অদৃষ্টের_মৃগতৃষ্ণা (৮) #লেখনীতে_প্রোপীতা_নিউমী ৮. (Edited)

0
71

#অদৃষ্টের_মৃগতৃষ্ণা (৮)
#লেখনীতে_প্রোপীতা_নিউমী

৮. (Edited)

কৌশিক মির্জা একটা জ্বলজ্যান্ত আতঙ্ক। তবে অন্যদিক বিবেচনায় সে কাশফির অনুরত, আসক্ত, প্রেমনিষ্ঠ একজন স্বামী।
কাশফি ভাবে কৌশিক তাকে ম্যানুপুলেট করার ক্ষমতা রাখে না, অথচ এইমাত্র নিখুঁত ভাবে সে কাশফির আতঙ্ককে নিজের ভাবনা দিয়ে ঢেকে দিল। তা বিন্দুমাত্র টের পেলো কি? বোকা কাশফি কিছু বুঝতেই পারলো না।

কৌশিক বেশ শান্ত মেজাজে লম্বা লম্বা পা ফেলে তার কামরায় ঢুকেই ফিতায় বাঁধা গোলাপ আর বেলি ফুলের মালা ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে। মন চাইছে, যে এই ফুল তার স্ত্রীর কক্ষে রেখে গিয়েছে তাকে মাটিতে পুঁ’তে ফে’ল’তে। কিন্তু শ্বশুড়বাড়িতে নিয়ন্ত্রণ হারানো যাবে না। ভুলেও না। এমনিতেই শ্বশুর মশাই তার উপর নাখোশ।
তার রুমের বিছানায় অক্ষত অবস্থায় এ্যাসট্রে তে ছয় সাতটা শেষ করা সিগারেট পরে আছে। নির্ঘুম রাত কাটানো তার জন্য নতুন কিছু নয়।
এতক্ষন জলের ন্যায় শান্ত হয়ে ছিল ঠিক কিন্তু তার ভেতরে তীব্র দ্বন্ধ চলছে। পকেট থেকে একটা খাম বের করে সে টেবিলে ছুড়ে ফেলে, নিজে সোফায় বসে পরলো। অতঃপর তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দেয় চিঠিটার পানে। চিঠিতে ম্যান্স পারফিউমের ঘ্রাণ যেন কৌশিকের মন মেজাজ আরো বিগড়ে দিচ্ছে।

সকালে কাশফির ঘরে গিয়েছিল জোভানের পরানো এনগেজমেন্ট রিংটা খুঁজে বের করে আনার উদ্দেশ্যে। কাশফিকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা বললে সে খারাপ লাগা আর দায়িত্ববোধ থেকে ধেই ধেই করে জোভানকে নিজ হাতে ফিরিতে দিতে যাবে। এরপর তিন বছরের ব্যর্থ একপাক্ষিক প্রেমিক জোভান সিকদার ইমোশনাল হয়ে ক্লিশে লাইন, কবিতা শুনিয়ে একটা ট্রাজেডি লিখে ফেলবে। তার চেয়ে ঢের ভালো কৌশিক এই কাজ নিজে করুক। উটকো ঝামেলা নাহয় সেই বিদায় করুক।

জোভান কাশফির বাগদত্তা ছিল। তিন বছর ধরে মেয়ের পিছে পরে থাকায় আবেগ আপ্লুত হয়ে আতিকুর রহমান সিকদার বাড়ীর বিয়ের প্রস্তাবে সাড়া দেয়। কিন্তু সেই বিয়ে কৌশিক হতে দেয়নি। পুরোটা সময় শান্তশিষ্ঠ থাকা কৌশিক ঠিক বিয়ের আগের রাতে চাল চেলে বসে। কাশফিকে বিয়ে করার জন্য কৌশিক আরো আগেই আতিকুর রহমানকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি নাকচ করে ঠিকই জোভানকে বাছাই করছিলেন।

কিছুক্ষণ আগে কাশফির জানালার ধারে মকমল কাপড়ের ফিতায় মোড়ানো একগুচ্ছ গোলাপ আর হাতে বানানো একটা বেলী ফুলের মালার সাথে এই চিঠি পেয়েছে। তখন থেকেই মাথায় রক্ত চড়ে বসেছে। স্বার্থপর কৌশিক মির্জা নিজের জিনিস নিয়ে সদা সচেতন। অন্য কারো ভাগ বসানো তার পছন্দ না। আর সেই দৃষ্টিকোণ হতে কাশফি তো তার একমাত্র বউ। তাকে নিয়ে মানুষের এত কিসের মাতামাতি? বিক্ষিপ্ত মন মেজাজে ভাবলো, কিভাবে জোভান সিকদার থেকে কাশফিকে আলাদা রাখা যায়।
তবে কৌশিকের মনের ভিতর খচখচ থেমে নেই। অজানা শঙ্কা মাথায় চিঠির দিকে আরেকবার চেয়ে নিজের মনের ঘোর বিরোধীতা করে চিঠিখানা খুললো। আর ব্যাস প্রথম লাইন পড়েই তার মেজাজ তুঙ্গে ওঠে।

“ আমার না হওয়া প্রিয়তমা,

অপরাহ্নের সোনালী আলোয় রুমঝুম ঘুঙুর পায়ে
দেখেছিলাম এক ঘনকেশী। শুভ্র পদ্ম হাতে খিলখিয়ে হেসেছিল রমণী। তনে জড়িয়েছিল ফিরোজ রঙের শাড়ি আর হাতে কাচের চুড়ি। আহা! সেইদিন বড্ড ইচ্ছে হয়েছিল তার খোঁপার বেলী ফুল হতে।
তার নরম কদম ঘরের বাইরে পরার অপেক্ষায় ছিল আমার উৎসুক নয়ন। তবে রমণীর চোঁখ জোড়া ছিল দীঘির জলের ন্যায় শান্ত আর তার জন্য আমার নয়ন হয়ে উঠলো সাগরের উথাল পাতাল ঢেউ। ছারখার করেছিল আমার তনুমন। কে জানত বৈশাখ মাসে আমার সর্বনাশ দেখা হয়ে যাবে?
আজ চৌঠা কার্তিক। আবহাওয়া আমার চিত্তের মতো অশান্ত, নীল আকাশে তুলোর মতো কালো মেঘের বিচরণ, ঠাণ্ডা বাতাসের আনাগোনায় চারিপাশ।
তোমার অপেক্ষায় পার করেছি তিন তিনটা বৈশাখ, কিন্তু তোমাকে ছোঁয়ার সাধনা আমার আজও অপূর্ণ! যে প্রেমিকার চোখে নেই ভলোবাসা; সে প্রেমিকা হয় নাকি? জানা নেই, তবে তোমার ঠাই আমার মনে। একপাক্ষিক ভালোবাসা গুলো কষ্টের শুনেছো, কিন্তু আমি জানি প্রেমিকার ভলোবাসা কখনো পাবো না জেনেও তাকে ভালোবাসার কষ্ট কতটা য’ন্ত্র’না’দা’য়’ক।
আমার প্রেম হারায় নি ঠিক কিন্তু আমি দুর্ভাগা ক্ষমতার কাছে প্রেমিকা হারিয়ে ফেলেছি। সর্বদা তোমার চিঠির অপেক্ষায়, আমার প্রাণপ্রিয়া ঈশু।

ইতি,
তোমার ভালোবাসার অযোগ্য পুরুষ
জোভান শিকদার। ”

কৌশিক একটা বিষয় মাইন্ডে সেট করে নেয় যে, কাশফিকে নিজের দৃষ্টির আড়াল বা অন্য কারো দৃষ্টির সামনে আনা যাবে না। উহু, কোন ক্রমেই না।

সে র’ক্ত চোঁখে চিঠির পানে চেয়ে শক্ত হাতে তা দুমড়ে মুচড়ে ফেলে। পকেট থেকে লাইটার আর সি’গা’রেট বের করে লাইটার দিয়ে চিঠিতে আগুন ধরিয়ে তার সিগারেট জ্বালিয়ে নেয়। তারপর জ্বলন্ত কাগজটা ডাষ্টবিনে ফুলগুলোর সাথে ফেলে দেয়। কিছুক্ষণের মাঝেই ফুল আর চিঠিটার অস্তিত্ব জ্ব’লে পুড়ে রাখ হয়ে গেলো। ডাস্টবিনের তলায় ছাই ছাড়া আর অন্যকিছুর দেখা মিললো না।

নিকোটিনের দীর্ঘ ধোঁয়া টেনে চক্ষু বন্ধ করে নেয়। ক্রোধের উপর নিয়ন্ত্রণ একেবারেই নেই তার। শশুরবাড়ি হওয়ার দরুন রাগ ঝাড়তেও পারছেনা। আতিকুর রহমানের মেয়ের জামাই বলে একটা প্রেস্টিজ আছে কিনা। কিছু একটা ভাবতে ভাবতে নাক দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে ল্যাপটপ হাতে নেয়। আঙ্গুলের ফাঁকে সিগারেট ধরে অন্যহাত দিয়ে দিগন্ত চৌধুরীর পরিশিষ্ট মেইলটা দেখে নেয়।

দিগন্ত চৌধুরী তার বেশ পুরনো আর বিশ্বস্ত একজন বিজনেজ পার্টনার। রাশিয়ান একাডেমীর অস্ত্রাগারের উপর প্রশিক্ষিত স্কিলড একজন Ex- assassin,
বর্তমানে সে কৌশিকের মতোই ইভান মির্জাদের IM Gun Manufacturering Co. এর একজন শেয়ার হোল্ডার। লাস্ট মেইলে দিগন্ত একজনের ছবি পাঠিয়ে ছোট করে বার্তা লিখেছে—

“সৌরভ সরকারের পাঠানো একজন গুপ্তচর, এজ ইউজোয়াল স্বীকার করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তার টার্গেট আমাদের একজন ছিল কিন্তু ব্যাড লাক। বিবাহিত জীবনের গিফট হিসেবে পরবর্তী ব্যবস্থা তোকে নিতে দিলাম। আর বিয়ে উপলক্ষে কাশফিকে আমার পক্ষ থেকে এক বুক সমবেদনা দিতে ভুলবি না।
Location: Hide-Out Basement

দিগন্ত চৌধুরী ”

কৌশিক ভোঁতা মুখে মেইল থেকে বের হয়ে ল্যাপটপ অফ করে রাখে। হাতের সিগারেটের ধোঁয়া টেনে, নাম্বার ডায়াল করে ফোন কানে গুজলো। বা পাশের পকেট থেকে ছোট একটা আংটির বক্স খুলে নিজের সামনে ধরলো। ফোন কেউ ধরে ‘হ্যালো’ বলতেই কৌশিক সময় নিয়ে রাশভারী কন্ঠে বলল—

“কেমন আছিস জোভান সিকদার?”

***

কাশফি গোসল সেরে রুম থেকে বের হয়ে লুকিয়ে চুরিয়ে কৌশিকের কামরায় উঁকি দিয়ে বড়সর বিষম খেলো যেন। কৌশিকের কোলে কায়েসকে হেঁসে খেলে কথা বলতে দেখে চরম অবাক হয়। কায়েস তেমন কারো সাথে মিশে না আর কৌশিক তো বাচ্চা কাচ্চার ঝুঁট ঝামেলা পছন্দই করেনা। চোঁখে মুখে রাজ্যের বিস্ময় নিয়ে আবার রুমে ঢুকতেই দেখে তার পড়ার টেবিলে ট্রেতে অমলেট আর টোস্ট রাখা। সে তাড়াহুড়া করে অমলেট আর টোস্ট খেতে গিয়ে বাধায় আরেক বিপত্তি। আনমনা হয়ে খেয়ে গলায় খাবার আটকে ফেলে, এরপর পানি খেতে গিয়ে পানি নাকে মুখে উঠে গিয়েছে। এবার কাঁশতে কাঁশতে দিশেহারা হওয়ার উপক্রম যেনো। সে এতটা থতমত কবে খেয়েছে মনে পরছে না!

কাশফি নিজেকে ধাতস্থ করার পর শাড়ি দেখে তার মাথায় বাঁজ পড়ল যেনো। অফ হোয়াইট মধ্যে সোনালী কাজের ভারী কাতান শাড়ি আর লাল রঙের কাজ করা একটা ব্লাউজ। এমনিতেই শাড়ি পড়া ঝামেলার কাজ; তারওপর কাতান দেখে কাশফির চোখ মুখ শুকিয়ে এইটুকু হয়ে এলো। কৌশিক এতোই যখন এই শাড়ী পছন্দ করেছেন সে নিজে পরলো না কেন?
ভাবনার মাঝে মনে পরে গেলো পাশের বাসার মোহনা ভাবীর কথা। তিনি মানুষের কথায় বাম হাত, ডান হাত ঢোকাতে ভীষণ দক্ষ। আস্ত বাচাল মহিলা হলেও শাড়ী দারুন পরায়।
একটা তপ্ত শ্বাস ফেলে মোহনা ভাবীকে কল দেওয়ার জন্য ফোন ড্রেসিং টেবিলের সামনে পেয়ে হাতে নিতেই দেখে ফোনের ডিসপ্লে তে ফারাবী, তরী আর ঈশান কল ও মেসেজ দিয়ে ভরিয়ে ফেলেছে। তবে সর্বপ্রথম চোখে পরলো যাকে টর্চ দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় না, এমন এক ব্যক্তির মেসেজ। মাহিন সুন্দর একটা গা’লি দিয়ে লিখেছে —
“কিরে ফার্মের আধ’ম’রা মুরগির বাচ্চা, বিয়ে করবি না, করবি না, বলে বিয়ে করে আমাদের আড়ালে বাসরও সেরে নিলি?”

ফারাবী— “তুই ম’রে থাক আমি বরং তোদের বাসায় আসছি তোর চল্লিশা খেতে।”

তরী — “দুলাভাই কৌশিকের বিড়াল কাব্য মির্জা মিউ মিউ করে এসেছিল। তোকে পেয়ে গেলে জায়গা বরাবর একটা কি’ক মারবি। আজীবনের জন্য বউ বা’চ্চা দেখার শখ মিটে যাবে তার।”

ঈশান— “ট্রিট দে!”

কাশফি চোঁখ উল্টিয়ে বিড়বিড় করে সব দোষ কৌশিকের ঘাড়ে চেপে ধেই ধেই করে শাড়ি ব্লাউজ নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে পড়ল।

***

(এই প্যারা কঠোর ভাবে প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য। যারা প্যাশনেট রোম্যান্স কিংবা ইন্টিমেসি পছন্দ করেন না তারা এই প্যারা এড়িয়ে যেতে পারেন।)

শক্ত খোলসের কৌশিক নিজের মুখের গম্ভিরতা টেনে কাজে মনোনিবেশ করলো। খুবই আলতো হাতে একটার উপর আরেকটা রাখা জুয়েলারি বক্স গুলো নামিয়ে, আলগোছে এক একটা জুয়েলারি বক্স খুলে ড্রেসিং টেবিলে সাজিয়ে রাখছে। তার ঠান্ডা ঠান্ডা ভাবমূর্তি খুব একটা সুবিধার ঠেকছে না। কিছুটা দূর হতে ফ্লোরে হিলের ঠকঠক শব্দ প্রতিধ্বনিত হতেই সে পিছনে ফিরে তাকায়। বউকে দেখেই তব্দা খেয়ে যায়। তার ওষ্ঠদ্বয় কিছুটা ফাঁক হয়ে চোখ বড় বড় হয়ে আসে। তার ম্যাডাম রাজ্যের বিরক্তি মুখে এঁকে কাতানের কুচি ধরে বেশ সাবধানে এক পা এক পা করে এগোচ্ছেন। লাল রঙের ফুল হাতার ব্লাউজ পরনে। কৌশিকের মাথায় যেন ঝিম ধরে এলো। শাড়িটা নেওয়ার সময় শুধু একটা কথাই মাথায় আসছিল যে, সাদা রঙের ফুল কাশফির ভীষণ পছন্দের। কিন্তু যেমনটা সুন্দর লাগবে ভেবেছে তার চাইতে হাজার গুন সুন্দর লাগছে তার বউকে।

কাশফি আড়চোখে একবার দুইবার কৌশিককে চেয়েছে কেবল, মুখ খুললে এই লোক অসভ্যের মতো ভিত্তিহীন কথাবার্তা শুরু করবেন। কথায় কথা বাড়বে তাই কাশফি চুপ করে রইল।
তার লাগেজের সাথে একটা ছোট লাগেজ দাড় করানো দেখে ভ্রু কুঁচকায়। এতক্ষন তার দিকে তাঁকিয়ে থাকা কৌশিক সহজবোধ্য করে বলে,

“ওটা কায়েসের লাগেজ। তাকে বলেছি সে এখান থেকে যা যা নিতে চায় নিতে পারে, সেখানে অলরেডি তার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসের বন্দোবস্ত করা হয়েছে।”

কাশফি ভরকে গেলো যেন, কায়েসের কথা সে ভাবছিলো না এমন নয় তবে কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারছিল না। কিন্তু ভাইকে নিজের সাথে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা শুনে সমাজের মানুষ হাসাহাসি করবে, দুর্নাম রটাবে যা কাশফি চাইছে না। সে বিষয়টা অগ্রাহ্য করে বিরক্ত প্রকাশ বলে,
“আর আপনি আমাকে বা আমার বাবাকে জানানোর প্রয়োজন বোধ করলেন না?”

কৌশিক এক ভ্রু উচুঁ করে বলে,
“তোমার বাবা জানেন আর তোমাকে তো মাত্রই বললাম।”

“এসব শুনে মানুষ কি বলবে?”

দৃষ্টি কাজে মগ্ন কৌশিক বেশ স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল,
“মানুষের তোয়াক্কা আমি করি না। তাছাড়া তোমার বাবা অসুস্থ, উপস্থিত কায়েসের গার্ডিয়ান বলতে তুমিই আছো। সবদিক বিবেচনায় আমার যা ভালো মনে হয়েছে তাই করলাম।”

কৌশিকের ধারণা যে সম্পূর্ন যৌক্তিক তা কাশফির কাছে ভালো ঠেকলো না। লোকটার বাছ বিচারের সামনে মাঝে মাঝে নিজেকে নাবালিকা মনে হয়। ঠিক এমনভাবে কাশফি তো ভেবেই দেখেনি। মনে মনে নিজেকে বকে গুষ্ঠি উদ্ধার করে কাশফি আয়নার সামনে এসে দাঁড়ায়। মোটা চোকার নেকলেস গুলো দেখেই তার বিরক্ত লাগছে। কাশফি বরাবরই স্বাচ্ছন্দ্য আর আরামপ্রিয় মানবী।
ভাবনায় উবে থাকা কাশফির পিঠে হঠাৎ ঠাণ্ডা হাতের স্পর্শ পেতেই, সর্বাঙ্গ কেঁপে যেন শীতল র’ক্তে’রস্রোত বয়ে গেল তার শিরায়। কৌশিকের মাস্কিউলিন ঘ্রাণ তার নাসারন্ধ্রে বিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাসের ন্যায় মনে হলো।

কাশফি ড্রেসিং টেবিলের বড় আয়নায় কৌশিকের প্রতিবিম্বের দিকে চোখ রাখতেই দেখে কৌশিকও ঠিক তার চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে আছে।
কশফির কৃশতনু দেহ কৌশিকের প্রশস্থ বুকের বলিষ্ঠ শরীরের ভিতরে গুটিয়ে গিয়েছে যেন। হিল পরিহিতা কাশফির উচ্চতা কৌশিকের কাধ ছুঁইছুঁই।
শক্ত শিরান্বিত হাত সন্তপর্নে কাশফির অর্ধভেজা চুলের গোছ পিঠ থেকে সরিয়ে দেয়। তার উষ্ণ শ্বাস আছড়ে পড়ে পিঠে। অমসৃণ লম্বা তর্জনী দিয়ে কাশফির ব্লাউজের ফিতে স্পর্শ করল। তৎক্ষণাৎ কাশফি শিউরে উঠলো। সমুদ্রের ঢেউ তীরে আছড়ে পরার মতো বেগে তার নারী চিত্তে অস্থিরতা, স্নায়বিক উদ্দীপনা কাজ করছে। ক্রমবর্ধমান গতিতে শ্বাস প্রশ্বাসের পরিবর্তন হলো। বক্ষঃস্থলে দ্রিম দ্রিম শব্দ সুর তুললো, নিশ্বাসের শব্দে ধরা দিল তাল আর লয়।
দুইজন একে অপর থেকে দৃষ্টি নড়বড় করতে অনিচ্ছুক।

“এক ফুলের বাঁধা ফিতেটা লুজ মনে হচ্ছে কাশফি…”
কৌশিক গলা নিচে নামিয়ে থেমে থেমে বলে, যেন সে কড়াভাবে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করছে। কাশফি দুই ফুলের ফিতা করতে জানে না। দুই ফুল বাঁধলে প্রতিবার গিট্টু বাঁধিয়ে ফেলে। কৌশিক অপলক চেয়ে আবার তেজস্বী কণ্ঠে অনুরোধ পূর্বক শুধালো —
“মে আই?”
(May I?)

কাশফির ঠিক বোধগম্য হলো না কিসের জন্য তার স্বামী তার অনুমতি নিচ্ছে। থোড়াই তার ধ্যান জ্ঞান কাজ করছে এই মুহূর্তে। কাশফির কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে কৌশিক ফেঁসফেঁসে কন্ঠে স্বর নিচু করে ডাকলো — “কাশফি!”
এত মোহনীয় ডাকে কাশফি আরেক দফায় কেঁপে উঠলো। উৎসুক চোঁখে চেয়ে একেবারে হালকা ভাবে মাথা নাড়ালো। কেন নাড়ালো? কি বুঝে নাড়ালো? সে হয়ত মাথায় রাখেনি।
মনমতো জবাব পেয়ে কৌশিক এক টানে ব্লাউজের পিঠের দিকটায় ফিতা খুলে ফেললো। এতে কাশফির শরীর আকষ্মিক ঝাকুনি দিয়ে উঠে তার দম আটকে এলো যেন। কৌশিকের সম্পূর্ন অভিনিবেশ ফিতার দুই ফুল বাঁধায় দিলো। বাঁধা শেষে আবার কাশফির চোঁখে চোখ রেখে মাথার পিছনে প্রলম্বিত চুমু দিলো।
কাশফির নিজেকে কেমন উন্মাদ উন্মাদ মনে হলো। তার ভিতরটা অশান্ত, অজানা কিছুর জন্য খাঁ খাঁ করছে। মুহুর্তেই কাশফিকে স্তম্ভিত করে কৌশিকের বড়সর বলিষ্ঠ হাত আলতোভাবে তার গলা ধরে, অন্যটা তার শাড়ী ভেদ করে কোমরে চলে গেলো। কৌশিকের কন্ঠনালি বের হয়ে আসে অস্পষ্ট গুঁজন, যা কাশফির কর্ণকুহরে আসা মাত্রই তাঁর থরথর করে কাঁপতে থাকা তনুমনে যেন সুনামির ঢেউ খেলালো। বেসামাল কৌশিকের বাঁধ সেই কবেই ভেঙেছে।

কাশফির প্রতিস্পন্দন বুঝে কৌশিক এক ধাপ এগিয়ে গেলো। টুপ করে সে কাসফির গ্রীবায় মুখ ডুবিয়ে দিলো। পরপর কাশফির গলায় রাখা হাতটার আঙুল পালস পয়েন্ট খুঁজে নিল।
কৌশিক ঠিক ভেবেছিল। কাশফির স্পন্দন বেগতিক মাত্রার। নিজের কাজে তৃপ্তি পেয়ে সে কাশফির গলায় নাক ছোঁয়াতে ছোঁয়াতে নিচুস্বরে আওড়ালো —

“ আমার হৃদস্পন্দন শুনতে পাচ্ছো? তোমার তোলপাড় করা স্পন্দনের অনুরূপ। তুমি যতই পালিয়ে বেড়াও কাশফি আমাদের মধ্যকার আকর্ষণ তুমি স্বীকার করতে বাধ্য। আমরা একে অপরের পরিপূরক কাশফি।”

কৌশিক কাশফির তলপেটে তাঁর হাত শক্ত করে গলায় তাঁর অধর ছোঁয়ালো। ঘনঘন শ্বাস টেনে এবার তার ঠোঁট জোড়া ফাঁক করে কাশফির কৃশতসু গলায় ঠোট বসিয়ে শুষে নিলো। যেন কোন অমৃত সুধা লুকানো সেথায়। অপ্রস্তুত কাশফিকে সম্পূর্ন কাবু করে শক্ত এক কামড় বসায়, কাশফি শব্দ করে চিকন স্বরে কঁকিয়ে উঠলো।
কাশফি নিজের করা শব্দে লজ্জিত হয়ে হাত মুখে চেপে চোখ শক্ত করে বন্ধ করে নেয়। কামড়ানো স্থানে উষ্ণ জিভের স্পর্শ পেয়ে তার নাসাপথ হয়ে একটা নিচু ‘হুম’ বেরিয়ে এলো। কৌশিক কাশফির গলা ছেড়ে দিয়ে কামড়ানো জায়গায় অদ্ভুত দৃষ্টি ফেলে কিঞ্চিৎ হাসে। তখনও পেটে কৌশিকের আঙ্গুলের বেসামাল স্পর্শে টালমাটাল কাশফি। পরপর কৌশিকের চাপা স্বরে গুরুগম্ভীর কন্ঠ কর্নকুহুরে পৌঁছালো,

“এসব ভারী গহনা গাটি থেকেও তোমার স্বামীর দেওয়া প্রথম চিহ্ন অলঙ্কার হিসেবে তোমার গলায় দুর্দান্ত লাগছে, ভয়ংকর সুন্দর মিসেস মির্জা।”

কাশফি তড়িৎ বেগে চোঁখ জোড়া খুলে আয়নার নিজের প্রতিবিম্ব দেখতেই তীক্ষ্ণ শব্দে চেঁচিয়ে উঠে। তেঁতো হয়ে সরে যেতে চাইলে কৌশিক হাতের বন্ধন আরো দৃঢ় করে, ফলে কাশফি একচুলও ছাড় না পেয়ে বিরক্ত হয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে কৌশিকের দিকে তাকায়।

“কৌশিক ছাড়ুন!”

কাশফির ঠোঁটের দিকে চেয়ে থাকা কৌশিক সঙ্গে সঙ্গে ভাবলেশহীন হয়ে জবাব দিলো — “না”

“আপনি লাজ লজ্জা গঙ্গা যমুনায় ভাসিয়ে দিতে পারেন কিন্তু—”
কাশফির কথা সম্পুর্ন হওয়ার আগেই ঝড়ের বেগে কাশফির অধর নিজের অধরের মাঝে প্রবেশ করালো। কৌশিকের মিন্ট আর মৃদু সি’গা’রে’টের ঘ্রাণ মিশে গেলো তার শ্বাস প্রশ্বাসে। তার স্বামীর পুরুষালী সুগন্ধির সাথে মিশ্রিত মাস্কি(musky) ঘ্রাণ গাঢ় আলিঙ্গন করলো তাকে।
পুরুষের ক্লোনের (cologne) সুবাস এতো মোহনীয় কেন হয় নাকি শুধু কৌশিকেই টাই সে লক্ষ্য করেছে?
কেটে গেলো অনেক সময়।
কাশফির দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম, ঠিক তখনই কৌশিক তার কোমল ঠোঁট জোড়া ছেড়ে দেয়। চোখ চেপে বন্ধ করে কাশফি তার বুকের উঠা নামা কমাতে ব্যাস্ত।

ঠিক তখনই ডোর ফ্রেম হয়ে রুমের বাইরে থেকে কাশফির বান্ধবী ফারাবীর চঞ্চল স্বর শোনা গেল—
“ নাউজুবিল্লাহ!”

কাশফি বিহ্বল হয়ে পিছনে ফিরতেই দেখে হা করে থাকা তরীর চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম। ছিটকে সরে যেতে নিলে কৌশিকের শক্ত হাতে আটকা পরে। কোন রকম মুখ লুকিয়ে কাঁদো কাঁদো গলায় চেঁচিয়ে উঠলো— “কৌশিক!”

তড়িঘড়ি করে ঈশান বলে— “দুলাভাই, কন্টিনিউ প্লিজ!”

#চলবে…

Author’s Note: তিন কবুল বলা স্বামী স্ত্রী তারা, তাছাড়া এই প্যারা নিয়ে ওয়ার্ন করা হয়েছে তাই কোনো প্রকার বাজে মন্তব্য করবেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here