#রোদরঞ্জন
#পর্ব_৫
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা
[প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য]
[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ। কার্টেসি সহ কোনো পেজেও কপি করা যাবে না।]
.
.
শরীরে অসহনীয় ব্যথা অনুভূত হতেই কঁকিয়ে উঠলো ইনান। জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর এক মুহুর্তের জন্য ব্রেইন ব্লাংক হয়ে গেল তার। বুঝতে পারল না কী হচ্ছে বা হয়েছিল। পায়ে ঠান্ডা কিছুর ছোঁয়া লাগতেই শিরশিরানি দিয়ে উঠে শরীর। ব্যথাতুর আওয়াজ তুলে চোখমুখ খিঁচে নেয়। ব্যথায় চোখ দিয়ে স্বচ্ছ নোনতা জল গড়িয়ে পড়ে।
‘ঠিক হয়ে যাবে, একটু সবুর করো। ঠিক হয়ে যাবে..’
কারো চিন্তিত কণ্ঠ শুনে চোখ মেলে তাকায় ইনান। এক কণ্ঠটি তার চেনা। ঝট করে মানুষটির দিকে চায় সে। জেহফিল তার পায়ের কাছে বসে আছে। হাতে তার এইড বক্স। দক্ষ হাতে ইনানের পায়ের ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে সে।
ইনান বুঝতে পারে যে সে জেহফিলের রুমে আছে, কেননা ঠিক একই ভাবে এর আগেও এই অবস্থাতে ছিল সে। দুর্বল গলায় ডেকে উঠল, ‘জে..জেহফিল!’
ইনানের জ্ঞান ফিরতেই প্রাণ ফিরে পায় যেন জেহফিল। অস্থির হয়ে ইনানের মাথার কাছে আসে। চুলে হাত বুলিয়ে দেয় আলতোভাবে। অস্বস্তি বোধ করে ইনান, জেহফিলের ছোঁয়াতে। মাথাটা হেলিয়ে নেয় বিপরীত পাশে। ইনান জেহফিলকে সরিয়ে দিতে চাইছে বুঝতে পেরে ইনানের মাথার কাছে রাখা হাত মুষ্টিবদ্ধ হয়ে যায়। নিজের ভেতর ক্রোধানলকে কষ্টে দমিয়ে রাখে। এখনই সময় নয়!
ইনান উঠে বসার চেষ্টা করে। জেহফিল ধরতে গেলেও সে থামিয়ে দেয়, ‘আমি পারবো।’
জেহফিলের মুখ থমথমে হয়ে যায় এরূপ প্রত্যাখ্যানে। চোয়াল শক্ত হয়ে উঠল ধীরে ধীরে। তাও নিজেকে সামলে ভালো মানুষীর মুখোশ টেনে আনল চেহারায়।
ইনান পা নাড়াতে পারল না। বাম পায়ের হাঁটু থেকে নিচ অবধি ব্যান্ডেজ। অতিরিক্ত ব্যথায় ইনান আন্দাজ করতে পারল না পায়ের কতটুকুতে আঘাত পেয়েছে। ভয় পেয়ে বলল, ‘পায়ে এতো ব্যান্ডেজ কেন?’
‘ডোন্ট অরি। সিরিয়াস কিছু না। গাছের ডালে লেগে লম্বা হয়ে কেটে গেছে, আর গোড়ালিতে কাটা ঢুকেছে। ততটাও গভীর না। কয়েকদিন রেস্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে।’
ইনান মৃদু শ্বাস ছাড়ল। সে তো ভেবেছিল সে বুঝি পঙ্গু হয়ে গেছে! ইনানের জামা কাপড়ে কাঁদা শুকিয়ে লেগে আছে। হাতে গালে যেগুলো ছিল সেগুলো বোধহয় জেহফিল পরিষ্কার করে দিয়েছে।
‘আপনি আমাকে কীভাবে পেলেন?’ ইনানের হঠাৎ প্রশ্ন।
জেহফিল জানালার বাহিরে গভীর জঙ্গলটায় ইশারা দিলো, ‘ওই যে দূরে জঙ্গলটা দেখছো না? আমার বাসা থেকে দেড় মিনিটের পথ। ভাগ্যক্রমে আমি রাস্তায় ছিলাম, তোমাকে জলাশয়ের কাছে পড়ে থাকতে দেখেই তুলে এনেছি।’
ইনান ভাবল সে কি জিজ্ঞেস করবে যে তাকে যে ধাক্কা দিয়েছে সেই মানুষটিকে জেহফিল দেখেছে কিনা? নাকি না! ইনান আর সেই প্রসঙ্গে গেল না। পরে বাবাকে পুরো ঘটনা খুলে বলবে খোঁজ নিতে।
‘আমার মোবাইল কোথায়?’
‘জানি না, মে বি জঙ্গলেই হারিয়ে গেছে!’
ইনান জানালা দিয়ে বাহিরে তাকাল। অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়েই চলেছে। আরেকটু পর সন্ধ্যা নামবে। ক্ষণিক বাদে বাদেই বিকট আওয়াজ তুলে বজ্রপাত পড়ছে। ইনানের মনে হলো সে যেনো অতীতে চলে এসেছে। সেই একইভাবে মোমের আলো জ্বালানো, সেই একই অনুভূতি, যখন সে আরো একবার এভাবেই জেহফিলের বাসায় ছিল!
বাহিরে দৃষ্টিপাত করেই ইনান বললো, ‘আমাকে একটু কষ্ট করে বাসায় দিয়ে আসবেন?’
ইনানের দিকে নিষ্পলক চেয়ে জবাব দিলো জেহফিল, ‘গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে। মেকানিক কাল বিকেলে আসবে।’
‘তাহলে আপনার মোবাইলটা একটু দিন। বাবাকে বলব আসতে।’
‘রাস্তার অবস্থা ভালো না, দুই কি.মি. দূরে তিন চারটে গাছ ভেঙে রাস্তা ব্লক হয়ে গেছে। এখন কয়টা ভেঙে পড়েছে কে জানে! কীভাবে আসবে তোমার বাবা?’
ইনানের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। রাস্তা ব্লক হয়ে আছে তাহলে সে যাবে কীভাবে? একজন অচেনা পুরুষের বাসায় থাকা তো অসম্ভব!
‘আপনি মোবাইলটা দিন আগে, কথা বলে নিই।’
জেহফিল বিনা বাক্যে মোবাইল হাতে দিলো ইনানের। প্রায় তিন চার বার কলের পর ওপাশ থেকে মোবাইল তুলল।
‘হ্যালো বাবা। আমি ইনান।’
‘এটা কার নাম্বার?’
ইনান বাবার কণ্ঠের বদলে আরেকজন পুরুষের কণ্ঠ পেয়ে মোবাইল সামনে এনে দেখল নাম্বার ঠিকাছে কিনা! নাম্বার তো ঠিকই আছে, তাহলে ধরল কে!
‘ইনান! কথা বলছো না কেন? এটা কার নাম্বার?’
এ তো পলক! ইনান মোবাইল কানে নিলো দ্রুত, ‘বাবা কোথায়? বাবাকে দিন তো।’
‘আমি আর স্যার শহরের বাইরে আছি, কাজে। বৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছে না কাল সকালের আগে বাসায় পৌঁছাতে পারব। এটা জানানোর জন্যই কল দিতে যাচ্ছিলাম তোমাকে।’
নেটের জন্য বারবার কথা কেটে কেটে আসছিল। ইনান বুঝতে পারল না কী বলবে এখন। যদি সে তার অবস্থার কথা বলে তাহলে বাবার তো অবস্থা খারাপই হয়ে যাবে। একে তো এখানে আসতে পারবে না, তারউপর আরো টেনশন করবে। পুওর কানেকশনের কারণে কল কেটে যায়।
‘কী বলেছে তোমার বাবা? আসছে?’ জেহফিল বলল, যদিও সে কান খাড়া রেখে সবটা শুনেছে।
‘না।’
জেহফিলের বাসায় থাকা উচিত হবে না বলে সে যেকোনো ফ্রেন্ডকে কল করতে চাইছিল। বাট তাদের কারোর নাম্বারই মুখস্থ নেই।
‘আপনার এফবি আইডি আছে?’
‘নাহ!’
ইনানের অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে চাইল। এই যুগে এসে এফবি চালায় না এমন মানুষ দুনিয়াতে কমই আছে।
‘সিরিয়াসলি!! ইন্সটা? টুইটার আছে?’
‘না’
‘আপনি কি ব্যাকডেটেড নাকি?’
জেহফিল আরেকটা মোম ধরাতে ধরাতে বলল, ‘আমার এসব ভাল্লাগে না।’
ইনানের মাথায় হাত পড়ল। সে এখন কীভাবে বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করবে? তার নিজের এফবি পাসও তো মনে নেই।
‘হয়েছে?’
বিভ্রান্ত চোখে তাকাল ইনান,’কী?’
‘মোবাইল। আমার মোবাইল অন্য কারোর হাতে বেশিক্ষণ থাকাটা আমি পছন্দ করি না।’
ইনান মোবাইল ফিরিয়ে দিলো। বিড়বিড় করে বলল, ‘নাটক!’
.
‘আমি এখন কী করব বলুন তো?’
‘রেস্ট নিবে।’
‘সেটা না। বাসায় যাব কীভাবে?’ ইনানের গলায় চিন্তার সুর।
‘বাসায় গেলে কাল বিকালেই যেতে হবে।’
‘ততক্ষণ পর্যন্ত কি আমি এখানেই থাকব নাকি?’
‘তোমার যাওয়ার আর কোনো জায়গা আছে নাকি?’
ইনান দমে গেল। তর্ক করে তো লাভ নেই। আসলেই তো এখন করার কিছু নেই। আজ রাতটা কোনোভাবে কেটে গেলেই হলো।
‘মোবাইলটা আরেকবার দিন তো।’
‘কেন?’
‘বাবাকে আবার কল দিব।’
আবারও কল ধরল পলক।
‘আমি আমার ফ্রেন্ডের বাসায় আছি। বৃষ্টি দিয়ে যেতে পারব না। বাবাকে বলে দিয়েন। কাল বিকেলের মধ্যে পৌঁছে যাবো।’
.
জেহফিল পাঁচটা মোম জ্বালিয়ে দিলো। তিনটা ইনানের বেডের দুপাশে রেখে বাকি দুটো নিয়ে সে কিচেনে চলে গেল। ইনান রুমটায় ভালো করে চোখ বুলালো। রুমে যত আসবাবপত্র আছে সবগুলো অ্যান্টিকের। দেয়ালে জেহফিলের আঁকা ড্রাগনের ছবি টানানো। প্রায় ছয় ফিটের। ছাদ পর্যন্ত বড় একটা বুকশেল্ফ রুমের দেয়ালজুড়ে। তাতে নানা ধরনের ইংরেজী সাহিত্যের বই। ইনান চোখ ছোটো ছোটো করে বইগুলোর নাম পড়ার চেষ্টা করল। এখানে প্রায় সাত আট হাজারের মতো বই আছে। ইনান যতগুলোর নাম পড়তে পারল সবগুলোই তার উইশলিস্টে রাখা বইগুলো। দুই তিন বছর ধরে খালি লিস্টেই লিখেছে এই বইগুলো, তবে কেনা হয়নি। বাবা গল্পের বই তেমন কিনে দেয়নি একাডেমিক পড়া নষ্ট হবে বলে।
বুকশেল্পের সামনেই বড় একটা সিঙ্গেল আয়না রাখা। আয়নার দিকে চোখ পড়তেই দেখল, একজন বলিষ্ঠদেহী সুদর্শন সুপুরুষ সটান দাঁড়িয়ে আছে, ব্রিটিশদের মতো চেহারা, শক্ত চোয়াল, ধূসর গাঢ় চোখ, মুখে চাপ দাড়ি। তার গায়ের সাদা শার্ট ফোল্ড করে রাখা। বই পড়ার সময় যেই ধরনের হ্যান্ডসাম নায়ক কল্পনা করে ইনান, সেই নায়ক যেন কল্পনার জগত হতে বাস্তবে চলে এসেছে! ইনান মুগ্ধ চোখে চেয়ে রইল আয়নার দিকে। আবেশিত দৃষ্টিতে পুরুষটির আপাদমস্তক পরখ করছে সে। চলে যায় কয়েক মিনিট। ঠাস করে বিজলি চমকানোর আওয়াজে ইনানের আত্মা কেঁপে উঠে হঠাৎ। চৈতন্য ফিরে পায় আবেশিত মন। সে আয়না দেখছিল!! আয়নায় থাকা পুরুষটি দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ইনান এবার ঝট করে দরজার দিকে তাকায়।
জেহফিল!! শিট! সে তাহলে তার গল্পের নায়ককে দেখছিল না! সে দেখছিল জেহফিলকে? অস্বস্তিতে, লজ্জায় ইনানের কান গরম হয়ে গেল। পা যাওয়ার সাথে সাথে কি তার মাথাও গেছে নাকি!
জেহফিল গত কয়েক মিনিট ধরেই দরজায় দাঁড়িয়ে তার বাটারফ্লাইকে দেখছিল। ইনানের মুগ্ধ দৃষ্টি চকিতেই বুঝে গেল সে। তাই তো ইচ্ছে করেই দরজায় হেলান দিয়ে নিজেকে আরো আবেদনময় করে উপস্থাপন করছিল।
ইনানের দৃষ্টি তার থেকে সরার সাথে সাথে ঠোঁটে বাঁকা হাসির রেখা ফুটে উঠে তার। হাতে থাকা সালাদের বাটি নিয়ে রাখে বেডসাইড টেবিলে। তারপর বসে ইনানের সামনাসামনি। ইনান এদিক ওদিক তাকিয়ে অস্বস্তি কাটানোর চেষ্টা করছিল। জেহফিলকে বেডে বসতে দেখে জড়তা নিয়ে কাঠ হয়ে বসল।
‘স্বপ্নের রাজকুমার বাস্তবে এসে ধরা দিয়েছে তাই না?’
ইনান আমতা আমতা করে টপিক চেঞ্জ করার চেষ্টা করল, ‘আ..আপনার তো দেখি বইয়ের অভাব নেই। কিছু বই ধার দিয়েন আমাকে।’
ইনানের ইতিউতি করা দেখে জেহফিল ঠোঁট কামড়ে হাসে, ‘যত ইচ্ছা নিতে পারো, সাথে তাদের মালিককেও চাইলে নিতে পারো।’
শেষ বাক্যটা জেহফিল ধীরে বলেছিল বিধায় ইনান শুনতে পায়নি।
‘তাহলে এখন একটা বই দিন, সময় কাটছে না।’
জেহফিল উঠে গিয়ে বুকশেল্পের কাছে দাঁড়ালো। তার হাঁটার ভঙ্গিমা এতো ম্যানলি যে ইনান না চাইতেও বারবার তাকাচ্ছিল।
.
বই হাতে নিয়ে থাকলেও ইনানের পড়ায় মনোযোগ নেই। তার খুব অস্বস্তি লাগছিল, কেননা জেহফিল সামনাসামনি ডিভানে বসে আছে। না, তার দিকে তাকিয়ে নেই। বরং জেহফিলের হাতেও বই। সে মনোযোগ সহকারে পড়ছে। ইনান যখনই বইয়ে নজর দেয় তখনই মনে হয় জেহফিল ওকে দেখছে, কিন্তু জেহফিলকে দেখে মনে হয় সে বইয়ে ডুবে আছে, যেন ইনানের দিকে তাকানোর সময় নেই তার।
এভাবে ইনান বইয়ে মনোযোগ দিতে পারছে না। শেষে হাল ছেড়ে দিলো। চাদর টেনে হেডবোর্ডে হেলান দিয়ে বসে রইল। তারপর মনে হলো জামা বদলানো দরকার। শুকনো কাঁদা মাটি লেগে থাকা জামা পরে থাকতে গা কেমন খুঁতখুঁতে করছে। কিন্তু কী জামা পড়বে? জেহফিল থেকে ধার চাইবে?
‘শুনুন…’
ইনান জেহফিলকে বলবে তার আগেই আবিষ্কার করল জেহফিল একটা টি শার্ট আর থ্রি কোয়ার্টার হাতে ইনানের সামনে দাঁড়িয়ে। এই ছেলেটা কি মাইন্ড রিডার নাকি! মনের কথা কীভাবে বুঝে?
জেহফিল ইনানের সামনে জামা রেখে শান্ত গলায় বলল, ‘চেঞ্জ করে নাও, আমি গিয়ে ডিনার রেডি করছি।’
যাওয়ার সময় জেহফিল দরজা আটকে গেল। ইনান দুইটা মোম নিভিয়ে পরনের টপ খুলে ফেলল। পা দিয়ে প্যান্টটা বেশ সময় নিয়ে সাবধানে পরতে হলো তাকে।
ব্যস্ত ইনান খেয়াল করল না রুমের উপরে কোণায় থাকা গ্লাস ভেদ করে দুটো চোখ মোহাবিষ্টের ন্যায় ইনানের শরীরের প্রতিটি ভাঁজে নজর বুলাচ্ছিল, আর উন্মাদের মতো কিছু একটা বিড়বিড় করছিল।
.
.
জেহফিল দরজায় নক করল।
‘আসুন।’
ডিনার হাতে জেহফিল ভেতরে প্রবেশ করল। ইনান নিজের দিকে তাকাল একবার। জেহফিলের টিশার্ট তার হাঁটু ছুঁই ছুঁই। থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট ইনানের ফুল প্যান্টের সমান। খুব অদ্ভুত দেখাচ্ছে তাকে।
‘ইউ আর লুকিং সো প্রীটি!’ জেহফিল বিমোহিত গলায় বলে।
ইনান মুখ বাঁকা করে বলে, ‘থ্যাংকস।’
.
‘এগুলো আপনি বানিয়েছেন?’
‘আমি ছাড়া আর কেউ আছে এখানে?’
ইনান খেতে খেতে বলল, ‘একটা কথা বলি?’
‘শুনছি।’
ইনান থেমে থেমে বলল, ‘আপনার বাবা মা নেই?’
জেহফিল স্বাভাবিক সুরেই বলল, ‘না।’
‘মানে…বলতে চাইছিলাম, তারা কী..’
নির্বিকার গলায় বলল জেহফিল, ‘মা’রা গেছে।’
ইনান বিষম খেল কিছুটা। জেহফিল অস্থির হয়ে পানি এগিয়ে দিলো, ‘ধীরে খাও। খাবার কোথাও যাচ্ছে না।’
জেহফিল তাহলে একা? এই নির্জন জায়গায় একা থাকে! কীভাবে থাকে? একা বাস করা কারো পক্ষে আদৌ সম্ভব!! তবে ইনান জেহফিলের বাবা মা সম্পর্কে আর কথা বাড়ালো না, চুপচাপ খেতে লাগল।
.
খাবার শেষে ইনানের প্রচণ্ড ঘুম পেল। মাত্র দশটা বাজে, এত তাড়াতাড়ি সে স্বভাবত ঘুমায় না। তবে আজ একটু বেশিই ঘুম পাচ্ছে।
‘জেহফিল, আমার ঘুম পাচ্ছে। আপনি ঘুমাবেন কখন?’ হাই তুলে বলল ইনান।
‘এগুলো গুছিয়েই ঘুমাবো।’
‘আচ্ছা, ভেতর থেকে দরজা আটকিয়ে যাবেন প্লিজ।’
এই বলে ইনান গায়ে চাদর টেনে দিলো। জেহফিল দরজা আটকে চলে গেল। দু মিনিটের মাথায়ই ইনানের চোখে ঘুম চলে আসলো।
বাহিরে ঝড় বইছে। বাতাসের ঝাপটায় দুনিয়া উল্টানোর পথে। ইনানের রুম অন্ধকার। ক্যাড়ক্যাড় আওয়াজে ইনানের রুমে দরজা খুলে গেল আচমকা। জেহফিল মোম হাতে রুমে ঢুকল। তার চোখের চাহনিতে কেমন উন্মাদনা। ইনান গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে। জেহফিল মোম টেবিলে রেখে ইনানের পাশে বসে মুখের কাছে ঝুঁকে এলো। ইনানের গালের কাছে এসে লম্বা শ্বাস টানল সে। তারপর কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে চুমু খেল গালে। ইনানের মসৃণ ত্বকে আঙ্গুল দিয়ে স্পর্শ করতে শুরু করল। কী নরম! কোমল!
ইনানের গায়ের চাদর সরিয়ে দিলো জেহফিল। ঘাড় কাত করে সে ইনানকে দেখছে। ইনানের শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে সাথে তার বুক পেট উঠানামা করছিল। জেহফিল আলতো হাতে ইনানের টিশার্ট উঠিয়ে দিলো। তুলার মতো নরম উদরে জেহফিল তার শক্ত হাত ছোঁয়ালো। তার ভেতরের উন্মত্ততা ক্রমশ জেগে উঠতে লাগল। দৃষ্টিতে তার মাদকতা। জেহফিল ইনানের পেটে হাত বুলাতে বুলাতেই পরনের শার্টের বোতাম একটা একটা করে খুলতে লাগল। ঠোঁটে তার বাঁকা হাসি। তার বাটারফ্লাইকে পার্মানেন্টলি নিজের কাছে রাখার ব্যবস্থা খুব শীঘ্রই করতে চলেছে সে।
.
.
চলবে…