের শার্টের বোতামে হাত লাগায়। জেহফিল হাত ধরে ফেললে ইনান মরিয়া হয়ে তাকায়। জেহফিল ইনানের ফোলা ঠোঁটে এক আঙুল রেখে বলে,
‘তুমি শিওর বাটারফ্লাই?’
ইনান তখন নিজের মধ্যে নেই যেন। নিজেকে পাগল পাগল লাগছে। যেন সে এইমাত্র নেশা করে এসেছে। তার মন কুঠুরীতে আবদ্ধ বস্তুটি ইনানকে তাড়া দিতে লাগল জেহফিলকে গভীর করে ছোঁয়ার।
ইনান মাথা উপর নিচ করে।
‘মুখে বলো।’ জেহফিল আদেশ করল।
ইনান ঢোক গিলে ধীরে ধীরে বলল, ‘হ্যাঁ।’
‘জোরে বলো।’
ইনান চোখ শক্ত করে বন্ধ করল, ‘হ্যাঁ।’
জেহফিল ইনানকে কোলে তুলল। ইনানের দুই পা জেহফিলের কোমর জড়িয়ে ধরল। আর দুই হাতে জেহফিলের গলা। জেহফিল টেবিলের উপরে রাখা সমস্ত আর্টের সরঞ্জামগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে নিচে ফেলে পুরো টেবিলটা খালি করল। বাহিরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। ভুবন কাঁপিয়ে বারিধারা ধরণীতে আছড়ে পড়ছে। ইনানকে টেবিলে বসিয়ে ইনানের পায়ের ফাঁকে দাঁড়ালো জেহফিল।
ইনানের ঠোঁটে স্লাইড করতে করতে বলল,
‘ভেবেচিন্তে বলো বাটারফ্লাই। তুমি কি আমাকে চাও?’
ইনান হ্যাঁ-বোধক মাথা নাড়ায়।
ইনানের ঠোঁট দুই আঙ্গুলে চেপে ধরে জেহফিল, ইনান হালকা ব্যথায় কঁকিয়ে উঠে।
‘মুখে বলতে বলেছি না?’
‘হ্যাঁ, আ..আমি চাই।’
জেহফিল ইনানের সাদা জামাটা ঘাড় থেকে কিছুটা নামিয়ে গলা থেকে পিঠে ও পেটে আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে টিজ করে। ইনান প্রায় অতিষ্ঠ হয়ে প্রায় ভিক্ষা চাওয়ার মতো করে বলল,
‘প্লিজ জেহফিল।’
জেহফিলের অধরে হাসি ফুটে, বিড়বিড় করে বলল,
‘ইউ লুক সো হট হয়েন ইউ বেগ। অ্যান্ড দ্যাটস হোয়াট আই ওয়ান্টেড অল দিস ফাকিং টাইম।’
তারপর ইনানের চুল কানের পেছনে নিয়ে শেষবারের মতো বলল,
‘ভেবেচিন্তে বলছো?’
‘হ..হ্যাঁ।’ ইনান প্রায় ফিসফিস করে বলল।
ইনানের বলা শেষ হতে না হতেই জেহফিল ইনানের উপর প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়ে, জেহফিলের ভারে ইনান টেবিলে ঝুঁকে পড়ে। জেহফিলের ঠোঁট অবাধ্যভাবে ইনানের গাল, গলা, ঘাড়ে বিচরণ করছে। একটু থেমে ইনানের চোখে চোখ রাখে সে। এক হাতে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে ইনানকে নিজের করে নেওয়ার আগে ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে বলল,
‘আমার থেকে আর নিস্তার নেই তোমার বাটারফ্লাই। তুমি নিজেই এই পথ বেছে নিয়েছো।’
তারপর ইনানের গলায় ঠোঁট ছুঁইয়ে কামড় দিলো জেহফিল,
‘তোমাকে আর ছাড়ছি না। প্রতি রাতে আমাকে হ্যান্ডেল করার জন্য প্রস্তুত হও বেবিগার্ল।’
.
.
চলবে…