#গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#পর্ব৩২
#Raiha_Zubair_Ripti
ড্রয়িং রুম জুড়ে পিনপিনে নীরবতা। মুখোমুখি হয়ে বসে আছে নওফিল শাফায়াত আর সাদমান। রজনী ঘুমিয়েছে বিধায় জানে নি নওফিল এ বাসায় এসেছে। নওফিল এর মুখ অপরাধীর ন্যায় চুপসে আছে। শাফায়াত তা আড় চোখে দেখছে। নাইমুর সানজিদা নিজের রুমে চলে গেছে। শাফায়াত কৌশল খাটিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে রুমে। শাফায়াত লম্বা শ্বাস টানলো। নওফিল নওরিনকে নিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালে শাফায়াত বলে উঠে –
-“ উঠছেন যে?
নওফিল তাকালো।
-“ আসলে আর্জেন্ট একটা কাজ মনে পড়েছে। আমাকে যেতে হবে।
শাফায়াত হাসলো।
-“ পালাতে চাইছেন?
-“ যা ভাববেন।
-“ বসুন,আপনি অতিথি আমাদের। চলে যাবেন কেনো।
-“ নাহ্ আর থাকা সম্ভব নয়। আমি চাই না আমাকে দেখে পূনরায় কারো হৃদয় মস্তিষ্ক বিষণ্ণতায় মূর্ছা যাক।
-“ তারা আপনাকে দেখেই ফেলেছে মিস্টার নওফিল। বিশেষ করে রজনী।
সাদমান বলে উঠলো কথাটা।
নওফিল গম্ভীর কন্ঠে বলল-
-“ সেটার জন্য ই আফসোস হচ্ছে। যদি দেখা না হতো তাহলেই ভালো হতো। আমি কখনই চাই নি রজনীর সাথে দ্বিতীয় বার আর দেখা হোক।
-“ দেখা হওয়াতে ভালোই হয়েছে। সামনে রজনীর বিয়ে। আপনাকে ইনভাইট করতে আর কষ্ট পোহাতে হবে না। তা আসবেন তো আমার আর রজনীর বিয়ে তে?
নওফিলের বুঝতে বাকি নেই সাদমান লোকটার সাথে রজনীর বিয়ে।
-“ কাটা গায়ে নুনেরছিটে দিচ্ছেন সাদমান?
সাদমান নড়েচড়ে বসলো। ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ আপনার শরীরে ক্ষত ছিলো নাকি নওফিল? আমার তো জানা ছিলো না। আমার জানামতে যারা অন্যকে ক্ষত-বিক্ষত করে তাদের শরীরে তো ক্ষতের রেশ অব্দি থাকে না।
নওফিল চুপ হয়ে গেলো। শাফায়াত বলল-
-“ তা মেয়েটা আপনার?
-“ হ্যাঁ।
-“ আপনার ওয়াইফ কে যে দেখছি না। উনি আসে নি বিয়ে তে?
নওফিল কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেলো। জিহ্বা দিয়ে ওষ্ঠদ্বয় ভিজিয়ে বলল-
-“ ও একটু ব্যস্ত কাজে,তাই আসতে পারে নি। আজ আসি। নাইমুর কে বলে দিবেন ইমার্জেন্সি হওয়ায় আমি চলে গেছি।
-“ সত্যি সত্যি চলে যাবেন?
-“ হ্যাঁ, ভালো থাকবেন।
নওফিল চলে গেলো মেয়েকে নিয়ে। শাফায়াত বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
রুয়াতের বলা সেই কথাগুলো নিশ্চিত নওফিল শুনেছিল। তাই হয়তো চলে গেলো। বউ তার ভীষণ রেগে আছে শাফায়াত রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে বলে। এখন বউয়ের রাগ ভাঙাতে হবে।
সাদমান পকেট থেকে ফোন টা বের করে তার বাবা মা কে ফোন করলো। সে আর দেরি করবে না রজনী কে বিয়ে করা নিয়ে। ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ হতেই সাদমান গম্ভীর কন্ঠে বলল-
-“ কবে আসবে তোমরা? আমি যে বললাম তাড়াতাড়ি চলে আসতে। আমাকে কি বিয়ে করাবা না তোমরা, তোড়জোড় দেখছি না কেনো তোমাদের?
সাইদুল ইসলাম বললেন-
-“ কালকের ফ্লাইটে আসছি আমি আর তোর মা।
-“ হু তাড়াতাড়ি এসো আর হ্যাঁ সাবধানে। মা কোথায়?
-“ ঘুমাচ্ছে।
-“ আচ্ছা রাখি, তুমিও ঘুমাও গিয়ে।
সাদমান ফোন কেটে দিলো। নিজের রুমের দিকে যাবার সময় রজনীর রুমে উঁকি দিয়ে ঘুমন্ত রজনী কে দেখে চলে গেলো।
নওফিল বাসা থেকে বের হয়ে গাড়ি চালাতে আরম্ভ করে। হৃদয় টা একটু না অনেকটাই পুড়ছে। কেনো পুড়ছে রজনী দেখার পর থেকে? রজনী নামক মেয়েকে তো আর ভালোবাসার মতো দুঃসাহস নওফিল করবে না। রজনী সুখে থাকুক। সকল সুখ তার ভাগ্যে এসে ভীড় জমাক। তবুও নওফিল এর সাথে তার আর দেখা না হোক। দেখা হলেই ফেলে আসা দিনগুলোর কথা স্মরন হয়। আর লাইফে করা সবচেয়ে বড় ভুল টা বিষাক্ত তীরের মতো এসে বিঁধে বুকে। নওফিল হ্যাপি তার জীবন টা নিয়ে। বেঁচে থাকার মতো যে তার একটা পরী আছে। নওফিল তাকালো নওরিনের দিকে। মেয়েটা তাকিয়ে আছে বাহিরে।
এই টুকু একটা বাচ্চা কে ছেড়ে কি করে একটা মা চলে যেতে পারে অন্য এক পুরুষের হাত ধরে? নওফিল এর দ্বিতীয় স্ত্রী ফারজানা বছর দুই হলো চলে গিয়েছে অন্য এক পুরুষের সাথে। নওফিল সেদিনই বুঝেছে তার সাথে এটা রিভেঞ্জ অব নেচার ঘটেছে। কারন নওফিল একজন কে কাঁদিয়ে, পুরোপুরি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়ে নতুন ভাবে শুরু করেছিল সব এক ছলনাময়ীর সাথে। ছয় মাসের বাচ্চা টাকে নওফিল একা হাতে মানুষ করছে। বাসায় অবশ্য একটা সার্ভেন্ট আছে যে নওফিল অফিসে থাকাকালীন দেখাশোনা করে। নওফিল মেনে নিয়েছে ভাগ্য। সে বাকি টা এই মেয়েকে নিয়েই পাড় করবে। জীবনে শুধু একটাই চাওয়া ছিলো,যেনো রজনীর সাথে দেখা না হয়। কিন্তু সেটাও হয়ে গেলো। রজনী রুয়াত সবাই জানুক নওফিল ঠকিয়েও সুখে আছে। কেউ না জানুক নওফিল ও ঠকে গেছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এ শহর ছেড়ে চলে যাবে। যে শহরে প্রাক্তন থাকে সে শহরের আশেপাশে থাকাটা নিষিদ্ধ প্রত্যেক প্রাক্তনের।
রুয়াত খাটের উপর পা তুলে বসে আছে। চোখ মুখ জুড়ে রাগের আভাস। ক্ষনে ক্ষনে সাপের মতো ফুঁসে উঠছে। শাফায়াত দরজার কাছ থেকে দেখতে দেখতে এগিয়ে আসলো। রুয়াত সেদিক পানে তাকিয়ে বলল-
-“ খবরদার আমার কাছে আসবেন না একদম।
শাফায়াত পা ঘুরিয়ে সোফায় গিয়ে বসলো৷ রুয়াত ভ্রু কুঁচকালো। আশ্চর্য আসতে না বলছে দেখে তাই আসবে না? রুয়াত আরো ফুঁসে উঠলো।
-“ ঐ বেয়াদব চলে গেছে?
-“ হ্যাঁ।
-“ ভালো করেছে। তা আপনি সোফায় বসছেন কেনো?
-“ তুমি বিছানার ধারে কাছে যেতে না করছো সেজন্য।
-“ আপনি আমার সব কথা শুনেন?
-“ অবশ্যই। আমি তোমার বাধ্য স্বামী।
-“ কচু। পাশে বসে রাগ ভাঙান।
শাফায়াত ভ্রু কুঁচকালো।
-“ তোমার চোখ মুখে তো রাগ নেই। ভাঙাবো কি?
রুয়াত মুখটায় রাগী ভাব এনে বলে-
-“ এই দেখুন আমার চোখ মুখে কত্তো রাগ। নাকের ডগায় এসে আছে। আসুন ভাঙান।
শাফায়াত উঠে চলে আসলো বিছানায়। রুয়াতের পাশে এসে বসে নাকের ডগায় ওষ্ঠদ্বয় ছুঁইয়ে দিয়ে বলল-
-“ উমম আই থিংক আর রাগ নেই নাকের ডগায়।
-“ চোখ মুখে আছে।
শাফায়াত রুয়াতের ওষ্ঠে হাল্কা ওষ্ঠদ্বয় মিলিয়ে বলে-
-“ আরো আছে?
রুয়াত অন্য দিকে মুখ করে বলল-
-“ না আর নেই। আমার কাঁদতে ইচ্ছে করছে এখন।
শাফায়াত রুয়াত কে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল-
-“ হোয়াই?
-“ আপনাকে বিয়ে করার পর আমার একটু কাঁদা উচিত। কষ্টরা আসে না কেনো কাছে?
-“ সবাই সুখ খুঁজে আর তুমি কান্না কষ্ট খুঁজতেছ?
-“ হ্যাঁ। শুধু সুখ দুঃখ ছাড়া পানশে।
-“ তোমাকে ছাঁদ থেকে ফেলে দিয়ে দুঃখ কষ্টের স্বাদ পাইয়ে দেই।
-“ তা মন্দ হয় না। হাত পা ভেঙে ঘরে পড়ে থাকবো। আর আপনি ভার্সিটির ক্লাস বাূ দিয়ে আমার সেবা যত্ন করবেন আহ্!
-“ ভালো হবে না তাই না?
-“ উঁহু। আমি যা তাই ই থাকবো চিরকাল।
শাফায়াত কপালে চুমু খেয়ে বলল-
-“ হু সেটাই থেকো। কখনও বদলে যেয়ো না।
রাত ১২ টার দিকে রজনীর ঘুম ভেঙে যায়। প্রচুর ক্ষিদে পেয়েছে। নিজের বাসা না যে ক্ষিদে পেলো আর গিয়ে খেয়ে নিলো। কাউকে ডেকে নেওয়া উচিত। কিন্তু কাকে ডাকবে? রুয়াত? ও তো ঘুমিয়ে পড়েছে। শারমিন বেগম ও ঘুমে। সাদমান কে ডাকবে? হ্যাঁ ডাকাই যায়।
রজনী সাদমান কে টেক্সট করলো তার ক্ষিদে পেয়েছে। মিনিট দশ পাড় না হতেই সাদমান ভাতের প্লেট নিয়ে হাজির। রজনী জানতো হয় সাদমান জেগে আছে। কিন্তু খাবার নিয়ে যে একেবারে রুমে চলে আসবে সেটা ভাবতে পারে নি।
সাদমান খাবার প্লেট টা বিছানায় রেখে রজনী কে বলল-
-“ ফ্রেশ হয়ে আসুন।
রজনী ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার টা খেতে আরম্ভ করলো। সাদমান বসে বসে রজনীর খাওয়া দেখলো।
-“ আপনি খেয়েছেন?
সাদমান হ্যাঁ জানালো। রজনী ঝটপট করে খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষ হলে সাদমান প্লেট টা নিয়ে বলল-
-“ ঘুম কি আসবে আর?
রজনী বিছানায় শুতে শুতে বলল-
-“চেষ্টা করে দেখি।
-“ হু করুন,গুড নাইট।
-“ আপনাকেও।
সাদমান চলে গেলো।
পরের দিন সকালে রজনী কে রজনীর বাসায় দিয়ে আসে সাদমান। শাফায়াত রুয়াত ভার্সিটিতে এসেছে। রোহান নেহাল ও এসেছে। রোহান নেহাল মাঠেই দাঁড়িয়ে ছিলো। রুয়াত আসা মাত্রই রোহান খেয়াল করেছিল। রুয়াত পাশ কাটিয়ে চলে যেতে নিলে রোহান জিজ্ঞেস করে বসে-
-“ কেমন আছো রুয়াত?
রুয়াত পেছন ফিরে।
-“ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?
-“ এই তো চলছে বেশ।
-“ আলহামদুলিল্লাহ বলতে শিখুন।
-“ হ্যাঁ সরি।
-“ ফর হোয়াই?
-“ কুয়াকাটায় করা বিহেভিয়ার এর জন্য। ফল্ট টা আমারই ছিলো।
-“ হুমম। ভুল টা বুঝতে পেরেছেন তাহলেই হবে। সরি বলতে হবে না। আসি ভালো থাকবেন।
রুয়াত চলে গেলো। নেহাল রোহান কে ধাক্কা দিয়ে বলল-
-“ তলে তলে এহন ও ভালোবাসছ নাকি?
-“ ভালোবাসা? সেটা চিরকাল থেকে যাবে মনে গোপনে অতি সঙ্গোপিত ভাবে।
-“ তাইলে আর বিয়াশাদী কইরা আরেক মাইয়ার জীবন নষ্ট করিছ না।
-“ তর শালি রে এনে দিবে।
-“ সো স্যাড আর বউয়ের কোনো বোন নেই।
রোহান হাই তুলতে তুলতে বলল-
-“ তর তো আছে। তাতেই চলবে।
নেহাল ভেঙচি কেটে বলল-
-“ আমার বোন কে পাওয়ার জন্য রাজপথে নামলেও তোর মতো ছ্যাকা খোর এর সাথে আমার বোন কে দিব না।
-“ একটা ইশারা দিলেই নীতি চলে আসবে। সো বড় বড় ভাষণ বন্ধ কর।
-“ একটু না হয় দিলামই ভাষণ। সভায় তো একা একা তুইই ভাষণ দিস। আমারে তো দিতে দেছ না।
-“ বয়স হয়নি বাচ্চা ছেলে তোমার ভাষণ দেবার। আগে বয়স হোক তারপর ভেবে দেখবো।
( তিনদিন ব্যস্ত থাকায় গল্প দিতে পারিনি। আজ লিখতে গিয়ে মনে হলো কতদিন পর লিখতে বসেছি। লেখা আগাচ্ছে না৷ খুব সরি)
#চলবে?
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/