#অদৃষ্টের_মৃগতৃষ্ণা (২৮)
#প্রোপীতা_নিউমী
(কঠোর ভাবে মুক্তমনা আর প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য।)
পাতলা পর্দা ভেদ করে সকালের রোদটুকু পুরো কামরায় ঝলমলিয়ে খেলছে। বিছানায় থাকা কাশফি চোখ পিট পিট করে চেয়ে কড়া রোদের আলোর সাথে চোখ এডজাস্ট করে নিয়ে হাই তুলে আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসলো। মাথার বেনুনি খুলে কিছু এলোমেলো চুল তার মুখে পড়ামাত্র সরিয়ে নিতে গিয়ে কৌশিকের চোখে চোখ পড়ে গেলো। কাশফি একেবারেই অপ্রস্তুত হয়ে থতমত খেয়ে যায়, তার স্বামী নবাবের মতো সোফায় বসে পায়ের উপর পা তুলে একনাগাড়ে তাকিয়ে রইলো। আজ ধূসর চোঁখ জোড়া কাশফির প্রাণহীন মনে হলো না, কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করলো। এরকম দৃষ্টিতে কৌশিক আগেও চেয়েছিল তবে কাশফির কিছুই মনে হয়নি তখন।
তার অধর কম্পিত হয়ে বুকে সুড়সুড়ি অনুভূত হলো। হুট করে হৃদপিণ্ড গতি তুললো, সারা শরীরে বয়ে গেলো রোমাঁচকর শিহরণ। এদিকে কৌশিক ধূসর চোঁখের নেশালো দৃষ্টিতে কাশফিকে দেখতে মত্ত। দৃষ্টি অনড় রেখে উঠে এসে বিছানায় কাশফির পাশে বসে পড়লো, তারপর আলতো হাতে কাশফির এলোমেলো চুল আঙুল দিয়ে তার মুখের সামনে থেকে সরিয়ে হাস্কী কণ্ঠে উচ্চারণ করলো,
“ঘুম ভালো হয়েছে, সানসাইন?”
কাশফির গলা শুকিয়ে কাঠ কাঠ। এমন আকুল, প্রলোভনসঙ্কুল কণ্ঠে একমাত্র কৌশিকই পারে তার পৃথিবী চূর্ণবিচূর্ণ করে দিতে। কাশফি গলা পরিষ্কার করে দুর্বল, নরম কণ্ঠে জবাব দিলো।
“গুড মর্নিং, কৌশিক। এভাবে চেয়ে আছেন কেনো?”
“তোমাকে দেখছি।”
“কেনো?!”
কাশফির বোকা প্রশ্নে কৌশিক কাশফির মুখে হাত রেখে বৃদ্ধাঙ্গুলি তার ঠোঁটের উপর চেপে ধরলো,
“আমার অধিকার আছে এমন মারাত্বক, মোহনীয়, নন্দিত রূপ দেখার।”
কাশফিকে কিছু বলতে না দিয়েই কৌশিক হুট করে কাশফির মাথা টেনে কাছে নিয়ে তার নরম অধরে নিজের অধর মিলিয়ে নিলো। ওষ্ঠের ভাজে অধর প্রবেশ করে তারপর জিভের বিচরণ চললো। কাশফির শ্বাস আটকে আসার আগে কৌশিক প্রলম্বিত আদ্র চুমুর সমাপ্তি ঘটিয়ে পুরুষালি ডমিনেটিং স্বরে বললো,
“গুড মর্নিং এভাবে জানাতে হয় সানসাইন। মনে থাকবে তো?”
যখন কাশফি শ্বাস টেনে নিজের শ্বাস প্রশ্বাস স্বাভাবিক করবে ঠিক তখন কৌশিকের কথাটা শুনেই কান ঝা ঝা করলো। লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে কি বলবে কি করবে সব গুলিয়ে থ হয়ে বসে রয়। পরক্ষণের টপিক পাল্টানোর জন্য সে ঘড়িতে সময় দেখে নেয়। আজকে প্রতিদিনের চেয়ে লেট করে উঠেছে। সে কৌশিকের দিকে না চেয়ে অমতা অমতা করে বললো,
“আপনি নাস্তা কেনো করেন নি? অফিসে যাবেন না?”
“তোমার অপেক্ষায় ছিলাম, উঠে পড়ো কাশফি।”
কাশফির তনুমোন পুলকিত হয়ে পেটে ততক্ষণে অজস্র প্রজাপতি উড়ে গেলো যেন। এক বুক ভালো লাগা ছেয়ে গেলো তার মনের আকাশে। বুকের দ্রিম দ্রিম শব্দ কমার নাম নেই।
কাশফি তড়িঘড়ি করে বিছানা ছেড়ে বড় বড় কদম ফেলে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। দরজা লাগিয়ে বুকে হাত রেখে হৃদপিণ্ডের বেগতিক উঠানামা লক্ষ্য করে নিজে নিজে বিড় বিড় করে বললো, ‘কৌশিক, আপনি মনে হয় আমায় মেরে ফেলার ধান্দায় আছেন!’
কৌশিক আগেই জানিয়ে রেখেছে যে পরের সপ্তাহে তারা এই বাড়িটা ছেড়ে নিজেদের বাড়িতে উঠবে। দুই একদিনে বাড়িতে মাধবীকি তেমন একটা দেখা যায়নি, বলা চলে মাধবী ইচ্ছে করেই তাদের সামনে পড়েনি। কাশফি ফ্রেশ হয়ে, হাত খোপা করে রুম থেকে বের হয়ে একবার কায়েসকে দেখে নেয়। সে লিয়ার সাথে গল্প করতে ব্যাস্ত, এই কয়েকদিনে লিয়ার সাথে কায়সের বন্ধুত্ব সুলভ সম্পর্ক বেড়েছে। এছাড়া কায়েসের দায়িত্বে কৌশিক আগে থেকেই একজন স্টাফকে রেখে দিয়েছে। নিচে নেমে কাশফির চোখ পড়লো কৌশিকের পেশল দেহে। নিপুণ হাতে লেটুস পাতা কেটে কাঁচের বোলে রাখলো তারপর সালাদের উপর ড্রেসার দিয়ে শক্ত এক হাতে ধরে সালাদ টস করতে লাগলো।
কাশফির একটা হৃদস্পন্দন মিস হয়ে গেলো বুঝি, সে হা করে চেয়ে রইল শুধু, এতো সুন্দর দৃশ্য থেকে চোখ ফিরানোর দায়। কৌশিকের গুটিয়ে রাখা হাতা হয়ে প্রতিটা মাসেলসের মুভমেন্টে হওয়া ফ্লেক্স কাশফির বেহায়া নজর এড়ায় না। হাতের শক্ত বাইসেপ্স শার্টে টানটান হয়ে দৃশ্যমান হলো। কাজ করতে করতে তার কপালের চুল কিছুটা সামনে এসে পড়েছে এটাও কাশফির কাছে চিত্তহারী মনে হলো। এতো সুদর্শন জামাই তার, কেউ যদি তাকায়, আর কেউ যদি পছন্দ করে নিয়ে চলে যায়।
কাশফির নিজের কপালে চাপড়াতে ইচ্ছে করলো, কৌশিক মির্জা কি বাচ্চা যে চকলেট দেখিয়ে নিয়ে যাবে? সে নিজের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে, তার মাঝে ও তো আহামরি কিছু নেই তবে কি অন্য মহিলা…
কাশফি হাতের তালুতে চিমটি কেটে মিনিমিনে কণ্ঠে বলল, ‘এসব উজবুকের মতো ভাবনা আর নয়’ মনে মনে ঠিক করলো ডাক্তার দেখাবে। তার নিশ্চিত কোনো মানসিক ব্যাধি দেখা দিয়েছে।
“তুমি কি নিজের সাথে কথা বলছো, ডার্লিং।”
কৌশিকের হাস্কী কণ্ঠে স্পষ্টত ধৃষ্টতা শুনে কাশফি কৌশিকের চোখে চোখ রাখলো। ধূসর চোঁখ জোড়ায় অনুরঁজন আর ঠোঁটের কোণে বাকানো হাসি।
কাশফি তাকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে তার পাশে দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক গলায় বললো,
“আমি কি আপনাকে হেল্প করবো?”
কৌশিক প্যান থেকে সানি সাইড আপ এগ অন্য প্লেট রেখে কাশফির দিকে মুখ ফিরিয়ে নিচু স্বরের কর্কশ কন্ঠে বললো,
“একটা ফ্রেঞ্চ কিস অফার করতে পারো।”
কাশফি নিজের জন্য যে শসার স্লাইসটা নিয়ে ছিলো সেটা আর মুখ পর্যন্ত আনতে পারলো না। লজ্জা তার গাল ছুঁয়ে গলায় ছেয়ে গেলো। আসেপাশে স্টাফ দাড়িয়ে আছে দেখে লজ্জায় শক্ত করে চোখ বন্ধ করে হাত খিঁচে ফেললো, তার পর হাতের শসার স্লাইস কৌশিকের মুখে পুরে ধরা গলায় হিসহিসিয়ে বললো,
“আপনি কসম কেটে রেখেছেন আমাকে বিব্রত করার, তাই না?!”
কৌশিক শসা স্লাইসটা খেতে খেতে হাসলো, আর এই হাসি কাশফির কাছে সবচেয়ে বিশুদ্ধ হাসি মনে হলো। একটা প্লেটে এভোকাডো টোস্ট আর সানি সাইড এগ সেফের মতো সাজিয়ে পরিবেশ করলো। সে জেন্ট্যালম্যানের মতো ভদ্র কায়দায় চেয়ার টেনে কাশফিকে বসতে দিয়ে প্লেটটা কাশফির কাছে টেনে দিলো। তারপর পাশের চেয়ার ঠেলে কৌশিক নিজে বসলো। কাশফি তাকিয়ে কৌশিকের প্লেটে হাফ বয়েল্ড এগ দেখে নক সিটকায় কিন্তু পরক্ষণে সে বেশ স্তম্ভিত হয়ে যায়।
“আপনি জানতেন আমি কুসুম কাঁচা রেখে খেতে পছন্দ করি?”
কৌশিক মাথা নেড়ে তার হাফ বোয়ল্ড এগ নাইফ দিয়ে কেটে চামচ তুলে মুখে দিলো। তারপর গম্ভীর গলায় রহস্য নিয়ে বললো,
“আমি তোমার ব্যাপারে অনেক কিছুই জানি যা তুমি নিজেই অবগত!”
কাশফি থতমত খেয়ে শুধু চেয়ে রয়, আসলে কি তাই?! বের হওয়ার আগে কৌশিক তাকে কড়া ভাষায় জানিয়ে দিলো যে যেখানে যাবে গাড়ি নিয়ে যেতে।
ব্রেকফাস্ট সেরে কৌশিক রেডি হয়ে নিচে নামার পূর্বে গলা উচু করে কাশফিকে ডাকলো, কিছুক্ষনেই কাশফি কপাল কুঁচকে এসে সামনে দাঁড়ায়,
“কিছু লাগবে আপনার?”
কৌশিকের এড্যাম অ্যাপল নিচ থেকে উপরে উঠে আবার নিচে নামলো,
“লাগবে।”
কাশফির কোমর টেনে কাছে এনে গাল উচু করে ধরে অধরে অধর সংঘর্ষ করে শক্ত একটা চুমু বসিয়ে দিলো। লজ্জায় কাশফি চোখ কুচকে নেয়, তাকে একেবারে রুদ্ধশ্বাস করে তোলার পর কৌশিক ঠোঁট ছেড়ে ধূর্ত কণ্ঠে বললো,
“এভাবে গুডবায় কিস দিবে আর লেসন নাম্বার ওয়ান স্বামী চুমু খেতে চাইলে কখনো না করবে না, ঠিকাছে সুইটহার্ট?”
আজকের দিনে তাকে তৃতীয়বারের মতো এলোমেলো করে অনুভূতির জোয়ার তুলতে পেরে কৌশিক বাঁকা হেঁসে বিদায় নিলো।
***
কাশফি নিচের ঠোঁট কামড়ে হতাশার শ্বাস ফেলে মুখ হাত দিয়ে ঢেকে ঘষতে থাকলো। তিন দিন হতে চললো কিন্তু পুষ্পকুঞ্জ নামের কোনো স্কুলের সন্ধান পর্যন্ত রবার্ট পেলো না। এদিকে মুখে মাস্ক লাগানো রবার্ট কৌশিকের শেয়ারসে যুক্ত প্রতিটা স্কুলের ছবি দেখিয়ে যাচ্ছে আর কাশফি শুধু মাথা নেড়ে যাচ্ছে। রবার্ট বিরক্তিবোধ করলো,
“আমাকে স্কুলের একটা প্রপার ডিটেইলস দাও, সামিয়া।”
কাশফি চোখ বন্ধ করে তার দেখা প্রতিটা ফ্ল্যাশব্যাক জোড়া লাগলো, তার স্মৃতিগুলো একত্র করে ভাবলো,
“বিশাল এরিয়ার এক পাশে স্কুল ভবন গুলো অন্য পাশে রেসিডেন্স এরিয়া। পুরোটা জায়গায় অনেক গাছ গাছালি ছিল, শিমুল গাছগুলোর পাশের অডিটোরিয়ামে প্রতিবছর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা রাখা হতো। বাগানের আরো গভীরে একটা ছোট্ট কেবিন ছিল সেখানে একসময় ব্যালট ক্লাস হতো পরবর্তীতে ব্যালট ক্লাস অন্য কক্ষে শিফট করানো হয়। পুস্পকুঞ্জ একাডেমীতে প্রবেশ করতেই একটা শতবছর পুরোনো বট বৃক্ষের দেখা মিলতো আর স্কুলের চারপাশে ছিল মোটা লম্বা লোহার শক্ত গেইট।”
এইটুকু ডিটেইলসে রবার্ট খুব একটা খুশি হলো না, সে লম্বা শ্বাস ফেলে মুখ বেজার করে বললো,
“যদিও একটা খুব সামান্য ডিটেইলস কিন্তু আমি তোমাকে জানাবো।”
আজ স্বাভাবিক হয়ে আসা রবার্ট সানগ্লাস পরে হুডি মাথায় তুলে দাড়িয়ে পড়লো তারপর ক্যান্টিন থেকে বেরিয়ে পড়লো। কাশফি মুখ শক্ত করে চোখ বন্ধ করে সামনের ছোট ছোট চুল পিছনে সরিয়ে নেয়, তারপর পানির বোতল কাছে টেনে গড়গড় করে পুরো বোতল শেষ করে ফেললো। তরী ব্যাগ নিয়ে এসে কাশফির পাশে বসে পড়লো।
“বিয়ের পর তোর আমূল পরিবর্তন দেখছি।”
কাশফি টেবিল থেকে মাথা তুলে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে প্রশ্ন করলো,
“কেমন পরিবর্তন?”
“তোর কথাবার্তা, আচার আচরণে কৌশিকের টান পাচ্ছি আমি।”
“ফালতু কথা বলবি না!”
“এই যে কলেজে এসেছিস তবুও কৌশিকের চিন্তায় ডুবে আছিস।”
কাশফি আর কোনো শব্দ করলো না, তরীর কথায় নিরব সম্মতি জানালো। আজকাল কৌশিকের স্পর্শে সে সহজেই কাবু হয়ে যায়, চিন্তা চেতনা শূন্যে ভেসে অনুভূতির ঝড় বয়ে যায় তার মাঝে। সকালে কৌশিকের মুখ দেখা ছাড়া মস্তিষ্ক ফাকা ফাকা মনে হয়। রাতে কৌশিকের প্রশস্থ বুকে মাথা রাখা ছাড়া সব পাগল পাগল ভাবতে নেয়। নিজেকে কতবার বুঝ দেয় যে কৌশিক মির্জা একজন খু নি, নিকৃষ্ট মানুষ কিন্তু তবুও সুবুদ্ধির উদয় হয় না তার মাঝে।
নিজেকে নিয়ে আশ্চর্যের সীমা নেই তার, কিভাবে সে কৌশিক মির্জার জন্য দুর্বল হয়ে পড়লো! কিভাবে?! আগে এতটা প্রকট ছিল না যতটা ইদানিং যতটা দেখাচ্ছে। প্রচণ্ড ভয় হয় তার। কেননা কৌশিক মির্জার মতো মানুষ এক মুহূর্তে তাকে ভেঙে গুড়িয়ে দিতে সক্ষম, তবে তার সাথে মৃত্যু অবধি প্রগাঢ় প্রণয় কতটা ভয়াবহ? ঠিক কতটা নিয়ন্ত্রণ হারা হয়ে পড়বে সে? পাঁচ বছর আগের মতো কৌশিকের প্রতি তীব্র ঘৃনা, বিতৃষ্ণা, রাগ, বিরক্তি এখন কল্পনার মতো মনে হয়।
***
ক্যাম্পাস পেরিয়ে গেইট হয়ে বের হওয়ার সময় করো সাথে আকস্মিক ধাক্কা লেগে কাশফির হাত থেকে একটা বই রাস্তায় পড়ে গেলো। বইটা তুলতে যাবে তার আগেই তার বয়সী এক মেয়ে বই তুলে তার দিকে হেঁসে প্রস্থান করলো। মেয়েটাকে দেখা মাত্রই তার মাথা কিছুক্ষণের জন্য ব্ল্যাক আউট হলো বোধহয়, এই মুখ তার পরিচিত নয় তবুও কিছু একটা মনে হলো পরিচিত। যখন সজ্ঞানে এলো তখন বলিষ্ঠ বাহু তাকে কাছে টেনে এনে দাড় করায়। তাকিয়ে দেখলো কৌশিক শক্ত মুখে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে। চৌকিত হয়ে ফ্যাসফ্যাসে গলায় জিজ্ঞেস করলো,
“আপনি এখানে?”
কৌশিক চোয়াল শক্ত করে রাশভারী কণ্ঠে বললো,
“আমারও তো একই প্রশ্ন।”
“আমি তো ভার্সিটি থেকে বের হলাম মাত্র।”
“বের হয়েই গাড়ির অপেক্ষা না করে রাস্তায় কি?”
“হাত থেকে বই পড়ে গিয়েছিল, তুলতে গিয়ে…”
“গাড়িতে উঠো!”
কাশফি কথা বাড়ালো না, কৌশিকের কথা মতো গাড়িতে উঠে পড়লো। আজ কৌশিক ড্রাইভার নিয়ে আসেনি তাই কাশফি পিছনে বসেছে দেখেও সে সামনের — ড্রাইভিং সিটের বিপরীতের দরজাটা খুলে সটান হয়ে দাড়িয়ে রইলো। কাশফি প্রথমে ভেবেছিল নামবে না কিন্তু ধূসর চোখের কড়া দৃষ্টির অবাধ্য হলো না।
আস্ত একটা ঘাড়ত্যাড়া!
বিরক্তিতে ঠোঁট জোড়া চেপে গাড়ি থেকে নেমে জোরে শব্দ করে দরজা বন্ধ করে সামনের সিটে বসে পড়লো। কৌশিক একই জোর দেখিয়ে দরজা লাগিয়ে কাশফিকে চমকে দিলো তারপর উঠে ড্রাইভিং শুরু করলো।
কৌশিকের গাড়ি তার কোম্পানির বিল্ডিংয়ের রাস্তায় চলছে দেখে কাশফি কপাল কুঁচকে কৌশিকের দিকে তাকিয়ে দেখলো।
“আপনি আমাকে অফিসে নিয়ে আসার জন্য এভাবে ধমক দিয়ে উঠলেন।”
কৌশিক সহজ সাবলীল ভাবে শ্রাগ করে বললো,
“ধমক দিয়েছি? কখন?!”
কাশফির মুখ হা হয়ে এলো, কৌশিকের ভাব খানা এমন যে সে কিছুই জানে না।
“আপনাকে যত দেখছি ততই অবাক হচ্ছি!”
কৌশিক মেইল প্রাইড নিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো তারপর রিনরিনে কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
“কেনো? দিন দিন কি হ্যান্ডসাম হচ্ছি নাকি?”
কাশফি নাক দিয়ে উপহাস করার মতো শব্দ করে, সামনে ফিরে বললো,
“একদম না।”
“সেদিন, আমার পার্টনারের মেয়ে তো এমনই বললো।”
কাশফির গায়ে হুল ফুটলো যেনো, তড়িৎ বেগে মাথা কৌশিকের দিকে নিয়ে দাঁত কড়মড় করে বললো,
“কোন মেয়ে? নাম কি?!”
“আর ইউ জেলাস, ওয়াইফি?”
কৌশিকের চোখে মুখে দাম্ভিকতা আর কণ্ঠে ধৃষ্টতা দেখে কাশফি চোখ পাকায়। এটা তাহলে তাকে উসকানোর একটা পন্থা ছিল। সে কৌশিকের কথা কৌশিককে ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে শব্দ করে একটা হাসি দিলো যেন কৌশিক জোক করলো মাত্র।
“অবশ্যই না, জেলাস কেনো হবো? সিনিয়র বাদ দিই, আমাকে তো এখনো কত জুনিয়ররা কমপ্লিমেন্ট দেয়। কেউ কেউ তো বলে আমি বিয়ে করে ব্যাচেলরদের মন ভেঙেছি, আফসোস!”
তৎক্ষণাৎ গাড়ি শব্দ করে আকস্মিক ভাবে থামলো, অপ্রস্তুত কাশফি কিছুটা সামনে আসলো তবে সিট বেল্টের কারনে আবার সিটে এসে পড়লো। এদিকে স্টিয়ারিং হুইল মুষ্টিমেয় হাতে শক্ত করে ধরে কৌশিক মারাত্বক প্রকট দৃষ্টিতে তাকায়। ক্রুদ্ধ হয়ে ফেঁসফেঁসে কণ্ঠে ঠান্ডা রকমের হুমকি দিলো,
“Don’t tempt me, Darling.”
কাশফি মিষ্টি করে হেঁসে বললো,
“Why? Jealous much, husband?!”
কৌশিক চোয়াল শক্ত করে নিজের সিট বেল্ট খুলে, তারপর কাশফির মুখের কাছাকাছি মুখ নিয়ে হাস্কি কণ্ঠে ভয় দেখিয়ে বললো,
“তুমি কি চাও আমি তোমার সামনে পিছনে গার্ড লাগিয়ে দিই আর তোমার ভার্সিটির ব্যাচেলরদের থ্রেট দিয়ে আসি?”
“আপনি এমন কিছুই করবেন না।”
“আগেও করেছি কাশফি, এখন বাধ্য করো না।”
কাশফির মুখ হা হয়ে এলো, আগে করেছে মানে? স্তম্ভিত হয়ে সে ধড়ফড়িয়ে বলে উঠে,
“আগে? — মানে?”
কৌশিক একটা অদ্ভুত রকমের হাসি হেসে গাড়ি স্মুথলি গ্লাইড করে গ্যারাজে ঢুকিয়ে নিতে নিতে বললো,
“অন্তু আর ফাহিমের কথা মনে আছে?”
“কি করেছিলেন তাদের সাথে?!”
কাশফির ভয়ার্ত কন্ঠে কৌশিকের হাসি কমলো না বরং সে ভাবলেশহীন হয়ে বললো,
“তোমার ভার্সিটির পোলাপান তোমার দিকে তাকায় না কেনো জানো?”
কাশফির বুক ধড়ফড়িয়ে উঠে সে বেশ ঘাবড়ে গেলো। কৌশিক কাউকে মেরে ফেলেনি তো!
“কৌশিক আপনি কি—”
“কথায় বুঝিয়ে দিয়েছি। কিছু করার প্রয়োজন হয়নি, সো রিল্যাক্স।”
কাশফি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো, তারপর সিট বেল্ট খুলে কৌশিকের পিছু পিছু নেমে পড়লো।
সেইদিনের মহিলা রেসিপ্সনিস্ট কাশফিকে কৌশিকের পাশে দেখে হতবম্ব হয়ে গেলো কিন্তু কৌশিক করো তোয়াক্কা না করে এলিভেটর খোলা মাত্র কাশফিকে উঠতে ইশারা করলো। কাসফী উঠার পর সে এলিভেটরে চড়ে নিজের কেবিনে ঢুকে বসলো। কাশফি তার অফিস রুম পুরোটা ঘুরে ঘুরে দেখে বড় জানালার সামনে এসে দাড়ালো।
“কাশফি।”
কৌশিকের ডাকে কাশফি পিছনে ফিরে। ধূসর চোখ জোড়া তির্যক দৃষ্টিতে একনাগাড়ে চেয়ে আছে কাশফির দিকে, তারপর রাশভারী কণ্ঠে আওড়ালো,
“বসো।”
কাশফি গিয়ে সোফায় বসতে যাবে তার পূর্বেই কৌশিক বিরক্তির শব্দ করে তর্জনী তার কোলের দিকে ইশারা করলো। কাশফি থতমত খেয়ে মুখ হা হয়ে এলো, চোখ পিট পিট করে বোঝার চেষ্টা করলো ঠিক কি বলছে!
কৌশিক মহা বিরক্ত সে তিরিক্ষ মেজাজে রুঢ়ভাবে বললো,
“আমার কোলে এসে বসো কাশফি।”
“অসম্ভব, কেউ এসে পড়লে?!”
“আমার বউ আমি কোলে রাখবো নাকি মাথায় সেটা নিয়ে করো মাথাব্যথা হবে তার আগেই চাকরি ছাঁটাই।”
“কৌশিক, এটা আপনার বাসা না!”
“যদি তিন সেকেন্ডের মধ্যে তুমি আমার কোলে না বসো তবে I swear, আমি এখানেই বাসরের কাজ সেরে ছাড়বো।”
কৌশিকের কাউন্টডাউন শুনে কাশফির গাল গলা লাল হয়ে কান ঝা ঝা করলো, লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে তার চিবুক ছুঁয়েছে গলায়। ঠোঁট কামড়ে সে কৌশিক কে কয়েক পদের স্পেশাল গালি দিয়ে তার কোলে বসে পড়লো।
কৌশিক হেঁসে কাশফির উরুর উপরের অংশে হাত রেখে বোলালো তারপর কানের লতিতে ঠোঁট লাগিয়ে চুমু দিয়ে সিক্ত করে হাস্কি কণ্ঠে প্রশংসা করলো,
“মাই গুড গার্ল।”
তৎক্ষণাৎ কাশফির লোম দাঁড়িয়ে গেলো, পরপর তার দম আটকে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি ঘটলো। কৌশিক সন্তপর্নে তার বলিষ্ঠ হাত কাশফির শার্ট ভেদ করে পেট ছুঁয়ে প্যাচিয়ে ধরলো।
“আমি শেয়ার করতে পছন্দ করিনা কাশফি। লাস্ট টাইম বলেছিলাম, You are fucking mine, Remember?! I wasn’t jocking then, তাই আমার সামনে অন্য ছেলের কথা বার্তা বলে রাগানোর মতো বোকামি করবে না।”
তার শক্ত পুরু অধর আকড়ে ধরলো কাশফির গলা। নরম আদুরে গলার ভাজে নাক ঢলে আরো জোরে শুষে নেয়, যেনো সে দীর্ঘদিনের তৃষ্ণার্থ। কাশফি দুই চোখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো, উষ্ণ ছোঁয়ায় সিক্ত চুম্বনে সে কুপোকাত। পরপর কৌশিক কাশফির পালস পয়েন্টে কামড় বসিয়ে স্যান্সেশনাল টর্নেডো তুলে দিলো তার শরীরে। কাশফি উহ শব্দ করে শিউরে উঠলো পরক্ষণে সেই জায়গায় কৌশিকের জিভের ছোঁয়া পেয়ে পরিতৃপ্ত। তার নিচে দৃঢ়, অনমনীয় কিছুর টের পেয়ে ডেকে উঠলো,
“কৌশিক, আপনার…”
কাশফির কণ্ঠ ফিসফিসিয়ে মোহনীয় রকমের শোনালো, কৌশিক গলার পিছন হতে প্রলুব্ধকর শব্দে কাশফির ডাকে সায় দিলো যেনো। তারপর ধিমী গতিতে কাশফির শার্টের নিচে নরম কোমরে প্যাঁচানো কৌশিকের হাতটা আরো উপরে তুলে অতি সংবেদনশীল জায়গায় হাত রাখলো। রুদ্ধশ্বাস হয়ে আসা কাশফির তনুমন কেঁপে উঠলো, তারপর চাপ উপলব্ধি করতেই তার ঠোঁট জোড়া ফাঁক হয়ে এলো, উত্তেজক শিৎকার আটকাতে ঠোঁট কামড়ে নিলো।
কৌশিকের এমন গভীর ছোঁয়ায় নিজেকে মাতাল মাতাল মনে হচ্ছে, পিট পিট করে চোখ খুলে মাথা পিছনে ফিরিয়ে কৌশিকের ধূসর আখির নেশালো দৃষ্টি আর মদ্যক অক্ষিপটের দিকে চেয়ে রইলো। নিয়ন্ত্রন হারা কৌশিক অন্যহাত কাশফির উরুর আরো উপরে তুলে নেয়।
“জলজ্যান্ত আমার পুরো সিস্টেমে আগুন ধরিয়ে দিয়েছ তুমি সানসাইন, Can you feel it?!”
কাশফি বলতে ইচ্ছে করলো ‘আপনি তো আমার কাবু করে ছাড়েন কৌশিক, সেটার কি করি?’
কিন্তু সে ঠোঁট কামড়ে চোখ বন্ধ করে রইলো। তার সর্বাঙ্গ কৌশিকের ছোঁয়ায় জর্জরিত হয়ে রীতিমত কাপছে।
“তুমিও অনুভব করেছো, রাইট?”
কৌশিকের তীর্যক চাহনিতে কাশফি মিথ্যে বলতে পারলো তাই প্রশ্নটা এড়িয়ে চলতে চেয়েছিল কিন্তু কৌশিক তো চরম ধুন্ধুর, সে কাশফির কানে কামড়ে আবার একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করায় কাশফি নিশ্বাসের শব্দে বলে উঠলো,
“অনুভব করেছি, কৌশিক।”
কৌশিক সন্তুষ্ট হলো, কাশফির উরু হতে হাত তুলে তার আংটি পরানো হাতের তর্জনীতে ঠোঁট লাগিয়ে চুমু দিলো। তারপর কৌশিক কাশফির চুলে নাক ঘষে ঘ্রাণ নিয়ে হাস্কী স্বরে ঘোর লাগা কণ্ঠে বললো,
“Let me take you on a date, Kashfi. Then the night will be all ours.”
#চলবে…
Note: গল্পটা শেষ পর্যায়ে চলে এলে আপনাদের জন্য একটা সারপ্রাইজ নিয়ে আসবো। আজকের পর্ব কেমন হয়েছে জানাবেন অবশ্যই।