#কাজললতা
পর্ব: ১২
লেখিকা:ইভা আক্তার।
🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁
দেখতে দেখতে সেই কাঙ্খিত দিন চলে এলো। আজ নওশিন আপুর গায়ে হলুদ। সারা বাড়ি বিভিন্ন রঙের লাইট দিয়ে জাঁক ঝমক ভাবে সাজানো হয়েছে। এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে যে দিনগুলো পার হয়ে গেলো টেরই পেলাম না। দুই দিন থেকে সারা বাড়িতে বিভিন্ন আত্মীয়দের আনাগোনা চলছে। নওশিন আপুকে খুব সুন্দর করে হলুদ শাড়ি আর আর্টিফিসিয়াল ফুলের গহনা দিয়ে সাজানো হয়েছে। আর মাত্র ১ দিন পর নওশিন আপু আমাদের থেকে দূরে চলে যাবে। ভাবতেই কান্না চলে আসছে। বড় ফুপ্পি তো কাল সারাটাদিন ধরে কান্নাকাটি করে চলেছে । নাহিল ভাইয়ারও মুড অফ। সকাল থেকে ইফতি ভাইয়ারও দেখা পাওয়া যায় নি। ইফতি ভাইয়া আর আগের মতো আমাকে বকে না। শুধুমাত্র খোঁটা দেওয়া কথা যদি কমতো তাহলে শান্তি পেতাম। সবার কাজ-কাম শেষ হলে যে যার মতো রুমে গেলো ফ্রেশ হতে। আমি আর ইলমা হলুদ রঙের শাড়ি পড়ার জন্য রেডি হচ্ছি। ইলমা গোসল করে বের হতেই আমি ঢুকলাম গোসলে। গোসল শেষে ইলমাকে না পেয়ে ছোটো কাকি কে জিজ্ঞেস করলাম,
– ইলমা কোথায় ছোটো কাকি? (আমি)
– ইলমা রেডি হয়ে নওশিনের কাছে গেছে। নওশিনের নাকি সাজ-গোজের জন্য কি জানি সমস্যা হয়েছে। ইলমা যেহেতু ফ্রী ছিলো তাই ইলমা গেছে তুই তাড়াতারি রেডি হয়ে চলে আসিস। (ছোটো কাকি)
ইলমা রেডি হয়ে চলেও গেছে? তাহলে এখন আমি কি করি? শাড়ি আমি মোটামুটি বেশ ভালোই পড়তে পারি কিন্তু নিচের কুচিটা দেয়ার জন্য যে আমার কাউকে দরকার পরে। তাও কোনোরকম শাড়ি পড়তে লাগলাম। আচলটা কাঁধে দিয়ে কুচি ঠিক করতেই হনহন করে ইফতি ভাইয়া রুমে ঢুকে ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ইফতি ভাইয়ার হঠাৎ করে রুমে আসায় তড়িঘড়ি করে আচলটা কাঁধ থেকে নামিয়ে সারা গায়ে কোনোরকম পেঁচালাম।
– এটা কি ধরণের বেয়াদবি ইফতি ভাইয়া? একটা মেয়ের রুমে নক না করে এসেই তার বিছানায় শুয়ে পড়লে কেনো? (আমি)
ইফতি ভাইয়া মাথাটা উঠিয়ে বললো,
– ইলমা আর বাকি সব মেয়েরা বাইরে আড্ডা দিচ্ছে। আমি কি জানতাম যে তুই এখনো হেংলার মতো রুমে পড়ে আছিস? অলস কথাকার। আমাকে দেখ সারাটাদিন গাধার মতো খেটেছি (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়া কথাটা বলেই আবার উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লো। আমি জানি এখন যতই বলি না কেনো ইফতি ভাইয়াকে কোনো মতেই রুম থেকে বের করা যাবে না। তাছাড়া ইফতি ভাইয়া মোটেও ওরকম ছেলে না সেটা আমার জানা আছে। তাই কয়েকবার ইফতি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে শাড়ি পড়া শুরু করে দিলাম। আঁচলটা ঠিকঠাক
মতো দিয়ে গহনাগুলো পড়তেই ইফতি ভাইয়া হুড়মুড় করে বিছানা থেকে উঠে এসেই হাটু গেঁড়ে বসে আমার শাড়ির কুচিটা ঠিক করে দিলো তারপর শাড়িটা খুব ভালো করে পিন দিয়ে আটকিয়ে দিলো। অবাক করা বিষয় হচ্ছে ইফতি ভাইয়ার হাতের বিন্দুমাত্র স্পর্শও আমার শরীরে লাগে নি। আমি মুগ্ধ নয়নে ইফতি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ইফতি ভাইয়া আমার দিকে নিচ থেকে উপর পর্যন্ত তাকিয়ে সব গয়নাগুলো খুলে দিলো। আমি বিরক্ত নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
-কি করছো ইফতি ভাইয়া?এমনিই প্রচুর দেড়ি হয়ে গেছে আমার তারপর আবার গহনাগুলে খুলে দিচ্ছো কেনো?(আমি)
ইফতি ভাইয়া আমার কথা পাত্তা না দিয়ে তার পকেট থেকে একটা প্যাকেট বের করে আমার হাতে দিয়ে বললো,
-ড্রয়েরের ভেতর যে গহনাগুলো আছে ওগুলো পড়ে নে।
ইফতি ভাইয়া কথাটা বলেই রুমে থেকে বের হতে যাচ্ছিল হুট করেই আবার আমার সামনে এসে বলতে লাগলো,
-একটা কথা মাথায় রাখিস। কোনো ছেলের সাথে যেনো তোকে কথা বলতেও না দেখি। আর ওই ইমনের সাথে তো নাইই। যদি দেখি তাহলে তো তুই জানিসই আমি যে কি কি করতে পারি ।
ইফতি ভাইয়ার কথায় হ্যা সূচক মাথা নাড়তেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। হাতের প্যাকেটটা টেবিলে রেখে ইফতি ভাইয়ার কথামতো ড্রয়ের খুলতেই দেখতে পেলাম আর্টিফিসিয়াল ফুলের গহনার প্যাকেট রাখা আছে। এগুলো সেই গহনা যেগুলো সেদিন মার্কেটের দোকানে দেখেছিলাম। গহনাগুলো দেখে আমার ঠোঁটের কোণে হাসির ঝিলিক ফুটে উঠলো। এগুলো সত্যি ইফতি ভাইয়া কিনেছে তাও আমার জন্য? ইচ্ছে করছে দৌড়ে গিয়ে ইফতি ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে হাজার বার থ্যান্কস জানাই। কিন্তু এইসব আজগুবি কাজ কখনোই করা যাবে না। আর্টিফিসিয়াল ফুলের গহনাগুলো সুন্দর করে পড়ে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই মনে হলো কিছু একটা যেনো ভুলে গেছি। ওহ হ্যা, ইফতি ভাইয়ার দেওয়া সেই প্যাকেটটার কথা মনে পড়লো। প্যাকেটটা খুলেই ভেতরে একটা কাজল দেখতে পেলাম। কাজলটা দেখে আমার সেই অচেনা লোকটার কথা মনে পড়ে গেলো যে কিনা প্রায়ই চিঠির সাথে আমাকে কাজল দিয়ে উপহার দেয়। সে কি এখনো আমাকে কাজল আর চিঠি দেয় নাকি? সে তো জানেও না যে আমি এখন আমার বাড়িতে নেই। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই কাজল দেওয়া শেষ করে রুম থেকে বের হলাম। বাইরে অনেক মানুষ রয়েছে। এখানে এমন এমন মানুষও রয়েছে যাদের আমি চিনি না। সেই তখন থেকেই আমি ইলমাকে খুঁজে চলেছি কিন্তু দেখতেই পাচ্ছি না। হঠাৎই আমার সামনে তিনটা ছেলে এসে দাঁড়ালো। এদের তিন জনকে আমি চিনি। এরা নাহিল ভাইয়ার বন্ধু আজকে সকালেই এসেছে। তাদের মধ্যে নীল পাঞ্জাবি পড়া ছেলেটা আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
– হ্যালো। আমি আকাশ। নাহিলের বন্ধু। তুমি তো মেইবি ইভা তাই না? নাহিলের মামাতো বোন।
আমি হ্যা সূচক মাথা নাড়িয়ে আকাশ নামের ছেলেটির সাথে হ্যান্ড শেক করলাম। একে একে বাকি দুইজনের সাথেও পরিচয় হয়ে নিলাম। হলুদ রঙের পান্জাবী পড়া ছেলেটার নাম আহনাফ আর লাল পান্জাবী পড়া ছেলেটার নাম রাফসান। এদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম তখনই ইলমা আর নওশিন আপুর কিছু বান্ধবীরা নওশিন আপুকে নিয়ে স্টেজে বসালো। দাদু বাড়ির উঠানটা প্রচন্ড বড় হওয়ায় যাবতীয় সব অনুষ্ঠান সেখানেই করা হয়েছে। আমি নাহিল ভাইয়ার বন্ধুদের থেকে বিদায় নিয়ে নওশিন আপুর স্টেজের সামনে গিয়ে দাড়ালাম। আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম সবাই উপস্থিত হলেও ইফতি ভাইয়া ছিলো না। তখনই নওশিন আপুর বান্ধবী প্রয়ন্তী আপু মাইক নিয়ে বলতে লাগলো,
– সবাইকে স্বাগতম আমাদের নওশিন ফারহানার গায়ে হলুদে। এখন আমরা সবাই দেখবো কাপল ডান্স। এখানে যেকোনো ছেলে মেয়েরা কাপল ডান্স দিবে। এবার আপনারা আপনাদের কাপল চুজ করে স্টেজের সামনে এসে পড়ুন।
নাহিল ভাইয়া আশেপাশে তাকিয়ে ইলমাকে নিয়ে স্টেজের সামনে আসলো।ইলমা বিরক্তি নিয়ে বললো,
– কি হলো নাহিল ভাইয়া। এখানে কেনো আনলে (ইলমা)
– একদম চুপ কর। আশেপাশের কোনো মেয়েকে চিনি না তাই তোকে নিয়ে ডান্স করতে এসেছি। নাহলে তোর ভাগ্য ভালো আমার মতো একটা হ্যান্ডসাম ছেলের সাথে তোর মতো একটা নাগিনী ডান্স করার সুযোগ পেয়ছে (নাহিল ভাইয়া)
নাহিল ভাইয়ার কথায় ইলমা রাগে ফোঁসতে ফোঁসতে বললো,
– আমি নাগিনী তাই না? আশেপাশের মেয়েদের মতো আমি মেকাপ করে ভুতনি না সাজলেও আমাকে দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। তোমার ভাগ্য ভালো তোমার মতো একটা জলহস্তির সাথে আমার মতো একটা সুন্দরী মেয়ে ডান্স করবে। নাহলে অন্য কোনো মেয়ে থাকলে তোমার দুই গালে পাঁচ আঙ্গুলে ছাপ বসে যেতো (ইলমা)
ইলমার কথায় নাহিল ভাইয়া রাগী চোখে ওর দিকে তাকালো। ইলমা না দেখার ভান করে একটা ভেংচি কেটে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো। নওশিন আপুর কিছু বন্ধু আর বান্ধবীরাও স্টেজের সামনে গেলো। এই নিয়ে প্রায় চার টা কাপল হলো। পাশ থেকে ছোটো চাচ্চু ছোটো কাকিকে বলছে,
-এই চলো না আমরাও যাই কাপল ডান্স দিতে (ছোটো চাচ্চু)
-তুমি নাচবে কাপল ডান্স? তুমি তো পারো খালি ওকালতি করতে। তোমাকে নিয়ে কাপল ডান্স করে মান সম্মান নষ্ট করতে চাই না। মানসম্মান বাচাঁনো ফরজ। (ছোটো কাকি)
ছোটো কাকির কথা শুনে ছোটো চাচ্চু অন্য দিকে ফিরে ফিসফিস করে বলতে লাগলো,
– তোমার সাথে আবার কে ডান্স করবে? হা। তোমার সাথে কাপল ডান্স করতে গেলে স্টেজ ভেঙে সকলে পড়বে। এর থেকে অন্যদের কাপল ডান্স দেখে নিজের মন ভরাই।
স্টেজ থেকে প্রয়ন্তী আপু মাইক নিয়ে বললো,
– ইভা তুমিও চলে এসো কাউকে নিয়ে।
আমি কিছু বলার আগেই ইমন ভাই আমার কাছে এসে বললো,
– ইভা চলো তুমি আর আমি যাই। এসো।
ইমন ভাই কথাটা বলেই আমার দিকে হাত বাড়ালো।
– না না ইমন ভাই। আমি ডান্স করতে পারি না। আপনি অন্য কারো সাথে ডান্স করুন (আমি)
আমার কথায় প্রয়ন্তী আপু মাইক রেখে আমাকে বললো,
– ইভা তুমি ইমনের সাথেই চলে এসো। তোমাকে কিন্তু ইমনের সাথে বেশ মানাবে।
প্রয়ন্তী আপুর কথায় আমি ইমনের দিকে হাত বাড়াতেই হঠাৎ করে ইফতি ভাইয়া এসে আমার হাত ধরে নিয়ে স্টেজের সামনে গেলো। ইমন ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে রাগী চোখে ইফতি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
– বাহ এবার তাহলে আমাদের কাপল ডান্স পূর্ণ হবে। ওকে তাহলে স্টার্ট করা যাক (প্রয়ন্তী আপু)
ইফতি ভাইয়া আমার দুই হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে। ইফতি ভাইয়ার পান্জাবী দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। হলুদ পান্জাবীর সাথে আমার হলুদ রঙের শাড়ির ডিজাইন সম্পূর্ণভাবে মিলে গেছে। যে কেউ দেখে বলবে আমরা সত্যি সত্যি কাপল। হলুদ শাড়িটা আমাকে বড় কাকিই দিয়েছিলো। যদিও আমি অন্য একটা শাড়ি পড়তে চেয়েছিলাম কিন্তু বড় কাকি এসে বললো,
-ইভা এই শাড়িটা পড়। তোর জন্যই নিয়ে আসা। তোকে এই শাড়িতে বেশ মানাবে।
বড় কাকির কথা অনুযায়ী আমি বড় কাকির দেওয়া শাড়িটাই পড়েছিলাম। কিন্তু কখনো ভাবতেও পারি নি ইফতি ভাইয়ার পান্জাবী আর আমার শাড়ি এক রকমই হবে। ইফতি ভাইয়া হলুদ পান্জাবীর সাথে সাদা রঙের পায়জামা আর কালো বেল্টের ঘড়ি পড়েছে। দেখতে অসাধারণ লাগছিলো ইফতি ভাইয়াকে। আশেপাশের মেয়েরা জেলাসী চোখে আমার আর ইফতি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। সাউন্ড বক্সে গান চলতে শুরু করলো,
“Ye raaten ye mausam nadi
Ka kinaara ye chanchal hawa
Kaha do dilon ne ki mil kar
Kabhi na honge kabhi ham juda
Ye raaten ye mausam nadi ka
Kinaara ye chanchal hawa
Ye kya baat hai aaj ki
Chaandani mein
Ke ham kho gaye
Pyaar ki raagini mein
Ye baahon mein baahen
Ye bahaki nigaahen
Lo aane laga zindagi ka maza
Ye raaten ye mausam nadi
Ka kinaara ye chanchal hawa
Sitaaron ki mahafil
Ne kar ke ishaara
Kaha ab to saara
Jahaan hai tumhaara
Muhabbat javaan ho
Khula aasamaan ho
Kare koi dil aarazu aur ky
Ye raaten ye mausam nadi
Ka kinaara ye chanchal hawa”
এতটুকুর পর আমি আর ইফতি ভাইয়া ব্যতীত কেউই কাপল ডান্স সম্পূর্ণ করতে পারলো না। কেউ কেউ ক্লান্ত হয়ে পড়লো আবার কেউ কেউ কাপল ডান্স দিতে পারলো না। কিন্তু আমার আর ইফতি ভাইয়ার ডান্স কন্টিনিউ থাকলো।
“Kasam hai tumhe tum
Agar mujhase ruthe
Rahe saans jab tak
Ye bandhan na toote
Tumhen dil diya hai
Ye vaada kiya hai sanam main
Tumhaari rahungi sada
Ye raaten ye mausam nadi ka
Kinaara ye chanchal hawa”
আমার আর ইফতি ভাইয়ার কাপল ডান্স শেষ হতেই চারিদিক হাত তালিতে ভরে উঠলো। ইলমা, নাহিল ভাইয়া আর ছোটো চাচ্চু তো হা হয়ে গেলো। ইফতি ভাইয়া খুব সুন্দর গান পাড়তো তা জানতাম কিন্তু এতো সুন্দর কাপল ডান্সও পাড়তো তা জানতাম না। আচ্ছা কাপল ডান্সটা আবার ইফতি ভাইয়া আর তার সেই সুন্দরী রমনী একসাথে নেচে শিখলো না তো? ভাবতেই হাসিমাখা মুখটা অফ হয়ে গেলো। ইফতি ভাইয়ার হাত ছেড়ে চলে যেতেই সকলের অগোচরে ইফতি ভাইয়া আমার হাত টেনে তার রুমে নিয়ে দরজা আটকে দিলো। ভয়ে আমার প্রাণ বের হওয়ার উপক্রম। ইফতি ভাইয়া আমার দুই হাত তার দুই হাত দিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরলো। আমি ব্যথা সহ্য করতে না পেরে “আহ” বলে আর্তনাদ করলাম,
– অনেক ব্যথা লাগছে বুঝি? আমি স্পর্শ করলে ব্যথা লাগে আর নাহিলের ওই বন্ধুরা যখন তোর হাত ধরে হ্যান্ডশেক করলো তখন খুব আরাম লেগেছে তাই না? অপরিচিত ছেলেদের স্পর্শ পেলে খুব ভালো লাগে? তোকে না বারণ করেছিলাম কোনো ছেলের সাথে যেনো তোকে কথা বলতেও না দেখি। তাহলে আমার অগোচরে ছেলেদের সাথে হাত মেলানো আবার ওই ইমনের সাথে ডান্স করতে যাওয়ার সাহস কি করে হলো বল আমায়। জবাব দে।
ইফতি ভাইয়ার চোখ রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছিলো। ইফতি ভাইয়ার চোখের দিকে তাকাতেও ভয় লাগছিলো। ইফতি ভাইয়ার এতো রাগ আমি আমার জীবনে কোনো দিনও দেখি নি। আমার কাছ থেকে তার প্রশ্নের কোনো জবাব না পেয়ে রাগে ইফতি ভাইয়া আমার হাত আরও জোড়ে চেপে ধরলো। সহ্য করতে না পেরে হু হু করে কেঁদে দিলাম। ইফতি ভাইয়ার সামনে আমি কখনোই নিজেকে দূর্বল প্রমাণ করতে চাই না। কিন্তু তবুও বারবার কেনো যে ওর সামনেই আমার দূর্বলতা প্রকাশ পায় কে জানে। আমার কান্না দেখে ইফতি ভাইয়া আমার হাত ছেড়ে দিলো। হাত ছেড়ে দিতেই ইফতি ভাইয়া দেখতে পেলো তার হাতে রক্ত লেগে আছে। ইফতি ভাইয়া তাড়াতাড়ি আমার হাত দুটো তার হাতে নিয়ে দেখতে পেলো শক্ত করে ধরায় আমার হাতে থাকা কাচের চুড়িগুলো ভেঙে কিছু কিছু নিচে পড়ে রয়েছে আবার কিছু কিছু আমার হাতের অংশে ঢুকে পড়েছে। ইফতি ভাইয়ার চোখে ভয়ের ছাপ দেখতে পেলাম। ইফতি ভাইয়া সাথে সাথে আমাকে বিছানার উপরে বসিয়ে বাইরে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর দেখলাম ইফতি ভাইয়ার হাতে মলম আর ব্যান্ডেজ। ইফতি ভাইয়া বিছানার উপর বসে আমার হাতের রক্ত মুছে দিয়ে মলম লাগিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো। আমার দুই হাতের ব্যান্ডেজের উপর ইফতি ভাইয়া দুইবার চুমু খেলো। ইফতি ভাইয়া আমার কান্না থামানোর আপ্রাণ চেষ্টা করছে কিন্তু আমার কান্না কোনোমতেই থামছে না। ইফতি ভাইয়া আমার মুখমন্ডল তার দুই হাত দিয়ে ধরে বললো,
– কেনে রাগাস আমাকে এতো? তুই জানিস না আমি কত বদমেজাজি। একবার রেগে গেলে নিজেকে কন্ট্রোল করাা আমার পক্ষে কতটা কষ্টকর সেটা কি তুই জানিস না? তবুও কেনো রাগাস আমাকে? (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার নরম কন্ঠে আমার কান্নার বেগ কিছুটা কমে গেলো। ফোপাঁতে ফোপাঁতে বললাম,
– ওদের তো আমি চিনিও না। ওদের সাথে আমার আজ দেখা হলেও আর তো কখনো দেখাও হবে না আর কথাও হবে না। কিন্তু তুমি? তুমি তো ঢাকায় গিয়ে ঠিকই তোমার ওই সুন্দরী রমনীর সাথে দেখা করবে। তার সাথে কথা বলবে। কই আমি কি তোমাকে বারণ করেছি? আমি কি তোমার উপর রাগ দেখিয়েছি?(আমি)
ইফতি ভাইয়ার তার হাত সরিয়ে একটা হাসি দিলো।
– তুই তাহলে প্রতিশোধ নিচ্ছিলি? বোকা একটা। কখনো কি জিজ্ঞেস করেছিস আমার সেই সুন্দরী রমনীটা কে? কখনো কি দেখতে চেয়েছিস আমার শশুরের মেয়েটা কে? (ইফতি ভাইয়া)
– না আমি জানতেও চাই নি আর দেখতেও চাই নি আর চাইও না। আমার কোনো ইচ্ছে নেই তোমার ব্যাক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করার (আমি)
ইফতি ভাইয়া আরেকটা হাসি দিয়ে বললো,
-শশুরের মেয়ে দেখি তার জামাইয়ের মুখে অন্য কোনো মেয়ের নাম নিলেও জেলাস হয়ে যায় (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার ভাইয়ার কথায় আমার কান্না পুরোপুরি কমে গেলো। খানিকটা রেগে বললাম,
-তোমার কি সবসময় আমার সাথেই ফ্ল্যার্ট করতে ভালো লাগে? আমার সিরিয়াস মুহূর্ততেও কি তোমার মুখে ফ্ল্যার্ট আসে? (আমি)
– না তবে সিরিয়াস মুহূর্তটা যেহেতু আমাকে নিয়েই সেহেতু একটু আধটু তো ফ্ল্যার্ট করতেই পারি তাই না (ইফতি ভাইয়া)
কথাটা বলেই ইফতি ভাইয়া একটা চোখটিপ দিলে। রাগে ইচ্ছে করছিলো ইফতি ভাইয়ার গলা টিপে ধরি। নিজের রাগকে কন্ট্রোল করে বাইরে চলে আসতেই দাদুমনির সাথে দেখা। দাদুমনি আমার ব্যান্ডেজ করা হাত দেখে ভয় পেয়ে গেলো। আমার হাত দুটে নিয়ে বলতে লাগলো,
– ইভা তোর হাতে কি হয়েছে দাদুমনি। দুই হাতেই ব্যান্ডেজ কেনো করা? ইফতিকে দেখলাম আমার কাছে এসে তারাহুরো করে মলম আর ব্যান্ডেজ চাইছিলো। (দাদুমনি)
– আরে দাদুমনি ভয় পেয়ো না। তেমন কিছুই হয় নি। পড়ে গেয়ে একটু ব্যথা পেয়েছিলাম যার কারণে চুড়িগুলে ভেঙে আমার হাতে লেগেছিলো আর খানিকটা রক্ত বের হয়েছিলো । একারণেই ইফতি ভাইয়া ব্যান্ডেজ আর মলম আনতে তোমার কাছে গিয়েছিলো (আমি)
– ওহ আচ্ছা। তা তো বুঝলাম কিন্তু দাদুমনি তুই রাতে মেহেদী দিবি কিভাবে? (দাদুমনি)
– উফফ দাদুমনি। বিয়েতে যে মেহেদী দিতেই হবে এমন কি কোনো নিয়ম আছে? আচ্ছা এখন তুমি যাও। আমি গিয়ে নওশিন আপুকে হলুদ দিয়ে আসি (আমি)
কথাটা বলে দাদুমনির কাছ থেকে চলে এলাম। মেহেদি দেব না বলে তো এলাম কিন্তু আসলে আমার বুকে মেহেদী দিতে না পারার জন্য তোলপাড় চলছিল। কত আশা করেছিলাম নওশিন আপুর বিয়েতে মেহেদী দিয়ে দুই হাত রাঙিয়ে ফেলবো। কিন্তু ভাগ্য আমার এতোই খারাপ যে নওশিন আপুর বিয়েতে মেহেদী দিতেই পারবো না। মন খারাপ নিয়েই স্টেজে উঠে হলুদ দিয়ে আসলাম নওশিন আপুকে। একে একে সকলেই প্রশ্ন করেছিলে হাতে ব্যান্ডেজ কেনো? কি হয়েছে? উত্তরে আমি সেই বানোয়াট কাহিনীটা শুনিয়েছিলাম সকলকে।
সন্ধ্যায় শুরু হয়ে গেছে মেহেদীর অনুষ্ঠান। পার্লারের বিভিন্ন দক্ষ মেহেদি দিয়ে দেওয়া মেয়েরা এসেছে বাড়ির সকল মেয়েদের মেহেদী দিয়ে দিতে। নওশিন আপুর সখ ছিলো তার এক হাতে যেনো আমি মেহেদি দিয়ে দেই। কিন্তু তার সখটা পূরণ হলো কই? সকলে মেহেদী দিচ্ছে আর পাশে আমি বসে বসে তাদের মেহেদী দেওয়া দেখছি। ইফতি ভাইয়ার সাথে অনেক মেয়েরাই কথা বলার জন্য হাজারো চেষ্টা করছে।কেউ কেউ তো ফোন নম্বরও চেয়েছে। কিন্তু ইফতি ভাইয়ার ফোন নম্বর তো দূরের কথা কেউ একটু কথাও বলতে পারে নি। নওশিন আপুর অনেক বান্ধবীরাও ইফতি ভাইয়ার পিছে পিছে ঘুরেছে। সিনিয়র হয়েও জুনিয়রের সাথে প্রেম করতে চায় এটা দেখে আমার চোখ কপালে উঠে গেছিলো। আর ইফতি ভাইয়াও একটু পর পর তাদের আপু আপু বলে খেপাচ্ছিল। ইফতি ভাইয়ার আপু বলে ডাক শুনে তাদের এক একজনের অসহায় চেহারা দেখে আমরা সব কাজিনরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছিলাম। আর এদিকে আমার ইফতি ভাইয়ার উপর প্রচন্ড রাগ উঠছে। আজ যদি না ইফতি ভাইয়া এমনটা করতো তাহলে আর আমার হাতের এই অবস্থা হতো না। কিন্তু দোষটা তো আমারও ছিলো। আজ হয়তো আমার কোনো আপন বড় ভাই হলে নিশ্চয়ই আমাকে মারতো। মেহেদীর অনুষ্ঠানটা আসলে কোনো অনুষ্ঠান ছিলো না কেননা দাদুভাই এসব পছন্দ করে না। নওশিন আপুর বাবা মানে বড় ফুফাও এসব পছন্দ করে না। নওশিন আপুর দাদুভাই আর দাদুমনি কেউই বেঁচে নেই এজন্যই বিয়েটা নওশিন আপুর নানা বাড়িতেই হচ্ছে। রাত প্রায় ১ টা বাজে খাওয়া দাওয়া শেষে সকলেই ঘুমিয়ে পড়েছে। আর এদিকে আমার চোখ বন্ধই হচ্ছিল না। দুহাতের দিকে তাকালেই বুকটা কেঁদে উঠে। সকলের হাতে মেহেদী দেওয়া রাঙা হাত আর আমার হাত ব্যন্ডেজে মোড়ানো। হঠাৎই ফোনে ফেসবুকের নোটিফিকেশনের আওয়াজ ভেসে আসলো। রাত ১ টায় কিসের নোটিফিকেশন দেখতে গিয়ে দেখলাম যে নোটিফিকেশনে লেখা “Ifty Chowdhury Accepted Your Friend Request “. নোটিফিকেশনটা দেখে আমার চোখ কপালে উঠে গেলো। এটা কিভাবে সম্ভব? আমার আইডি দিয়ে তো ইফতি ভাইয়ার আইডি ব্লক করা। নতুন ফেসবুক আইডি খোলার সাথে সাথে ইফতি ভাইয়ার আইডি খুঁজে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিয়েছিলাম এটা জানাতে যে যতই ইফতি ভাইয়া আমাকে পিচ্চি পিচ্চি বলুক না কেনো আজ আমি বড় হয়ে গিয়েছি। আব্বু আমাকে ফেসবুক খোলার পারমিশন দিয়েছে। ফেসবুক আইডির প্রফাইলে আমার পিক দেওয়া ছিলো বলে ইফতি ভাইয়া খুব সহজেই আমার আইডি দেখে চিনতে পেরেছিলো। ফ্রেন্ড রিকয়েস্ট একসেপ্ট করেছিলো পাক্কা দেড় মাস পর। একসেপ্ট করেছিলো ঠিকই তার সাথে ফ্রীতে গালাগালিও দিয়েছিলো। একসেপ্ট করার সাথে সাথে হায় হ্যালো না দিয়ে ডায়রেক্ট মেসেজে বলা শুরু করেছিলো,
– তোর তো সাহস কম না এক তো পিচ্চি ফেসবুক খুলেছিস আবার নিজের ছবিও প্রফাইলে দিয়েছিস। তারাতাড়ি আইডিতে যত ছবি ছেড়েছিস সব ডিলিট কর নাহলে মেঝো চাচ্চুর কাছে নালিশ করবো যে তুই ফেসবুকে ছেলেদের সাথে ফ্ল্যার্ট করিস। দ্রুত ডিলেট কর নাহলে ফেসবুক ব্যাবহারকারী সকল মানুষ তোর প্রফাইল দেখে ভয় পাবে যে এটা কোন পেত্নীর প্রফাইল। আমি চাই না তোর জন্য মার্ক জুকারবার্গ লস খাক। কিরে রিপলাই দিচ্ছিস না কেন? সত্যি কথা বলেছি বলে ঘাবড়ে গেছিস?
ইফতি ভাইয়ার কথায় রাগে কান গরম হয়ে গিয়েছিল। রিপলাই করছিলাম না আবার আপলোড করা ছবিও ডিলিট দিচ্ছিলাম না বলে মেসেন্জারে ফোন করা শুরু করলো। সাথে সাথে ফেসবুক থেকে “Ifty Chowdhury ” নামের আইডি টা ব্লক করে রিপোর্ট দিলাম। ফেসবুকে ব্লক করেছিলাম বলে নম্বরে কল করা শুরু করলো। সেখানেও ব্লক করে দিলাম। কিছুক্ষণ পর আম্মু মোবাইল নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বললো,
– দেখ তো ইভা ইফতি প্রচুর রেগে আছে বলছে তাড়াতাড়ি ইভাকে ফোনটা দাও। কি করেছিস তুই যে ইফতি এতো রেগে আছে? (আম্মু) আম্মুর কথায় জবাব না দিয়ে ফোনটা হাত থেকে নিয়ে হ্যালো বলতেই ইফতি ভাইয়া রাগী কন্ঠের চিল্লানি শুনলাম।
– তোকে কি বলেছি কানে যায় না নাকি?ছবি ডিলেট করেছিস নাকি এক্ষুনি তোর বাসায় এসে দুই গালে দুইটা চর মাড়বো বল? (ইফতি ভাইয়া)
– না না ইফতি ভাই তোমার কষ্ট করে আসা লাগবে না। এই তো আমি শুধুমাত্র ছবি না পুরা আইডিই ডিলেট করে দিচ্ছি (আমি)
– গুড। আবার যেনো তোকে ফোন করা না লাগে। আর নম্বর থেকে আনব্লক করিস নাহলে গালের চামড়া উঠিয়ে দিব (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার কথা মতো ভয়ে ভয়ে তাড়াতাড়ি নম্বরে তাকে আনব্লক করলাম আবার ফেসবুক আইডিও ডিলেট করে দিলাম। আমার তারাহুরো করে এমন কান্ড দেখে আম্মু হাজারটা প্রশ্ন করলেও আমি একটাও উত্তর না দিয়ে আম্মুকে রুমের বাইরে পাঠিয়ে দিলাম। অবশ্য কিছু মাস পর আবারও নতুন ফেসবুক আইডি খুলেছিলাম কিন্তু খুলার সাথে সাথে সবার প্রথমে ইফতি ভাইয়ার আইডি খুঁজে ব্লক করে দিলাম। তাহলে কিভাবে ইফতি ভাইয়াকে আনব্লক আর ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট না দিলেও সে আমার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করলো?
এসব ভাবতেই ভাবতেই মেসেন্জারে ইফতি ভাইয়া মেসেজ দিলো,
– কি ভাবছিস? আনব্লক আবার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট না পাঠিয়েও কিভাবে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করলাম তাই তো? জানতে চাইলে ছাদে চলে আয়। অপেক্ষা করছি।
– ছাদে? এতো রাতে ছাদে কেনো? (আমি)
-তোকে ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে সকালে সবাইকে বলবো ইভা প্রেমে ছেকা খেয়ে আত্মহত্যা করেছে। এতো বেশি কথা কেনো বলছিস? তাড়াতাড়ি ছাদে আয় নাহলে তোর মুখ বেধে নিয়ে এসে সত্যি সত্যি ছাদ থেকে ফেলে দিবো। (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়া মেসেজটা দিয়েই অফলাইন হয়ে গেলো। আমি ভয়ে ভয়ে পা টিপে টিপে ছাদে গেলাম। ছাদে গিয়ে দেখি ইফতি ভাইয়া রেলিংএর পাশে দাড়িয়ে চাঁদ দেখছে। পেছনে গিয়ে দাঁড়াতেই বলে উঠলো,
– এসেছিস? (ইফতি ভাইয়া)
এতো আস্তে আস্তে হাঁটার পরও কিভাবে বুঝলো যে আমি এসেছি? সত্যি সত্যি কি এলিয়েন বলি নাকি? ইফতি ভাইয়া আমার দিকে ফিরে কিছুক্ষণ আমার দিকেই তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ করে আমার হাত ধরে নিয়ে ছাদের পাশে থাকা চেয়ারে বসালো। চেয়ারের পাশে যে ছোট্ট টেবিলটা ছিলো ওখানে ইফতি ভাইয়া তার মোবাইলটা রাখলো। তারপর ধীরেধীরে আমার দুই হাতের ব্যান্ডেজ খুলে দিয়ে কিছুক্ষণ অসহায় দৃষ্টিতে সেদিকে তাকিয়ে রইলো। ইফতি ভাইয়া তার পকেট থেকে একটা মেহেদী বের করে মোবাইলে মেহেদীর টিউটরিয়াল চালু করে মোবাইলটা টেবিলে রাখলো আর আমাকে মেহেদী দেওয়া শুরু করলো। ইফতি ভাইয়া মেহেদী দেওয়ার সময় আমি জিজ্ঞেস করলাম,
– ফেসবুকে আমি তোমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই নি তবুও কি করে তুমি একসেপ্ট করলে? (আমি)
ইফতি ভাইয়া মেহেদী দিতে দিতে একটা মুচকি হেসে বললো,
– তোর আইডি ব্যবহার করে (ইফতি ভাইয়া)
-মানে? (আমি)
– মানে তোর আইডি লগ ইন করে ভিতরে ঢুকে আমার আইডি আনব্লক করলাম দ্যান ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট দিলাম (ইফতি ভাইয়া)
-তুমি আমার মোবাইল কোথা থেকে পেলে? (আমি)
-তোর মোবাইল কেনে নিতে যাবো? আমি আমার মোবাইল দিয়েই তোর আইডিতে ঢুকেছি (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললাম,
– মানে আমার আইডি তোমার কাছে? কিভাবে সম্ভব? তুমি আমার আইডি পাসওয়ার্ড কিভাবে পেলে?(আমি)
– হ্যাক করে। শুধুমাত্র তোর ফেসবুক আইডি না। তোর জিমেইল থেকে শুরু করে ফেসবুক, ওয়াটসআ্যপ ইনফ্যাক্ট ইন্সটাগ্রাম আইডিও আমার কাছে আছে। (ইফতি ভাইয়া)
– এটা কিভাবে সম্ভব? (আমি)
– তুই তোর ফোন নম্বর দিয়ে যেসব কাজ করবি সেসব কাজই আমি দেখতে পারবো। মানে তুই তোর ফোন নম্বর দিয়ে যেসব আইডি খুলবি সেইসব আইডি আমার হাতের মুঠোয় চলে আসবে (ইফতি ভাইয়া)
– এ-এই কাজ কবে করলে তুমি? (আমি)
– যেদিন থেকে তুই নিউ সিম কিনলি সেদিন থেকেই। সেদিন আমি তোর বাসায় গিয়ে যখন তোর নিউ ফোন ধরেছিলাম সেদিনই এই কাজ করেছি। একারণে তোর মতো আমার আর ফেক আইডি খোলা লাগে নি (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার কথায় আমি প্রচন্ড ঘাবড়ে গেলাম। মানে ছেলেদের সাথে ফ্লার্ট করা থেকে শুরু করে সবকিছু ইফতি ভাইয়া দেখেছে। আল্লাহ এই দিন দেখার আগে তুমি আমার মরণ কেনো দিলে না। আমি যে এই পর্যন্ত প্রায় ১৫ টার উপরে ফেক আইডি খুলে ইফতি ভাইয়াকে প্রপোজ করেছি তাও ইফতি ভাইয়া জানতো? কিন্তু আজব ব্যাপার ইফতি ভাইয়া আমার এতো আকাম সম্পর্কে জানার পরও কাউকে কোনো কিছু কেনো বলে নি?
– তারমান তুমি সবকিছু জানতে? (আমি)
কথাটা বলেই মাথা নিচু করলাম। ইফতি ভাইয়া মেহেদী দেওয়া শেষ করে মোবাইলের টিউটোরিয়াল ভিডিও অফ করে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– জানতাম। সবই জানতাম আর জানিও। প্রতি সপ্তাহে একটা করে ফেক আইডি খুলে যে মেয়ে প্রপোজ করতো তার পাগলামী সম্পর্কে সবই জানতাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত না জানার ভান করে থেকেছি কেনো জানিস? (ইফতি ভাইয়া)
আমি মাথা উঠিয়ে ইফতি ভাইয়ার দিকে প্রশ্নসূচক চাহনি তাকাতেই ইফতি ভাইয়া আমার বাম হাতের মেহেদির মাঝে থাকা খালি জায়গায় ছোট করে লেখি দিলো,”ভালোবাসি পাগলিটাকে”। লেখাটা দেখেই আমি অবাক চাহনিতে ইফতি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে রইলাম। ইফতি ভাইয়া আমার দিকে মুগ্ধ নয়নে মুচকি হাসি দিয়ে তাকিয়ে আছে। চাঁদের আলোয় তার হাসি যেনো তারার মতো ঝিলিক করছে। আসলেই ভালোবাসা সুন্দর। অচেনা কোনো প্রেমিক পুরুষের প্রেমে পড়ার থেকে ঝগরুটে এক আদুরে চেনা-জানা প্রেমিক পুরুষের প্রেমে পড়াটা কি আসলেই সুন্দর না? সত্যিই অপূর্ব। তার সবকিছু। তার হাসি, তার ঝগড়া,তার চাহনি। সত্যিই অসাধারণ।
চলবে,,,,,,,,🍁
❗ কিছু দিন ধরে নিয়মিত গল্প লিখতে পারছি না তার জন্য দুঃখিত। কিন্তু তার পরিবর্তে অনেকটা বড় করেই কিন্তু আমি গল্পটা লিখছি।
দয়া করে কমেন্টে #কাজললতা গল্প নিয়ে মতামত এবং সৌন্দর্যতা নিয়ে লিখবেন। কেননা আমি আপনাদের জন্য অবশ্যই নেক্সট পর্ব দিবো। ধন্যবাদ সবাইকে 💖