#ওগো_মনোহারিণী (#রৌদ্র_মেঘের_আলাপন ) [২০]
লেখনিতে তাসলিমা নাসরিন
— ফ্লাট করছো আমার সাথে ?”
— ও বাবা ভয় পাইছি ! তুমি আমার কোন জনমের বেয়াইন লাগো গো যে তোমার লগে মজা করবাম ! ”
— ধূসর?? ”
— জো হুকুম মে,,,!”
— এতোটা নির্লজ্জ হচ্ছো কীভাবে তুমি ?”
— কেনো? আমাকে তোমার নির্লজ্জ মনে হলো কোন দিক দিয়ে ? ”
— এই যে ! এখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লুচ্চামি করছো !”
— ইয়া মাবুদ ! নাউজুবিল্লাহ। আস্তাগফিরুল্লাহ ! ”
— এই ঢং করবা না একদম। রাগ উঠে যাবে বলে দিলাম ।”
— ইশশ । আমি আমার একমাত্র ছোট ভাইয়ের আপন ভাবির সাথে যা ইচ্ছা করবো তাতে কেনো আপনার রাগ উঠবে খালাম্মা ? ”
— কিঃ! আমি খালাম্মা ?”
— ইয়েস ! ”
ধূসরের এই কথা শুনে সিয়া প্রচন্ড রেগে যায় আর তেড়ে আসে ওর দিকে। ধূসর সরে যায় না। সিয়া কাছে এসে ঝগড়া করতে নিবে আর তখনই ধূসরের ওষ্ঠাধর মিশে যায় সিয়ার ওষ্ঠাধর এ। মিনিট খানেক পর সিয়ার থেকে ৩ আংুল সরে এসে চুপিচুপি বলে-
— অন্যের সামনে আমি অনেক ভালো। কিন্তু আমার বউয়ের কাছে একদম বাচ্চা। ”
আমার বউ কথাটা শুনে লজ্জায় রাংা হয়ে ওঠে ওর মুখ। সিয়ার লজ্জারাংা মুখ বেশ উপভোগ করছে আর আবারো বলে উঠে! ”
— প্রথম প্রথম তো সমস্যা ছিলো সে কারনেই তো এগুলো পারিনি। তবে আজ তো অবশ্যই পারবো। আজ আর কোনো বাধা নেই। ”
ধূসরের কথা শুনে টুপ করে একফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো সিয়ার। আর তা টের পেয়ে ধূসর শান্ত কন্ঠে বলে-
— তোমার পূর্ণতা’র দিনে কাদঁছো ? ”
— (নিশ্চুপ) । ”
— শুনের মিসেস ধূসর ! আপনাকে আমি ছাড়ছি না। এটার গ্যারান্টি আমি আপনাকে দিতে পারবো। তবে আপনি আমাকে না ছাড়লেই হবে। ”
ধূসরের এমন কথা শুনে ধূসর কে খানিকটা শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সিয়া। এটা দেখে ধূসর ও মুচকি হাসলো।
***
আরো একটা প্রশান্তির রাত কাটিয়ে দিনের আলো ফুটলো আকাশে। সেইসাথে সিয়াও ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে আয়নার সামনে দাড়ালো। অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো –
— নিজেকে এখন পূর্ণ পূর্ণ লাগছে। ”
তখনই পেছন থেকে ডাক এলো সিয়ার ।
— সিয়া ! বউমা ! কোথায় তুমি ? ”
শাশুড়ি’র আগমনে সিয়া তাড়াতাড়ি মাথায় কাপড় দেয়। আর সেও সামনে আগায়। কিছুদূর যেতেই শাশুড়ি তার হাত ধরে ওনার ঘরে নিয়ে যায়। দরজা লাগিয়ে সিয়াকে ইশারায় বসতে বলে নিজে উঠে গিয়ে আলমারি থেকে কিছু জিনিস বের করে ওনার গুপ্ত লকার থেকে।
***
বড্ড অস্বস্তিতে পড়ে সিয়া। একদিকে শাশুড়ি’র বলা কথা বারবার কানে বাজছে তার। আরেকদিকে ধূসর তখনো বাড়ি আসে নি। ফোন টা-ও সুইচড অফ বলছিলো। রাত বাজে ১২ টা ৩৮। সারাদিন ঠিকঠাক থাকলেও এখনো তখনকার মুহূর্তটা ভুলতে পারছেনা সিয়া। তবে এটা সে বুঝে গিয়েছে যে নিজের পরিচয় দিয়ে সে কত বড় ভুল করেছে। যার মাশুল তাকে দিতে হবে তবে বড্ড বাজে ভাবে।
দরজা’ আটকানোর শব্দে পেছনে ফেরে সিয়া। তাকিয়ে দেখে ধূসর এসেছে। সে এগিয়ে গিয়ে ধূসরের হাত থেকে ফাইল নিয়ে চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
— আজকে দেরি হলো যে ? ”
শার্টের বোতাম খোলছিলো ধূসর। সিয়ার কথা শুনে নিজের ভ্রুকুটি উচিয়ে তাকে পালটা উত্তর দেয় ,
— দেরি কোথায় হলো বলোতো ?”
সিয়া ব্যাগ টা রেখে টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি নিয়ে এগিয়ে যায়। ধূসরের হাতে গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে ওর শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে সে পুনরায় বলে উঠে-
— এই যে ? বাসায় আসোতো ৮ টায় কিন্তু আজ যে প্রায় ৪ ঘন্টা লেট হলো। ”
— আমি তো তোমাকে বলেই গিয়েছিলাম। ”
— ওহ হ্যাঁ ! ”
— মনে পড়েছে ?”
— হ্যাঁ গো। ”
— তাহলে যাও খাবার নিয়ে আসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। ”
— আচ্ছা। ”
এই বলে সিয়া প্রস্থান ঘটায়। আর ধূসর ও ফ্রেশ হতে যায়।
**
গুটি গুটি পায়ে খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে এগিয়ে আসছে সিয়া। ধূসরকে ল্যাপটপের স্ক্রিনের সামনে বসে থাকতে দেখা যায়। সে ধূসর কে খাবার দিয়ে তার শার্ট নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকতে যাবে। তখনি ধূসর বলে উঠে-
— শার্ট নিয়ে যাচ্ছো কই ?”
— শার্টের অবস্থা দেখেছো ? ডাক্তারি করতে করতে নিজের খেয়াল টাই রাখো না। এই শার্ট আরেকবার পড়লে তোমার কি হবে তুমি জানো না ?”
— বাড়িতে বউ থাকতে এতো চিন্তা কিসের ?”
— হইছে ! থাকো পাম দিতে হবে না। আমি গেলাম। খাওয়া শেষ করো তাড়াতাড়ি। আমার কথা আছে তোমার সাথে। ”
— আচ্ছা ।”
এই বলে খাবার নিয়ে খেতে শুরু করে সে।
***
— বলো কি কথা বলবে। ”
— আসছি ওয়েট। ”
সিয়া আসছি বলে বিছানা ঝাঁট দেয় আর দরজা আটকিয়্ব দেয়। ধূসরের কোলে বসে সে নির্লজ্জতার সহিত ফটাফট বলে ফেললো-
— আমি কিছু চাই। ”
— কি চাই তোমার ? যে এতো সিরিয়াসলি বলছো। ”
— বলবো ?”
— হু হু। ”
— আমার বলা শেষ করবো আগে। তারপর কথা বলবে। ”
— আচ্ছা। ওকে। ”
— আমাদের বিয়ে হয়েছে অনেক বছর। ক’দিন আগে আবার বিয়ে হলো। এবার আমার একটা অস্তিত্ব চাই । ”
এই কথা শুনে কোলে বসে থাকা সিয়াকে জড়িয়ে ধরে ধূসর। আর নেশালো কন্ঠে বলে উঠে –
— কি চাই তোমার ?”
— অ,,স্তি,,ত্ব ! ”
সিয়ার গলা প্রায় শুকিয়ে যাচ্ছে এইসব কথা বলতে। তবুও সাহস নিয়ে যা বলার বলছে। সিয়ার উত্তরে ধূসর বলে-
— কীসের ? ”
— তোমার ! ”
— আমার? ”
— হু ! আমাদের অস্তিত্ব ! আমার আর তোমার। ”
— শিউর? ”
— হু ! ”
— তা সেটা কি হওয়া চাই আপনার ! ”
— জুনিয়র ধুসর ! ”
— কারন ?”
— আমি তার মধ্যে আপনার ছোটবেলার প্রতিচ্ছবি দেখতে চাই। ”
— ওহ বাবা ,,,!”
“ওহ বাবা ” কথা শুনে খানিকটা লজ্জায় নুয়ে যায় সিয়া। তার লজ্জামাখা মুখের পরিবর্তে ধূ উত্তর দেয় –
— আল্লাহ পাক আমাদের যা দিবেন তাই হবে। ”
— হুম ! ”
তখনি পাশে থাকা কলটা বেজে উঠে! কলটা ধূসরের ফোনে এসেছে। খানিকটা বিরক্ত হয় সে। কিন্তু নাম্বার টা যখন সেইভ দেখায় তখন ভালোভাবে নামটা লক্ষ্য করতেই খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে যায় ধূসর।
কাপাকাপা হাতে কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে শোনা গেলো এক ভয়ংকর বাক্যবানী। যা শুনে সিয়াও খানিক চমকায়। না সে কথা শুনে নয়। বরং সে কন্ঠ শুনেই চমক আর ভয় ও পেয়েছে।
চলবে 🍁
আজ অনেকদিন পর আমি নিজেই লিখলাম। এতোদিন পান্ডু লামিয়া আপুকে দিয়ে দিতাম আর ওনিই লিখতেন। কেমন হয়েছে জানাবেন। সাড়া দেবেন। ধন্যবাদ।
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/