#বেসামাল_প্রেম
#জান্নাতুল_নাঈমা
#পর্ব_৪৮
.
সূচনা মাহেরের বিবাহবার্ষিকী আজ। খান বাড়িতে ছোটোখাটো আয়োজন করা হয়েছে। একবছর বেডরেস্টে থাকার কথা রুদ্রর। অথচ সে সাতসকালে ঢাকায় গেছে। ফিরতে রাত হবে। এদিকে বোনের ম্যারেজ ডে! তাই শেখ বাড়ি থেকে হৈমী, সোহান, রোশান, আর সাদমান এসেছে। রুদ্র না আসাতে ভারী অভিমান করল সূচনা৷ সেই অভিমান ভাঙাতে হৈমী ভিডিয়ো কল করল রুদ্রকে। ভাই বোনকে ভিডিয়ো কলে তার জরুরি কাজের বিষয়ে অবগত করল। এতে বোঝে আসল সূচনা। সূচনার সঙ্গে কথা শেষে রুদ্র হৈমীকে বলল সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরে যেতে। হৈমী আঁতকে ওঠা কণ্ঠে বলল,
-” আম্মু আজ থেকে যেতে বলেছে। ”
রুদ্র দৃঢ় চোখে তাকিয়ে শুধুমাত্র একটি কথা বলে ফোন কেটে দিল।
-” আমার ফিরতে এগারোটা কি বারোটা বাজবে। তুমি যদি চাও বাকি ছ’ঘন্টার রাত একা পার করি তাহলে মায়ের কাছে থাকো। আমার কোনো সমস্যা নেই! ”
হৈমীর বুকের ভিতর টনটন করে ওঠল। একদিকে মাতৃস্নেহ অপরদিকে স্বামী ভক্তি। দোটানায় পড়ে শেষে মা’কে বুঝাল কয়েকদিনের মধ্যেই আবার আসবে। থেকে যাবে দু’দিন। রুদ্রকে যদি মানাতে না পারে তাহলে জোর করে তাকে সহ নিয়ে এসে থাকবে। হামিদা আপত্তি করল না। বরং অবাক হলো তার মেয়ে, মেয়ের জামাইয়ের মধ্যকার গভীর টান দেখে! রুদ্র যে হৈমীকে চোখে হারায়, আর হৈমী রুদ্রকে খুবই সমীহ করে চলে। এ দু’টো জিনিস বুঝতে পেরে অহংকার হলো তার। খেয়াল করল, তার ছেলে মেয়ে দুজনই সংসার জীবনে খুব সুখী। এই সুখটা পরিপূর্ণ হবে যখন এদের সংসারে ছোট্ট শিশুর আগমন ঘটবে৷ হৈমীকে নিয়ে আপতত এসব চিন্তা নেই। সে নিজেই একটা শিশুর মতোন। অল্প বয়স। বছর, চারেক না গেলে মেয়ের ঘরের নাতি, নাতনির আশা করা যায় না। কিন্তু ছেলের ঘরের নাতি, নাতনির খুবই প্রয়োজন। এক বছর হয়ে এলো। এখনো ছেলে বউয়ের কোনো খবর নেই। ভীষণ দুঃশ্চিন্তায় পড়লেন হামিদা। মনে মনে স্থির করলেন আগামীকাল আবারো সূচনার সঙ্গে কথা বলবে এ ব্যাপারে।
হৈমীরা চলে যাওয়ার পর নিজেদের রুমে এলো সূচনা। দেখল মাহের চুপচাপ বসে আছে। সে এগিয়ে এসে মাহেরের কাঁধে হাত রাখল। জিজ্ঞেস করল,
-” এখনো পোশাল ছাড়োনি যে? একি মুখটা শুঁকনো লাগছে কেন? ”
কপট রাগ দেখিয়ে মাহের বলল,
-” সারাদিনে পাঁচ মিনিট সময় তোমার হয় না সূচনা?”
বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইল সূচনা। অবাক হওয়া কণ্ঠে বলল,
-” বাব্বাহ সামান্য বিষয়টা নিয়ে এত্তো রাগ? বাপের বাড়ির লোকজনকে সময় না দিয়ে দরজা আঁটকে তোমার সঙ্গে বসে থাকলে ব্যাপারটা ভালো দেখাতো? ”
মুখ ঘুরিয়ে মাহের বলল,
-” আমি সেটা বলিনি। ”
ত্বরিত মাহেরের কোলে চেপে বসল সূচনা। গলা জড়িয়ে বলল,
-” আমার বরটার দেখি খুব মন খারাপ হয়ে গেছে। ”
আলগোছে সূচনার কোমর জড়িয়ে কাঁধে মাথা রাখল মাহের। আলতো স্বরে বলল,
-” একটা বছর কাটিয়ে ফেললাম। বিয়ের প্রথম বছরে কী চাই তোমার বলো? ”
-” আমাদের সন্তানকে চাই। ”
-” এটা তো আল্লাহ তায়া’লার কাছে চাচ্ছিই। এছাড়া কী চাই। ”
-” এই যে তোমার এই ভালোবাসা আরো তীব্র করে চাই। ”
-” উহুম এমন বললে হবে না। কিছু তো চাইতেই হবে। ”
-” না চাইতে কম কী দিয়েছ। এই যে সারা দেহে যেসব পরে আছি সবই তো তোমার দেয়া। স্পেশাল ডে হিসেবে। ”
-” এগুলো নয় আরো স্পেশাল কিছু চাও। ”
-” না আমার আর কিছু চাই না। ”
জেদি স্বরে মাহের বলল,
-” চাইতেই হবে। ”
মহা মুশকিলে পড়ে গেল সূচনা। এরপর আচমকাই মনে পড়ল। মাহেরের কাছে আসলে তার কিছু চাওয়ার নেই। অসাধারণ ব্যক্তিত্বের এই মানুষটা গত এক বছরে এতটা উজার করে দিয়েছে যে চাওয়ার মতো কিছু খুঁজেই পাচ্ছে না। সেদিনের সেই ঘটনার পর সত্যিই কি কিছু চাওয়ার আছে?
সেদিন শাশুড়ির ওপর তীব্র অভিমানে যখন সূচনা ডক্টরের কাছে যেতে মরিয়া হয়ে ওঠেছিল। মাহের তখন তার পাশে বসে কাঁধে হাত রেখে বলেছিল,
-” সূচনা, মা’য়ের চিন্তা ধারা আমাদের চেয়ে আলাদা। সে আমাকে সুখে দেখতে চায়। সেই সুখ দেখার জন্যই বউ হিসেবে তোমাকে এনে দিয়েছে। এবার সে চায় আমাকে বাবা হওয়ার সুখে চোখ ভরে দেখতে। তার মাতৃ হৃদয় পুত্রকে সর্বসুখে দেখার জন্য এতটাই ব্যাকুল যে অবান্তর আবদারও করে বসে। আমি আমার মায়ের হয়ে তোমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। ”
সূচনা লজ্জায় আড়ষ্ট হয়ে মাহেরের হাত চেপে ধরে৷ মাথা নাড়িয়ে বলে,
-” আমি দুঃখীত মাহের৷ মায়ের ওপর এভাবে রাগ, অভিমান করা উচিৎ হয়নি আমার। ”
মাহের বলে,
-” তোমার কোনো ভুল নেই। ভুল মায়েরও নেই। সমস্ত ভুল পরিস্থিতি আর আবেগের। আমার একটি কথা রাখবে তুমি? ”
-” কী? ”
-” মা যদি জিজ্ঞেস করে আমরা ডক্টর দেখিয়ে ছিলাম কিনা তুমি হ্যাঁ বলবে। আর বলবে ডক্টর বলেছেন আমাদের কারো কোনো সমস্যা নেই। আল্লাহ পাক চাইলে আমরা সন্তানের মুখ অবশ্যই দেখব। ”
সূচনার চোখ গলে অশ্রু ঝড়েছিল৷ মাহের তার ভেজা চোখের পাতায় চুমু খেয়ে বলেছিল,
-” মায়েদের খুশির জন্য এটুকু মিথ্যা বলাই যায়। ”
সূচনা বলেছিল,
-” তাহলে চলুন তার খুশির জন্য আমরা কাল ডক্টর দেখাই। ”
সহসা সূচনার ঠোঁটজোড়া একহাতে চেপে ধরেছিল মাহের। বলেছিল,
-” তাহলে যে আমার বউয়ের মা হবার ক্ষমতা নিয়ে সন্দেহ করা হবে। জানি না মহান আল্লাহ পাক কী চান। কিন্তু আমি কখনোই এর জন্য আপনাকে ডক্টর দেখাব না৷ আমি আমাকে সন্দেহ করতে পারি কিন্তু আপনাকে না। আপনি যেমন আছেন তেমনি যথেষ্ট। যদি কোনোদিন সন্তান সুখ নাও পাই আফসোস নেই। মনে রাখব এক আপনি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো উপহার আল্লাহ পাক আমার জন্য রাখেননি। ”
নারী জীবন ধন্য হতে আর কী চাই? সূচনার জীবনে সত্যি কি না পাওয়া কিছু আছে? মাহের নামক মহান পুরুষটা যে সব কিছুকে ছাপিয়ে গেছে। সেদিনের কথাগুলো স্মৃতিচারণ করে সূচনার চোখ দু’টো ছলছলে হলো। আবেগান্বিত হয়ে সে মাহেরের জেদ খাটানো বুলিতে বলল,
-” আপনার অজস্র ভালোবাসা মাখানো সিক্ত চুমু চাই। ”
মাহের কিছু বলতে উদ্যত হয়েছিল। কিন্তু সূচনার আকুতিভরা চোখে চোখ পড়তেই থমকে গেল। নরম ঠোঁটজোড়া তৃষ্ণার্ত হয়ে এগিয়ে এলো তার দিকে। সেই তৃষ্ণা মেটাতে কৃপণতা করার সাহস হলো না তার। সহসা উষ্ণ ঠোঁটে ভেজা চুমুতে মেতে ওঠল দুজনে।
__________________
বাড়িতে আসার পর পরই গলগল করে বমি হলো হৈমীর। রান্নাঘরের বেসিনের সামনে দাঁড়িয়ে বমিরত অবস্থায় হৈমীকে দেখে এগিয়ে এলো রিনা। আঁচলে মুখ ঢেকে গা ঘিনঘিন করে বলল,
-” বাপের বাড়ি গিয়ে কতই গিলছিলা গো। যা হজম করতে পারবা না তা গিলছ কোন দুঃখে। ”
চারিদিক অন্ধকার হয়ে এলো হৈমীর। মাথা ধরে বড়ো বড়ো করে নিঃশ্বাস ফেলল সে। এরপর কুলি করে চোখে, মুখে পানি দিয়ে ছোটো কাকিকে বলল,
-” আপনি এমন মানুষ, সত্যি অবাক লাগছে। কোথায় কাছে এসে একটু ধরবেন তা না। খাবার নিয়ে খোঁটা দিচ্ছেন। বাপের বাড়ি গিয়ে ভাইয়ের কেনা খাবার ইচ্ছে মতো গিলেছি। সমস্যা আমার হয়েছে, আমিই বুঝব৷ সব সময় এত কথা শোনাবেন না। এমনিতেই শরীরটা ভালো লাগছে না। ”
শেষ কথাটা কাঁদো কাঁদো হয়েই বলল হৈমী।কথাগুলো একদমে বলে রান্নাঘর ছাড়তে উদ্যত হলো সে। ছোটো কাকি ঢোক গিলল। হৈমী যে পটর পটর কথা বলতে পারে এ ব্যাপারে সে অবগত৷ তাই খুব বেশি অবাক হলো না। শুধু তার আচরণ যেন রুদ্রর কান পর্যন্ত না পৌঁছায় তাই ভালো মানুষী দেখাল। কৌতূহলী মনে আচমকা প্রশ্ন করল,
-” এই শোনো হঠাৎ বমি করলা পেটে কিছু আসল না তো? ”
থমকে দাঁড়াল হৈমী। পিছন ঘুরে আশ্চর্য হয়ে বলল,
-” পেটে আবার কী আসবে? ”
ছোটো কাকি এগিয়ে এলো। হৈমীর চোখ মুখ তীক্ষ্ণ চোখে দৃষ্টিপাত করল। বলল,
-” চোখ, মুখ তো সুবিধার লাগছে না। এখনি বাচ্চা টাচ্চা নিছ নাকি! ”
আতঙ্কিত হয়ে পড়ল হৈমী। ওড়না দিয়ে মুখ মুছে ত্বরিত বলল,
-” কী সব বলছেন ওসব কিছু না। ”
হাঁটু কাঁপতে লাগল হৈমীর। এক মাস আগেও সে চাইতো রুদ্রর সন্তানের মা হতে৷ অথচ আজ সময়ের সাথে সাথে তার মন কতটা পরিবর্তন হয়ে গেছে। রুদ্রর মতো সেও চায়না তাদের মাঝখানে কেউ আসুক। মূলত রুদ্র চায় না বলেই সে চায় না। কথায় বলে না ভালোবাসার মানুষের জন্য সবকিছু ত্যাগ করা যায়? হৈমীও নিজের মাতৃসত্ত্বা ত্যাগ করতে চায় রুদ্রর জন্য। ঐ মানুষটা জীবনে অনেক কষ্ট পেয়েছে। ভিতরে ভিতরে একটু ভালোবাসা, একটু যত্নের কাঙাল সে৷ ধীরেধীরে হৈমী চিনতে পেরেছে রুদ্রর ভেতরের সত্ত্বাকে। ভালোবেসে লোকে কত কিছুই তো করল। রুদ্র যদি না চায় তারা বাবা, মা হোক তাহলে সে অযথা জেদ করে ঐ মানুষটাকে কেন কষ্ট দেবে? তার কেবল একটাই উদ্দেশ্য বাকিটা জীবন শুধু রুদ্রকে ভালোবেসে পাশে থাকা। রুদ্রর সেই কণ্ঠ এখনো তার হৃদয়ে বিঁধে,
-” তুমি শুধু আমাকে ভালোবাসো, শুধু আমার জন্য বাঁচো। ”
দীর্ঘশ্বাস ফেলল হৈমী। ছোটো কাকি ভ্রু কুঁচকে বলল,
-” কী সব বলছি মানে? ভুল কী বললাম। স্বাভাবিক কথাই তো বললাম। তোমার হাভভাব তো তাই বলে। একটা কথা বলোতো তোমার লাস্ট পিরিয়ড ডেট কবে ছিল? ”
বুকটা কেঁপে ওঠল হৈমীর৷ ঢোক গিলে ভয়ে ভয়ে বলল,
-” গতমাসের বারো তারিখ। কেন কী হয়েছে? ”
-” আজ তো বাইশ তারিখ। এ মাসে হয়েছে? ”
টলমল চোখে হৈমী বলল,
-” না! ”
ছোটো কাকি প্রায় চিৎকার দিয়ে বলল,
-” আরে মেয়ে ঘটনা তো ঘটে গেছে। তুমি রুমে যাও আমি আসতেছি। ”
সহসা ছোটো কাকির হাত টেনে ধরল হৈমী। বলল,
-” কী করবেন। ”
ছোটো কাকি ফিসফিস করে বলল,
-” আমার কাছে প্র্যাগনেন্সি কীট আছে পরীক্ষা করব।”
_______________
দরজা আঁটকে দু’হাতে মুখ চেপে ডুকরে ওঠল হৈমী। ছোটো কাকি আশ্চর্যের চরম পর্যায়ে গিয়ে ধমক দিল ওকে। বলল,
-” তুমি তো খুব অসভ্য। এমনভাবে কাঁদছ মনে হচ্ছে এটা তোমার অবৈধ সন্তান! ”
হৈমী পাগলের মতো ছটফট করতে করতে বলল,
-” উনি জানলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। ”
-” কী বলছ! রুদ্র জানলে খুশি হবে সর্বনাশ হবে কেন। তুমি সত্যি করে বলো তো আসলে কী হয়েছে। ”
ছোটো কাকি সন্দিহান হয়ে জিজ্ঞেস করল। উপায় না পেয়ে হৈমী তাকে দেয়া রুদ্রর শর্তের কথা বলে দিল কাকিকে। এছাড়াও রুদ্র কেন সন্তান চায় না। সে সম্পর্কেও জানালো। সব শুনে পুরো বিষয়টা বুঝতে পারল ছোটো কাকি। চোখ কটমট করে বলল,
-” তাহলে এই অঘটন ঘটল কী করে। এখানে তো স্পষ্ট দুই দাগ স্পষ্ট। তোমার গর্ভে রুদ্রর অংশ এসে গেছে। বাচ্চা যখন নিবাই না সতর্ক থাকলা না কেন? ”
হৈমী দিশেহারা হয়ে বলল,
-” আমি কিছু বুঝতে পারছি না। কীভাবে কী হলো। এখন আমার কী হবে? আমার এখন কী হবে কাকি। উনি আমাকে ছেড়ে দেবেন, আমি কী করব এখন। কীভাবে বোঝান উনাকে। ”
পাগল পাগল হয়ে গেল হৈমী। ছোটো কাকি কিছুক্ষণ চিন্তিত হয়ে বসে রইলেন। এরপর বললেন,
-” অস্থির হইয়ো না। সমস্যা আছে সমাধানও আছে। ”
হৈমী আচমকা কাকির দু-হাত চেপে ধরল। আকুতি করে বলল,
-” প্লিজ এসব কাউকে বলবেন না। উনাকেও না। তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে। উনাকে আর কোনো আঘাত আমি পেতে দিব না। ”
-” তুমি পাগল! আকাশে চাঁদ ওঠলে সবাই দেখে তেমনি তোমার পেটে বাচ্চা আসছে এটাও সবাই জানবে। ”
কথাটা বলেই হঠাৎ থমকাল ছোটো কাকি। বলল,
-” অবশ্য একটা কাজ করলে কেউ জানতে পারবে না। ”
এ কথা শুনেই মরিয়া হয়ে হৈমী জানতে চাইল,
-” কী কাকি প্লিজ একটা উপায় বলুন। ”
-” অ্যাবর্শন! ”
সর্বাঙ্গ শিউরে ওঠল হৈমীর। ভয়ে মিইয়ে গেল মুখটা। ছোটো কাকি বলল,
-” বেশি দিন হয়নি যদি করাও এখনি করাতে হবে। ”
হৈমী মেঝেতে থম মেরে বসে পড়ল। ভয়ে বুকটা হাপরের মতো ওঠানামা করছে। ছোটো কাকি চিন্তিত ভঙ্গিতে বলল,
-” আমি এখন যাই। এই কথাটা চেপে রইলাম। যদি অ্যাবর্শন করাও আমাকে জানিয়ো সাহায্য করব। আর যদি না করাও নিজ দায়িত্বে সবাইকে জানিয়ে দিও। ”
ছোটো কাকি চলে গেলেন। হৈমীর দু’হাতে মুখ চেপে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগল। দীর্ঘক্ষণ দুঃশ্চিন্তা, ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে দুর্বল হয়ে পড়ল সে। বার বার রুদ্রর বলা কথাগুলো স্মরণ হলো তার। সবশেষে ছোটো কাকির অ্যাবর্শন বলা শব্দটায় থামল সে। বিরবির করে বলল,
-” যা করলে উনি এসব জানবেন না। যা করলে উনি কষ্ট পাবেন না। যা করলে উনার আর আমার ভালোবাসায় ফাটল ধরবে না। সব করতে পারব আমি। হ্যাঁ অ্যাবর্শন করব আমি। ছোটো কাকি আমি অ্যাবর্শন করব! ”
অ্যাবর্শন ছোট্ট একটি কঠিন শব্দ। যার মর্মার্থ জানে না হৈমী। শুধু জানে অ্যাবর্শন করলে রুদ্র জানবে না সে গর্ভবতী হয়েছিল। যে বিষয়টা নিয়ে রুদ্রর এত বিতৃষ্ণা সে বিষয়টা নীরবেই শেষ করে দেবে সে। এতে তাদের সম্পর্কে, গভীর ভালোবাসায় কোনো আঁচ আসবে না। কিন্তু তার এই নির্বুদ্ধিতা যে সামনের দিনগুলোতে কাল হয়ে দাঁড়াবে একবারের জন্যও টের পেল না। রুদ্র সন্তান চায় না। এটুকুই বুঝল হৈমী। তার অল্প জ্ঞানে শুধু এটুকুই ধরল।
চলবে…
প্রিয় পাঠক, আমার দ্বিতীয় ই-বুক সুন্দরীর হৃৎদণ্ডন পাওয়া যাচ্ছে বইটই অ্যাপে। আপনাদের পড়ার আমন্ত্রণ রইল।