বেসামাল_প্রেম #লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা #পর্ব_২১

0
176

#বেসামাল_প্রেম
#লেখা_জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_২১
অন্ধকারে আচ্ছন্ন নিরিবিলি নিস্তব্ধ ছাদে প্রবেশ করল হৈমী। একদলা হিমশীতল বাতাস আচমকা ধাক্কা দিল ওকে। নিমিষেই চোখ বুজে ফেলল, কেঁপে ওঠল ওষ্ঠাধর। দুরুদুরু বুকে ছাদের দরজা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ঢোক গিলল। ওষ্ঠাধর নাড়িয়ে দোয়া পড়ে ফুঁ দিয়ে নিল বুকপটে। লম্বা করে দম ছেড়ে পিছু তাকাল। রোশান, সোহান মিটিমিটি হাসছে, চোখের ইশারায় এগুতে বলছে। তারজন্য নাকি ছাদের মাঝখানে টুল রাখা হয়েছে। যেখানটায় তাদের দেয়া সময় পর্যন্ত একাকী বসে থাকতে হবে। সেসব কথা স্মরণ করেই মৃদু হাসার চেষ্টা করল সে। মুখশ্রীতে ভর করা সমস্ত ভয়টুকু লুকানোর আপ্রাণ চেষ্টাও করল। তীব্র সাহস সঞ্চয় করে মুখ ফিরিয়ে ধীরপায়ে এগিয়ে গিয়ে বসল ছাদের মাঝ বরাবর। তৎক্ষনাৎ ছাদের লাইট অফ করে দরজাটা লাগিয়ে দিল সোহান। আঁতকে ওঠে দাঁড়িয়ে পড়ল হৈমী। উত্তেজিত হয়ে বলল,
-” একি! এটাত কথা ছিল না। সোহান, সোহান, রোশান… ”

দু’ভাই দরজা লাগিয়ে দৌড়ে চলে গেল নিজেদের ঘরে। মোবাইলে সময় দেখে নিল। ত্রিশ মিনিটের আগে ঘর ছেড়েই বের হবে না পণ করল৷ সময় কাটাতে দু’জন বেশ আয়েশ করে মুভি দেখতে বসল। ওদিকে হৈমী দরজায় করাঘাত করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ল। ভয়ে, উত্তেজনায় শরীর ঘেমে-নেয়ে একাকার অবস্থা। চারপাশে ভীতু চোখে তাকিয়ে আকস্মিক জড়োসড়ো হয়ে বসে পড়ল। শীতের মৌসুম চলছে তবুও আকাশে মেঘের ঘনঘটা। ফলশ্রুতিতে জোৎস্নার বালাই নেই চারদিক কেবল ঘুটঘুটে অন্ধকার। দূরে শুধু গুটিকয়েক বিল্ডিংয়ে আলোর দেখা পাওয়া যাচ্ছে। যা খুবই স্বল্প। সেদিকে তাকিয়েই ঘনঘন ঢোক গিলল হৈমী। মনে মনে নিজেকেই বকুনি দিল খুব। কেন সে লুকিয়ে ফোন আনল না? ওরা না করবে বলেই তাকে কেন এতটা ইনোসেন্ট হতে হবে? গায়ে জড়ানো চাদরটা দু’হাতে শক্ত করে জড়িয়ে ঠাঁই বসে রইল সে। বিরবির করে একাধারে পড়তে লাগল দোয়া, দরূদ। এ পৃথিবীতে কিছু দুর্বল হৃদয়ের নারী থাকে। যারা জানে দুনিয়াতে ভুতপ্রেত বলতে কিছু নেই। এই সত্যিটা জানা সত্ত্বেও দিনশেষে রাতের আঁধারে একাকী তারা ভুতে ভয় পায়। অসম্ভব রকমের ভয়। হৈমী হচ্ছে সেই দুর্বল নারীদের মধ্যেই একজন। সে জানে পৃথিবীতে ভুত পেত্নী বলে কিছু নেই। তবুও সে ভুত, পেত্নীর ভয় পায়। আর এই ভয় মারাত্মক রকমের ভয়। তীব্র শীতে যেমন হাড় কাঁপে তেমনি ভুতের তীব্র ভয়ে হাড় কেঁপে ওঠে তার। আজ পরিস্থিতি সম্পূর্ণ তার প্রতিকূলে। তাই তো নিস্তব্ধ পরিবেশটাকে থমথমে করে তোলার জন্য আকস্মাৎ দূরপানের একটি শেয়াল ডেকে ওঠল। অতিরিক্ত ভয়ের তাড়নায় মস্তিষ্ক অচল হয়ে ছিল হৈমীর। তাই আকস্মাৎ এই ডাকটি তার ভয়ের মাত্রা চূড়ান্তে পৌঁছে দিল। ভীতু মেয়েটা দু’হাতে খামচে ধরা চাদর ছেড়ে তড়াক করে ওঠে দাঁড়াল। থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে দরজায় করাঘাত শুরু করল। শরীরে জড়ানো চাদর খুলে পড়ল, কয়েক পল পর ওড়না পড়ে গেল। দূর থেকে ধেয়ে আসা শেয়ালের ডাকগুলো ধীরে ধীরে প্রকট হলো। বেড়ে গেল হৈমীর ভয় সেই সাথে দরজার করাঘাত।

সূচনা ফোন করে জানাল তাদের ফিরতে দেরি হবে। আজ রাতে বাইরে থেকে খেয়ে আসবে। বাড়ির সবাইকে যেন জানিয়ে দেয়া হয়। পাশাপাশি হৈমীর যত্নেরও যেন ত্রুটি না হয়৷ কুসুমকে সবটা বুঝিয়ে ফোন কেটে দিল সূচনা। কুসুমও তার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। কারণ রাতে খাবারের সময় এখনো হয়নি। সময় হলে সবাইকে একসঙ্গেই খেতে দেবে। রুদ্র বাড়িতে ঢুকতেই কুসুম তাকে সূচনার কথা জানিয়ে দিল। রুদ্র গম্ভীর স্বরে ‘ হুম ‘ বলে পা বাড়াল দোতলায়। সে যখন তার ঘরের লক খুলতে উদ্যত হলো ঠিক সে মুহুর্তেই অদ্ভুত এক কণ্ঠস্বর শুনতে পেল। ছোটোবেলায় বাথরুম ঢুকে দরজা লাগিয়ে জোরে কথা বললে যেমন প্রতিধ্বনি হয়, কণ্ঠের স্বাভাবিকতা হারিয়ে অদ্ভুত শোনায় ঠিক তেমনি কণ্ঠস্বর। এই স্বর আরো তীব্র, ভীতিকর, সবচেয়ে বড়ো কথা এটি একটি নারী কণ্ঠস্বর! রুমের দরজা খোলা বাদ রেখে ভ্রু কুঁচকে কিয়ৎকাল দাঁড়িয়ে রইল সে। এরপর কানখাড়া করে এক পা, দুপা করে এগুতে লাগল। থামল গিয়ে ছাদের সিঁড়ির সামনে। তৎক্ষনাৎ চমকে ওঠল তার অন্তরআত্মা। এ বাড়িতে মেয়ে বলতে তো গুটিকয়েক জনই। কুসুম নিচে, সূচনা বাইরে তাহলে ছাদে কে হৈমী? মেজাজ কিছুটা বিগ্রে গেল৷ পরোক্ষণেই আবার থমকেও গেল। চটজলদি জিহ্বা দিয়ে অধর ভিজিয়ে সিঁড়ি অতিক্রম করে উপরে ওঠল। ছাদের দরজা লাগানো দেখে আরেক ধাপ অবাক হলো। বিষয়টি বোধগম্য না হলেও হৈমীর কান্নার শব্দ, চিৎকারই যথেষ্ট ছিল তার শ্বাস, প্রশ্বাস গুলো বেসামাল করে দেয়ার। আর এক মুহুর্ত সময়ও সে নষ্ট করল না। ঝড়ের গতিতে দরজা খুলে উত্তেজিত কণ্ঠে বলল,
-” তুমি, তুমি এখানে, কী হয়েছে? ”

তৎপরতার সঙ্গে ছাদের লাইট অন করল রুদ্র। রুদ্রকে দেখে দু’হাতে মুখ চেপে হাউমাউ করে কেঁদে বসে পড়ল হৈমী। বিধ্বস্ত হৈমীকে দেখে বুকের ভিতরটা চিনচিন করে ওঠল রুদ্রর। হতভম্ব হয়ে এক হাঁটু গেড়ে সেও বসল। হাত বাড়িয়ে হৈমীর কাঁধ স্পর্শ করে জিজ্ঞেস করল,
-” এই মেয়ে এভাবে কাঁদছ কেন? একি তোমার শরীর তো কাঁপছে, কী হয়েছে, ভয়ে পেয়েছ? লিসেন, হৈমী শুনছ? ”

লাল টকটকে ঘর্মাক্ত মুখশ্রী তুলে এক পলক রুদ্রকে দেখল হৈমী। রুদ্র বিচলিত দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে। তার সে দৃষ্টিকে আশ্চর্যান্বিত করে দিয়ে সহসা হৈমী জড়িয়ে ধরল তাকে। তার বলিষ্ঠ বুকটায় মুখ গুঁজে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে উচ্চারণ করল,
-” ভুভুত! ”

চোখ, মুখ কুঁচকে গেল রুদ্রর। ভুত মানে? কিন্তু কোনো প্রকার প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারল না, হৈমীর কান্না দেখে। যা সত্যি বোঝাচ্ছে ভীষণ ভয় পেয়েছে সে। কিন্তু এই ভয়ের উৎস কোথায় থেকে? হৈমীই বা ছাদে আটকা পড়ল কীভাবে? এ সকল প্রশ্ন মনে চেপে দু’হাতে বুকপটে আগলে নিল ভয়ে তটস্থ মেয়েটাকে। পৌষের আবহাওয়াতেও হৈমীর উত্তপ্ত দেহের অবিশ্রান্ত স্বেদজলে ভিজে ওঠল রুদ্রর বক্ষপট। শরীরে জড়ানো সাদা কাবলী, সেন্ডো গেঞ্জি লেপ্টে গেল বুকের পাটাতে। বাকরুদ্ধ রুদ্র আর কিছু বলতে পারল না। কেবল অতি সন্তর্পণে জড়িয়ে রাখল মেয়েটাকে। যতক্ষণ না ভয় কাটছে, যতক্ষণ না শান্ত হচ্ছে ততক্ষণ এই বুক থেকে রেহাই নেই তার। যদি সময়টা জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্তও যায় তবুও রেহাই দেবে না। ঠিক এভাবেই জড়িয়ে রাখবে। ভয় কাটুক, শান্ত হোক, কান্না থামুক তবেই এই বুক থেকে ছাড় পাবে তার আপন পাখিটা।

চলবে… রিচেক দেইনি।
[ কিছু সমস্যার জন্য পর্বটা ছোটো হলো। এই পর্বের বর্ধিতাংশ আগামীকাল দিব ইনশাআল্লাহ। যারা আমার পাঠকমহলে যুক্ত হতে চান তাদের জন্য লিংক- নাঈমার পাঠকমহল-Naiyma’s Readership
আর যারা আমার প্রথম ই-বুক আকুলিবিকুলি পড়তে চান তাদের জন্য কমেন্টে লিংক দিয়ে দিব ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here