#বেসামাল_প্রেম
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৩৬
প্রতিটি সন্তানের করা অন্যায়, ভুল, পৃথিবী শুদ্ধ অপরাধ মাতৃ হৃদয়ে অতি সহজেই ক্ষমা পেয়ে যায় ৷ তাই তো হৈমীর থেকে পাওয়া আঘাত, হৈমীর করা অপরাধ সব ভুলে গিয়ে কন্যাস্নেহে হঠাৎ মরিয়া হয়ে ওঠল হামিদা৷ সকল রাগ, অভিমান ভুলে গিয়ে মাহেরকে আদেশ করল, একটিবার হৈমীর কাছে যেতে৷ তার ছোট্ট আদুরে বাচ্চাটাকে দেখে আসতে। মায়ের আদেশ পেয়ে কলেজ থেকে বেশ কিছু দিন ছুটি নিল মাহের৷ সূচনাও গোছগাছ শুরু করে দিল। আগামীকালই তারা ঢাকা যাবে। মাহেরকে নিয়ে এ প্রথম কিছুটা দূরে যাবে বেড়াতে। এতেই সে মহাখুশি।
সন্ধ্যার পর হামিদা সূচনাকে নিজের রুমে ডেকে পাঠাল। তিনি হৈমীর জন্য এক ব্যাগ জিনিসপত্র গুছিয়ে রেখেছিল৷ সেটা সূচনাকে বুঝিয়ে দিল। সূচনা মুগ্ধ হলো মেয়ের প্রতি মায়ের এই ভালোবাসা, যত্নটুকু দেখে৷ সে কখনো মায়ের ভালোবাসা পায়নি।
তাই হৈমীর প্রতি হামিদার এই যত্নটুকু তার হৃদয় শীতল করে দিল৷ হামিদা সব কিছু বুঝিয়ে দেয়ার পর এবার সূচনা আর মাহেরের প্রসঙ্গে এলো। সূচনাকে নিজের পাশে বসতে বলে শান্ত গলায় বলল,
-” বাড়িতে ইদানীং মন টেকে না। হৈমীটা নেই, টিশার ওখানে থেকে থেকে অভ্যাসটা খারাপ হয়ে গেছে। ”
সূচনা ধীরস্থির চোখে তাকিয়ে রইল শাশুড়ির দিকে। সে ঠিক কী বলতে বা বোঝাতে চাচ্ছে বোধগম্য হলো না। হামিদা বুঝতে পেরে খোলাসা করেই বলল,
-” দেখো মা আমার বয়স হচ্ছে। তোমার শশুর নেই, আমি বড়ো নিঃসঙ্গ মানুষ। এই নিঃসঙ্গতায় মন মেজাজ ঠিক থাকে না। হৈমী চলে যাবার পর থেকে তোমার সঙ্গেও আমি স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে পারি না। স্বাভাবিক হতে চাইলেও পারি না। কোনো কিছুতে মন স্থির রাখতে পারি না। শান্তি পাই না। বয়স হয়ে যাচ্ছে, বুড়ো হচ্ছি। বুড়ো মানুষ আর বাচ্চাদের এক কাতারেই ফালানো যায়। এই বয়সে এসে মন ঠিক করার জন্য, সঙ্গ দেয়ার জন্য কোনো বুড়োকে ধরতে পারি না। তাই ভাবছি তোমরা যি এবার একটা নাতির ব্যবস্থা করে দাও আমাকে। বাকি দিনগুলো তার সঙ্গে হেসে, খেলে পার করে দিতে চাই। শরীরটাও ইদানীং ভালো যায় না। আমার বংশে জোয়ানকি মরা বুঝলা। টিশার মা তো খুব অল্প বয়সেই রোগে পড়ে মারা গেল। আমিও রোগ নিয়ে পঞ্চাশ ছুঁয়েছি। আর কতদিন আছি জানি না৷ তোমার আর মাহেরের কাছে আমার এখন একটাই চাওয়া, ওপারে যাওয়ার আগে আমার বংশের প্রদীপ দেখে যেতে চাই। ”
সহসা সূচনার গাল দু’টো রক্তিম হয়ে ওঠল৷ হাত, পা অসাড় হয়ে এলো। পাশাপাশি বুকের ভিতর কিঞ্চিৎ কষ্ট বোধ করল এই ভেবে, তার শাশুড়িও অন্য সব শাশুড়িদের মতো ছেলে বউয়ের কাছে ছেলে সন্তান চায়? এটা তো আল্লাহ প্রদত্ত জিনিস। সে নাতি, নাতনি চায় এটা বললে হয়তো তার অনুভূতি এ মুহুর্তে অন্যরকম সুন্দর হতো। ঢোক গিলল সূচনা। তার চোখ, মুখের অবস্থা দেখে হামিদা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বলল,
-” কী ভাবছ? নাতি চেয়েছি বলে কি আমার ওপর অসন্তুষ্ট হলে? আমি ছেলে, মেয়েদের আলাদা চোখে দেখি না৷ ছেলে আর মেয়ে দু’টোর গুরুত্বই আমার কাছে সমান৷ শুধু তোমার প্রথম সন্তান ছেলে হোক এটা চাই, তাই বলে মেয়ে হলে যে আমি অসন্তুষ্ট হবো তা নয়৷ যাই হোক সবেতেই খুশি হবো। তবে ছেলে এলে মনে এই ভেবে স্বান্তনা পাবো যে তোমার শশুর এসেছে। ”
পুনরায় দীর্ঘশ্বাস ফেলল হামিদা৷ সূচনা টলমল চোখে তাকিয়ে রইল। শেষ কথাটা শুনে বুকের ভিতর চিনচিনে ব্যথা অনুভব করল। কষ্ট হলো শাশুড়ির নিঃসঙ্গতার কথা ভেবে, শশুরের প্রতি ভালোবাসার গভীরতা বুঝতে পেরে। মুহুর্তেই মনে প্রশ্ন জাগল, এ পৃথিবীতে স্বামী-স্ত্রীরা কতগুলো বছর একসঙ্গে সংসার করে। কতগুলো রাত একে অপরের সঙ্গে মিশে কাটায়। একে অপরের বাচ্চার মা, বাবা হয়। কত-শত সুখ, দুঃখের স্মৃতি গড়ে তুলে। একে অপরের পরিপূরক হয়ে কাটিয়ে দেয় অনেকগুলো বসন্ত। এরপর যখন হুট করে সৃষ্টি কর্তা তাদের মধ্যে চিরবিচ্ছেদ ঘটায়! এ বিচ্ছেদ কী মেনে নেয়া যায়? এ বিচ্ছেদ কী সহনশীল হয়? কীভাবে পারে মানুষ, মানুষ হারানোর যন্ত্রণা নিয়ে বাঁচতে? শাশুড়ির যে যন্ত্রণাটা সে অনুভব করার কথা ভাবতেই পারছে না৷ সে যন্ত্রণা শাশুড়ি ভোগ করছে! ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠল। মনে পড়ল দাদিনের কথা। তার দাদান মারা গেছে আজ প্রায় বিশ বছর। অথচ তার দাদিন আজো দাদানের কত স্মৃতি ধরে বেঁচে আছেন৷ কথার ফাঁকে দাদানের কত পছন্দ, কত অপছন্দ, স্বভাব, আচার-আচরণ নিয়ে গল্প করে। একজন নারী একজন পুরুষকে ধারণ করে একাকী বার্ধক্যের কতগুলো বছর কাটিয়ে দিচ্ছে। হামিদাও সেই পথেরই পথিক। হাঁপ নিঃশ্বাস ছাড়ল সূচনা। হঠাৎ হামিদা জিজ্ঞেস করল,
-” শোনো খুব তাড়াতাড়ি আমি সুসংবাদ শুনতে চাই। আজকের পর যেন আর ওষুধ, টষুধ খেয়ো না৷ আমার কথা কী তুমি বুঝতে পারছ? ”
সূচনা লজ্জা পেল। মাথা নত করে মনে মনে বলল,
-” আপনার ছেলের সঙ্গে আমার সেই সম্পর্কই হয়নি যার জন্য ওষুধ টষুধ খেতে হবে। ”
মুখে বলল,
-” আসলে মা, উনি চান আমার পড়াশোনাটা শেষ হোক। ”
-” পড়াশোনা শেষ হোক মানে? আজকালকার খবর তোমরা রাখো? পড়াশোনা করে করে বাচ্চা নিবা না। এরপর আর বাচ্চা হবেই না। তাছাড়া তোমার যথেষ্ট বয়স হয়েছে। টিশা যদি এই বয়সে মা হয়ে পড়াশোনা চালাতে পারে তুমি পারবে না? তোমার তো মা নেই ভালো মন্দ জ্ঞান দেবার মানুষও নেই। আমার কথা শোনো একটা বাচ্চা নিয়ে নাও। ওর দেখাশোনা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমি যতদিন বেঁচে আছি কোনো সমস্যাই হবে না। পড়াশোনা করো, মাহের চায় তুমি নিজের পায়ে দাঁড়াও। আমার আপত্তি নেই। শুধু একটা বাচ্চা নাও এরপর যা খুশি করো। ”
সূচনা মাথা কাৎ করল। হামিদা আরো অনেক কিছুই বোঝালো তাকে৷ সে শুধু মাথা নেড়ে সবেতে সম্মতি দিল।
_______
পরেরদিন সকাল সকাল মাহের, সূচনা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হলো। রুদ্র তাদের জন্য গাড়ি পাঠিয়েছে৷ সে গাড়ি করেই দুজন যাচ্ছে ব্যস্ত শহর ঢাকাতে। পাশাপাশি দু’জন বসে অথচ দুজনের দৃষ্টিই জানালার বাইরে৷ মাঝে মাঝে মাহের আড়চোখে তাকাচ্ছে সূচনার দিকে। গতরাত থেকে সূচনা অনেক বেশি চুপচাপ। এই নীরবতার অর্থ কী এখনো টের পায়নি৷ প্রশ্ন করেও উত্তর মেলেনি। এই যে এত সুন্দর করে সাজগোজ করে পাশে বসে আছে, তবুও কত কমতি মুখটায়। কারণ এই মুখে হাসি নেই। মাহেরের মনে হয় সূচনার সুশ্রী মুখে গম্ভীর্যতায় চেয়ে মৃদু হাসিটা বেশি মানায়। কিন্তু মেয়েটা খুব কম হাসে। মাঝে মাঝে নিজেকে ব্যর্থ স্বামী, ব্যর্থ স্বামী অনুভব হয়৷ কারণ সে তার স্ত্রীর মুখে হাসি ফোটাতে অনেক বেশি অক্ষম। সূচনার দিকে নম্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মনে মনে আক্ষেপ করছিল সে। জানালার বাইরে থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে আচমকাই মাহেরের দিকে তাকাল সূচনা৷ তৎক্ষনাৎ দু’জনই অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল। সূচনা নড়েচড়ে জোর পূর্বক হাসার চেষ্টা করল। মাহের না পেরে আবারো জিজ্ঞেস করল,
-” আপনার কী হয়েছে সূচনা? বলুন আমায়। ”
ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ছেড়ে সূচনা জবাব দিল,
-” বলব। ”
-” কখন? ”
-” বাসায় গিয়ে। ”
কিছুটা স্বস্তি পেল মাহের। বউ নিয়ে এ প্রথম লং জার্নিটা উপভোগ করতে প্রসঙ্গ পাল্টে ফেলল। বলল,
-” আপনার হাসিটা আমি খুব ভালোবাসি। কিন্তু আফসোস আপনি বছরে একবার হাসেন। ”
থতমত খেয়ে এক পলক তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিল সূচনা৷ জানালার বাইরে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে অল্পখানি হাসল তাও লুকিয়ে। মাহের জহুরি চোখে তা দেখে নিয়ে বলল,
-” আমি যা ভালোবাসি তাতেই আপনি লজ্জা পান৷ এটাই আমার আফসোস, এটাই আমার দুঃখ। ”
ফিরে তাকাল সূচনা। তার কথাগুলোকে সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করে আবদারে ঘেরা একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল,
-” কাঁধে মাথা রাখি? ”
তৎক্ষনাৎ উত্তর মাহেরের,
-” আমাদের মাঝের দেয়ালটাকে দৃঢ় না করে ভাঙার চেষ্টা করুন সূচনা। আমার কাঁধে মাথা রাখার জন্যও অনুমতি চাইছেন? এতগুলো মাসে আমরা এতটুকুই আপন হয়েছি? আপনাকে আমি এরজন্য শাস্তি দিব। যে শাস্তি আপনাকে আর কখনো এমন প্রশ্ন করার সাহস দেবে না। ”
সূচনার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সম্মুখে স্থির দৃষ্টি ছুঁড়ে দিল মাহের৷ সূচনা দুরুদুরু বুকে, অস্বস্তি মনে সন্তর্পণে তার কাঁধে মাথা রেখে চোখ বুজল। নরম সুরে বলল,
-” আপনার মতো মানুষ যদি আমায় শাস্তি দেয়, সে শাস্তি অবশ্যই আমি গ্রহণ করার ক্ষমতা রাখি। ”
মুচকি হাসল মাহের। বিরবির করে বলল,
-” ম্যাডাম আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। আপনার জন্য কী অপেক্ষা করছে। আই বিলিভ দ্যাট ধৈর্যের ফল খুবই সুমিষ্ট হয়। সব কিছুর জন্য শুকরিয়া সৃষ্টিকর্তা এবং রুদ্রকে। ”
_____
হৈমীর অপেক্ষার প্রহর যেন শেষই হচ্ছে না৷ উত্তেজনায় সকাল থেকে ঠিকঠাক খেতেও পারেনি সে৷ দুপুর পেরিয়ে যাচ্ছে। এখনো এসে পৌঁছায়নি মাহের, সূচনা। এদিকে খিদের জ্বালায় পেট চুঁইচুঁই করছে রুদ্রর৷ কিন্তু খেতে পারছে না হৈমীর জন্য। ইদানীং সে হৈমীর প্রতি কিছুটা যত্নশীল হয়েছে। মনের ভিতর কিছু সুন্দর, স্বচ্ছ অনুভূতির সৃষ্টি হয়েছে। সে মনে করে এটা আল্লাহ প্রদত্ত অনুভূতি। কারণ হৈমী তার স্ত্রী। তার প্রতি এমন অনুভূতি আসাটা স্বাভাবিক। হৈমীর প্রতি তার যত্নের প্রথম ধাপ শুরু হয় খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারেই৷ কারণ সে অনুভব করেছে সর্বপ্রথম হৈমীকে ঠিকঠাক খেতে শেখাতে হবে। মেয়েটা খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে বড্ড উদাসীন। সারাদিন প্যাকপ্যাক করে কথা বলবে, গাপুসগুপুস করে ফাস্টফুড খাবে আর শরীর খারাপ করে হায় হতাশ করবে। শরীরে চড়ুইয়ের সমানও মাংস নেই৷ দুদিন আগে কিছুক্ষণের জন্য বাইরে নিয়ে গিয়েছিল হৈমীকে, ফুচকা খাওয়াতে। ফুচকা খেয়ে গাড়িতে ওঠার পূর্বে এক বৃদ্ধকে নজরে পড়ল। ওজন মাপার মেশিন নিয়ে বসে আছে। নিজের ওজনটা মাপা উচিত মনে করে ওজন মাপল৷ ৮৭ কেজি ওজনের বিশালদেহী পুরুষ সে। তার ওজন মাপা শেষে হৈমীকে মাপতে বলল। যেখানে তার ওজন ৮৭ কেজি সেখানে হৈমীর ওজন মাত্র ৪৪ কেজি। নিজের তুলনায় নিজের বউয়ের ওজন দেখে রীতিমতো লজ্জায় বাকহারা হয়ে গিয়েছিল সে। নিজেকে নিজেই ভয়ানক গালি দিয়ে বসেছিল। গালি শুনে হৈমী বরাবরের মতোই উচ্চারণ করল, ছিঃ। ব্যস রেগে গিয়ে ওর দুগাল চেপে ধরে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
-” অ্যাঁই ওজন নিয়ে আমার সামনে ঘুরে বেড়াও, বড়ো বড়ো ডায়লগ ঝাড়ো, লজ্জা লাগে না? ভয় হয় না? এই, তোমাকে নিয়ে তোমার কোনো আইডিয়া আছে? আমার পাশে ঘুমাও কীভাবে? তোমার হাড্ডিগুলো ভর্তা হয়ে যাওয়ার ১০০% সম্ভাবনা আছে সেটা জানো? ”
ভয় পেয়ে হৈমী সমান তালে দুদিকে মাথা নাড়াল। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে সে বলল,
-” জানবে কী করে ইডিয়ট একটা! ”
এরপর থেকে হৈমীর খাওয়া, দাওয়ার ব্যাপারে তার যত্নের পরিমাণ চার গুণ বেড়ে গেছে। হৈমী খেয়াল করেছে রুদ্র তাকে ছাড়া কিছুদিন যাবৎ খাবার খায় না। পাশাপাশি তার পছন্দ, অপছন্দের বেশ গুরুত্বও দিচ্ছে। টিশার কাছে এসব শেয়ার করায় সে বলেছে রুদ্র হয়তো ধীরেধীরে পালটে যাবে, তার স্বামীর মতোই এক সময় বউকে ভালোবেসে দিওয়ানা হয়ে যাবে। চোখেও হারাবে। প্রথমে টিশার কথা বিশ্বাস করে খুশি হয়েছিল হৈমী৷ কিন্তু টুকটাক যত্নের পাশাপাশি রুদ্রের গম্ভীরতা, কঠিন আচরণ, পাশাপাশি অসহ্যরকম সন্দেহ ধাচের ব্যবহারে নিরাশ হয়েছে। এই যে ভাই, ভাবির জন্য অপেক্ষা করে উত্তেজনায় সে ছটফট করছে। ওদিকে রুদ্র গম্ভীর মুখে, বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে কাউচের ওপর বসে আছে। একবার শুধু বলেছিল লাঞ্চ করে নিতে৷ হৈমী তাকে একাই করে নিতে বলায় সে চোয়াল ফুলিয়ে বসে আছে।
হৈমীর ছটফটানির মাত্রা বাড়ার সাথে সাথে রুদ্রর ধৈর্য্য কমতে লাগল৷ এক সময় সে রুম ছেড়ে বেরিয়ে ডাইনিংয়ে গিয়ে নিজ হাতে খাবার বেড়ে খাবারগুলো রুমে নিয়ে এলো। দাঁতে নখ কাটতে কাটতে হৈমী বলল,
-” আরেকবার ফোন করুন না ভাইয়াকে। ”
চোখ গরম করে রুদ্র বলল,
-” চুপচাপ এখানে এসে বসো এবং খাবারগুলো শেষ করো। ”
হৈমী বিরক্ত চোখে তাকাল। তেজ দেখিয়ে বলল,
-” আমার খিদে নেই, আপনার মতো খাওয়ার এত শখও নেই। ”
মেজাজ বিগড়ে গেল রুদ্রর। টি টেবিলের ওপর খাবার গুছিয়ে রেখে ওঠে এলো সে। হৈমীর বাহুতে শক্ত করে চেপে ধরে টেনে নিয়ে বসাল কাউচের ওপর৷ চট করে নিজেও পাশে বসে পিছন দিয়ে এক হাতে হৈমীর কোমর চেপে ধরল। হুকুম করল, ভদ্র মেয়ের মতো নিজে খেতে এবং তাকে খাওয়িয়ে দিতে। হৈমী প্রথমে অবাধ্যতা করলেও রুদ্রর হাতের বেহায়া স্পর্শে মিইয়ে গেল। রুদ্রর ভয়ানক থ্রেটও পেল,
-” কথা না শুনলে আমার এই সাতাশি কেজি ওজন দিয়ে আজ তোমার চুনোপুঁটি শরীরটাকে একদম পিষে ফেলব। কেউ বাঁচাতে পারবে না। একদম মে’রে গুম করে দিব। ”
ভয় পেয়ে ঢোক চিপল হৈমী। মনে মনে রুদ্রকে অসংখ্য বকাঝকা করে খাওয়িয়ে দিত শুরু করল। কিন্তু নিজে এক লোকমাও মুখে তুলল না। তার এক জেদ সে ভাই, ভাবি এলে খাবে৷ পৃথিবী উল্টে গেলেও রুদ্রর কথা আজ সে শুনবে না। রুদ্র ঠাণ্ডা মাথায় বোঝাল তার সঙ্গে খেতে, পরে না হয় ওদের সঙ্গে আবার খাবে৷ কিন্তু হৈমী শুনল না অবাধ্যতা করল। তার এই অবাধ্যতায় ত্যাড়া রুদ্রও ত্যাড়ামি শুরু করে দিল। চোখ, মুখ শক্ত করে প্লেট থেকে খাবার তুলে হৈমীর মুখের সামনে ধরল। জেদ করে হৈমী চোখমুখ শক্ত করে মুখ বন্ধ করে রইল। রুদ্র ধৈর্য্যচ্যুত হয়ে শেষে বলল,
-” তুমি যেই ত্যাড়ামি, জেদি স্কুলের স্টুডেন্ট, আমি সেই ত্যাড়ামি, জেদি স্কুলের হেডমাস্টার ওকে ডার্লিং, হা করো। ”
বাক্যটি শেষ করেই বা’হাতে হৈমীর দুগাল চেপে ঠোঁটজোড়া ফাঁক করে ভাতের লোকমা মুখে ঢুকিয়ে দিল। হৈমী যেন খাবারটা ফেলে না দেয় তাই হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে কড়া ধমক দিয়ে বলল,
-” বেশি বাড়াবাড়ি করছ হৈমী। তুমি এতটাও বাচ্চা নও যে স্বাভাবিক বিষয় বুঝতে পারো না। লিমিট ক্রস করবে না। গিলো, খাবারটা। ”
হৈমী কিছু বলতে চাইল। রুদ্র ভয়ানক রেগে এবার শক্ত ধমক দিল,
-” অ্যাঁই গিলে যা বলার বল। মেজাজ খারাপ করবি না। ”
চলবে…
পরীক্ষা চলছে আমার। তবুও একটা পর্ব রাত জেগে লিখে দিলাম। খাপছাড়া লাগলে দুঃখীত। পরবর্তী পর্ব কবে দিব জানি না। সকলেই সর্বোচ্চ রেসপন্স করবেন।