অদৃষ্টের_মৃগতৃষ্ণা (২) #লেখনীতে_প্রোপীতা_নিউমী (ট্রিগার ওয়ার্ণিং: অন পেইজ ক্রা ই ম)

0
210

#অদৃষ্টের_মৃগতৃষ্ণা (২)
#লেখনীতে_প্রোপীতা_নিউমী
(ট্রিগার ওয়ার্ণিং: অন পেইজ ক্রা ই ম)

২.(Edited)

“মাহবুব রহমান, মিসেস কৌশিক কে দেখে রাখার দায়িত্ব কি রাজ্য-রাজা সামলানোর কাজ? খুবই ইজি টাস্ক ছিল। ইয়েট ইউ ফা ক ড আপ?”
জলের মতো শান্ত রুমে কৌশিকের গলা বজ্রের ন্যায় শোনালো মাহবুবের কর্ন কুহরে। দেড় ঘণ্টা সে মাথা নত করে দাঁড়িয়ে। দৃষ্টি মার্বেল ফ্লোরে সীমাবদ্ধ। আড়াই মিনিটের গাফিলতির ফল সারাজীবনের জন্য এই সেক্টর থেকে ব্যান হওয়া। তাছাড়া কৌশিক মির্জার শব্দ ভান্ডারে দ্বিতীয় সুযোগ তথা –‘Second Chance’ নামের কোন শব্দের অস্থিত্ব নেই।

“ লেভিন!”
বলিষ্ঠ দেহের লেভিন কৌশিকের দুই কদম পিছনে দাড়ায় কমান্ড শোনার অপেক্ষায়। সুঠাম তামাটে রঙের শরীর, বাম গালে তেরেছা করে অনেক পুরাতন একটা কাটা দাগ— স্পষ্টত ছু রি আঘাতের দাগ, বাঁকানো নাক— মারামারিতে হয়ত কেউ নাক ঘু ষি দিয়ে ফা টি য়ে ছে এমন।

“ মাহবুবের এজেন্সিকে কল করে ডিরেক্ট বলো, মাহবুবের মতো আরো থাকলে এই বিজনেস শাট ডাউন করতে। অর আল মেক সর অফ ইট (or I’ll make sure of it), এসব চুনোপুটি দিয়ে বিজনেস হবে না।‌ ফিল্ডে শিকারী শার্ক দরকার; শিকার নয়। কালকের মধ্যে নতুন প্রশিক্ষিত পাঁচজন হাইপ্রোফাইল গার্ড চাই।”

“ ওকে বস। ভোরের আগেই গার্ড রিক্রুট হয়ে যাবে।”

লেভিন দুটো গার্ডকে ইশারায় মাহবুবকে সরাতে বলে। মুহুর্তেই তারা মাহবুবকে বের করে দেয়। এই মাহবুবের জন্য তার বস যে রি’ভ’ল’ভার হাতে উঠায় নি সেটাই সাত রাজার কপাল।

কৌশিক তিরিক্ষ মেজাজে, মাথা চাপড়ে সোফার বসে পরে। এতো খোঁজাখুজির পরেও সদ্য বিবাহিতা স্ত্রী তিন ঘণ্টা ধরে লাপাত্তা দেখে সব ভাঙচুর করতে মন চাইছে। রাস্তায়, ঘাটে, অলিতে, গলিতে কোথাও বাদ পড়েনি। পাঁচ ফুট পাঁচ ইঞ্চির, পঞ্চান্ন কেজির পাতলা গড়নের মেয়ে কি হওয়া হয়ে গেলো?

পার্লামেন্ট সদস্য আর জনসমাচার তাকে শান্ত, মার্জিত, ক্যালকুলেটেড আর কালেক্টেড মানুষ দাবি করেন। তবে এই নিয়ন্ত্রন তার মারাত্বক এঙ্গার ইস্যুর সামনে ভাটা পরে। বউ ঘরে তোলার আগেই পালিয়েছে শুনলে মানুষ ঘাটাঘাটি করবে। তাই এবার নিজেকে আয়ত্বে রেখে নিরবে প্রদক্ষেপ নিয়েছে, বেশ আড়ালে আবড়ালে। তবে কৌশলে।

মির্জা পরিবারের মানুষও বেশ চিন্তায় ভুগছেন। এই মেয়ে যেন চারুলতার অবয়ব। চারুলতার রূপের প্রশংসা ছিল মুখে মুখে। মানুষের মুখের কথা অনুযায়ী, গগন কাপানো রূপের জন্যেই চারুলতা ধ্বংস হয়েছিল।
মির্জা বাড়ির ছেলে যে বহু আগে থেকে কাশফিকে বিয়ে করবে তা কম বেশী সকলে ধারনা করেছেন। একজন সাধারণ সরকারি স্কুলের মাস্টারের মেয়েকে কেন বিয়ে করবে কৌশিক? এই উওর পেতে কাশফি নিজের চুল কম ছিঁড়েনি।

মির্জা বাড়ির ছোট বউ মাধবী তার ভাসুরের ছেলেকে তো কম বোঝান নি! অনেক বুঝিয়ে ভুলিয়ে বলেছেন — “ বাবা কৌশিক কোনো প্রভাবশালী বা তোমার স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী একটা মেয়েকে বিয়ে করলে ভালো হবে। মন মেজাজ শান্ত করে বিবেচনা করে দেখো। দরকার হলে বড়মা তোমার পছন্দ মতো একটা বউ খুঁজে আনবো।”
অথচ কৌশিক কানেই নিল না। একরোখা কৌশিকের ভাষ্য মতে তার বর্তমানে যে পরিমাণ টাকা পয়সা আছে তা দিয়ে তার নাতি নাতকুল অনায়েসে খেয়ে যেতে পারবে। তাই সে কোন পাওয়ার হাঙরি এনিম্যাল কিংবা এটিএম মেশিন ঘরে তুলছে না।

আতিকুর রহমান যদি পরিস্থিতির মুখে না পড়তেন তবে বেঁচে থাকতে এমন ছেলের সাথে কখনই তার মেয়ের বিয়ে দিতেন না। কৌশিক মির্জাকে সর্বদা বিচক্ষণ শান্ত চরিত্রের দেখলেও বাস্তবে মুদ্রার এপিঠ ওপিঠ কেবল। স্বার্থপর, আত্ম’কে’ন্দ্রিক, চ’তুর, ব’দমে’জাজি, উ’গ্র স্বভাবের এক সত্ত্বা রয়েছে মুখোশের আড়ালে। কাশফি কৌশিক মির্জার খেলার গুটি নয়ত; স্বার্থ হাসিলের শর্টকাট কেবল।

কাব্য দুটো ফাইল হাতে হতদন্ত হয়ে কৌশিকের দোতলার বিশাল ভিলায় প্রবেশ করে। কৌশিককে সোফায় পেয়ে এগিয়ে গিয়ে ফাইল খুলে বাংলাদেশ থেকে আজকের যাওয়া সকল ফ্লাইট এর ডাটা গুলো এরেঞ্জ করে দেয়।

“ভাবী দেশেই আছে ভাই।”
টেবিলের উপর একটা জীপ-লক ব্যাগে পাসপোর্ট, বার্থসর্টিফিকেট, একটা পেনড্রাইভ আর এনাইডি সহ আরো কাগজ পত্র কৌশিকের দিকে এগিয়ে দেয়। কৌশিক ফাইলে চোখ বুলিয়ে সুধালো,
“ফোর্সের লোকেরা কোনো আপডেট শুনিয়েছে?”
বড় ভাইয়ের কর্কশ স্বরের জবাবে কাব্য ঢোঁক গিলে মাথা নাড়ায়—

“ তারা এখনো খোঁজ চালাচ্ছে, ভাবীকে শেষ এক চৌরাস্তার মোড়ে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গিয়েছে। সেই এলাকায় তন্ন তন্ন করে খোঁজা হয়েছে, তবে ভাবী সেখানেও নেই।”

কাব্যের বিশ্বস্ততা কৌশিক জুড়ে। ভাই এর কথার খেলাফ করা সে কখনো শিখেনি । কাব্য ভাবীকে আনার এক বিশাল দায়িত্ব কাঁধে চেপে ভাবির বান্ধবীদের জেরা করতে গিয়েছিল কিছুক্ষণ আগে। সেই মেয়ে মুখের উপর শব্দ করে দরজা লাগিয়ে কাঠ কাঠ কণ্ঠে বলেছে —

“দরজায় দরজায় ভিখ না খুঁজে; নিজেই খুঁজে বের করুন। বুক ভরে দোয়া রইল যাতে কোন অ মা নু ষের বা চ্চা আমার বান্ধবীর খোঁজ না পায়।”

কাব্যের শিরা উপশিরা যেন ফুলে উঠল তৎক্ষণাৎ। রাঁগে গজগজ করছিল। প্রতিটা শব্দ সূঁচের মত বিধলো গায়ে। এই মুহূর্তে গ্যা ঞ্জা ম করলে সমস্যা,‌ তাই মাথা ঠাণ্ডা রেখে এই মেয়ের বায়োডাটা মুখস্থ করে নিয়েছে। দাম্ভিক নাক উচা মেয়েটার নাম তরী আজিজ।

‘ ইন্টারেস্টিং বটে। ‘

***

ফোনে কল আসায় কৌশিক কল কেটে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে বের হয়ে আসে। গাড়ীতে উঠে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। একটা জরুরী মিটিং পড়ে গেছে সেখানে। গাড়িতে যেতে যেতে সময় লাগবে তাই ফ্লাইট বুক করে রেখেছে।

কৌশিক গাড়ী চালাতে চালাতে কানে ইয়ারপডস গুজে কল ব্যাক করে–
“স্যার তাকে তুলে আনা হয়েছে তবে শরীর বেশ দুর্বল তাই অল্পতেই ঢলে পড়েছে।”

কৌশিক নিজের নম্রতা বজায় রেখে বলে,
“শাল্যক সাহেব আমার বেশ ছোট। তাই তার স্বাস্থ্যের দিকে বিশেষ নজর দিবেন। বড় দায়িত্ব দিলাম কিন্তু।”
এই বলেই সে ফোন কেটে দেয়।

মিনিট পাঁচেক পর ফোন স্ক্রিনে মাধবপুরের এসআই আশরাফের ইনকামিং কল দেখে ধরে কপালে ভাঁজ পড়ে কৌশিকের। এই মুহূর্তে তার কল করার কোন কারণ তো নেই। গম্ভীর মুখে এসআইয়ের কল রিসিভ করে,

“আসসালামুআলাইকুম স্যার।”

“যা বলার সোজাসুজি বলো আমি বসে বসে খোশ গল্প করার মতো সময় হাতে রাখি না।”
কৌশিকের চাপা কণ্ঠ শুনে এসআই কিছুটা নেতিয়ে গেলেন। মনে মনে গুছানো যেসব কথা ভেবে রেখেছেন সেটাও যেন পাথরের মতো গলায় আটকে গেছে। নিজেকে একত্র করে মিনিমিনে সুরে বলেন— “স্যার একজন মহিলা নিজেকে আপনার স্ত্রী দাবি করেছেন।”

কৌশিকের কাধ ততক্ষনে সোজা আর মেরুদন্ড দৃঢ় হয়ে সতর্ক মূলক পজিশনে চলে এলো। ফুল এলার্ট মোড। অন্য লাইনে থাকা এসআই আশরাফ নির্জনতা কে গ্রীন সাইন ধরে লাই পেয়ে নিজের মতো বলতে লাগলেন—
“স্যার, ওই পাগল মহিলা বলছে আপনি নাকি তার উপর অত্যাচার করেছেন, জোর করে বিয়ে করেছেন। হেন তেন আরো কত কি! তার গায়ে কি জেলের হাওয়া লাগানোর ব্যবস্থা করব?”

কৌশিক ততক্ষনে ড্রাইভার কে নির্দেশনা দিয়ে গাড়ি ইউ-টার্ন দেয়। পার কিলোমিটার/আওয়ার স্পীড হান্ড্রেড ক্রস করেছে, উদ্দেশ্য মাধবপুর থানা। এসআই আশরাফের কথা শুনে চোয়াল শক্ত করে ঠান্ডা হু ম কি দিয়ে বলেন —

“জনাব আশরাফ মাহমুদ মুখ সামলে কথা বলবেন, যেই চাকরির দাপটে আমার বউ নিয়ে কথা বলছেন সেই চাকরি যেতে কতক্ষণ? আপনার ম্যাডাম, আমার ওয়াইফ, মিসেস কৌশিক শাহরিয়ার মৃন্ময় মির্জার যদি কোন অসুবিধা হয় তাহলে থানায় র ক্তের বন্যা বয়ে যাবে, বুঝেছেন?”
ঠান্ডা কথার হিম ধরানো থ্রেট শুনে এস আই আশরাফের মুখ নিমিষেই চুপসে গেলো। খানিকের মধ্যেই ঘাম ছুটে একাকাকার। পরমুহূর্তেই হাত পা জমে অবশ হয়ে এসেছে তিনি থানায় আসবেন শুনে।

“জি—জ্বি স্যার আর হবেনা, ম্যাডাম কে আমি নিজ দায়িত্বে দেখে রাখছি।”
খট করে ফোন কেটে দিতেই আশরাফ দৌড়ে এসে ওসি সাহেব সহ বাকিদের কৌশিকের আগমনের কথা জানায়। তাদের হাবভাব দেখে আন্দাজ করতে পারলেও কিছুক্ষণের মধ্যে সবকিছু পানির ন্যায় পরিষ্কার হয়ে যায় কাশফির কাছে। তার অন্তরআত্মা কেঁপে ওঠে। কোন জুলুম ছাড়াই কেউ শাস্তি পায়না তবে কাশফি পেয়েছে। ফুলো ফুলো চোঁখে আবার অশ্রু ভিড়েছে, ফু পি য়ে ফু পি য়ে কেঁ দে কর্কশ স্বরে চিৎকার করে উঠলো —

“ সবকটা অ মা নু ষে র দল, ছিঃ!”

এসআই এর মুখের উপর কাশফি থু থু ছিটিয়ে উঠে যেতে নিলেই মহিলা কনস্টেবল তাকে বুঝিয়ে ভালিয়ে রাখার প্রচেষ্টা চালালে, এইবার তাকে দমিয়ে রাখতে না পেরে চিল্লাচিল্লি হট্টগোল শুরু করে দেয়। তাকে চেপে ধরেও রাখা যাচ্ছে না, প্রতিবার হাহাকার আর আর্তনাদে ভরিয়ে দিচ্ছে কক্ষ খানা। হঠাৎ সূচের মতো সরু কিছু তার হাতে প্রবেশ করানোর পর হালকা ব্যাথার অনুভুতি এরপর পুরো শরীর অসাড় হয়ে যায়— পরক্ষণে দিনের আলো ভয়ংকর অন্ধকারে তলিয়ে যায়। ইনজেকশনের প্রভাবে কাশফির দেহ সম্পূর্ন শাট ডাউন করার পূর্বে একটা কথা শুনতে পায়, আর সে কথাটাই উপস্থিত সকলের আত্মা কাঁপানোর জন্য যথেষ্ট ছিল।

“লেভিন! আমার ওয়াইফকে এসআই আশরাফ যে ডোজ দিয়েছে তাকে অন ডিউটি সেই ডোজ দিয়ে কাজে থাকতে বলবে। স্বেচ্ছায় না নিতে চাইলে দুটো ডোজ জোর করে দিবে আর ডোজ নেওয়ার পর জাগ্রত থাকতে না পারলে তাকে বলে দাও আজই তার চাকরীর শেষ দিন।”

#চলবে…

(আগেই বলে রাখছি, প্রথম কয়েকটা পর্ব পড়ে আপনার সব মাথার উপর দিয়ে যাবে কারণ অদৃষ্টের মৃগতৃষ্ণা একটা সাসপেন্স থ্রিলার গল্প। শেষ না হওয়ার আগ পর্যন্ত আপনি পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারবেন না। তাই অনুরোধ রইলো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, পড়তে পড়তে কোনো কোনো লাইনে হিডেন ম্যাসেজ পাবেন, তলাশ করুন। প্রাপ্ত বয়স্ক এবং মুক্তমনাদের জন্য প্রযোজ্য। গল্পটা ক্রাইম, থ্রিলার এবং রোম্যান্স জনরার। আমার স্টাডি ব্যাকগ্রাউন্ড বিজ্ঞান কেন্দ্রিক ছিল এবং বাংলার প্রাধান্য কম থাকায় গল্পে বানান ভুল থাকতে পারে। কোনো সাহিত্য উপস্থাপন আমার লক্ষ্য নয়, ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)

আপনাদের মতামত জানাবেন, কমেন্ট পড়ে লেখার উৎসাহ পাই। ভালো লাগলে বন্ধুমহলে শেয়ার করে দিতে পারেন।
ধন্যবাদ ♥️

আগের পর্বের লিংক গ্রুপে পেয়ে যাবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here