রোদরঞ্জন #পর্ব_৩১ #আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

0
385

#রোদরঞ্জন
#পর্ব_৩১
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ। কার্টেসি সহ কোনো পেজেও কপি করা যাবে না।]
.
.

আকাশে কালো‌ মেঘের ঘনঘটা। যেকোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে। এই শীতেও বৃষ্টি নামাটা অস্বাভাবিক ব্যাপার। অসময়ে বৃষ্টি। জেহফিল আকাশের দিকে চাইলো। আজকের রাতটা লম্বা হতে চলেছে। হালকা হাসির রেখায় ঠোঁট প্রসারিত হলো তার। মনে মনে কিছু একটা চিন্তা করছে। আর সেই চিন্তাটা আঁচ করতে পারছে ইনান। জানে না জেহফিল তাকে কী শাস্তি দিবে। তবে যেহেতু জেহফিল তখন বলেছিল সে ইনানকে রক্তা’ক্ত করতে পারে না তার মানে জেহফিল কঠিন কোনো শাস্তি দিবে না যাতে ইনানের কষ্ট হয়। তাহলে কী দিতে পারে?

ইনান আড়চোখে জেহফিলের হাতের দিকে তাকাল। বলিষ্ঠ হাতে জেহফিল ডার্ক রেডের লম্বা দড়িটা প্যাঁচাচ্ছে। তার শ্যামলা হাতের নীল শিরাগুলো ফুলে কী সুন্দর আঁকাবাঁকা প্যাটার্নে রূপ নিয়েছে। দেখতে এত মারাত্মক লাগছে যে ইনান যদি স্বাভাবিক অবস্থায় থাকতো তাহলে জেহফিলের হাত ধরে চুমু দিতে দিতে অস্থির করে দিতো।

ইনানের মাথায় একটা বাজে চিন্তা আসলো জেহফিলের হাতের ফিতা দেখে। জেহফিল কি তাকে বাঁধবে? মা’রবে না তো অবশ্যই! তাহলে কী বেঁধে জোর করে কিছু করবে? ইনান গভীর চিন্তায় পড়ল। জেহফিল কখনোই জোর করে স্বামীত্ব ফলায়নি। ফলানোর দরকার পড়েনি। ইনান যতই ঘৃণা করুক জেহফিলকে, সে একটা ব্যাপার অস্বীকার করতে পারবে না যে জেহফিল তাকে যতবারই ঘনিষ্ঠ স্পর্শ করে ততবার ইনান সাড়া না দিয়ে থাকতে পারে না। ইনান মাঝে মাঝে ঘৃণার কারণে জেহফিলের কাছে আসতে চায় না, কিন্তু শরীর? জৈবিক চাহিদা তো সবার থাকে, ভালোবেসে নিবিড়ভাবে হাত ছোঁয়ালে নিজেকে সংযত রাখতে পারে ক’জন? ইনানও পারেনি। সে তো একটা রক্তে মাংসে গড়া মানুষ। জৈবিক চাহিদা তারও আছে। জেহফিল যখন ইনানকে ভালোবেসে ছোঁয়, ইনান না চাওয়া সত্বেও জেহফিলের ডাকে ছুটে যায়। নিজেকে কোনোভাবেই সামলাতে পারে না। সব দোষ জেহফিলের। কেন এত কামুকের সাথে তাকে ডাকতে হবে? জেহফিল কেন এত আবেদনময়?

‘ইউ ক্যান টাচ মি ইফ ইউ ওয়ান্ট বাটারফ্লাই।‌ আ’ম অল ইওরস।’

ইনান শিহরিত হয় তার পেছন থেকে আসা প্রগাঢ় কণ্ঠ শুনে। এইসব কথা বলেই তো জেহফিল তাকে দুর্বল করে দেয়, যার কারণে ইনান সাময়িক সময়ের জন্য ভুলে যায় জেহফিলের নৃশংসতা।

ইনান জেহফিলের থেকে দূরে সরে যায়। জেহফিল আটকায় না। বরং তার ঠোঁটের কোণে তীর্যক হাসির ঝিলিক দেখা দেয়,

‘সো, শ্যাল উই স্টার্ট?’

জেহফিল চেয়ারে বসে। দুই পা ফাঁক করে হেলান দিয়ে খুব আরামে বসল। ঘাড় পেছনে নিয়ে কাত করে ঘাড়ের হাড় ফুটাল। হাত দিয়ে ঘাড়ের পেছনে নিয়ে ইনানের দিকে তাকায়।

‘ফার্স্ট আমাকে বলো, আমার থেকে যে পনেরো ঘন্টা ত্রিশ মিনিট দূরে ছিলে, কেমন দেখলে দুনিয়া?’

ইনান মিইয়ে গেল। জঘন্য দুনিয়ার সাথে পরিচিত হলো একদিনে। বন্ধু, বন্ধুর বোন এবং আস্থা করা মানুষগুলোর বিশ্বাসঘাতকতা। জেহফিল ঠিক বলেছিল, সে নিরাপদ না বাইরের দুনিয়ায়। অসহায় পেলে কীভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে তা ঢের বুঝল সে।

‘কী ভাবছ? আই টোল্ড ইউ বাটারফ্লাই। বাইরের দুনিয়াটা ভালো না।’

ইনান দু’পাশে মাথা ঝাঁকায়, ‘আপনিই বা কম কিসে?’

জেহফিল ভ্রু কুঁচকায়।

‘বিয়ের আগে স্টক করেছেন, ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করেছেন, এগুলো কোনো ভালো মানুষের কাজ?’

এক ভ্রু উঁচু করল জেহফিল, বাঁকা হেসে বলল,

‘কে বললো আমি ভালো মানুষ? বাই এনি চান্স, তুমি কি আমাকে ভদ্র নায়ক হিসেবে আশা করছিলে? তাহলে জেনে নেও, তোমার জীবনের খলনায়ক আমি। খলনায়কের কাছ থেকে নায়কের অ্যাক্টিং আশা করলে হবে?’

‘তাহলে বাকিরাও খলানায়ক।’ ইনানের পাল্টা উত্তর।

‘উহু, তোমার জীবনে আসা প্রথম খলনায়ক আমি। তাই জায়গাটা আমার জন্য সিলবদ্ধ হয়ে গেছে, মৃ’ত্যুর আগ পর্যন্ত। কীভাবে নিজের অর্জিত জায়গা ছেড়ে অন্যকে জায়গা দেই বলো তো? এত মহান আমি না। তোমার জীবনে ‘ভিলেন’ শব্দটা শুধুমাত্র আমার জন্যই বরাদ্দ। যার কাজ পরে আসা সব নিচুস্তরের ভিলেনদের পরাস্ত করা।’

ইনান হাল ছেড়ে দেয়। জেহফিলের সাথে কথা বলে পারবে না সে।

‘এখন বলো, তোমার কী সিদ্ধান্ত?’

ইনান হতবুদ্ধি হয়ে চেয়ে থাকে, ‘কীসের?’

‘আমার সাথে সংসার করার? করতে চাও নাকি না?’

জেহফিল যে এইধরনের প্রশ্ন করবে তা চিন্তাও করেনি সে। জেহফিল এই ধরনের কথা বলার মানুষ না। ইনান কী বলবে ভেবে পায় না। জেহফিল বলল,

‘তুমি যদি আমার সাথে সংসার করতে চাও তাহলে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে।’

সংসার করতে নিয়ম মানে কোন পাগলে? এটা কি কোনো চাকরি যে নিয়ম মতো করতে হবে? জেহফিল কিসব কথা বলছে?

‘ওয়েল, নিয়ম না সঠিক, এটা আমার অর্ডার।’

জেহফিল তীক্ষ্ণ চোখে চায় ইনানের দিকে। ইনানের হতবাক মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,

‘তুমি কি আমার কথা শুনছো?’

ইনান ধীর গতিতে মাথা নাড়ায়।

‘গুড। ওয়ান, তোমার প্রায়োরিটি থাকবে আমাকে ঘিরে। না কোনো জীব, না কোনো জড় বস্তু, কোনোটাকেই আমার থেকে বেশি অগ্রাধিকার দেয়া যাবে না। টু, আমার কথা মতো সব করবে, জামা কাপড় পরা শুরু থেকে খাবার খাওয়া, ইভেন তোমার আন্ডার গার্মেন্টসও আমার পছন্দে হবে। থ্রি, মোবাইল নিষিদ্ধ। ল্যাপটপ আছে, আমি থাকলেই শুধু ল্যাপটপ ইউজ করতে পারবে, বাট, নট ফর কমিউনিকেশন। ফোর, কোনো ফ্রেন্ডস রাখা যাবে না। ফ্রেন্ড ছাড়াও জীবন পার করে দেয়া যায়, যেমনটা আমি দিয়েছি।’

‘কোনো না কোনো প্রয়োজনে ফ্রেন্ড লাগেই। তবে আমার স্বার্থপর বন্ধুদের কথা বলছি না।’ ইনান ঠেস মারা গলায় বলল।

জেহফিলের গলা চড়ল কিছুটা, ‘আমি থাকতে তুমি একা কিসের? তুমি ফ্রেন্ডদের সাথে যা বলবে তা আমাকে বলতে পারো, আমি যে কারো থেকে ভালো কনভারসেশন করতে পারি। তোমার যা জানতে চাওয়ার আমাকে বলবে। ফ্রেন্ডরা কি স্বামীর থেকে বেশি আপন?’

ইনান দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার কথা বলাটাই ভুল হয়েছে। ইনানের উত্তর এবার সহজেই ‘না’-এর কোঠায় ঘুরবে। জেহফিল যা যা শর্ত ওরফে আদেশ দিয়েছে তা কখনো নরমাল মানুষের পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব না যদি না সে জেহফিলের মতোই একই চরিত্রের হয়। উত্তরটা ক্লিয়ার। জেহফিলের সাথে সংসার করবে না। যতই ভালোবাসুক, এই ধরনের দমবন্ধ হয়ে বেঁচে থাকা যায় না।

‘ফাইভ, তোমার বাবার সাথে কথা বলবে সপ্তাহে একদিন। তোমার বাবার জ্ঞান দেয়াটা আমার পছন্দ না, তাই সময়টাও কমিয়ে দেয়া হবে প্রয়োজন মতো।’

ইনান চোখ উল্টায়, এবার তো আগেই ক্লিয়ার। না, না, এবং না। সে জেহফিলের সাথে সংসার করবে না। তাও জেহফিলের আরো শর্তগুলো শোনা যাক। পাগলের প্রলাপ শেষবারের মতো শুনুক।

‘সিক্স, কখনো অন্যের জন্য আমার কাছে মাথা নিচু করবে না। তোমাকে আমি সবসময় মাথা উঁচু করে দেখতে চাই। তুমি আমার ওয়াইফ, আমার চোখে চোখ রেখে কথা বলার সাহস থাকতে হবে। সেভেন, প্রতি ঘন্টায় হাগ, কিস করবে, নিজ থেকে। এইট, আমার বাধ্য থাকবে। যা বলব তাই মানবে, অহেতুক চেঁচামেচি করবে না। নরম সুরে কথা বলবে। এন্ড লাস্ট বাট নট লিস্ট, ইউ হ্যাভ টু লাভ মি। তোমার চোখে তাকালেই যেন আমার জন্য ভালোবাসা দেখতে পাই। তোমার ভালোবাসা আমাকে ঘায়েল করার অ’স্ত্র। You can dominate me with your love. I’ll always be on my knees then.’

ইনান ম্লান হাসে। ভালোবাসার শর্তগুলো ছাড়া আর একটাও যে গ্রহণযোগ্য নয়‌।

‘এবার তোমার ডিসিশন…’

‘না।’ জেহফিলের মুখ থেকে কথা কেড়ে নেয় ইনান, ‘আমি আপনার সাথে সংসার করব না।’

জেহফিল দুর্বোধ্য হাসলো, ‘বুকের পাটা আছে বলতে হয়।’

‘আপনি নিজেই ভেবে দেখুন না জেহফিল, আমি যদি এসব শর্ত আপনার উপর আরোপ করি, আপনি চলতে পারবেন? আপনি…’

ইনানের কথা শেষ হওয়ার আগেই
জেহফিল বলে উঠল,

‘অবশ্যই পারব। অল আই ওয়ান্ট ইন মাই লাইফ ইজ লাভ, অনলি লাভ। ভালোবাসার জন্য সব করতে পারি, সব। আমার প্রায়োরিটিতে সবসময় তুমি ছিলে, আছো, এবং থাকবে। তোমাকে সিকিওর ফিল করানোর জন্য আমি দুনিয়ার সবার থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারব, তোমার পায়ের কাছে বসে থাকব যতটাদিন না তুমি আমার সাথে সিকিওর ফিল করো। যদি তোমার মনে হয় কেউ আমাকে তোমার কাছ থেকে কেড়ে নিবে, তবে তুমি বললে আশেপাশের সব মেয়ের চোখ তুলে ফেলব। আমাকে নিয়ে জ্বেলাসির সুযোগ দিবো না কখনোই। সব পারব আমি, তাহলে তুমি কেন পারবে না?’

‘অসুস্থ আপনি, অসুস্থ আপনার ভালোবাসা।’ ইনান বিড়বিড় করে বলল।

‘আমি জানি আমার ভালোবাসা কতটা পবিত্র।’ জেহফিলের চোখে দ্যুতি দেখা দেয়।

ইনান হতাশ হয়। পাগল কীভাবেই বা বুঝবে যে সে পাগলামি করছে?

‘জেহফিল, আপনি মরীচিকার পেছনে ছুটছেন। আমি আর আপনি দুই মেরুর। আপনি কেন বুঝছেন না?’

‘আর কিছু?’

‘আমার একটা অনুরোধ। আপনি..’ ইনান বুকে সাহস সঞ্চয় করল, সে খুব বড় একটা কথা বলতে যাচ্ছে,

‘আপনি আমাকে ছেড়ে দিন, আমি প্রমিস করছি আমি আমার জীবনে কোনোদিন বিয়ে তো দূর, কোনো ছেলের দিকেও তাকাব না। সারাজীবন সিঙ্গেল থাকব। দরকার পড়লে কোনো মহিলা সংগঠনে চাকরি নিবো যাতে ছেলেদের থেকে দূরে থাকতে পারি। গড প্রমিস আমি ছেলে ফ্রেন্ডও বানাবো না, মেয়েও না। একা থাকব।’

জেহফিল হাসে। একটু নরম হয়ে কথা বলায় তার বাটারফ্লাইয়ের বড্ড সাহস বেড়ে গেছে। কার সামনে দাঁড়িয়ে এই কথা বলছে সে বোধহয় ভুলে গেছে।

হাঁটুতে কনুই রেখে হাত জোড় করে তার উপর চিবুক রেখে বলল,

‘সেই সুযোগটাই তোমাকে দিবো আজ।’

ইনান আশ্চর্যান্বিত হয়। কানে বাজতে থাকে জেহফিলের কথা। জেহফিল কী বলছে সে নিজে জানে?

‘আর এটাই তোমার শাস্তি।’

‘মানে?’

‘মানেটা খুবই সিম্পল। এই যে আমার হাতে ফিতেটা দেখছো না? এটা কিন্তু সফ্ট ফেব্রিক না। খুবই হার্ড। এটা দিয়ে কী করব বলো তো?’

‘এটা দিয়ে আমাকে বেঁধে শাস্তি দিবেন?’

‘বোকা বাটারফ্লাই। তোমাকে কেন বাঁধব? আমি তোমাকে কষ্ট দিতে পারি?’ মিষ্টি করে হাসলো জেহফিল,

‘এটা দিয়ে তুমি আমাকে বাঁধবে। এই যে আমি বসে রইলাম। তুমি সর্বশক্তি দিয়ে আমাকে বাঁধবে এই ফিতে দিয়ে।’

‘তাহলে এটা আমার শাস্তি কীভাবে হলো?’

‘আমাকে বেঁধে তুমি পালাবে।’

ইনান কেশে উঠল। একবার পালিয়ে তার জন্মের শিক্ষা হয়েছে।

‘আপনি কি আমার সাথে মজা নিচ্ছেন?’

‘নোপ। আমি ভেবে দেখেছি, বুঝলে বাটারফ্লাই। তোমাকে তোমার লাইফের ডিসিশন নেয়ার সুযোগ দিবো। তুমি আমার থেকে মুক্তি পাবে, তবে তোমাকে তা অর্জন করতে হবে। কীভাবে অর্জন করবে? আমাকে বেঁধে পালিয়ে।’

ইনানের মাথা ঘুরায়। একদিনে কি জেহফিলের ব্রেইন খুলেছে নাকি, নাহলে ভালো মানুষের মতো চিন্তা করল কীভাবে?

‘আর হ্যাঁ, ঐ লোকের কথা ভেবো না, ও’র ট্রিটমেন্টের ব্যবস্থা আমি করে দিবো। ওর শাস্তি ও পেয়ে গেছে। তাই এ’কে রেখে আমার লাভ নেই।’ গাড়িতে রাখা পলককে ইঙ্গিত করে বলল।

‘হোয়াটএভার, যা বলছিলাম, তুমি আমাকে বাঁধবে, বেঁধে যেখানে চোখ যায় পালাবে‌।’

‘আপনি তো আমাকে ধরেই ফেলবেন। আজ হোক কিংবা কাল।’

‘নাহ, এই শাস্তির কিছু রুলস আছে। তোমার হাতে কাল সূর্যোদয় অবধি সময় থাকবে। এর সময়ের মধ্যে যদি তুমি আমার চোখের আড়ালে পালিয়ে থাকতে পারো তবে তোমাকে আমি সারাজীবনের জন্য মুক্তি দিয়ে দিবো‌। আই প্রমিস।’

জেহফিলের চোখে প্রতিজ্ঞা। জেহফিল যে মিথ্যা বলছে না ইনান জানে। কিন্তু সে বুঝতে পারছে না এটা কি আসলেই জেহফিল নাকি! এত পরিবর্তন!

‘আকাশে সূর্যের দেখা পাওয়ার এক সেকেন্ড পরও যদি তোমাকে খুঁজে পাই, তবুও আমি তোমার নিকট হাত বাড়াব না আর। ছেড়ে দেব তোমাকে। তবে তোমাকে পালিয়ে থাকতে হবে এই সময় অবধি। আর যদি এই টাইমের মধ্যে পেয়ে যাই,’ জেহফিল বাঁকা হাসে, ‘তোমাকে আমার বশ্যতা স্বীকার করতে হবে ফর দ্য রেস্ট অফ ইওর লাইফ।’

‘আপনি আমাকে পেয়ে যাবেন।’ ইনান ঠোঁট চেপে বলল।

‘ডিপেন্ড করে তোমার উপর। তুমি কতটা টাইট করে আমাকে বাঁধো তার উপরই নির্ভর করছে তোমাকে পাওয়া না পাওয়া। বলতে পারো এই শাস্তিতে সব রুলসই তোমার হাতে। তুমি কীভাবে নিজেকে আড়ালে রাখতে পারো সেটা তোমার উপর।’

‘আমি কি কারো সাহায্য নিতে পারব?’

‘শিওর। কিন্তু, আমি যদি তোমাকে পেয়ে যাই এবং সাথে তোমার সাহায্যকারীকে দেখি তাহলে ঐ মুহুর্তেই সেই সাহায্যকারীর চোখজোড়া মার্বেলের মতো মাটিতে গড়াগড়ি করবে এবং হাতজোড়া থাকবে রাস্তার কুকুরের মুখে।’

ইনান শরীরে কম্পন অনুভব করব। কী সহজে জেহফিল একজনের মৃ’ত্যুর কথা বলল!

‘আরো একটা রুলস। আমাকে বাঁধতে পারবে যা ইচ্ছে দিয়ে। শুধু এই ফিতে না, যেটা পাবে সেটা দিয়েই বাঁধবে। তবে এইখানেও একটা কিন্তু আছে।’

ইনান প্রশ্ন চোখে তাকায়।

‘তোমার হাতে থাকবে দশ মিনিট আমাকে বাঁধার জন্য। এরমধ্যে যেভাবে ইচ্ছে আমাকে বাঁধতে পারবে। এরপর যেখানে ইচ্ছে সেখানে চলে যাবে‌। আমাকে যদি ভালোভাবে না বাঁধতে পারো বাটারফ্লাই, তাহলে যে এই সিংহ তোমাকে ফের তার গুহায় গলায় কামড়ে ধরে নিয়ে আসবে।’ ঘাড় কাত করে বলল জেহফিল। ভয়ানক লাগছে তাকে।

ইনান ভাবলো, দশমিনিট অনেক সময়। এর মাঝে জেহফিলকে টাইট করে বাঁধাটা কঠিন হবে না।

‘নাউ ডিসিশন ইজ ইওরস। তুমি কি পালাবে নাকি আমার অর্ডার মেনে আমার সাথে থাকবে?’

‘একটা প্রশ্ন। এমনিতেও আপনার কাছে থাকলে আপনার অর্ডার মানতে হবে, আবার পালানোর পর ধরে ফেললেও অর্ডার মানতে হবে‌। এখানে কি কোনো ডিফ্রেন্স নেই?’

‘তোমার কি নিজের উপর বিশ্বাস নেই যে তুমি আমার থেকে পালাতে পারবে না?’

ইনান চুপ করে রইল। আসলেই তো, তার কনফিডেন্স এত লো কেন? যেহেতু পুরো গেইমটা তার হাতে, তাহলে তার ভয় কিসের?

‘একটা সুবিধা আছে। পালানোর পর তোমাকে পেয়ে গেলে অর্ডার চেঞ্জ হবে।’

‘যেমন?’

‘যেমন ধরো, আমি এখন যেই অর্ডারগুলো দিয়েছি তা রিপ্লেস করে আমার দেয়া অন্য যেকোনো অর্ডার মাথা পেতে নিতে হবে।’

ইনান কিছুক্ষণ মৌন থাকল। হিসাব মিলাচ্ছে সে।

‘বলো, কী ডিসিশন তোমার? থাকতে চাও নাকি পালাতে?’

‘পালাবো।’ তাৎক্ষণিক জবাব ইনানের।

ইনান যেহেতু মুক্তির পথ পেয়েছে সেহেতু এই সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। জেহফিলের কাছে থেকে ঐসব আদেশ মানলে সে দুইদিনে পাগল হয়ে যাবে। আজকে পনেরো ঘন্টার মতো পালিয়ে থেকেছে জেহফিলের কাছ থেকে। আর এখন রাত, বারোটা কী একটা। সূর্য উঠতে ছয় ঘন্টার মতো বাকি। পনেরো ঘন্টায় একটা ওড়না দিয়ে বেঁধে পালিয়ে থাকতে পারলে ছয় ঘন্টা তো টাইট দড়ি দিয়ে বেঁধে পালানো আরো সহজ। ইনান হাসলো। কঠিন হবে না এবারের চ্যালেঞ্জটা। রুলস তার হাতে, খেলাটাও তার হাতে।

জেহফিল চেয়ারে গা ছাড়িয়ে আরাম করে বসলো। দেখল তার বাটারফ্লাইয়ের চোখেমুখে খুশি উপচে পড়ছে মুক্তির কথা শুনে। এতটাই কঠিন জেহফিলের ভালোবাসা যে ভালোবাসা থেকে বাঁচতে পালানোকেই একমাত্র মুক্তির পথ ভেবে নেয়? জেহফিল মনে মনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। গভীর চোখে ইনানকে পা থেকে মাথা অবধি দেখলো সূক্ষ্মভাবে। চোখ বন্ধ করে মাথা হেলিয়ে ডিপ ভয়েসে বলল,

‘ইওর টাইম স্টার্টস নাউ কিটেন।’

.
.
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here