#বেসামাল_প্রেম
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৯
সারারাত বিছানায় ছটফট করল হৈমী। যে ভয়ানক কাণ্ডটা সে ঘটিয়েছে এর ফল কী হতে পারে, কী হবে ভেবে ভেবেই অস্থির হয়ে ওঠছে। একটু পর পর ওঠে পানি খাওয়ার ফলে এক জগ পানি শেষ। এরপরও গলা শুকিয়ে শুকনো কাঠ। পানির জন্য বাইরে যাওয়ার সাহসটুকুও নেই। মন বলছে বদমায়েশ লোকটা দরজার বাইরে ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে। সে দরজা খুললেই বাঘের মতো থাবা দিয়ে ধরে নিয়ে যাবে। এরপর তার শরীরের হাড়গোড় ভেঙ্গে জুস টুস করে, পিণ্ডি চটকিয়ে খাবে। ঘনঘন ঢোক গিলল হৈমী। শোয়া থেকে ওঠে বসে রুমের চারপাশে সতর্ক নজর বুলালো। হঠাৎ মনে হলো কেউ আসছে, এই বুঝি দরজা ভেঙে তাকে ওঠিয়ে নিয়ে যাবে! অমনি তড়াক করে চোখমুখ খিঁচে শুয়ে পড়ল সে৷ মনে মনে দোয়া দরূদ পড়ে বুকে ফুঁ দিল। নিশ্বাসে অস্থিরতা ক্রমশ বাড়ছেই, কমছে না। বারে বারে কপাল ঘেমে ওঠছে। বুকের ভিতরটায় তোলপাড় হচ্ছে অস্বাভাবিক রকমের৷ এমনই ভাবে ছটফট করতে করতে সারারাত কেটে গেল। ফজরের আজান পড়তেই হুঁশ ফিরল। আবারও ওঠে বসল। রাতটা রক্ষা পেলেও সকালে কি সে রক্ষা পাবে? এই ভাবনা মনে আসা মাত্রই বিছানা থেকে লাফিয়ে ওঠল। চলে গেল দাদিনের বেলকনিতে। উদ্দেশ্য বেলকনি ঝাপিয়ে শেখ বাড়ি থেকে পালিয়ে যাওয়া। সত্যি সত্যি সে যখন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে নিচে তাকাল। আঁতকে ওঠে ঢোক গিলল কয়েকবার। লাফ দিলে যদি পড়ে মরে যায়? সেও ভালো। সকালে রুদ্রর হাতে পড়ে মরার চেয়ে এখনি মরে যাওয়া ভালো! অমনি আবারও আঁতকে ওঠল বিরবির করে বলল,
-” না না এটা তো আত্মহত্যা হয়ে যাবে! ”
নিজের করুণ পরিণতির কথা ভেবে কান্না পেয়ে গেল খুব। রুমে গিয়ে মোবাইল নিয়ে আবারও বেলকনিতে চলে এলো। ভাবল নয়নকে ফোন করে সব ঘটনা খুলে বলে একটা উপায় ধার নেবে৷ অনেক ভাবাভাবি করে শেষ পর্যন্ত ফোন করল টিশাকে। টিশা তার খালাতো বোন৷ বয়সে তারা মাস দুয়েকের ছোটো বড়ো। তাদের দুজনের স্বভাব এতটা মিলে যায় যে অনেকে ধারণা করে তারা আপন বোনই। কাজিন মহলে তাদের দুজনকে নিয়ে একটি কথা প্রচলিত আছে, শয়তানের যেমন খালাতো ভাই থাকে তেমনি হৈমীরও খালাতো বোন আছে সে হচ্ছে টিশারানি। যার নিকনেম ম্যাসেন্জার গ্রুপে বাচালকন্যা-১ দেয়া আছে বাচালকন্যা-২ হৈমী নিজে। সেই টিশাকেই ফোন করল হৈমী। টিশা তখন স্বামীর আদুরে বুকে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। তাই কল রিসিভ করল তার স্বামী রউফ। ওপাশে টিশা ভেবেই হৈমী হড়বড় করে বলতে লাগল,
-“বইন তুই কি ঘুমাচ্ছিস? প্লিজ আমাকে বাঁচা আমি ঘোর বিপদে আছি। কী বালের ক্রাশ খাইছিলাম রে জীবনটা আমার ত্যানা ত্যানা হয়ে গেলরে। প্লিজ তুই আমাকে বাঁচারে। বাঁচার জন্য একটা রাস্তা দেরে। আমি ভয়াবহ একটা ঘটনা ঘটিয়েছিরে টিশু, আমি ঐ গুন্ডাটাকে চুমুর বদলে কামড় দিয়ে ফেলেছিরে। এখন আমার কী হবে রে। তুই কেন এত তাড়াতাড়ি চলে গেলিরে, দুলাভাইকে কেন আর কয়েকটা দিন রাজি করালি না রে। দুলাভাই কি আর দুইটা দিন তোরে ছাড়া থাকতে পারতো না রে। তোর তো চারমাস চলেরে এখন তোকে দিয়ে তার এত কাজ কী রে?”
ফোনের ওপাশে বিরক্ত না হয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল রউফ। ননস্টপ মুখ চলে এমন ঘরনিকে নিয়ে ঘর করছে সে। তাই শালিকার ননস্টপ কথাগুলো শুনে বিরক্ত হলো না। শুধু দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
-” চুমু দিলেই হতো কামড়ানোর কী প্রয়োজন ছিল? তোমরা দু বোন পারোও বটে! ”
লজ্জায় মরি মরি হয়ে ফোন কেটে দিল হৈমী। ছিঃ ছিঃ করে দু’হাতে মুখ ঢেকে ফেলল। অমনি ম্যাসেজ এলো টিশার নাম্বার থেকে,
-” ভয় পেও না শালিসাহেবা মাথা ঠাণ্ডা রাখো। ও বাড়িতে সব সময় মাহের ভাইয়ার গা ঘেঁষে ঘেঁষে থেকো। টিশা এখন ঘুমাচ্ছে সকালে বলে দিব ফোন দিয়েছিলে। বোঝোই তো শরীরটা তেমন ভালো নেই ওর, ঘুমিয়েছে দেড়টার দিকে তাই এখন জাগাতে চাচ্ছি না। ”
কাঁদো কাঁদো মুখ করে হৈমী রিপলাই দিল,
-” ঠিক আছে দুলাভাই সরি ফর ডিস্টার্ব। ”
-” ইট’স ওকে ডিয়ার শালিকা। ”
_____
চলবে..
( অনুমতি ছাড়া কপি নিষেধ)
[ আজকে রাতে এ পর্বের বাকি অংশ দিব। গল্পের মেইন প্লটে খুব শিঘ্রই ঢুকে যাব আমরা ইনশাআল্লাহ। ]