#ওগো_মনোহারিণী ( #রৌদ্র_মেঘের_আলাপন )[১৯]
লেখনিতে : তাসলিমা_নাসরিন
সেইদিন ধূসরের ভালো হওয়ার কথা হলেও সিয়ার ভাই জানায় যে বছর খানিক লাগবে। আর এই একটি কথায় কেটে গেলো তিনটি বছর। ধূসরের পূনভাবে সুস্থ হতেই সবার আগে ধূসরকে সারপ্রাইজ দিতে সিয়া যায় হাসপাতালে।কারণ তিন বছরের প্রতিটি দিনই ধূসর হাসপাতালে ছিলো।ধূসরের স্বাভাবিক একটা অবস্থাকে ক্রিটিক্যাল হওয়া দেখে সিয়া পাগলামো শুরু করে ধূসরকে হাসপাতালে ভর্তি করে। আর তিন বছরের অপেক্ষার সমাপ্তি ছিলো আজ।
হাসপাতালে সকল ফর্মালিটিস পূরন করে সিয়া ধূসরের সাথে রওনা দেয়।সিয়া যেখানে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো সেখানে সবাই তাদেরকে সারপ্রাইজ দিয়ে দেয়। কারণ তারা বাড়িতে ডুকতেই সারা বাড়ি অন্ধকার দেখতে পায়। অন্ধকার বাড়িকে আলো করতে যেতে নিলেই তার আগেই বাড়িটা আলোকিত হয়ে যায়। আর এক সাথে সবাই বলে উঠে। ** হ্যাপি এ্যানভারসেরি ডে ডিয়ার ধূসর-সিয়া।
কথাটা র্কনকুহব হতেই সিয়ার আজকের তারিখের কথা স্মরণে আসে। তার চোখ টলমল করে উঠলো। সেই টলমল চোখ নিয়েই ধূসরের দিকে তাকায়।ধূসরের ও একি অবস্থা। কাউকে পরোয়া না করে সকলের সামনে ঝাপটে জরিয়ে ধরে। আর তখনিই আয়না চৌধুরী বলে উঠে।
— আরে আরে আমরা আছি তো।এইসব এখন বাদ দিয়ে এসো আমাদের সাথে।**
আয়না চৌধুরী’র কাথায় তারা চারপাশে চোখ বুলায়। সিয়ার মা-বাবা শশুড়-শাশুড়ি, নানা-নানি, সিয়ার ভাই, ছোট্ট পিচ্চি আয়ান,আয়ানের মা সকলের হাসি মুখটা চোখের সামনে।এতে যেনো তারাও খুশি হয়ে যায়। তারাও হাসি মুখে উওর দেয়-
— কোথায় যাব?”
— সারপ্রাইজ।”
এই বলে তাদেরকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে নিয়ে যায় আলাদা আলাদা ঘরে।
***
বধুবেশ আয়ানা’র সামনে বসে আছে সিয়া। তাকে দেখে যেকে কেউও চমকে যাবে। পড়নে কাজ করা থ্রি পিস কালো রঙের। থাকে থাকে সিকুয়েল কাজ জায়গায়-জায়গায় পুঁতি।মাথায় হিজাব। জামার হাতা হাত পর্যন্ত ডাকা। মুখে কোনো কৃত্রিম প্রসাধনী নয়। সব মিলিয়ে মা-শা আল্লাহ।
এতো সৌন্দর্যতার কাছে পাওা না দিয়ে অনবরত জিঙ্গাসা করে যাচ্ছে।
— এই তোমার কি বলবে কিছু ? **
— কি বলবো ? **
— আমাকে সঙ সাজিয়ে কি করবে তোমরা ? **
— বিয়ে দিবো ? **
— কী? কার সাথে?**
— কোনো একজনের সাথে।”
এ কথা শুনে সিয়া চুপ করে যায়। সে বুজতে পাড়ে কোনো একজন টা কে। লজ্জায় কিছুটা দমে যায় সে। আর তখনি তাকে নিয়ে ড্রয়িংরুমে রওয়ানা দেওয়া হয়।
***
— আমার বউ কয়? বউ কয়?
— আরে বাবা থাম।
নির্লজ্জের মতো বউ বউ বলে চেচাচ্ছিস।
— চুপ করো তুমি। বাবা হয়ে ছেলেকে এইসব কথা শুনাচ্ছো লজ্জা নেই তোমার?
— আর তুমি ছেলে হয়ে বাবার সামনে বউ বউ বলে চেচাঁচ্ছো। লজ্জার বালাই নেয়?”
— আমি বরাবরই নির্লজ্জ।”
বাবা ছেলের খুনসুটি দেখে সকলেই আনন্দিত।যাক্ কতদিন পর বাবা ছেলে এক হলো। সকলেই বিমোহিত। যাক! শেষ পর্যন্ত একটু সুখের ফালি দেখা গেল।
— এই তো ধূসরের বউ।”
আচমকা ‘ধূসরের বউ’ শব্দটা শুনে খানিকটা নুয়ে যায় সিয়া। আর এদিকে ধূসর সিয়ার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তখনই পিচ্চি আয়ান গান দিলো,
তেরে সপনো কি গালিও মে
তেরাহি ইসক বেহতা হে!
কাহি-ভি জাও মে মন ইয়ে,….
[ বিঃদ্রঃ- হিন্দি গান পারি না, তাই লিরিক্স-এ ভুল থাকতে পারে।]
**
অনেক আনন্দঘন পরিবেশের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয় ধূসর সিয়ার বিয়ে। বর্তমানে ব্যালকনিতে শাড়ি পড়ে দাঁড়িয়ে আছে সিয়া। পরনের শাড়িটা ধূসরেরই দেওয়া। ব্যালকনির মৃদু বাতাসে সিয়ার এলোমেলো চুলগুলো দুলছে। সিয়ার কাছে অনন্য এক প্রশান্তি লাগছে। সে সেখান থেকে এসে আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজেকে বেশ ভালোভাবে পরখ করে নিচ্ছে। ভাবতেই তার অবাক লাগছে এস.সি. নাকি আজ বিবাহিত। সেদিন বিয়েটা হলেও মন থেকে এতোটা প্রস্তুত ছিল না। কিন্তু আজ তার মন পুরোপুরি প্রস্তুত। সে প্রতিজ্ঞা করেছিল যে, যেদিন ধূসরের সাথে বিয়ে হবে সেদিন থেকেই এস.সি. পদবী আর তার রিলেটেড সকল কাজ থেকে সে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।”
একথা ভেবে সে মনে মনে বলে,
— বিয়েটা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন আর আনন্দঘন পরিবেশে হলেও এখনই সে এস.সি.- এর থেকে বিচ্যুত হচ্ছে না। কারণ এখনো অজানা কোনো এক শত্রু তাকে আড়াল থেকে পর্যবেক্ষন করছে। যেকোনো সময় হামলা করতে পারে তবে সেইজন্য সবসময় প্রস্তুত থাকতে হবে।” সে তিন বছরের এখনো যত ক্লু পেয়েছে সব মিলিয়েও কোনো সমীকরণ সমাধান হয়নি। এ নিয়েও বেশ চিন্তিত সে। তার ভাবনার মাঝেই আচমকা কেউ এসে জড়িয়ে ধরলো তাকে। সে হকচকায় না, অবাকও হয় না। বরং আয়নায় তার প্রতিচ্ছবির পাশাপাশি আরেকটা প্রতিচ্ছবির দিকে তাকিয়ে সে মুচকি হাসে। হাঁটু গেড়ে নীচে বসে বলে –
— আমার আয়ান বাবু এখানে কী করছে ? সে নাকি ঘুমোবে?”
হ্যাঁ পেছন থেকে সিয়াকে জড়িয়ে ধরা ব্যক্তি আর কেউ না। আয়ানই ছিলো। সিয়ার আদরমাখা কথা শুনে খানিকটা ঠোঁট বাকায় সে। আর বলে-
— জানো মাম্মা ? মামণি শাড়ি ছেড়ে ছুড়ে আর হুডি আর ট্রাউজার পড়ে কোথায় জানি গিয়েছে। ঘুমোবে বললাম তো আমাকে ধমকিয়ে দিলো।”
এই বলে আয়ান কাঁদতে লাগলো। আর এদিকে কথা শুনে কপালে সূক্ষ্ম ভাঁজ পরলো কপালে। তার বোন…..! না না, বোন বলে ছাড় পাবে না সে। যতই হোক আমাকে বিষয়টা ঘাটতে হবে। তবে এখন আয়ানকে চুপ করাতে হবে। এই বলে সে আয়ানকে বলে-
— দেখো মাম্মা, আজ আমার বিয়ে হয়েছে তাই আজ বাড়িতে কিন্তু অন্যসময় কী বাড়িতে থাকতাম ? না, থাকতাম না, কেন বলোতো ?”
উত্তরে আয়ান বলে উঠে –
— তোমার তো কাজ থাকতো।”
একথায় সিয়া বলে উঠে –
— মামনিরও তো সেরকম!”
— না না মাম্মা। মামণি এমন করেনি। মামণি তো শাড়ি ছাড়া কিছু পড়তো না। কিন্তু আজ! আমাকে বকাও দিলো।”
— আচ্ছা বাবা, ওকে। মামণিকে বকে দেব। এবার আসোতো মাম্মার কোলে ঘুমোবে।”
— কিন্তু ?”
— কোনো কিন্তু না। আসো।”
— না না আমি এখন খাবো।”
— কি বলো ? এখনো খাওনি।”
— আরে থাকো তো। বকবক করো না।”
এই বলে আয়ান দৌড়ে পালায়। এদিকে ফিক করে হাসে সিয়া। ছেলেটা হুটহাট হাসিয়ে মারে। আর তখনই কেউ একজন বলে উঠে-
— তেরা হাসি মুজে ঘায়েল কার দি’য়া মেরি রানি।”
(চলবে) 💜🍁
রিচেইক করিনি। বানানে ভুল হতে পারে।
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/