কাজললতা পর্ব: ৫ লেখিকা:ইভা আক্তার

0
135

#কাজললতা
পর্ব: ৫
লেখিকা:ইভা আক্তার।

🍁🍁🍁
ইফতি ভাইয়ার এই সামান্য কথাটিতে যেনো আমার বুকের মধ্যে তোলপাড় শুরু করলো। আমি জানি ইফতি ভাইয়া এখন আমায় বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে বাবা নইলে মায়ের কাছে আজকের ব্যাপারে নালিশ করবে।
গাড়িতে এসি বন্ধ। তবুও কেনো জানি না আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিল। হয়তো বা ভয়ে। ইফতি ভাইয়া তার নিজের মতো গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। একবারো নয়তো আমার দিকে তাকালো, নয়তো কথা বললো। ইফতি ভাইয়াকে দেখে মনেই হচ্ছিল না যে গাড়ির পিছনের সিটে কেউ বসে আছে। হুট করেই ইফতি ভাইয়া গাড়ি ব্রেক করলো। চারপাশে তাকিয়ে দেখি বাড়ি পৌঁছে গেছি। কিন্তু আমার এক পা-ও গাড়ি থেকে নামতে চাইছিলো না। এই বুঝি ইফতি ভাইয়া গিয়েই আজকের ব্যাপার নিয়ে আব্বুকে সব বলে দিবে।
“নামছিস না কেনো?” (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার ধমকে আমার হুশ ফিরে আসলো। তড়িঘড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে গেলাম।
“যা বাসায় যা। আমিও চলে যাচ্ছি ” (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার চলে যাওয়ার কথা শুনে যেনো আমার খুশিতে নাচতে মনে চাইছিলো। কিন্তু ইফতি ভাইয়ার সামনে এটা করা যাবে না। নইলে হয়তো চিৎকার করে বাবাকে ডেকে এখানেই সব বলে দিবে। আমিও ইফতি ভাইয়াকে কিছু না বলেই বাড়ির ভিতরে হাঁটা দিলাম। ইফতি ভাইয়াও গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো। বাসায় এসে ধুম ধারাক্কা ডান্স দিলাম। ডান্স করে হাঁপিয়ে যাওয়ার পর পাক্কা এক ঘন্টা পর ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসলাম। হঠাৎ করেই ফোনের আওয়াজ পেয়ে ফোন তুলে দেখলাম ফোনের স্কিনে ‘ইলমা’ নাম ভেসে উঠেছে। ফোনটা রিসিভ করেই ওপাশ থেকে ইলমা বললো,
– কিরে তুই ঠিক আছিস তো? ভাইয়া মেঝো চাচ্চুকে নালিশ করেছে নাকি ? মেঝো চাচ্চু আর চাচি কি তোকে বকেছিলো? তুই কি কেঁদেছিলি ? কিছু বলছিস না কেনো আমি তো টেনশনে মরেই যাচ্ছি।
-আরে থামবি তো। আমাকে বলতে তো দে (আমি)
-আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি বল কি হয়েছে? (ইলমা)
-কিছুই হয় নি। নয়তো ইফতি ভাইয়া কাউকে আমার নামে নালিশ করেছে। নয়তো আমায় ইফতি ভাইয়া বকেছে। (আমি)
-কি বলছিস তুই? ভাইয়া কাউকে নালিশ দেয় নি? এটা কি করে সম্ভব। তুই সত্যি বলছিস তো? (ইলমা)
-আরে হ্যা বাবা আমি সত্যি বলছি। (আমি)
-তাহলে কি হয়েছে খুলে বল তো আমায়? (ইলমা)
গাড়িতে উঠা থেকে শুরু করে বাড়িতে নামিয়ে দেওয়া পর্যন্ত ইলমাকে সব খুলে বললাম।ইলমা তো শুনে চরম অবাক হয়ে গেলো।
– বিশ্বাস হচ্ছে না। ভাইয়া কোনো নালিশও করি নি আবার তোকে বকেও নি। আশ্চর্য তো (ইলমা)
-কেন। আমাকে বকলে আর নালিশ করলে বুঝি খুব ভালো লাগতো? আনন্দ করতি? (আমি)
-আরে ধুর না বোকা। এমনেই অবাক হলাম।
-ওহ। আচ্ছা তোর ওই এনাকন্ডা ভাই কই? (আমি)
-আসে নি তো এখোনো। (ইলমা)
-কি বলছিস তুই? সেই এক ঘন্টা আগে আমাকে নামিয়ে দিয়ে বললো বাসায় যাচ্ছি আর এখনো বাসায় যাই নি? (আমি)
-হুমম। বাদ দে ছেলে মানুষ। কই কই যায় তার ঠিক আছে? (ইলমা)
তারপর আমরা কিছুক্ষণ কথা বলার পর ফোন রেখে দিলাম। মনে মনে দীর্ঘশ্বাস নিচ্ছিলাম। এবারের মতো বেঁচে গেছি। আল্লাহ সুবহানাল্লাহ একটু হলেও ওই ইবলিশটাকে মায়া – দয়া দিয়েছে। মনে মনে আজকের ঘটনার কথা ভাবছিলাম। এভাবে কি কেউ কাউকে এতো মানুষের সামনে প্রপোজ করতে পারে। ভাগ্যিস স্যার বা মেডামরা কেউ দেখে নি। নইলে আজ ভুমিকম্প হয়ে যেতো। তবে চিন্তার বিষয় হচ্ছে কলেজে উঠার পর থেকে যে ছেলেই আমাকে প্রপোজ করে তাকে এর পর দিন থেকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। জানিনা এসব কি হচ্ছে।
🍁🍁🍁🍁
-কেমন আছো?(ফাহিম)
ফাহিমের কথা শুনে ভাবনার জগৎ থিকে ফিরে এলাম। প্রপোজের সেই দিনের পর থেকে ফাহিমকে আজ পর্যন্ত দেখি নি।
-আলহামদুলিল্লাহ তুমি?(আমি)
-আলহামদুলিল্লাহ। (ফাহিম)
ফাহিম এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো,
-আচ্ছা উনি কি এখানে আছেন? (ফাহিম)
ফাহিমের কথা শুনে হকচকিয়ে গেলাম। ওর চোখে মুখে স্পষ্ট ভয়ের ছাপ।
-উনি মানে? কার কথা বলছো? বুঝলাম না ঠিক (আমি)
ফাহিম কিছু বলার আগেই আমার পিছের দিকে একবার তাকিয়ে হুড়মুড় করে সেখান থেকে প্রত্যাখ্যান করলো। আমি ফাহিমের যাওয়ার পানে তাকিয়ে ছিলাম। ফাহিমের চলে যাওয়ার কারণ খুজতে পিছনে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি নীল শার্ট পড়া ইফতি ভাইয়া দাড়িয়ে আছে। কিন্তু ফাহিম ইফতি ভাইয়াকে দেখে কেনো ভয় পাবে? ইফতি ভাইয়াকে দেখে ভয় পাবার তো কোনো কারণ নেই। ইফতি ভাইয়া আমার সামনে এসে বললো,
– তুই এখানে দাড়িয়ে কেনো? তোকে না বলেছিলাম ছুটি হওয়ার সাথে সাথে কলেজের গেটের সামনে থাকবি? আর ওই ছেলে কে? ওর সাথে কি তোর? কি চাস তুই মেঝো চাচ্চুকে গিয়ে বলবো আমি? (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার কথা শুনে প্রচন্ড ভয় পেয়ে গেলাম।
– না না ইফতি ভাইয়া। প্লিজ এমন করো না । আমি তোমাকে আসল ঘটনা বলছি শুনো,,,(আমি)
– চুপ থাক।তোর কাছ থেকে কিছু শুনতে চাই না। ওয়ার্নিং দিয়ে রাখছি। যদি কোনো ছেলের দিকে তাকাসও তাহলে তোকে পানিতে চুবিয়ে মারতে ১ মিনিটও লাগবে না। আমি চাই না তোর জন্য আমাদের বংশের নাম খারাপ হোক। (ইফতি ভাইয়া)
আমি ভীত চোখে মাথা উপর নিচ করলাম। ইফতি ভাইয়া একটা ধমক দিয়ে বললো,
– যা গিয়ে গাড়িতে বস। (ইফতি ভাইয়া)
আমি ইফতি ভাইয়ার ধমকে তাড়াতাড়ি হেটে গাড়ির পেছনে গিয়ে বসলাম।
– এই তোর সাহস কিভাবে হয় গাড়ির পিছনে বসার হ্যা? তুই আরাম করে গাড়ির পিছনে বসবি আর আমি ড্রাইভ করবো এটা ভাবলি কেমনে? তুই কি এটা ভাবছিস সবাই যাতে ভাবে আমি তোর ড্রাইভার?(ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়াকে কিছু বলার আগেই ইফতি ভাইয়া চোখ রাঙিয়ে ইশারা করে আমায় গাড়ির সামনের সিটে গিয়ে বসতে বললো।
🌸🌸🌸🌸
খুব বড় সড়ো একটা রেস্টুরেন্ট। চারিদিকে দিনের বেলায়ও বিভিন্ন লাইট চকচক করছে। ওয়েটার এসে নানা ধরণের খাবার আমাদের সামনে পরিবেশন করে গেলো। সবই আমার পছন্দের খাবার। ইফতি ভাইয়া বেশির ভাগই নিজের জন্য ভেজিটেবল অর্ডার করেছে । করবেই তো মেয়েদের মতো যে ইফতি ভাইয়া তার ফিটনেস নিয়ে খুব সচেতন। এই প্রথম ইফতি ভাইয়া আর আমি সম্পূর্ণ একা একটা রেস্টুরেন্টে খেতে বসেছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে রেস্টুরেন্টে খাওয়ার জন্য চামচ, কাটা চামচ আর চাকু দিয়ে কেটে তারপর খেতে হবে। কিন্তু আমি তো এগুলো দিয়ে খেতে পারি না। হাত দিয়ে যে খাবো তারও সিস্টেম নেই। যদি হাত দিয়ে খেতে যাই তাহলে আশেপাশের মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে থাকবে। সামনে মুরগীর আস্ত ফ্রাইড রেখে চামচ দিয়ে ফাস্টফুডগুলো খাচ্ছি। আর ইফতি ভাইয়া নিজের মতো করে চামচ আর কাটা চামচ দিয়ে মাংসের টুকরো করছে।
– কি হলো খাচ্ছিস না কেনো। খুবই তো চিকেন ফ্রাইড অর্ডার করলি
এখন কি হলো তোর? (ইফতি ভাইয়া)
– আসলে ইফতি ভাইয়া পেট ভরে গেছে। তুমি এটা খেয়ে নেও (আমি)
– আমার সাথে মসকারা করছিস তুই? তোর কি আমাকে দেখে পেটুক মনে হয়? নিজের খাবার নিজে খা। একটু যদি বেঁচে থাকে তাহলে বিল আমি পরিশোধ না করে তোর ঘাড়ে চাপিয়ে দিবো একদম। (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার কথায় চামচ নিয়ে চিকেন কাটতে লেগে পড়লাম। হুট করে চিকেনের টুকরো কাটতে গিয়ে চামচ টা নিচে পড়ে গেলো। চামচ পড়ার শব্দে আশেপাশের সবাই ড্যাবড্যাব করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । ইফতি ভাইয়া চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি ইফতি ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসি দিলাম।
চিকেনটা বাদ দিয়ে ভেজিটেবল নেওয়ার আগেই ইফতি ভাইয়ার তার চিকেনের প্লেটটা আমার দিকে এগিয়ে দিলো।
– চিকেন কাটতে পারছিস না এটা আমাকে বললেই তো হতো। এতো নাটক করার কি আছে? (ইফতি ভাইয়া)

চলবে,,,,,,🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here