কাজললতা পর্ব: ১৪ লেখিকা : ইভা

0
103

#কাজললতা
পর্ব: ১৪
লেখিকা : ইভা আক্তার

🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁
বিছানায় শুয়ে একবার ডানে আরেকবার বামে ফিরছি তবুও যেনো চোখে বিন্দুমাত্র ঘুম নেই। কিছুক্ষণ আগেই ইফতি ভাইয়া বিভিন্ন সতর্কবানী উপদেশ দিয়ে রুম থেকে চলে গেছে। ইমন ভাইয়ার এমন কোন জঘন্যতম কাজে আমাকে টার্গেট করেছে সেটা জানার জন্য যেনো আমার মন ব্যকুল হয়ে আছে। হটাৎ করে রুমের বাইরে দরজার সামনে কারো পায়চারি করার আওয়াজ শুনতে পেলাম। ভয়ে আমার সারা শরীর থরথর করে কাঁপছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি আড়াইটা বাজে। এতো রাতে বাইরে কে থাকতে পারে? তবুও নিজের মনে সাহস জুগিয়ে বিছানা থেকে উঠে দরজা হালকা চাপিয়ে বাইরে উঁকি দিলাম। রাতের অন্ধকারে রুমের বাইরে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। দরজাটা পুরোপুরি খুলতেই পেছনে কারো পায়ের শব্দ শুনতে পেলাম। পিছনে তাকাতেই একজন পুরুষকে দেখতে পেলাম। অন্ধকারে তার চেহারাটাও বোঝা যাচ্ছিল না। ভয়ে যখনই চিৎকার করতে যাবো সাথে সাথে লোকটি আমার মুখ চেপে ধরলো। এবার যেনো সত্যি সত্যি আমার আত্মা দেহ থেকে বের হয়ে যাবে।
– আরে চিৎকার কেন করছিস? আমি ইফতি?
ফিসফিস করে কথাগুলো ইফতি ভাইয়া বলতেই দেহে যেনো প্রাণ ফিরে এলো। ইফতি ভাইয়া আমার মুখ থেকে তার হাতটা ছাড়তেই বললাম,
– তুমি? তুমি এতো রাতে আমার রুমের বাইরে দাড়িয়ে কি করছো হ্যা?
– নাচতে এসেছি। তোর কি মনে হয় এতো রাতে আমি নাচতে তোর রুমের সামনে আসবো?
ইফতি ভাইয়ার বকুনিতে চুপ করে রইলাম।
– তুই এতো রাতে বাইরে কেনো এসেছিস হ্যা? তোকে না বারণ করেছিলাম যাই হয়ে যাক না কেনো একা একা অন্ধকারে বাইরে বের হবি না।
– আমি কি আর ইচ্ছে করে বাইরে বের হয়েছি? রুমের বাইরে কারো হাঁটার শব্দ পাচ্ছিলাম তাই বাইরে এসেছি দেখতে এসেছি যে এতো রাতে বাইরে কে হাঁটছে (বিরবির করে বললাম)
আমার কথা শুনে ইফতি ভাইয়া নিজের কপাল চাপড়াতে লাগলো।
– তোকে কি আর সাধে সাধে গাধা বলে ডাকি? হাদারাম একটা। যা রুমে গিয়ে ঘুমা।
ইফতি ভাইয়ার ধমকে রুমে ঢুকতেই পেছনে ফিরে বললাম,
– তুমি এতো রাতে আমার রুমের বাইরে কি করছো ইফতি ভাইয়া?
আমার প্রশ্নে ইফতি ভাইয়া শান্ত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
– তোর পাশের দুইটা রুমের পড়ই ইমনের রুম। নওশিন আপুর রুম আর ছোটো চাচ্চুর রুম দুই রুমই খালি পড়ে আছে। তাহলে তোকে কিভাবে একা ছেড়ে দিয়ে আমি ঘুমাতে যাব?
ইফতি ভাইয়ার কথায় আমার দু চোখ পানিতে টইটুম্বুর হয়ে গেলো। অন্ধকারে হয়তো ইফতি ভাইয়া তা দেখতে পাই নি। নিজের অশ্রুকে আটকে রুমের ভিতরে ঢুকে পড়লাম।
বারান্দায় দাড়িয়ে ইফতি ভাইয়ার কথা ভাবছিলাম। ইসস বেচারা আজ সারারাত না ঘুমিয়ে পাড় করে দিচ্ছে। তাহলে আমি কেনো এতো আরামে বিছানায় শুয়ে ঘুমাবো? সবই হয়েছে এই ইমন ভাইয়ের জন্য। সহজ-সরল চেহারা নিয়ে ঘুরে সকলের মন জয় করে বেড়াচ্ছে অথচ তার মনে যে কি কি আছে সেটা কেউই জানে না। হঠাৎই দরজায় কারো টোকা দেওয়ার শব্দ পেলাম। ইফতি ভাইয়া মনে হয় কোনো কাজে দরজায় টোকা দিচ্ছে। দরজার বাইরে ইফতি ভাইয়া পাহাড়া দিচ্ছিল এজন্য ভেবেই নিয়েছিলাম যে ইমন ভাইয়ার বাইরে থাকা কোনো ভাবেই সম্ভব না। রুমের দরজা খুলতেই কেউ একজন তার এক হাত দিয়ে আমার এক হাত চেপে ধরে আর তার আরেক হাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরে টানতে টানতে বাড়ির বাইরে নিয়ে আসে । ভয়ে আমার আত্মা একেবারেই শুকিয়ে যাচ্ছিল। এটা যে ইফতি ভাইয়া না সেটা ভালো করেই বুঝতে পারছিলাম তার গায়ের গন্ধ দ্বারা। ইফতি ভাইয়ার পারফিউমের গন্ধ কখনোই এমন না তাছাড়া ইফতি ভাইয়া কখনোই আমাকে এতো জোড়ে চেপে ধরবে না। অপরিচিত লোকটি আমাকে টানতে টানতে বাড়ির বাইরে তালগাছটার দিকে নিয়ে এলো। তালগাছটার নিচে এসে লোকটি আমার মুখ আর হাত দুটোই ছেড়ে দিতে কারো একজনের মাটিতে থুবড়ে পড়ার শব্দ পেলাম। কেউ একজন অপরিচিত লোকটির নাকে এতো জোড়ে ঘুষি মেরেছে যে লোকটি গাছের সাথে বারি খেয়ে নিচে চিৎ হয়ে পড়ে গেলো। সাথে সাথে ঘুষি মারা লোকটি আমাকে তার বুকের সাথে চেপে ধরলো। লোকটি আর কেউ নয় স্বয়ং ইফতি ভাইয়া। ইফতি ভাইয়ার গায়ের গন্ধ আর জড়িয়ে ধরা দেখেই বুঝতে পারলাম যে এটা ইফতি ভাইয়াই। পেছনের দিকে ফিরে তাকাতেই দেখলাম অপরিচিত লোকটি ধীরে ধীরে দাঁড়িয়ে পড়েছে। এক হাত দিয়ে তার নাক ধরা। নাকের উপর থেকে হাতটা সরাতেই চাঁদের আলোয় স্পষ্ট দেখা না গেলেও কিছুটা দেখে বুঝতে পেরেছিলাম যে অপরিচিত লোকটি হচ্ছে ইমন ভাই। ইমন ভাইকে দেখে এবার আমার কাছে পুরোটা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে ইফতি ভাইয়া যা বলেছিলো তা সম্পূর্ণভাবে সত্যি ছিলো। যাকে এতোটা সহজ-সরল সাধারণ আর ভদ্র ছেলে ভেবেছিলাম সে আসলে এতোটা জঘন্যরূপে বের হলো ভাবতেই অবাক লাগছে। ইফতি ভাইয়া আমাকে ছেড়ে ইমন ভাইয়ার জামার কলার টেনে রাগী কন্ঠে বলতে লাগলো,
-তোকে কয়বার ওয়ার্নিং দিয়েছিলাম যে ইভার আশেপাশেও যেনো তোকে না দেখি? তাহলে কোন সাহসে তুই ইভাকে এখানে নিয়ে এসেছিস বল?
ইফতি ভাইয়ার এমন রাগী কন্ঠের চিৎকারে যেনো আমার সারা শরীর কাপিঁয়ে তুলছিলো। অথচ ইমন ভাই উল্টো ভয় না পেয়ে ইফতি ভাইয়ার শার্টের কলার টেনে বলতে লাগলো,,
– আমাকে ভয় দেখাচ্ছিস? তোর ওই রাগী কন্ঠে ভয় আমি পাই না। আমার কাজে কোন সাহসে তুই নাক গলাচ্ছিস? ভালোয় ভালোয় বলছি আমার কাজ আমাকেই করতে দে এতে তোরই লাভ। তুই চাইলে আমার সাথে শামিল হতে পারিস। আমার তাতে কোনে আপত্তি নেই।
ইমন ভাইয়ার কথায় ইফতি ভাইয়া ইমন ভাইয়ের গালে ঘুষি মারতেই ইমন ভাই মাটিতে পড়ে গেলো। ইফতি ভাইয়া গিয়ে ইমন ভাইয়ার কলার টেনে উপরে উঠিয়ে বলতে লাগলো,
– তোর মতো জঘন্য আর পাপী মানুষ আমি না। যেখানে আমি আমার বাইশ বছরের জীবনে ওর দিকে একটুও কু নজর দেই নি, সেখানে তুই দুই দিনের ছেলে এসেছিস ওকে নিজের করে পেতে? আমি বেচেঁ থাকতে এটা কখনোই হতে দেব না। আজ আমার কাছে তোর ব্যপারে কোনো প্রমাণ না থাকায় কাউকে কিছুই বলতে পারছি না কিন্তু যেদিন তোর বিরুদ্ধে সকল প্রমাণ আমার হাতের মুঠোয় এসে যাবে সেদিন তোর জীবনে আমি আজরাইল রূপে আসবো।
-হাহাহাহাহা। আমার ব্যপারে প্রমাণ তুই জিন্দেগীতেও পাবি না। এতো সহজ না ডাঃ ইফতি চোধূরী। সরি তুই তো এখনো ডাক্তার হস নি। আচ্ছা শুনলাম তোর নাকি ডাক্তার হওয়ার অনেক বড় স্বপ্ন। নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে চাস নাকি নিজের পুরো লাইফটাকে পিষিয়ে ফেলতে চাস?
– যেখানে আমার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান ব্যক্তিটিই যদি আমার কাছে না থাকে সেখানে আমার স্বপ্ন মাটিতে মিসে গেলেও কোনো প্রকারে যায় আসে না।
– বাহ এতো ভালোবাসা। কিন্তু এখনো তো কিছুই করতে পারলি না। আমার মনে হয় কি জানিস এই দুনিয়াতে তোর মতো বোকা ছেলে আর নেই। ওকে এতো কাছে পেয়েও নিজের সুযোগের সৎ ব্যবহার কাজে না লাগিয়ে লকারে সাজিয়ে রাখছিস বাহ। তোর জায়গায় আমি থাকলে প্রতি রাতেই এই সুযোগটাকে কাজে লাগাতাম।
ইমন ভাইয়ার কথা শেষ হতেই ইফতি ভাইয়া ইমন ভাইয়াকে এতো জোড়ে ঘুষি দিলো যে ইমন ভাইয়া গাছের সাথে বারি খেয়ে মাটিতে পড়ে গেলো। ইমন ভাইয়ার সারা মুখ থেকে তরতর করে রক্ত পড়ছিলো। এতটুকুতেও ইফতি ভাইয়া থামে নি। ইফতি ভাইয়া গিয়ে ইমন ভাইয়ার গলা টিপে ধরে। ইমন ভাইয়ার চিৎকার আর আর্তনাদের শব্দে বাড়ির ভেতর থেকে এক এক করে সকল লাইট জ্বলতে শুরু করলো। বুঝতে বাকি রইলো না যে বাড়ির সকলেরই চিৎকারের শব্দে ঘুম ভেঙে গেছে। আজ যদি ইফতি ভাইয়াকে এই অবস্থায় বাড়ির এক অতিথিকে মারধর করতে দেখে তাহলে বড় চাচ্চুর মাথা হ্যাট হয়ে যাবে। সকলে ইমন ভাইয়ার সহজ-সরল রূপ দেখে তাকে ভালোবেসেছিলো যার ফলে ইফতি ভাইয়াকে এই অবস্থায় দেখলে সকলেই ইফতি ভাইয়াকে গাল-মন্দ করবে। এসব ভাবতে ভাবতেই দৌড়ে গিয়ে ইফতি ভাইয়াকে চিৎকার করে ডেকে টেনে তুুলছিলাম কিন্তু আমার চিৎকার যেনো ইফতি ভাইয়ার কানের মধ্যে পৌঁছচ্ছিলই না। যদি আজ ইফতি ভাইয়ার এতো জোড়ে ইমন ভাইয়ার গলা টিপে ধরার কারণে ইমন ভাইয়া শ্বাস আটকে মারা যায় তাহলে ইফতি ভাইয়ার পুরো লাইফটাই নষ্ট হয়ে যাবে। ইফতি ভাইয়াকে নিয়ে এসব চিন্তায় যেনে আমার মাথা নষ্ট হয়ে যাচ্ছিল। আর এদিকে ইমন ভাইয়াকে নিয়ে যেনো আমার কোনো ভ্রুক্ষেপই ছিলো না। ইমন ভাইয়া আমার সাথে করতে চাওয়া জঘন্য কাজের কথা মাথায় আসতেই সারা শরীর রি রি করে উঠলো।
– ইফতি
রাগী গলায় কারে চিৎকারের শব্দে পেছনে তাকাতেই দেখলাম বাড়ির ভেতর থাকা সকলেই আমাদের পিছে উপস্থিত। বড় চাচ্চুর এতো জোড়ে ইফতি ভাইয়ার নাম ধরে ডাকা চিৎকারে ইফতি ভাইয়াও পেছনে তাকিয়ে তাদেরকে দেখে ধরফর করে দাড়িয়ে যায়। ইমন ভাইয়ার মা দৌড়ে গিয়ে ইমন ভাইয়কে তুলে কাঁদতে থাকে। ইফতি ভাইয়া মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। বড় চাচ্চু হনহন করে এসেই ইফতি ভাইয়ার গালে চর বসিয়ে দেয়। এই প্রথম বড় চাচ্চু ইফতি ভাইয়ার গায়ে হাত তুলেছে। ইফতি ভাইয়ার গালে চর মারাতে সকলেরই চোখ কপালে উঠে যায়।
– এই জন্য তোকে আমি আমার এতো টাকা খরচ করে ডাক্তার বানাতে চেয়েছিলাম? যেখানে ভবিষ্যতে ডাক্তার হয়ে তুই মানুষের সেবা করবি সেখানে তুই মানুষকে মারতে চাইছিস? তোকে কি আমি এই শিক্ষা দিয়ে বড় করে তুলেছি যে তোর থেকে বয়সে ছোটো এক বাড়ির অতিথির গলা টিপে হত্যা করবি?আজ তোর জন্য তো ছেলেটা প্রায় মরেই যাচ্ছিল। তাহলে কি আমি তোকে ডাক্তার বানিয়ে ভুল করছি?(বড় চাচ্চু)
বড় চাচ্চুর এমন কথায় আমার দুচোখ বেয়ে অশ্রু পড়ছিলো। আজ আমার জন্যই তো ইফতি ভাইয়া এতোসব কথা শুনছে। আজ আমার জন্যই তো বড় চাচ্চুর মাথা নওশিন আপুর ফেমিলির কাছে হ্যাট হয়ে গেলো। নিজের উপর আজ নিজেরই প্রচুর পরিমাণে ঘৃণা হচ্ছে।
– সকলের কাছে শুনেছিলাম আপনাদের বংশের বড় নাতি নাকি ছোটো বড় সকলকে সাহায্য করে বেড়ায়। সকলকে সম্মান আর স্নেহ করে। আজ তার নমুনা দিজের স্বচোক্ষে দেখতে পেলাম। এ বাড়িতে না আসলে তো জানতেই পারতাম না আপনাদের বাড়ির বড় নাতির আসল রূপ। আজ আমার একমাত্র ছেলেটাকে তো প্রায় মেরেই ফেলছিলো। এমন কি করেছিলো ইমন যে তুমি এতো জঘন্যভাবে ওকে মারছিলে হ্যা? (ইমন ভাইয়ের মা)
ইমন ভাইয়াকে নিয়ে ওনার এতো আদিক্ষেতা দেখে সারা শরীর রাগে জ্বলে উঠছিলো। যে মা নিজের ছেলের ব্যাপারেই সতর্ক না সে মা আবার কেমন মা? তার থেকেও রাগ উঠছিলো ইফতি ভাইয়াকে নিয়ে বলা আজবাজে কথা শুনে। মুখ খুলতেই ইফতি ভাইয়া আমাকে ইশারা করে চুপ করতে বললো। ইফতি ভাইয়ার অসহায় চেহারা দেখে আমার বুক ফেটে কান্না আসছিলো। ঠোঁট কামড়ে নিজের কান্না আটকানোর চেষ্টা করলাম।
🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁
রাত ঠিক ৩ টায় বাড়ির সকলে ড্রয়ইং রুমের সোফার উপর বসে আছে। সামনে আমি আর ইফতি ভাইয়া দাঁড়ানো। ইমন ভাইয়াকে তার মা মুখের কাটা ছেড়া জায়গায় ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে। বড় চাচ্চু আর বাবা দুইজনে আমার আর ইফতি ভাইয়ার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যে ভয়ে আমার হাঁটু কাঁপছে। ইফতি ভাইয়ার দিকে এক নজর তাকিয়ে দেখি সে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
-ইভা
বড় চাচ্চুর ডাকে তার দিকে ফিরে তাকালাম।
– জ্বী বড় চাচ্চু।
– এবার আমাকে সব সত্যি কথা খুলে বলো। ইফতি কেনো ইমনকে মারছিলো? আর এতো রাতে তুমিই বা ওখানে কি করছিলে? আমি সব সত্যিটা শুনতে এবং জানতে চাই। আশা করি তুমি আমাকে নিরাশ করবে না।
বড় চাচ্চুর কথায় আমার ভয় আরও বেড়ে গেলো। কি জবাব দেবো আমি? ইমন ভাইয়ার কথা বলে দিলে কেউই এসব বিশ্বাস করবে না। সবার রাগ আর সন্দেহ এখন সম্পূর্ণভাবে ইফতি ভাইয়ার উপর। যে করেই হোক ইফতি ভাইয়াকে আমার বাঁচাতেই হবে। ইফতি ভাইয়ার দিকে তাকাতেই ইফতি ভাইয়া সত্যি কথাটি না বলতে ইশারা করলো। কেননা ইমন ভাইয়া যেমন বোকা সোকা চেহারা নিয়ে সকলের মাঝে ছিলো কেউই ইমন ভাইয়াকে অবিশ্বাস তো দূরের কথা রাতের ঘটনাটি বললেও বিশ্বাস করবে না। ইমন ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি সে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে আমাকে চুপ থাকতে ইশারা করলো। আমার সারা শরীর রাগে জ্বলে যাচ্ছিল। মানুষ এতোটা জঘন্য কি করে হতে পারে তা হয়তো ইমন ভাইয়াকে না দেখলে জানতামই না। জানি না এর মধ্যে আর কি কি জঘন্য কাজ লুকিয়ে আছে।
– কি হলো জবাব দাও (বড় চাচ্চু)
বড় চাচ্চুর কথায় এখনো চুপ করে আছি। কি বলবো কিছুই মাথায় আসছে না। বড় চাচ্চু ইমন ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললো,
– আমি বুঝতে পেরেছি ওদের দুইজনের মধ্যে কেউই সত্যি কথাটা বলবে না। আশা করি ইমন তুমি আমায় সত্যি কথাটা জানাবে।
বড় চাচ্চুর কথা শুনে আমি আর ইফতি ভাইয়া দুজনেই চমকে গেলাম। না জানি এই অসভ্য টা কি কি বানিয়ে বলবে বড় চাচ্চুকে। ইমন ভাই ইনোসেন্ট ভাব নিয়ে একবার আমার দিকে আরেকবার ইফতি ভাইয়ার দিলে তাকালো।
– ওদের দিকে তাকিয়ে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। ইফতি আর কখনো তোমাকে মারা তো দূরের কথা জীবনে আর তোমার ধারে কাছেও আসবে না। তুমি চিন্তা করো না। শুধুমাত্র আমার কথার জবাব দাও (বড় চাচ্চু)
বড় চাচ্চুর কথায় ইমন ভাই মাথা নিচু করে বলতে লাগলো,
– রাতে ঘুম আসছিলো না বলে বারান্দায় দাড়িয়ে ছিলাম । হটাৎ করে তালগাছের নিচে দুইজন মানুষকে দেখে ভাবলাম হয়তো চোরটোর বাড়িতে ঢুকেছে। আমি ভেবেছিলাম আমার চাচাতো বোনের নানুবাড়ি তাহলে আমার নানুবাড়িই তো। আল্লাহ না করুক যদি চুরি বা ডাকাতি এমন কিছু হয়ে যায় তাহলে নওশিন আপুর শশুর বাড়ি থেকে কি জবাব দেবে তারা? তাই দৌড়ে নিচে গেলাম চোরগুলোকে ধরতে। কিন্তু নিচে যেতেই ইফতি ভাই আর ইভাকে দেখে চমকে গেলাম। গিয়ে দেখলাম ওরা দুইজন দুইজনকে জড়িয়ে ধরে আছে। আমি ইফতি ভাই বলে ডাকতেই তারা একে ওপরকে ছেড়ে দিয়ে ইফতি ভাই আমার কলার টেনে বললো যদি তাদের কথা কাউকে বলি তাহলে আমার অবস্থা নাকি খারাপ করে দেবে। আমাকে ইফতি ভাই আরও বলেছে যে বাড়ি থেকে যেনো কালকের মধ্যেই চলে যাই। কিন্তু নওশিন আপুকে না দেখে আমি কিভাবে যাই তাই “না” বলার কারণে আমাকে গাছের সাথে ধাক্কা মেরে গলা টিপে ধরে (ইমন ভাই)
ইমন ভাইয়ার পদে পদে প্রতিটা মিথ্যা কথায় আমার সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছিল। দাঁত কিড়মিড় করে কিছু বলতে যাচ্ছিলাম হুট করে কেউ একজন আমার গালে চর বসিয়ে দেয়। গালে হাত দিয়ে পাশে তাকাতেই দেখি বাবা দাঁড়িয়ে আছে। বাবাকে দেখে যেনো আমি আকাশ থেকে পড়লাম। তাহলে কি বাবা এই মিথ্যুকটার কথায় আমাকে অবিশ্বাস করে ফেলেছে?
– তোর মতো মেয়ে আমার হওয়ার আগে কেনো আল্লাহ আমার মৃত্যু দিলো না? বাড়ির এতো মানুষের সামনে আজ আমায় এতোটা অপমান কিভাবে করলি তুই? বল আমায় (বাবা)
আমার চোখ থেকে একেক করে অশ্রু গড়াতে লাগলো। ইফতি ভাইয়া কিছু বলার আগেই বাবা ইফতি ভাইয়াকে থামিয়ে বললো,
– তোর মুখ থেকে আর কিছুই শুনতে চাই না আমি ইফতি। তোকে নিজের ছেলের মতো ভরসা করেছিলাম। আর তুইই আমার পিছে কুড়াল মেরে দিলি? আমার ভাবতেও লজ্জা লাগছে তুই নিজের চাচাতো বোনের সাথে ছিহ (বাবা)
খুব কষ্টে বাবাকে ডাকলাম,
-বাবা (আমি)
– চুপ। একদম চুপ। এই মুহুর্তে তুই আর আমার মেয়ে না। তোকে নিজের মেয়ে বলে পরিচয় দিতেও আমার ঘেন্না লাগছে (বাবা)
রাগ আর কষ্টে যেনো আমার বুকটা পাথর হয়ে গিয়েছিলো। এমনটাই কি হওয়ার ছিলো আমার সাথে? নিজের বাবা আমাকে অবিশ্বাস করছে?
– মেঝো মামা আমার মনে হয় তোমাদের কোনো ভুল হচ্ছে। ইমন বললো আর তোমরা বিশ্বাস করে ফেলছো? এমনও তো হতে পারে ইমন মিথ্যা বলছে (নাহিল ভাইয়া)
– কিহ? আমার ছেলে মিথ্যা বলছে? আমার ছেলে তোদের কোন দুনিয়ার শত্রু যে মিথ্যা বলে ফাঁসাতে চাইবে? নিজের চাচাতো ভাইকে তুই অবিশ্বাস করছিস নাহিল? শুনে রাখ তাহলে। আমি আমার ছেলেকে ওই ইফতির মতো করে মানুষ করি নি। আজ একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরেছে কাল তো এরা কি কি করবে কে জানে? ছিহ ভাবতেই লজ্জা লাগছে (ইমন ভাইয়ের মা)
ইমন ভাইয়ের মায়ের কথায় নিজের প্রতি প্রচন্ড লজ্জা আর অসহায় অনুভূতি হচ্ছিল। যদিও এসব কিছুই মিথ্যে তবুও নিজের উপর প্রচন্ড অপমানবদ কাজ করছিলো। কখনো ভাবি নি এমন একটা পরিস্থিতিতে আমাকে আর ইফতি ভাইয়াকে পড়তে হবে।
– দেখুন। এখনো কিন্তু সবকিছু ক্লিয়ার না যে কোনটা সত্যি আর কোনটা মিথ্যে। প্রমাণ ব্যতীত আমাদের কাউকেই দোষারোপ করা উচিত নয় (দাদুভাই)
– কি বলছেন আপনি এসব? আপনারা নিজেদের বাড়ির ছেলে মেয়েকে বিশ্বাস করছেন আর আমার ছেলে দুই দিনের মেহমান তাকে অবিশ্বাস করছেন? আরে আজব তো। এরকম মেয়ে আপনারা রেখেছেন আমি থাকলে আগুনে পুরিয়ে দিতাম।
ইমন ভাইয়ের মায়ের কথাগুলো প্রচন্ড কষ্ট দিচ্ছিল। আজ পর্যন্ত কখনো এমন কথা কারে কাছ থেকে শুনি নি।
– সেট আপ আন্টি। আমি আমার ভাই আর বোনকে ভালো করেই চিনি। ওরা কখনোই এমনটা করবে না সেটা আপনার থেকে আমরা বেশি ভালো জানি। আর আপনি,,,,,(ইলমা)
-চুপ থাকো ইলমা। তোমার ভাই এমনিতেই জঘন্যতম একটা কাজ করে ফেলেছে। আমরা সেই চৌধুরী বংশ যেই চৌধুরী বংশের কোনো লোক আজ পর্যন্ত কোনো অপরিচিত লোকের গায়ে হাতও তুলি নি। সেখানে তোমার ভাই নিজের বাড়ির আত্মীয়র গায়ে হাত তুলেছে। এমনিতেও তোমার ভাইয়ের জন্য আমাকে অনেক লজ্জায় পড়তে হয়েছে। দয়া করে তুমি আর লজ্জায় ফেলো না (বড় চাচ্চু)
বড় চাচ্চুর কথায় ইলমা একদম চুপ হয়ে গেলো। আমি অসহায় দৃষ্টিতে একবার নাহিল ভাইয়া আরেকবার ইলমা আর একবার দাদুভাইয়ের দিকে তাকাচ্ছি। তাদের চোখই বলে দিচ্ছিলো যে তারা আমাকে আর ইফতি ভাইয়াকে বিশ্বাস করে ওই ইমন ভাইকে না। কিছুক্ষণ ধরে ইমন ভাইয়া তার মায়ের কানে কি যেনো বলছিলো। কিছু একটা বলায় তার মায়ের মুখ পুরোটাই অবাক হয়ে গেলো। কিন্তু তবুও তিনি নিজেকে সামলে বাবাকে বললেন,
– ভাই আপনার সাথে আর বড় ভাইয়ের সাথে কি আমি একটু আলাদা ভাবে কথা বলতে পারি?
ইমন ভাইয়ের মায়ের কথায় বাবা আর বড় চাচ্চু সায় দিলো। তারপর তারা তিনজনে বড় চাচ্চুর রুমে চলে গেলো। এই ফাঁকে নাহিল ভাইয়া আর ইলমা আমার আর ইফতি ভাইয়ার কাছে এসে বললো,
– ইভা বোন আমার আমাকে সব সত্যি টা বল। তোরা ওখানে কি করছিলি? কেউ তোদের বিশ্বাস করুক বা না করুক আমরা করি তো (নাহিল ভাইয়া)
– নাহিল ভাইয়া, ইলমা বিশ্বাস করো তোমরা ইমন ভাই যা বলেছে সব মিথ্যে বলেছে। আমরা ওখানে এমন কিছুই করতে যাই নি। দয়া করে আমাদের বিশ্বাস করো (আমি)
নাহিল ভাইয়া আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
– আমরা তোদের বিশ্বাস করি ইভা। আর আজীবন করবো। যে যাই বলুক না কেনো।
শেষের কথাটা নাহিল ভাইয়া ইমন ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো। বড় কাকি আর মা চুপচাপ সোফায় বসা ছিলো। তাদের চোখের পলকও পড়ছিলো না। ইফতি ভাইয়ার সারা মুখে ভয়ের ছাপ দেখতে পাচ্ছিলাম। বেশ খানিকক্ষণ পর বাবা, বড় চাচ্চু আর ইমন ভাইয়ের মা রুম থেকে বের হয়ে সোফায় বসলো।
– তাহলে এবার আসল কথায় আসা যাক। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি কালকের মধ্যেই ইভা আর ইমনের বিয়ে দেব। আংটি পড়া থেকে শুরু করে আকদ পর্যন্ত সব কিছুই কালকেই সমাপ্তি হবে। আর উঠিয়ে নেওয়ার পর্ব ইভার এইচ.এস.সি শেষে হবে ( বড় চাচ্চু)
বড় চাচ্চুর কথায় আমার মাথার উপর যেনো আকাশ ভেঙে পড়েছিলো। বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি বাবাও বেশ শান্ত-শিষ্ট ভাবেই বসে ছিলো।
– এসব তুমি কি বলছো? ইভার উত্তর জানার আগেই তোমরা ইভার সাথে ইমনের বিয়ে ঠিক করে ফেলেছো? এতটা কঠোর তোমরা হয়ো না। আমি আমার নাতনির উপর এতো বড় অত্যাচার হতে দেব না (দাদুভাই)
– প্লিজ বাবা চুপ থাকো। এমনিতেই অনেক ঝামেলা সৃষ্টি হয়ে গেছে। এতো কিছুর পরও যে ইমন ইভাকে বিয়ে করতে চাইছে সেটা আমাদের জন্য কি ভালো না? (বাবা)
– হ্যা আমি বুঝতে পারছি কিন্তু তাই বলে ইমনের সাথেই বিয়েটা কেনো? আমি আর তোমাদের মা তো অনেক আগে থেকেই ইভা আর ইফতির বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলাম। (দাদুভাই)
দাদুভাই এর কথায় আমি তার দিকে তাকালাম। উপস্থিত সকলেই দাদুভাইয়ের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রয়েছে।
– কিন্তু আমি চাই না ইভা আর ইফতির বিয়ে হোক। আমাদের বংশে আজ পর্যন্ত পরিবারের মধ্যে কারো বিয়ে হয় নি আর আমরা চাই না ভবিষ্যতেও হোক। এতে একে অপরের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট হয়। তাছাড়া এখন যদি হঠাৎ করেই আমরা ওদের বিয়ে দেই তাহলে নানান লোকে নানান ধরণের কথা বলবে। তারা ভাববে ইভা আর ইফতির ভেতর কোনো খারাপ সম্পর্ক ছিলো যার ফলে আমরা তাদের বিয়ে দিয়েছি। আর আমি চাই না আমাদের বংশের বিন্দুমাত্র নাম খারাপ হোক ( বাবা)
আমি কাঁদতে কাঁদতে বাবার পা জড়িয়ে ধরলাম।
– প্লিজ বাবা এমন করো না। তুমি আমাকে এতোটা অবিশ্বাস করো না। আমি ইমন ভাইকে বিয়ে করতে পারবে না। ওনাকে আমি একটুও পছন্দ করি না (আমি)
আমার কথায় ইমন ভাইয়ের মা কিছু বলতে গেলেই ইমন ভাইয়া তাকে থামিয়ে দেয়। বাবা আমার দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে অন্য দিকে ফিরিয়ে নেয়। কেনো বাবা? এতোটা অবিশ্বাস কেনো? তাহলে কি একমাত্র মেয়ে হিসেবে এখনো আমি তোমার বিশ্বাস জয় করতে পারলাম না?
– হয়েছে ইভা উঠে পড়ো। যতোই বলো না কেনো আমাদের ডিসিশনই শেষ ডিসিশন। আর ইফতি। তোমার ব্যপারে আমি কালকেই তোমার মেডিকেল হোস্টেলে কথা বলবো। কালকের মধ্যেই তুমি তোমার ব্যাগ পত্র গুছিয়ে হোস্টেলে চলে যাবে আর ডাক্তার হওয়া পর্যন্ত তুমি আমাদের পরিবারের কারো সাথেই কোনো প্রকার যোগাযোগ করতে পারবেনা। কথাটা মনে রেখো (বড় চাচ্চু)
বড় চাচ্চু কথাটা বলেই রুমে চলে গেলো। বড় চাচ্চুর পিছে পিছে বড় কাকিও রুমে চলে গেলো। বাবা আর মা দুজনেই আমার সামনে থেকে উঠে চলে গেলো। একে একে সকলেই যার যার রুমে চলে গেলো। দাদুভাই আর দাদুমনি যাওয়ার আগে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
– চিন্তা করো না দাদুমনি। আল্লাহ আমাদের সাথেই আছে। কোনো না কোনো ব্যবস্থা নিশ্চয়ই হবে।
ফ্লোরে বসে আমি এখনো অঝোরে কেঁদেই চলছি। এসবই কি হওয়ার ছিল আমার ভাগ্যে? ভাগ্য এতোটা নিষ্ঠুর কেনো হলো? ইলমা আমাকে ধরে রুমে নিয়ে এলো। ড্রয়ইং রুমে এখন ইফতি ভাইয়া আছে।আর নাহিল ভাইয়া বড় চাচ্চুর রুমে তাকে বোঝাতে গেছে। রুমে এসেও আমি পাগলের মতো চিৎকার করে কাঁদতে লাগলাম।
– আল্লাহ ওই ইমনের সাথে বিয়ে হওয়ার আগে আমার মৃত্যু দিও খোদা। আমি ওর সাথে সারাটাজীবন কি করে থাকবো (আমি)
কাঁদতে কাঁদতে পাগলের মতো এসব বকছিলাম। আমার দেখা দেখি ইলমাও কাঁদতে লাগলো।
– কাঁদিস না বোন আমার। সব ঠিক হয়ে যাবে। দেখবি আল্লাহ আমাদের কোনো না কোনো রাস্তা দেখিয়ে দিবে।
ইলমার কথায়ও যেনো আমার শান্ত হওয়ার কোনো নাম নেই। পাগলের মতো নিজের চুল ছিড়তে লাগলাম আবার আবোল তাবোল বলে কাঁদতে লাগলাম। আমার কান্না দেখে ইলমা ভয় পেয়ে গেলো। ইলমা যতবার আমাকে শান্তনা দিতে আসছিলো ততবার চিৎকার করে ওকে দূরে ঠেলে দিচ্ছিলাম। নিজের উপর নিজেরই যেনো কোনো কন্ট্রোল ছিলো না।
– ইভা। বোন আমার শান্ত হো প্লিজ। কিছুই হবে না আল্লাহর উপর ভরসা রাখ।
ইলমার কথা যেনো আমার কানেই ঢুকছিলো না। হঠাৎই ইফতি ভাইয়ার কথা মনে পড়তেই আমার পাগলামি যেনো আরও বেড়ে গেলো।
– ই-ইফতি ভাইয়া। ইফতি ভাইয়া কোথায় ইলমা? আমাকে ওর কাছে নিয়ে চল প্লিজ। বড় চাচ্চু ওকে আমাদের থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে কেনো ইলমা? ওর তো কোন দোষ নেই। সব দোষ ওই ইমনের। ওর মিথ্যা কথার জন্যই আজ ইফতি ভাইয়াকে কতই না অপমান সহ্য করতে হলো।
কথাটা বলেই ধপাস করে ফ্লোরে বসে কাঁদতে লাগলাম। ইলমা আমার কাছে আসতেই ওকে ধাক্কা দিয়ে রুমের বাইরে চলে গেলাম। ইফতি ভাইয়ার রুমে গিয়ে তাকে না দেখতে পেয়ে ছাদে দৌড়ে গেলাম। ছাদে গিয়ে দেখি ইফতি ভাইয়া দাঁড়িয়ে আছে আকাশের পানে চেয়ে।
– ইফতি ভাইয়া
আমার ডাকে ইফতি ভাইয়া পেছনে তাকালো। ইফতি ভাইয়া দুইচোখে পানি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। ইফতি ভাইয়া আমাকে দেখে তার দুই হাত মেলে দিতেই দৌড়ে গিয়ে ইফতি ভাইয়ার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। এই মুহূর্তে এই জায়গাটা ছাড়া যেনো আর কোথাও আমার শান্তি নেই। আমি ঠোঁট কামড়ে ইফতি ভাইয়ার বুকে কেঁদেই চলছি। ইফতি ভাইয়ার চোখের পানিও আমার গালে এসে পড়ছিলো। এই প্রথম ইফতি ভাইয়াকে আমি কাঁদতে দেখলাম।
– আমি তোকে হারাতে পারবো না ইভা। তোকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। দরকার হলে সবার অগোচরে তোকে এখান থেকে নিয়ে পালিয়ে যাবো তবুও তোকে অন্য কারো হতে দেবো না।
ইফতি ভাইয়ার কাঁপা কাঁপা গলায় কথাটা শুনে আরো জোড়ে তাকে জড়িয়ে ধরলাম।
ছাদের পেছনেই ইলমা আর নাহিল ভাইয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব দেখছিলো। চৌধুরী বংশের অন্য কেউ এদের মেনে নিতে না পারলেও ইভা আর ইফতির ভালোবাসা যেনো তাদের কাছে সর্বচ্চো সুখের কারণ। তাদের আগামী পথের জীবনে কি হতে চলেছে তা কেউ জানে না। কিন্তু তাদের নতুন সম্পর্ক কি এতো সহজেই শেষ হয়ে যাবার মতো? ভালোবাসা কি এতোই ছোটো?

চলবে,,,,,,,,,🫶

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here