গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি #পর্ব২৬ #Raiha_Zubair_Ripti

0
56

#গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#পর্ব২৬
#Raiha_Zubair_Ripti

সূর্য টা মাথার উপর থেকে সরে গেছে ঘন্টা খানেক আগেই। অথচ সাদমানের আধঘন্টা অপেক্ষা পেরিয়ে সেটা এক ঘন্টার সারিতে গিয়ে ঠেকেছে। সাদমান এখন ভাবনায় মশগুল। কি হচ্ছে ভেতরে? কি করছে তারা? রজনী যখন অফার করেছিল ভেতরে যাওয়ার তখন যে কেনো গেলো না সাদমান তার জন্য নিজেকে বকতে ছাড়লো না। ভেতরে গেলে এতো অপেক্ষা তো করতে হতো না। সাদমান রজনী কে ফোন করলো। বাজছে কিন্তু রিসিভ হচ্ছে না। রাগ হলো সাদমানের। ফোন টা কেনো ধরবে না। ইচ্ছে করলো ফোন টা ছুঁড়ে ফেলে দিতে। অধৈর্য্য হয়ে গাড়ি থেকে নামতে নিলে দেখে রজনী আসছে। মুখে লেগে আছে হাসি। সাদমান এর গা জ্বালা করলো এই হাসি দেখে। অপেক্ষায় রেখে হাসি সহ্য হলো না। রজনী এগিয়ে আসলো। গাড়িতে বসে বলল-
-“ সরি সাদমান বুঝতে পারি নি এতো দেরি হয়ে যাবে।
সাদমান গাড়ি স্টার্ট দিলো কোনো কথা না বলে। রজনী তাকালো সাদমানের মুখের দিকে। শক্ত হয়ে আছে মুখ। রেগে আছে নিশ্চয়ই?
-“ রেগে আছেন সাদমান? সত্যি বুঝতে পারি নি৷ ফোনটাও সাইলেন্ট করা ছিলো৷ ও আসতেই দিতে চাচ্ছিল না। বুঝিয়ে শুনিয়ে আসতে হলো। অনেক দিন দেখে নি তো সেজন্য….
-“ সেজন্য কি? এত সময় ওকে দিতে হবে? ও কি বাচ্চা? দামড়া একটা মানুষ জ্ঞান বুদ্ধি নেই? এমনি এমনি বড় হয়েছে?

রেগে বললো সাদমান। রজনী হকচকিয়ে গেলো।
-“ ওর তেমন বয়স হয় নি। রেগে কথা বলছেন কেনো? ওর জন্য ই তো আমার আসা।
সাদমান দাঁত চেপে বলল-
-“ কোলে নিয়ে রাখতেন।
-“ হ্যাঁ নিয়েছিলাম। গুলুমুলু একটা। আসতেই ইচ্ছে করছিলো না।
-“ থেকে আসতেন তাহলে রাত টা। আমি চলে যেতাম একাই।
-“ বলেছিলো থাকতে। কিন্তু থাকি নি। কেমন দেখায় না রাত থাকাটা?
-“ কেমন দেখাবে ভালোই দেখাবে। থাকতেন।
-“ উফ আপনি এমন রেগে রেগে কথা কেনো বলছেন। খুব কি ওয়েট করিয়েছি? সরি বললাম তো।

সাদমান চুপ রইলো। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। তাকে পাত্তা দেয় না অথচ উমরের বাসা অব্দি চলে আসে!
রজনী সাইড ব্যাগ থেকে ফোন টা বের করে। গ্যালারি তে ঢুকে পিক বের করে সাদমান এর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে-
-“ দেখুন আমাদের মানিয়েছে না?
সাদমান ঘুরলো। ভেবেছিল উমর আর তার ছবি দেখিয়ে বলছে। তাই রাগ নিয়ে ই কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে গিয়ে ও কিছু বলতে পারলো না। রজনীর পাশে লাল টুকটুকে একটা পরী রজনী কে জড়িয়ে ধরে চুমু খাচ্ছে।
-“ কে এটা?
-“ ঊষা। ডক্টর উমরের মেয়ে। ওর বার্থডে ছিলো আজ।
সাদমান সহসা জিজ্ঞেস করে বসলো-
-“ ওর আম্মা বেঁচে আছে তো?
মুভি, গল্পে সাদমান দেখেছে, বাচ্চার মা বেঁচে থাকে না। পরে ঐ বাচ্চার বাবার সাথে বিয়ে হয়ে যায় বাচ্চার সাথে অতিরিক্ত মেশা কোনো মহিলার।

রজনী ভ্রু কুঁচকালো সাদমান এর কথায়।
-“ অবশ্যই আছে বেঁচে ওর মা। এই দেখুন ওর মায়ের ছবি।

রজনী গ্যালারি থেকে রজনী আর লিমার পিক বের করে দেখায়। সাদমান দেখে ছবি টা। অশান্ত মন টার শান্তি মেলে। কি সব হাবিজাবি ভাবছিলো। নিজের মেন্টালিটি কে গাড়ির নি’চে ফেলে চা’পা দিয়ে পি’ষে ফেলতে ইচ্ছে করলো। সাদমান গাড়ি টা নিয়ে সোজা একটা নদীর ধারে আসলো। রজনী হঠাৎ গাড়ি টা এখানে থামাতে দেখে অবাক হয়ে বলল-
-“ গাড়িটা এখানে থামালেন কেনো?
সাদমান গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলল-
-“ আগে নামুন তো গাড়ি থেকে। আপনি অজান্তেই আমার মন মেজাজ দুটোই শান্ত করে দিয়েছেন। তাই আমার এখন ঘুরতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে এই নদীর তীরে বসবো কিছুক্ষণ গোধূলির বিকেল দেখবো। শীতল বাতাস গায়ে মাখবো। নদীর জলে পা ভিজাবো। আর নৌকা বেয়ে মাঝি হবো আপনার। আসুন।

সাদমান হাত বাড়িয়ে দিলো। রজনী হাত টা ধরে গাড়ি থেকে নামলো। সাদমান রজনী কে নিয়ে নদীর তীরে আসলো। শুঁকনো বালু তে বসে রজনী কেউ বসতে বলল। রজনী ও বসলো। এই জায়গা টার কাছে মানুষের আনাগোনা কম। কিছুটা দূরে আছে মানুষ। তীরে সারি সারি করে নৌকা বাঁধা। রোদ নেমে গিয়ে শীতল বাতাস। পরিবেশ টা দারুন। রজনীর মনে পড়লো বছর কয়েক আগের কথা। নওফিল এর সাথেও সে এসেছিল এমনই এক নদীর তীরে। সেদিন বৃষ্টি ছিলো। বৃষ্টির শব্দে মুখরিত হয়ে ছিল চারিপাশ। নদীর পানির উপর টিপটিপ করে বৃষ্টির পানি পড়ছিলো। নদীর তীরে বসে ভিজেছিল নওফিল আর রজনী। প্রিয় পুরুষের সাথে বৃষ্টি বিলাস আহ! আজ সবই স্মৃতি। মানুষ মানুষ কে দেওয়া অঙ্গিকার, প্রতিশ্রুতি সব ভুলে যায়। অথচ মানুষ টিকে ভুলা যায় না। আচ্ছা নওফিল বুঝি ভালোই আছে বউ সন্তান নিয়ে তাই না? লাইফে নিশ্চয়ই কোনো অপূর্ণতা তার নেই তাই না? আহারে জীবন,দুঃখ বলতে যদি কিছুই নাই থাকতো জীবনে তাহলে কতই না ভালো হতো।

শরীরে ভেজা অনুভব হতেই রজনীর ধ্যান ভাঙলো। বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছে। কই আকাশ দেখে তো মনে হয় নি বৃষ্টি আসবে। আকাশ কি বুঝে গেছে রজনীর মন? তার এই বৃষ্টি টাকেই মিস করছিলো। আর আকস্মিক আজও বৃষ্টি নামছে। মুহূর্তে আকাশ টা কেমন কালো হয়ে গেলো। সবাই দৌড়াদৌড়ি করে ছাউনির তলে যাচ্ছে। সাদমান বৃষ্টি দেখে রজনীর হাত টেনে ধরলো বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য। রজনী তাকালো সেই হাতের দিকে। কিয়ৎ ক্ষন নিষ্পলক চেয়ে থেকে বলল-
-“ ভিজতে চাই আজ বৃষ্টি তে। আই লাভ রেইন। প্লিজ?
সাদমান হাত ছেড়ে দিলো। বসে পড়লো ফের বালিতে। বৃষ্টির পানিতে ভিজে গেলো দুটো দেহ। রজনী ফিল করছে এই বৃষ্টি কে। আর সাদমান তাকিয়ে দেখছে তার বৃষ্টি বিলাসী প্রিয়তমা কে। সাদমানের বুকের ভেতর কেমন ঢিপঢিপ করে আওয়াজ হচ্ছে৷ কিন্তু কেনো? রজনী কে দেখে? হ্যাঁ তাকেই দেখে। বৃষ্টির ফোঁটা মুখে পড়ায় কেমন ঘনঘন পলক ফেলছে। গোলাপি ঠোঁট জোড়া কাঁপছে। সাদমান এর কেমন ঘোর লেগে আসছে। ঐ গোলাপি ঠোঁট জোড়া ছুঁইয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। হাত টাও বাড়ালো। হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকে উঠায় নিজের হুঁশে ফিরলো সাদমান। একটু আগে করা ভাবনায় ভীষণ লজ্জিত। এদিকে ঠান্ডা বাতাসের তীব্রতা ও বেড়ে গেলো। শীত শীত লাগছে। সাদমান সয়ে নিচ্ছে সেই ঠান্ডা একমাত্র রজনীর জন্য। চারিদিকে আঁধার ঘনিয়ে আসতেই রজনীর মনে হলো এখন বাসায় ফেরা উচিত। সেজন্য সাদমান এর দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ বাসায় ফেরা যাক এখন তাহলে?
-“ হু।
সাদমান বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। পা বাড়াতেই রজনী হাত মুঠোয় নিলো। সাদমান তাকালো সেই হাতের দিকে। রজনীর দৃষ্টি সামনে। সাদমানের শরীরে উত্তেজনা কাজ করছে। এক আকাশ সম ভালো লাগার উত্তেজনা। রজনী নিজ থেকে তার হাত ধরেছে! সাদমান এর চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে-“ শুনো পৃথিবী দেখো আমার ভালোবাসা আমার হাত ধরেছে।

কিন্তু পারছে না। চেপে রাখলো হৃদয়ে। গাড়ির কাছে আসতেই রজনী হাত ছেড়ে দেয়। গাড়িতে উঠে বসে। সাদমান বাড়ির দিকে রওনা হয়।

নিজের রুমে শরীরে চাদর জড়িয়ে শাফায়াত এর কোলে পা দিয়ে সোফায় বসে আছে রুয়াত। শীতে আর টিকতে না পেরে আলমারি থেকে চাদর বের করে জড়িয়ে নিয়েছে। শাফায়াত ল্যাপটপে কাজ করছে। সামনেই টেবিলে কফি ভর্তি দু মগ। যেটা একটু আগে রুয়াত বানিয়ে নিয়ে এসেছে। শাফায়াত কে এতো গভীর ভাবে কাজে মনোযোগ থাকতে দেখে রুয়াতের ভালো লাগলো না। সেজন্য শাফায়াত এর কোলে পা নাড়াচাড়া করতে লাগলো। শাফায়াত গম্ভীর কন্ঠে বলল-
-“ আহ্ বিরক্ত করো না রুয়াত। ইম্পর্ট্যান্ট কাজ করছি।
রুয়াত কফির মগ নিয়ে চুমুক বসিয়ে বলে-
-“ কি ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আমাকেও বলেন।
-“ ভার্সিটির। তোমাদের না সামনে ইয়ার চেঞ্জ পরীক্ষা? পড়তে বসো না কেনো?
রুয়াত কান দিলো না সে কথায়।
-“ আজকের ওয়েদার রা জোশ তাই না?
-“ হ্যাঁ তার জন্য শীতে আজ গোসল করো নি খচ্চর।
রুয়াত শাফায়াত এর বাহুতে ধাক্কা দিলো।
-“ এত শীত দেখছেন না? আমি গোসল করে শরীর কে কষ্ট দিতে যাব কেনো?
-“ আহামরি ও শীত না। চাইলেই রাজি হলে পারতে গোসল করতে। এক সঙ্গে। ইউ নোও হোয়াট আই মিন? ভ্রু নাচিয়ে বলল শাফায়াত।
রুয়াত গরম কফির মগ দেখিয়ে বলল-
-“ এটা ঢেলে দিব বুকের উপর তখন ঝলসে যাবে বুকটা। ভালো লাগবে?
শাফায়াত মাথা এলিয়ে দিয়ে টেনে শ্বাস ছেড়ে বলে-
-“ তুমি ভালোবেসে যা দিবা। আমি সাদরে তা গ্রহণ করে নিব মিসেস নোয়াস।
রুয়াত এগিয়ে আসলো। শাফায়াত এর শার্টের বুতাম টা খুলে মগ টা চেপে ধরলো। শাফায়াত মুচকি হেসে তাকিয়ে রইলো রুয়াতের চোখের দিকে। রুয়াত শাফায়াকে নিশ্চুপ থাকতে দেখে কফির মগ সরিয়ে আনলো। কিন্তু শাফায়াত সময় নিলো না রুয়াত কে টেনে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিতে। আকস্মিক এমন হওয়ায় গরম কফির মগ হাত থেকে পড়লো ফ্লোরে। মিনিট পাঁচেক পর শাফায়াত ছেড়ে দিলো।
-“ এটা কি ছিলো?
শাফায়াত নিজের বুকের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ ভিটামিন সি নিলাম। ঘাটতি ছিলো দেহে সেজন্য।
-“ ঠান্ডা হওয়ার পরই মগ চেপে ধরছি। তাই বইলেন না সত্যি সত্যি ঝলসে দিছি বুক।
শাফায়াত হাসলো। পুনরায় ল্যাপটপ টা কোলে নিয়ে বলল-
-“ পড়তে বসো। প্রস্তুতি নাও এক্সাম এর।

বৃষ্টি শেষ হয়েছে রাত ১১ টার দিকে। বৃষ্টি থামার পরই ক্লাব থেকে বাসায় এসেছে রোহান। রাতের রান্না টা বুয়া করে যায় নি। বিরক্তির অনুভব হচ্ছে তার জন্য। রান্না ঘরে আসলো। তিন প্যাকেট নুডলস থাকায় চটপট সেটা রান্না করলো। প্লেটে পরিবেশন করে রুমে এসে বসতেই পেকেটে থাকা ফোন বেজে উঠে। রোহান প্লেট টা টেবিলের উপর রেখে ফোন টা বের করে দেখে নীতির ফোন। রোহান রিসিভ করলো না। সাইডে রেখে দিলো। ফোন টা কেটে যেতেই আবার বেজে উঠলো। পরপর তিনবার এমন হলো। চারবারের মাথায় রোহান রিসিভ করলো। ধমকের স্বরেই বলল-
-“ হোয়াট’স রং উইথ ইউ নীতি? এতো ফোন কেনো দিচ্ছিস?
নীতি ভয় পেয়ে গেলো আকস্মিক এমন ধমকে।
-“ একটু আপনার গলা শুনতে ইচ্ছে করছিলো। সেজন্য ফোন দিয়েছি। তাই বলে এভাবে রাগ করবেন?
-“ শুনেছিস গলার আওয়াজ?
-“ হু।
-“ এখন রাখি। ঘুমিয়ে পড়।
রোহান কে’টে দিলো ফোন। নীতির সাথে রুড আচারণ ই করতে হবে এখন থেকে। তা না হলে নীতি আরো বাড় বাড়বে। রোহান আর চায় না এসব। নীতির এসব কে প্রশ্রয় দিলে নেহাল ভাববে রুয়াত কে না পাওয়ায় তার বোনের কাছে ফিরে এসেছে সে।

নীতি ফোনের স্কিনে নিষ্পলক চেয়ে রইলো। লোকটা কবে বুঝবে তার মন? আর কত অপেক্ষা করবে সে? কবে তার অপেক্ষার ফল মিষ্টি হবে?

#চলবে?

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here