#কাজললতা
#লেখিকা_ইভা_আক্তার
পর্ব:১৫
🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁
সারাটারাত না ঘুমিয়ে পার করে দিয়েছি আমি আর ইলমা। ফজরের আজান দিতেই আমি আর ইলমা নামাজ পড়ে এখন বিছানায় বসে আছি। কিছুক্ষণ পর নাহিল ভাইয়া, ছোটো চাচ্চু আর ছোটো কাকিও রুমে ঢুকলো। ছোটো চাচ্চু আর ছোটো কাকিকে দেখে আমি আর ইলমা দুজনেই অবাক হয়ে গেলাম।
– ছোটো চাচ্চু, ছোটো কাকি তোমরা এখানে কি করে? (ইলমা)
– ছোটো মামাকে কাল রাতেই ফোন করে কালকের রাতের সব ঘটনা খুলে বলেছিলাম। এজন্যই ছোটো মামা আর মামি আজই চলে এসেছে। (নাহিল ভাইয়া)
ছোটো চাচ্চুকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম। ছোটো চাচ্চু আর ছোটো কাকি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
– চিন্তা করিস না মা। নাহিল আমাদের সবই বলেছে। আমরা তোর পাশে আছি। বড় ভাইয়া আর মেঝো ভাইয়াকে অনেক বুঝিয়ে বলেছি কিন্তু তাও তারা মানছে না। তাদের সিদ্ধান্ত আজকেই তোর আর ইমনের বিয়ে দিবে। তবুও আমি চেষ্টা করবো বিয়েটা আটকাতে (ছোটো চাচ্চু)
– ছোটো চাচ্চু আমি ওই ইমনকে বিয়ে করতে পারবো না। বড় চাচ্চুকে কালকে রাতে ও যা যা বলেছে সবকিছুই মিথ্যা বলেছে। ওর জন্য আজ ইফতি ভাইয়াকেও আমাদের সকলের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে হবে (আমি)
– এমন কিছুই হবে না ইভা। ইফতি এতো সাধারণ কোনো ছেলে না। ও কখনোই এতো সহজে সবকিছু মানবে না। নিশ্চয় ইফতি কোনো না কোনো উপায় খুঁজে বের করবে (ছোটে কাকি)
ইতিমধ্যে রুমের বাইরে বাড়ির সকল মানুষের আওয়াজ টের পাচ্ছিলাম। রুমের ভেতর আমি, ইলমা আর নাহিল ভাইয়া বসে রয়েছি। ছোটো চাচ্চু গেছে ইফতি ভাইয়ার রুমে আর ছোটো কাকি গেছে নাস্তা বানাতে। কিছুক্ষণ আগেই ছোটো কাকি আমার জন্য নাস্তা নিয়ে এসেছিলো কিন্তু আমার চিৎকার চেঁচামেচিতে আর নাস্তা খাওয়াতে পারে নি। ইফতি ভাইয়াকেও নাকি রুমের ভেতর খাবার দিয়ে আসতে বলেছে বড় চাচ্চু । আমার দেখা দেখি ইলমা আর নাহিল ভাইয়াও সকালের খাবার খায় নি। হঠাৎ করেই ইফতি ভাইয়ার রুমের সামনে থেকে বড় চাচ্চুর চিৎকার চেচামেচির শব্দ শোনা যাচ্ছিল। বড় চাচ্চুর এতো জোড়ে চিৎকারে ইলমা আর নাহিল ভাইয়া ইফতি ভাইয়ার রুমের সামনে দৌড়ে গেলো। ওদের পিছু পিছু আমিও গেলাম তবে আমি গিয়ে আমার রুমের দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম। খানিকটা উঁকি দিতেই দেখলাম ইফতি ভাইয়া তার রুমের বিছানায় শুয়ে ল্যাপটপে মুভি দেখছে।
– ইফতি আমার কথা কি তোমার কানে যাচ্ছে না? সেই তখন থেকে বলছি ব্যাগ গুছাও তুমি এখনি ঢাকা ফিরে গিয়ে হোস্টেলে উঠবে।
বড় চাচ্চুর কথায় ইফতি ভাইয়ার হাবভাবের কোনো পরিবর্তনই হলো না। বড় চাচ্চুর চেহারা রাগে লাল বর্ণ ধারণ করে আছে।
– বেশি হয়ে যাচ্ছে কিন্তু ইফতি। তোমার প্রবলেমটা কোথায় হ্যা? এক্ষনি ব্যাগ গুছাও বলছি।
এবার ইফতি ভাইয়া হাই তুলতে তুলতে মুভিটা অফ করে বিছানায় বসে বললো,
– ডাক্তারি আমি পড়ছি তাই ডিসিশনটাও আমি নেব যে আমি কখন মেডিকেলে যাবো।
ইফতি ভাইয়ার কথায় সকলের চোখ কপালে উঠে গেলো। ইফতি ভাইয়া বড়দের মুখে তর্ক করেছে তাও আবার তার বাবার। জানি না বড় চাচ্চু এবার কি করবে। সকলকে অবাক করে দিয়ে বড় চাচ্চু শান্ত গলায় বললো,
– তুমি কি করতে চাইছো?
– এবার যেহেতু দাদুবাড়ি এসে দুটো বিয়ের দাওয়াত খাবো সেহেতু এই চান্সটা মিস করতে চাইছি না। বিয়েটা দেখে তারপরই আমি ঢাকা ফিরবো তার আগে না। যতই হোক চৌধুরী বংশের বড় নাতনি বলে কথা।
ইফতি ভাইয়ার কথায় রাগে আমার চিৎকার করতে ইচ্ছে করছিলো। এই সময়টাতেও কি ইফতি ভাইয়া মজা না করে পারে না?
– ঠিক আছে যাও তোমার কথা রাখলাম। কিন্তু শর্ত হচ্ছে তুমি কোনো সিনক্রিয়েট করতে পারবে না। কথাটা মাথায় রেখো।
বড় চাচ্চু কথাটা বলেই ইফতি ভাইয়ার রুম ত্যাগ করলো। একে একে সকলেই ইফতি ভাইয়ার রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আমিও রাগের মাথায় নিজের রুমে ঢুকে দরজাটা জোড়ে একটা ধাক্কা দিয়ে লাগলাম। এতো জোড়ে শব্দ পাওয়ায় ইলমা আর ছোটো চাচ্চু রুমে ছুটে এলো।
– কি হয়েছে ইভা? এতো জোড়ে দরজাটা কেনো লাগালি?(ছোট চাচ্চু)
আমি রাগের মাথায় নিজের চুল টেনে ধরে বললাম,
– বাবাকে বলো এক্ষনি বিয়ের ব্যবস্থা করতে। আমি এক্ষনি ইমনকে বিয়ে করবো। ফাস্ট।
– আচ্ছা আচ্ছা বলবো বলবো। এতো রাগের কি আছে? এই তো আর মাত্র দু তিন ঘন্টা পরই তোর বিয়ে হয়ে যাবে স্বয়ং ইমনের সাথে। এবার খুশি তো?
ছোটো চাচ্চুর কথায় রাগে দুঃখে চিৎকার করে বললাম,
– বের হও আমার রুম থেকে এক্ষনি এই মুহুর্তে। তোমাদের কাউকে যেনো আমি আর না দেখি।
আমার চিৎকারে ইলমা আর ছোটো চাচ্চু দৌড়ে রুম থেকে বের হতেই রুমের দরজা ঠাস করে লাগিয়ে বিছানায় বসে কাঁদতে লাগলাম। শেষমেষ এরাও আমার সাথে এমন একটা সিরিয়াস ব্যাপার নিয়ে মজা করছে? আমি কি সবার কাছেই এতো মূল্যহীন?
কিছুক্ষণ আগে ছোটো কাকি এসে একটা লাল রঙের শাড়ি হাতে দিয়ে গিয়েছিলো। ছোটো কাকিরও মুড অফ। বড় কাকি আর মাকে অনেক বুঝিয়েছে কিন্তু লাভ হয় নি। আয়নার সামনে শাড়িটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি। রাগে শাড়িতে থাকা সকল পুঁতিগুলো টেনে ছিড়ে ফেলেছি যেগুলো এখন ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে। শাড়িটা ফ্লোরে ছুড়ে মেরে যেই কামিজটা পড়াছিলাম সেটা পড়ে মাথায় বড়সড় একটা ঘোমটা দিয়ে নিচে ড্রয়ই রুমে গেলাম। আমাকে এরকম নরমাল কামিজে দেখে সকলেরই যে মেজাজ খারাপ হয়ে গেছে সেটা বুঝতে পেরেছিলাম কিন্তু তাতে আমার কোনো যায় আসে না। ইলমা আমাকে ধরে ইমন ভাইয়ের পাশে বসালো। ইমন ভাই বিয়ের একটা শেরওয়ানির পান্জাবী পড়া ছিলো। আমাদের সামনে বসে আছে কাজী সাহেব। হুট করে ইফতি ভাইয়া কাজী সাহেবের পাশে বসে পড়লো। ইফতি ভাইয়ার এমন কাজে বড় চাচ্চু রাগী চোখে ওর দিকে তাকালো।
– এটা কেমন ধরণের বেয়াদবি ইফতি? বড়দের সামনে এভাবে বসার মানে কি?
ইফতি ভাইয়া বড় চাচ্চুর দিকে একবার তাকিয়ে কাজী সাহেবকে বলতে লাগলো,
– কাজী সাহেব বিয়েটা পরানো শুরু করে দিন।
ইফতি ভাইয়ার কথায় কাজী সাহেব বিয়ে পরানো শুরু করে দিলো। ইফতি ভাইয়া যে কখনো এরকমটা বলবে তা ভাবতেও পারি নি।
– ইভা মা এবার তোমাকে কবুল বলতে হবে (কাজী সাহেব)
কবুল বলতে হবে? মানে বিয়েটা কি তাহলে ইমন ভাইকেই করতে হবে? কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই মাথা নিচু করে চোখের পানি ফেলছিলাম। কাজী সাহেব বারবার কবুল বলতে বলছিলো কিন্তু আমি চুপ করে ছিলাম। হঠাৎ কলিংবেল বাজার শব্দে ছোটো কাকি গিয়ে দরজা খুলে দিলো। দরজা খুলতেই চার পাঁচজন পুলিশ হনহন করে ভেতরে ঢুকে গেলো। পুলিশদেরকে দেখে উপস্থিত সকলের চোখ উপরে উঠে গেলো। সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মেইন পুলিশটি ইশারা করতেই দুই জন পুলিশ ইমন ভাইয়ের সামনে এসে দুই হাত ধরলো।
– আরে এসব কি হচ্ছে? আপনারা আমাকে কেনো ধরছেন? কি করেছি আমি? দেখছেন না আজ আমার বিয়ে (ইমন ভাইয়া)
– বিয়ে? আগে থানায় নিয়ে যাই সেখানে গিয়ে নাহয় বিয়ে করবেন (মেইন পুলিশ)
– থানা? কিসের থানা? আমার ছেলে থানায় কেনো যাবে? (ইমন ভাইয়ের মা)
– সেটা না হয় আপনার ছেলেকেই জিজ্ঞেস করুন। লন্ডনে এতো বড় কোম্পানির নাম করে আসলে কি কাজ করে (মেইন পুলিশ)
– এসব কি বলছেন আপনারা? কি হচ্ছে এখানে? ইমন কি কাজ করেছে যে আপনারা ওকে থানায় নিয়ে যাবেন? আর আপনাদের এখানে ডাকলোই বা কে? ( বাবা)
– আমি ডেকেছি।
ইফতি ভাইয়ার কথায় সকলে ইফতি ভাইয়ার দিকে তাকালো।
– তুমি ডেকেছো মানে? তুমি আমার ছেলেকে পুলিশদের হাতে কি বলে ফাসাঁতে চাইছো বলো? (ইমন ভাইয়ের মা)
– আমি আপনার ছেলেকে ফাসাঁতে চাই নি বরং আপনার ছেলে আমাকে আর ইভাকে ফাঁসিয়েছে। কোম্পানির নাম করে ড্রাগস পাচার আবার নারী পাচার করা আপনার ছেলের বর্তমানে আসল ব্যবসা (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার কথা শুনে সকলেই যেনো আকাশ থেকে পড়লো। সকলের চোখ ইতিমধ্যে বের হয়ে আসার উপক্রম। ইমন ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি তার পুরো চেহারায় ভয় এসে ভর করেছে। তার মানে ইফতি ভাইয়া ইমন ভাইয়ার এই জঘন্য কাজটার ব্যপারে আমাকে সতর্ক করেছিলো?
– সব মিথ্যে কথা। আমার ছেলে কখনোই এমন কাজে জড়াতে,,,,(ইমন ভাইয়ের মা)
বড় চাচ্চু ইমন ভাইয়ের মাকে কথা বলতে না দিয়ে ইফতি ভাইয়াকে বলতে লাগলো,
– ধরে নিলাম তোমার কথা সঠিক। কিন্তু তার প্রমাণ কি? কোন প্রমাণে তুমি ইমনকে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছ?
– নিজের ছেলে আর মেঝো ভাইয়ের মেয়েকে নিয়ে যখন বাড়ির দুই দিনের এক আত্মীয় প্রশ্ন তুললো তখন তো প্রমাণ চাইলে না বাবা। তাহলে আজ প্রমাণের জন্য কেনো লাফাচ্ছো? (ইফতি ভাইয়া)
ইফতি ভাইয়ার কথায় বড় চাচ্চু চুপ হয়ে গেলো। ইফতি ভাইয়া ইশারা করতেই ছোটো চাচ্চু রুমে গিয়ে তার ল্যাপটপ টা নিয়ে এসে কি যেনো বের করে সবাইকে দেখিয়ে বলতে লাগলো,
– এখানে স্পষ্ট প্রমাণসহ লেখা আছে যে ইমন বিশ বছর বয়স থেকে যে কোম্পানিটা চালু করেছিলো এবং তার মালিকও হয়েছিলো তা সম্ভব হয় বিদেশি এক ড্রাগস পাচারকারী কোম্পানির মাধ্যমে। ইমন চেয়েছিলো তার বন্ধুদের মতো সেও বড়লোক হতে। একারণে ইমন ড্রাগস পাচারকারীদের সাথে হাত মেলায় যার ফলে লোকগুলো তাকে ড্রাগস পাচারের জন্য গোপনীয় এক কোম্পানির মালিক বানায়।শুধুমাত্র তাই নয় বরং ড্রাগস পাচারকারী লোকগুলো নারী পাচার করা সহ বিভিন্ন নাইট ক্লাবেরও মালিক ছিলো যেখানে অশ্লীল কাজকর্ম ঘটতো। এখানেও ইমন শামিল ছিলো। বিশ্বাস না হলে আপনি নিজেই এগুলো চেক করুন।
ছোটো চাচ্চু কথাটা বলেই তার ল্যাপটপটা মেইন পুলিশের হাতে দিলো।পুলিশ লোকটি এক এক করে সকল কাগজ ল্যাপটপের মধ্য থেকে দেখতে লাগলো। তারপর কাকে যেনো ফোন করলো। কিছুক্ষণ পর পুলিশ লোকটি ফোনটা রেখেই তার পাশের দুইজন পুলিশকে ইশারা করতেই তারা গিয়ে ইমন ভাইকে ধরলো।
– আপনার ব্যপারে সব প্রমাণ এবার আমাদের হাতে মোঃ ইমন খান। চলুন এবার আমাদের সাথে থানায়। সেখানে গিয়ে না হয় নারী পাচার আর ড্রাগস পাচার করবেন। আপনার বাকি সদস্যদের তো ধরে ফেলেছি এবার আপনাকেও নাহলে আসল মজা বুঝাবো।
পুলিশের লোকগুলো ইমন ভাইকে নিয়ে যেতেই বড় চাচ্চু তাদের থামালো।
– দাঁড়ান।
বড় চাচ্চুর ডাকে পুলিশের লোকেরা দাঁড়াতেই বড় চাচ্চু হনহন করে গিয়ে ইমন ভাইয়ের গালে চর বসিয়ে দেয়।
– কেনো এমন করেছো তুমি? ইফতি আর ইভাকে কেনো ফাঁসিয়েছো? ওদের সাথে তোমার কিসের শত্রুতা বলো?
বড় চাচ্চুর চিৎকারে ইমন ভাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। ছোটো চাচ্চু পুলিশদের দিকে তাকিয়ে ইশারা করতেই পাশের এক পুলিশ তার গুলি বের করে ইমন ভাইয়ার মাথায় ঠেকালো। এটা দেখে সকলেই চিৎকার দিয়ে উঠলো।
– তারাতাড়ি উত্তর দে নাহলে মাথার খুলি উড়িয়ে দেব (পুলিশ)
ভয়ে ইমনের কপাল থেকে ঘাম বের হতে লাগলো।
-বলছি বলছি। আগে বন্দুকটা মাথা থেকে সরান।
ইমন ভাইয়ের কথায় ছোটে চাচ্চু ইশারা করতেই পুলিশরা বন্দুকটা নামালো। এরপর ইমন ভাই একেক করে সকল ঘটনা খুলে বলতে লাগলো যা শুনে সকলের চেহারায় স্পষ্ট রাগ ফুটে উঠেছিলো।
– ইফতি ভাইয়ের কারণে আমি ইভার ধারে কাছে তো দূরের কথা সামান্য একটু কথাও বলতে পারতাম না। রাতে যখন ইভার সাথে কথা বলতে যেতাম তখন দেখতাম ইফতি ভাই ইভার রুমের সামনে দাঁড়ানো। এরপর থেকে আমার মনে হতে লাগে ইফতি ভাই হয়তো ইভাকে পছন্দ করে। একারণে রাগের মাথায় ডিসিশন নেই এমন কিছু করবো যাতে ইফতি ভাইকে সবাই ঘৃণা করে আর এই ফাঁকে আমি ইভাকে বিয়ে করতে পারব (ইমন ভাই)
ইমন ভাইয়ের কথা শুনে তার মা দৌড়ে এসেই ইমন ভাইয়ের গালে একটার পর একটা চর বসাতে লাগলো। বড় ফুপ্পি গিয়ে ইমন ভাইয়ার মাকে খুব কষ্টে সেখান থেকে নিয়ে যায়। পুলিশরা ইমন ভাইকে নিয়ে চলে যতেই মেইন পুলিশটা ছোটো চাচ্চুর সাথে হ্যান্ডসেক করে বললো,
-ধন্যবাদ আপনাকে মিঃ আহসান চৌধুরী। আপনার জন্যই লন্ডনের এতো বড় বড় ক্রিমিনালরা ধরে পড়ে গেছে। সত্যিই আপনি একজন আদর্শ আইনজীবী।
– ধন্যবাদ আপনাকেও। আপনার জন্যই আজ আমার ভাতিজি বেঁচে গেছে। নাহলে জানি না এই ইমন ওর কি করতো। ইফতি সময়মতো আমাকে সব জানিয়েছে বলেই আমি লন্ডনে আমার এক বন্ধুকে সব খোঁজ নিতে বলি। আর বাকি সব ইফতি আর আমার সেই বন্ধুই করে। আমি তো শুধু মাত্র কাগজগুলো জোগাড় করি।
তারপর সেই পুলিশটাও আমাদের বাড়ি থেকে চলে যায়। সকলেই একেক করে ইফতি ভাইয়ার হাত ধরে কান্না করে ক্ষমা চাচ্ছিলো। বড় চাচ্চু আর বাবা ইফতি ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে ক্ষমা চায়।
– আমাকে মাফ করে দিস বাবা। তোকে ওই শয়তানটার কথায় কতই না ভুল বুঝেছি। মাফ করে দে আমাদের ইফতি (বাবা)
– আরে মেঝো চাচ্চু কি করছো কি তুমি? আমি তোমাদের ছেলের মতো। তোমরা আমার কাছে কেনো ক্ষমা চাচ্ছো বলো। (ইফতি ভাইয়া)
-হয়েছে হয়েছে এবার যে যার রুমে চলে যাও। আগের কথা মনে রেখে কোনো লাভ নেই। সব ভুলে যাও সবাই। যাও যে যার রুমে যাও। আর কাজী সাহেব চলুন আমি আপনাকে এগিয়ে দিয়ে আসি। (ছোটে চাচ্চু)
ছোটো চাচ্চুর কথায় সকলে একেক করে রুমে চলে গেলো। ছোটো চাচ্চু বিয়ে পড়াতে এসে হতভম্ব হওয়া কাজীকে পৌছে দিয়ে আসতে গেলো। আজ আমার মুখে সবচেয়ে সুখের এক হাসি। আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া আদায় করলাম । কেউ একজন একদৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে সেটা বুঝতেই পেছনে তাকিয়ে দেখি ইফতি ভাইয়া তার মুখে বিজয়ের হাসি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। রাতের সেই ফ্যাকাশে চেহারাটা আজ আনন্দ উচ্ছ্বাসে পরিনত হয়েছে ইফতি ভাইয়ার সেটা দেখেই বোঝা যাচ্ছিলো। এই অদ্ভুদ পুরুষটাকে এতো কেনো ভালো লাগে আমার? আগে কেনো এমন অনুভূতি হতো না? দুঃখের রেশ কেটে আবারো সুখের দেখা মিললো।এই সুখ সৃষ্টিকর্তা দীর্ঘস্থায়ী করে রাখবেন তো?
চলবে,,,,,,,,,,,,🌻
[আজকের পর্বটায় এতটুকুতেই ইমনের কাহিনী শেষ হয়ে গেছে বলে পর্বটা ছোটো হয়ে গেছে। চেষ্টা করবো যাতে রাতে আরেকটা পর্ব দিতে পারি। সবাইকে ধন্যবাদ ]