রোদরঞ্জন #পর্ব_৩ [অতিরিক্ত] #আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

0
440

#রোদরঞ্জন
#পর্ব_৩ [অতিরিক্ত]
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

.
.
প্লাস্টিকের খসখসানো আওয়াজে ইনান মৃদু নড়ে উঠে। অচেতন দেহ চেতনা ফিরে পায়। চোখ খোলার চেষ্টা করে, পারে না। চোখ সয়ে আসলে চোখ খুলে ইনান। চারিদিক অন্ধকার। রুমের মাঝখানে একটা মোমবাতির হালকা আলোর ছটায় রুমটা সামান্য আলোকিত। বাহির থেকে এখনো প্রবল বেগে ছুটে চলা বাতাসের শো শো আওয়াজ শোনা যায়।
চোখ এদিক সেদিক ঘুরিয়ে বুঝার চেষ্টা করে আসলে সে কোথায়!

‘গুড মর্নিং বাটারফ্লাই!’

এক পুরুষের কণ্ঠ কানে এসে লাগে তার.. বুঝতে পারল না কণ্ঠটি কী বলল তাকে। ভারী কণ্ঠের মানুষটিকে খুঁজতে গিয়ে চোখ পড়ে ডিভানে বসে থাকা জেহফিলকে। হন্তদন্ত হয়ে উঠে পড়ে ইনান। একবার নিজের দিকে তাকিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করে। জামাকাপড় সবই ঠিকঠাক। মোমের আলোয় যতটুকু দেখছে তাতে মনে হচ্ছে এটা কোনো বেডরুম। ইনান মনে করার চেষ্টা করল কী হয়েছিল তার সাথে। গাড়ি থেকে বের হয়ে নিচ তলায় এসেছিল, তারপর পেছনে জেহফিলকে দেখল…জেহফিলের তখনকার রূপ মনে পড়তেই গা শিউরে ওঠে ইনানের। চকিতে তাকায় জেহফিলের দিকে। জেহফিল কতগুলো বড়‌ বড় ক্যানভাস প্যাক করছিল। দেখে মনে হয় কোনো আর্ট করা ক্যানভাস।

‘আমি কোথায়?’ ভয়াতুর গলায় বলল ইনান।

হাতের কাজ শেষ করে জেহফিল তাকায় ইনানের দিকে। ইনান আরো চমকে উঠে। তখনকার রূপের সাথে এখনকার জেহফিলের কোনো মিল নেই! প্রথমদিন জেহফিলকে যতটা কোমল দেখেছিল এখনও ঠিক তেমন।

‘আমার রুমে। তুমি হঠাৎ জ্ঞান হারালে আমাকে দেখে অ্যাজ ইফ তুমি ঘোস্ট দেখেছ।’ জেহফিল শ্রাগ করে বলল।

‘ক’টা বাজে?’ ক্লান্ত গলায় বলল ইনান।

‘সাড়ে আটটা।’

‘কীহ।’ ইনান প্রায় লাফিয়ে উঠল। ব্যস্ত হয়ে মোবাইল খুঁজতে লাগল। জেহফিল ইনানের দিকে তাকিয়েই ছিল। সে যেন বুঝল ইনান কী খুঁজছে। পকেট থেকে ইনানের মোবাইল বের করে দিলো সে। ফোন হাতে পেয়েই হতাশ হলো ইনান। সে তো ভুলেই গিয়েছিল মোবাইল বন্ধ।

অস্থির হয়ে জেহফিলকে তাড়া দিলো, ‘আপনার কাজ শেষ হলে তাড়াতাড়ি চলুন। বাবা চিন্তা করছে অনেক।’

জেহফিল ইনানের দিকে মোহাবিষ্টের ন্যায় চেয়ে ছিল‌। হলদে ক্ষীণ আলোয় পিঠ সমান চুলের মিষ্টি ইনানকে শুভ্র পরীর মতো লাগছিল। তার চির আঁধার জগৎ এবং মনে যেন এক হুরপরী পথ হারিয়ে ঢুকে পড়েছে।

ইনান রুম থেকে বের হতে নিলেই হাতে টান পড়ে। কপাল কুঁচকে পেছনে হাতের মালিকের দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকায়।

ঝাড়ি মেরে হাত সরায় ইনান, ‘হাত ধরেছেন কেন?’

‘অন্ধকারে পড়ে যাবে তাই ধরেছি। রুমের অবস্থা ভালো নয়। অন্যকিছু ভাবার কারণ নেই।’

তাচ্ছিল্য করে বলল জেহফিল। ফ্ল্যাশ অন করে মোমবাতি অফ করে দিলো। হাতে প্যাক করা ব্যাগগুলো নিয়ে রুম থেকে বের হলো সে। পেছনে থাকা ইনান ঘরের অবস্থা খেয়াল করল অবাক চোখে। চেয়ার টেবিল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রুমটায়, ল্যাম্প, ওয়ালমেট সব এলোমেলো ভাবে ফ্লোরে পড়ে আছে। দেখে মনে হয় না এখানে আদৌ কোনো মানুষ থাকতে পারে!

‘এটা কি সত্যিই আপনার বাসা?’ কণ্ঠে বিস্ময় তার!

জেহফিল ছোট করে জবাব দেয়, ‘হু।’

‘ঘরে কি আর কেউ থাকে না? আপনার বাবা মা কোথায়?’

এক মুহুর্ত চুপ থেকে অপরপক্ষ থেকে জবাব আসে,’নেই।’

ইনান বুঝতে পারল না জেহফিলের জবাবটা। জেহফিলের কি বাবা মা নেই নাকি এখানে তারা কেউ থাকে না; কোন প্রশ্নের জবাবে সে নেই বলল ইনান বুঝতে পারল না। তবে আর ঘাটলোও না সে। জেহফিলকে নিয়ে তার মাথাব্যথা নেই। আপাতত তার দুশ্চিন্তা হচ্ছে বাবাকে নিয়ে। টেনশনে আবার প্রেশার লো হয়ে যায় ইফাজ সাহেবের!

জেহফিল খুব সাবধানে আসবাবপত্র সরিয়ে ইনানের জন্য জায়গা করে দিলো ও সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় আর বারবার লাইট তার দিকে দিয়ে বলতে লাগল, ‘সাবধানে..ধীরে.. সাবধানে পা ফেলো.. আস্তে..’

ইনানের কাছে মনে হলো জেহফিল যেন একটা বাচ্চাকে রাস্তা পার করিয়ে দিচ্ছে। সে জোর করে হেসে বলল, ‘আপনি নিজের দিকে লাইট মারেন তো। আমাকে সাবধান সাবধান বলতে গিয়ে নিজেই চিটপটাং হয়ে যাবেন…’

বাতাসের সাথে এক প্রকার পাঞ্জা লড়েই গাড়িতে উঠতে হয়েছে ইনানকে। এত বাতাস ছিল মনে হচ্ছিল তাকে উড়িয়েই নিয়ে যাবে! ভাগ্যিস জেহফিল ছিল! জেহফিলের শার্ট খামচে ধরে নিজেকে বাঁচিয়েছে সে।

গাড়ি চলতে আরম্ভ করলে ইনান দ্বিধাগ্রস্ত চোখে তাকায় জেহফিলের দিকে। জেহফিল ইনানের দিকে না চেয়েই বলে,

‘হোয়াট?’

‘আপনার মোবাইলটা একটু দিবেন প্লিজ? বাবাকে কল দিবো একটা।’

‘কল দিয়ে কী বলবে?’

‘আজব! কী বলব মানে কী? বাবা টেনশনে শেষ হয়ে যাচ্ছে, ওনাকে একবার জানাবো না আমি ঠিক আছি!’

‘বাড়িতে তো পৌঁছে দিচ্ছিই। গেলেই তো দেখতে পাবে।’

‘মোবাইল দিবেন না সেটা বলতে পারেন না…’

ইনানের কথা শেষ হতে না হতেই জেহফিল মোবাইল এগিয়ে দেয়, ‘বেশি কথা আমি পছন্দ করি না।’

মোবাইলটা ছোঁ মেরে নিয়ে নেয় ইনান, ‘কথা আপনিই বাড়িয়েছেন।’

ইফাজ খানকে ফোন দিয়ে পেল না ইনান। মূলত নেটওয়ার্কই পাচ্ছিল না সে। হতাশ হয়ে মোবাইল ফেরত দিয়ে দিলো। কপালে হাত ঠেকিয়ে বাহিরে দৃষ্টিপাত করল। অন্যসময় হলে এই ভারী বর্ষণ উপভোগ করত সে। কিন্তু এখন পরিস্থিতি আলাদা।

পেছনের সিটে বড় বড় ক্যানভাসগুলো দেখে ইনান বলল, ‘আপনি কি একজন আর্টিস্ট?’

‘হু’

‘জানতাম! আপনার আর্ট দেখেই বুঝেছি। এগুলো কি ডেলিভারী দিতে যাচ্ছেন? সেল করেন?’

‘না, এক্সিবিশনের জন্য করা এগুলো, সেখানেই যাবে‌।’

‘বাহ! এগুলোর জন্যই এত তাড়া ছিল বাড়িতে আসার?’

‘হু’

‘আচ্ছা’

আবারও পিনপতন নীরবতা নেমে এলো গাড়িতে। সাথে রাস্তাটাও এত নির্জন! মনে হচ্ছে শহর থেকে অনেক দূরে কোথাও এই জায়গা‌। একটা গাড়িরও দেখা পাওয়া যাচ্ছে না‌। না আছে রাস্তার মাঝে কোনো স্ট্রিট লাইট। বড় বড় গাছগুলো মাথা উপরে এমনভাবে ঢেকে আছে যে দিনের বেলাতেও মনে হয় আকাশ দেখা যায় না। জঙ্গল পার হয়ে এবার মেইন রাস্তায় ঢুকেছে গাড়ি‌। পরিচিত রাস্তায় এসে এবার কিছুটা হালকা লাগছে ইনানের।

নীরবতাকে ভেঙে দিয়ে জেহফিল হঠাৎ বলে উঠল, ‘ছেলেদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে।’

আচানক জেহফিলের গলায় এই কথা শুনে ফিরে তাকায় ইনান।‌

‘এক্সকিউজ মি?’

রাস্তায় চোখ রেখেই জেহফিল বলল, ‘বন্ধু নির্বাচনে তুমি যথেষ্ট অসচেতন। যার সাথেই মিশবে খোঁজ নিয়েই মিশবে।’

‘আপনি আমার ফ্রেন্ড সম্পর্কে কীভাবে জানেন? আর আপনি এসব বলার কে?’

কেমন অন্যরকম গলায় জেহফিল বলল, ‘মানুষ আজকালকার বড় খারাপ। ভালো মানুষীর আড়ালে থাকা তার বিভৎস রূপটা আমাদের নজর এড়িয়ে যায় সবসময়।’

‘আপনি কি প্লিজ ডিরেক্টলি বলবেন আসলে কী বলতে চাচ্ছেন?’

‘নাথিং। জাস্ট ওয়ার্ন করলাম যাকে তাকেই বিশ্বাস না করতে। কয়েকদিনের পরিচয়টাই মানুষের সব না। সারাজীবন একসাথে থেকেও তো মানুষকে চেনা যায় না সেখানে তো মাত্র কয়েকটা দিন!’

‘আপনি বলতে চাচ্ছেন আমার ছেলে ফ্রেন্ডরা খারাপ?’

জেহফিল জবাব দিলো না। ইনান কথা চালিয়ে গেল, ‘আপনিই তো বললেন কয়েকদিনের পরিচয়ে কাউকে বিশ্বাস না করতে। আপনার সাথে কয়েক ঘন্টার পরিচয়ে আপনাকে কোন কথায় বিশ্বাস করব আমি? আপনি যে আমার ফ্রেন্ড সম্পর্কে মিথ্যা বলছেন না তার কী গ্যারান্টি?’

‘তোমার সাথে আমার কোনো শত্রুতা নেই যে আমি তোমার খারাপ চাইব। শুধু এটুকুই জেনে রাখো, মানুষ তোমাকে যেই রূপ দেখায় সেটা সবসময় সত্য হয় না।’

ইনান চুপ করে রইল। ভাবতে লাগল তার ফ্রেন্ডদের কথা। কই? তাদের মাঝে তো নেগেটিভিটির কিছুই দেখল না। জেহফিল হঠাৎ কেন এই ধরনের সতর্ক দিচ্ছে তাকে?

.
.

ইনানের বাড়ির সামনে জেহফিল গাড়ি থামাল। ততক্ষণে বৃষ্টির তীব্রতা কিছুটা কমেছে।‌ গাড়ি থেকে নামার সময় ইনান বলল,

‘যাই হোক, অনেক মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছিল আমাদের মধ্যে। আমিই বেশি সীন ক্রিয়েট করে ফেলেছিলাম বোধহয়। আজেবাজে কথাও অনেক বলেছি। তার জন্য সত্যিই সরি। কিছু মনে নিবেন না প্লিজ।’ স্মিত হেসে বলল ইনান।

জেহফিল ইনানের ঠোঁটের দিকে একবার চেয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো।

‘আর ধন্যবাদ।’ ইনান গাড়ি থেকে নেমে গেল।

‘ওয়েলকাম।’ মৃদু কন্ঠে বলল জেহফিল, ইনানের দিকে না তাকিয়েই।

জেহফিলকে বায় বলে বাসায় ঢুকে পড়ল ইনান। একটাবার পেছন ফিরলে দেখতে পেত, এক জোড়া চোখের প্রমত্ত চেয়ে থাকা নিষ্পলক দৃষ্টি..

.

.

ইনানের বাবা মেয়েকে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই চলেছেন।

কান্নারত গলায় বললেন, ‘কোথায় ছিলে আম্মু আমার? এত দেরি করে কেউ বাড়ি ফিরে? বাবাকে একবার ইনফর্ম করা উচিত ছিল না? কত খুঁজেছি তোমাকে জানো? ভার্সিটি গেলাম, তোমার সবগুলা ফ্রেন্ডের বাসায় খোঁজ নিলাম, সবগুলা রেস্টুরেন্টে খুঁজলাম, কোথায় ছিলে মা?’

ইনানের মন খারাপ হয়ে গেল বাবার কান্না দেখে। বাবাকে শান্তনা দিলো, ‘মোবাইলটার চার্জ ছিল না বাবা, আমি আমার এক ফ্রেন্ডের সাথেই ছিলাম, এত বৃষ্টি ছিল যে ও গাড়িও চালাতে পারেনি ঠিকমত। এইজন্যই আমরা কোথাও বসে ওয়েট করছিলাম বৃষ্টি থামার।’ খুব সাবধানে বলল সে, পাছে ধরা পড়ে যায়।

পলকের কণ্ঠ শোনা গেল এর মাঝে, ‘তাই বলে ফ্রেন্ডের মোবাইল দিয়ে কল দেয়া যাচ্ছিল না?’

ইনান পাশে থাকা পলকের দিকে আড়চোখে তাকায়।পলক রাগী চোখে তাকিয়ে ছিল ইনানের দিকে। চোখ দুটো তার টকটকে লাল। যেন ইফাজ সাহেব সামনে থাকায় রাগের বহিঃপ্রকাশ করতে চাইছে না।

ইনান কণ্ঠ স্বাভাবিক রেখে বলল, ‘দিয়েছিলাম, নেট পাইনি।’

‘ছেলে না মেয়ে ফ্রেন্ড ছিলো?’

‘মেয়ে, চিনবেন না আপনি, স্কুলের এক ফ্রেন্ড।’ ঢোক গিলে ইনান। মিথ্যা বলতে গিয়ে তার গলা বারবার কেঁপে উঠছে।

পলক আরো কিছু বলতে চেয়েও বলল না‌। রাগে ফোঁস ফোঁস করছে সে। মেয়েটা জানে না আজ তার কোনো খোঁজ না পেয়ে পলকের মাথা যে কতটা খারাপ হয়ে গেছিল! এই বৃষ্টির মধ্যেও পাগলের মতো খুঁজেছিল ইনানকে। দমবন্ধ হয়ে আসছিল প্রতিটা মুহুর্তে এই ভেবে ইনানের কোনো খারাপ কিছু হলো না তো!

ইনান বাবাকে অনেক শান্তনা দিয়ে টিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিলো। পলক তখনো সোফায় বসেছিল। তার পুলিশের পোশাক চুপচুপে ভেজা‌। ইনান একটা তোয়ালে নিয়ে পলকের নিকট বাড়িয়ে দিলো। পলক তোয়ালেটা নিলো না। সারাদিন দুষ্টুমি করা মানুষটা হঠাৎ রেগে গেলে প্রলয়ের মতো লাগে। পলককেও তেমন লাগছিল।

পলক সোফা থেকে উঠে ইনানের দুই বাহু ধরতে গিয়েও ধরল না। অনধিকার চর্চা তার মানায় না। একহাতে মাথার চুল টেনে নিজেকে শান্ত করল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘এতটা টেনশনে না ফেললেও চলতো। স্যার তোমার জন্য কত চিন্তা করে জানো ইনান? আজ তো কথা ছিল স্যারের সাথে নিউ রেস্টুরেন্টে যাবে। সে জন্য স্যার কত তাড়াহুড়ো করে কাজ সেরে বাড়িতে এসেছিল! তারপর বিকেল হয়ে যাওয়ার পরও তুমি এলে না, সন্ধ্যার টাইমে স্যার আমাকে কল করল, উনি এতো টেন্সড ছিল!!’

একটু থামল পলক, ‘ইনান, তুমি এখন আর ছোটো নেই। স্যারেরও বয়স হচ্ছে। পুলিশের চাকরিতে কত প্যারা জানোই তো! তার উপর তোমার টেনশন! একটু নিজে দায়িত্ব নিয়ে চলতে শেখো ইনান। বুদ্ধি খাটাও এই ধরনের পরিস্থিতিতে।’

ইনান চুপ করে রইল। তার নিজের এখন খুব খারাপ লাগছে।‌ এমন তো না যে তার দোষ আছে। কিন্তু সে যেই মিথ্যেটা বানিয়েছে তাতে তার দোষই বেশি। তাই পাল্টা কোনো কথা বলতে পারল না ইনান।

‘আসি। নেক্সট টাইম, বি কেয়ারফুল।’

ইনান রুমে চলে আসলো। খাটের এই মাথা হতে
ঐ মাথা গড়াগড়ি খেতে লাগল অনুশোচনায়। বাবা কত‌ কষ্ট পেয়েছে! কত চিন্তা করে তার জন্য! আর সে কিনা উল্টো বাবার উপর টেনশন চাপিয়ে দিচ্ছে?ধুর!

ইনান উঠে বসল। কিচ্ছু ভাল্লাগছে না। তখন তার নজরে গেল রুমের কোণায় রাখা কার্টুনটার দিকে। সেদিন কার্টুন অর্ধেক খুলে রেখে দিয়েছিল। ইনান উঠে গিয়ে কেঁচি নিয়ে বসল আবার। স্কচটেপ কেটে কার্টুন খুলতেই সে কিছুটা দুরে ছিটকে পড়ল হঠাৎ। কার্টুনের মধ্যে একটা দুই ফিটের টেডি রাখা। তবে ইনানের ভয় পাওয়ার কারণ হলো টেডির রংটা কুচকুচে কালো, তাই হঠাৎ আঁতকে উঠেছিল। সাধারণত কোনো টেডিবিয়ারই এমন কালো হয় না। ইনান ভালো করে খেয়াল করে দেখল ব্ল্যাক কালার স্প্রে দিয়ে পুতুল কালো করে দেয়া হয়েছে। পুতুলটা ধরতে গিয়ে পেটের দিকের বোতামটায় চাপ লাগে অদ্ভুত আওয়াজে হেসে উঠে টেডিটা, কেমন ভৌতিক হাসির আওয়াজ। কে পাঠিয়েছে এমন বিদঘুটে গিফট! কেউ নিশ্চয়ই তার সাথে মশকরা করেছে!ইনান টেডিটা নিয়ে বারান্দায় গিয়ে অদূরে ছুঁড়ে মারল সে। যেই জিনিস তাকে ভয় পাওয়ায় সেটা এভাবেই ছুঁড়ে মারবে সে। খট করে বারান্দার দরজা আটকে দিলো ইনান।

বৃষ্টিতে কালো রং ধুয়ে মুছে টেডির আসল রং বেরিয়ে আসল। কিছু অংশ কালো, কিছু অংশ ব্রাউন। অন্ধাকারে একজোড়া ভেজা হাত এসে পুতুলটাকে উঠিয়ে নেয়। বিদ্যুৎ চমকানোর আলোয় পুতুলটাকে সুক্ষ্ম চোখে পরখ করে এক হাত দিয়ে পুতুলের গায়ে লেগে থাকা কালো রং ছড়িয়ে দিতে থাকে পুতুলের গায়ে। বাদামি ও কালোর মিশ্রণে বিভৎস দেখায় পুতুলটাকে। পুতুল হাতে তাকায় দোতলার বন্ধ বারান্দার দিকে। তারপর পুতুলটার পেটের সুইচটা টিপে দেয়। আবারও অদ্ভুত.. ভয়ংকরভাবে হেসে উঠে পুতুলটা…হাড়হিম করা হাসি…

.
.
চলবে…

গ্রুপ লিংক
https://facebook.com/groups/1031660127365464/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here