#এক_মুঠো_প্রেম_রঙ্গনা
[২য় পরিচ্ছেদ]
৩৪.[বর্ধিতাংশ]
–“কী হলো মা? কপালে হাত দিয়ে বসে আছো কেন? আমি তো ভাবলাম বিয়েই শানাই বাজছে তোমার কন্ঠে।”
বিদ্রুপ করতে করতে-ই ইরা’দ জগ থেকে গ্লাসে পানি ঢালছে। হাসি আড়াল করে গ্লাসের দিকেই চেয়ে আছে ইরা’দ। তাঁর ভাবার চেয়েও মায়ের ভঙ্গি বেশি হাস্যকর। কেমন শান্তি, শান্তিও অনুভব হচ্ছে তাঁর। যাক, এবারের যাত্রায় বিয়ের ঘ্যানঘ্যান থেকে নিস্তার পেলো সে। মৌসুমি কপাল চাপড়িয়ে বলে,
–“কিসের বিয়ে!? বিয়ে ক্যান্সেল! এমন চরিত্রহীনা মেয়ের সাথে আমি তোর বিয়ে দিব না!”
ইরা’দ অবাক হওয়ার ভঙ্গি করে বলে,
–“মানে?”
–“মানে পুঞ্জি বাদ। মেয়েটা আমার ভাবনার উল্টোটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেখ না, এখনই মেয়েটার ওই প্রেমিক ফোন করেছে। কিসব বলেছে ছিঃ! থুঁ থুঁ ফেলতে ইচ্ছে করছে আমার।”
ইরা’দ ফিক করে হেসে দিয়ে বলে,
–“আরও যাও সুন্দরী মেয়ে খুঁজতে। তুমি খুঁজলে তো এমনই হবে!”
ফুঁসে উঠলেন মৌসুমি। ক্ষিপ্ত স্বরে বলে ওঠে,
–“কী বলতে চাইছিস তুই? আমি অন্ধ? মেয়ে চেনার ক্ষমতা আমার নেই?”
–“তোমার ক্ষমতা তো চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি না। আ’ম সো প্রাউড অফ ইয়্যু!”
মৌসুমি চুপসে গেলেন। ছেলের সামনে এভাবে সম্মানহানি হবেন বুঝতে তা মৌসুমি পারেননি। তাই নীরব থাকাকেই তিনি শ্রেয় মনে করলেন। ক্ষণিক সময় পর ইরা’দ আবার বলে ওঠে,
–“এসব বাদ দাও মা। ভালো বউ যেহেতু চাও, সেহেতু আরেকটু ধৈর্য ধরো। সঠিক সময় আসলে আল্লাহ্ ভালোটাই মিলিয়ে দিবেন। তোমার এত গলিতে গলিতে মেয়ে খুঁজতে হবে না। আপাতত নিজেও শান্তিতে থাকো, আমাকেও থাকতে দাও। ফর গড সেক!”
ইরা’দ নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। মৌসুমির কপালের হাত ততক্ষণে গালে গিয়ে ঠেকেছে।
——————
চলন্ত গাড়িতে ইরা’দ আনমনে জুম করে নওরির ছবি দেখতে ব্যস্ত। মুখ-ভঙ্গি তাঁর ভীষণ গম্ভীর। তাঁর পাশেই নওরি বসে আছে নাক লাল করে। তাঁর নাক লাল কষ্টে হয়েছে নাকি রাগে, তা বড়োই চিন্তার বিষয়। নওরি ইরা’দের কান্ড দেখে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অভিমানের সাথে বিড়বিড়ায়,
–“আস্ত মানুষটা পাশে থাকা সত্ত্বেও সে ফোনে ছবি দেখতে ব্যস্ত। ঢং যেন বেয়ে বেয়ে পরে!”
ইরা’দ পাশ ফিরে তাকালো। হঠাৎ নওরির গাল টেনে নিজের কাছে নিয়ে এসে বলে,
–“এতই যখন আমার চিন্তা তাহলে ওই ছেলের সাথে কথা বলতে গেছিলে কেন? বলতে পারলে না তুমি বিবাহিতা? মুখে বলতে না পারলে নাকের নথ কেন দেখালে না?”
নওরি ইরা’দের থেকে নিজের গাল ছাড়িয়ে, গালে হাত বুলাতে বুলাতে ভাঙা স্বরে বলে,
–“নথ তো আমার নিকাবের নিচে ছিলো। এখন আপনার জন্যে কী নিকাব উঠিয়ে দেখাবো, যে দেখেন আমার নাকে নথ, মানে হচ্ছে আমি বিবাহিতা? এ-ই চাইছিলেন আপনি? এসব অদ্ভুত ভাবনা আসে কোথা থেকে আপনার?”
ইরা’দ সরু চোখে নওরির দিকে পর্যবেক্ষণ করে হাতের ফোন রেখে দিলো। অতঃপর নওরির মুখের নিকাব টেনে দেয়ার চেষ্টা করতে করতে বলে,
–“খবরদার এই মুখখানা আমি ব্যতীত কাউকে দেখিয়েছো তো! এটা আমার তৃষ্ণা মেটানোর, প্রাণ হারানোর সম্পদ। সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত আমার-ই!”
নওরি ইরা’দকে উপেক্ষা করে অন্যদিকে ফিরে গেলো। সে কী দেখিয়েছে নাকি ছেলেটাকে নিজের মুখ? সে তো সেধেও ছেলেটার সাথে কথা বলতে যায়নি। ডাক দিয়েছে কিছু নোট’স নেওয়ার জন্যে। এখন নোট’স দিতে গিয়ে টুকটাক কথা হয়েছে এতেই এত হাইপার? পড়ার কথা ছাড়া তো আর কোনো কথাই হয়নি।
বড্ড অভিমান হয়েছে আজ মানুষটার উপর। এখন অভিমান না দেখালে চলে? একজন-ই যে প্রিয় মানুষ নওরির। তাকে ব্যতীত আর কাকে অভিমান দেখাবে শুনি? কিছু সময় অতিবাহিত হলো। কারো মুখে কোনো টু-শব্দও নেই। হঠাৎ ইরা’দ নওরিকে টেনে নিজের বুকে আগলে নিলো। আকস্মিক ইরা’দ কাছে টানায় নওরির ভেতরে শিহরণের স্রোত খেলে গেলো। শিরশির করে উঠলো সর্বাঙ্গ। পরমুহূর্তে ইরা’দের বুকে নিজের ঠাই পেয়ে নওরির আবেশে চোখ বুজে এলো। ইরা’দ ফিচেল হাসি দিয়ে বলে,
–“আচ্ছা, ওকে। আর বকবো না। এখন থেকে ছেলেদের থেকে দূরে থাকবে, ঠিক আছে? বউদের এত অভিমান করতে নেই। শুনেছি বউ’রা অভিমান করলে চুলোয় হাড়ি উঠে না। তুমি আবার ওদের মতো ধানিলংকা রূপ নিও না নৌরি পাখি। স্বামীদের অভুক্ত রাখতে নেই।”
নওরির এবার অভিমান হলো না। বরং ইরা’দের বক্তব্যে চাপা স্বরে হেসে উঠলো। হাসি চাপা হলেও বেশ প্রাণখোলা। বউকে প্রাণ খুলে হাসতে দেখে ইরা’দের অধরেও তৃপ্তির হাসি ফুটলো।
————-
নিদ্র এবং ফ্রিশা অপরাধীর মতো পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। নিদ্র’র নজর মাটিতে হলেও ফ্রিশা মাথা উঁচু করে আশেপাশে চোখ বুলাচ্ছে। তাদের সামনেই নূরজাহান ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে বসে আছে। লতিফা পাশেই দাঁড়িয়ে ন্যাকা কান্না করে নূরজাহানের কান ভারী করতে ব্যস্ত। এখনো সে বিধ্বস্ত অবস্থায় আছে। নিদ্র ফ্রিশার ভাব দেখে মিনমিন করে আওড়ালো,
–“আমার আজ ফ্রিশার মতো বিড়াল হচ্ছে ইচ্ছে করছে। ওয় তো শা!স্তি পাবে না, বরং ডাবল শা!স্তি আমি-ই পাবো! পালাতে পারতাম, ধ্যাত!”
নূরজাহান সব শুনতেই তাঁর চোখ দিয়ে আ!গুন বের হওয়ার উপক্রম। কর্কশ কন্ঠে বলে ওঠে,
–“নিদ্র! কান ধর এক্ষুণি!”
নিদ্র মায়ের বাধ্য ছেলের মতো কান ধরলো। নূরজাহান দ্রুত ভেতরের রুম থেকে বিছানার শলা নিয়ে আসলো। নিদ্র’র দিকে সেটা তাক করে হু!ংকার ছেড়ে বললো,
–“এসব কী? তোকে বাসায় রেখে গিয়েছি কী এসব করতে? ফাজিল ছেলে! কেন করেছিস এসব? দিনকে দিন বাঁদড় হচ্ছিস শুধু তাই না? আজ তোর বাঁদরামি ছুটাবো!”
নিদ্র কান ধরেই বলে ওঠে,
–“ফটকি বেগম আ…”
–“চুপ! সম্মান দিয়ে ডাক!”
নিদ্র জিহবা দিয়ে ঠোঁট ভিঁজিয়ে বলে,
–“লতিফা খালা বাজে কথা ছড়িয়েছে নওরি ফুলের নামে আম্মু।”
মুহূর্তের জন্যে থমকে গেলেন নূরজাহান। বলা বাহুল্য, এক প্রকার তব্দা খেলেন। একপলক লতিফার দিকে তাকালেন। লতিফা তখন ঘাবড়ে গুটিশুটি মে!রে দাঁড়িয়ে। নূরজাহান তাকালে লতিফা অপ্রস্তুত হয়। আমতা আমতা করে বলে,
–“মিছা কথা আপা। আমি কেন বলতে যামু?”
এবার নিদ্র তীব্র প্রতিবাদ জানালো। কান ছেড়ে উঁচু গলায় প্রতিবাদ জানিয়ে বলে,
–“আমি মিথ্যা বলি না। তুমি মাজেদা নানুকে আর উপরতলার প্রথম ফ্ল্যাটের আন্টিকে বলেছো আমার নৌরি ফুল ছেলেদের সাথে পালিয়েছে।”
এবার চরম বিপাকে পরলো লতিফা। ক্ষণে ক্ষণে শুকনো ঢোঁক গিলছে সে। ইরা’দ এবং নওরি দুজনই মাত্র সদর দরজা দিয়ে ঢুকছিলো। নিদ্র’র প্রতিটি কথাই ওরা শুনেছে। এই কথাটি শুনে নওরির চোখের কোণ ভিঁজে এলো। এজন্যই বুঝি গত দু’দিন ধরে যে-ই তাঁর আশেপাশে পরেছে সেই তাকে কোণা দৃষ্টি দিচ্ছে? নওরি কোনো দিকে না তাকিয়ে নিজের ঘরে চলে গেলো। তাঁর পিছু নিলো ফ্রিশা। নওরি এবং ইরা’দকে দেখে লতিফার তো ভয়ে হৃদপিন্ডটা বেরিয়ে আসার উপক্রম। ভয়ে, আশঙ্কায় কখন না জানি স্ট্রোক করে বসে সে।
®লাবিবা ওয়াহিদ
—————————–
~চলবে, ইন-শা-আল্লাহ্।
পোস্টদাতাঃ মোডারেটর