রোদরঞ্জন #পর্ব_৩২ #আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

0
374

#রোদরঞ্জন
#পর্ব_৩২
#আসরিফা_মেহনাজ_চিত্রা

[অনুমতি ছাড়া কপি করা নিষেধ। কার্টেসি সহ কোনো পেজেও কপি করা যাবে না।]
.
.

অসময়ের বৃষ্টি ঝরতে আরম্ভ করেছে ধরণীতে। শীত এবং বৃষ্টির ঠাণ্ডা বাতাস গোডাউনের ভারী লোহার জানালা ভেদ করে না আসলেও শীতের প্রবলতা আঁচ করা যায় ভেতর থেকেই। তারউপর ইনানের চুল এখনো পুরোপুরি শুকোয়নি। গা কাঁপুনি দিয়ে উঠছে তার। ইনান জেহফিলের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। হাতে তার ডার্ক রেডের ফিতা। বুকে সাহসের জোগান দিয়ে ধাতস্থ করেই জেহফিলের নিকট পা আগায়। জেহফিল এখনো চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। তবুও ইনানের মনে হচ্ছে জেহফিল যেন তাকে চোখের সূঁচালো দৃষ্টিতে এফোড় ওফোড় করে দিতে চাইছে। এই ভয়ের কারণেই ইনানের শরীর কাঁপছে নাকি শীতের কারণে ঠাহর করতে পারছে না সে।

‘ফাস্ট বেবি।’ জেহফিল তাড়া দিলো। ঠোঁটে তার স্মিত হাসি।

ইনান ফিতা নিয়ে জেহফিলের চারিদিক ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বাঁধল। হাত জোড়া ভাঙা চেয়ারের হাতলের সাথে রেখে কয়েকবার প্যাঁচালো। দুই পা একত্র করে পায়ার সাথে বাঁধল। ফিতা যখন শেষ হয়ে গেল ইনান কয়েক পা পিছু হটে জেহফিলকে পর্যবেক্ষণ করে নিলো। যে বাঁধনটা আদৌ যথাযথ হয়েছে কিনা জেহফিলের সৌষ্ঠব বিশালদেহী শরীরের জন্য! জেহফিলকে দেখে মনে হচ্ছে তাকে যেন চিকন একটা সুতা দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।

সময় আর মাত্র সাত মিনিট…

ইনান পাশে পড়ে থাকা জেহফিলের ব্যাগ থেকে দড়ি বের করল। হাতের কাছে যা পাবে তা-ই দিয়েই বাঁধতে হবে। গোডাউনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মোটা, চিকন দড়ি দিয়ে জেহফিলকে বাঁধা আরম্ভ করল।

বাঁধা শেষে ইনান‌ কোমড়ে হাত রেখে বড় বড় শ্বাস ফেলে দাঁড়াল। নিজের সর্বশক্তি লাগিয়ে জেহফিলকে বেঁধেছে সে। হাত দুটো সামনে এনে দেখল লাল হয়ে গেছে।

সময় আর মাত্র চার মিনিট…

ইনান তড়িঘড়ি পায়ে গোডাউন থেকে বেরিয়ে আসলো। গোডাউনের দরজা পার হতেই সে দ্রুত পেছনে ফিরল। কেন যেন তার মনে হলো জেহফিল তার পেছনেই.. অথচ জেহফিল এখনো চোখ বন্ধ করে আছে। শরীরে আষ্টেপৃষ্টে আছে শক্ত দড়ির বাঁধন, নিশ্চয়ই জেহফিলের শরীরে দাগ বসে গেছে। জেহফিলের প্রভাব এতই মারাত্মক যে ইনান নিজেই নিজেকে ভরসা করতে পারছে না।

গেটের বাইরে আসতেই ইনান দুদিকে তাকায়, কোনদিকে গেলে জেহফিল তাকে খুঁজে পাবে না সেটা ভাবতে থাকে। চট করে তার মাথায় আসে গাড়ির কথা। গাড়ি নিয়ে একটাবার চোখের আড়ালে হলেই কেল্লাফতে। ইনান বাড়ির ভেতরে আসলো। অতি সন্তর্পণে সিঁড়ি ঘরের লাইটগুলো বন্ধ করে দিলো। চাবি আনার জন্য অন্ধকারে দোতলা বেয়ে উঠতে নিলো পা টিপে টিপে। গোডাউনের ভেতর নিভু নিভু হলদে আলোয় জেহফিলকে দেখা যাচ্ছে। জেহফিল এখনো কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। শরীর শান্ত করে চেয়ারে বসে আছে। তার মানে সময় এখনো শেষ হয়নি।

সময় আর মাত্র দুই মিনিট…

ইনান বাসায় প্রবেশ করে তাড়াতাড়ি করে জেহফিলের রুমে গেল। ড্রেসিং টেবিলের উপর থেকে চাবিটা নিয়ে মাত্রই ঘুরল ইনান, সঙ্গে সঙ্গে রুমের সবগুলো লাইট বন্ধ হয়ে গেল। লোডশেডিং! শিট! ইনান দুহাত হাতড়ে হাতড়ে রুমের বাইরে আসলো। চারিদিক ঘুটঘুটে অন্ধকার। ইনান মেইন দরজার দিকে গেল না। ওখান দিয়ে বের হতে গেলে জেহফিল দেখে ফেলবে। যদিও জেহফিলের বাঁধন খোলার সুযোগ একদমই নেই। কিন্তু ইনান ঝুঁকি নিতে চায় না। সিঁড়ি দিয়ে নামতে গেলে জেহফিলের হিংস্র গর্জন শুনলে ইনান ঐখানেই ভয়ে অজ্ঞান হয়ে যাবে। তখন আর পালানো হবে না। যদি জেহফিল ইনানকে দেখে মুভির মতো শক্তি ফিরে পায় আর তখন এক সেকেন্ডে বাঁধন খুলে ফেলে? আবার অন্ধকারে সিঁড়ি দিয়ে পা ফেলাটা রিস্ক, হাতেও সময় কম।

ইনান পায়ে পায়ে কিচেনের পাশের মিনি বেলকনিতে গেল। ছাদের সাথেই বাঁকানো গাছ আছে। ইনান কয়েকবার এই গাছ বেয়ে নিচে নেমেছিল। সেই উপায়ে শর্টকাটে নিচে নেমে সোজা গেটের সামনে নামবে। বেলকনিতে যেতেই তাকে হতাশ হতে হয়। বৃষ্টিতে গাছ পিচ্ছিল হয়ে আছে। ইনান হাল ছাড়ল না। গাছের ডালে হাত দিলো।

পা উঠাতে যাবে ঠিক তখনই শক্ত কিছু তার কোমড় পেঁচিয়ে ধরল, ঠিক সাপের মতো। ইনান থমকে যায়। শরীরের সংকোচন প্রসারণ যেন বন্ধ হয়ে শরীর মুহুর্তের মাঝেই কার্যক্ষমতা হারিয়েছে। বৃষ্টির শীতল পানি তার চুল বেয়ে ঘাড়ে পড়ছে, সেই শীতলতার সাথে হঠাৎ উষ্ণতার ছোঁয়াও ইনানের কাঁধে আছড়ে পড়ছে। ইনানের পেটের কাছে থাকা বাঁধনের প্রগাঢ়তা বাড়ল, সাথে বাড়ল ইনানের শরীরের কম্পন। দেখল ব্লে’ড কিংবা ছু’রির মতো ছোট্ট একটা চকচকে জিনিস সেই বাঁধনে। অজানা ভয়ে তার বাকশক্তির সাথে শরীরের শক্তিও হ্রাস পেয়েছে যেন। মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে জট পাকানো কিছু মুহুর্ত। গাছ থেকে হাত ছিটকে পড়ল শক্তির অভাবে। ঘাড়ে টের পাওয়া উষ্ণ পরশ ক্রমান্বয়ে আরো নিকটে আসতে লাগল। যেন ইনানের শরীরের ঘ্রাণ একেবারে নিয়ে নেয়ার জন্য কেউ গভীর শ্বাস টানছে। সেই সময় হাস্কি ভয়েসে কারো ঝংকার তোলা ভয়ানক সুর ইনানের কানে আসলো সহসা,

‘কট ইউ লি’ল কিটেন।’

চিরচেনা কণ্ঠ শুনে ইনানের মাথায় বাজ পড়ল যেন। সে এত কষ্ট করে, এত শক্ত করে দড়ি দিয়ে বাঁধল… এসব কি শুধু ইনানকে বোকা বানানোর জন্য, এবং তার শরীরের শক্তি অপচয় করার জন্য…

ইনানের ঘাড়ে নরম ঠোঁটের ছোঁয়া পেতেই ইনানের হুশ ফিরে যেন। শরীরের কাঁপাকাঁপি দ্বিগুণ হয়। থরথর করে কাঁপতে থাকে যেন ভূমিকম্প হয়েছে। ইনানের শরীরের অবস্থা থেকে মৃদু হাসির আওয়াজ শোনা যায় পেছন থেকে, যেন সে খুব মজা পেয়েছে ইনানের অবস্থা দেখে।

ইনানের কাঁধ ধরে মুখোমুখি করে। রাস্তার নিয়নের আলোয় ইনান দেখতে পায় ভেজা চুলের জেহফিল তার দিকে শান্ত অথচ হিংস্র চোখে তাকিয়ে আছে। তার আলুথালু সাদা শার্ট বুকের সাথে লেগে বলিষ্ঠ শরীরের ভাঁজগুলো দৃশ্যমান।

‘আমার বোকা বাটারফ্লাই।’ জেহফিল বাঁকা হাসল। ইনানের ডান হাত নিয়ে চুমু খেল সে,

‘তুমি এত বোকা কেন সোনা? জেহফিল কেন তার বাটারফ্লাইকে হঠাৎ যেতে দিবে-এই ভাবনাটা কি তোমার ছোট্ট মস্তিষ্কে একবারো আসেনি? ইট ওয়াজ এ টেস্ট। জেহফিল তার বোকা বাটারফ্লাইয়ের বোকামি দেখার জন্য এই পরীক্ষা নিয়েছে।’

ইনানের হাতে চুমু দিয়ে তাকে ঘরের ভেতরে নিয়ে আসলো কোলে করে। খাটের উপর বসিয়ে দিয়ে বলল,

‘অ্যান্ড কংগ্রাচুলেশন। তুমি বোকামির সর্বোচ্চ ধাপ অতিক্রম করতে পেরেছ।’

জেহফিল ঠোঁট কামড়ে হাসল ইনানের হতবুদ্ধিতা দেখে। সিরিয়াসলি তার বোকা বাটারফ্লাই কত সহজ সরল। জেহফিলকে কী সহজে বিশ্বাস করল!! যেই জেহফিল ইনানকে ছাড়া এক মুহুর্তও থাকতে পারে না সে কেন কেন ইনানকে হঠাৎ মুক্তি দিবে- এই সহজ প্রশ্নটা ইনান ভাবল না? সে তার শিকারকে জেনে শুনে যেতে দিবে? কোন শিকারি এমন করে?

খাঁচায় বন্দী করা পাখিকে কয়েক মুহুর্তের জন্য উড়তে দিয়েছে সে, অথচ সদ্য মুক্তি পাওয়া পাখি ভুলে গেছে তার পায়ে যে শিকল বাঁধানো। সে যে ফিরে আসবে তার সোনার খাঁচাতেই। নির্দয় মালিকের কাছে…

ইনানের বোকামিতে জেহফিলের হাসির চেয়ে রাগ বেশি হচ্ছে। সাহস কত বাটারফ্লাইয়ের!! জেহফিলকে ছেড়ে যাওয়ার সুযোগ লুফে নিলো! একটাবারও ভাবল না জেহফিল কী করে থাকবে তার বাটারফ্লাইকে ছাড়া! এই দুনিয়াতে তার দ্বিতীয় কে আছে যাকে আকড়ে ধরে বাঁচবে? যাকে মনপ্রাণ ঢেলে দেখবে? যার সাথে হাসবে? যাকে ভালোবাসবে?

ইনানকে কী শাস্তি দেয়া উচিত? দম বন্ধ করে নিজের বুকে জড়িয়ে রাখবে? নাকি আদর করতে করতে মে’রে ফেলবে??

জেহফিল রাগে ফুঁসছে। চোখ দিয়ে যেন লাভা প্লাবিত হচ্ছে। কপালের, ঘাড়ের রগ ফুলে উঠছে। সেই রাগ টের পায় ইনান। তার চোখ বেয়ে ইতোমধ্যে জল গড়িয়ে পড়া শুরু করেছে। জেহফিলের দেয়া শর্তগুলো এক এক করে ইনানের মাথায় ধাক্কা মারছে। ‘তোমাকে আমার বশ্যতা স্বীকার করতে হবে ফর দ্য রেস্ট অফ ইওর লাইফ।’ কথাটা তার কানে বাজছে অবিরত।

.

মোমের আলোয় রুম হালকা আলোকিত। বৃষ্টির রিমঝিম আওয়াজ এখন আর সুমধুর হয়ে কানে প্রবেশ করছে না। কেমন ভয়ানক হাসির আওয়াজের মতো লাগছে ইনানের কানে‌। সাথে গগনবিদারী বজ্রপাত! তার ভয় লাগছে, ভীষণ ভয়! বজ্রপাতে নয়, তার সামনে বসা দানবকে ভয়! আর্ট রুমে জেহফিল তার সামনে চেয়ার নিয়ে বসে ইনানকে কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে দেখছে, ঘাড় কাত করে। যেন কোনো কুটিল চিন্তা জেহফিলের মনে চলছে।

‘আমরা আমাদের লাইফের নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছি। তাই না বাটারফ্লাই?’ গম্ভীর গলায় বলল জেহফিল।

ইনান ঢোক গিলল।

‘তাই না বাটারফ্লাই?’ হিসহিসিয়ে ফের বলল জেহফিল।

ইনান উপর নিচ মাথা নাড়ায়‌। সঙ্গে সঙ্গে জেহফিল ইনানের গাল চেপে ধরে এক হাত দিয়ে।

‘আহ..’ ব্যথায় কঁকিয়ে উঠল ইনান।

‘মুখ নেই তোমার? মুখে বলা যায় না?’ দাঁত কটমট করে বলল সে।

ব্যথার মাঝেই ইনান কষ্টে হ্যাঁ বলল।

জেহফিল ইনানের মুখ ছেড়ে দিলো। ইনান গাল চেপে ফুঁপিয়ে উঠল।

‘একদম চুপ। আর একটা আওয়াজ করলে মুখ সেলাই করে দেব একদম।’

পলকের মুখ সেলাইয়ের ঘটনাটা চোখের সামনে ভাসতেই ইনান একহাতে মুখ চেপে ধরে কান্না আটকানোর চেষ্টা করল।

জেহফিল উঠে গিয়ে টুলবাক্স হতে কিছু একটা নিয়ে ইনানের সামনে এসে বসল। ইনানের ভেজা জামার বোতাম হঠাৎ একটানে ছিঁড়ে ফেলল সে। ইনান নিজেকে রক্ষা করার সুযোগ পায়নি, তার আগেই তার বস্ত্র মার্বেলের ফ্লোরে দু টুকরো অবস্থায় পড়ে গেছে।

জেহফিল আবেশিত হয়ে ইনানকে দেখল, ভেজা চুল লেপ্টে আছে ইনানের ঘাড়ে, গলায়, বক্ষবিভাজনে.. বিন্দু বিন্দু জলকণাগুলো কী আরামে ইনানের দেহের সাথে মিশে আছে। জেহফিলের রাগ হলো খুব, ঐ জলকণাদের প্রতি। এগিয়ে এসে ইনানের শরীরের দুঃসাহসিক বিন্দুদের নিজের অধরের মাঝে নিয়ে নিলো। ইনানের ঠোঁট থেকে, গাল থেকে, গলা থেকে…

ইনান কাঠ হয়ে বসেছিল। জেহফিলের হাবভাব সুবিধার না। কেমন অন্যরকম নেশা জেহফিলের চোখে। ইনানের চোখ যেন পড়ে নিলো জেহফিল। তীর্যক হেসে ইনানকে ছেড়ে পকেটে থাকা ছোট্ট ছু’রিটা নিয়ে আচানক নিজের আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে আবারো আঘাত করল কয়েকবার। জলের মতো রক্ত গড়িয়ে পড়তে লাগল জেহফিলের হাত বেয়ে। ইনান চিৎকার করে কান চেপে ধরল।

‘শশহ! কাঁদছ কেন? তোমাকে কি কিছু করেছি?’

‘আ…আপনি জানেন…আমি..রক্ত…’ বড় বড় নিশ্বাস নিতে নিতে মাঝপথে তার কথা আটকে গেল।

‘আই নো বেবি। তোমার হিমোফ্লোবিয়া আছে তাই না? হুমমম…’ জেহফিল চিবুকে হাত ঠেকিয়ে চিন্তার ভান করল।

টুলবাক্স থেকে চিকন একটা তুলি বের করে ইনানের হাতে দিলো জেহফিল।

‘এটা হচ্ছে তোমার বোকামির শাস্তি। মন দিয়ে শুনবে। তুলি দিয়ে তোমার নগ্ন শরীরের প্রতিটা জায়গায় আমার নাম লিখবে। আর রং..’ জেহফিল কা’টা হাত ইনানের সামনে বাড়িয়ে দিলো,

‘আমার রক্ত হলো রং এবং প্যালেট হচ্ছে আমার হাত।’ ক্রুর হাসি জেহফিলের ঐ সুন্দর ঠোঁটজোড়ায় আসন গেড়ে বসল।

‘পারব…পারব না আমি।’ হেঁচকি তুলে কাঁদতে লাগল ইনান।

জেহফিল ইনানের হাতে জোর করে তুলি চাপিয়ে দিলো।

‘ডোন্ট মেক মি গো হার্ড অন ইউ। তোমাকে লাইট পানিশমেন্ট দিচ্ছি। আশা করি তুমি আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিবে না।’

ইনানের গাল বেয়ে অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়ছে। সে রক্ত ভয় পায় জেনে কী কঠিন এক শাস্তি দিলো তাকে! জেহফিলের চোখে চোখ রাখতেই ইনান চোখ নামিয়ে ফেলল। ঐ ক্রোধান্বিত চোখে চোখ রাখার সাহস তার নেই। কম্পিত হাতে তুলি নিয়ে জেহফিলের রক্তাক্ত হাত থেকে রক্ত নিয়ে নিজের হাতের মধ্যে জেহফিলের নাম লিখল।

ইনানকে বড় করে ওয়ার্ড লিখতে দেখে জেহফিল থামাল তাকে, হিমশীতল গলায় বলল,

‘আরো ছোট করে, খাতায় লিখার মতো করে আমার নাম লিখবে। শরীরের একটা অংশও যাতে বাদ না থাকে। গট ইট?’

ইনান ধরা গলায় ‘হুম।’ বলল।

বাচ্চাদের গালে আদর করার মতো করে জেহফিল ইনানের গালে হালকা করে চাপড় দিলো, আদুরে গলায় বলল,

‘সাচ আ গুড গার্ল।’

রক্ত শুকিয়ে গেলে জেহফিল ছু’রি দিয়ে আবার হাতে পোঁচ দিলো, ইনানের চিৎকারে রুম ভারী হলো আবার। আর তা দেখে জেহফিল নির্দয় হাসি হাসে, বিড়বিড় করে বলল,

‘ইটস গনা বি আ লং নাইট।’

.

বিদ্যুত চমকানোর আলো এবং মোমের আলোয় রক্ত বর্ণে রঞ্জিত অনাবৃত দেহের ইনানকে দুই রূপের লাস্যময়ী নারীর মতো ঠেকে জেহফিলের কাছে। জেহফিলের মনে হয়, ইনান নামক মিষ্টি একটা পরী তার সামনে…না না, মনে হবে কেন, তার বাটারফ্লাই তো আসলেই একটা পরী। জীবন্ত পরী। যার রুপ একেক আলোতে একেক রকম, মাতাল করার মতো। তার বাটারফ্লাইয়ের এত চমৎকার রূপ শুধুমাত্র তার..একান্তই তার।

মোহাবিষ্টের ন্যায় ইনানের দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে জেহফিল গভীর গলায় হঠাৎ তার প্রিয় গানটি গেয়ে উঠে,

‘my love is mine, all mine
I love, my, my, mine..
Nothing in the world belongs to me,
But my love, mine, all mine..
Nothing in the world is mine for free,
But my love, mine, all mine, all mine…’

.
.
চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here