#রোদরঞ্জন
#পর্ব_৪২
#আশফি_শেহরীন_চিত্রা
[কপি করা নিষিদ্ধ। কার্টেসি সহ কোনো পেজে এবং অন্য কোনো সাইটেও কপি করা যাবে না।]
.
.
[যারা এখনো গল্প পড়েননি/ পরে পড়বেন বলে ভেবেছেন, তারা আজকের পর্ব পড়লে সম্পূর্ণ গল্প পড়ার আনন্দ পাবেন না। পরে গল্পটা পড়তে বোরিং লাগবে, কারণ সব জেনে পড়ার একটুও মজা নেই। তাও যদি পড়েন কী বলব আর! গুড লাক।]
_____
বর্ষারাত। এই বছর শেষে এতটাও বৃষ্টি আশা করেনি পলক। আবহাওয়া অনুসারে অতিবৃষ্টি। দেখলে মনে হয় এখন বর্ষাকাল চলছে, আদতে শীতের শেষ। পলক সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা ভুতুড়ে অট্টালিকার দিকে তাকায়। ঝিমঝিম করে উঠে শরীর। এই বাড়িতে তার ছোট্ট ইনান একটা হিংস্র জন্তুর সাথে কাটাচ্ছে ভাবলেই শিরদাঁড়া শিরশির করে ওঠে। পলক টর্চ অন করে। গাড়ি দিয়ে আসার টাইমে দূর থেকে দেখেছিল দোতলায় আলোর আভা। নামার পর দেখল সম্পূর্ণ অন্ধকারে নিমজ্জিত। লোডশেডিং হয়তো।
এই অবস্থায় কেউ বাড়িটিকে দেখলে ভূতের বাড়ি ছাড়া আর কিছুই মাথায় আসবে না। হরর মুভিতে দেখায় না, মাঝরাস্তায় গাড়ি নষ্ট হয়ে গেলে মেইন লিডরা একটা পরিত্যক্ত বাড়িতে আশ্রয় নেয়, আর সেখানেই একের পর এক ম’রতে থাকে। ঠিক তেমনটাই এই বাড়ি। যেন পলক এক পা দিলেই উপর থেকে একটা কাটারি এসে তার গলা আলাদা করে দেবে।
সাহস সঞ্চয় করলো পলক। সে ভীতুর ডিম না জেহফিলের মতো। এমনি এমনি তার পদোন্নতি হয়নি। সাহস না থাকলে সে কীসের পুলিশ? ছাতা ছাড়াই বাসার রাস্তায় হাঁটতে আরম্ভ করল। আনমনে নজর যায় তাজবীরের বাড়ির দিকে। ঐ বাড়িটাও অন্ধকার। মেইন গেটের সামনে একটা লাল রঙের লাইট শুধু জ্বলছে। লোকটা গেল কোথায়? এই নাকি সাহায্য করবে, জেহফিল বাসাতেই আছে, ও’কে ধরতে নাকি হেল্প করবে। পলক রিফিউজ করেছিল অবশ্য, সে চাইলে ফোর্স নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু জেহফিলকে ধরার জন্য ফোর্স সাথে আনা- তার কেমন আতে ঘা লাগল। জেহফিল আর সে প্রায় সমানই বলতে গেলে। সাথে আরো পুলিশ নিয়ে আসা মানে সে জেহফিলকে ভয় পায়। পরবর্তীতে জেহফিল যদি তা নিয়ে তাকে বিদ্রুপ করে? যদিও পলক বাচ্চাদের মতো গোঁয়ার্তুমি করেই সাথে কাউকে আনলো না, অথচ সে জানে, এমন পরিস্থিতিতে সাথে ফোর্স আনলে ক্রিমিনালকে ধরা সহজ হয়। একপ্রকার জেদের বশেই সে এই বাচ্চামোটা করে ফেলল।
বাড়ির গেইট খোলাই ছিল। গেইটা পুরোনো, তালা মারা থাকলেও পলক জানে কীভাবে খুলতে হয়। বাড়িতে প্রবেশ করেই সর্বপ্রথম চোখ যায় গোডাউনের দরজার দিকে। ঐদিন জেহফিলকে খোঁজার জন্য গোডাউনে আসলেও তেমনভাবে স্মৃতিচারণ করা হয়নি। এখন মনে পড়ল তাকে মারার কথা। পলক তো ভেবেছিল সেইদিনই হবে তার শেষ দিন। কী কুত্তার মতো মেরেছিল তাকে! পলকের ক্রোধ বেড়ে গেল। জেহফিলকে ধরার আকাঙ্ক্ষা তীব্র হয়ে উঠল। লাইট হাতে পলক সিঁড়ি দিয়ে উঠতে লাগল ধীর পায়ে। জেহফিল বাসায় আছে তাজবীর তাকে কনফার্ম করেছে, সেই প্রস্তুতি নিয়েই এসেছে সে। বন্দুক খাপে রেখেছে একটা, পিঠের পেছনে একটা, পায়ে একটা।
প্রতিশোধের আগুনে জ্বলতে থাকা পলক খেয়ালই করল না তার পায়ের সামনে হঠাৎ একটা বিড়াল দৌড়ে এসেছে। হুট করে আসায় পলক বিড়ালের গায়ের উপর থেকে পা সরাতে গিয়ে ঘটিয়ে ফেলল অঘটন। সিঁড়িতে পড়ে যায় সে, টর্চ পড়ে যায় সিঁড়ি গড়িয়ে, গড়াতে গড়াতে একসময় লাইট অফ হয়ে যায়। রেলিং না থাকায় পলক উপরের সিঁড়ি ধরে বসে পড়ে। একটুর জন্য সে নিচে পড়ল না। ভাগ্যিস! বুকে হাত দিয়ে হাঁফ ছাড়ে। নিচতলায় লাইট পড়ে কোথায় হারিয়েছে দেখা গেল না। মোবাইল বের করতে গিয়ে মনে পড়ল মোবাইল গাড়িতে রেখে এসেছে। শিট! পলকের মুখ দিয়ে অকথ্য গালি বের হয়ে আসলো। এখন গিয়ে মোবাইল আনাটা ঝূঁকিপূর্ণ হয়ে যাবে। অন্ধকারে সিঁড়ি দিয়ে নামতে পারবে না। অনেক সিঁড়ি ভেঙে এসেছে, অল্প হলেও একটা কথা ছিল।
কোমর থেকে বন্দুক বের করল সে। বাইরে বর্ষার তেজ বেড়েছে। বজ্রপাতের আওয়াজে কানে তালা লাগার উপক্রম। একটা সুবিধাও হয়েছে বৈকি। আওয়াজ করা যাচ্ছে সুবিধা মতো। জেহফিলের মেইন দরজার সামনে আসলে সতর্কতার সাথে দরজায় হাত লাগায়। আশ্চর্যজনকভাবে দরজাটা খোলা। পলককে এক সেকেন্ডের জন্য ভাবান্বিত দেখায়। বন্দুকটাকে আস্থা করে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ফেলে দরজা খুলল। ঘরের জানালা দিয়ে বিজলির আলো প্রবেশ করায় আলোকিত হয়ে উঠছে ক্ষণে ক্ষণে। মিনি সেকেন্ডের আলোয় পলক দ্রুত চোখ বুলিয়ে নেয়। কেউ নেই। পলক আরো সতর্ক হয়। একবার সামনে, একবার পেছনে বন্দুক তাক করে এগিয়ে যায়। জেহফিলের রুমে চেক করে, বারান্দা, বাথরুমেও ভালো করে দেখে নেয়। যখন কাউকে পেল না, তখন এগিয়ে যায় আর্ট রুমের দিকে। আর্ট রুম বরাবর লম্বা করিডোর। করিডোরের শেষ মাথায় বাঁক। তিমিরে আচ্ছন্ন। পলক আর্ট রুমের দরজার নব ঘুরাবে সেই সময় কিছু একটা পড়ার আওয়াজ পায়। ঝনঝন। চমকে উঠে পেছনে ফিরল সে। দেখল করিডোরে লম্বা কাঠ জাতীয় কিছু একটা পড়ে আছে। অন্ধকার চোখে সয়ে আসলে পলক আওয়াজ না তুলে এগিয়ে যায় সেদিকে।
করিডোরের দুপাশেই ভিন্ন ভিন্ন রুমের দরজা। পলকের মনে হয় এই বুঝি যেকোনো একটা দরজা থেকে আচানক বেরিয়ে আসে জেহফিল।
গুটিগুটি পায়ে এগোলে দেখতে পায় ক্রাচ পড়ে আছে। পলক হাতে তুলে নেয় সেটা। তাজবীর তাহলে মিথ্যে বলেনি। জেহফিলের আসলেই পা ভেঙেছে! নাহ! পলক নিজ চোখে না দেখলে বিলিভ করবে না। হতে পারে এটাও জেহফিলের কোনো চাল! পলক ফাঁদে পা দেবে না এত সহজে।
আচমকা একটা অবয়ব চলে গেল করিডোরের বাঁকে। পলক মাথা তুলল। ট্রিগারে আঙুল রাখল। অবয়বটা কোন দিকে গেছে সেটা খেয়াল করার সময় দেয়া হয়নি পলককে। কদম গুনে গুনে পা ফেলে সে। করিডোরের শেষ প্রান্তে এসে কাউকেই দেখতে পায় না। হাতের ডান এবং বাম দিকে ফাঁকা। পলক এগোয় না। বরং পিছিয়ে যায়। আবার কী মনে করে এগোয়। শেষ মাথায় দরজা একটাই ছিল। খুলে দেয় সে। প্রত্যেকটা ইন্দ্রিয় সচল রেখে রুমে ঢুকে পড়ে। পলকের কাছে মনে হয় যেন সে গুহায় ঢুকে পড়েছে এত অন্ধকার। অন্যান্য রুমে যা-ই একটু আলো ছিল এটায় তাও নেই। মনে হচ্ছে জানালা নেই কোনো। ভ্যাপসা গন্ধ নাকে লাগে, কতদিন এই রুম খোলা হয় না কে জানে!
পায়ে বিভিন্ন জিনিসের সাথে হোঁচট খাচ্ছে সে। স্টোর রুম নাকি কী এটা গেস করতে পারল না পলক। যখন এক জায়গায় স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে ভাবল রুম ছাড়বে সেই সময়ই কিছু একটা তার মাথায় এসে লাগল। বিদ্যুৎএর মতো শক খেল যেন, তারমানে…তারমানে জেহফিল এই রুমেই! পলক আন্দাজ করল ছোট বল টাইপ কিছু একটা ছুঁড়েছে তার দিকে। যেন জেহফিল খেলছে তার সাথে। পলক ঘাফড়ায় না। দৃঢ় কন্ঠে বলল,
‘আই নো জেহফিল, তুই এইখানেই আছিস। আমি আসব দেখে কাপুরুষের মতো লুকিয়েছিস এখন। হাইড অ্যান্ড সিক খেলছিস আমার সাথে। এত ছোট বুকের পাটা নিয়ে কীভাবে ইনানকে রক্ষা করার কনফিডেন্স পাস তুই? শেইম অন ইউ। ইউ আর সাচ আ কাওয়ার্ড..’
শেষ কথাটা বলার সাথে সাথেই আরেকটা বল জাতীয় কিছু পলকের মাথায় লাগল। এবার একটু জোরে। যেন রেগে বল ছুঁড়েছে জেহফিল। পলক ব্যথা পেল না তেমন। কিন্তু ক্রোধের অনলে জ্বলছিল সে। বল যেইদিক থেকে আসছিল সেইদিকে এলোমেলো পা ফেলল পলক। কিন্তু কারো হদিস পেল না সে। পুরো রুম ঘুরল হাতড়ে হাতড়ে। বুঝল এটা রুম না, বরং দরজার এপাশেও ছোট্ট করিডোর। দেয়ালে হাত রেখে সামনের দিকে যায় পলক। এক পা এগোলেই তার মনে হয় তার পেছনেও কেউ এগিয়ে আসছে। কিন্তু পেছনে তাকালে অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখতে পায় না। আবার পেছনে তাকালে মনে হয় তার সামনের দিকে কেউ একজন। খুবই বিভ্রান্তিকর!
কতক্ষন চুপচাপ থাকার পর পলকের মনে হলো এখানে সে ছাড়া কারো উপস্থিতি নেই। তাই আস্তেধীরে হাঁটা শুরু করল। করিডোরে হাঁটা অবস্থায় পলকের হঠাৎ করে কেমন লাগা শুরু করল, মনে হচ্ছে খারাপ কিছু ঘটতে চলেছে। হঠাৎ তার ইনানের কথা মনে পড়ল। আর মনে পড়ল তাজবীরের কথাটা,
‘‘সাবধানে থাকিয়েন। আবার প্ল্যানের আগেই আপনি কেল্লাফতে হয়ে যাবেন না যেন।’’
পলক হঠাৎ ঘেমে গেল, তার ভীষণ অস্থির লাগছে। পলকের চিন্তাভাবনার মাঝেই টের পেল কারো উপস্থিতি। কিন্তু সেটা পেছনে না সামনে বুঝতে পারল না। ঠিক সেই মুহূর্তেই পলকের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলে দিলো কেউ বা কিছু তার দিকে ধেয়ে আসছে।
লাইট জ্বলে উঠল হঠাৎ। পলক পেছনে ফেরা মাত্রই দেখল একটা ধারালো ছু’রি, যেটায় পলকের ঘাম ছোটা শঙ্কিত চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, সেই শাণিত ছু’রি এগিয়ে আসছে পলকের চোখ বরাবর। পলক থমকে যায়, তার হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়। তবে তার আগেই হাতে টান অনুভব করে সজোরে। এবং রুমের লাইট বন্ধ হয়ে জ্বলে উঠে ডিম লাইট।
পলকের যখন ব্রেইন কাজ করা শুরু করল সে দেখল তার পাশে তাজবীর বসে আছে। সে তাকিয়ে বাইরে চোখে চোখে রাখছে কাউকে। পলক কিছু বলতে মুখ খুললেই তাজবীর তার মুখ চেপে ধরে তর্জনী নিজের মুখে নিয়ে ‘শশহ’ আওয়াজ করল।
ফিসফিসিয়ে বলল, ‘জেহফিল দেখলে খবর করে ছাড়বে। একটু চুপ থাকুন। ইনানের বাবা আসছে।’
পলক নিজেও এবার ধীরস্বরে বলল,
‘কিন্তু এটা তো জেহফিল না।’
পলক লাইটের আলোয় দেখেছে তার আক্রমণকারীকে। এবং দেখামাত্রই তার চোখমুখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়, ভয়ে না, বিস্ময়ে!
তাজবীর আগের ন্যায় বলল,
‘জেহফিলই। ভালো করে দেখুন।’
এই বলে তাজবীর লুকিয়ে থাকা পর্দার আড়াল থেকে বাইরে উঁকি দেয়। এবং পলককেও দেখার সুযোগ করে দেয়। পলক ভালো করে দেখল ডিম লাইটের আলোয় থাকা অবয়বকে। নিজেকে বিশ্বাস করতে না পারায় আবারও চোখ ডলে দেখল। সে যা দেখছে তা সত্যি!!
পলক ফ্যাসফ্যাসে গলায় আটকে আসা কণ্ঠে তাজবীরকে বলল,
‘কিন্তু এটা তো ইনান!’ তার কণ্ঠে অবিশ্বাস, বিস্ময়, আতঙ্ক!
তাজবীর হাসলো, ‘আপনার মাথা। ওটা জেহফিলই। বললাম না জেহফিল অ্যাক্সিডেন্ট করে পা ভেঙেছে। ঐ দেখুন জেহফিল খুঁড়িয়ে হাঁটছে।’
পলক আবার দেখলো তার চমক ধরানো চাহনি মেলে। ইনান খুঁড়িয়ে হাঁটছে, পা বাঁকা করে এমনভাবে হাঁটছে যেন তার পা ভেঙে গেছে। হাতে ধারালো ছু’রি। চোখেমুখে হিংস্রতা, ঘাড় কাত করা, দাঁত চেপে কিছু একটা বিড়বিড় করা। ঠিক যেমনটা পলককের মা’রার সময়ে জেহফিলের চেহারার অভিব্যক্তি ছিল। এ যেন জেহফিলের ফিমেল ভার্সন!
পলক শূন্য চোখে চাইল তাজবীরের নিকট। তাজবীরের মুখ চেপে হাসা দেখে পলকের বিভ্রম কাটলো। অবিশ্বাস্য চোখে চেয়ে দম বন্ধ করে বলল,
‘ডোন্ট টেল মি..’
সাথে সাথে তাদেরকে ঢেকে রাখা পর্দা উড়ে গেল। এবং জেহফিল নামক ইনানের নজরে পড়ে গেল তারা। সে খুঁড়িয়ে তেড়ে আসে ছু’রি হাতের উপরে নিয়ে। তাজবীর দ্রুত এসে ইনানকে ধরার চেষ্টা করল। ইনান তার দিকেও তেড়ে আসলো। তাজবীর চেঁচিয়ে উঠল,
‘পলক, নিড হেল্প!’
পলকও চলে আসে ইনানকে ধরতে। তাজবীর পেছনে গিয়ে হঠাৎ ইনানের পিঠে লাথি মারে। লাথি যেন ইনানকে না, পলকের বুকে মেরেছে। সে তাজবীরের উপর চেঁচিয়ে উঠে। তাজবীর রেগে গিয়ে বলে,
‘আপনার সামনে এখন ইনান নয়, যে আছে সে জেহফিল। ওকে ধরার ট্রাই করুন।’
তাজবীরের লাথিতে ইনান ততটা না নড়লেও হাত থেকে ছু’রি পড়ে যায়। সেই সুযোগে তাজবীর ইনানের হাত পেছনে নিয়ে চেপে ধরে। জেহফিলরূপী ইনান গর্জন করে উঠে। তাজবীরের দেখাদেখি পলক এসে ইনানের পা চেপে ধরতে চাইলে ইনান পা দিয়ে পলকের মুখে লাথি মারে। ছিটকে পড়ে পলক। পলক অবাক হয়, এত শক্তি ইনানের যে পলক হতভম্ব হয়ে যায় কিছু সময়ের জন্য। তাজবীর চেঁচামেচিতে তার হুশ ফিরলে এসে ইনানকে উপর করে ফ্লোরে চেপে ধরে ইনানের পিঠের উপর এক পা দিয়ে হাত শক্ত করে ধরল পলক।
ইনানকে ধরে রাখতে কষ্ট হচ্ছে তার। যেন অসুরের শক্তি ভর করেছে ইনানের শরীরে। খুব কষ্ট হচ্ছিল ইনানকে ধরে রাখতে। তারা দুজন শক্তসামর্থ্য পুরুষ হয়েও ইনানকে ধরে রাখতে পারছিল না। ইনান ক্রমাগ্রত পা ও হাত দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করছিল। পলক কিছুটা ব্যথাও পেয়েছে ইনানের হাতের খামচিতে।
পলকের কেন যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না যে তার চোখের সামনে তার ইনান এই অবস্থায় পড়ে আছে। তার এত কষ্ট লাগছিল। সাথে মনের মধ্যে হাজারো প্রশ্ন।
ঠিক সেই সময় খট করে দরজা খুলল। ইনানের বাবা এবং কাওসার সাথে ঢুকল। লাইট অন করে দিলো তারা। চোখের সামনে মেয়ের অবস্থা দেখে চিৎকার করে উঠলেন ইফাজ। কাওসার ওকে থামালেন,
‘ইফাজ, বন্ধু। এটা ইনান না। জেহফিল।’
ইফাজের বুক মোচড় দিয়ে উঠল। আসলেই তো! সে ইনানের সামনে বসে ডাকতে থাকে ইনানকে,
‘ইনান, মা, ইনান।’
ইনান কোনো উত্তর না দিয়ে গজগজ করতে থাকে। তার কণ্ঠস্বরও পাল্টে ডীপ হয়ে গেছে, মোটা গলার স্বর, যেন জেহফিল গজরাচ্ছে।
ইফাজ শত চেষ্টা করেও ইনানের স্বরূপ ফেরাতে পারছিলেন না। আরো কয়েকমিনিট ধস্তাধস্তি চলে। ইনানের সাথে না পারলে কাওসারও যোগ দেন। ইনানের পা চেপে ধরেন তিনি। আর ইফাজ খানের মুখ থেকে ‘ইনান’ ছাড়া আর কোনো শব্দই বেরোচ্ছিল না। তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। কুঁচকে যাওয়া গালের ভাঁজে পানি মিশে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর ইনান ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে আসে। শরীর ছেড়ে দেয়। চোখ বুজে আসে হঠাৎ। পলক এবং তাজবীরের হাতের বাঁধন আলগা হয়ে যায়। তখনই হুট করে ইনান চোখ মেলে।
.
.
চলবে…