ভালোবাসার_ফোড়ন #মিমি_মুসকান ( লেখনিতে ) #পর্ব_২৪

0
98

#ভালোবাসার_ফোড়ন
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_২৪

এখনো জরিয়ে রেখেছেন উনি আমাকে। আমার গলা দিয়ে আওয়াজ বেরুচ্ছে না। কি বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। কেমন জানি বাকরুদ্ধ হয়ে আছি। উনার এই স্পর্শ আমার চঞ্চলতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই প্রথম আমাকে ছুঁয়েছেন তিনি। আমার কাঁপা কাঁপি যেন আরো বেড়ে গেছে। আমি কাঁপা কাঁপা গলায় উনাকে ডাকলাম…
– আ..হি..য়া..ন

আমার আওয়াজ শুনে উনি এবার আমাকে ছেড়ে দিলেন। কেমন করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমি উনার চোখে যেন ভয় দেখতে পাচ্ছি। সেটা কি আমাকে হারানোর? জানি না তবুও এটাই মনে হচ্ছে আমার। আমি তাকিয়ে আছি উনার চোখে!

হঠাৎ উনি আমার হাত ধরে আমাকে একটা ধমক দিলেন। উনার ধমকে আমার ভাবনায় ছেদ ঘটল। লাফিয়ে উঠলাম। অতঃপর উনি বলতে শুরু করলেন…
– এখানে কি করছো তুমি? বলেছিলাম না আমার সাথে সাথে থাকবে? একা একা এতো দূরে কেন এসেছো। জানো পাগলের মতো খুঁজছিলাম তোমায়?

উনাকে দেখেই মনে হচ্ছিল কিছু খুঁজছিল সেটা যে আমাকে এতোক্ষণে বুঝলাম আমি। আমি কিছু বলতে যাবো এই আগে উনি আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগলেন আর বলতে থাকলেন…
– অনেক হয়েছে আর ঘুরা লাগবে না। এখন সোজা বাসায় যাবো, একদম ঢাকা’য়।

– কিহহহ?

– কথা বলবা একদম চুপচাপ চলো আমার সাথে!
উনার এমন ধমকানিতে আমি আর কিছুই বললাম না। উনি আমাকে ধরে গাড়ি’র কাছে নিয়ে গেল। দূরে অনেক ভিড়, অনেক মানুষ ‌ দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা হয়েছে ওখানে। আমি উনাকে জিজ্ঞেস করি…
– ওখানে কিছু হয়েছে?

আমার এমন কথায় উনি আমার হাত আরো শক্ত করে ধরলেন। কিন্তু আমার কথার জবাব দিলেন না। আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে দিলেন। আমি আবার জিজ্ঞেস করি…
– আমার মনে হচ্ছে কারো এক্সিডেন্ট হয়েছে ওখানে।

গাড়িতে বসে…
– চুপ করো তুমি, এতো বক বক করো কিভাবে। মুখ ব্যাথা করে না তোমার!

বুঝলাম না এমন কি বললাম যার জন্য এতো ধমকানি শুনতে হচ্ছে আমাকে। চুপ হয়ে গেলাম! উনি গাড়ি চালাতে শুরু করলেন। গাড়ি ওই ভিড়ের ‌পাশে দিয়ে গেলেন। আমি গাড়ি থেকে একটু দেখলাম। একটা মহিলা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তার শাড়ি পুরো আমার শাড়ি একরকম। দেখে মনে হচ্ছে যেন এটা আমি!
আমি অবাক হয়ে উনার দিকে তাকালাম। উনি একটি বার আমার দিকে তাকিয়ে আবার ড্রাইভে মনোযোগ দিলেন। আমি এবার বলতে শুরু করি..
– দেখলেন আপনি উনার আর আমার শাড়ি একরকম! মনে হচ্ছে যেন আমি।

উনি শান্ত গলায় বললেন…
– তুমি এই শাড়ি আর কখনো পড়বা না।

আমি অবাক হয়ে বলি…
– কিহহ কেনো? আপনি জানেন এই শাড়িটা আপনার দেওয়া প্রথম গিফট! পড়বো না কেন?

– বলেছি তাই! বাসায় গিয়েই চেঞ্জ করে ফেলে ফেলবা।

– মানে কি? ফেলবো কেন? নষ্ট হয়েছে নাকি শাড়িটা। কতো সুন্দর একটা শাড়ি! একেবারে নতুন!

– আমি বলেছি তাই! নতুন এমন ১০ টা কিনে দেবো এটা পড়বা না ব্যস।

– আরে এটা কেমন যুক্তি!

উনি কোনো কথা বললেন না। কেন জানি মনে হচ্ছে নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন উনি। আমি আর কথা বাড়ায়নি। আজব তো উনি বললেই কি ফেলে দেবো নাকি। কখনো না!

আমাকে নিয়ে বাসায় আসলেন। অতঃপর আমাকে সব গোছাতে বলেন কারন আমরা নাকি এখন’ই ঢাকা’য় রওনা দেবো। আমি অনেকটা অবাক হলাম। কি বলছেন কি উনি এখন’ই ঢাকায়। কিন্তু আমাদের আরো কিছুদিন থাকার কথা ছিল এখানে। তাহলে! তবুও উনার কথায় রাজি হলাম। সব গোছগাছ করলাম। গোছানোর কিছুই নেই কারন সব ব্যাগেই ছিল। তবুও একটু চেক করলাম। উনার জ্যাকেট এখনো আমার শরীরে। কেন জানি খুলতেই ইচ্ছে করছিল না। এমন সময় দাদু এলেন। উনি দাদু’র সাথে কথা বার্তা বললেন। দাদু আমাদের যেতে দিতে চাইলেন না কিন্তু উনি এক কথা নিয়েই বসে আছে। রাগে শরীর জ্বলছে আমার। আমি গিয়ে বলি ব্যাগ আনতে সব গোছানো হয়েছে। উনি আমার দিকে তাকিয়ে ‌যেন রেগে গেলেন। হুট করেই আমাকে ঘরে টেনে নিয়ে এলেন। বললেন ..

– বললাম না এই শাড়ি চেঞ্জ করো! করোনি কেন?

– বাসায় গিয়ে করবো। এখন চলুন!

– না এখন’ই করো।

– পাগল হয়ে গেলেন নাকি আপনি।কখন থেকে পাগলামি করে যাচ্ছেন। কি হয়েছে টা কি আপনার!

– নিহা কথা বাড়িও না যেটা বললাম সেটা করো।

– না আগে আপনি আমাকে বলুন হয়েছে টা কি? এতো তাড়াহুড়ো কেন করছি আমরা! কারনটা কি?

– নিহা!

– কি নিহা ! কিছু শুনবো না আমি! আমি যতক্ষন না বলছেন কি হয়েছে আমি কিছু করবো না ব্যস।
বলেই খাটে বসে পড়লাম।

উনি আমার দিকে কেমন করে জানি তাকিয়ে রইলেন। অতঃপর চোখ সরিয়ে বেরিয়ে যেতে নিলেন। ঠিক তখন বলে উঠি..
– আপনি কি ওই মহিলা কে আমায় ভেবেছিলেন।

আমার কথা শুনে উনি মুহূর্তে’ই থেমে গেলেন। আবারও ঘামতে শুরু করলেন। আমার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আমি আবার বলি..
– কি হয়েছিল তখন! আপনি হঠাৎ এতো উত্তেজিত কেন হলেন।

উনি আমার কাছে এসে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন..
– তখন কথা বলা শেষ করে একটা গাড়ির আওয়াজ পাই আমি। কি হয়েছে জানতে সেখানে গিয়ে দেখি একজন মহিলা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তার মুখ দেখা যাচ্ছে না কিন্তু শাড়ি তোমার মতো। খানিকক্ষণ’র‌ জন্য মনে হলো এটা তুমি! আমি কিছুক্ষণ ঠাঁই সেখানে দাঁড়িয়ে রইলাম। আমার কাছে লাগছিল যেন সব কিছু ধমকে গেছে। সময়টা যেন ওখানেই শেষ। নিস্তব্ধ হয়ে ছিলাম। হঠাৎ কেউ এসে উনার মুখ ঘুরালেন। তখন বুঝলাম ওটা তুমি না। কি খুশি হয়েছিলাম বোঝাতে পারবো না। হুট করেই মনে পড়ল আমার কাছে তুমি নেই। পাগলের মতো খুঁজতে থাকলাম তোমাকে। অনেক খোঁজাখুঁজি’র পর যখন তোমাকে পেলাম তখন ও বিশ্বাস হচ্ছিল না। মনে হচ্ছিল মনের ভুল!

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি, উনি কপাল কুঁচকে তাকিয়ে আছে। বিশ্বাস’ই হচ্ছিল না আমার উনি আমাকে এরকম ভাবে খুঁজছিলেন। আমি দাঁড়িয়ে বলি…
– সত্যি আপনি এমন ভাবে খুঁজছিলেন আমায়!

উনি এবার আমার কান মুলে দেয়। আমি চিৎকার করে উঠি….
– আম্মুউউউউ! কি করছেন ব্যাথা লাগছে তো!

– লাগুক। মজা নিচ্ছো তুমি! জানো কি কষ্ট হয়েছিল আমার!

মুখ ভেংচি দিয়ে বলি….
– মজা কেন নেবো, আমার সত্যি’ই বিশ্বাস হচ্ছে না আপনি আমায় খুঁজছিলেন!

– নাহলে নাই! একটা কথা কি জানো সব দোষ তোমার! আমার সাথে না থেকে একা একা ঘুরেছো কেন?

– বেশ করেছি। আপনাকে ছাড়া একা একা ঘুরতেই ভালো লাগছিলো।

– ভালা লাগা বের করাচ্ছি। ঘুরা ঘুরি বন্ধ এখন বাসায় যাবা।

– এটাই পারবেন শুধু। ভালোই হতো আমি মরে গেলে। আপনার জ্বালানি সহ্য করতে হতো না।

আমার কথায় উনি ‌অসহায় ভাবে আমার দিকে তাকালেন। অতঃপর কিছু না বলে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে গেলেন। আমি উনার পিছু পিছু গেলাম। দাদু কে বিদায় দিয়ে অবশেষে বের‌ হলাম আমরা। উনি গাড়ি ড্রাইভ করছেন আমি বসে আছি। দুজনের মাঝে নিরবতা। কেমন গম্ভীর হয়ে আছেন উনি! নিরবতা ভেঙ্গে বলি…
– কি হলো কিছু বলছেন না যে!

– তুমি শাড়ি টা চেঞ্জ করলে না নাহ!

– আরে রাখুন! ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। শাড়ির জন্য কখনো কিছু হয় না বুঝলেন।

উনি আমার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। আবার নিরবতা কাজ করল। আমি আবার বলে উঠি..
– আচ্ছা এই টপিক বাদ দিন। আমার কথা শুনুন। ঢাকা গিয়েই ইতি আর আকাশের কাজ টা সেরে ফেলতে হবে।

– এতো তাড়া কেন?

– আরে তাড়া দিতেই হবে। এই কয়েকদিন ভার্সিটিতে যায় নি ইতি এতোগুলো প্রশ্ন করবে তার মুখ বন্ধ রাখতে হলে এই কাজটা করতে হবে।

– বলবে বর এর সাথে ঘুরতে গেছি।

– তাহলে তো আমাকে ছাড়বেই না। জিজ্ঞেস করবে কোথায় গেলি, কি করলি, কি খেলি বাপরে বাপ! আবার বলবে তোর বর কে দেখা!

উনি আমার দিকে তাকিয়ে হেঁসে বলল..
– দেখিয়ে দিবা!

– কোনমতে না!

– কেন?

– আপনাকে আবার বর বললে ও জীবনেও বিশ্বাস করবে না শুধু ও কেন কেউ’ই করবে না।

– তাহলে আমি বলবো!

– না থাক বলার দরকার নেই।

– হুম তোমার ইচ্ছা।

রাতের মধ্যে বাসায় পৌঁছালাম আমরা। মা বাবা একটু অবাক হলেন কারন তাদের না জানিয়ে এসে পড়লাম। তাঁরা বেশি কিছু জিজ্ঞেস করেনি শুধু বললো ফ্রেশ হয়ে নিতে। অতঃপর ফ্রেশ হয়ে এসে সেখানকার গল্প করতে লাগলাম।‌ রাত টা এভাবেই পার করে দিলাম।

পরদিন খুব সাবধানে ভার্সিটিতে ঘুরা ঘুরি করছি তার কারনটা হলো ইতি!

#চলবে….

( প্রথমেই দুঃখিত, জানি আজকের পর্ব খুব ছোট হয়েছে। কিন্তু আমার কিছু করার ছিল। হসপিটালে যাবার কারনে এর থেকে বেশি লিখতে পারি নি। যদি পারি রাতে এই পর্বের ( বর্ধিতাংশ ) দেবো। ধন্যবাদ সবাইকে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here