#বেসামাল_প্রেম
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৫
ঝুমঝুম বৃষ্টি দমকা হাওয়ার বেগে বড্ড বেসামাল হয়ে পড়তে লাগল। ঠিক যেমন নতুন প্রেমে পড়ার পর কপোত-কপোতীদের মন বেসামাল হয়ে পড়ে। হৈমী ঝুলছে, ঝুলছে তার আধখোলা শাড়িটাও। চারদিক থেকে শীতল স্পর্শের ঝাপটা এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে ও’কে। শরীর হিম হয়ে মরা মানুষ’দের মত অবস্থা। ঠোঁটজোড়া ভীষণ রকম কাঁপছে। কাঁপতে কাঁপতেই রুদ্রর হাতে মাথা ঠেকাল হৈমী। ঠোঁট নাড়িয়ে ব্যর্থ কণ্ঠে বলল,
– ” আমার শাড়ি খুলে যাচ্ছে, আমার খুব শীত লাগছে, আজ আমার জীবন, সম্মান দু’টোই আপনার হাতে! ”
হৈমীর নাস্তানাবুদ কণ্ঠ কর্ণপাত হতেই বিস্মিত চোখে তাকাল রুদ্র৷ এমন একটি দৃশ্য দেখল যে আকস্মাৎ তার বলিষ্ঠ দেহের সর্বশক্তি নিঃশেষ হয়ে শ্বাস রোধ হয়ে আসল। নাক দিয়ে বেরুলো উত্তপ্ত নিঃশ্বাস। কান দিয়ে নির্গত হলো উষ্ণ হাওয়া। অনুভব করল তার পুরুষালি চিত্ত ক্রমান্বয়ে চঞ্চল হয়ে ওঠছে। যে অনুভূতিটা ইতিপূর্বে কখনোই অনুভব করেনি সে৷ ভুল হয়ে গেল বিরাট বড়ো ভুল! যে হাত হৈমীর দখলে সে হাত ওঠানোর চেষ্টা করে অপর হাত বাড়িয়েও হৈমীর হাত ধরে একটানে ছাদের এপাশে আনল। অর্ধেক শাড়ি রেলিঙের ওপারেই রয়ে গেল৷ থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে রেলিঙয়ে হেলান দিয়ে বসল হৈমী। মাথা তার নিচের দিকে। তার অর্ধেক শরীর উন্মুক্ত। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক যুবক পুরুষের পুরুষালি চিত্তচঞ্চল করার জন্য একটি অ’র্ধ’ন’গ্ন বৃষ্টিস্নাত কিশোরী শরীরই যথেষ্ট। রুদ্ররও ব্যতিক্রম হয়নি৷ হৈমী সূচনার শাড়ি পরেছে তাই ব্লাউজটাও সূচনার মাপের৷ ফলশ্রুতিতে হৈমীর শরীরে তা বেশ ঢোলাঢালা হয়েছিল। শাড়ির আড়ালে সেটুকু বোঝা না গেলেও শাড়ি বিহীন স্পষ্ট হয়ে ওঠল। ব্লাউজের ফাঁকফোকর দিয়ে বক্ষবন্ধনী’তে দৃষ্টি পড়তেই দম আঁটকে এলো। হন্তদন্ত করে শাড়ির আঁচল টেনে আনল রুদ্র৷ চোখ বন্ধ করে এক নিঃশ্বাসে হৈমীর উদর থেকে বুক অবধি পেঁচিয়ে দিয়ে বিরবির করে বকতে বকতে ছাদ থেকে নিচে নেমে গেল। এরপর খুব বেশি সময় অতিবাহিত হলো না। ছাতা মাথায় সূচনা এলো ছাদে। ভয়কাতুরে কণ্ঠে ছুটে এসে হৈমীর কাঁধ স্পর্শ করল সে। বলল,
-” হৈমী, এই হৈমী কী হয়েছে তোমার! ”
হৈমীর থেকে সাড়া পেলো না। মেয়েটা সাড়া দেওয়ার অবস্থাতে নেই। সে শুধু আলগোছে নিজের দেহটা ছেড়ে দিলো। সূচনা ভয়ে শিউরে ওঠে একবার চিৎকার করল,
-” হৈমী! ”
বেডে নিশ্চল দেহে ঘুমিয়ে আছে হৈমী। পাশে থার্মোমিটার হাতে বসে মাহের। মা হামিদা রুমে ঢুকতে ঢুকতে বিচলিত কণ্ঠে বলল,
-” বাবু কত জ্বর? ”
-” ১০৪ ডিগ্রী। ”
মুখে আঁচল চেপে কাঁদতে কাঁদতে বেডে এসে বসল হামিদা৷ হৈমীর গালে আলতো ছুঁয়ে বলল,
-” বাবু দেখত এটা কীসের দাগ? ”
চিন্তান্বিত হয়ে হৈমীর লালচে গালের দিকে তাকিয়ে রইল মাহের৷ গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
-” জ্ঞান ফিরুক ওর মুখ থেকেই শুনব। ”
-” এনগেজমেন্ট’টা পিছিয়ে দে বাবু। আমার খুব খটকা লাগছে। এবার আমি চিন্তাভাবনা করতে চাই।”
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ল মাহের। বলল,
-” আগেই পিছিয়ে দেওয়া ঠিক হবে না আম্মু। হৈমী সুস্থ হয়ে ওঠুকু। ”
রুম ছেড়ে বেরিয়ে গেল মাহের। ইতিমধ্যে সূচনার অসংখ্য ম্যাসেজ এসে ভীড় জমিয়েছে। প্রতিটা ম্যাসেজই বুঝিয়ে দিচ্ছে হৈমীর জন্য তার উদ্বিগ্নতার মাত্রা। গভীর শ্বাস ফেলল সে। নিজের রুমে গিয়ে কল করল সূচনার নাম্বারে। সঙ্গে সঙ্গে রিসিভ হলো। ওপাশ থেকে প্রচণ্ড উৎকণ্ঠিত গলার স্বর ভেসে এলো,
-” হৈমী কেমন আছে? ওর জ্বর কমেছে? আন্টি কি খুব টেনশন করছেন? আসলে আমি বুঝতে পারিনি ও কখন ছাদে গেল! ”
-” আপনি শান্ত হন সূচনা। ”
মাহেরের শীতল কণ্ঠস্বর শুনতেই চুপ করল সূচনা। শান্ত গলায় বলল,
-” আ’ম সরি। আমি খুব অন্যায় করেছি। আমি ওর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারিনি। ”
আলতো হেসে মাহের বলল,
-” আপনি ভীষণ বোকা সূচনা। এমন বোকামি করবেন না। আপনি কোন অন্যায় করেননি। আমার বোনটাকে আমি জানি। আই বিলিভ দ্যাট ওর ভুলের শাস্তিই ও পেয়েছে। ”
শঙ্কিত কণ্ঠে সূচনা বলল,
-” মানে? ”
-” অসময়ের বৃষ্টিতে ভেজাত সঠিক কাজ নয় তাই না? ”
-” আমি কি আসব ও’কে দেখতে? ”
-” অনুমতি দিলে তো তখনি নিয়ে আসতাম যখন আসার জেদ করছিলেন। আমি চাই আপনি একদম বধূবেসে আমার বাড়িতে পা রাখুন। ”
অস্বস্তিভরা কণ্ঠে সূচনা বলল,
-” রাখছি। ”
সূচনা রাখছি বললেও ফোন কাটল মাহের। আনমনেই ভাবল,
-” আপনি লজ্জা পেয়েছেন সূচনা। কিন্তু আমি আপনাকে লজ্জা দেইনি। যা আমি দেইনি আপনমনেই তা পেয়ে আপনি লজ্জা পাচ্ছেন৷ এর অর্থ দাঁড়ায় আপনি সত্যি ভীষণ বোকা। ”
___
মাহেরের তীক্ষ্ণ বুদ্ধি অনেক কিছুই টের পেলো। তাই পরেরদিন ভোরবেলা দুকাপ কফি বানিয়ে বোনের ঘরে পা বাড়াল। বেডের পাশে বসে দীর্ঘসময় ডাকার পর মাথা ধরে ওঠে বসল হৈমী৷ মাহের মৃদু হেসে বলল,
-” ডিয়ার সিস্টার জ্বর কমে গেছে। ”
জড়ানো কণ্ঠে হৈমী বলল,
-” ফ্রেশ হয়ে আসছি। ”
দুমিনিটে ফ্রেশ হয়ে তয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বেডে এসে বসল হৈমী। কফির মগে চুমুক দিতে দিতে বোনের মুখশ্রীতে সুক্ষ্ম দৃষ্টি বোলালো মাহের। হৈমী কফির মগ হাতে নিয়ে ভীষণ সিরিয়াস হয়ে বসল। মাহের বলল,
-” সত্যি ঘটনাটা খুলে বলো। কাল কী হয়েছিল তোমার? কাকে ভয় পেয়েছ? ”
বারকয়েক ঢোক গিলল হৈমী। বলল,
-” ভাবি খুব ভালো ভাইয়া। ভাবির কোন দোষ নেই। ”
-” দোষটা কার? ”
-” কার আবার ঐ যে জঙ্গলের রাজা, গোমরামুখো, রোবটমার্কা বেয়াইটার! ”
-” ফালতু বকছো। সিরিয়াস ভাবে বলো ও তোমার গায়ে হাত তুলেছে? ”
হৈমী সবটা খুলে বলল মাহেরকে। সবটা শুনে হৈমীর প্রতি স্বাভাবিক রাগ হলেও রুদ্রর প্রতি তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হলো। কোনক্রমে নিজেকে সংযত করে বলল,
-” মুখ খুব বেশি চালাও তুমি হৈমী। ”
-” সরি। ”
-” এই সরির কোন মূল্য আছে? ”
-” তুমি প্লিজ রাগ করো না। ”
-” রাগ হচ্ছে। ”
হৈমী ভীত কণ্ঠে বলল,
-” আম্মু এনগেজমেন্ট পেছাতে বলছে কেন? ”
-” জানি না। ”
-” তুমি পিছিও না। সূচনা ভাবিকেই আমার ভাবি বানাও। ”
-” বানাবো। রুদ্রর কারণে বিয়েটা ভেঙে দিলে আর সবার সাথে আমার কোন পার্থক্য থাকবে না। ওর বাবা, মা, ভাইয়ের অপরাধের শাস্তি আমি ও’কে দেবো না। গতকালকের ঘটনা তুমি আম্মুর থেকে চেপে যাবে। ”
-” যদি জিজ্ঞেস করে কী বলব? ”
-” তোমার মতো মেয়েকে সেটা আমার শিখিয়ে দিতে হবে? সেইদিন কি সত্যি আজ এলো? ”
-” আচ্ছা আম্মুকে আমি জাস্ট ঘোল খাওয়ে দেবো। ”
মাহের কফির মগে শেষ চুমুক দিয়ে গম্ভীর স্বরে বলল,
-” হৈমী তুমি আমার বোন। ”
চমকে ওঠল হৈমী। ভ্রু কুঁচকে বলল,
-” হ্যাঁ বোনই তো। এমনভাবে বলছ যেন এটা আজ তুমি জেনে আমাকে জানাচ্ছ। ”
বলেই খিলখিল করে হাসতে লাগল হৈমী। মাহের মৃদু ধমক দিয়ে বলল,
-” স্টুপিডের মতো হাসবে না। আমার বোন হয়ে তুমি গতকাল যেভাবে অপমানিত হয়েছ। ভাবতেই আমার রক্ত ছলকে ওঠছে। ”
-” আমি এই প্রতিশোধ নেবো ভাইয়া। ”
-” কীভাবে নেবে? ”
-” এখনো পরিকল্পনা করিনি। ”
-” শাট আপ! ”
হৈমী আহ্লাদ করে বলল,
-” বকছো কেন? ”
ক্রুদ্ধ কণ্ঠে মাহের বলল,
-” তোমার প্রতিশোধ মানেই তো স্টুপিডের মতো কাণ্ড। শোনো হৈমী, অন্যায় তুমিও করেছ ঠিক। কিন্তু রুদ্র যা করেছে তাকে অপমান বলে। অসভ্যপনাও বলে। এর জবাব ও’কে আমি দেবো, তোমাকে দিয়ে। ”
পিটপিট করে তাকিয়ে হৈমী বলল,
-” কীভাবে? ”
-” আমি যা বলব তাই শুনতে হবে তোমায়। ”
মন খারাপ হলো হৈমীর। মুখ ভার করে বলল,
-” আমি জানি এখন তুমি চুপ করে থাকতে বলবে। কিন্তু আমিত চুপ থাকতে পারি না আমার দম বন্ধ লাগে। ”
-” নীরবতার চেয়ে বড়ো জবাব যেমন হয় না। তেমনি বড়ো অপমানও নেই। আমি তোমাকে তোমার স্বভাবের বিরুদ্ধে যেতে বলছি না৷ আমি তোমাকে বলছি প্রতিশোধ নিতে। তুমি শুধু এক জায়গায় মুখ বন্ধ রেখে প্রতিশোধ নিতে পারো। ”
উৎসুক হয়ে তাকিয়ে হৈমী বলল,
-” তাই। ”
-” হ্যাঁ। আজকের পর থেকে রুদ্র নামে তুমি কাউকে চেনো না। আমি কী বলছি বুঝতে পেরেছ? ”
মাহেরের চোখে চোখ রেখে মাথা নাড়াল হৈমী৷ দৃঢ় স্বরে বলল,
-” খুব বুঝেছি। ”
চলবে…
( অনুমতি ছাড়া কপি নিষেধ )
ব্যস্ততার কারণে কিছু দিন লেখার সময় পাবো না। পরবর্তী পর্ব ২৫ তারিখ আসবে।