#এক_মুঠো_প্রেম_রঙ্গনা
[২য় পরিচ্ছেদ]
৩৮.
ইরা’দ নওরিকে সাথে নিয়ে ইরা’দদের সদর দরজায় দাঁড়িয়ে। মৌসুমি তাদের বরণ না করে লিভিংরুমে বসে ফুঁসছে। কপালে নওরি লেখা ছিলো কে জানতো? রাগে রীতিমতো জ্বলে পুড়ে জ্ঞান হারানোর উপক্রম তাঁর। সিদ্দীক সাহেব নিজের স্ত্রীকে বারবার তাগাদা দিচ্ছে ছেলে এবং ছেলের বউকে বরণ করে ঘরে তুলতে। এদিকে মৌসুমি তৎক্ষণাৎ খ্যাঁক করে উঠে বলে,
–“কেউ কী আছিস? থাকলে প্রেশারের মেশিনটা নিয়ে আয়। আজকাল তো এই বাড়িতে আমার কোনো দাম-ই নেই! সবাই নিজেদের সিদ্ধান্তে বাদশাহ হয়ে গিয়েছে!”
মৌসুমির এরূপ বিলাপে সিদ্দীক সাহেব বিরক্ত হলেন। বিরক্তিতে নাক-মুখ কুচকে বললেন,
–“আল্লাহ্ কী করতে যে তোমার মতো ঝাল মরিচকে আমার ঘাড়ে চাপাইছে! আজকাল ঝালের প্রকোপ বাড়াতে গিয়ে কান্ড-জ্ঞান সব গিলে ফেলছো!”
মৌসুমি তড়িৎ চোখ গরম করে তাকালেন সিদ্দীক সাহেবের দিকে।
–“কী বললেন আপনি?”
–“শুনতে পাওনি? ছেলের বউকে বরণ করে না তুললে তোমায় তোমার মাকেসহ তোমার ভাইয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দিবো!”
–“ওই মেয়েটার জন্যে তুমি আমাকে বাড়ি থেকে তাড়ানোর হুমকি দিলে?”
–“তাহলে কী করা উচিত? বিয়ে তো হয়ে গেছেই। এখন চাইলেও তো অতীতে গিয়ে সব ঠিক করে আসতে পারবো না। ভাগ্যের লিখন মেনে নাও। এতেই তোমার মঙ্গল!”
–“ওই মেয়েটা কাল আমার ঘাড়ে বসে আমায় আঙুল ঘুরিয়ে নাচাবে না তাঁর গ্যারান্টি কী? মেয়েটার চরিত্রেও তো দোষ আছে। না বাবা, আমি জীবনেও এই মেয়েকে মেনে নিবো না। ভাগ্যের হিসেব তো পরে!”
সিদ্দীক সাহেব এবার গরম চোখে তাকালেন স্ত্রীর দিকে। গম্ভীর গলায় বলে ওঠে,
–“এখন অবধি মেয়েটা বাড়িতেই প্রবেশ করলো না আর তুমি ভবিষ্যৎ নিয়ে স্বপ্ন দেখা শুরু করলে? আজিব মহিলা মানুষ তো তুমি!”
ভেতর থেকে বাবা-মায়ের মধ্যে ঝগড়া শুনে নওরি খামচে ধরলো ইরা’দের হাত। ইরা’দ সেই হাত নিজের মুঠোয় আগলে নিয়ে বলে,
–“মা তুমি কী বরণ করবে নাকি বউ নিয়ে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো?”
মৌসুমি তখনই আঁতকে ওঠে ছেলের কথায়। বসা ছেড়ে দ্রুত পায়ে এগিয়ে আসে ছেলের কাছে। গোল গোল চোখে অবাক সুরে বলে,
–“এই মেয়ের জন্যে তুই বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার হুমকি দিচ্ছিস?”
ইরা’দ শান্ত নয়নে মায়ের দিকে তাকালো। লহু কন্ঠে বলে ওঠে,
–“এই মেয়েটি আমার বউ না। আমার অর্ধাঙ্গিনী। তোমার প্রতি আমার যেই দায়িত্ব, সেই একই দায়িত্ব আমার অর্ধাঙ্গিনীর প্রতিও। দুজনকেই আমি সমানভাবে ভালোবাসি। একজনের জন্যে আরেকজনকে ছেড়ে দেয়া মানে স্বার্থপরতা এবং কাপুরুষতা। তুমি তো আমায় এই শিক্ষা দাওনি মা। তোমরা দুজনেই আমার সম্মান। এখন যদি আমার বউয়ের সম্মান রক্ষার ক্ষেত্রে এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হয় তাহলে আমি বাধ্য। ওর যে আমি ছাড়া কেউ নেই মা।”
মৌসুমি মুখ থমথমে করে ছেলের দিকে চেয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। পরবর্তীকে নওরিকেও লক্ষ্য করলেন। গভীর নয়নে। নওরি ভয়ে গুটিশুটি মে!রে দাঁড়িয়ে ইরা’দের পাশে। মিনিটখানেক কেটে যাবার পর গম্ভীর স্বরে বলে,
–“করছি বরণ! কোথাও যেতে হবে না।”
মৌসুমির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সিদ্দীক সাহেব নৈঃশব্দে হাসলেন। ছেলেকে নিয়ে আজ ভীষণ গর্ববোধ হচ্ছে। তাদের শিক্ষায় যে কোনো ত্রুটি ছিলো না। ইরা’দ এবং নওরির পায়ের পিছে থেকে উঁকি মে!রে ফ্রিশা তখন ইরা’দদের ফ্ল্যাটের ভেতরটা দেখতে ব্যস্ত।
——————-
ইরা’দের মুখে তুষার যখন শুনলো নওরি তাঁর বউ তখন তুষারের চেহারা দেখার মতোন ছিলো। নূরজাহান এবং আফিফা ব্যতীত সকলেই স্তব্ধ ছিলো ইরা’দের বিয়ের কথা শুনে। ইরা’দ বুঝলো তুষার থাকা অবস্থায় তাঁর স্ত্রী নিরাপদ নয়। তাই তখনই সারিফাকে পাঠিয়ে দেয় নওরির রুমে। যাতে নওরির জামা-কাপড়সহ জরুরি সকল জিনিসপত্র প্যাক করে দেয়। এবং ইরা’দ নূরজাহানের কাছে বলে,
–“চাচী, নওরিকে আমি আমার বাড়িতে নিয়ে যেতে চাই। এখন বিয়ের কথা তো সবাই জানে।”
নূরজাহান একপলক নওরির দিকে চেয়ে হাসি-মুখে বলে,
–“তোর-ই বউ। নিয়ে যা। বিয়ের মিষ্টি পাঠাতে ভুলিস না।”
ইরা’দের বাসাতে যাওয়া নিয়ে নওরি কতটুকু খুশি তা জানা নেই। তবে ফ্রিশা দারুণ খুশি। খুশির কারণ ইরা’দের ছাদসম খোলামেলা বারান্দাটি। সেখানে ছুটে বেড়ানো যেন ফ্রিশার কতকালের স্বপ্ন। গাছের ডালে বসে থাকা তাঁর দ্বিতীয় স্বপ্ন। কিন্তু আফসোস ভার সইতে পারবে না ইরা’দের গাছগুলোর কোনো ডাল।
নওরি বর্তমানে বিব্রত হয়ে বসে আছে ইরা’দের ঘরে। এক কাপড়েই বেরিয়ে এসেছে সে শ্বশুরবাড়িতে। এখন ইরা’দের রুমে এসে নতুন একটি জামা পরে নিয়েছে সে। পুরো ঘরে চোখ বুলাতে ব্যস্ত নওরি। রুমের মধ্যে ইরা’দের নিজস্ব একটি ঘ্রাণ বিচরণ করছে। নওরি উঁকি মে!রে বারান্দায় দেখলো। কড়া রোদ উঠেনি এখনো। সময় হয়তো সকাল এগারোটা। ফ্রিশাকে আশেপাশে খুঁজলো সে। কিন্তু পেলো না।
মাজেদা বেগম গরম চোখে বারবার দেখছে ইরা’দকে। চোখ পাকিয়ে ইরা’দের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,
–“মা হারা নাতবউ আমি কুনুদিন মাইনা নিতাম না। ওই মাইয়ারে তো একদম না। কেমন ঝিম ধইরা থাকে সবসময়!”
–“তো তুমি কী চাও সারাদিন বকবক করুক? নিজেই তো শান্ত-শিষ্ট, ভদ্র মেয়ে পছন্দ করো।”
–“খেদমতের কথাডা কইলি না যে!”
–“আমি খেদমত আর কাজ করাতে বউ আনি নাই। সকলকে ভালোবাসা দিবে বলেই বউ এনেছি। বউ মানেই সারাদিন রান্নাঘরে পরে থাকা না নানু!”
–“সব মানলাম। তাও আমি ওই মেয়েরে মানতাম না!”
–“না মানলে তোমার পোলার বাড়িত পাঠাই দিবো তোমারে মনে রাইখো। তখন খাইও ছেলের বউগো হাতের চাপড়া!”
বলেই ইরা’দ হনহন করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। মাজেদা বেগম চোখ বড়ো বড়ো করে চেয়ে রইলো ইরা’দের যাওয়ার পানে। অবাক সুরে বললো,
–“সাহস কতো বড়ো! আমারে হুমকি দিয়া গেলো? তোরে আমি ছাড়তাম না। মৌসুমি, ওই মৌসুমি! আমার তলপি তলপা রেডি কর। আমি এহনই যামু গা। থাকতাম না আমি। তুই থাক তোর বউমারে লইয়া!”
———–
–“নানুকে চেতিয়ে দিয়ে আসলেন কেন?”
–“না চেতালে শোধরায় না। তুমি টেনশন করো না। আমি মার্কেট যাচ্ছি!”
–“কেন?”
–“নতুন বউ এনেছি। ভালো শাড়ি, জামা-কাপড়, কসমেটিকস না আনলে চলে? তাঁর উপর আজ আমাদের বাসর রাত! ফুল দিয়ে ঘর সাজানোর ব্যবস্থা করতে হবে না বুঝি?”
বলেই ইরা’দ চোখ টিপ দিলো। ইরা’দের কথাগুলো শুনে নওরির গাল এবং কান গরম হয়ে এলো। সর্বাঙ্গ জউড়ে শিহরণ খেলে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে ফেললো সে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে কথা ঘুরিয়ে বললো,
–“নানুর পায়ে কী ব্যথা আছে?”
–“তা তো সবসময়ই থাকে। কেন?”
–“তেল গরম করে মালিশ করে দিতাম!”
–“পটানোর বুদ্ধি বুঝি?”
নওরি চট করে ইরা’দের দিকে চাইলো। ধীরগলায় বললো,
–“কারো রাগ, ক্ষোভের কারণ হতে চাই না আমি সাহেব। নিজের মধ্যে ভীষণ অস্থিরতা কাজ করে।”
®লাবিবা ওয়াহিদ
———————-
~চলবে, ইন-শা-আল্লাহ্।
খুব জলদি জলদি টাইপ করেছি। হাতে সময় কম বিধায় রিচেকটাও ঠিকমতো করতে পারিনি। তাই ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠনমূলক মন্তব্যের প্রত্যাশায় রইলাম।