#কাজললতা #লেখিকা_ইভা_আক্তার #পর্ব_২১

0
201

#কাজললতা
#লেখিকা_ইভা_আক্তার
#পর্ব_২১

——————————————————————————————
সন্ধ্যা পার হয়ে রাত হয়ে গেলো। সকলে ইফতিদের বাড়িতে উপস্থিত থাকলেও অনুপস্থিত ছিলো একমাত্র ইভা। ইফতির জন্মদিন নিয়ে যার এতো প্ল্যান ছিলো সেই আজ নিখোঁজ। ইফতির দাবি যতক্ষণ না ইভা আসছে ততক্ষণ সে কেক কাটবে না। দেখতে দেখতে রাত দশটা বেজে গেছে তাও ইভার কোনো খবর নেই। সকলে ইভার মোবাইলে একের পর এক কল করেই যাচ্ছে তবুও ইভার মোবাইলের কোনো রেসপন্স পাওয়া যায় নি। শেষে বাধ্য হয়ে ছোটো চাচ্চু আর নাহিল ভাইয়া গেলো ইভার বাড়িতে। সেখানে গিয়েও তারা হতাশাগ্রস্ত হয়ে ফিরে এলো কেননা মেঝো চাচ্চুর বাড়ি ছিলো তালাবদ্ধ। এখন তাদের চিন্তার গতি যেনো আরও বৃদ্ধি পেয়ে গেলো। অন্যদিকে ইভার নিখোঁজ হবার খবর ইফতির কানে পৌঁছাতেই ইফতি প্রচন্ড পরিমাণে উত্তেজিত হয়ে গেলো। ইভাকে খোঁজার জন্য ইফতি তাদের বাড়ির নিচে নামতেই সামনে কিছু নীল রঙের ভাঙা কাচের চুড়ি আর ফেলানো একটা কেক দেখতে পেলো। ইফতির আর বুঝতে বাকি রইলো না যে এইসবকিছুই আসলে ইভার । আজ সকালেই ইফতি ইভাকে মেসেজে বলেছিলো ইফতির দেওয়া প্রথম সেই নীল শাড়িটা যেনো ইভা পড়ে। একারণে ইফতি সহজেই ধরতে পেরেছে যে এই চুড়ি ইভারই। রাত বারোটার মধ্যে ইফতি ঢাকা শহরের প্রায় থানায় ইভার নিখোঁজ হওয়ার রিপোর্ট লেখায়। কিছু কিছু থানার পুলিশরা জানায় চব্বিশ ঘন্টার আগে তারা কোনো রিপোর্ট লেখবে না। অবশ্য ইফতি একারণে অনেক ঝামেলাও করেছে। ইফতির সন্দেহ জাগে ইভার নিখোঁজ হওয়ার পেছনে সুহাসিনী বা শুভর কোনো হাত নেই তো? একারণে ইফতি সুহাসিনী এবং শুভর বাবাকে কল করে। আর তাদের বাবা ও মা বলে তারা নাকি সেই সন্ধ্যা ছয়টা থেকেই নিখোঁজ। তাদের নাকি ফোন বন্ধ। আর এর মাধ্যমেই ইফতির কাছে সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যায় যে ইভাকে অপহরণ করেছে তাও আবার সুহাসিনী এবং শুভ। এবার ইফতি শুধুমাত্র অপেক্ষায় আছে কখন শুভ এবং সুহাসিনীর নম্বর ওপেন হবে আর সেই এড্রেস ট্র্যাক করে ইফতি পুলিশ নিয়ে সেখানে যাবে। হতাশাগ্রস্ত হয়ে যখন ইফতি রাস্তার পাশের একটা বেঞ্চিতে বসেছিলো তখনই ওর ফোনে কোনো অচেনা নম্বর থেকে কল আসে। কলটা রিসিভ করতেই অপর পাশ থেকে তার এক পরিচিত গলা শুনতে পায়।
– কেমন আছো ইফতি?
– সুহাসিনী তুমি?
– হ্যা ঠিক ধরতে পেরেছো আমি।
– ইভা কোথায় সুহাসিনী? ইভার যদি কোনো ক্ষতি করার চেষ্টাও করো তাহলে আমার থেকে খারাপ আর এই দুনিয়ায় কাউকেই দেখতে পাবে না।
– আরে আরে উত্তেজিত কেনো হচ্ছো? ইভা সুস্থ আছে। কিন্তু আমার কথা মতো কাজ না করলে ও আর সুস্থ থাকবে না।
– মানে?
– মানে ইভার সাথে শুভও আছে। আর যদি তুমি আমার কথা মতো কাজ না করো তাহলে শুভ হয়তো ইভার সাথে কোনো অঘটন ঘটিয়ে ফেলবে। তখন আবার আমাকে দোষারোপ করতে পারবে না কিন্তু।
– একদমই বাজে বকবে না বলে দিচ্ছি। অনেক বড় ভুল করছো তোমরা দুজনেই। এর জন্য তোমাদের দুজনকেই পস্তাতে হবে মনে রেখো।
– হ্যা হ্যা সেটা না হয় দেখাই যাবে কার কি হবে। এবার শোনো ইভাকে সুস্থ সবল পেতে হলে তোমার আমাকে বিয়ে করতে হবে। রাজি আছো?
– ইম্পসিবল। কখনোই না। এই ইফতি যতদিন বেঁচে আছে ততদিন পর্যন্ত তার কাজললতা ব্যতীত কেউ তার মন জয় করতে পারবে না।
– ওকে তাহলে আমি না হয় শুভলে বলে দিচ্ছি যে তুমি আমার প্রস্তাবে রাজি নও। কেমন?
ইফতি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
– আমি রাজি আছি।
ইফতির রাজি হওয়ার কথা শুনে সুহাসিনী যেনো ঈদের চাঁদ হাতে পেয়ে গেলো।
——————————————————————————————
আমার সমানের বরাবর চেয়ারে বসে রয়েছে শুভ। সেই কতক্ষণ ধরেই এক পানে আমার দিকে চেয়ে রয়েছে। আর এদিকে ওর তাকিয়ে থাকা দেখে যেনো আমার সারা শরীর রাগে পুড়ে যাচ্ছে।
– ইভা তুমি সেই কতক্ষণ ধরে কিছুই খাচ্ছো না। খেয়ে ফেলো জান পড়ে তো অসুস্থ হয়ে যাবে।
– খাবো না আমি। দরকার হলে মরে যাবো তাও খাবো না। আমাকে ইফতি ভাইয়ার কাছে যেতে দেও বলছি। আমি ইফতি ভাইয়ার কাছে যাবো।
আমার কথায় শুভ দাঁড়িয়ে খাবারের প্লেটটা জোড়ে দেওয়ালের দিকে ছুড়ে মারলো। বন্ধ একটা ঘরে প্লেটের শব্দটা এতোটাই জোড়ে হচ্ছিলো যেনো আমার কানে ফেটে যাচ্ছিলো। ঠিক তখনই সুহাসিনী আপু দৌড়াতে দৌড়াতে এসে বললো,
– শুভ শুভ
– কি হয়েছে সুহাসিনী?
– ইফতি রাজি হয়েছে। ইফতি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে। আজ আমার এতোটাই খুশি লাগছে ইচ্ছে করছে নেচে বেড়াতে।
সুহাসিনী আপুর মুখের কথা শুনে আমি থ হয়ে গেলাম। এটা কি বলছে ও? ইফতি ভাইয়া সুহাসিনী আপুকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে? এটা কি করে সম্ভব?
– আমি বিশ্বাস করি না। ইফতি ভাইয়া কখনোই আপনাকে বিয়ে করতে রাজি হবে না। কখনোই না।
– তুমি বিশ্বাস করো বা নাই করো তাতে আমার কোনো যায় আসে না। একটা কথা শুনে রাখো ইভা। ইফতি আমার। আর অবশেষে ও আমারই হয়েছে।
কথাটা বলেই সুহাসিনী আপু হাসতে লাগলো।
– শোনো শুভ। ইভাকে ভালো করে বুঝিয়ে দাও ওকে কি কি করতে হবে। আমি এখন যাচ্ছি।
সুহাসিনী আপু চলে যাওয়ার পর আমি শুভর দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই শুভ একটা চেয়ার আমার সামনে এনে বসে বললো,
– দেখো তুমি যাকে এতো ভালবাসলে সে আসলেই কি তোমাকে ভালোবাসতো নাকি না তার প্রমাণ তো পেয়েই গেলে। মাত্র কয়েক ঘন্টা তুমি নিখোঁজ আর এর মধ্যেই ইফতি সুহাসিনীকে বিয়ে করতে চাইলো। তাহলে কি করে একমাত্র আমিই প্রতারক হলাম। অন্তত আমি তো তোমাকে ভালোবাসার নাম করে ঠকাই নি তাই না?
শুভর কথায় গা জ্বলে গেলেও আমার মনে পড়ে ছিলো সুহাসিনী আপুর কথার মাঝে।
– আচ্ছা এখন আমরা বের হবো। মানে তোমাকে বাসায় দিয়ে আসবো। কিন্তু তার আগে তোমাকে আমার কথামতো কাজ করতে হবে।
– কখনোই না। আমি তোমার কথামতো কোনো কাজই করবো না। মরে গেলেও না।
আমার কথায় শুভ একটা বাঁকা হেসে তার প্যান্টের পকেটে থাকা একটা বন্দুক বের করে উপরে একটা গুলি করলো। গুলির শব্দে আমি কান চেপে ধরে চিৎকার করলাম।
– চিন্তা করো না প্রেয়সী। এই গুলি কখনোই তোমার গায়ে ঢুকবে না। এই গুলি ঢুকবে ইফতির গায়ে যদি তুমি আমার কথামতো কাজ না করো। ইফতি ভাইয়াকে গুলি করবে সেই ভয়ে আমি বললাম,
– আমি রাজি আমি তোমার সব কথা শুনতে রাজি।
————————————————————————————
আমাকে বড় চাচ্চুর বাড়িতে পৌঁছে দিয়েই শুভ ইশারা করে ভেতরে যেতে বললো। শুভর ইশারায় আমি চুপচাপ বাড়ির ভেতরে ঢুকে যেতেই সকলে আমাকে দেখে হা হয়ে গেলো। শাড়ির আঁচলের কাছ থেকে কিছুটা ছেড়া আর ব্লাউজের হাতার কাছ থেকে ছেড়া এবং চুলগুলো এলোমেলো, ঠোঁটের লিপস্টিক ছড়ানো আর চোখের লেপ্টে যাওয়া কাজল দেখে সকলে কি ভেবে নিয়েছে তা ভালো করেই বুঝতে পারছি। আমার এমন অবস্থা দেখে মা আর বড় কাকি শাড়ির আঁচল মুখে দিয়ে কাঁদতে লাগলো। তাদের কান্নার শব্দে ইফতি ভাইয়া হনহন করে ড্রয়ই রুমে আসলো। ইফতি ভাইয়ার চোখেচোখ পড়তেই চুপচাপ মাথাটা নিচু করে রাখলাম। ইলমা দৌড়ে আমার কাছে এসে কাঁদতে কাঁদতে বললো,
– এটা তোর কি হয়েছে ইভা? কিভাবে হলো এসব? বল বোন আমার? কে করেছে এমন কাজ?
আমি ইলমার কথায় মাথাটা উঁচু করে বললাম,
– আমাকে একটু তোর রুমে নিয়ে যাবি? খুব ক্লান্ত লাগছে।
আমার কথায় ইলমা আমার হাত ধরে রুমে নিয়ে গেলো।
– ইলমা তুই একটু বাইরে যা। আর দয়া করে সবাইকে বলবি যেনো কেউ রুমে এসে বিরক্ত না করে।
আমার কথায় ইলমা চরম অবাক হয়েছে তা ওর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। আমার এমন অবস্থায়ও আমি কি করে শান্ত আছি সেটাই হয়তো ও বুঝতে পারছে না।
ইলমাকে বারণ করার পরও বাড়ির সকলে একটু পর পর এসে দরজা ধাক্কা দিয়ে গিয়েছে। আর প্রতিবার আমি দরজা না খুলেই তাদের ফিরিয়ে দিয়েছি। এতো মানুষের ভিরেও ইফতি ভাইয়া একনারও আসলো না আমার খবর নিতে। কিছুক্ষণ পর টের পেলাম বাড়িতে বাইরের কিছু মানুষ এসেছে। দরজা খুলে উঁকি মারতেই দেখলাম বাড়িতে ইফতি ভাইয়াদের কিছু প্রতিবেশী আছে যাদের আমি খুব ভালো করেই চিনি।
– তোমাদের বাড়ির সামনে কিছুক্ষণ আগে যে মেয়েটাকে দেখেছিলাম সে ইভা না? ইফতির চাচাতো বোন। ওর এই অবস্থা হলো কি করে? শুনেছিলাম না তো নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলো। তাহলে ফিরে আসলো কিভাবে আর শাড়ি ছেড়া কেনো গো ইফতির মা?
বাইরের ওই আন্টির কথায় সকলে নিঃশ্চুপ হয়ে যায়। কি করে বলবে তারা ইভার সাথে কি হয়েছে? পাশ থেকে আরেক আন্টি বললো,
– আচ্ছা ইভার সাতে আবার খারাপ কিছু হলো না তো? মানে ধর্ষনের কথা বলছি।
আন্টির কথায় সকলের চোখ বড় হয়ে গেলো। তারা ভাবতোও পারে নি আন্টি এমন একটা কথা বলে ফেলবে। তারপর দুই আন্টি মিলে বলা শুরু করলো,
– আহারে মেয়েটার জীবনটাই শেষ হয় গেলো। এতো সুন্দর চাঁদখানা মেয়েটার জীবনে তাহলে এই হওয়ার ছিলো?
– হ্যা গো। সত্যি ইভার জন্য খারাপ লাগছে। ইভা ওর বাবা ও মার এক মাত্র মেয়ে তাহলে তো আরও বেশি খারাপ লাগার কথা। আচ্ছা ইফতির মা ইভার এই অবস্থা কে করলো?
– সেটা যেনে আপনাদের কি খুব বেশি উপকার হবে?
সামনে থেকে ইফতি ভাইয়া কথাটা বলতেই সকলেই তার দিকে তাকালো।
– না মানে বাবা এমনেই জানতে চাইলাম।
– কেনো জানতে চাইবেন আপনারা? আর আপনারা শিওর কিভাবে হলেন যে আসলেই ইভার সাথে খারাপ কিছু হয়েছে? এমনও তো হতে পারে যে ওর রাস্তায় কোনো এক্সিডেন হয়েছিলো। আপনারা শুধুমাত্র পারেন কি করে মানুষদের ছোটো করা যায়। তারপর একে একে সবজায়গায় কথাগুলো ছড়িয়ে দেন। এতে আপনাদের লাভটা কথায় হয় জানতে পারি?
ইফতি ভাইয়ার কথায় সকলে নিঃশ্চুপ হয়ে গেলো। হুট করে আন্টি বলে উঠলো,
– দেখো ইফতি তোমরা হচ্ছো এই যুগের মানুষ। তোমাদের কাছে এগুলো নর্মাল মনে হলেও আসলে কিন্তু তেমন কিছুই না। এর জন্য তো এই মেয়ের বিয়েও হবে না। তাছাড়া এক হাতে তো আর তালি বাজে না
আমার তো মনে হয় ইভাই এমন কিছু করেছে যার কারণে ওকে কোনো এক ছেলে ধর্ষন করেছে।
– সেটআপপপপপপ
ইফতি ভাইয়ার চিৎকারে উপস্থিত সকলে কেঁপে উঠলো।
-আপনারা নিজেদের কি ভাবেন হ্যা? যা বলবেন তা সঠিক হবে সেটা? কখনোই না। আজ ইভা অন্যের মেয়ে বলে আপনারা একের পর এক বাজে কথা বলে যাচ্ছেন। যদি ইভা আপনাদের কারো মেয়ে হতো তাহলে?
ইফতি ভাইয়ার কথায় দুজন আন্টি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো,
– ধন্যবাদ আমাদের ইভাকে নিয়ে আপনাদের এতো এতো চিন্তা করার। এবার আপনারা দয়া করে আসুন। আর কখনোই আমাদের ফেমিলি নিয়ে দয়া করে নাক গলাতে আসবেন না।
ইফতি ভাইয়ার কথায় দুজন আন্টি রাগে ফোঁসতে ফোঁসতে বাড়ি থেকে চলে গেলো। আর এদিকে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে যেনো আমি আজ ক্লান্ত। এটাই কি হওয়ার ছিলো আমার সাথে? আজ ধর্ষিতা না হয়েও ধর্ষিতা পরিচয় পেতে হচ্ছে। দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসতেই ইফতি ভাইয়া নক না করেই রুমে ঢুকে পড়লো। ইফতি ভাইয়াকে দেখেই আমি বিছানায় জোড়োসড়ো হয়ে বসে পড়লাম। ইফতি ভাইয়া আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে পড়লো।
– কাজললতা।
ইফতি ভাইয়ার মুখে কাজললতা নাম শুনে নিজের কান্নাকে আটকাতে পারলাম না। হুহু করে কেঁদে দিলাম ইফতি ভাইয়া আমার চোখের ওানি মুছে দিয়ে বললো,
– কাঁদিস না প্লিজ। আমাকে সব খুলে বল। তোর সাথে কি হয়েছিলো? কে তোকে কিডন্যাপ করেছিলো আর কেনো?
ইফতি ভাইয়ার কথায় কোনো উত্তর দিতে পারলাম না। কারণ আজ আমি একটা কঠিন দেয়ালের সাথে বাঁধা। ইফতি ভাইয়া একে একে আমাকে অনেক প্রশ্ন করলো কিন্তু কোনো প্রশ্নের উত্তরই আমার থেকে পেলো না। অবশেষে ইফতি ভাইয়া নিরাশ হয়ে রুম থেকে চলে গেলো।
———————————————————————————–
জীবনের সবচেয়ে বড় অপবাদ পেয়েছিলাম যখন ধর্ষিত না হয়েও ধর্ষিতা ডাক শুনেছিলাম। বর চাচ্চুর বাড়ি থেকে শুরু করে আমার বাড়ির সকল প্রতিবেশী ধরে নিয়েছিলো যে আমাকে ধর্ষন করা হয়েছে। আর তাদের অপবাদের কারণেই গত একমাস ধরে ডিপ্রেশনে ভুগছি। মেডিকেলের পড়া থেকে শুরু করে বাড়ির সকল মানুষের সাথে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিলাম। অন্ধকার রুমই যেনো আজ আমার সবচেয়ে বড় সঙ্গী। একদিন হুট করেই ইলমা দৌড়ে এসে বলতে লাগলো,
-ইভা জানিস সুহাসিনী নামের ওই মেয়েটার সাথে ইফতি ভাইয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
ইলমার কথায় বুকের ভেতরটা কষ্টে ফেটে গেলেও শান্তশিষ্ট হয়ে ছিলাম।
– ইভা কিছু বল দয়া করে। আমাকে জবাব দে ভাইয়া কেনো তোকে ছাড়া ওই সুহাসিনীকে বিয়ে করতে রাজি হলো? আমি আর নাহিল ভাইয়া অনেক বার জিজ্ঞেস করেছি কিন্তু ভাইয়া প্রতিবার এড়িয়ে গেছে।
অত্যন্ত শান্তশিষ্টভাবে উত্তর দিলাম।
– এতে অবাকের তো কিছুই নেই ইলমা। ইফতি ভাইয়া একজন নামকরা ডাক্তার। আর সুহাসিনী আপুও। তাহলে ইফতি ভাইয়া কেনো ওই নামকরা ডাক্তার সুহাসিনী আপুকে ব্যতীত আমার মতো একজন ধর্ষিতা মেয়েকে বিয়ে করবে বল?
– ইভা এসব কি বলছিস তুই। একটু সিরিয়াস হ।
– আমি সম্পূর্ণ সিরিয়াস হয়েই কথাগুলো বলছি। তো বিয়েটা কবে?
– এক মাস পর।
– বাহ। ইফতি ভাইয়াকে আমার পক্ষ থেকে কনগ্রেচুলেশন জানাস। কারণ আমার এখন কোনো অনুষ্ঠানে যাওয়ার মতো অবস্থা নেই। তাছাড়া আমি যদি ওদের দুজনের মতো নামকরা কোনো ডাক্তারের বিয়েতে যাই তাহলে ওদের বিয়ের নাম খারাপ হয়ে যাবে।
– ইভা তুই ঠিক আছিস? কেনো এমন করছিস?
– আমি ঠিকই আছি। আর খুব শিগ্রই আমি আবারো মেডিকেল যাওয়া শুরু করবো।
অত্যন্ত নিরাশ হয়ে ইলমা রুম থেকে বের হতেই আমি দরজা লাগিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলাম। সব কিছুই কেমন জানি বিষাদ লাগছে। অবশেষে ইফতি ভাইয়াও বিশ্বাস করে নিলো আমি সত্যি একজন ধর্ষিতা।
—————————————————————————————-
একদিন আম্মু হুট করে রুমে এসে বললো,
– ইভা তোর সাথে কিছু কথা ছিলো।
আমি তখন বই পড়ছিলাম। আম্মুর কথায় বই রেখে তার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– হুম বলো শুনছি।
আম্মু আমতা আমতা করে বললো,
– ইভা তোর বাবা তোর বিয়ে ঠিক করেছে।
– বিয়ে ঠিক করেছে মানে? এসব কি বলছো তুমি আম্মু?
– আমি ঠিকই বলছি রে মা। তুইও রাজি হয়ে যা মা। ছেলেটা দেখতে অত্যন্ত ভদ্র-সভ্য।
– আমি কোনো মতেই এখন বিয়ে করতে পারবো না। আমি জানি সবাই আমাকে ধর্ষিতা বলে ডাকে তাই তোমাদের নাম খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তোমাদের সমস্যা হলে আমি খুব শিগ্রয়ই এখান থেকে চলে যাবো।
– এসব তুই কি বলছিস মা। আমরা কোনোদিনও তোকে নিয়ে এসব ভাবি নি। তুই আমাদের মেয়ে এটাই সবচেয়ে বড় কথা। কিন্তু ছেলেটা তোকে অনেক ভালোবাসে একারণেই তোর বাবাও বিয়েতে রাজি হয়ে গেছে।
– আম্মু প্লিজ বিয়ের কথা মুখেও এনো না। আমার এখন কিছুই ভালো লাগছে না। যাও এখান থেকে।
আম্মু নিরাশ হয়ে চলে যাচ্ছিল এরই মধ্যে দরজাায় কারো টোকা দেওয়ার আওয়াজ পেলাম। দরজা খুলেতই যাকে দেখলাম তাকে দেখে আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল।
– এসো বাবা ভেতরে আসো। ইভা তুই ওর সাথে কথা বল। আমি বরং যাই।
আম্মু একটা মুচকি হাসি দিয়ে দরজাটা লাগিয়ে চলে গেলো। আর সামনে থাকা ব্যক্তিটি আমার দিকে খানিকটা এগিয়ে বললো,
– কেমন আছো প্রেয়সী?

চলবে,,,,,,,,💜

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here