বেসামাল_প্রেম #লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা #পর্ব_২১ (বর্ধিত

0
170

#বেসামাল_প্রেম
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_২১ (বর্ধিত অংশ)
খোলা আকাশের নিচে উষ্ণ দেহটাকে আগলে বসে রুদ্র। ছোট্ট, নরম দেহটি অবিরত কাঁপছে। দু’জনের ক্রমাগত শ্বাস-প্রশ্বাসে পরিবেশটা থমথমে।পরিবেশের এই গুমোট ভাব পরিবর্তন করে সহসা হৈমীর মাথায় হাত রাখল রুদ্র বলল,
-” ঠিক আছো? ”

নিজের কণ্ঠ শুনে নিজেই বিব্রত হলো। অনুভব করল এ মুহূর্তে তার গম্ভীর স্বরটায় একটু নম্রভাব আনা প্রয়োজন। মেয়েটা এমনিতেই ভয় পেয়েছে এমন পরিস্থিতিতে এমন শাসালো স্বর শুনলে আরো বেশি ভয় পাবে। তাই পুনরায় কণ্ঠে স্বাভাবিকতা আনার চেষ্টা করে বলল,
-” ঠিক আছো? ”

উহুম হলো না বোধহয়। তার স্বাভাবিক কণ্ঠ মানেই তো রাশভারি, ভীষণ গম্ভীর। তার গলা দিয়ে নরম বুলি বের হওয়া কখনোই সম্ভব হয় না। তাই অমন রাশভারি কণ্ঠে আর কিছু বলার ইচ্ছেও করল না। হৈমীকে কৌশলে আগলে ধরে মাথা ঝুঁকাল। দৃষ্টি নিক্ষেপ করল হৈমীর করুণ মুখশ্রীতে। সহসা চমকে ওঠল হৈমী। সংবিৎশক্তি ফিরে পেল সে। নিজেকে রুদ্রর পক্ষপটে লেপ্টে থাকতে দেখে লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে গেল। ক্ষীণ স্বরে বলল,
-” আমি ঠিক আছি, ছাড়ুন। ”

রুদ্র তাকে ছড়তে উদ্যত হলেও কী মনে করে যেন ছাড়ল না৷ বরং পূর্বের তুলনায় একটু বেশি গভীরভাবে জড়িয়ে নিল। হতভম্ব হৈমী দুর্বল শরীরে নড়েচড়ে ওঠল। রুদ্র তার দুহাত মুড়িয়ে এমনভাবে জড়িয়ে নিল যে আর অল্প নড়চড়ও করতে পারল না। বেশ আয়েশ করে চিলেকোঠার ঘরের দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসল সে। হৈমী কাঁদো কাঁদো স্বরে জিজ্ঞেস করল,
-” ছাড়বেন না? ”

স্বভাবসুলভ গম্ভীর কণ্ঠে রুদ্র বলল,
-” সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলো। তুমি এখানে কীভাবে আটকা পড়লে? যতক্ষণ সবটা জানতে না পারছি ততক্ষণ ছাড়ব না। ”

লজ্জায় বিব্রত হলো হৈমী। রুদ্র তার দিকে কতটা খেয়াল করেছে সে জানেনা। কিন্তু সে সম্পূর্ণ হুঁশে আছে। তার গায়ে ওড়না নেই, চাদর নেই। একে-তো রুদ্রর শরীরের সঙ্গে লেপটে আছে, তারওপর গায়ে নেই ওড়না। মাথা ভনভন করতে শুরু করল তার। লজ্জায় আড়ষ্ট চোখে একবার রুদ্রর দৃষ্টি বরাবর তাকিয়ে আর একবার নিজের দিকে তাকাল। নিঃশ্বাস ভারি হয়ে এলো। রুদ্রর দৃষ্টি তার মুখশ্রীতেই স্থির। হৈমীর মন কথন সে টের পায়নি। তাই সহজ গলায় পুনরায় বলল,
-” তুমি এখানে কেন? ”

ঢোক গিলল হৈমী। চাপা স্বরে বলল,
-” ছাড়ুন তারপর বলছি। ”

রুদ্র ছাড়ল না তার দু’হাতের বন্ধন আরো গাঢ় হলো। ফলশ্রুতিতে হৈমীর শরীর আরো বেশি গভীর হলো তার সঙ্গে। সহসা শিউরে ওঠল সে। অথচ রুদ্রর সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। সে তার মতোই উত্তর জানতে মগ্ন। লজ্জায়, জড়তায় থমথমে হয়ে গেল হৈমী। জড়োসড়ো হয়ে শরীর বাঁকিয়ে পড়ে রইল রুদ্রর বাহুডোরে। কিয়ৎকাল পর বুঝতে পারল উত্তর না দিলে ছাড়াছাড়ি নেই। উত্তর দিলেই মুক্তি মিলবে তার রুদ্র দ্যা ডন বেয়াইয়ের থেকে। তাই সমস্ত কথা খুলে বলল। সব কথা শুনে আচমকা হৈমীকে ছেড়ে দিল সে। টাল সামলাতে না পেরে ছাদের মেঝেতে বসে পড়ল হৈমী। ভয় ভয় চোখে বড়ো বড়ো করে তাকাল। রুদ্র দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-” তোমায় বলেছিলাম ওদের সঙ্গে এত মাখামাখি না করতে! ”

ক্রোধে গর্জন ছেড়ে ওঠে দাঁড়াল রুদ্র। চলে যাওয়ার জন্য এক পা বাড়াল। অমনি তড়াক করে হৈমী তার এক পা আঁকড়ে ধরল। মিনমিনে স্বরে বলল,
-” প্লিজ আমাকে একা রেখে যাবেন না। প্লিজ। ”

দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল রুদ্র। পিছু ঘুরে হৈমীকে হাত টেনে দাঁড় করাল। হৈমী আশপাশে তাকিয়ে ওড়না আর চাদর তুলে নিয়ে রুদ্রর এক বাহু জাবটে ধরল। ভয়কাতুরে গলায় বলল,
-” আমি এভাবেই যাব একদম নিচে গিয়ে ছাড়ব। ”

কিছু বলল না রুদ্র। শুধু ভ্রুজোড়া কুঁচকে একবার তাকাল হৈমীর দিকে। সত্যি সত্যি হৈমী ওভাবেই
সিঁড়ি দিয়ে নামল। শেষ সিঁড়ি পর্যন্ত যেতেই মুখোমুখি হলো সোহান, রোশানের। ওদের দেখে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না রুদ্র। হৈমীকে ছাড়িয়ে ওরা কিছু বুঝে ওঠবার আগেই তৎক্ষনাৎ সোহানের গালে ঠাশ করে থাপ্পড় বসিয়ে দিল। ভয়ে রোশান পিছিয়ে গেল কয়েক পা৷ সোহানের ডান হাত আপনাআপনিই থাপ্পড় খাওয়া গালটায় চেপে ধরল। রুদ্র বীভৎস এক ধমক দিয়ে বলল,
-” হাতে পায়ে বড়ো হয়েছিস, বুদ্ধি খোলেনি। এসব কী ধরনের মজা তোদের? রোশান না হয় ছোটো তুই কীভাবে এসবে সমর্থন করলি! ”

সোহান থমকানো স্বরে বলল,
-” সরি ভাইয়া আর হবে না। ”

রুদ্র মুখ ফিরিয়ে দাঁড়াল। সোহান রোশান দু’জন হৈমীকেও সরি বলল। এরপর রুদ্রর কঠিন চোখের সামনে থেকে পালিয়ে গেল দু’ভাই। হৈমী হতভম্ব, বাকরুদ্ধ হয়ে ঠাঁই দাঁড়িয়ে। রুদ্র ঘাড় ফিরিয়ে তার দিকে তাকাল। অমনি আমতাআমতা করে সে বলল,
-” আআমি দাদিনের কাছে যাব। কুসুম আপুকে বলব পোড়া লোহা পানিতে ভিজিয়ে সে পানি দিতে। আমি খাব, ভয় পেলে এমন করে পানি খেতে হয়, এতে ভয় কেটে যায়। দাদিনকে বলব যেন দোয়া পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে দেয় আমি খাব৷ আআমি নিচে যাব, মানে নিচে যাই? ”

রুদ্র চোখ কটমট করে তাকাল। হৈমী জোরপূর্বক হেসে আমতা আমতা করেই বলল,
-” আচ্ছা ঠিক আছে যাই আমি হ্যাঁ? যাই, গেলাম ”
______
সকাল ৭ঃ ৪৫ মিনিটে শেখ বাড়িতে হামিদার আগমন ঘটল৷ কাউকে কিছু না জানিয়ে সকাল সকাল মায়ের আগমনে ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়ল মাহের। সে চিন্তাটুকুকে আরেকটু বাড়িয়ে দিলেন হামিদা নিজেই।

শাশুড়ির এভাবে আসাতে প্রথমে অবাক হলেও পরবর্তীতে ভীষণ খুশি হয় সূচনা৷ গল্পস্বল্প করে সকালের খাবার আয়োজন করে। খেতে বসার পরই সকলের অগোচরে মাহেরকে হামিদা বলেন,
-” বউমাকে নিয়ে আজই বাড়িতে ফিরতে হবে। জরুরি কাজ আছে, বাড়ি গিয়ে সব বলব। ”

ব্যস এইটুকুতেই মাহের বুঝে নিয়েছে ভয়াবহ কিছু ঘটেছে। নয়তো টিশার প্রেগ্ন্যাসির শেষ সপ্তাহে টিশাকে ফেলে এভাবে তার মা ছুটে আসত না। সূচনা আরো কয়েকটা দিন থাকতে চেয়েছিল। শাশুড়ির তাড়ায় থাকা হলো না। স্বামী, ননদ, শাশুড়ির সঙ্গে দুপুরের আগেই শশুর বাড়ি চলে যেতে হলো। বাড়িতে যাওয়ার পর মাহেরকে পোশাক পরিবর্তনের জন্যও সময় দিল না হামিদা৷ ছেলেকে আলাদা করে ডেকে জানাল, দু’দিনের ভিতরে হৈমীর বিয়ে দেবে সে। ছেলে তার পরিচিতই টিশার ছোটো কাকার বড়ো ছেলে আমান। মাহের যতদূর জানে মাত্র একটি এমপিওভূক্ত কলেজে লেকচারার হিসেবে জয়েন করেছে আমান। বিবিএসের জন্যও প্রিপারেশন নিচ্ছে। তার সমবয়সী ছেলেটা৷ সে যাইহোক হঠাৎ মায়ের এ সিদ্ধান্ত কেন? মনের প্রশ্ন মুখে আনার পূর্বেই হামিদা ভীতু কণ্ঠে বলল,
-” তুই না করিস না, আমি যা বলছি হৈমীর ভালোর জন্যই বলছি। ”

-” তুমি শান্ত হও মা। আমার দিকে তাকাও। কী হয়েছে?”

দু’হাতে মায়ের চোয়াল চেপে ধরল মাহের। ভরসার সাথে তাকিয়ে বলল কথাটা। হামিদা বিচলিত হয়ে বলল,
-” যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হৈমীর বিয়ে দে মাহের। আমার কথাটা শোন নয়তো সামনে গুরুতর বিপদ ঘটবে। ”

-” সবটা খুলে বলো মা তুমি কোন বিপদের কথা বলছ পরিষ্কার বুঝতে পারছি না। ”

-” সূচনার ভাই!”

-” রুদ্র আগের মতো নেই মা। ও নিজেকে শোধরানো চেষ্টা করছে। তাছাড়া তুমি নিজেই বলেছিলে ও যদি নিজেকে শোধরায় আর হৈমীর প্রতি ওর মনোভাবটি সত্যি হয় তাহলে তুমি আপত্তি করবে না। তোমার কথা শুনেই আমি রুদ্রকে বুঝিয়েছিলাম। ”

হামিদা উত্তেজিত স্বরে বলল,
-” হ্যাঁ আমিও ভেবেছিলাম সময় নিয়ে রুদ্রকে নিয়ে ভাবতে কিন্তু… ”

-” কিন্তু কী মা? ”

-” জেনেশুনে আমার মেয়ের ভবিষ্যৎ আমি নষ্ট করতে পারি না। গতকাল আমি যা শুনেছি এরপর রুদ্রর হাতে আমার মেয়েকে তুলে দেয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ”

-” কী শুনেছ! ”

-” রুদ্র হৈমীকে পছন্দ করে এটা সত্যি, বিয়ে করতে চায় সেটাও সত্যি। কিন্তু ও কখনো হৈমীকে মা হতে দেবে না। ”

-” এসব কী বলছ! ”

-” হ্যাঁ আমি টিশাকে হৈমীর সঙ্গে কথা বলতে দেখেছি। আড়াল থেকে সমস্তটাই শুনেছি। তুই তো জানিস টিশা আস্তে কথা বলতে পারে না৷ ওপাশে হৈমী কী বলেছে না শুনলেও টিশার মুখে সবটাই শুনেছি। রুদ্র হৈমীকে শর্ত দিয়েছে বিয়ের পর কখনো বাচ্চা নেবে না। মাহের, হৈমী অবুঝ ওর বয়স কম আবেগের বশে ও ভুল সিদ্ধান্ত নেবে। জল বেশিদূর আগানোর আগেই আমাদের ওকে সঠিক রাস্তা দেখাতে হবে। ”

থমকানো স্বরে মাহের বলল,
-” কী করতে চাইছ? ”

-” আমি সব কথা সেরে এসেছি। তুই সম্মত হলেই একদিন পর বিয়েটা দিয়ে দিব। এখন ওঠিয়ে দিব না শুধু বিয়ে পড়িয়ে রাখি। তেমন কাউকে জানাবোও না। শুধু আমানের বাবা, মা ভাই, আর আমরা। টিশাও জানে না কিছু শুধু ওর জামাইয়ের সঙ্গে আলোচনা করেছি। বলেছিও এসব যেন টিশাকে না জানায়। মুখ পাতলা তো হৈমীকে জানিয়ে সমস্যা বাঁধাবে। ”

-” হৈমীকে না জানিয়ে কীভাবে বিয়ে হবে? ”

-” ওকে জানাবো আজ। আমি চাইনি ও বাড়ি থাকাকালীন সব জানুক। তুই কী বলিস? ”

দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল মাহের৷ থমথমে স্বরে বলল,
-” রুদ্র যা বলেছে এরপর তোমার কথার বিরোধিতা করার সাহস আমার নেই৷ আমি আমার বোনের এতবড়ো সর্বনাশ করতে চাই না। ”

-” তাহলে জানিয়ে দিই তোর মত আছে? ”

-” দাও। ”

চলবে…রিচেক দিইনি।

প্রিয় পাঠক এটা আমার নাঈমার পাঠকমহল-Naiyma’s Readership আশা করি সকলেই যুক্ত হবেন।

প্রিয় পাঠক, আমার প্রথম ই-বুক আকুলিবিকুলি পড়েছেন? না পড়ে থাকলে অবশ্যই পড়বেন রোমান্স ধর্মী এই বইটি৷ মূল্য মাত্র ৪০৳। পাওয়া যাচ্ছে বইটই এপে। বইটি কেনার লিংক কমেন্টে দিয়ে দিব।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here