এক_মুঠো_প্রেম_রঙ্গনা লাবিবা ওয়াহিদ ৩৯.

0
139

#এক_মুঠো_প্রেম_রঙ্গনা
লাবিবা ওয়াহিদ

৩৯.
নওরিকে হঠাৎ নিজের ঘরে দেখে চমকালো মাজেদা। কিছু মুহূর্তের জন্যে নীরব রইলো। সরু চোখে নওরিকে লক্ষ্য করে বললো,
–“এহানে কী করো তুমি?”
নওরি হাসার চেষ্টা করে বলে,
–“আপনার জন্যে গরম তেল এনেছি নানু। পায়ে মালিশ করলে আরাম লাগবে।”
–“ক্যান ক্যান? এইগুলা করলে ভাবসো তোমারে মাইনা নিমু? কুনুদিনও না!”
নওরি এই ধরণের কথা উপেক্ষা করে মাজেদার পায়ের কাছে বসলো। মাজেদা তখন অনবরত এটা ওটা বলেই চলেছে। নওরি হাতে কিছুটা তেল নিয়ে মাজেদা বেগমের পায়ে খুব যত্নে মালিশ করে দিলো। সঙ্গে সঙ্গে মাজেদার মুখ থেমে গেলো। আবেশে চোখ বুজে ফেললো সে। পেছনে পিঠ ঠেকিয়ে হেলান দিলো। মুহূর্তের জন্যে ভুলে গেলো সবকিছু। আরামে যেন হালকা হয়ে উড়ছে সে। অস্ফুট স্বরে বললো,
–“শান্তি!”
নওরি চাপা হাসি দিলো। মৌসুমি মায়ের রুমে প্রবেশ করতে নিলে দেখলো নওরি তেল মালিশ করে দিচ্ছে। অবাক হয়ে বলে,
–“ঘটনা কী? এসেই মায়ের খেদমত? মেয়েটা কী আসলেই ভালো? নাকি মা ডেকেছে ওকে? কে জানে?”
এসব ভাবতে ভাবতে মৌসুমি আর ঘরে প্রবেশ করলো না। চলে গেলো। নওরি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
–“আরাম লাগছে নানু?”
নানু আনমনে বলে ফেললো,
–“এত আরাম অনেকদিন পর পাইতেসি!”
হঠাৎ কী মনে করে মাজেদা চোখ মেলে তাকালেন। রুক্ষ স্বরে নওরির উদ্দেশ্যে বললো,
–“এগুলা করে ভাবতাছিস আমার মনে জায়গা করে নিবি? তোর নিয়্যত পূরণ হইবে না বলে দিলুম!”
নওরি পুণরায় মাজেদা বেগমের কথাকে এড়িয়ে গিয়ে বলে,
–“প্রতিদিন আমি মালিশ করে দিবো নানু। আপনি শুধু ডাকবেন। যা চাইবেন তা করার ব্যবস্থা করবো!”
মাজেদা বেগমের এবার মুখ বন্ধ। মুখ ঘুচে চেয়ে রইলো নওরির দিকে। মাথায় ঘোমটা, ব্যবহারে নম্রতা, সুন্দর চেহারা, সব দিক দিয়েই মেয়েটা ভালো। তাও মাজেদা বেগম কেন অপছন্দ করেন নিজেও বুঝতে পারলেন না। থমথমে মুখে ভাবলেন, আরেকটু নাটক চালিয়ে যেতে হবে। বুঝাতে হবে তার প্রয়োজনীয়তা। নয়তো আজকাল তো সবাই তাকে ছেলের বাড়িতে ফেলে আসার হুমকি দিচ্ছে।

রাতে সিদ্দীক সাহেব চা খেতে খেতে ইরা’দের উদ্দেশ্যে বললেন,
–“তা পুণরায় বিয়ে করতে চাচ্ছো নাকি রিসিপশন?”
–“রিসিপশন-ই হোক বাবা। আমার এত মেহমান সামলানোর ধৈর্য নেই। নওরি খুব কষ্টের ফল তো। আবার হারাতে চাই না!”
সিদ্দীক সাহেব অবাক হয়ে বলে,
–“সে কী কথা? নিজের ছেলের বিয়ে দেখব না? কতো ইচ্ছে ছিলো ছেলের বিয়ে ধুমধাম করে দিবো!”
–“রিসিপশনের দিন সব ইচ্ছে পূরণ করে নিও!”
–“কিন্তু নওরির বাবার বাড়ি কী মনে করবেন?”
ইরা’দ থমথমে মুখে বলে,
–“ওনাদের সাথে নওরির সম্পর্ক খুব একটা ভালো নেই বাবা।”
সিদ্দীক সাহেব থমকালেন। কিছুক্ষণ নীরব থেকে বললেন,
–“সম্পর্ক যেমন-ই হোক, বিয়েতে বউমার পরিবারকে আমার চাই। ফাংশনে দেরী হোক, সমস্যা নেই। তাও কারো অনুপস্থিতি চাই না!”

———-
নওরি বউ সেজে ইরা’দের ফুলে সজ্জিত ঘরে বঁধু বেশে নিশ্চুও হয়ে বসে। ফুলের মন মাতানো ঘ্রাণ ঘরটায় নিমজ্জিত। নওরি ঘন ঘন পলক ফেলে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। ভীষণ অস্থিরতায় ভুগছে সে। “বাসর রাত” শব্দটি-ই যেন নওরির দম আটকে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। হঠাৎ খুব তৃষ্ণা পেলো নওরির। কিন্তু নিজেকে সংবরণ করে রাখলো। হৃদয় ভীষণ ছটফট করছে। হৃদপিন্ড ভীষণ লাফাচ্ছে। ইরা’দের অনুপস্থিতিতেই এই অবস্থা, না জানি ইরা’দ থাকলে তাঁর কী হবে। নওরির ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে ইরা’দ রুমে প্রবেশ করলো। ইরা’দের উপস্থিতি টের পেতেই নওরি নড়েচড়ে বসলো। ইরা’দ নওরিকে বউরূপে দেখে মুচকি হাসলো। আলমারি থেকে একটি ছোট বক্স বের করে নওরির দিকে এগিয়ে আসলো। নওরির কাছাকাছি বসলে নওরি কিছুটা সরে যেতে নিলো। কিন্তু ইরা’দ তাঁর হাত ধরে হেঁচকা টান দিয়ে আবার আগের জায়গায় বসিয়ে দিলো। নওরি গোল গোল চোখে চাইলো ইরা’দের পানে। ইরা’দ লহু কন্ঠে বললো,
–“পালাচ্ছো কোথায়? তোমার চারপাশে তো আমার-ই বসবাস!”

নওরি চুপ করে রইলো। ইরা’দ ছোট বক্সটি খুলে হিরের নথটি বের করলো। সেটা এতই চিকচিক করছে যে নওরি অবাকের সাথে ভয়ও পাচ্ছে। ভয়কাতুরে কন্ঠে শুধায়,
–“এটা.. যদি আমার থেকে হারিয়ে যায়? এটা আমি পরবো না। রেখে দিন!”
–“চুপ! হারাবে না। সখ করে কিনেছি তোমাকে পরিহিত দেখার জন্যে। সোকেজে সাজিয়ে রাখতে নয়। এদিকে এসো। নথ পরিয়ে দিচ্ছি!”

নথ পরানো শেষে ইরা’দ নিজের সাথে নওরিকে জড়িয়ে বেশ কয়েকটি ছবি তুলে নিলো। অতঃপর ছবি দেখতে দেখতে ইরা’দ মুচকি হেসে বলে,
–“বাসরের স্মৃতি। সুন্দর!”
হঠাৎ ইরা’দ নওরির দিকে তাকাতেই নওরি লজ্জায় রাঙা হয়ে যায়। দ্রুত নজর লুকালো সে। ইরা’দ নওরির লাজে রাঙা গালে স্পর্শ করে ঘোর লাগা কন্ঠে বলে,
–“এই লজ্জা কী ছোঁয়া যায় না? আমার যে ভীষণ ছুঁতে ইচ্ছে করছে। লজ্জাকে ধরে-বেঁধে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করছে, এই আমার বউয়ের সাথে তোমার সম্পর্ক কী?”

নওরি হাসলো। লাজুক হাসি। ইরা’দের থেকে পালাতে গেলে ইরা’দ নওরির কোমড় জড়িয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে বলে,
–“পালাই পালাই করছো কেন? আমার ব্যাকুলতা দেখছো না? বুঝতে পারছো না আমার চোখের ভাষা?”
নওরি থরথর করে কেঁপে ইরা’দের চোখের দিকে তাকালো। ইরা’দ নওরিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নওরির অধরজোড়া নিজের অধরের দখলে নিয়ে নিলো। নওরির গলায় নিঃশ্বাস আটকে গেলো। সা!পের মতোন মোঁচড়া-মুঁচড়ি করলো কিছুক্ষণ ছাড়া পাবার জন্যে। কিন্তু সে গুড়ে বালি। নওরি ছাড়া পেলো না ইরা’দের থেকে। ইরা’দ যেন নওরিতে ডুব দিতে ব্যস্ত। আর নওরি লাজে লাল থেকে নীল হতে ব্যস্ত। দুজনের ঘনিষ্ঠতা ফ্রিশা বারান্দা থেকে দেখছে। ইরা’দ ফ্রিশাকে বারান্দায় বন্দি করে রেখেছে। কারণ, ফ্রিশা অলরেডি তাঁর একটা ফুলের টব ভেঙে ফেলেছে। যার শা!স্তিস্বরূপ সারারাত সে আকাশের নিচে কাটাবে অর্থাৎ বারান্দায়। ফ্রিশা ওদের বড়ো বড়ো চোখে দেখতে দেখতে হঠাৎ স্ট্যান্ড থেকে ধপ করে পরে গেলো। যার শব্দ দু’জনের কান অবধি পৌঁছালো না।

—————–
সকালে ফোনের রিংটোনে নওরির ঘুম ভেঙে গেলো। পিটপিট করে চোখ মেলতেই দেখতে পেলো সে ইরা’দের উম্মুক্ত বুকে লেপ্টে আছে। এই রূপ দেখে নওরির গত রাতের সকল ঘটনা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। নওরির সর্বাঙ্গ জুড়ে পুণরায় লাজে’রা মেলা বসালো। মাথা তুলে ঘুমন্ত ইরা’দের দিকে তাকালো। ইরা’দ তখনো বেঘোরে ঘুমোচ্ছে প্রিয়তমাকে বুকে নিয়ে। নওরি আলতো হাসলো। কিছুক্ষণ গভীর দৃষ্টিতে ইরা’দের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে ওঠে, “মা-শা-আল্লাহ্!”

আবারও নওরির ফোন বেজে ওঠে যার ফলে নওরির ধ্যান ভাঙে। ইরা’দের বাঁধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বিছানার পাশের ড্রয়ারের উপর থেকে ফোনটা নিয়ে নিলো। ফোন হাতে নিয়ে দেখলো মাহি কল করেছে। নিজের অজান্তেই ভ্রু কুচকে এলো নওরির। এই ভোরবেলায় মাহি কেন কল করলো তাকে? নওরি কিছু না ভেবে কল রিসিভ করলো।
–“মাহি আ…”
নওরিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মাহি উত্তেজিত কন্ঠে বলে ওঠে,
–“নওরি, তোমার বাবা গতকাল রাতে স্ট্রোক করেছেন। ওনাকে হসপিটালে নেয়া হয়েছে!”

®লাবিবা ওয়াহিদ
————————–
~চলবে, ইন-শা-আল্লাহ্।
গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here