#হৃদয়সিন্ধুর_পাড়ে💕
পর্ব: ৪ [থ্রিলার+রোম্যান্টিক]
#কায়ানাত_আফরিন
.
৮.মাঝরাতে মৌনি চিৎকার দিতেই সাথে সাথে উঠে বসে লিজা আর নিশু। মৌনি চোখ বন্ধ করে অনবরত ছটফট করে চলছে। সাথে রয়েছে বিকট চিৎকার। বাইরে এখন তুমুল বেগে বৃষ্টি বইছে। মাঝে মাঝে বাজ পড়ার শব্দে তান্ডব শুরু করেছে সারা পরিবেশ। এমন একটা পরিস্থিতে হঠাৎ মৌনির আর্তনাদ কম ভয়ের কিছু না।নিশু শঙ্কিত হয়ে বললো…….
.
—মেয়েটার কি হলো রে?
.
লিজারও চোখমুখ শুকিয়ে গিয়েছে। নিজের অধরযুগল হালকা নাড়িয়ে বলে ওঠে.
—জলদি নিভ্রকে ডাক।
.
সাথে সাথেই এসে পড়ে নিভ্র। নিশুর ডাকে নিভ্রর পিছুপিছু সোহান আর তুর্যও এসে পড়েছে। মেয়েটার রীতিমতো ভয়াবহ অবস্থা। পাগলের মতো তাকের বইগুলো এদিক সেদিক ছুঁড়ে মারছে। নিজেকেই নিজে আঘাত করে চলছে। মৌনির এই ভয়াবহ দৃশ্য দেখে সবাই নিভ্রর পিছে দাঁড়ায়। নিভ্র কিছুটা শঙ্কা নিয়েই তীব্র দৃষ্টিতে তাকায় মৌনির দিকে। কপাল ভাঁজ করে ঠোঁট চেপে কিছু একটা ভাবছে সে। তুর্য নিভ্রকে বললো…..
.
—নিভ্র দেখ না ওর কি হয়েছে?
—দেখছি…….
নিভ্র এগিয়ে এসে মৌনির সামনে দাঁড়ায়। শান্ত করার জন্য চেপে ধরে মৌনির দুই হাত। মৌনি তখনও ছটফট করছে। ওর কামিজের অবস্থাও খুব করুন।গলায় ঘাড়ে নিজেই নিজেকে আঁচড় দিয়েছে। আংশিক জামাটি ছিড়ে ফেলেছে। নিভ্র সেদিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নেয়। একজন সাইক্রেটিস্ট সে। নিজেকে দুর্বল করলে চলেব না। একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে মৌনির উদ্দেশ্যে শীতল গলায় সে বললো………
.
—আমার চোখের দিকে তাকাও মৌনি…….look at my eyes !
.
মৌনি নিমিষেই শান্ত হয়ে যায়। অপলকভাবে ডুবে পড়ে নিভ্র সেই মায়াবী চোখযুগলে। নিভ্রর দৃষ্টি তীক্ষ্ণসম্পন্ন। তবে কালচে বাদামী চোখ জানান দিচ্ছে অদ্ভুদ মস্তিষ্কের খেলা। মৌনি এখন নিজের মধ্যে নেই। তলিয়ে যাচ্ছে নিভ্রর সেই চোখের ভাষাতে।
বর্ষণমুখর রাত। ক্ষণে ক্ষণে বিদ্যুতের ঝলকানিতে আলো ছেয়ে পড়ছে ঘরের মাঝে । সেই আলোতেই মৌনি দেখতে পারছে নিভ্রর মুখমন্ডল। শুষ্ক ঠোঁটযুগলে ফুটে উঠেছে একরাশ স্নিগন্তা। ধীরে ধীরে সে নিজের জ্ঞান ফিরে পেতে শুরু করে। আচমকাই নিভ্রর বুকের সাথে মিশে পাগলের মতো কাদতে থাকে মৌনি।
.
নিভ্রর বুকটা কেউ যেন ভেঙ্গে চুরমার করে দিচ্ছে। মানসিক রোগের চিকিৎসক হলেও মেয়েটার অশ্রুসিক্ত নয়নের কারনে নিজেকেই মানসিক রোগী মনে হচ্ছে ওর। মৌনি কান্নাজরিত সুরে বলে ওঠে……..
.
—নিভ্র ভাই? আমি দ-দেখেছি ওরা আমায় ইনজেকশন দিয়েছে। আমি পাগলের মতো দৌড়াচ্ছিলাম কিন্ত আমি ছাড়া পায়নি ওদের হাত থেকে। ও-ওরা বলেছে আ-আমি পেনড্রাইভ না দিলে আমার সাথে আমাদের বাকি সব বন্ধুদের মেরে ফেলবে। কিন্ত তার আগে আমায় পতিতালয়ে………..
.
এতটুকু বলে আবারও হু হু করে কেদে যাচ্ছে মৌনি। নিভ্র ওকে জাপ্টে ধরে বারবার শান্ত করার ব্যর্থ প্রয়াস চালাচ্ছে। নমনীয় কন্ঠে বলে…..
.
—তোমার স্বপ্ন এগুলো মৌনি ! আমি আছি তো ! আমি থাকলে কেউ তোমার ক্ষতি করবে না। হুসসসস……..শান্ত হও।
.
সবাই দেখে যাচ্ছে মৌনির প্রতি নিভ্রর এই কেয়ারিং গুলো। সদ্য যুবতীতে পড়া এই মেয়েটাকে বেশ গভীরভাবেই নিভ্র ধারন করে নিয়েছে।
.
—আমায় ছেড়ে যাবেন না তো নিভ্র ভাই?
.
—মোটেও না।
.
—সত্যি তো? আপনি যদি চলে যান তবে ওরা তো……..
.
—উহ ! আমি বলেছি না এসব বলবে না। কার এত সাহস এই নিভ্রর কাছ থেকে এই মৌনিপরীকে নিয়ে যাবে?
.
মৌনির কোনো সাড়াশব্দ পায়না নিভ্র । সে চুপচাপ নিভ্রর বুকে মিশে শ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করেছে। চোখ দুটোতে ভর করেছে হাজারো রাজ্যের ঘুম। নিভ্র মৌনির ঘন চুলে হাত বুলিয়ে দেয়।মিহি কন্ঠে বলতে থাকে………
.
—অনেক হয়েছে কান্নাকাটি। এখন চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ো। মাথা ভার ভার ভাবটা কেটে যাবে।
.
মৌনিকে খাটে শুয়িয়ে দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই ঘুমে তলিয়ে পড়ে সে। নিভ্র নিজের হাতটা আস্তে করে ওর হাতের বন্ধন থেকে সরিয়ে উঠে যায়। সবার হতভম্ব দৃষ্টি বুঝে ইশারায় বলে বাইরে আসতে।
.
.
বৃষ্টির সাথে ঝড়ো হাওয়ার পরিমাণটা প্রবল। দূরে কোথাও গাছপালা ভেঙ্গে পড়ার শব্দ হয়েছে। দুহাত দিয়ে পাজেল বক্স নিয়ে নিভ্র খেলা করতে ব্যস্ত। তবে তার দৃষ্টি অন্যদিকে। কিছু একটা ভাবছে সে তাও খুব গভীরভাবে। নিভ্রর আশেপাশেই বসে আছে সোহান-নিশু-তুর্য আর লিজা। নীরবতা কাটাতে লিজা বললো…..
.
—মেয়েটার কি হয়েছিলো রে?
.
নিভ্র পাজেলটা একহাতে নেয়। চোখ তুলে তাকায় লিজার দিকে।তুর্য বললো….
—আমার মনে হয় মেয়েটা স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়েছে।
.
—উহু । তার থেকেও কারনটা বেশি ভয়ঙ্কর।
নিভ্রর দিকে মনোযোগ দেয় সবাই। সোহান জিজ্ঞেস করলো……”মানে”
.
পাজেল বক্সের প্রতিটা কালার মিলে গিয়েছে। নিভ্র সেটা টেবিলে ছুড়ে মারে। কঠোর চোখে তাকায় সবার দিকে। নিজের শুষ্ক ঠোঁটজোড়া হালকা জিহবা দিয়ে ভিজিয়ে বলে……
.
—আমার লাইফের অন্যতম কিছু ক্রিটিক্যাল কেসের মধ্যে এটা হবে একটা। ওর মানসিক অবস্থা ভয়ঙ্কর থেকেও ভয়ঙ্কর।
.
—কারন?
.
—She has a problem called ”Overnight Disorder”। মানুষের অতীতের কিছু ভয়ঙ্কর স্মৃতি যা মনে থাকে না সেগুলোই স্বপ্ন আকারে বারবার ঘুমের মধ্যে আসে তাও আবার গভীররাতে। মৌনি যেগুলো বলেছিলো এরকম কিছু একটা হয়েছে ওর সাথে যা ওর মনে নি। তাই আমি স্বপ্ন বলতেই ও বিশ্বাস করে নেয়। এমন রোগী বেশিরভাগ ড্রাগ এডিক্টটের মতো আচরন করে , নিজেকে আঘাত দেয়। আর বারবার স্বপ্ন দেখে যে কেউ ওর সাথে খারাপ কিছু করছে। রাত্রে যৌন চাহিদাটিও আরও তীব্র হয়ে ওঠে……(সূত্র: Google)
তবে এই রোগী এশিয়াতে খুবই কম। ইউরোপ আর আফ্রিকায় এই রোগির সংখ্যা বেশি। মেবি ওকে কোনো ডোজ দেয়া হয়েছে অনেক আগেই…….
.
—সেই ইনজেকশন না তো? (লিজা)
.
—হতেও পারে।
.
—তাহলে কি করবি এখন? (নিশু)
.
—আমায় এটা নিয়ে বেশ কিছু রিসার্চ করতে হবে। তারপর বলতে পারবো। এই কেস আমি প্রথম পেলাম।
.
—মেয়েটার জন্য মায়া লাগে। এমনিতেও জানের ভয় আছে আবার mentally sick…..(তুর্য)
.
—What mentally sick ! ওর জাস্ট overnight disorder………মৌনির কিছুই হবে না। আমি থাকতে তা হতে দেবো না। next time তোর মুখে এমন কথা যেন না শুনি।
.
নিভ্রর ধমক খেয়ে তুর্য চুপসে যায়। মৌনি তো সত্যিই মেন্টালি সিক। তবে নিভ্রর এমন ক্ষেপে যাওয়াটা ওর মাথার ওপর দিয়ে গেলো। নিভ্র একপা দিয়ে সামনের টেবিলটা লাথি দিয়ে চলে যায় সেখান থেকে। মৌনির ব্যাপারে কোনো negative কথাই যেন সহ্য করতে পারবে না সে। মৌনির রুমে একবার উঁকি দিয়ে দেখে ও ক্লান্তিমাখা ঘুমে বিভোর। ওর গায়ে একটা পাতলা কম্বল বিছিয়ে দিতেই তা গভীরভাবে আগলে নেয়। নিভ্র ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে ওঠে…………
.
—তোমায় আমি সুস্থ করবো মৌনি। যা করার প্রয়োজন সবই করবো। তবে তোমাকে হারাতে দেবো না।❤
.
.
.
.
~চলবে…….ইনশাল্লাহ
বোনাস পার্ট দিলাম। পর্বটি ভালোলাগবে ইনশাল্লাহ।