গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি #পর্ব২১ #Raiha_Zubair_Ripti

0
132

#গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#পর্ব২১
#Raiha_Zubair_Ripti

পিনপিনে নীরবতা বাড়ি জুড়ে। সবাই ঘুমে বিভোর। শুধু ঘুমন্ত নেই রুয়াত শাফায়াত। তারা বেরিয়েছে এই সাতসকাল গ্রামের রাস্তায়। গ্রামের স্নিগ্ধ সকাল টা একান্ত ভাবে উপভোগ করছে তারা। রুয়াতের পড়নে নেভি ব্লু কালারের সেলোয়ার-কামিজ আর শাফায়াত এর শরীর টিয়া রঙের শার্ট। রুয়াত শাফায়াত এর হাত ধরে হেঁটে চলছে গ্রামের এই আঁকাবাঁকা মেঠোপথ দিয়ে। দু একজনের দেখা মিলছে চলন্ত রাস্তায়। শাফায়াত চেনা কাউকে দেখলে হাসি মুখে কুশলাদি করছে আর রুয়াতের পরিচয় জানাচ্ছে। পাশের রাস্তা দিয়ে শাফায়াত তার ফুফা কে হাত ভর্তি বাজারের ব্যাগ নিয়ে হেঁটে আসতে দেখলো। জবার বাবা শফিকুল শাফায়াত এর দিকে এগিয়ে এসে বলল-
-“ আরে শাফু বউমা রে নিয়ে এইখানে ক্যান?
-“ একটু ঘুরতে বের হলাম ফুপা। আপনি এতো সকালে বাজারে গিয়েছিলেন নাকি?
-“ হ আসলে জবারে আজ দেখতে আইবো ছেলের বাড়ি থিকা। তো ভালোমন্দ বাজার করে নিয়ে আসলাম।
-“ ওহ্ ছেলে কি করে?
-“ তোমার মতই স্কুলের মাস্টার। সরকারি স্কুলের।
-“ ভালোই তো। ছেলে ভালো হলে দিয়ে দেন।
-“ হ। এহন আসি। তাড়াতাড়ি আইয়া পইড়ো বাড়ি। আমি চললাম।

রুয়াত চুপচাপ এতক্ষণ কথা গুলো শুনলো। হেঁটে কিছুটা দূরে আসতেই একটা খোলা বিস্তার মাঠের দেখা মিললো। পুরো মাঠ ঘাসে বিস্তৃত। শাফায়াত রুয়াত কে নিয়ে এই মাঠে বসলো। রুয়াত ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ আপনার কি খারাপ লাগতেছে?
শাফায়াত বলল-
-“ খারাপ লাগবে কেনো?
-“ না মানে এই যে জবার বিয়ে হয়ে যাবে শুনে।
-“ খুশির খবর শুনে খারাপ লাগতে যাবে কেনো।
-“ তারমানে আপনি খুশি?
-“ অবশ্যই।
-“ খুশি কেনো?
-“ আশ্চর্য বিয়ের খবর শুনলে কে না খুশি হয়।
-“ আমি যপ শুনলাম জবা আপনাকে পছন্দ করতো।
-“ হ্যাঁ তো?
-“ আপনি করেন নি কেনো পছন্দ?
-“ ভালো লাগে নি তাই।
-“ ভালো কেনো লাগে নি?
শাফায়াত হতাশার শ্বাস ফেললো।
-“ সেটা মনই ভালো বলতে পারবে তাকে জিজ্ঞেস করো। আমাকে আর করো না জিজ্ঞেস। তুমি ভীষণ জেলাস মেয়ে। এতো জেলাস হও কেনো জবা কে দেখলে? আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে। ওর পছন্দ করায় আর না করায় কিছু যায় আসে না। আমি তো তোমার নামেই দলিল করা তবুও মিছে রাগ করো।
রুয়াত মুখ বাঁকালো। শাফায়াত সেটা দেখে বলল-
-“ মুখ বাঁকাবা না রুয়াত। ভালো দেখায় না।
-“ কি ভালো দেখায় তাহলে বলেন।
-“ বলবো?
-“ হু বলেন।
-“ এখানেই?
-“ হু।
-“ ওকে তাহলে বলছি। খারাপ ভাবে নিও না।
-” আচ্ছা বলেন।
-“ যখন গোসল শেষ করে ওড়না ছাড়া মাথায় টাওয়াল জড়িয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হও। তখন এতো হটটটট লাগে তোমায় যা বলার বাহিরে।

রুয়াত মাথা টা ঝুঁকে বেঁকিয়ে বলে-
-“ আপনি তখন তাকায় থাকেন আমার দিকে!
-“ তাকাতে না চাইলেও চোখ চলে যায়।
-“ অস্বস্তি হয় আপনার?
মজার ছলে বলল রুয়াত। শাফায়াত রুয়াত কে দেখতে দেখতে বলে
-“ হওয়াটাই স্বাভাবিক না? আফটার অল অ্যা’ম অ্যা স্ট্রং ইয়াং ম্যান। এন্ড অ্যা’ম অলরেডি ফিলিং হর্নি।
রুয়াত লজ্জা পেলো। কথাটা শুনে ভালোও লাগলো। রুয়াত তো চাইছিলো রসকষহীন কাঠখোট্টা মানুষ টা তার প্রতি আকর্ষিত হোক। রুয়াত চোখ টিপে বলল-
-“ এখন থেকে আর রুমে তাহলে ওড়নাই নিবো না।
শাফায়াত বাঁকা হাসলো।
-“ সাথে জামা টা না থাকলেও চলবে। তাহলে আমাকে কষ্ট করে খোলার জন্য অযথা টাইম ওয়েস্ট করতে হবে না।

রুয়াত এবার কেশে উঠলো। ও তো ভেবেছিলো শাফায়াত মানা করবে। কিন্তু এই লোক তো কয়েক ধাপ এগিয়ে।
-“ চলুন বাসায় যাওয়া যাক।
শাফায়াত রুয়াত কে রাগানোর জন্য বলল-
-“ কেনো তর সইছে না? এখনই করার জন্য বাসায় যেতো চাইছো! এখন করলে তো ফিল আসবে না। রাত হোক। গভীর রাতে কাছে টানলে ফিল পাবা।

রুয়াত রেগে তাকালো।
-“ আর একবার এভাবে বলবেন তো মাথার চুল গুলো সব টেনে ফেলবো। অসভ্য পুরুষ।
-“ কিছু না করেও না ধরেও অসভ্য বলতে পারো না আমায়।
-“ উঠবেন আপনি? নাকি আমি একাই হাঁটা ধরবো?
শাফায়াত উঠে দাঁড়ালো। রুয়াতের হাত ধরে হাঁটা ধরলো।

জবা সকাল থেকে রেগে রয়েছে। তার বাবা মা তাকে না জানিয়েই বিয়ের বন্দোবস্ত করতেছে। বিয়েটা ভাঙার জন্য জবা উঠানে পায়চারি করছে। হঠাৎ সদর দরজায় চোখ যেতেই শাফায়াত আর রুয়াত কে এক সাথে ভেতরে আসতে দেখে রাগ টা তরতর করে আরো বেড়ে গেলো। রুয়াত জবার কাটা গায়ে নুনের ছিটা দেওয়ার জন্য শাফায়াত কে টেনে জবার সামনে দাঁড়িয়ে বলে-
-“ আগাম বিয়ের জন্য শুভেচ্ছা রইলো তোমার আপু। আমি আর শাফু তো মনে হয় থাকবো না বিয়েতে তবুও মন থেকে আমি আর শাফু দোয়া করি তুমি বিয়ে করে তারপর সুখী হও। তার আগে আর সুখী হইয়ো না।
জবা দাঁতে দাঁত চেপে কথা টা হজম করে চলে যায়। রুয়াত দাঁত কেলিয়ে শাফায়াত এর দিকে তাকায়। শাফায়াত রুয়াতের দিকে তাকিয়ে আছে।
-“ দেখলেন আপনাকে এক তরফা পছন্দ করা এক্স রেগে চলে গেলো।
-“ তুমি কি চুলোচুলি করতে চাও নাকি তার সাথে?
-“ মোটেও না। তবে আপনার সাথে আমাকে দেখলে ও রেগে উঠবে কেনো? ওর ঐ রাগ টাকে আমি আরো বাড়িয়ে দিব। এখন চলুন রুমে।

বিকেলের দিকে জবা কে দেখতে আসলো পাত্রপক্ষ। জবা যাবে না পাত্র পক্ষের সামনে। সেজন্য জবার মা এসেছে রুয়াতের কাছে। বাড়ির বউ হিসেবে তো তারই থাকার কথা পাশে। রুয়াত সুন্দর করে সেজেগুজে শাড়ি পড়ে জবার রুমে আসলো। জবা নীল রঙের জামদানী শাড়ি পড়েছে। পাশেই আছে শরবতের আর মিষ্টির ট্রে টা। রুয়াত সেটা হাতে নিয়ে জবার সামনে ধরে বলে-
-“ তুমি কি আইবুড়ো থাকার ভাবনা নিয়ে বসে আছো নাকি? নাকি ছ্যাকা খেয়ে দেবদাস হবে ভাবছো কোনটা?
-“ এই তুমি যাবে আমার রুম থেকে।
রুয়াত জবার কথা কে পাত্তা দিলো না। হাতের ট্রে টা জোর করে জবার হাতে ঠেসে দিয়ে বলে-
-“ এটা নাও আর চুপচাপ ওখানে গিয়ে বসো। তোমার এই দেখাদেখির চক্করে আমার জামাইয়ের সাথে আমার একান্ত ভাবে সময় কাটাতে দিচ্ছে না। তাড়াতাড়ি গিয়ে বসো।

জবার মা চলে আসলো। মেয়েকে ঠাই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রেগে বলল-
-“ মাইর কতগুলো খাবি নাকি চুপচাপ যাবি কোনটা বল?
জবা রেগে তাকালো রোয়াতের দিকে। রুয়াত হাসছে। মা কে ভীষণ ভয় পায় জবা। এখন না গেলে সত্যি সত্যি রুয়াতের সামনে পিটানি দিবে। ট্রে টা হাতে নিয়ে চলে গেলো।

রুয়াত উঠানে চলে আসলো। রজনী দাঁড়িয়ে আছে বেলি গাছের নিচে। সাদমান বেলকনি থেকে দেখে চলছে রজনী কে। রুয়াত দেখলো সেসব। তাই সোজা চলে গেলো সাদমানের কাছে। দরজায় টোকা দিয়ে বলল-
-“ ভাইয়া আসবো?
সাদমান বেলকনি থেকে রুমে আসতে আসতে বলল-
-“ আরে রুয়াত যে আসো।
রুয়াত ভেতরে ঢুকলো।
-“ ফ্রী আছেন?
-“ হু কিছু বলবে?
-“ হ্যাঁ।
-“ বলো।
“ আপু কে কি সত্যি ভালোবাসেন?
-“ এতোদিনে কি কিছুই বুজো নি?
-“ অনেক কিছুই তো বুঝে নিয়েছি ভাইয়া। তবে একটা কথা বলতে চাই। পুরুষ মানুষ বিয়ে কেনো করে জানেন?
-“ অবশ্যই জানি। নিজের একাকিত্ব কে দূরে সরাতে। ভরসা বিশ্বাস যোগ্য একটা নিজের মানুষ পেতে। হাসি খুশি দূঃখ গুলো ভাগ করে নিতে। কিছুটা শারীরিক চাহিদা ও আছে সেটা করতে। সবার উর্ধ্বে সুন্দর একটা সংসার পাততে।
-“ হুমম বুঝলাম। আচ্ছা একটা পুরুষের কাছে সবচেয়ে সুখকর ডাক কোনটা?
সাদমান চোখ বুজে নিলো। ভেসে উঠলো ফুটফুটে তার আর রজনীর অংশ এক নরম তুলতুলে ছোট্ট মুখশ্রী।
-“ বাবা ডাক।
-“ সেটাই যদি কখনও শুনতে না পান তাহলে কেমন হবে?
সহসা চোখ মেলে তাকালো সাদমান।
-“ কেনো শুনবো না বাবা ডাক?
-“ খোলামেলা বলছি। আমার আপাই বাচ্চা জন্ম দিতে অক্ষম। আপনি নিশ্চয়ই চাইবেন না এমন মেয়েকে সঙ্গী করতে? তাই বলে দিলাম। এবার যা করবেন ভেবে চিন্তে করবেন।
সাদমান রুমের জানালা দিয়ে তাকালো বেলি গাছের নিচে দাঁড়িয়ে থাকা রজনীর দিকে। কি আশ্চর্য সব অপূর্ণতা কি এই মেয়েটা কে ঘিরেই পাঠিয়েছে উপরওয়ালা? আচ্ছা মেয়েটা এতো অপূর্ণতা কিভাবে বয়ে বেড়াচ্ছে? কষ্ট হয় না? অবশ্যই হয় এরজন্যই বুঝি মাঝে মাঝে নিজের এমন ক্ষতি করে বসে। বাচ্চা দিতে পারবে না। বিজ্ঞান তো অনেক দূর এগিয়ে গিয়েছে। নিশ্চয়ই কোনো সলিউশন বের করবে তারা। আমেরিকা নিয়ে যাবে সে রজনী কে। সর্বোচ্চ চিকিৎসা করাবে। যদি ফেইল ও হয় তাহলে টেস্টটিউব পদ্ধতি অনুসরণ করবে। এই মর্ডান যুগে এসে জাস্ট বাচ্চা জন্ম দিতে পারবে না শুনে ভালোবাসা অস্বীকার করার মতো ছেলে এই সাদমান না। বাহিরের দেশে বেড়ে উঠেছে পড়াশোনা করেছে।

-“ তোমার কি ধারণা রুয়াত। এটা শোনার পর আমার ভালোবাসা কে অস্বীকার করবো আমি?
-“ করতেও পারেন। যেখানে বিয়ের পর সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম হওয়ায় নওফিল আপাকে ডিভোর্স দিয়ে সব কিছু অস্বীকার করেছিলো৷ সেখানে আপনি ও করবেন নিশ্চয়ই।
-“ আমি নওফিল না রুয়াত। আমি সাদমান। আর সাদমান রা জানে ভালোবাসা অস্বীকার করার মতো অনুভূতি না। যারা করে তারা তো কখন ভালোই বাসে নি প্রকৃতপক্ষে। বিজ্ঞানের অনেক পদ্ধতি আছে বাচ্চা নেওয়ার আমরা সেটা অবলম্বন করবো। তা না হলে কোনো এতিমখানা থেকে বাচ্চা এডপ্ট করবো। তুমি জাস্ট তোমার বোন কে বুঝাও। আমার বাবা মায়ের কাছে এসব সমস্যা কোনো ম্যাটার করে না। উনার বাহিরের দেশে থেকে অভ্যস্ত সেখানে প্রতিনিয়ত এমন হচ্ছে। এসবের জন্য কখনও কেউ নিজ থেকে দায়ী থাকে না। আমার মা বুঝবে এটা।

-“ তারমানে আপনি সব জেনেও এগোতে চাইছেন?
সাদমান দীর্ঘ শ্বাস ফেললো।
-“ হ্যাঁ। আই নিড রজনী। আমার আপত্তি না থাকলে নিশ্চয়ই উনার ও আপত্তি থাকার কথা না।
-“ আপনি আবেগে ভেসে এসব বলছেন ভাইয়া। দুটো দিন ভাবুন। সময় নিন। তারপর সিদ্ধান্ত নিয়ে জানান। আসছি।

রুয়াত চলে গেলো। সাদমান ঠাই দাঁড়িয়ে রইলো। তার মোটেও নিজের জন্য চিন্তা হচ্ছে না। তার কেনো যেনো মনে হচ্ছে সে বাচ্চা ছাড়াও কাটিয়ে দিতে পারবে রজনী কে পাশে পেলে। আচ্ছা রজনী পারবে না সাদমানের হাত টা ধরে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে? দুই টোনাটুনির সংসার পাতবে৷ স্বপ্নে দেখা সেই সংসার এর মতো।

#চলবে?

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here