রংধনুর_স্নিগ্ধতা #পর্ব_১৪ #নবনী_নীলা

0
89

#রংধনুর_স্নিগ্ধতা
#পর্ব_১৪
#নবনী_নীলা

স্পৃহা ফুলগুলো থেকে একটা ফুল জিমের দিকে এগিয়ে দিতেই জিম তাচ্ছিল্যের সঙ্গে বললো,” আমার লাগবে না।”
স্পৃহা ভ্রু কুঁচকে তাকালো তারপর বিরক্তি নিয়ে বললো,” কি আশ্চর্য! আপনাকে ফুল দিয়েছে কে? আপনার মাথায় কি সমস্যা আছে। ভাবলেন কি করে যে, আমি স্পৃহা তাসনিম আপনাকে ফুল দিবো।” বলেই ফুলটা জিমের হাতে ধরিয়ে দিলো। জিম হতবাক হয়ে তাকালো। এই মেয়ের মুখের কথা আর কাজের সাথে কোনো মিল নেই।

স্পৃহা আড় চোখে তাকিয়ে বললো,” ওটা আপনাকে দেই নি। ওটা আপুর জন্যে, আপুকে দিবেন। বুঝেছেন?”

জিম চোয়াল শক্ত করে তাকালো। এই মেয়ের সাথে কথা বাড়ানোর কোনো মানে হয় না। জিম তপ্ত নিশ্বাস ফেলে স্পৃহাকে রেলে ওদের বাড়ির দিকে হাটা দিলো। স্পৃহা দৌড়ে দৌড়ে জিমের পিছে পিছে ছুটতে লাগলো। স্পৃহার ইচ্ছে করছে জিমের পিছনে জঙ্গলী কুকুর ছেড়ে দেয়। কুকুর গুলো জিমকে তাড়া দিবে আর স্পৃহা বসে বসে বসে সেই দৃশ্য দেখবে। তাহলে মনে শান্তি পাওয়া যাবে।

জিম স্পৃহাদের বাড়ির গেটে এসে থামলো। স্পৃহা হাপাতে হাপাতে পিছু পিছু এলো। জিম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো স্পৃহার দিকে তারপর বললো,” কোথায় কাউকে তো দেখলাম না। কোন ছেলে নাকি তোমায় ডিস্টার্ব করে?”

স্পৃহা ভ্রূ কুচকে বললো,” সারাদিন চোখে এমন সানগ্লাস পরে থাকলে দেখবেন কি করে? ঐ ছেলেগুলো সূযোগ বুঝে আসে, এমন রোবোটিক মানব সঙ্গে থাকলে ছেলে তো দূরে থাক কোনো মেয়েও আসবে না আমার আশেপাশে।”

জিম বিরক্ত হয়ে বলল,” স্পৃহা! তুমি শুধু শুধু আমার কতটা সময় নষ্ট করলে তোমার কোনো ধারণা আছে?”

স্পৃহা কাঠ কাঠ গলায় বললো,” নাহ্, নেই। সময় নষ্ট হয়েছে, ভালো হয়েছে। আপনি কালকে আবার আসবেন। ছেলেগুলোকে না দেখিয়ে আমি আপনাকে ছাড়বো না।”

জিম দাতে দাঁত চিপে বললো,” তুমি..”বলেই থেমে গেলো। এর মাঝেই ফরিদা আপা ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন এক গাল হাসি নিয়ে তারপর স্পৃহার দিকে তাকিয়ে বললেন,” ছোটো আফা চলে আইসেন?” তারপর জিমকে দেখে হতবাক হয়ে এক গালে হাত রেখে বললেন,” ওমা আফনে আসলেন কুন বেলা?”

জিম বিরক্তির চরম পর্যায়ে গেলো তারপর এক মুহুর্ত সেখানে না দাড়িয়ে গাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটা দিলো। ফরিদা আপা অবাক হয়ে স্পৃহার দিকে তাকিয়ে বললো,” চইল্যা গেলো কেনো?”
স্পৃহা তীক্ষ্ণ গলায় বললো,” তুমি যাও পিছু পিছু গিয়ে জিজ্ঞেস করে এসো, চইল্যা গেছে কেনো?” বলেই বাড়িতে ঢুকলো।

আয়েশা খাতুন আজ দেরী করে স্কুলে যাচ্ছেন। স্পৃহা এগিয়ে গিয়ে নিজের মাকে একটা গোলাপ দিয়ে বললো,” ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা আম্মু।” আয়েশা খাতুন হেসে উঠে বললেন,”এই ফুল হাতে বুঝি আমি এখন স্কুলে যাবো?”

স্পৃহা বাকা হাসি দিয়ে বলল,” হুম, যাও। কেউ জিজ্ঞেস করলে বইলো বাবা দিয়েছে।”

আয়েশা খাতুন আড় চোখে তাকিয়ে বললেন,” তোমার বাবা দিবে ফুল। তাহলেই হয়েছে। ওনার দ্বারা এইগুলো হবে না। আচ্ছা আমি যাই আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে। তুমি খেয়ে নিও।”বলেই তিনি বেড়িয়ে পড়লেন। স্নিগ্ধা নিজের রুমে চলে এলো। জিম তাকে রাগ দেখালো কেনো এই নিয়ে তার মেজাজ ভীষন খারাপ। এই জিম নামের ডিম এতো বেদ্যোপ তার জানা ছিল না।

__________

স্নিগ্ধা ভেবে পাচ্ছে না এই ফাহাদ রেজওয়ান লোকটা ঠিক কি চাইছে। তাকে ফোন করে হটাৎ এতোগুলো কথা বলার মানে কি? তার নিজেকেই এইসব প্রশ্নের উত্তর বের করতে হবে। কারণ আদিল বা জিম এরা এতো ধুর্ত যে এদের থেকে কথা আদায় করা সম্ভব না। তাকেই কিছু একটা করতে হবে। অভ্রকে সে অনেকবার জিজ্ঞেস করেছে কিন্তু অভ্রর তো বাচ্চা সে কি করে জানবে।

স্নিগ্ধা আবারো সেই লক করা রুমটার সামনে গেলো। এই রুমটায় হয়তো তার অনেক প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে। কিন্তু ভীতরে গিয়ে যে দেখবে তার উপায় নেই। স্নিগ্ধা যার অস্পষ্ট ছবি দেখেছিলো সে যে অভ্রর মা এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু অভ্রর মায়ের পরিচয় আড়াল করবার কারণ কি? স্নিগ্ধা অনেক্ষন ধরে রুমটার সামনে দাড়িয়ে আছে।

পাসওয়ার্ড কি হতে পারে সেই নিয়ে তার কোনো আইডিয়া নেই। নিশ্চয়ই মারাত্মক কঠিন কিছু হবে। স্নিগ্ধা একবার ট্রাই করবে ভেবে হাত বাড়াতে না বাড়াতেই জিম এসে হাজির। জিমকে দেখে স্নিগ্ধা সঙ্গে সঙ্গে নিজের হাত গুটিয়ে পিছনে নিয়ে গেলো।

জিম স্নিগ্ধাকে হটাৎ এই রূমের সামনে দেখে বললো,” এইখানে কি করছেন?”

স্নিগ্ধা অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,” কিছু না।”

স্নিগ্ধা ধরা পড়ে যাওয়ায় জিম একটু হেসে বললো,” নিচে চলুন। আমাদের বের হতে হবে।”

স্নিগ্ধা ভ্রু কুঁচকে বললো,” কোথায় যাবো?”

” অভ্রকে আজ বাইরে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। ভুলে গেলেন?”, জিমের কথা শুনে স্নিগ্ধার মনে পড়লো। তারপর ঠোঁট কামড়ে নিচে নেমে এলো। নিচে অভ্র লাফালাফি করছে। বাইরে যাবে শুনে সে বেশ খুশি। আদিলকে দেখে স্নিগ্ধা ভ্রু কুঁচকে দাড়িয়ে পড়লো। পিছনে জিমকেও দাড়াতে হলো। জিম ব্যাস্ত হয়ে বললো,” কি ব্যাপার দাড়িয়ে পড়লেন কেনো?”

স্নিগ্ধা ক্ষোভ ভরা কণ্ঠে বললো,” এই লোকটা এইখানে কি করছে? অভ্রকে নিয়ে যেতে এতো মানুষ লাগবে? আমি এই লোকটার সাথে যাবো না।”

জিম অপ্রস্তুত হয়ে বললো,” সেটা আপনাদের মধ্যকার ব্যাপার। আমাকে বলছেন কেনো?”

স্নিগ্ধা ভ্রু কুঁচকে তাকালো জিমের দিকে তারপর হনহনিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো। আদিল গাড়ির সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়িয়ে ছিল। স্নিগ্ধা সামনে এসে দাড়াতেই আদিল ফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ তুলে স্নিগ্ধার দিকে তাকালো। স্নিগ্ধা এক মুহুর্ত বিলম্ব না করে বললো,” আমি আপনার সাথে যাবো না। হয়, আপনি যাবেন নয়তো আমি।”

আদিল ভ্রু কুঁচকে তাকালো। হটাৎ কি হলো এই মেয়ের? আদিল ফোনটা ডান পকেটে ভরতে ভরতে বললো,” সেটা হচ্ছে না। কারণ তুমি আমি দুজনেই যাচ্ছি।”

স্নিগ্ধা তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে বললো,” তাহলে আপনি যান আমি যাবো না।” বলেই চলে যেতে নিলো। আদিল ফট করে স্নিগ্ধার হাত ধরে টেনে একদম নিজের কাছে নিয়ে এলো। সবার সামনে আদিল এভাবে তাকে নিজের কাছে নিয়ে আসবে ভাবতে পারেনি স্নিগ্ধা। স্নিগ্ধা কটমট করে তাকালো।

আদিল জিমকে কি ঈশারা করতেই, জিম অভ্র কিছু দেখার আগেই তাকে কোলে করে অন্য একটা গাড়িতে উঠে বসলো।

জিম চলে যেতেই স্নিগ্ধা নিজের হাত ছাড়িয়ে নিতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। কিন্তু ছাড়াতে না পেরে রেগে গিয়ে বললো,” কি করছেন কি? লজ্জা করছে না আপনার?”

আদিলের ভাবলেশহীন ভাবে তাকিয়ে আছে স্নিগ্ধার দিকে। আদিল স্নিগ্ধার দুইহাত পিছনে নিয়ে গিয়ে লক করে দিতেই স্নিগ্ধা ভরকে গিয়ে তাকালো। আদিল দূরত্ব কমিয়ে এনে স্নিগ্ধার চোখের দিকে তাকালো। স্নিগ্ধা একটা ঢোক গিলে একটু পিছিয়ে এলো। আদিলের এমন স্থির দৃষ্টি তাকে অস্থির করে তুলতে যথেষ্ঠ।

আদিল স্নিগ্ধার অস্থিরতা টের পেয়ে মনে মনে হাসলো। তারপর ঠোঁট ভিজিয়ে বললো,” ভাবছি দুজনেই থেকে যাই। আফটার অল আজকে ভ্যালেন্টাইন ডে।” বলেই এক হাত স্নিগ্ধার কোমড়ে ডুবিয়ে দিতেই শিউরে উঠলো স্নিগ্ধা। ঠোঁট কামড়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো সে। বুকের ভিতরে ধুক ধুক শুরু হয়েছে তার।

আদিল মুখটা স্নিগ্ধার কানের কাছে আনতেই তার নিশ্বাস আছড়ে পড়লো স্নিগ্ধার গলায়। আদিল ফিসফিসিয়ে বললো,” আমার একটু উষ্ণতা লাগবে তোমার থেকে।”

স্নিগ্ধা নিজেকে শান্ত করে খুব ধীরে চোখ খুলে তাকালো। কিন্তু তার নিঃশ্বাস ভারী হয়ে এসেছে। উষ্ণতা লাগবে মানে? কি বলতে চাইছে আদিল! স্নিগ্ধা অস্পষ্ট স্বরে বলল,” মানে?”, বলেই দৃষ্টি সরিয়ে ফেললো সে।

আদিল মৃদু হেসে স্নিগ্ধাকে নিজের দুই বাহুতে আবদ্ধ করে নিজের সাথে মিলিয়ে নিয়ে স্নিগ্ধার চুলের ভাজে মুখ গুজে দিলো, শিউরে উঠে আবারো চোখ বুজে ফেললো স্নিগ্ধা। হুট করে আদিলের এতো কাছে চলে আসায় স্নিগ্ধার অস্থিরতা আরো বেড়ে যায়। কিন্তু হটাৎ কেনো জানি তার ভালোলাগছে এই বাঁধনটা, এভাবে জড়িয়ে থাকাটা।

কিন্ত কয়েক মুহুর্তেই ফাহাদের বলা সেই কথা মনে পড়ে গেলো তার। অজানা এক ভয় গ্রাস করলো তাকে। আদিল কি সত্যি তাকে ব্যাবহার করছে নিজের প্রয়োজনে? ভেবেই বুকের ভিতরটা কেপে উঠলো তার। পরক্ষনেই স্নিগ্ধা কঠিন ভঙ্গিতে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো। তারপর সরে দাঁড়ালো, আদিল স্নিগ্ধার এমন আচরণে বেশ অবাক হলো। স্নিগ্ধার চেহারায় লাল আভার মাঝে কোথাও যেনো এক অভিমানী মেঘ বাসা করেছে।

[ #চলবে ]

গল্পটা রেগুলার দিতে পারবো ভেবেছিলাম কিন্তু সময়ের কারণে এখন সেটা হয়ে উঠছে না। এখন থেকে গল্পটা একদিন পর পর দিবো। আর হাতে সময় থাকলে সেদিন অবশ্যই গল্পটা পাবেন। প্রতিদিন গল্প দিতে গেলে চাপের মধ্যে থাকতে হয়। ফলে গল্পটা সুন্দর করে তুলে ধরা সম্ভব হয় না

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here