অদৃষ্টের_মৃগতৃষ্ণা (২১) #লিখনীতে_প্রোপীতা_নিউমী ২১. (Edited)

0
67

#অদৃষ্টের_মৃগতৃষ্ণা (২১)
#লিখনীতে_প্রোপীতা_নিউমী

২১. (Edited)
অতীত:

“চরম পর্যায়ের বোকা ঈশিতা ইমরোজ কাশফি।
আশা করি তোমার মস্তিষ্ক বর্তমান আর অতীত নিয়ে গুলিয়ে ফেলেছে। তবে কি জানো? অতীত আর বর্তমানের মাঝে খুবই সূক্ষ্ম একটা প্যারানরমাল লাইন থাকে। জোর গলায় বলছি সেই লাইন খোঁজার সাধ্য তোমার নেই। আজ বহু বছর ধরে বাজে রকমের একটা গোলক ধাঁধায় ফেঁসে আছো তুমি। অথচ আঁচ করতে পারছো না যে, তোমার বোর্ডের দাবার চাল অন্য কেউ তোমাকে বানিয়ে চালছে। বড্ড আফসোস হয়! মুখোশের আড়ালে একজন তোমায় পুতুলের মতো যেমন ইচ্ছে তেমন করে নাচাচ্ছে। নেহাতই বোকা তুমি ঈশিতা।

ইতি,
তোমার ভাগ্য নিয়ে উপহাস করা আগন্তুক।”

ক্লাস শেষে বেরিয়ে আসার পর ফোনে এমন একটা উদ্ভট ইমেইল বার্তা পেয়ে কাশফির চোঁখ ছানাবড়া। ভয় হানা দিয়ে উথালপাতাল করে তুললো তার ভেতর। নিজের ব্যাপারে খুবই কনসার্ন সে! তবে কি অগুন্তুক তার অতীত সম্পর্কে অবগত?
নিজের ‘ইমেইল’ ডক্টর ইয়াহিয়া খান ছাড়া আর কাউকে দেয় নি সে। তবে কি কেউ মজার ছলে এমন করেছে? নিজের করা প্রশ্নে সে নিজেই বিরক্ত। আদো কি কেউ মজার ছলে এসব করবে?
প্রেরকের ইমেইল এড্রেস নামহীন। কাশফি হতাশার শ্বাস ফেলে ফোন ব্যাগে ভরে নেয়। তবে তার মনের ভয় দিন দিন বেড়েই চলছে। বিগত তিন চারটে রাত হতে সে স্বপ্নে নীল শাড়ি পরিহিতা কিশোরী নীলাম্বরী কে দেখেছে। ম’র্মা’ন্তিক নীলাম্বরীর ক’রু’ন চিত্র। নীল শাড়িতে তাজা র’ক্তে’র ফোঁটা নিয়ে নীলাম্বরী তার কাছে যেনো প্রাণ ভিক্ষা চেয়েছিল বারবার। নীলাম্বরীর মলিন মুখ যত বার দেখছে ততবারই যেনো তার আত্মা কেঁপে উঠে, গলা শুকিয়ে কাঠ কাঠ হয়ে যায়। কি এমন হয়েছিল কাশফির সাথে যে সে সাহায্যের জন্য আকুল আবেদন করেছিল? নীলাম্বরী কি আদো কাশফি ছিলো?
হোক বা না হোক কিন্তু নীলাম্বরী ঠিক কতটুকু বেদনার শিকার ছিলো?

ইদানিং ক্যাম্পাসের মানুষ জন তার দিকে বাঁকা নজর দেয়। কানাঘুষা করা লোকজন কৌশিক মির্জা আর তার নাম জোরপূর্বক জুড়ে দিয়েছে। তবে আজ কাশফি এসব কিছুর তোয়াক্কা না করে হেঁটে চলল। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো আজ সে পাশ্ববর্তী শহরের উদ্দ্যেশে রওনা হবে, এই মুহূর্তে এসব জটলা খোলার উপায় একটাই।

কাশফি লম্বা লম্বা কদম ফেলে তার জন্য দাড়িয়ে থাকা রিক্সায় চড়ে বসলো। দাঁত কেলিয়ে দাড়িয়ে থাকা রিক্সা চালক কে ইশারায় জানালো চলতে। বাসায় ফিরতে পনেরো মিনিটের মতো সময় লাগলো। সে বাসায় প্রবেশমাত্রই ফোনের কন্টাক্ট লিস্ট থেকে একজনকে কল লাগালো। ফোন রিসিভ হওয়ার পর দুই পক্ষ অভিবাদন পর্ব চুকিয়ে জানালো,
“আজ বিকালের জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট রাখবেন, ধন্যবাদ।

কাশফি ফোন কান থেকে নামিয়ে কিছু একটা টাইপ করে নেয়। কাজ শেষে কায়েসের কামরায় ঢুকে আলমারি থেকে ছোট্ট একটা ব্যাগ খুঁজে বের করে। ব্যাগে কায়েসের জামা কাপড়, ব্রাশ টুথপেস্ট আর দুটো বই ঢুকিয়ে সে হতবম্ব কায়েসকে নিয়ে বাসা লক করে বেরিয়ে পড়লো। তাদের বাড়ি থেকে কিছু দূরে এসে রাস্তার মাথায় একটা বাড়ির গেইটের সামনে দাড়ানো মাত্রই গেইট ঠেলে হাঁপাতে থাকা ফারাবী এসে দাঁড়ায়।

“ভিতরে এসে বোস!”

“সময় নেই রে, অন্যকোন দিন। আন্টি আঙ্কেল কে সালাম দিস।”

“তুই কোথায় যাচ্ছিস?”

“কাজে।”
কাশফির ছোট্ট উত্তরে ফারাবী বুঝে নেয় সে বলতে অনিচ্ছুক। ফারাবী মাথা দুলিয়ে কায়েসকে নিয়ে যেতে চাইলো, কিন্তু কায়েস মুখ কালো করে ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে রইলো। কাশফি হাঁটু গেটে বসলো কায়েসের সামনে,

“বুবু আমি তোমার সাথে যাবো।”

“অনেক ভিড় সেখানে, পা ব্যাথা করবে কিন্তু।”

“তুমি বাম ডলে দিলে চলে যাবে।”
কায়েস নাছোড়বান্দা, মাথা নেড়ে জানালো যাই হয়ে যাক সে তো যাবেই। কাশফি উপায়ন্তর না পেয়ে কায়েসের ছোট্ট হাতদুটো মুঠ করে ধরে হালকা হাসলো,

“ওয়াটার গান নিয়ে আসবো, হবে তো?”

***

কাশফি চেম্বারে বসে একহাতে স্ট্রেচ বল অন্যহাত দিয়ে পেপার ওয়েট ঘুরাচ্ছে। সামনে ষাট ঊর্ধ্ব পাকা দাড়ি গোঁফে ভর্তি মুখ আর টাক মাথায় টুপি পরা ডক্টর ইয়াহিয়া খান। আতিকুর রহমানের ভালো বন্ধু হওয়ার দরুন কাশফি তার পরিচিত। গম্ভীর মুখে তিনি কাশফি কে পরখ করলেন এবং খানিকটা বিচলিত না হয়ে পারলেন না। কাশফির স্বপ্নের বর্ণনা শুনে তিনি এতক্ষণ চুপ ছিলেন, কিন্তু পরক্ষণে এই মেয়ে যা চেয়ে বসলো তাতেই তিনি বাকরুদ্ধ। অহরহ ক্লায়েন্ট আসে তার কাছে। তাদের কিছুজন কে দেখলে চট করে ধরা যায় যে সে মানসিক চাপে আছে; এছাড়া তার আ’ত্ম’ঘা’তি হওয়ার চান্স বেশি। তবে কিছু কিছু কাশফির মতো গম্ভীর, তাদের বুঝতে সময় নিতে হয়।

“তুমি তবে কি হিপনোথ্যারাপি নিয়ে নিশ্চিত?”

“অনিশ্চিত হলে আধাঘন্টা ধৈর্য্য সহযোগে বসতাম না অবশ্যই?”

কাশফির নির্লিপ্ততায় ইয়াহিয়া খান বিরক্ত বোধ করেন। তিনি আবার বোঝানোর জন্য বলেন,
“দেখো ঈশিতা, এটা তোমার জন্য ক্ষতিকর।”

“I have made up my mind.”

“এসব তোমার বাবা জানেন?”

“ডক্টর খান, আমার বয়স ২২ বছর, নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার মতো উপযুক্ত আমি।”

ডক্টর খান নেড়ে চেড়ে বসলেন। তিনি একবার মুখ খুলে আবার বন্ধ করে ফেললেন। নিজেকে প্রস্তুত করে তিনি মুখে জড়তা রেখে বললেন,
“ঈশিতা, এটা ক্রিটিক্যাল বিষয়। আমি জানি না তুমি কি…”

ডক্টর খানের অসম্পূর্ণ কথা শুনে কাশফি ভ্রু কুঁচকে ফেলে, কিছুটা কনফিউসন নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“আমি ঠিক বুঝতে পারিনি!”

“Are you s’uicidal?”
ডক্টর খানের কথায় কাশফি বিহবল হয়ে গেলো। সে দ্রুত মাথা নেড়ে জানালো— “অবশ্যই না।”

উপায়ন্তর না পেয়ে তিনি মাথা নেড়ে কাশফি কে কাউচে বসতে বলেন। তবে আড়চোখে রাশভারী কণ্ঠে বলতে ভুললেন না,
“Don’t make me regret this!”

তিনি হাতের রিমোট দিয়ে তার কামরার ব্লাইন্ডস অফ করে অন্ধকার করে দিলেন। ড্রায়ার থেকে মোমবাতি দুটো বের করে জ্বালিয়ে নেন।

“চোঁখ বন্ধ করে রিল্যাক্স করো ঈশিতা। ধরে নাও তুমি অচিন মানুষ নীলাম্বরী, তোমার আলাদা জগতে তুমি ধীরে ধীরে পদার্পণ করছো….”

***

অতীত/ কল্পনা: ‘শোনো নীলাম্বরী!’

রিনঝিন নূপুরের শব্দে মুখরিত ভিলার পিছনের দিকটায়, খানিক পর পর চুড়ির ঝংকার তুলছে ভিলার শেষ মাথার কক্ষটায়। বিরস, নির্জীব এই ভিলার কেবল এই একটি কামরাই যেনো প্রতি নিয়ত রঙিন স্বপ্ন বুনে। গানের গুনগুন শোনা মাত্রই গৃহ পরিচারিকা কামিনী হেঁসে সেই কামরার দরজা ভিজিয়ে দেখে নেয় কিশোরী নীলাম্বরী কে।
আজ সে তার মায়ের মুক্তোর নেকলেস, মুক্তোর কানের দুল আর নীল শাড়িতে সাজিয়েছে নিজেকে। কামিনীর চোঁখ তৎক্ষণাৎ ভিজে এলো। কিশোরী নীলাম্বরীকে শাড়িতে বেশ মানিয়েছে, ঠিক তার মায়ের মতো।
কামিনী ভাবলেন, হয়ত মেয়েটা নিজের মন ভালো করার জন্য সাজছে। এই টুকু মেয়ে কড়া নিয়মে থাকে সদা, বলতে গেলে তেমন একটা বের হয় না। তাছাড়া ছোট সাহেব নিজের গাড়ি করেই তাকে পুষ্পকুঞ্জ একাডেমীতে ছেড়ে আসেন আবার সাপ্তাহিক ছুটিতে নিয়েও আসেন। সেখানেও প্রতি নিয়ত মেয়ের খবরাখবর নিয়ে থাকেন। এর বাইরে মেয়েটা সর্বদা ঘর বন্ধী হয়ে থাকে।
তবে কিছু একটা ভাবতেই মুহূর্তের মধ্যে কামিনীর মুখের হাসি উবে গেলো। নীলাম্বরী ড্রেসারে বসে চোখে কাজল লাগানো শেষ করে কামিনীকে দেখা মাত্রই মুক্তো ঝরানো হাঁসি হাসলো।

“ছোট মা, তুমি কবে এলে? কোন প্রয়োজন?”

“এই মাত্রই এলাম।”
কামিনী হালকা হেঁসে ড্রেসার থেকে কাঠের চিরুনি নিয়ে নীলাম্বরীর গোছের চুল ধরে নিয়ে আলতো হাতে আঁচড়াতে লাগলো,

“কোথাও যাওয়া হচ্ছে নাকি?”
নীলাম্বরী লাজুক হাসি দিয়ে নিজের অবয়ব দেখলো কেবল, এত উজ্জ্বল কেনো লাগছে নীল শাড়িতে? তার পছন্দের রঙ বলে?
বেনামী একটা পুরুষের প্রেমে পড়েছে সে! ভয়ঙ্কর প্রেম। সেই শখের পুরুষ জানিয়েছিল যে, আজ সকল লুকোচুরি বাদ দিয়ে তার কিশোরীকে নিজের নাম জানাবে। কিন্তু তার বাবা যে সেই বাড়ির লোকদের ঘৃ’ণা করতেন, তা জানা ছিলো না তার। তারা কে? তার বাবা তাদের কেনো ঘৃ’ণা করেন কিছুই জানে না সে। যখন সপ্তাহখানেক আগে তার বাবা তাদের একসাথে দেখেছেন তখন থেকেই বাড়িতে তার কারফিউ জারি করা হয়েছে। সেদিন হতে বাড়ি থেকে সে এক পাও বের করতে পারেনি।

নীলাম্বরীর চোখে মুখে চাকচিক্যতা আর লাজুকতা দেখে কামিনীর হাত ততক্ষণে থেমে গিয়েছে। তার মুখের মধ্যে কোনরকম ঝুলন্ত হাঁসিটাও নিঃশেষ। যা বোঝার বুঝে নেয় কামিনী, সে ধপ করে হাঁটু গেটে নীলাম্বরীর সামনে বসে পড়লো। হুট করে দুহাতে নীলাম্বরীর মুখ ধরায় নীলাম্বরী নিরুত্তর এবং খানিকটা অবাক হয়ে কামিনীর দিকে তাকিয়ে রইলো,

“তোমার বাবা কাজে বেরিয়েছেন, কাল ছাড়া ফিরবেন না। তুমি ঘর থেকে এক পা বের করলেই সর্বনাশ!”

বাবার কথা তোলায় নীলাম্বরী কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে যায়, ঘর্মাক্ত হাতের তালু শাড়ির আঁচলে মুছে। জোরপূর্বক হেঁসে কথাটা উড়িয়ে দেওয়ার মতো করে বললো,
“বাবা জানবে না, ছোট মা।”

“তুমি ভুল করেছো, বাচ্চা একটা মেয়ে তুমি। তোমার তো এখনো ভালো খারাপ বোঝার বয়সই হয়নি।”

কামিনীর জোরালো কণ্ঠে কিছুটা কঠোরতার রেশ টের পেয়ে নীলাম্বরীর চোঁখে পানি টলমল করছে। এই তো ভয় ছিলো, শেষ পর্যন্ত কি সে কামনার পুরুষের সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবে কিনা। তার মুখে থাকা কামিনীর দুই হাত সে আগলে ধরে আকুল অনুরোধ জানায়,

“একটা বার তাকে দেখতে চাই ছোট মা, প্রতিজ্ঞা করলাম বাবা ফেরার পূর্বেই ফিরে আসবো।”

কামিনী মাথা নেড়ে না বোঝালেন। এবার চোখ মুখ শক্ত করে কঠোর হলেন আরো কিছুটা,
“তারা ক্রুর, নির্দয়! কি করে তুমি তার থেকে অনুভূতি কামনা করো?”

নীলাম্বরী গলার স্বর ছোট্ট করে উত্তর দিলো,
“আমি হয়ত নিরব সম্পর্কের মায়া ছাড়তে পারিনি।”

সোনালী বিকেলে কালো চাদরে মুখখানা ভালো করে ঢেকে দুরু দুরু বুকে হেঁটে কোনরকম সেগুন বাগিচা পার হলো সে। ভিলা থেকে এতখানি দুর এসেও ভীতি এখনো কমে নি। তার কোমল মনের ছোট মা তার কথা ফেলতে পারেনি। তাই তাকে যাওয়ার জন্য অনুমতি ঠিক দিয়েছে, তবে সন্ধ্যার আগেই ফেরার কঠোর নির্দেশ জারি করেছেন। ভিলার কঠোর সিকিউরিটি পেরিয়ে আসতেও তার ছোট মা সাহায্য করেছে।
তার ভাবনা ছেদ করে, হঠাৎ একটা কালো গাড়ির তার ঠিক সামনে এসে থামে, ঘটনার আকস্মিকতায় নীলাম্বরীর চোঁখ বড় বড় করে মুখ হা হয়ে আসে। তার পা জোড়া জোরে সোরে কাঁপছে। ভয়ে তার হৃদপিণ্ডের বেগতিক উঠানামা বেড়েই চললো। কালো গাড়িটার ড্রাইভিং সিটের গ্লাসটা রোল ডাউন হতেই মোটা ফ্রেমের গ্লাস চোখে আর হুডি পরনে একটা তরুণকে দেখতে পেলো। নীলাম্বরী কপাল কুঁচকে নেয়, পালানোর প্রস্তুতি নিবে তার পূর্বেই লোকটা তার দিকে না তাকিয়েই ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো উঠে বসতে। নীলাম্বরী চোঁখ কুঁচকে কর্কশ শব্দে সুধলো,

“এক্সকিউজ মী?”

লোকটা তির্যক চোখে তাকিয়ে স্টিয়ারিং শক্ত করে ধরলো। নীলাম্বরীর ক্ষনিকের জন্য জুড়ানো সাহসটুকু যেনো নিমিষেই ত্যাগ করলো। হুডি পরনের লোকটা রাগী ষাড়ের মতো এবার গাড়ি থেকে নেমে জোরে শব্দ করে গাড়ির দরজা বন্ধ করে নীলাম্বরীর দিকে ধেয়ে আসলো, নীলাম্বরী ভয়ে পিছনে ছুটবে তার আগেই সে তার বাহু চেপে ধরে নীলাম্বরীর মুখের সামনে একটা ইনভাইটেশন কার্ড ধরে,

“ইনভাইটেশন কার্ড ছাড়া ভিতরে যাওয়ার উপায় নেই, বাচ্চা। জানতে না?”

নীলাম্বরী হতাশ মুখে চেয়ে রইল, তাহলে কি সে এই লোকটার সাথে যাবে? সে একবার ইনভাইটেশন কার্ড আরেকবার লোকটা কে দেখে নেয়। তবে প্রিয় কে দেখার জন্য না হয় এই রিস্কটুকু নেওয়া… কিন্তু নীলাম্বরী সতর্ক ছিল, তাই নিজের মনের দ্বিধা টুকু নিয়ে চলতে অনিচ্ছুক।

“কিন্তু আপনি আমাকে নিয়ে যেতে চাইবেন কেনো?”

গ্লাস পরা লোকটার হাত তার বাহু হতে আলগা হয়ে আসলো খানিকটা, তার চোখে মুখ জুড়ে গেলো কালো বিষন্নতায়। নিজের উত্তর নিরপেক্ষ রেখে সে গম্ভীর স্বরে আওড়ালো,

“স্বচক্ষে দেখে বিবেচনা করার জন্য নিয়ে যাচ্ছি তোমায়, নয়ত আমার মতো মরীচিকায় হাতড়ে বেড়াবে।”

সে প্রবল এক ধা’ক্কায় নীলাম্বরী কে গাড়ির ভেতরে বসিয়ে দরজা বন্ধ করে ফেললো। ব্যথায় নীলাম্বরী চোঁখ বুঝে নেয়। লোকটা তোয়াক্কা না করে, গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো, স্টিয়ারিং হুইলে হাত দিয়ে রেয়ার ভিউ মিররে চোঁখ ফেলে নীলাম্বরীকে শেষ বারের মতো ওয়ার্নিং দিতে ভুললো না সে।

গাড়ির রাস্তা টুকু নীলাম্বরীর নীরবতায় কাটলো, বুকে ভয় নিয়ে বাকিটুকু পথ পাড়ি দিয়ে চললো। তবে মনে মনে বাবার কাছে হাতে নাতে ধরা পড়ার ভয় কাটাতে অক্ষম হলো সে। কেবল প্রেমিকের নাম শুনতে মরিয়া হয়ে থাকা নীলাম্বরীর জানা ছিলো না যে সে ঠিক কেমন অনুষ্ঠান এট্যেন্ড করতে চলছিল….

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here