অদৃষ্টের_মৃগতৃষ্ণা (৭) #লেখনীতে_প্রোপীতা_নিউমী ৭. (Edited)

0
66

#অদৃষ্টের_মৃগতৃষ্ণা (৭)
#লেখনীতে_প্রোপীতা_নিউমী

৭. (Edited)

(অতীত/কল্পনা)
আট বছরের মেয়ে হাতের কটন ক্যান্ডিটা মুখের সামনে ধরে বেবী স্ট্রোলারে থাকা সাত মাসের ভাইয়ের আড়াল হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর মেয়েটা কটন ক্যান্ডি সরিয়ে আবার সামনে আসতেই ছোট বাচ্চাটা চকিত চাহনি দিয়ে পরপর খিলখিলিয়ে দন্তহীন হাসি দেয়। তাদের মা মুগ্ধ নয়নে চেয়ে পরম আবেশে তাদের দুইজনের কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালেন। হাতের মেডিক্যাল রিপোর্টের ব্যাপারটা কিছুক্ষণ মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেতে চান। নিজের অজান্তে একফোঁটা অশ্রু চোঁখের কর্নিশ বেয়ে যায়, যা আড়াল হয়না ছোট মেয়েটার দৃষ্টি থেকে। সে ছোট মাথা কাত করে মায়ের পানে গভীর ভাবে চায়,

“মা, যদি আমি যদি ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল হই তবে আমার যা চাই তাই দিবে?”

মহিলাটা স্ট্রোলার থেকে ছোট বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বিষন্ন কন্ঠে জিজ্ঞেস করলেন
“কি চাও তুমি আম্মু?”

“তুমি অনেকদিন হাসো না আম্মু আজ একটু হাসবে?”
মহিলাটা এক তপ্ত নিশ্বাস ফেলে জীবন যুদ্ধে পরাজিত সৈনিকের ন্যায় তার কোলের বাচ্চার দিকে একবার তাকিয়ে দেখে। এত সহজ একখানা আবদার প্রত্যাখ্যান করতে পারলনা সে। মেয়ের মন রক্ষার্থে ফিক করে হেসে দেয় সাথে সাথেই হাসে তার মেয়েটাও।
হাসি জিনিসটা যেন তার বর্তমান জীবনের সাথে বেমানান। তাদের জীবনে সুখ যেন ফিকে পড়ে গিয়েছে। মহিলার কোলের সাতমাসের ছেলেটা কি কি যেন আওড়াচ্ছে।

তিনি শক্ত করে আট বছরের মেয়ের হাত ধরে নিলেন। মাথা দুলে দুলে মেয়েটা মায়ের হাত ধরে। মা মেয়ে আর ছোট কোলের শিশুটা রাস্তার সাইডে দাড়িয়ে তার বাবার গাড়ির অপেক্ষা করছিল।
মেয়েটার হাত থেকে কটন ক্যান্ডি মাটিতে পরে যায়, তাই মায়ের কাছে থেকে হাত ছাড়িয়ে যখন তুলে নিতে যাওয়ার জন্য দৌড় দেয়, ঠিক তখনই তীক্ষ্ণ আর্তনাদ আর তার ভাইয়ের কা’ন্না কানে আসে।
সে পিছনে ফিরতেই দেখে একটা গাড়ি এসে ধা’ক্কা দিয়ে তার মাকে আর তার ছোট ভাইকে দুই দিকে ছি’ট’কে ফে’লেছে। এক নিশ্বাসেই চলন্ত গাড়ি ক্র’ন্দন’রত শিশুর দেহের উপর দিয়ে চলে যায়। মুহুর্তেই র’ক্তে র’ঞ্জিত জায়গায় এবার র’ক্তের বর্ষণ হলো যেনো। আশেপাশে নেই কোন কান্নার আওয়াজ আর না কোন গাড়ীর শব্দ।

আট বছরের মেয়েটা তার ছোট ভাইয়ের দে’হের কোন অস্থিত্ব পেলো না। পরক্ষণে র’ক্তে’র ব’ন্যা’য় ভেসে যাওয়ায় পিচ ঢালা রাস্তায় প্রায় মিশে যাওয়া একটা বড় মাং’স পি’ন্ড দেখে আঁতকে উঠলো। ব্যাপারটা সুক্ষ্মভাবে আবিষ্কার করতে গিয়ে সে থমকে যায়। এটা তার ভাই?
মহিলার নিথর দেহ একপাশে পরে রইল। দে’হ’খানা থেত’লে গিয়েছে অনেকখানি, কপাল থেকে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পরছে। হিতাহিত জ্ঞান শূন্য আট বছরের মেয়েটা একটা জোরে চিৎকার করে উঠলো। তবে চিৎকারের কোন শব্দ শোনা গেলো না।

ভাগ্যের কি নি র্ম ম পরিহাস, একদিনে তার থেকে সব কিছু কেঁড়ে নিল, সব!

***

ভাঙ্গা গলায় বোবা চিৎকার করে আচমকা বিছানায় শোয়া থেকে হুড়মুড়িয়ে বসে পড়ল কাশফি। এতক্ষন বেঘোর ঘুমে মগ্ন ছিল কিন্তু এখন সম্পূর্ন সজাগ। বড় বড় শ্বাস নিয়ে শ্বাসকষ্টে রোগীর মতো হাপাতে শুরু করল সে। পরপর বুকে সূক্ষ্ম ব্যাথার উপস্থিতি টের পেয়ে বুকের বা পাশের দিকটা খাঁমচে ধরে। কাউকে ঝাপটে ধরতে পারলে হয়তো ভালো লাগতো। মানসিক শান্তির বড্ড অভাব। সে নিজের অবলম্বনে নিজের হাঁটুদ্বয় বুকে জড়িয়ে ধরে। মস্তিষ্কে বার বার প্রতিধ্বনিত হলো কৌশিকের উচ্চারিত দুটো শব্দ,
“প্যাথেটিক!”
“ডাবল স্ট্যান্ডার্ড!”

আসলেই কি সে প্যাথেটিক? কী এমন ছিল তার অতীতে যা ভুলে গিয়েছে সে? কেন সে প্রতিবার বাচ্চা মেয়েটার মাঝে বার বার নিজেকে খুঁজতে উদ্যত হয়? কেন সে তাদের মুখ স্পষ্টত দেখতে পায়না?
ক্রোধে কাশফির চোখ উপচে জল গড়িয়ে পড়ল। নিজের মাথাটা শক্ত করে ধরে চোখ বন্ধ করে নেয়। বিড়বিড় করে বার বার কিছু জপার মতো করে বলল—
“ আল্লাহ, এই দুঃস্বপ্ন গুলো আমার না হোক! ”

সামনে সাদা কিছু নড়াচড়া করতে দেখে রুমে সে ছাড়া অন্য কারো উপস্থিতি টের পেলো কাশফি। তবে রুম তো ভিতর থেকে লক করা। প্রথমে নিজের গাট ফিলিং উপেক্ষা করলেও সে কিছু একটা ভেবে মাথা তুলে তাকাতেই স্তম্ভিত হয়ে যায়। চোখ পিট পিট করে চাইতেই গায়ে কাঁ’টা দিয়ে মুখ ফ্যাকাশে হয়ে এলো।

সাদা পাঞ্জাবি পরে যমের ন্যায় চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে কৌশিক মির্জা। কঠিন চোঁখে কাশফিকে পরখ করল কিছুক্ষণ। অতঃপর রাশভারী কন্ঠে জিজ্ঞেস করল— “গুড মর্নিং মিসেস মির্জা।”

কাশফি কৌশিকের চোখে চোখ রাখে। কপট রাগ দেখিয়ে অবিশ্বাস্য দৃষ্টি ফেলে। চোয়াল শক্ত করে সকালের খর্খর গলায় বলে—
“আপনি আমার দরজার লক খুলে ভিতরে এসেছেন?”

কৌশিক নিচের ঠোঁট উপরের ঠোঁট দিয়ে শক্ত করে চেপে ধরল। যেনো সে সংযত হয়ে থাকার চেষ্টায়। কাশফি ভ্রু কুঁচকে ফেলে। তেতো হয়ে জিজ্ঞেস করলো— “কতক্ষন ধরে আপনি এখানে?”

কৌশিক গলা ভার করে বলল — “দুই ঘণ্টা সাতচল্লিশ মিনিট বত্রিশ সেকেন্ড।”

কাশফি অবাক হয়ে অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো— “এতক্ষন?”
কৌশিক কিছু না বলে একধ্যানে কাশফির দিকে তাঁকিয়ে রইল, যেন সে মৌনতা পালন করছে। বেশ গভীর আর পর্যবেক্ষণ সূচক দৃষ্টি তার।

কাশফি রণমূর্তি হয়ে থাকা কৌশিকের নজর অনুসরণ করে বুঝতে পারলো, সে ঠিক কাশফির দিকে নয় কাশফির শরীরের দিকে তাকিয়ে আছে। মুহূর্তে কাশফি শিউরে উঠলো, শিরদাঁড়া বেয়ে নেমে গেলো ইলেকট্রিক ভোল্টের ন্যায় একটা শিহরণ। কৌশিক আগের ন্যায় নিগূঢ়ভাব়ে তাঁকিয়ে থেকে ঘোর লাগানো গলায় বলল,
“ আমাদের বিয়ের প্রথম প্রভাতে এমন নেশা ধরিয়ে দেওয়া দৃশ্য পরিদর্শন করাবে জানলে সাত সকাল গোসল না সেরেই আসতাম, জান।”

কাশফি এবার নিজের দিকে ধ্যান দেয়। তার উপরের অংশে শাড়ির অস্তিত্বটুকু নেই। ব্লাউজের বড় গলা হওয়ার দরুন একপাশ দিয়ে কাঁধের কিছু অংশ আর অন্তর্বাসের কালো ফিতা উকি দিচ্ছে। ঢিলা ঢালা ব্লাউজে গলা হতে বুক, পেট কৌশিকের চোঁখের সামনে। কাশফি চট করে পায়ের নিচে দলা পাকিয়ে থাকা কাঁথাটা মেলে দিয়ে তার বুক ঢেকে নিলো। দাঁত মুখ খিচে ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,

“অসভ্য কোথাকার!”

কৌশিক পায়ের উপর তোলা পাটা ঝাঁকিয়ে বাঁকা হেসে তাঁকিয়ে রইলো কেবল, কাশফির হাত কাঁথায় আরো শক্ত হয়ে এলো। লজ্জায় তার কান ভীষন জ্বলছে। তাকে আরো বিব্রত করার উদ্দ্যেশ্যে কৌশিক ভাবলেশহীন ভাবে বলল –
“তবে আমার ম্যাডামের জন্য নাহয় আবার গোসল করলাম।”

কাশফি চোঁখ জোড়া বন্ধ করে নেয়, তার চোখের পাতা পর্যন্ত কাঁপছে। লোকটার সামনে উঠতেও পারছেনা। লজ্জায় কণ্ঠ কিছুটা খাদে নামিয়ে বলল,
“আপনি থামবেন?”

“ড্যাম! কাল রাতে তোমায় আলাদা থাকতে দেওয়া উচিত হয়নি। শিট ম্যান!”
কৌশিকের জবাব শুনে কাশফি থতমত খেয়ে গেলো। তার ইচ্ছে করল মাটি খুঁড়ে ভিতরে চলে যেতে। লাল আভা চেয়ে গেলো তার কান, নাক, গাল জুড়ে। অশান্ত কন্ঠে থেমে থেমে বলল,

“দোহাই লাগে কৌশিক, মুখে লাগাম টানুন!”

“এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে? স্ত্রীর প্রতিটা লোম দেখার হক স্বামীর আছে।”
কৌশিকের গুরুগম্ভীর কন্ঠে কাশফি বিস্ফোরিত হয়ে তাকায়। এত অসভ্য কেন উনি? মুখ শক্ত করে নেয় কাশফি।

“সত্যি করে বলুন তো এই জিনিসের ফতওয়া ছাড়া আপনি আর অন্য কিছুর ব্যাপারে আদোও কি কিছু জানেন?”

কৌশিক একটা সুন্দর হাঁসি হেঁসে চেয়ার থেকে উঠে তাদের মাঝের দূরত্ব ঘুচিয়ে দেয়। এক হাত দুরত্ব রেখে কাশফির সামনে এসে বসে, তৎক্ষণাৎ কাশফির হাত পা যেন ঠাণ্ডা হয়ে এলো। কৌশিক নিজের প্রতিবাদে শক্ত কন্ঠে জবাব দেয়,
“বেশী বেশী সন্তান নেওয়ার——”

“থাক! জিজ্ঞেস করে ভুল হয়েছে আমার আর বলতে হবে না।”
কৌশিকের সম্পূর্ন কথা শোনার আগে কাশফি তাকে থামিয়ে দিয়ে মাথা নুইয়ে ফেলে। আর বেশিক্ষণ লোকটার সামনে থাকলে সে লজ্জায় লাল নীল হলুদ বেগুনি হয়ে যাবে।
কথায় কথা বাড়বে তাই অস্থির চিত্তে কাঁথা নিজের সামনে মেলে ধরে কাঁপা কাঁপা হাতে পুরো গায়ে জড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো,

“কোথায় যাচ্ছো?”

কাশফি নাক কুঁচকে গাল বাঁকা করে ত্যাড়া উত্তর দেয়,
“আপনাকে কৈফিয়ত দিতে হবে?”

কৌশিক ভ্রু জোড়া নাচিয়ে বলে,
“চু’মু খাবে, না আমি খাওয়াবো?”

ব্যাস, কাশফি এবার তেতে উঠে চোখ গরম করে ফেললো। এত অসভ্য মানুষ সে তার জীবনে দুটো দেখেনি। যত্তসব ফা’ল’তু কাজ কারবার। কৌশিক কে কিছুটা তেজ দেখিয়ে বলল,

“সমস্যা কি বলুন তো! রাতে ছাইপাশ কিছু গিলেছেন নাকি?”

কৌশিকের মুখের বাঁকা হাসি তো দমছে না বরং বেড়ে গিয়েছে–
“তুমি বরঞ্চ চু’মু খেয়েই দেখো!”

কাশফি অস্ফুট স্বরে বিরক্ত হয়ে কেঁকিয়ে উঠলো। কৌশিক মির্জাকে তুলে কয়েক আ’ছা’ড় দিলে পারলে তার শান্তি লাগতো। চোঁখে চোঁখ রেখে রুষ্ঠ হয়ে বলে,

“কৌশিক, আমার মনে হয় আপনি ফুল ব্লোন (full blown) তারছেড়া মাথা নিয়ে আমাকে পাগল করতে এসেছেন।”

কৌশিক মেকি হাসি দিয়ে কাশফির কপালে পড়া চুল কানে গুঁজে দেয়,
“কৌশিক মির্জার বউকে বাড়ি তোলার জন্য কৌশিক মির্জা নিজেই বউকে সাজাতে এসেছে। এছাড়া তোমাকে দেখে পুরো পাগল হয়ে গেলেও বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই।”

কাশফি ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে রইলো ।অবাক হয়ে চোখ পিট পিট করে আবার চেয়ে এক ঝাঁটকা দিয়ে কৌশিকের হাত সরিয়ে নেয়। বেখাপ্পা একটা হাসি দিয়ে অবিশ্বাস্য সুরে বলল,
“আপনি সাজানোর ব্যাপারে ঠাট্টা করছেন, না?”

কৌশিক জানে কাশফি ভুলেও তার কথার এপার হবে না। তাই এবার চোখ মুখ শক্ত করে তার প্রচলিত রুপে ফিরে আসে। দুইদিকে মাথা নেড়ে এবার ডেড সিরিয়াল কন্ঠে বলল,
“নো মোর ওয়ার্ডস মিসেস মির্জা। আমার বিরোধিতা করলে আরো বিব্রত করে ছাড়বো। এমনিতেই কম জ্বালাও নি। নাস্তা উপরে পাঠাচ্ছি, চুপচাপ খাবার শেষ করে ভালো মেয়ের মতো গোসল সেরে কাপড় পরে নাও। আমি গয়না আর সাজ সজ্জার জিনিস নিয়ে আসছি।”
কৌশিক এমন ভাবে আঙুল দিয়ে শাসিয়ে গেলো যেন সে লুকিয়ে চুরিয়ে হাতের নাগালে কাদা, মাটি, বালি যা পায় তা খেয়ে ফেলা একবছরের হামাগুড়ি দেওয়া বাচ্চা। আবার বিব্রত হওয়া থেকে নিজেকে সামলে সে ছোট্ট করে বলে,

“ওহ।”

কৌশিক কিছুক্ষণ সন্দিহান দৃষ্টিতে চেয়ে ঠোঁটের কোণ উল্টে বলল,
“বাই চান্স, তুমি কি মনে করেছিলে আমি তোমায় শাড়ি পড়ানোর কথা বলছি?”

কাশফি হন্তদন্ত হয়ে কন্ঠে জোর দিয়ে বলে উঠলো—
“না!”

কর্ণকুহরে পৌঁছাতেই কৌশিকের মুখে দুষ্টুমির আভা এসে ভিড়লো,
“নেক্সট টাইম, সুইটহার্ট।”

#চলবে…

গল্পের কাহিনী এখনো কিছুই আসেনি, অপেক্ষা করুন। সাসপেন্স থ্রিলার মুভি যেমন শেষ পর্যন্ত দেখা ছাড়া বুঝতে পারেন না এই গল্পটাও শেষ করা ছাড়া বুঝবেন না। কৌশিক একটা ডমিনেটিং আলফা মেইল ক্যারেকটার তাই তাকে সেই অনুযায়ী নিয়ে যাচ্ছি। গল্পটায় মার্জিত ভাষায় নায়ক নায়িকার ইন্টিমেসি থাকবে, আমি ওয়ার্নিং দিয়ে দিব তবে যাদের পছন্দ নয় তারা এড়িয়ে যেতে পারেন।

©️ Propita Newmi – প্রোপীতা নিউমীর গল্পগুচ্ছ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here