হৃদয়সিন্ধুর_পাড়ে💕 পর্ব: ৩ [থ্রিলার+রোম্যান্টিক] #কায়ানাত_আফরিন

0
64

#হৃদয়সিন্ধুর_পাড়ে💕
পর্ব: ৩ [থ্রিলার+রোম্যান্টিক]
#কায়ানাত_আফরিন
৬.
সরু পথের এলোমেলো অঙ্গভঙ্গিতে মৌনি বারবার মিশে যাচ্ছে নিভ্রর সাথে। নিভ্রর উত্তাল নিঃশ্বাস বারবর স্পর্শ করছে মৌনির গলা আর মুখের এক অংশ। নিভ্র এমনভাবে মৌনির বাহু আগলে রেখেছে নিজের সাথে যেন ছেড়ে দিলেই সে হয়তো অটোরিক্সা থেকে পড়ে যাবে।আচ্ছা নিভ্রর এই ছোট ছোট কাজগুলো মৌনির এতটা ভালোলাগছে কেন? নিভ্র যখন নমনীয় দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকায় তোলপাড় করে ওঠে ওর হৃদয়। যেন এই অস্বিত্বটা আজও আল্লাহ বাঁচিয়ে রেখেছৈ নিভ্র নামের এই মানুষটার জন্য।
এদিকে নিভ্রর চার বন্ধু ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে এ দৃশ্য দেখে। নিভ্র কেয়ারিং ব্যাপারটা সম্পর্কে ওরা সবাই ভালোমতো অবগত তবে এই সদ্য যুবতী টাইপ মেয়েটার ক্ষেত্রে তা ভিন্ন রকম। নিভ্র সবই বলেছে ওদের মেয়েটার ব্যপারে। তবুও কৌতুহল যেন কিছুতেই তারা দমিয়ে রাখতে পারছে না।
.
মাথার উপর র তপ্ত রোদ নিয়ে অটোরিক্সাটি এগিয়ে চলছে ভিতরের দিকে যা এসে একটি ব সুপারি গাছের সামলে থামলো। মৌনির হঠাৎ কি হলো বুঝলোনা। আচমকাই ভয় চেপে বসলো মনের মধ্য। যতই হোক নিভ্র একজন অপরিচিত পুরুষ আর ও একটি মেয়ে। মৌনি না নিভ্র সম্পর্কে ভালোমতো অবগত আর না ওর বন্ধুগুলোর সাথে। যদি খারাপ কিছু করে বসে?
.
—কি হলো তোমার? আমরা এসে পড়েছি তো !
.
নিশুর কথা শুনে মৌনি নিশুর দিকে তাকায়। যদিও মেয়েটার নাম সে জানে না। কিন্ত অজান্তেই ওদের সাথে দুটো মেয়েকে থাকতে দেখে মনে একটা ভরসা তৈরি হলো। যতই হোক দুজন মেয়ে কখনোই অন্য একটি মেয়েকে বিপদে ফেলে আসতে পারবে না।
.
সোহান বিরক্ত হয় নিশুর কথা শুনে। কটাক্ষ গলায় ওকে বলে………
—তুই আমারে পাগল কস আর তুই নিজে কিরে? মেয়েটা পায়ে আঘাত পাইছে জানোস না?ঠিকমতো হাটতে পারবে?
.
নিশু একেবারে চুপ হয়ে যায়। নিভ্র সেসব উপেক্ষা করে আবারও কোলে তুলে নেয় মৌনিকে। উচুনিচু রাস্তা পেরিয়ে সামন্য ভিতরে ঢুকতেই মৌনি সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতে ব্যস্ত। গাছপালার ভীড়ে একতলার মধ্যে হালকা ছিমছাম একটি বাড়ি যা উচু ঢিবিতে অবস্থান করেছে বিধায় দূর থেকে ফার্মহাউসের মতো লাগবে। বাড়িটার চারিদিক সুপারি গাছ দিয়ে বেষ্টিত। মৌনি আশ্চর্য সুরে বলে,,,,,
.
—মাশাল্লাহ্ ! নিভ্র ভাই আপনাদের বাড়িটাতো বেশ চমৎকার?
নিভ্র আলতো হাসে মৌনির কথা শুনে। বোঝা যাচ্ছে মেয়েটার এখানে ভালোলেগেছে। আসলে জায়গাটিই এমন। কোনো ডিপ্রেসড মানুষ যদি হালকা রিলেক্সের জন্য নিভ্রদের বাড়িতে আসে তবে তারা সবাই নিজের টেনশন ভুলে এই সৌন্দর্যে মাতোয়ারা হয়ে পড়বে।
.
তুর্য বাড়ির তালাটি খুলে দিতেই ভিতরে প্রবেশ করে সবাই। নিভ্র আসবে বলে আগেই তুর্যকে বলেছিলো কাউকে দিয়ে পরিষ্কার করিয়ে রাখতে। বসার ঘরে রয়েছে কিছুসংখ্যক সোফা, টেবিল আর দেয়াল বিস্তৃত একটি পরিবারের ছবি। সেখানে নিভ্রকে সহ একজন বৃদ্ধবয়স্ক লোক আর অপরূপা সুন্দরী একটি মেয়েকে দেখা যাচ্ছে। আরও দেখা যাচ্ছে দুজনের বাল্যকালীন ছবির সাথে একজন মহিলার ছবি। মৌনির একপ্রকার মনে হলো ওই মহিলার মতই হয়েছে নিভ্রর চেহারটি।
নিভ্র ওকে বারান্দার পাশের একটি বড় ঘরে নিয়ে আসে। রুমটা আসলেই খুব সুন্দর। এক দেয়ালজুড়ে বিস্তৃত রয়েছে হরেক রকমের বাংলা আর ইংরেজী সাহিত্যের বই। খাটের পাশে দেয়ালে বড় করে টাঙানো আছে সেই মেয়েটির হাসিমাখা ছবি।
মৌনিকে খাটে নামিয়েই নিভ্র ওর পাশে বসে। কিন্ত মৌনির যেন সেদিকে কোনো খেয়াল নেই। নিভ্র ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে ছবিগুলোর দিকে তাকায়।
.
—আমার বড় বোনের ছবি এগুলো।
নিভ্রর কথা শুনে মৌনি তাকায় ওর দিকে। সে নির্লিপ্তভাবে বসে থাকলেও চোখে-মুখে প্রকাশ পাচ্ছে একপ্রকার মলিনতার ছাপ। নিভ্র আবারও বলে………
.
—মা কে হারিয়ে ফেলেছিলাম অল্প বয়সেই। তারপর আপু আর বাবাই ছিলো আমার পুরো পৃথিবী। সে অনেক আগের কথা। দু বছর আগেই আপু আর বাবা রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়।
.
থেমে যায় নিভ্র। স্পষ্টভাষী মানুষের মতো সে কথাগুলো বললো। চোখে-মুখে প্রকাশ করছে সে যেন অনুভূতিশূণ্য। মৌনি এ ব্যাপারে বিনিময়ে কিছুই বলে না। কিছুক্ষণ নীরবতা কাটিয়ে মৌনি বলে ওঠে………..
.
—আমি একটু ফ্রেস হতে চেয়েছিলাম। গতকাল থেকে একই জামা পড়ে আছি; কেমন যেন ময়লা ময়লা লাগছে। আপনি কি ওই আপুদের ডাকতে পারবেন?একটু হেল্পের প্রয়োজন ছিলো।
.
—আচ্ছা তুমি বসো। আমি ডেকে দিচ্ছি…………
.
.
.
৭.
মৌনির কাছে নিভ্রকে দুর্দান্ত একটি ছেলে মনে হয়। ওর প্রতিটা কাজকরহমেই যেন চিৎকার দিয়ে বলছে…….”নিভ্র একটা চমৎকার ছেলে”। ছেলেটার কথার বাচনভঙ্গি, কখনও কখনও গম্ভীরতা ; আবার কখনও কখনও স্বতস্ফূর্ত হাসি সব মিলিয়ে ছেলেটা যেন আবেগ-অনুভূতির বাহার। কখন কোন পরিস্থিতিতে কি রিয়্যাক্ট করতে হবে সবই ওর কাছে যেন দুধভাত টাইপের। সোফার এক কোণে গুটিশুটি মেরে আড়চোখে বারবার আড়চোখে নিভ্রকে দেখছে মৌনি।
বাকি সবাই নিজ আলাপনে ব্যস্ত। সবাই মূলত কথা বলছে ওদের ভবিষ্যৎ লাইফপার্টনার কেমন চায় এ নিয়ে।
.
—আমি একটা হাবাগোবা ছেলেকে বিয়ে করতে চাই। আমি যাই করিনা কেন ; কিছুই বলতে পারবে না। সারাদিন আমার আঙ্গুলের ওপর নাচবে। (নিশু)
.
—কোনো নাচনেওয়ালা বিয়ে করবি নাকি? আমার কথা শোন…………একটা কসমেটিকওয়ালারে বিয়ে কর। তো যা কসমেটিক লাগে রে বইন ! বাপ রে বাপ , আমি আমার ব্র্যান্ডেড আন্ডারপ্যান্ট কিনতেও এর থেকে কম খরচ করি। (তুর্য)
.
—তোরে চুম্মা দিতে মন চাইতাসে দোস্ত। এক্কেবারে ঠিক কথা বলছোস……(সোহান)
.
—চুপ কর শালা। কিছু হলেই খালি জড়াজড়ি-চুম্মাচুম্মি করতে মন চায়। আমি কি মাইয়্যা নাকি ! শালা গে কোথাকার। (তুর্য)
.
—ওই কুত্তা ! কোন সাহসে তুই আমারে গে কইলি? (সোহান)
.
—তো কি বলবো? একটা উচিত কথা কইলেই আমারে চুম্মা দিতে মন চায় তোর। ক’দিন পর তো বলবি যে আমার সাথে বাসর করবি।
.
মৌনি শুধু পারছে না হো হো করে হাসতে। কিন্ত এদিকে নিভ্র তো হেসে কুপোকাত। মৌনি আবার তাকায় নিভ্রর দিকে। ছেলেটার প্রাণখোলা হাসি দেখে ওর খুব ভালোলাগছে। প্রজেক্ট আর ক্রাইমের চাপে একটা লম্বা সময় জীবনটা উপভোগ করেনি সে। লিজা এবার বলে ওঠে………
.
—নিভ্র? তুই কি টাইপ পার্টনার চাস।
.
সবাই এবার নিভ্রর দিকে দৃষ্টিপাত করে। নিভ্র কফির কাপে একটা চুমুক দিয়ে প্রতিউত্তরে বলে…………
.
—তেমন কিছু এখনও ভাবিনি।
.
—বয়স তো ২৮ হয়ে এলো। বুড়া হয়ে বিয়ে করবি নাকি চিরকুমার থাকার প্ল্যান আছে?
.
—উহু……….বিয়ে তো করবোই। এই পৃথিবীতে কেউ একা থাকতে পারে না।আর প্রত্যেরকটা ছেলের লাইফেই একজন মেয়ে প্রয়োজন হয়। ছোটবেলায় থাকে মা…….কিশোর বয়সে বোন………..যৌবনকালে স্ত্রী আর বার্ধক্যে স্ত্রী অথবা সন্তান। নারী ছাড়া প্রত্যকটা ছেলেই অগোছালো যতই সে নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করুক না কেন ! আমার গোছালো লাইফটা আরও গোছালো করার জন্য একজনকে তো আমার চাই।
.
—কবে আসবে সে?
.
—হয়তো এসে পড়েছে! .
.
নিভ্রর কথায় মৌনির স্বাভাবিক বুদ্ধি যেন হারিয়ে গেলো। নিভ্রর সাথে কোনো মেয়ের কথা ভাবতেই শরীরটা গুলিয়ে যাচ্ছে ওর। এ কি মায়ায় ফেলে দিয়েছে নিভ্র ওকে?মাথাটা এক হাত দিয়ে চেপে ধরতেই নিভ্র তা দেখে সাথে সাথে মৌনির কাছে যায় সে।এহেন কাজে সবাই হতভম্ব হয়ে গেলো। নিভ্র ওর ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বলে……
.
—কি হলো? মাথা ব্যথা করছে?
.
—হুম……..কিন্ত হঠাৎ কেন হলো ? বুঝলামনা।
.
নিভ্র বুঝতে পারলো আবারও কোনো খারাপ স্ট্রেস নিয়েছে সে। মৌনিকে নরম সুরে তাই বললো……….
.
—-কিছুক্ষণ রেস্ট নাও তুমি। তাছাড়া রাত হয়ে গিয়েছে। ঘুমিয়ে পড়ো। হাঁটতে পারবে………?
.
—হ্যাঁ। তবে…..
.
—আচ্ছা আমি তোমার হাত ধরছি।
.
নিভ্র হাত ধরেই আস্তে আস্তে রুমে আসে সে। বাম পায়ের গোড়ালিতে সামান্য চাপ লাগলেই অনেক ব্যথা হয় মৌনির। তবুও নিভ্রকে তা বুঝতে দেয়নি। আজ হঠাৎ ওর বাবার কথা খুব মনে পড়ছে। হয়তো এসময় ওর বাবা-মাও ঠিক এ কাজ করতো। কিন্ত সেদিকে নিভ্র নিতান্তই অন্য মানুষ।
মৌনি খাটে শুয়ে পড়তেই নিভ্র ওর গায়ে কম্বল জরিয়ে দেয়। মৌনি ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। নিভ্র মায়াবী সুরে ওকে বলে…….
.
—তুমি ঘুমিয়ে পড়ো। লিজাও তোমার সাথে ঘুমাবে। তাই ভয় পেয়ো না। Good night,,,,,,,
.
নিভ্র উঠে চলে যেতে নিলেই হাতে টান অনুভব করে। মৌনি ওর হাত চেপে আছে। কাতর স্বরে বলে…….
.
—আমি সুস্থ হয়ে যাবো তো?যদি ওরা আবার আমায় খুঁজে পায়?
.
নিভ্র স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে এই মিষ্টি মুখের ভয়টা যা একেবারে বেমাননসই। নিভ্র এবার হাত চেপে ধরে মৌনির। মিহি কন্ঠে বলে………
.
—তোমার শুভাকাঙ্খী হিসেবে থাকবো সবসময়। থাকবো তোমার হৃদয়ের সিন্ধু পাড় হিসেবে।❤️
.
.
.
.
.
~চলবে
রাতে আরও একটি পার্ট দেয়ার চেষ্টা করবো।গল্পটা কেমন লাগছে আপনাদের কিছু বুঝতে পারছি না । গুটিকয়েক গঠনমূলক মন্তব্য ছাড়া সবগুলো nice, nxt , n ইত্যাদিতে ভরপুর। তবে কি ভালোলাগছে না?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here