হৃদয়সিন্ধুর_পাড়ে💕 পর্ব:১০ [থ্রিলার+রোম্যান্টিক] #কায়ানাত_আফরিন

0
68

#হৃদয়সিন্ধুর_পাড়ে💕
পর্ব:১০ [থ্রিলার+রোম্যান্টিক]
#কায়ানাত_আফরিন
.
–শোনো ডাক্তার হিসেবে আমি যেমনই হই না কেনো…….ছেলে হিসেবে আমি কিন্ত খুবই রোম্যান্টিক। নিজের সমস্ত ভালোবাসা প্রেয়সীর জন্য জমিয়ে রেখেছিলাম। এখন যেহেতু একটা প্রেয়সী পেয়ে গিয়েছি তাকে উজাড় করে ভালোবাসার দায়িত্বটাও আমার। কি বলো…….কিস করবা নাকি?
.
নিভ্রর শেষ কথা শুনে কান গরম হয়ে গিয়েছে মৌনির। ক্রমশ যেন অস্থিরতা বেড়েই চলছে। নিভ্রর চোখে-মুখে আছে একটা দুষ্টু হাসি যা দেখে মৌনির শ্বাস রুদ্ধ হওয়ার মতো উপক্রম। মৌনি কোনো কিছু না ভেবে নিভ্রর বুকে ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। আমতা আমতা করে বলে ওঠে………..
—আ-আমি এখন ব-বাথরুমে যাবো।
নিভ্রকে কোনো কথা বলার সময় না দিয়ে মৌনি তৎক্ষণাৎ বাথরুমে চলে যায়। নিভ্র খাটে চিৎ হয়ে শুয়ে সশব্দে হেসে চলছে। অপলক দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে সদ্য ঘুম থেকে ওঠা মৌনির মায়াবী মুখটার দিকে। বাথরুমের দরজাটি লাগানোর আগে মৌনি একবার মুখটা বের করে নিভ্রর দিকে তাকালো। নিভ্র খাটে শুয়ে একহাত মাথায় ভর দিয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। ঠোঁটে ঝুলিয়ে রেখেছে একটা মিষ্টি হাসি। নিভ্র চোখ মারতেই মৌনি খপ করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়।
.
দরজায় হেলান দিয়ে মৌনি ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলছে। কিছুক্ষণ আগের কথা ভেবে উঠতেই যেন শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে ওর। এটা কোন নিভ্রকে দেখলো ? তবে নিভ্রও ওকে ভালোবাসে ! এটা ভাবতেই মোনির ঠোঁটে ফুটে এক চিলতে প্রশান্তির হাসি। জীবন কতটাই অদ্ভুদ তাই না?কখন কার সাথে কি হয়ে যায় কেউ টেরই পায় না। ওদের পরিচয়টা হয়েছিলো বেশ কাকতলীয়ভাবে। এককথায় নিভ্র ওর জীবনে দেবদূত হয়ে এসেছিলো। আর সেই দেবদূতের প্রেমের জালেই ও আটকে যায়। হৃদয় জানান দেয় নতুন কিছু অনুভূতির।
.
.
.
১৬.
রোজকার মত আজও সূর্য দেখাচ্ছে নিজের রোদের তেজ। চারিদিকে ভ্যাপসা গরমের আবেগহীন রাজত্ব। নিষ্প্রভ এই সময়টিতে নিভ্রর সাথে সময় কাটাতে চেয়েছিলো মৌনি কিন্ত নিভ্র কিছু মেডিক্যাল রিপোর্টস নিয়ে তড়িঘড়ি করে কোথাও যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। প্রত্যেকটা রিপোর্টসই যে মৌনির এ নিয়ে ওর বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। মৌনি চোখে-মুখে উদ্বিগ্নতা রেখে অস্ফুটস্বরে বললো………….
.
—আমার রোগটা কি খুবই ভয়ঙ্কর?
নিভ্র নির্লিপ্ত চোখে তাকায় মৌনির দিকে। মৌনির মুখমন্ডলে স্পষ্ট কৌতুহল দেখা যাচ্ছে। নিভ্র ওর হাত ধরে ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পিনপন নীরবতা কেটে যাওয়ার পর নিভ্র বলে………
—দেখো মৌনি। এখন আমি যা বলবো প্রত্যেকটা কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে। তোমার একটা ভুল ধারনা ছিলো যে তোমার মানসিক রোগের কথা আমি তোমার থেকে লুকিয়েছি। ব্যাপারটা তা না। আমি সিউর ছিলাম না যে তোমার ”Overnight disorder” ছিলো-কি না ! প্রথম রাতেই তোমার লক্ষণগুলো দেখে আমার মনে সন্দেহ তৈরি হয়। কোনো তিক্ত অতীত গহীন রাতে স্বপ্ন হিসেবে আসা , প্রচুর আবেগী মন , মারাত্নক যৌন চাহিদা , অস্থিরতা , মানুষের ওপর আঘাত করে বসা এসব কিছুই এর স্বাভাবিক লক্ষণ। এমনকি এটাও হতে পারে যে আমার প্রতি তোমার যে অনুভূতি কাজ করছে তা এই রোগের কারনেই হয়তো।
.
নিভ্রর কাছ থেকে মৌনি নিজের হাত সরিয়ে নেয়। অবাক হয়ে বলে…..
—এসব কি বলছেন?ন-ন-না। আমার অনুভূতি কখনই কোনো রোগের মধ্যে পড়তে পারে না।
—মানসিক রোগ খুবই ভয়ঙ্কর মৌনি! তোমার হৃদয় শরীর সবকিছু আবদ্ধ করে নিতে পারবে এই মস্তিষ্ক; এমনকি তোমার অনুভূতিকেও। নাহলে তুমিই বলো ;তুনি একজন Mass communication এর student আর teenage এর মেয়েদের মতো তুমি আমাকে ট্রিট করো। আবার গতরাতে তো ছুড়ি নিয়ে আমায় আঘাতও করতে চেয়েছিলে……..
.
মৌনির চোখদুটো ছলছল করছে কিন্ত নিভ্রর দৃষ্টি তীক্ষ্ণ। মৌনিকে সুস্থ করতে আবেগ নয় ; একজন সাইক্রেটিস্ট হিসেবে ওর চিকিৎসা করতে হবে।
—আমি কখনও কথা লুকোতে পছন্দ করি না মৌনি ; তাই সরাসরি তোমায় সবকিছু বলাম। আর তুমি ভয় পাবে না ; তোমায় সুস্থ করার দায়িত্ব আমার।
—আমিই কেন এ রোগের শিকার হলাম নিভ্র ভাই?
.
মৌনি কথা বলতে পারছে না। নিভ্রকে হারানোর ভয়টা আবারও জেঁকে বসেছে ওর মনে। নিভ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে । তারপর প্রতিউত্তরে বললো…..
—তোমার ডোজ দেওয়া হয়েছিলো এটার। যাে তুমি ”Overnight Disorder” এর রোগী হয়ে ধীরে ধীরে তোমার মেমরি হারিয়ে ফেলো। আমার মনে হয় তোমায় যারা মারতে চেয়েছে তারাই এ কাজ করেছে পেনড্রাইভটা কোনোভাবে তাদের হস্তক্ষেপে রাখার জন্য।
.
—আমি কি তবে আপনাকেও ভুলে যাবো?
—ভুলতেও পারো।
মৌনির কান্নার বাধ যেন ভেঙ্গে যাচ্ছে। ওকে আবারও অস্থির হতে দেখে নিভ্র আর কিছু বলে না। আপাতত এতটুকু ওকে জানতেই হবে। রোগী তার রোগ সম্পর্কে না জানলে কখনোই ঠিক হতে পারবে না। নিভ্রর বুক ফেটে যাচ্ছে ভেতরে ভেতরে ওর কষ্ট দেখে কিন্ত মৌনির সামনে সে নির্বিকার।
—আপনি এখন কোথায় যাচ্ছেন।
—এখানকার একটা রিসার্চ ল্যাবে। চিন্তা নেই একঘন্টার মধ্যেই এসে পড়বো। ইমারজেন্সি না হলে কখনোই যেতাম না কিন্ত তোমার সুস্থতার জন্য হলেও আমায় যেতে হবে। খাবার সময়মতো খেয়ে নিও মৌনি।
.
একথা বলেই নিভ্র চলে যায়। এই পুরো বাসাটিতে মৌনি এখন একা। চারিদিকে গরমের লীলাখেলায় মৌনি ক্রমশ যেন হাপিয়ে উপেছে। পানির তেষ্টাও পেয়েছে প্রচুর। মৌনির হঠাৎ মনে পড়লো যে নিভ্রর ইমেইল দিয়ে গতকাল যে প্রফেসরকে পেনড্রাইভের ডেটাবেজটা পাঠিয়েছিলো সেটা কি আদৌ গিয়েছে?
নিভ্রর ল্যাপটপটা সাথে সাথেই গিয়ে অন করে মৌনি। সব ডেটাবেজ এর 50% ঠিকঠাকমতো গিয়েছে দেখে একটা প্রশান্তির হাসি হাসে। এবার আর কোনো ভয় নেই। একবার ওই জহির শেখ সহ পুরো গুষ্ঠিকে ফাঁসির পাল্লায় ফেলতে পারলেই কাজ হয়ে যাবে। শীঘ্রই ঢাকায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে।
মৌনি এসব ভাবতেই তাচ্ছিল্যের ভাব নেয়। কারন ওই জহির শেখের ছেলে রিদান শেখের জন্যই ওর জীবন আজ এখানে দাঁড়িয়েছে। মৌনি হলো প্রচন্ড আত্নবিশ্বাসী একটি মেয়ে। জীবনের সব শখ আবেগ ভুলে নিজের পড়ালেখা আর ক্যারিয়্যারকেই সবার উপরে দেখতো। মেয়ে হিসেবেও ছিলো প্রচুর সাহসী। কিন্ত ও অনুভব করতে পারছে ওর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো পরিবর্তন হয়ে আসছে। ভয়, প্রেম, ভালোবাসা এসব কিছুর মোহে পড়ে ভুলে যাচ্ছে নিজের লক্ষ্যকে। এদিক দিয়ে আবার রয়েছে নিভ্র। এককথায় সবকিছু কেমন যেন প্রহেলিকার মতো জালের আবরণ ঘিরে ধরেছে তাকে।
.
.
.
আচমকা থাই গ্লাসভাঙ্গার ঝনঝন শব্দে তান্ডব তৈরি করলো এই নীরব পরিবেশ। ভাবনার জালে আটকে থাকা মৌনিও যেন বাস্তবে ফিরে এসেছে। কিসের শব্দ ছিলো এটা?তখনই ভাঙ্গা বড় থাই গ্লাসের স্থান দিয়ে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ে বেশ কয়েকজন লোক। হাতে গান দেখতেই মৌনির শরীরে হিম ধরে গিয়েছে। এইসব জিনিস আগে ওর কাছে স্বাভাবিক লাগলেও এখন প্রচন্ড ভয় পায় মৌনি। নিজের শরীরের ভারসাম্য যেন হারিয়ে গিয়েছে। কাপাকাপা স্বরে বলে ওঠে……..
.
—ক-ক-কে ত-তোমরা?
—চট্টগ্রামের হাওয়া খেয়ে আমাদের ভুলে গেলে নাকি মৌনি?তোমার যমরাজ এসে পড়েছে।
.
পেছন থেকে কারও পরিচিত কন্ঠ পেতেই মৌনি স্তব্ধ হয়ে গেলো। ভয়ে গায়ে ওর কাটা দিয়ে উঠেছে। পেছনে ঘুরে সে যাকে দেখলো মৌনি ভাবতেও পারেনি যে সে এখানেও এসে পড়বে। দু কদম পিছিয়ে গেলো সে। আগন্তুকটি আর কেউ না স্বয়ং রিদান।ডাইনিং টেবিলে চেয়ারে বসে পায়ের ওপর পা তুলে আপেল চিরিয়ে যাচ্ছে। বাম হাতের গানটি দিয়ে কপাল স্লাইড করতে ব্যস্ত সে।
মৌনির প্রচুর ভয় হচ্ছে রিদানকে দেখে। এককথায় অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেছে।”যমরাজ” কথাটা শুনেই সে বুঝে গিয়েছিলো ব্যাক্তিটা রিদান।
মৌনিকে এতটা ভয় পেতে দেখে রিদান তৃপ্তির হাসি হাসে। চেয়ার থেকে উঠে সজোরে ওর কাছে গিয়ে কষে একটা থাপ্পড় মারতেই মৌনি ফ্লোরে পড়ে যায়। মৌনি কি করবে বুঝতে পারলো না। রিদানকে দেখে ওর স্নায়ু কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। তবুও অনুনয়ের স্বরে বললো…..
.
—র-রিদান !আমায় ছ-ছেড়ে দ-দিন প্লিজ।
—পেনড্রাইভ কোথায়?
মৌনি নিশ্চুপ।
—আমি জানতাম তুমি বলবে না। এখন আমার আর কিছুই করার নাই বেবি! (মৌনির গাল চেপে ধরে) তিলে তিলে শেষ করবো আমি তোমায়।
একথা বলেই রিদান ওর মুখের সামনে একটা স্প্রে করতেই চোখ দুটো ভারী হয়ে আসে ওর। অজান্তেই নিভ্রকে ওর মন কল্পনা করে চলছে কিন্ত বাস্তবতাটি ভিন্ন। তবে কি নিভ্র ওকে বাঁচাতে আসবে না আগেরবারের মতো………..
.
.
.
.
~চলবে~
আজকে লিখতেই বসেছি সাড়ে সাতটা বাজে। তাই পোস্ট করতে দেরি হয়ে গেলো।

part 9 https://www.facebook.com/kayanaAfrin/posts/209871657601206

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here