#ওগো_মনোহারিণী ( #রৌদ্র_মেঘের_আলাপন ) [১৮]
লেখনিতে : তাসলিমা_নাসরিন
— এতো বড় প্রতারেনা তুমি আমার সাথে করতে পারলে
— প্লিজ বিশ্বাস করো আমায়।
— আমি কোনো প্রতারক কে বিশ্বাস করি না।
— সিয়া?
— কি সিয়া?
— এতো বড় একটা কথা বলতে পাড়লে সিয়া ?
— হ্যাঁ পাড়লাম।
— কি চাও তুমি?
— ডিভোর্স।
হু হু করে কেঁদে উঠে সিয়া। পাঁচ বছর আগের ঘটে যাওয়া একটি দিন সে ভাবছিলো। সেই দিনের পর থেকে সিয়া ধূসর আলাদা। দুইজনের পথ আলাদা হয়ে গেয়েছিল। বিচ্ছেদ টা মূলত সিয়ার ভুল বোঝাবোঝির কারণেই হয়েছিল সেই ভুলের প্রায়শ্চিত্ত সে আজও করে যাচ্ছে। যবে থেকে সে শুনতে পেয়েছে কিছু সত্যি ঘটনা। তবে থেকে সে এই পাপের বোঝা নিজের সাথে বইছে।
ঘটমান অতীত — 🍁
চৌধুরী ভিলার বাড়িটার সামনে বড় বড় অক্ষরে লেখা ধূসর সিয়ার বিয়ে। সত্যিই আজ ধূসর আর সিয়ার বিয়ে।সব সমস্যার পর বেশ খানিক বছর পর আজ তারা বিয়ের পিঁড়িতে বসেছে। বিয়েটা সেই ঘটনার পরই হতে পারতো যদি না ধূসরের গায়ে গুলি না লাগতো।
হ্যাঁ সেইদিন সব পাপের শেষ করতে গিয়ে পৃথার তৈরি করা ফাঁদে পা দিয়ে দেয় সিয়া। বিয়ের দিন অর্থাৎ সেই ঘটনার দশদিন পর বিয়ে ঠিক হয়েছিল ধূসর আর সিয়ার।
সেদিন চৌধুরী ভিলায় মানুষের রমরমা আয়োজন ছিল। সবই ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু বিপত্তি ঘটে তখন,যখন আচমকা গুলাগুলির আওয়াজ পাওয়া যায়। সিয়া তাদের ফোর্সের সাহায্যে ওদের প্রতিহত করলেও শেষ পর্যায়ে একটা গুলি এসে বিধেঁ ধূসরের হাতের সাইডে। গুলি টা গা ছুঁয়ে বেরিয়ে গিয়েছে তবুও র*ক্তে মাখামাখি হয়ে যায় চারিপাশ। সিয়া কে উদ্দেশ্য করে গুলিটা ছোড়া হলেও সামনে ধূসর এসে যাওয়ায় সেটা ওর হাতে বিধেঁ। ধূসরের এরূপ অবস্থায় পৃথা হাত থেকে গুলিটা ফেলে দৌড়ে তার কাছে আসে। হাস্যকর বিষয় এই যে গুলিটা পৃথার থেকেই এসেছে। অর্থাৎ সিয়া কে উদ্দেশ্য করে পৃথায় গুলি ছুঁড়েছিল। এদিকে ধূসরের অবস্থা দেখে সিয়া ঠান্ডা মাথায় একজনকে কল দিল। এই পরিস্থিতিতে সিয়া কে এইভাবে দেখে সবাই রেগে যায়। কারণ সিয়া কাউকে কল দিয়ে ধূসরকে পৃথার থেকে ছাড়িয়ে একাই ঘরের দিকে নিয়ে যায়। বিয়েটা ড্রয়িংরুমে হচ্ছিল বিধায় কোনো অসুবিধা হয়না কারোর।
ধূসরকে শুইয়ে ওর দিকে তাকিয়ে সিয়া বলতে লাগলো –
— কোনো প্রকার ভয় পাবে না। আর দ্রুত তুমি ঠিক হয়ে যাবে।”
সিয়ার নির্ভয়ের কথায় কেউ শান্ত না হলেও ধূসর শান্ত হয়ে যায়। সবাইকে বুঝিয়ে ধূসরের রূম থেকে বের করে নিজে যখন বেরিয়ে যাবে তখনই ধূসর বলে ওঠে –
— আমার পাশে একটু বসো!”
ধূসরের আবদারমাখা মুখের কথা ফেললো না সে। তার বসাতেই চলে আসে সিয়ার ভাই। সে পেশায় একজন সার্জন হওয়াতে সবই বুঝলো আর সস্থির শ্বাস নিলো সবাই। কারণ এই ছেলের হাতে কেউ চিকিৎসা করলে আল্লাহর রহমতে সেই ব্যক্তি সুস্থ হয়ে যায়। তারমানে সিয়া তখন তার কাছেই কল করেছিল। কিন্তু কেউ পৃথার ব্যাপারটা বুঝলো না। আর তখনই কেউ বলে উঠে –
— পৃথার সম্পর্কে কেউ জানতে আগ্রহী হলে আমার সাথে আসো।”
সিয়ার এমন ব্যবহারের কারণ সম্পর্কে সবাই অবগত। কারণ কিছুক্ষন আগে ধূসরকে নিয়ে সকলেই কম কথা শোনাইনি। তাই সবাই নিশ্চুপ হয়ে সিয়ার পিছনে পিছনে যায়।
সিয়ার উদ্দেশ্য ড্রয়িংরুম। সে সকলকে নিয়ে সেখানে যায়। সবাই পৃথাকে বাধা অবস্থায় দেখে অবাক হয়। সবাই সিয়ার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়। তখনই সিয়া পৃথার সামনে গিয়ে ওর বিপরীত পাশের সোফায় গা এলিয়ে দিয়ে একবাক্যে তারদিকে প্রশ্ন ছুড়ে –
— এইরকম করার কারণ কী ?”
— আমি বাধ্য নই তোমাকে বলতে।”
— বলো বলছি!”( ধমকের সুরে)
— যদি না বলি।”
— এস.সি. কে চেনো তো ?”
— মানে?”
— এস. সি. এর ফুল ফর্ম জানো?”
এস.সি. কথাটা শুনে খানিকটা ঘাবড়ে যায় পৃথা। ঘামতে শুরু করে রীতিমত। পরপর সিয়ার প্রশ্নের উত্তরে তাঁর মাথা দুদিকে দোলায়, যার অর্থ সে জানে না। পৃথার এমন উৎকন্ঠা আর ঘাবড়ানো খানিক উপভোগ করে মুচকি হেসে বলে-
— সিয়া চৌধুরী !”
সিয়া চৌধুরী নামটা শুনে বাড়ির কারোর মধ্যে ভাবান্তর দেখা না দিলেও পৃথার চোখে-মুখে দেখা গেল। বাড়ির সকলেই সেই ঘটনার পর সিয়ার সম্পর্কে জানলেও পৃথার জানার বাকি ছিল। এদিকে এস.সি কে নিজের চোখের সামনে দেখে আপনা-আপনি বলে উঠে
— বলছি বলছি। সব বলছি। **
জেদি পৃথার এরকমটা হওয়ায় সবাই অবাক। সবাই নিজেদের আবাকতা পেরিয়ে পৃথার কথায় মনোযোগ দেয়।
— আমি ভালোবাসতাম ধূসরকে। ধূসরের পরিবার আর ওর সমস্যা মানে বড় বাবার যে ষড়যন্ত্র সেটা ব্যাপারে সবাই জানতো। আমি যে তাকে ভালোবাসি এটা শুনে মা-বাবা ঘাবড়ে যায়। ভাবে এতে আমারই বিপদ। কিন্তু তখন আমাকে এতো না বুঝিয়ে ধূসরের নাম বলে একজনের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়। বিয়ের রাতে আমি ছেলের মুখ দেখি। কবুল বালার সময় নামটা অন্য শুনলেও ধূসরের প্রেমে এতোই পাগল ছিলাম আমি যে পাওাই দেইনা। বাবা-মায়ের সাথে এই নিয়ে আমার কথা কাটাকাটি হলে তাদের যতটুক সম্ভব আমাকে বলছে। পুরোটা জানতে সিয়ার বাবা মানে নকল বাবার সাথে হাত মিলায়। সব যানার পর আমার অনুপাত হালো। তাই সেচে গিয়ে সিয়া কে সাহায্য করতে এগিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু পরে ধূসর আর সিয়ার ভালোবাসা টা আমার কেনো জানি না সহ্য হয়নি। আর তাই আজ সিয়াকে মা*র*তে এসেছিলাম। কিন্তু আমার ধুসর?”
এই বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে পৃথা। আর তখনি সিয়া একজন মহিলা গাড বলে ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইশারা দেয়। জোর করে নিয়ে যাওয়া হয় ওকে। আর তখন সিয়া সকলের দিকে তাকিয়ে বলা শুরু করে-
— ওর বাবাকে প্যারালাইজত করার হুমকি দিয়েছিলাম মেসেজে তাই ও এতো সহজে সবটা বলে দিলো। আসলে ও মানসিক রোগী হয়ে গেছে। আর সবচেয়ে অবাকতর ব্যাপার এই যে পৃথার স্বামী আমার ভাই নিজে।”
চলবে —🍁
রিচেইক করিনি। বানানে ভুল হতে পারে।
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/