#হৃদয়সিন্ধুর_পাড়ে💕
পর্ব:৯ [থ্রিলার+রোম্যান্টিক]
#কায়ানাত_আফরিন
.
—আই ওয়ান্ট টু কিস ইউর লিপস নিভ্র ভাই !
নিভ্রকে স্তব্ধ করতে মৌনির এরূপ মাতালকরা কন্ঠ যথেষ্ট। মৌনি পিটপিট করে তাকিয়ে আছে নিভ্রর দিকে ; নিভ্রর দিকে বললে ভুল হবে ; নিভ্রর নজরকাড়া ঠোঁটযুগলের দিকে। বাইরের ঝিরঝিরি বৃষ্টি রূপ নিয়েছে এবার প্রবল বৃষ্টিতে। তবে ঘরটিতে বিরাজ করতে উষ্ণতা। একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে নিভ্র। নির্লিপ্ত কন্ঠে বললো :
—এখন না। তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।
—কিন্ত কেন? আমি এখন কোনো কথা শুনবো না। আই ওয়ান্ট টু কিস ইউর লিপস।
—এখন না মৌনি। জ্বরের ঘোরে এরকম অনেকসময়ই হয়। এখনকার ভুলটাই আগামীসকালে তোমায় কষ্ট দেবে।
—আমি জ্বরের ঘোরে বলছি না নিভ্র ভাই ! জ্বর এলে মানুষ নিজের স্বাভাবিক জ্ঞান কখনোই হারিয়ে ফেলে না। প্লিজ ! না করবেন না?
.
মৌনির চোখে প্রবল আকুতি। যেনো নিভ্রর স্পর্শ না পেলে এখনই মরে যাবে সে। নিভ্র মৌনিকে কোনো প্রতিউত্তর না দিয়ে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করে মৌনির কপালে। এই ছোয়াতে কোনো অপবিত্রতা ছিলো না ; ছিলো শুধু একরাশ প্রশান্তি।
মৌনি চোখ বন্ধ করে নেয় নিজের। নিভ্র তা দেখে বললো…..
—আপাতত এটাই উপভোগ করো। আমার ঠোঁটের ছোয়া উপভোগ করার মতো সময় অনেক আছে। যখন উপযুক্ত সময় হবে তখন আমি নিজেই তোমায় আমার ভালোবাসার দুনিয়াতে নিয়ে যাবো। আমার কাছে এত আকুতি করতে হবে না।
—সত্যি তো?
—অবশ্যই। তবে তার আগে আমায় নিভ্র ভাই বলা বন্ধ করো।
—ঠিকাছে। তবে ডাক্তারসাহেব বলে ডাকবো।
মৌনির কন্ঠস্বর মিলিয়ে আসছে। চোখে ঘনিয়ে আসছে রাজ্যের ঘুম। নিভ্র মৌনির গায়ে কম্বল জরিয়ে দিয়ে উঠে আসতে চেয়েও পারলো না তা মৌনির জন্য। মৌনি একপ্রকার টেনেই তাকে কম্বলের ভেতর নিয়ে এসেছে। এই জ্বরের মধ্যে এই মেয়েটা এত শক্তি কোথা থেকে পেলো তা আল্লাহই জানে। নিভ্র কিছু বলতে যাবে , মৌনি তখন বললো……….
.
—আপনি আজকে এখান থেকে নড়বেন না। আমায় ভয় হয় যদি আপনি পালিয়ে যান তবে আমি এমন ডাক্তারসাহেব কোথায় খুঁজে পাবো ?
—আমার কাজ আছে এখন মৌনি ! বাচ্চামি করো না।
—কাজ পরে। আগে মৌনি , তারপর কাজ। আমি এখন ঘুমাবো আর আপনি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেবেন। ঠিকাছে?
.
একথা বলেই নিভ্রর বুকে মুখ গুঁজে দেয়। বেশ কিছুক্ষণ কোনো সারাশব্দ না পাওয়াতে নিভ্র বুঝে গেলো যে মৌনি এখন ঘুমের দেশে পাড়ি জমিয়েছে। একটা মুচকি হাসি ফুটিয়ে তুললো সে। তার একটা হাত বিচরণ করছে মৌনির চুলের ভাজে।নিভ্রর শীতল দেহে মৌনি যেন নিজের শরীরের উষ্ণতা ক্রমাগত ছড়িয়ে দিচ্ছে। নিভ্র এটা ভালোমতই জানে যে এই মেয়টা ওকে ভালোবাসে ; এককথায় প্রচন্ড রকমের ভালোবাসে। নিভ্র হয়তো নিজের আবেগ সম্পর্কে একটু উদাসীন ছিলো কিন্ত মৌনির আবেগকে প্রচন্ডভাবে মনে সে ধারন করে নিয়েছে। এই মেয়েটাই এখন এই একাকিত্ব দূর করার মানুষ নিভ্রর কাছে।
.
.
.
১৫.
ভোরের আগমনে মুখরিত সারা পরিবেশ। একটু ফুরফুরে হাওয়ার স্পর্শে এতেই মৌনি সজাগ হয়ে গেলো। ঘামে জামাটি ওর শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। শেষরাতে জ্বর ছাড়ার কারনেই এমন হলো। জ্বরটা কমে গেলেও মাথাটা বেশ ভারী হয়ে আছে। খাটের বামপাশে তাকায় সে। কিন্ত নিভ্রর কোনো অস্তিত্ব নেই। মৌনির যতটুকু মনে পড়ে নিভ্রর বুকে মুখ গুঁজেই ও ঘুমিয়ে পড়েছিলো। তবে এখন সে কোথায়?
.
তখনই বাথরুমের দরজা খুলে নিভ্র বেরিয়ে আসে। একহাতে গামছা নিয়ে সে চুল মুছতে ব্যস্ত। পরনে টিশার্টটি একটু ভিজে আছে। হয়তো শরীরটা ভালোমতো না মুছেই টিশার্টটি পড়ে নিয়েছে। মৌনি কিছুক্ষণ অপলকভাবে তাকিয়ে ছিলো নিভ্রর দিকে। গতকাল নিভ্রর মুখে ছিলো অনেক অস্থিরতা। সেই অস্থিরতাটা সকালে গোসলের মাধ্যমে যেন এক স্নিগ্ধতায় রূপ নিয়েছে।
নিভ্রর প্রশস্ত কপালে চুলগুলো বেশ সুন্দরভাবে পড়ে আছে। থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট পড়ার কারনে পায়ে বিন্দু বিন্দু পানি দেয়া খাচ্ছে। নিভ্রকে এতক্ষণ মৌনি যেনো চোখ দিয়ে গিলে খেতে ব্যস্ত। আড়চোখে নিভ্র সব দেখলেও কিছু বলে না। মৌনির কাছে বসে নিজের গামছাটি এগিয়ে দেয়।
মৌনি মিহি কন্ঠে বললো……
—কি হলো? গামছা দিয়ে কি করবো?
—আমার চুল মুছে দাও।
নিভ্রর নিঃসংকোচ আবেদন। কিন্ত মৌনির মাথা হ্যাং করে আছে। আমতা আমতা করে বলে ওঠলো…..
—আ-আমি আপনার ম-মাথা মুছে দ-দেবো?
—এখানে যেহেতু তুমিই আছো তাহলে তোমাকেই বলবো।
মৌনি কিছু বলছে না। আজ নিভ্রর ব্যবহারে একটু পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
—কি হলো ?
—হ্যাঁ। হ্যাঁ। মুছছি।
.
মৌনি উঠে দাঁড়ায়। নিভ্র খাটে পা ভাঁজ করে আরামসে বসে আছে। মৌনি কাপাকাপা হাতে আস্তে করে চুল মুছতে থাকলো নিভ্রর। নিভ্রর চুলগুলো খুবই সুন্দর। কালো চুলগুলোতে কেমন যেন চাকচিক্যতা আছে। চুল ভেদ করে মৌনির নাকে ভেসে আসলো শ্যাম্পুর মৃদু ঘ্রাণ। নিভ্রর নিঃশ্বাস ওর পেট বরাবর পড়াতে মৌনির শরীরে যেনো জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। এই ছেলেটা বোধহয় তাকে সত্যিই পাগল বানিয়ে ছাড়বে। নিভ্র চোখবন্ধ করে মৌনির স্পর্শ অনুভব করছে। প্রেয়সীর কাছে এমন স্পর্শ আসলেই ভালোলাগার মতন। এতে অনুভূতিটা আরও গভীর হয়।
.
—উহু মৌ। একটু সুন্দর করে মুছে দাওনা। কই একটু ভালোবেসে স্পর্শ করবে আর মেয়েটা কাপাকাপি শুরু করে দিয়েছে।
.
ফট করে সরে আসে মৌনি। নিঃশ্বাস যেন ওর ওঠানামা করছে নিভ্রর নেশামাখানো কন্ঠ শুনে। নিভ্রর হঠাৎ কি হলো?
—এ-এসব ক-কি বলছেন আপনি?
—কেন?প্রেমিকার কাছে যা বলতে হয় তাই বললাম।
—কে আপনার প্রেমিকা?
মৌনি নিভ্রর কথা কিছুই বুঝতে পারছে না। নিভ্র একটা প্রশস্ত হাসি দিয়ে ওর হাত টেনে খাটে বসিয়ে দেয়। চোখে মুখে রয়েছে অদ্ভুদ একটা হাসি।
,
—ওপপপস ! আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। তুমি তো আমার প্রেমিকা হবে ন। তুমি তো হবে তিতুন-নিতুনের মা ওরফে আমার বউ।……….গতরাতে তুমিই বলেছিলে।
—আমি বলেছিলাম?
—হ্যাঁ। আরও যে………
—আর কি বলেছি?
মৌনির চোখে মুখে ভয়ের ছাপ। নিভ্র এটা দেখে দুষ্টু একটা হাসি হাসে মৌনির অগোচরে। মৌনির দিকে এগোতে এগোতে বলে……
.
—শুধু বলেছো?আরও অনেএএএক কিছু করেছো।
—মমমানে? কি করেছি।
মৌনিও পিছাচ্ছে। একপর্যায়ে খাটের কোণের এসে পড়তেই সে থেমে যায়। নিভ্রর দৃষ্টিতে চোখ মেলানোর মতো সাহস ওর কাছে নেই।নিভ্র বললো……
.
—জানতে চাও?
—হ-হ্যাঁ।
—তুমি যে আমায় এতো ভালোবাসো গতরাতে না বললে আমি বুঝতেই পারতাম না। একমুহূর্তের জন্যও আমায় সরে যেতে দেওনি। ঘন্টার পর ঘন্টা বারান্দায় আমার বুকে মাথা দিয়ে আবোল-তাবোল বলছিলে। আমি সরে আসলেই খামচি। তারপর তো……….
.
নিভ্র দেখে মৌনির মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে। হয়তো আস্তে আস্তে মনে পড়ছে সব।
—আমায় কিস করার জন্য পাগলামি করছিলে।আমি বলেছি যে পরে দেবো। কিন্ত না , তুমি তো শুনছিলেই না।
.
—ক-কি বলছেন এসব?
—কি বললাম আবার? শোনো ডাক্তার হিসেবে আমি যেমনই হই না কেনো…….ছেলে হিসেবে আমি কিন্ত খুবই রোম্যান্টিক। নিজের সমস্ত ভালোবাসা প্রেয়সীর জন্য জমিয়ে রেখেছিলাম। এখন যেহেতু একটা প্রেয়সী পেয়ে গিয়েছি তাকে উজাড় করে ভালোবাসার দায়িত্বটাও আমার। এদিক দিয়ে আমার মৌনিপরীটারও চরম রূপ দেখেছি গতরাতে। কি বলো…….কিস করবা নাকি?
.
.
.
.
~চলবে~
ভুলক্রুটি ক্ষমাসুলভ চোখে দেখবেন।