বেসামাল_প্রেম #লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা #পর্ব_৪

0
196

#বেসামাল_প্রেম
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৪
হৈমীর কথার আদি অন্ত কিছুই বুঝতে পারল না সূচনা৷ বোকা চোখে চঞ্চলিত মেয়েটার দিকে কয়েক পল তাকিয়ে রইল৷ রুদ্র তার স্বভাবসুলভ এগিয়ে এসে মাহেরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। মাহেরও সৌজন্যপূর্ণ হেসে হ্যান্ডশেকের জন্য হাতে হাত মেলাল। এ দৃশ্য দেখে যেন হালকা করে মরে গেল হৈমী। চোখ বড়ো বড়ো করে ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলল সে। সূচনার কানে কানে ফিসফিস করে বলল,
– ” ভাবি ও ভাবি এটা কী হচ্ছে? ”

সূচনা মুচকি হেসে বলল,
-” আমার ভাইয়া রুদ্র। ”

হৈমী’কে কথাটা বলেই রুদ্র’কে বলল,
-” ভাইয়া ও হৈমী, উনার বোন। ”

সূচনার কণ্ঠস্বর কর্ণগোচর হলেও হৈমীর দিকে ফিরে তাকাল না রুদ্র৷ মাহের’কে বাড়িতে ঢোকার ইশারা করে সে গটগট পায়ে বাড়ির ভেতর চলে গেল। মাহের কিছুটা অবাক হলো। সূচনা বলল,
-” কিছু মনে করবেন না৷ ভাইয়া আসলে মেয়েদের সঙ্গে মিশতে পারে না। আমার সঙ্গেও অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা কম বলে। ”

মাহের স্মিত হেসে বলল,
-” ইট’স ওকে রুদ্র সম্পর্কে কিছুটা জানি। ”

হৈমী ‘না’ শব্দ উচ্চারণ করে মৃদু আর্তনাদ করল।চমকে তাকাল মাহের সূচনা উভয়ই। তাদের চমকানো চাহনি দেখে হৈমী মাথা ধরে বলল,
-” আমার মাথা ঘুরছে ভাইয়া। গলা শুকিয়ে গেছে আমি পানি খাব। ”

বিচলিত হয়ে মাহের বলল,
-” আই থিংক রুদ্রকে দেখে ঘাবড়ে গেছে। ”

তীব্র লজ্জায় গাল দু’টো লাল হয়ে গেল সূচনার৷ সত্যি তার ভাই’টা এমন বেশভূষায় থাকে, অপরিচিত’রা প্রথম দেখায় ভয় পাবারই কথা। অথচ লম্বায়, ফর্সায়, দেহের সুগঠনে একজন তামিল হিরোর চেয়ে কম নয় তার ভাই৷ লজ্জায় থমথমে মুখ করে দু’জন’কে বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেল সে। বাড়ির ভেতর গিয়ে মাহের বেশিক্ষণ দেরি করল না। বিকেলের দিকে হৈমী’কে এসে নিয়ে যাবে। এখন তার কিছু কাজ রয়েছে তাই চলে যাবে। সূচনার দাদিনের জোরাজোরিতে শুধু দুপুরের খাবার খেল। খাওয়া শেষে কয়েক মিনিট বসে বেরিয়ে পড়ল। তাকে গেট পর্যন্ত এগিয়ে দিলো সূচনা। গেট থেকে বিদায় নেওয়ার পূর্বে হঠাৎ সূচনার খুব কাছে এসে শীতল কণ্ঠে মাহের বলল,
-” আপনি খুবই যত্নশীল সূচনা৷ মাত্র এক ঘন্টাতেই আপনার যত্নশীল আচরণে অভিভূত হয়ে গেছি। নিজেরও যত্ন নেবেন, আসছি । ”

মাহের চলে গেল। বেসামাল করে গেল সূচনা নামক ভগ্নহৃদয়ের অধিকারিনীর হৃৎস্পন্দন’কে। কেউ একজন অযত্নে তার হৃদয় ভেঙেছে। কেউ একজন সে ভাঙা হৃদয় জোড়া লাগাতে যত্নের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এটাই জগতের নিয়ম। কেউ গড়ে, কেউ ভাঙে।

হৈমী দাদিনের সঙ্গে দারুণ গল্প জমিয়েছে। দাদিনের তাকে বেশ লেগেছে। গুমোট পরিবেশে থাকতে থাকতে মনটা বেশ তিক্ত ছিল তার। আজ হৈমী’কে পেয়ে সমস্ত তিক্ততা চলে গেল। গল্পের ফাঁকে হঠাৎ রুদ্রর প্রসঙ্গ এলো। কথায় কথায় হৈমী জানতে পারল রুদ্র’দের ঢাকায় দু’টো বাড়ি একটা গার্মেন্টসের বিজনেস আছে। বাড়ি দু’টোর একটিতে ছোটো চাচার পরিবার, রাদিফের স্ত্রী সন্তান, থাকে। আরেকটি ভাড়া দেওয়া। দেশের বাইরেও একটি ফ্যাশন গার্মেন্টসের বিজনেস আছে। দেশের ব্যবসা সামলায় বড়ো চাচা দিলওয়ারের বড়ো ছেলে রাদিফ শেখ এবং ছোটো চাচা রিজওয়ান শেখ। বিদেশের ব্যবসা সামলায় রুদ্রর বাবা রিদওয়ান শেখ। রুদ্রর এসবে মন নেই৷ গতবছর মাস্টার্স কমপ্লিট করে ভবঘুরে জীবন কাটাচ্ছে সে। ব্যথিত সুরে দাদিন কথাগুলো বলতেই পিটপিট করে তাকিয়ে হৈমী বলল,
-” উনি বিজনেসে মন দিলে গুন্ডামি কে করবে দাদিন? ”

অট্টহাসিতে ফেটে পড়ল দাদিন। সূচনা এসে বলল,
-” কতদিন পর তোমার হাসি শুনছি দাদিন। ”

-” হাসব না? মেয়েটা কেমন তোতাপাখির মতো কথা বলে দেখ। তোরা তো সারাবছরই বোবাপাখি হয়ে থাকিস। ”

হৈমী বলল,
-” তোমরা কী ভালো! আম্মু আর ভাইয়া শুধু শুধু আমাকে শাসন করল। ভয় দেখাল। বলল, হৈমী একদম বেশি কথা বলবে না। হৈমী কুটুম বাড়ি যাচ্ছ রয়েসয়ে কথা বলবে। হৈমী আমি যেন না শুনি ও বাড়িতে তোমার বাচালতার জন্য মন্দ কথা হয়েছে। উফফ পাগল করে দিয়েছিল দু’জন মিলে। তুমিই বলো ভাবি, তুমিই বলো দাদিন। এই যা! ”

জিব কেটে পুনরায় বলল,
-” আম্মু ভাইয়া দু’জনই তোমাদের’কে আপনি সম্বোধন করতে বলেছে। কিন্তু আমি তো সবাইকে আপনি বলতে পারি না৷ শুধু যারা সম্পর্কে দুলাভাই হয় আর একদম অপরিচিত হয় তাদের আপনি করে বলি। আমার গুন্ডা বেয়াইকেও আপনি বলতে পারব। তোমাদের তুমি বললে মাইন্ড করবে? ভাববে ইস মেয়েটা কী বেয়াদব, ম্যানারলেস? ”

সূচনা এসে তার পাশে বসল৷ আলতো ভাবে গাল টিপে দিয়ে বলল,
-” একদম ওসব ভাববো না তুমি করেই বলো। শুধু ভাইয়াকে আপনি বলো সে খুব রাগি মানুষ তো। ”

দাদিনও সম্মতি দিলো। বলল,
-” তুমি বড়ো মিশুক মেয়ে৷ তোমার কথায় ভীমড়ি খাওয়া যায় রাগ করা যায় না। কিন্তু ঐ আমাদের কপালের দোষ অকারণেই রেগে যায় নাতিটা। ”

হৈমী ভীষণ সিরিয়াস হয়ে বসল। ফিসফিস কণ্ঠে বলল,
-” আমার কাছে একটা ওষুধ আছে রাগ কমানোর। ”

সূচনা বলল,
-” কী? ”

-” বেয়াইমশায়কে বিয়ে করিয়ে বউ নিয়ে এসো। বউ কিন্তু আমার মতো সুন্দরী, কিউটের ডিব্বা হতে হবে। রোজ সকালে ঘুম থেকে ওঠে কিউটনেসে ভরা বউয়ের মুখ দেখবে আবার ঘুমাতে যাওয়ার আগে দেখবে। ব্যস রাগ কমে পানি হয়ে যাবে। ”

খিলখিল করে হাসতে লাগল হৈমী৷ তার কথা শুনে প্রথমে হকচকিয়ে গেলেও পরে সূচনাও হেসে ফেলল। দাদিন ভ্রু কুঁচকে ভাবুক কণ্ঠে বলল,
-” ওষুধটা মন্দ না। এমন গুরুত্বপূর্ণ একটা কথাত আমার মাথায়ই আসেনি! ”
__
হৈমীকে পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখাল সূচনা। ঘুরতে ঘুরতে হৈমী তার ছোটোবেলার গল্প করল। আম্মু ভাইয়ের সম্পর্কে অনেক অজানা কথাও জানাল। মাহেরের সম্পর্কে অনেক কিছুই জানল সূচনা৷ যা কেবল তাকে ভালোলাগা উপহার দিলো। অনুভব করল তার মনের বিষাদ বিষাদ অনুভূতি অনেকটাই কমে এসেছে। কেমন অদ্ভুত, নতুন অনুভূতিতে হৃদয় সিক্ত হচ্ছে। হঠাৎ হৈমী তার হাত ধরল বলল,
-” ভাবি তোমার শাড়ি আছে? ”

সূচনা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল। হৈমী আনন্দিত হয়ে বলল,
-” আমি শাড়ি পরব। তুমি তোমার ফোনে সুন্দর করে ছবি তুলে দেবে আমায়। আমার পার্সোনাল ফোন নেই আম্মুর হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার দিয়ে যাব। ছবিগুলো দিয়ে দিবে কেমন? ”

সূচনা মাথা দুলিয়ে হাসল মনে মনে বলল,
-” ভাই বোনে আকাশপাতাল পার্থক্য থাকলেও মনের দিকে দু’জনই অনন্য। মাহের যেমন ভীষণ ম্যাচিওর হৈমী তেমন ভীষণ ইমম্যাচিওর। ”

হৈমী’কে শাড়ি পরিয়ে সাজানোর পর মুগ্ধ হয়ে গেল সূচনা। চিবুক ছুঁয়ে অভিভূত কণ্ঠে বলল,
-” একদম পুতুলের মতো লাগছে। ”

হৈমী নিজের প্রশংসা শুনতে যেমন খুবই ভালোবাসে তেমনি নিজের প্রশংসা নিজে করতেও ভালোবাসে। তাই বলল,
-” আমি জানতাম তুমি ঠিক এটাই বলবে। আম্মু থাকলে সেও সেম কথা বলত। আচ্ছা বেয়াইমশায় আমাকে এভাবে দেখে নিশ্চয়ই রেগে থাকতে পারবে না। আমাকে তার কাছে নিয়ে চলো। ”

আঁতকে ওঠল সূচনা। বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে বলল,
-” একদম না হৈমী ভাইয়া ভীষণ রাগি। আমার আরো ছোটো ছোটো ভাই আছে। কাজিন ব্রাদার ওদের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দেবো। তোমার যত মজা ওদের সঙ্গে করো কিন্তু ভাইয়া না। ”

ঠোঁট ফুলিয়ে বসে রইল হৈমী। বিরবির করে বলল,
-” আমার তো গুন্ডাটাকেই চাইইই। ”

সূচনা মোবাইল এনে হৈমীর গুটিকয়েক ছবি তুলল। মাঝপথে মাহের কল করায় ছবি তোলায় বাঁধা পড়ল। হৈমী শাড়ি পরেছে শুনতেই রেগে গেল মাহের। তাকে শান্ত করল সূচনা। আকাশে মেঘ গুড়গুড় করছে। দুপুরের কড়া রোদ সময়ের তালে তালে মিলিয়ে গেছে। হিমশীতল হাওয়া বইছে চারিদিকে এই বৃষ্টি নামল বলে। ফোনে ব্যস্ত সূচনাকে রেখে বেরিয়ে গেল হৈমী। বৃষ্টি নামবে তাকে ভিজতে হবে। নতুন বাড়ি, নতুন শাড়ি, নতুন ছাদ, রোমান্টিক ওয়েদার পুরো জমে যাবে। শাড়ি জড়ানো, বৃষ্টি মাখানো বিকেল উপভোগ করতে হবে। তার একটি স্বভাব হচ্ছে যখন যা ইচ্ছে হবে তাই করবে। মাঝরাতে ঘুরতে ইচ্ছে করলে ছাদে চলে যাবে৷ কিছুক্ষণ আপনমনে ঘোরাঘুরি করার পর মনে হবে ছাদের পাশের আম গাছটায় ভুতটুত জাতীয় কিছু একটা আছে! মনে হওয়া মাত্র দৌড়ে নিচে নামবে৷ সিঁড়ি বেয়ে নামতে গিয়ে কখনো হোঁচট খেয়ে পড়ে যাবে। কান্নাকাটি করে আম্মু, ভাইয়ের ঘুম ভাঙিয়ে বকা খাবে বিরতিহীন। ভরদুপুরে সাইকেল নিয়ে শহরে বের হতে ইচ্ছে করবে। রোদে পুড়ে শহর ঘুরে লাল টকটকে হয়ে বাড়ি ফিরবে৷ সন্ধ্যা নামতেই জ্বর, ঠান্ডায় একাকার অবস্থা। রাতবিরেতে হুটহাট আইসক্রিম খেতে মন চাবে। বাড়িতে থাকলেও খাবে না৷ লুকিয়ে চুড়িয়ে বের হবে। দোকান খোলা থাকুক বা না থাকুক সে আইসক্রিম খাবেই। প্রয়োজনে দোকানির বাড়ি গিয়ে হামলা করবে। দোকানি মনে মনে তাকে গালমন্দ করবে। আইসক্রিম নিয়ে ফেরার পথে সে বলবে,
-” মামা আপনি যে মনে মনে আমাকে গালি দিয়েছেন এতে আমি একটুও মাইন্ড করিনি। ”

মামা হতভম্ব হয়ে তাকাবে সে খিলখিল করে হাসতে হাসতে সাইকেল টান দেবে। এরকম আরো অসংখ্য ইচ্ছে হুটহাট মনে জাগে সকল ইচ্ছে পূরণও করে সে। তার জীবনের একমাত্র শখ নিজের ইচ্ছেগুলো’কে পূর্ণতা দেওয়া। এমন স্বভাব লোকের কাছে বদ অভ্যাস হলেও তার কাছে উত্তম অভ্যাস বলে মনে হয়। তার ভাষ্যমতে প্রত্যেকটা মানুষেরই নিজের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেওয়া উচিৎ। লোকের কথাকে নয়। লোকে না হয় দু’টো মন্দ কথা বলবে তাতে তো আর তার গায়ে ফোস্কা পড়বে না! এ মুহূর্তে তার ইচ্ছে হয়েছে বৃষ্টিতে ভিজতে। ভিজতে ভিজতে রোমান্টিক মুডে চলে যেতে। দুহাত মেলে সাবধানে পা ফেলে পুরো ছাদজুড়ে ঘুরে বেড়াতে। বাড়ির মতো নিশ্চয়ই ছাদটাও অনেক বড়ো?

ছাদে পা রাখতেই ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে প্রাণবন্ত মনটা খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল। ছুটে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে ঘুরতে শুরু করল। দু-হাত দুদিকে মেলে দেওয়াতে শাড়ির লম্বার আঁচলখানা মেঝেতে লুটোপুটি খেল। ঝিরিঝিরি বৃষ্টি কয়েক মুহূর্ত পরই ঝুমঝুম বৃষ্টিতে পরিণত হলো৷ হৈমী এবার ঘুরতে ঘুরতে চিৎকার করে বলতে লাগল,
-” আয় বৃষ্টি ঝেঁপে ধান দিব মেপে… ”

বাকিটুকু বলার পূর্বেই আঁচলে পা আঁটকে ধপাস করে মেঝেতে পড়ে গেল। কোমড়ে লাগল খুব৷ এমন সময় চোখ গেল ডান পাশের কোণার দিকে। সটান হয়ে পিছনমুখী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রুদ্র। ঠিক যেন সুঠাম দেহের রোবট একটা! কষ্টে ভারাক্রান্ত মনে হৈমী সেদিকে তাকিয়ে উচ্চস্বরে গাইতে লাগল,
-” আয় বৃষ্টি ঝেঁপে ধান দিব মেপে, ধানের ভিতর পোকা রুদ্র বেয়াই বোকা! ”

ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর চেহেরায় পেছনে তাকাল রুদ্র৷ ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে একাকার শরীর তার। চুল দাঁড়ি সবটাই পানির ছোঁয়ায় নুইয়ে রয়েছে। সিগারেটে পোড়া গোলাপি ঠোঁটজোড়া বৃষ্টির ছোঁয়ায় ভীষণ স্নিগ্ধ লাগছে। সেদিকে তাকিয়ে হৈমী বলল,
-” বোকা না হলে কি আর অমন সুন্দর ঠোঁট দু’টো জঙ্গলের ভেতরে লুকিয়ে রাখে কেউ? ”

কান দু’টো গরম হয়ে গেল রুদ্রর। বিশ্রী ভঙ্গিতে বাম দিকে থুথু ফেলে এমন ভাবে হৈমীর দিকে এগুলো যেন দু’পায়ে নয় চার পায়ে হেঁটে এলো সে। হৈমীর বুকের ভিতর হৃৎপিণ্ডটা তড়াক করে লাফিয়ে ওঠল। তাকে ওঠার সময়টুকু দিলো না রুদ্র। নিমিষেই তেড়ে এসে তার এক কাঁধ চেপে ধরে চিৎকার করে ওঠল।
-” অসভ্য, বেয়াদ বাজে মেয়ে। ”

শক্তপোক্ত হাতে চেপে ধরার ব্যথায় কোঁকিয়ে ওঠল হৈমী৷ সঙ্গে সঙ্গে রুদ্র তাকে ছেড়ে পিছন ফিরে বড়ো বড়ো করে শ্বাস ছাড়ল। ঠান্ডা আবহাওয়াতে রিলাক্স হতে ছাদে এসেছিল। অসভ্য মেয়েটা এসে বিরক্ত করায় মাথা খুব গরম হয়ে গেছে। হৈমী শাড়ি জড়িয়ে ধরে ওঠে দাঁড়াল। রুদ্র ধীরপায়ে আবারও রেলিঙয়ের কাছে গেল৷ বারকয়েক ঢোক গিলে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো হৈমী। মনে তীব্র সাহস জুগিয়ে রুদ্রর পাশে গিয়ে দাঁড়াল। বলল,
-” এই যে শুনুন। আপনি নিজেকে কী মনে করেন? আমি অসভ্য, বেয়াদব, বাজে মেয়ে! তাহলে আপনি কী? দেখুন নেহাতই আমি একটা ভদ্র মেয়ে তাই মাইন্ড করলাম না। অন্য কেউ হলে আপনাকে এখুনি ধাক্কা দিয়ে ছাদ থেকে ফেলে ভবলীলাসাঙ্গ করে দিত! ”

রুদ্রর ভবলীলাসাঙ্গ হওয়ার বদলে আকস্মাৎ হৈমীর ভবলীলাসাঙ্গ হয়ে গেল। আকস্মাৎ গালে ঠাশ করে একটা থাপ্পড় দিয়েই ক্ষ্যান্ত হলো না রুদ্র৷ একহাতে ছোঁ মেরে মেয়েটাকে টেনে ছাদের নিচে ফেলে দিতে উদ্যত হলো। ভয়ে চোখমুখ অন্ধকার করে চিৎকার দিলো হৈমী৷ দু’হাতে রুদ্রর একটি হাত খামচে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে দিলো। ভয়ে পা ছোঁড়াছুড়ি করতে করতে বারবার বলল,
-” আম্মু, ভাইয়া এ্যা.. ”

এতে রুদ্রর কোন ভাবান্তর হলো না৷ সে আরামসে দাঁড়িয়ে রইল রেলিঙের এপাশে একহাত সন্তর্পণে পকেটে গুঁজে দিলো। আরেকহাত রেলিঙের ওপাশে হৈমীর জীবন রক্ষা করতে ব্যস্ত। বৃষ্টি না পড়লে একটা সিগারেট ধরালে পরিস্থিতিটা সুন্দর ভাবে উপভোগ করা যেত। তবুও মন্দ লাগছে না ভেবেই হৈমীর চেপে রাখা হাতটা একটু নাড়া দিলো। অমনি আবারও মজাদার একটি চিৎকার ভেসে এলো হৈমীর মুখ থেকে। রুদ্র অনুভব করল বহুবছর পর তার বুকে অদ্ভুত আনন্দানুভূতি হচ্ছে। হাসতে ইচ্ছে করছে ভীষণ রকম৷ খুব কষ্টে নিজের গাম্ভীর্যতার সহায়তায় হাসিটুকু আড়াল করে নিলো। এদিকে যে হাত, পা’য়ের ছোঁড়াছুড়ি তে হৈমীর আঁচল খুলে শাড়ির কুঁচি অর্ধেক খুলে গেল তার কী হবে? কোন দিকে মায়া করে কাঁদবে মেয়েটা? সে না হয় বেয়াইমশায়ের সঙ্গে একটুখানি মশকরাই করেছিল। তাই বলে তিনি তার জীবন, ইজ্জত দু’টো নিয়েই মশকরা করবে!

চলবে…
( অনুমতি ছাড়া কপি নিষেধ)
[ পড়াশোনা, অফলাইনে লেখালেখি নিয়ে ভীষণ ব্যস্ত। সে ব্যস্ততা মাথায় নিয়েই আপনাদের জন্য #বেসামাল_প্রম দিচ্ছি। আশা করি সকলেই রেসপন্স করবেন। বেশি বেশি শেয়ার করে গল্পটা সবার মাঝে পৌঁছে দেবেন৷ সকলকে ভালোবাসা ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here