রোদরঞ্জন #পর্ব_৩২ [অতিরিক্ত] #আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

0
388

#রোদরঞ্জন
#পর্ব_৩২ [অতিরিক্ত]
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ। কার্টেসি সহ কোনো পেজেও কপি করা যাবে না।]
.
.

শীতকালীন বৃষ্টিমুখর দীর্ঘ রাত শেষে দিনের একফালি নরম রোদ লুটোপুটি খায় ফকফকা ফ্লোর জুড়ে। গভীর ঘুমে নেতিয়া পড়া ইনানের হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় পেটের ক্ষুধায়। অসহ্য যন্ত্রণায় ফেটে পড়া মাথা নিয়ে পিটপিট করে চোখ খুলে ইনান। বুকে মনে হয় কয়েক মণ পাথর চেপে দেয়া হয়েছে এমন ভার। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল ইনানের। যখন তার পেটে তপ্ত শ্বাস আছড়ে আছড়ে পড়তে লাগল তখন বুঝল পাথর নয়, আস্ত এক মানুষের ভার তার ক্ষীণকায় দেহের উপর। ঝট করে চোখ মেলল ইনান। মাথা উঁচিয়ে দেখে জেহফিল খুব আরামে ইনানের বুকে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছে।‌ তার বড় বড় পেশীবহুল হাত দুটো ইনানকে সাপের মতো পেঁচিয়ে আছে। পা দিয়ে ইনানের পা পেঁচানো। ইনান দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার আর ফিরে যাওয়ার উপায় নেই। তাকে তৈরি হতে হবে… বশ্যতা স্বীকার করে নতুন জীবনের জন্য…

গতকাল জেহফিলের শাস্তির পর রক্ত দেখতে না পেরে একসময় অজ্ঞান হয়ে যায় ইনান। শাস্তি তখনো শেষ করতে পারেনি ইনান। হাত থেকে পেট অবধি রক্ত দিয়ে নাম লেখার পর মাথা দুলে উঠে। সইতে না পেরে ঢলে পড়ে জেহফিলের বুকে। ইনান তাকায় জেহফিলের হাতের জখমের দিকে। রক্ত শুকিয়ে আছে। কতগুলো দাগ হাতে! দেখেই তো ইনানের হাত পা শিরশির করে উঠে ভয়ে। জেহফিল কীভাবে নিজেকে কষ্ট দিতে পারে? বুক কাঁপে না? ইনান নিজেকে কষ্ট দেয়ার কথা ভাবলেই তো রুহ কেঁপে উঠে।

জানালার দিকে চায় সে। আকাশ দেখে মনে হচ্ছে দুপুর। তারা এতক্ষণ ঘুমিয়েছে! ঘুমানোর কথা অবশ্য, গতকাল সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি যা ধকল গেছে তাতে রাত করে ঘুম থেকে উঠলেও ইনান অবাক হবে না।

জেহফিলকে সরিয়ে উঠতে চায় ইনান। তার হাত দুটো পেট, পিঠ থেকে সরাতে চাইলে ফের জড়িয়ে ধরে ইনানকে। যেন সে ছাড়বে না এই পণ নিয়েছে। জেহফিলের চুলগুলো ইনানের গলায় সুড়সুড়ি দিচ্ছে। তার গালে আলতো চাপড় দিয়ে ইনান কিছুটা বিরক্ত গলায় তাকে ডাকতে থাকে। জেহফিলের হাত কিছুটা আলগা হলেই ইনান ফাঁক গলে উঠে পড়ে। এবং সাথে সাথেই জেহফিলের ঘুম ছুটে যায় আর ইনানকে পাগলের মতো খুঁজতে থাকে‌। কাঙ্ক্ষিত মানুষকে খাটের পাশে দেখামাত্র ঝাঁপিয়ে পড়ে জড়িয়ে ধরার জন্য। শক্ত করে বাহুডোরে আবদ্ধ করে নেয় তার বাটারফ্লাইকে। পাগলের প্রলাপের মতো বকতে থাকে, ‘আমার বাটারফ্লাই.. আমার বাটারফ্লাই…’ বলে।

ইনান কিছু বলে না করেও না। বলে এবং করে যেহেতু লাভ নেই তাই চুপ থাকাই শ্রেয়। শরীর এমনিতেই দুর্বল…

এক মুহুর্তের জন্য যখন বুক খালি খালি লাগল তখনই জেহফিলের ঘুম উবে যায়, তার বাটারফ্লাই… আবার হারিয়ে গেল না তো! এই ভয়, আতঙ্ক মুষড়ে দেয় জেহফিলকে‌। তাইতো বাটারফ্লাইকে দেখামাত্রই নিজের বুকে টেনে নিয়ে আসে। সারা জীবনেও সে কোনোকিছুকে ভয় পায়নি। কাউকে, কিছুকেও না। পিছুটান ছিল না জীবনের। রোবটের মতো দিনাতিপাত করছিল। সেই রোবটিক জীবনযাপনকে ছন্দময় করার উদ্দেশ্যে ইনান ধরা দিয়েছিল হুট করে। যাকে দেখলে জেহফিল বেঁচে থাকার মানে খুঁজে পায়। জীবনের স্বাদ বুঝে। কেন বেঁচে থাকতে হবে সেটাও বুঝে‌। তার পিছুটান আছে‌ এখন। ভালোবাসার মানুষ আছে। এখন কাজে যাওয়ার পর চিন্তা থাকে বাড়ি ফেরার। বাড়িতে তার অপেক্ষার মানুষ আছে। তাকে বেঁচে থাকতে হবে, তার মানুষটার জন্য। কাজের পর ফিরে আসতে হবে, তার মানুষটার জন্য। নিজেকে কর্মঠ রাখতে হয়, শুধুমাত্র তার মানুষটার জন্য। আর সেই মানুষটা মিসেস ইনান এহসান। তার বাটারফ্লাই…

জেহফিল বুকে থাকা ছোট্ট শরীরের ইনানের দিকে তাকাল। ইনানের দেহে তার নাম লেখা রক্তগুলো শুকিয়ে আছে। যেন ইনানের শরীরও এখন বলছে, ‘আমি জেহফিলের’। জেহফিলের পরিতৃপ্তির হাসি হাসে। ইনান তার, সেটা ইনান এখন আর নিজেও অস্বীকার করতে পারবে না। কারণ তার বাটারফ্লাই নিজেই তো জেহফিলের নাম নিজ শরীরে লিখেছে। সিলবদ্ধ করেছে নিজকে, জেহফিলের নামে।

সেই সময় ইনানের পেট থেকে গুড়ু গুড়ু শব্দ শোনা গেল। জেহফিল হেসে ফেলল। ইনানের দিকে তাকাতেই দেখে ইনানও তার সুন্দর চোখজোড়া মেলে জেহফিলের দিকে তাকিয়ে আছে। ইনানের চোখের ভাষা জেহফিল বুঝতে পারে। এই যেমন এখন ইনানের চোখে হার মেনে নেয়ায় জেহফিলের জন্য রাগ, অসন্তোষ দেখতে পারছে, পারলে যেন জেহফিলকে মে’রে দেয়। কিন্তু সে পাত্তা দিল না। যতক্ষণ পর্যন্ত ইনান তার চোখের সামনে থাকবে এবং পালাই পালাই করবে না ততক্ষণ পর্যন্ত ইনানের রাগ ঘৃণা সব মেনে নিতে পারবে সে। ইনান কাছে থাকলেই হলো।

জেহফিল ইনানকে কোলে তুলে আগে বাথরুমে নিয়ে গেল। বহুত হয়রানি করেছে এই মেয়েটাকে। এবার একটু শান্তিতে নিঃশ্বাস ফেলতে দেয়া দরকার।

বাথরুমের ঠাণ্ডা টাইলসে পা রাখতেই শরীরে কাঁপন ধরে গেল ইনানের। গিজার অন করে দিল জেহফিল। ইনানের কপালে চুমু দিয়ে বলল,

‘সরি তোমার সাথে জয়েন হতে পারছি না বলে। তুমি গোসল সারতে সারতে ঝটপট কিছু বানিয়ে নিচ্ছি। টেইক ইওর টাইম বেবি।’

জেহফিল ইনানের গালে, চোখের পাতায় আলতো ছুঁয়ে চলে গেল। তার ব্যবহার এমন যেন তাদের সম্পর্ক আর পাঁচটা দম্পতির মতো স্বাভাবিক। ইনানের গা জ্বলে গেল রাগে।

বাবার সাথে কথা হয় না অনেকদিন। ইনান ভাবল জেহফিলের দেয়া অন্য যেকোনো একটা শর্ত মাথা পেতে নেবে, তার বদলে বাবার সাথে কথা বলার শর্তটা মওকুফ করে দিতে বলবে। এদিক দিয়ে ইনানের লাভ হলো বাবার সাথে কথা চালানো যাবে। শুধু এই একটাই লাভ…

কম সময়ে জেহফিল শুধু বেগুন ভাজি আর ডিম ভুনা করতে পারল। একটু ঝোল ঝোল না হলে তার বাটারফ্লাই খেতে পারে না, তাই ডিম ভুনায় মশলা দিয়ে কষিয়ে ঝোল করে নিলো। প্লেটে ভাত বেড়ে ইনানের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল সে। ঘড়িতে এখন বিকেল সাড়ে চারটা। চারিদিক আঁধারে ছেয়ে যাবে কিছু সময় বাদে। শীতের দিন ছোট। ঐ পুলিশটাকে এখনো ডিসচার্জ করা হয়নি। গাড়ির ডিকিতে পড়ে আছে। জেহফিল চেক করেছিল একটু আগে। নিঃশ্বাস পড়ছে। চোখেমুখে জগের পানি ঢেলে দেখল জ্ঞান আছে কিনা। পলক জ্ঞান ফিরে কেশে উঠল জেহফিল ঘাড়ে অজ্ঞান করার মতো আঘাত করে। সঙ্গে সঙ্গেই চৈতন্য হারিয়ে ফেলে পলক। ব্যাটাকে সেন্সলেস অবস্থাতেই কোনো এক জায়গায় ফেলে দিতে হবে।

ইনান মাথায় তোয়ালে পেঁচিয়ে ডাইনিংএ আসলে মিষ্টি হাসি দেয় জেহফিল। ইনান যেন সদ্য প্রস্ফুটিত হওয়া গোলাপ, এত স্নিগ্ধ! এত সুন্দর। জেহফিল বুকে হাত রাখল। অন্তঃকরণে অবস্থিত দ্রিম দ্রিম করে বাজতে থাকা হৃদয় ইনানকে দেখে ডঙ্কার ন্যায় আওয়াজ তুলে ছন্দ নিয়ে বেজে উঠে, দ্বিগুণ শব্দে। ইনানকে দেখলে জেহফিলের সবটা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে যায়, পৃথিবী উল্টে পাল্টে দেয়া ঝড় হয়‌। কী এমন আছে এই মিষ্টি মুখখানিতে? যা কিনা পৃথিবীর দ্বিতীয় কোনো নারীতে খুঁজে পায় না সে!

জেহফিল ঢোক গিলে। এমন কোনো উপায় কি নেই যাতে জেহফিল ইনানকে বুকের মাঝে ঢুকিয়ে রাখতে পারবে? ইনানের যেই ছোট্ট শরীর তাতে অনায়াসে জেহফিলের বুকে ঢুকে যাবে সে। কিন্তু উপায় কী?

চেয়ার টানার শব্দে জেহফিলের ধ্যান ফিরে। ইনানকে চেয়ারে বসতে দেখে খুব দ্রুত জেহফিল পাশের চেয়ারে বসে পড়ে। যার ফলে ইনান চেয়ারে নয়, বরং জেহফিলের কোলে বসে। ইনান হতভম্ব হয়ে ভ্যাবাচ্যাকা চোখে চেয়ে থাকে। যখন বুঝল সে জেহফিলের কোলে সে তড়াক করে উঠতে নেয়। জেহফিল দেয় না, ইনানের কোমর চেপে ধরে এক হাতে। প্লেট এগিয়ে এনে ইনানকে খাইয়ে দেয়া শুরু করে।

‘এখন থেকে তোমার চেয়ার আমি।’

ইনান কিছু না বললেও মনে মনে হতাশ নিঃশ্বাস ফেলল।‌ শুরু হয়ে গেছে। খাওয়ার মাঝে ইনান ডাকল জেহফিলকে,

‘আপনি বলেছিলেন শর্ত রিপ্লেস করা যাবে। আমি একটা শর্ত রিপ্লেস করতে চাই।’

জেহফিল ইনানের মুখে ভাতের লোকমা তুলে দিল। সে এই মুহূর্তের অপেক্ষা করছিল। সে জানে ইনান কোন শর্তের কথা বলছে। ইনান ভেবেছে সেই শর্তের বদলে অন্য কোনো শর্ত মেনে নিবে‌!! জেহফিল হাসল। সে যেই শর্ত দিবে তা কি এতই সোজা ভেবেছে বোকা বাটারফ্লাই?

‘তুমি শিওর তো?’

‘হান্ড্রেড পার্সেন্ট।’ ইনানের অকপট জবাব।

জেহফিল মিট মিটিয়ে হাসতে লাগল। ইনানকে দিকে তাকিয়ে। ইনান ভেবে পেল না এখানে হাসির কী হলো!

‘ভেবে বলছো?’

বিরক্ত লাগল ইনানের। ভাবাভাবির তো কিছু নেই। বাবার সাথে কথা বলার জন্য যেকোনো শর্ত সে মেনে নিবে। অধৈর্য হয়ে বলল,

‘জি, ভেবেই বলছি।’

জেহফিল ঠোঁট কামড়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল ইনানের দিকে। তার ঠোঁটের কোণে উঁকি দিচ্ছে তেরছা হাসি। এই হাসিটা জেহফিলের কূটনৈতিক। ইনান জানে। তাই সে দম খিঁচে রইল। জেহফিল যদি ভয়ানক কোনো শর্তের কথা বলে?

জেহফিল দুষ্টু হেসে বলল,

‘পরে বলব, আগে বাকি শর্তগুলোর অভ্যেস করে নাও। কারণ যেই শর্তটা বলব ওটা অনেক অনেক হার্ড, ইউ নো, মানিয়ে নিতে সময় লাগবে তোমার।’ বলেই চোখ টিপ দিলো সে।

ইনান ফাঁকা ঢোক গিলে। কী শর্ত তা বলার সাহস পায় না সে। চুপচাপ খাবার গিলতে থাকে।

.

.

রাতে জেহফিল বেরোবে পলকের দেহটাকে ফেলে দিয়ে আসতে। ইনান তখনো জানতো না যে পলক এখনো গাড়ির ডিকিতে আছে। সে ভেবেছিল জেহফিল বোধহয় গতকালই পলককে রেখে এসেছে। কিন্তু জানার পর ইনান কিছুটা দুশ্চিন্তা করে এই ভেবে যে আবার মা’রা টারা গেল নাকি। কিন্তু চোখের তারায় সেই দুশ্চিন্তা ফুটানোর সাহস করে না। শুধু সন্তর্পণে একবার জিজ্ঞেস করেছে,

‘বেঁচে আছে?’

জেহফিল ছোট্ট করে জবাব দিয়েছিল, ‘হু।’

তারপর আর একটা টু শব্দও করেনি ইনান। মনে মনে প্রার্থনা করছে পলক যাতে সব ভুলে যায়। আর কোনো ঝামেলা চায় না সে।

জেহফিল গাড়ির চাবি নিয়ে বেরোনোর আগে কী মনে করে ইনানকেও রেডি হতে বলল। ইনানের ভালো লাগছিল না পলকের মুমূর্ষু অবস্থা দেখতে। তাই সে নাকচ করেছিল। কিন্তু জেহফিলের গিলে ফেলার মতো দৃষ্টি দেখতেই ভয়ে ভয়ে তৈরি হয়ে নিলো সে। তার জেহফিলকে ভীষণ ভয় লাগে।

সাদা ফতুয়া আর প্লাজো পরে গায়ে চাদর জড়িয়ে বেরিয়ে পড়ল জেহফিলের সাথে। গাড়িতে উঠে জেহফিল রোম্যান্টিক গান ছেড়ে শিষ বাজাতে থাকে। ইনান গাঁট হয়ে বসে থাকে। ডিকিতে পলকের অর্ধমৃ’ত দেহ আর সামনে গানের আসর। অদ্ভুত গা ছমছমে পরিবেশ!

হসপিটালের পাশে নীরব জায়গা খুঁজে নেয় জেহফিল। রাত হওয়ায় অসুবিধা হবে না। গাড়ি থেকে নেমে সিসিটিভি নেই এমন জায়গায় ডিকি থেকে লাথি মেরে ফেলে দেয় পলককে। ইনান সারাটা সময় ঝিম মেরে বসে ছিল। এই বুঝি কোনো অঘটন ঘটে!

জেহফিলের ইচ্ছা করছিল কিছুক্ষণ ইচ্ছে মতো লাথি মা’রে জারজটাকে। মনের আঁশ মিটিয়ে পিষে ফেললে জেহফিলের মনটা একটু শান্ত হতো। কিন্তু হাতে সময় নেই।

গাড়িতে উঠে গাড়ি চালানো আরম্ভ করল। সারা রাস্তা ইনান কথা বলল না। কেমন গুমোট ভাব গাড়ি জুড়ে। গাড়ি যখন বাড়ির রাস্তা না ধরে অচেনা রাস্তা ধরল ইনান মুখ খুলল তখন,

‘কোথায় যাচ্ছি আমরা?’

‘এক জায়গায়।’

‘এক জায়গাটা কোথায়?’

‘আমার প্রিয় এক জায়গা, তোমাকে নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে অনেক। গেলেই দেখতে পাবে।’

জেহফিলের ঠোঁটে রহস্যজনক হাসি। চোখেও রহস্য। ইনান ভেবে পেল না কী বলবে। তখন জেহফিল ইনানকে এক টানে নিজের কোলে উঠিয়ে নিলো। বুকের সাথে মিশিয়ে রাখল তাকে। সেভাবেই গাড়ি চালাতে লাগল জেহফিল।

রাত বাড়তে থাকে অথচ রাস্তা শেষ হয় না। ইনানের কোমর ধরে গেছে বসে থাকতে থাকতে। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল সে। একটা গাড়িরও চলাচল নেই এই রাস্তায়। রাস্তার একপাশে, অনেক নিচে নদী। আরেক পাশে সুউচ্চ পাহাড়ের মতো। যেন পাহাড় ধরে ধরে রাস্তাটা নেমেছে।

ইনানের ঘুম আসছিল। ঘুমে চোখ বন্ধ হবার জোগাড়। জেহফিল উষ্ণ বাঁধনে ঘুম গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়ে উঠল। জেহফিল এক হাত স্টিয়ারিংএ রেখে আরেক হাতে ইনানের চুলে বুলাতে লাগল। চাদর দিয়ে ইনানের শরীর ভালো করে জড়িয়ে জানালার কাঁচ তুলে দিল। ইনানের কপালে চুমু দিয়ে ধীরস্বরে বলল,

‘গন্তব্য আসতে আরো আধ ঘন্টা, ততক্ষণ ঘুমিয়ে নাও বাটারফ্লাই। গুড নাইট।’

জেহফিলের বুকে মাথা রেখে ঘুমের অতলে তলিয়ে গেল ইনান।

.

তীক্ষ্ণ আওয়াজে ইনানের নিদ্রা ছুটে যায়। চোখ খুলতে নিবে ঠিক সেই সময়ে দুনিয়া ওলট পালট হয়ে যায় তার, যেন একটা গোল বলের মাঝে সে ঘুরছে, অথচ আওয়াজ কতটা ক্রুর! লোহায় লোহায় ধাক্কা খেলে যতটা তীক্ষ্ণ আওয়াজ হয় তেমন। তখনো জোরালো ঘুমের ঘোর কাটেনি ইনানের। সময় পায়নি ঘুম কাটানোর। তার আগেই সে পেছন থেকে খুব জোরে ধাক্কা অনুভব করে। মাথায় ক্যাচ করে না কোনো ঘটনা।চোখ খোলার আগেই মাথা ঘুরে উঠে। অস্ফুটে একটা শব্দ তার কানে বারি খায়, কেউ অস্থির হয়ে চিৎকার করে ডাকছে,

‘বাটারফ্লাই…!’

তারপর শব্দটি মিলিয়ে যায়। কানে চিঁ চিঁ আওয়াজ ছাড়া আর কোনো শব্দ আসে না। ভাবনার জন্য হিতাহিত জ্ঞানটুকুও হ্রাস পায় ইনানের। কী ঘটছে, কী হয়েছে কিছুই বুঝে উঠতে পারে না সে। আধো আধো চোখে অন্ধকার ছাড়া কিছুই নজরে আসে না। একটু বাদে খুব জোরে কিছুর আওয়াজ পায় আবার। মাথায় তরল কিছু অনুভব করে, শরীরের নিচে শক্ত পাটাতনের মতো। নিঃশ্বাস নিলেই বালু নাকে মুখে ঢুকছে, বালির সাথে মুখে নোনতা কিছু অনুভব করে সে। তখনই, হঠাৎ করে, একদম হঠাৎ করে অন্য কোনো দৃশ্য নয়, চিন্তা নয়, বরং তার মস্তিষ্কে ফ্ল্যাশ লাইটের মতো জ্বলে উঠে জেহফিলের সুশ্রী মুখখানি। মিষ্টি করে বলা ‘বাটারফ্লাই’ ডাক। তারপরই ইনানের চোখ বন্ধ হয়ে যায় ধীরে ধীরে।

পরিশেষে খালি অন্ধকার আর অন্ধকার…

.
.
চলবে…

গতকালই দিতাম। কারেন্ট এসেছে আজকে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here