#অদৃষ্টের_মৃগতৃষ্ণা (১২)
#লেখনীতে_প্রোপীতা_নিউমী
১২. (Edited)
সময়কাল: ২৫ অক্টোবর, ২০১৯ [যখন পাঁচ বছর পূর্বে কৌশিকের সাথে কাশফির প্রথম সাক্ষাৎ হয়।]
অতীত:
মৃ’ত্যু’র নিজস্ব স্বাদ আছে। ভী’তিকর, শি’উরে উঠা, শ্বা’সরু’দ্ধকর একটা স্বাদ। মুহূর্তেই জীবনের প্রতিটা ছোট বড় মুহূর্ত সেই এক নিশ্বাসে গুচ্ছিত হয়ে ধরা দেয়। কারো প্রা’ন কে’ড়ে নেওয়া মানে মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্তে ঘনীভূত অনুভুতির অসাড় হয়ে আসা যা নিতান্তই আ’ত্ম’ঘা’তী থেকেও যন্ত্রনাদায়ক। আর প্রাণ কাড়তে দেখা মানে প্রতি নিয়ত মৃ’ত্যু’র অপেক্ষায় নিজেকে উ’ন্মা’দ বানিয়ে ফেলা। সারা জীবনের সমাপ্তি ঘটে মৃত্যুর ক্লি’ষ্ট স্বাদ গ্রহণের মাধ্যমে, গুণী মানুষজন একে চূড়ান্ত সাফল্য বলে আখ্যা দিয়েছেন।
(Death has taste, it chokes and clenches out the entire life in a glance. It’s a game of either cold, icy or fierce, hot might be numbing. A feel of Numb is downright suicidal when somebody kills you but you can’t feel the pain. This pain is an ultimate, and nobles labeled it as success.
— Painted Scars by P. Newmi on Wattpad)
(বি:দ্র: ❌ চুরি করবেন না। ফিউনারেল এর পুরো থিম আমার গল্প Painted Scars এর অংশ। থিমটা ইনস্টায় আমার বুক রিলসে অনায়াসে পেয়ে যাবেন।)
মানুষ বলে ধ্বং’সে’র কোন রূপ নেই কিন্তু তার সামনে তার প্রান মুঠোয় নিয়ে স্বয়ং তা’ণ্ডব দাড়িয়ে ছিল।
তার ধ্বং’স অতি সুদর্শন রূপে হাজির হয়েছিলো। সুঠাম বলিষ্ঠ তামাটে রঙের দেহ, পেটানো শক্ত বুক, গলায় স্থিত এডাম অ্যাপেল, শক্ত মুখের ধা’রা’লো চোয়াল।
মাসকিউলিন বাহু ফ্লেক্স করে, তার ফোলা শিরান্বিত হাত যা মুহূর্তেই তার মতো চুনোপুঁটির শ্বাস কেড়ে নিতে সক্ষম। শক্ত হাতখানা শেষ বেলার সমুদ্রের ঢেউখেলানো চুলের ফাঁকে লম্বা লম্বা আঙুল ফেলে ব্যাক ব্রাশ করে শৃঙ্খল করে নেয়।
কৌশিক মির্জা ইজ দ্যা পারফেক্ট ডিফেনেশন অফ আ ট্রু হ্যান্ডসাম হাঙ্ক।
“Well, you are truly doomed.”
আবার সেই শক্ত পুরুষালি গলা তার কানে তরঙ্গায়িত হয়ে কাঁপিয়ে দেয় তার মেয়েলি নরম কায়া।
তখন শোনা মাত্রই সে ব্যালকনি থেকে বেরিয়ে পর্দার আড়ালে এসে গলার বড় ওড়নায় মুখে চেপে ধরে। কোনো দিন স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেনি যে, কারো ফিউনারেলে এসে একটা কো’ল্ড-ব্লা’ডে’ড মা র্ডা রে র চক্ষু সাক্ষী হয়ে যাবে। কাশফির মনে হচ্ছে তার ভিতর থেকে সবকিছু এখনই বেরিয়ে পরবে, বার বার র’ক্তে’র কথা মনে পড়ছে, মাটিতে লুটিয়ে পরা নিথর দেহ খানা মস্তিষ্কে ফিট হয়ে গিয়েছে। সে দুই হাতে মাথা টিপে ধরে বুকে হাঁটু মুড়ে ফ্লোরে বসে পরে হুঁ হুঁ করে কেঁদে উঠে। মনে পড়ে যায় আবার,
“রোয়ান বেশ চওড়া দামে তাহলে তোমার বিশ্বস্ততা কিনে নিয়েছে। এক্সাকটলি কত? ত্রিশ নাকি পঁয়তাল্লিশ? আমার জানা মতে এইদুটো তার লাকি নাম্বার। ”
“না—
“আমার সাথে প্রতারণা করে এখন অভিনয় করছ? আবার মিথ্যে বলছো? তিনটা ভুল— চরম ভুল! তোমাকে দুটো পথ দিচ্ছি, স্বীকার করে নিজের নিয়তি কে বেছে নাও আর নাহয় প্রত্যাখ্যান করতে থাকো তোমার মৃ ত্যু কঠিন থেকে কঠিন হবে!”
কৌশিক মির্জার বদনে হিং’স্র’তা, তার রিভলভার ভীতু সাইফুলের দিকে তাক করা। সাইফুল হয়ত বুঝার সময়টুকু পর্যন্ত পায়নি। পরক্ষণে সাদা শার্টে সাইফুলের তাজা র’ক্তে’র ছিটে ফোঁটা ছড়িয়ে পরা। একটা বুলেট নিমিষেই সাইফুলের বুকের বাম পাশ ভেদ করে ঢুকে তারপর স্পট ডেথ।
দশ মিনিট পর নিজেকে ধাতস্থ করে রুমে ফিরে, বুকের বেগতিক উঠানামা দেখে যে কারো মনে হবে ম্যারাথন দৌড়ে এসেছে সে। । তার হাত দুটো নোংরা নোংরা মনে হচ্ছে, কাউকে কোন কৈফিয়ত না দিয়ে সোজা ওয়াশরুমে ঢুকে হাত জোড়া ঘষে ঘষে ধুতে লাগলো; কেন জানি মনে হচ্ছে এখনো র’ক্ত লেগে আছে।
বেসিনের আয়নায় নিজের প্রতিবিম্ব দেখে বার বার পানির ঝাপটায় মুখ পরিষ্কার করে নিল। কয়েকটা জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে বেরিয়ে পরলো।
***
ফিউনারেল শুরু হয়েছে কয়েক মিনিট আগে, একজন প্রিস্ট কফিনের সামনে দাঁড়িয়ে লাশের উদ্দেশ্যে ইউলোজি(eulogy) পাঠ করে প্রার্থনা করছেন। ফেলিক্সের স্ত্রী, তার বড় ছেলে আর তার মেয়ে অ্যাবি পোডিয়ামে দাড়িয়ে তাদের ইউলোজী পড়ে শেষে কফিনের উপর চুমু দিয়ে নেমে চলে যায়। আনমনা কাশফি এতক্ষন জানলার পাশে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে যাচ্ছে, তাদের কিছুতেই তার মনোযোগ নেই। হঠাৎ খুবই চেনা একটা কর্কশ, পুরুষালী কণ্ঠ প্রতিধ্বনিত হয় পোডিয়ামের স্পিকারে। গলাপরিষ্কার করে জানালো —
“এখানে উপস্থিত সবাইকে একটা শোকাহত আফটার্নুন।”
একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে কৌশিক মির্জা সবার দিকে একবার চেয়ে নেয়। এখন গায়ে র’ক্ত মাখা শুভ্র শার্টের পরিবর্তে একটা কালো শার্ট, কালো সুট, কালো টাই, সম্পূর্ণ কালো গেটআপ। চেহারায় আগের ন্যায় হিং স্র তা র পরিবর্তে একটা শক্ত ভাবমূর্তি দেখাচ্ছে, আগের বি’শৃঙ্খল কৌশিক মির্জা আর এখনকার তথাকথিত রাজনীতিবিদ, শান্ত, ভদ্রলোক কৌশিক মির্জার মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ। কিঞ্চিৎ হেসে কৌশিক মির্জা ইউলোজি উপস্থাপন করলেন—
“আমরা সবাই আজ এখানে একত্রিত হয়ে ফেলিক্স স্টোনের শেষ বিদায় হাসিমুখে দিতে এসেছি। মিসেস স্টোন, মিস্টার সেবাস্টিয়ান স্টোন আর মিস অ্যাবিইগাল স্টোন আমরা সবাই গভীরভাবে শোকাহত, তার প্রস্থান এত দ্রুত হবে হয়ত আমরা কেউ কল্পনা করতে পারিনি। আমাদের পাশে ফেলিক্স স্টোনের অবদান অসামান্য, সিনিওর হিসাবে হাতে ধরে অনেক কিছুই শিখিয়ে গিয়েছেন…”
কাশফি সেই বক্তৃতায় আর মনোযোগ রাখলো না কেবল অপলক চেয়ে রইল মানুষটার দিকে, ভালো খারাপ মিলিয়ে পৃথিবীতে বৈচিত্র্যতা অনেক তবে কৌশিক মির্জার মতো বহুরূপী সে খুবই কম দেখেছে, গিরগিটি থেকেও দ্রুত রঙ পাল্টে ফেলতে পারে এই মানুষ। কাশফি বুঝে পায়না কিভাবে একটা লাশের বিদায়লগ্নে উপস্থিত হয়ে অন্য জনের জন্য চাল চেলে নিজ হাতে হ ত্যা করে সে এতটা স্থির থাকতে পারে…
সুদর্শন পুরুষ কৌশিক মির্জা যেন মরুভূমি সাহারার মরীচিকার ন্যায়।
আজকের ঘটনা ভুলার লক্ষ্যে সে মাটিতে শুকনো ঘাসেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগলো। তবুও মাথা থেকে সেই রি’ভ’ল’ভার ধরে দাড়িয়ে থাকা শ’য়’তা’নের ছবি সে বের করতে অক্ষম। নিজের উপর বিরক্ত হয়ে শক্ত করে ঠোঁট কামড়ে ধরে, তার হাত পা আবার নিশপিশ করছে ধোঁয়ার জন্য। মনে হচ্ছে সাইফুলের র’ক্তে’র ছিটেফোঁটা অ মা নু ষ মির্জার গায়ে নয় তার গায়ে লেপ্টে আছে।
ভাবনায় ডুবে থাকা কাশফি কারো তীক্ষ্ণ দৃষ্টি উপলব্ধি করতে পেরে মাথা উচুঁ করে ডানে বামে তাকিয়ে আবার সামনে ফিরতেই যেন দম আটকে আসলো, বুকে হাত দিয়ে জামা খাঁ’ম’চে ধরে, হৃদপিণ্ডের উঠানামা অস্বাভাবিক রকমে বেড়ে গিয়েছে। তাদের মাঝে এত দূরত্ব থাকার সত্বেও কৌশিক মির্জার নিষ্প্রাণ ছাই রঙ্গা শিকারী বদন জোড়া তার উপর স্থির। এতখানি দূরত্ব যেন নিমিষেই বিলীন হয়ে গিয়ে তাদের একে অপরের সামনে দাড় করিয়ে দিয়েছে। কাশফি ভ্রুদ্বয় কুঁচকে ফেলে, লোকটাকে প্রতিবার দেখে সে আ’ত’ঙ্কি’ত হয়ে পড়ে।
হঠাৎ করে তাদের গ্রামের এক নানাজানের কথা মনে পড়ে যায়, তিনি বলতেন যেই স্থানে দুষ্টু জ্বীন, খারাপ কিছু বা শয়’তা নের আনাগোনা থাকে সে জায়গাটা আলগোছে বোঝা যায়। কৌশিক মির্জার উপস্থিতি ও কী তাই? অ’শুভ, অম’ঙ্গল। কৌশিকের অপলক চাহনির দিকে কাশফি মুখ কুঁচকে একরাশ ঘৃণা ছুঁড়ে দিল, তবুও কৌশিকের কোন হেলদোল নেই।
ত্রিশ সেকেন্ড
দুই মিনিট
পাঁচ মিনিট….
অতি নৈপুণ্যে নিজের ভঙ্গিমা আড়াল করে খুবই ধীর গতিতে কৌশিক মির্জার কালচে ঠোঁটের কোণ উপরে উঠে, ক্রুর হাসির সংস্পর্শে মুখ অবয়ব যেন পাল্টে কেবল হিংস্রতা বিরাজ করছে। কাশফির চোঁখে বার বার র’ক্তে’র আর নিথর দেহের প্রতিচ্ছবি ভাসছে। কাশফির চোঁখে মুখে ভীতি দেখে কৌশিক মির্জার চোখ চকচক করে উঠলো, সাথে সাথেই কাশফির মনে পড়ে গেল সাইফুলকে মেরে ফেলার আগে তার দৃষ্টির কথা, ঠিক একই রকমের দৃষ্টি ছিল। পরক্ষণে মনে হলো সে কোন সাইকোপ্যাথের কম নয়।
কৌশিক মির্জা মুলত মানুষের ভীতি, ক’ষ্ট আর য’ন্ত্রনা উপভোগ করে। মুহুর্তেই তার মাথা ভার হয়ে সারা শরীর আসাড় হয়ে যাওয়ার জোগাড়। পাশের ইজি চেয়ার ধরে নিজেকে ধাতস্থ করে মাথার চুল টেনে ধরে বসে পড়ে। চোখ, মুখ, গলা, সারা শরীর তার জ্বালা করছে, মনে হচ্ছে সে নোংরা হয়ে আছে। দৌঁড়ে ওয়াশরুমে যেতেই বমি করে ভাসিয়ে ফেলে।
যেন দূর থেকে কেউ শব্দ সহযোগে ক্রুর হেসে বলছে—
“Here comes nothing…”
***
বাসায় আসতে আসতে প্রায় সন্ধ্যা, কাশফি শাওয়ার ট্যাপ ছেড়ে সারা শরীর জোরে জোরে ঘষতে লাগলো— বেশ খানিকক্ষণ ঘষার পরও মনে হচ্ছে র’ক্ত উঠছে না। ঘষে ঘষে সারা শরীর জ্বা’লা পোড়া করছে আর না পেরে সে ফ্লোরে বসে পড়ে, জোরে জোরে চিৎকার করে কেঁদে অবাধ্য অশ্রুদের আজ মুক্ত করে দেয়। প্রতিটা নোনা বিন্দু শাওয়ারের পানির সাথে ধুয়ে যাচ্ছে তবে আজ যেন অন্ত নেই। আজকের ঘটনা তার দুঃ’স্বপ্ন গুলো বাস্তব হয়ে দাঁড়ানোর মতো।
দেড় ঘণ্টা পর নাক টেনে, কাশি দিয়ে, চুল মুছতে মুছতে আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায় সে। চোখ লাল হয়ে মুখ খানা ফ্যাকাশে হয়ে আছে, হাতে পায়ের আঙুল শুকিয়ে আছে। ফোন হাতে নিয়েই তার ভীত হয়ে থাকা শুকনো বদন র’ক্তশূন্য হয়ে এলো। ফোনের স্ক্রিনে জ্বলজ্বল করছে ছোট বার্তা —
“নিজে আড়ালে থেকে আপনাকে দূরে থাকার সুযোগ দিয়েছিলাম কাশফি কিন্তু নিয়তি এনে একসাথে দাড় করালো। অনেক ‘কেনো?’ আপনার মনে জাগ্রত হবে তবে জানেন তো সব ‘কেনো?’ এর উত্তর হয়না।”
কাশফি! সে তাকে কাশফি কেন ডাকলো? এই নামে ডাকা তার পছন্দ না। মুলত কাশফি নামটা চারুলতা আর তার বাবা উভয়ের পছন্দে রাখা। তবে স্বভাবত চারুলতা কে অপছন্দ করায় এই নাম ব্যবহার করতে সে অস্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে।
তার মাথা ঘুরছে যেন, ফোন আঙ্গুলের ফাঁক পিছলে পরে গেলো। তার পা পিছিয়ে নিয়ে দেওয়ালে পিঠ ঠেকলো। চোঁখ শক্ত করে বন্ধ করে নেয়,
রিভ’লবারের ট্রি গা রে কৌশিকের লম্বা আঙ্গুল, নিথর দে হ, র ক্ত, নিস্তব্দতা…
“Well, you are truly doomed.”
খট করে চোখ খুলে ঘনঘন শ্বাস প্রশ্বাস নেয়। সে এখন নিরাপদ, কৌশিক একটা খানিকের ভীতি ছিল আর কিছুই না। এসব শুধু ভয় দেখানো, নিজের প্রভাব বজায় রাখার কৌশল মাত্র…
কাশফি আশেপাশে তাঁকিয়ে তার খালি রুমটা দেখে নেয়। বাইরের হুতুম পেঁচার ডাক আর ঝিঁ ঝিঁ পোকার মিইয়ে যাওয়া শব্দ বাতাসে ভেসে আসছে। মনে মনে ঢের সান্তনা দিয়ে নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক করে নেয়। ঢুলুঢুলু অবস্থায় দেওয়াল থেকে সরে যায়। হাতের তালুতে চোঁখের কোনে জমা পানি মুছে দুর্বল পা বাড়িয়ে দেয় ফোনের অগ্রসরে। নিজের ভাবনায় বিভোর কাশফি ঘুর্ণক্ষরেও টের পেলো না কারো নিঃশব্দে প্রবেশ। একটু ঝুঁকে ফোনটা নিতে যাওয়ার আগেই আকষ্মিক একটা হাত তার মুখ চেপে ধরে…
#চলবে….
Note: অতীতের পর্বে অনেক ক্লু রাখা আছে, মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকুন।