#হৃদয়সিন্ধুর_পাড়ে💕
পর্ব:১১ [থ্রিলার+রোম্যান্টিক]
#কায়ানাত_আফরিন
.
১৭.মৃদু আলোর হাতছানিতে মৌনির চোখ খুলছে ধীরে ধীরে। আফসোস! হাত পা বাঁধা অবস্থায় পড়ে আছে বিধায় ঠিকমতো নড়াচড়া করতে পারছে না। মাথায় মৌনি অনুভব করতে পারছে অসহ্য যন্ত্রনা। চোখ খুলতেই সে দেখতে পারলো আবছা একটা অবয়বকে। ঘরের মৃদু আলোতে সেই অবয়বের কালো ছায়াটাই দেখা যাচ্ছে যে রকিং চেয়ারে বসে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে মৌনিকে দেখতে ব্যস্ত।মৌনি অস্পষ্ট স্বরে বলে ওঠলো………
—র-রিদান!
তখনই মৃদু আলোর ঘরটা হয়ে যায় আলোময়। হ্যাঁ , রকিং চেয়ারে রিদানই বসে আছে। চোখের দৃষ্টি অসম্ভব তীক্ষ্ণ। আর এই দৃষ্টিকেই প্রচন্ড ভয় পায় মৌনি। রিদান বাকা হাসি দিয়ে বলে ওঠলো…….
—বাহ ! তোমার সিক্স সেন্স দেখি ভালোই কাজ করে। মানতে হবে।
মৌনি হাত পা বাঁধা অবস্থায়৷ই পেছাতে থাকে। যদিও রিদান ওর থেকে অনেক দূরে। তবুও অস্থির হয়ে উঠছে মৌনি। ভয়ে যেন তটস্থ হয়ে গিয়েছে। রিদান ঘাত টা হালকা কাত করে মৌনিরদিকে তাকায়।গালে টোল পড়া হাসিটা অনেকের কাছে সৌন্দর্যের বস্তু হলেও রিদানের সেই হাসিটা মৌনির বুক কাপিয়ে তোলে। আকুতির স্বরে রিদানকে বললো……..
—র-রিদান ! ক-কেন এমন ক-করছেন?
রিদান এবার উঠে এসে মৌনির সামনে হাটু ভেঙ্গে বসে। রিদানকে কাছে আসতে দেখেই মৌনি পিছে দেয়াল ঘেষে বসে আছে। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে অনবরত নোনা জল। রিদান ব্যঙ্গ সুরে বললো…….
—ওহহো! মৌনি বেবি দেখি ভয় পেয়ে গেলো। তো…….কেমন লাগছে এখানে……?
একথাটা বলেই রিদান পকেট থেকে একটা সিগারেটের বের করে জ্বালাতে থাকে। মৌনি কিছুই বুঝতে পারছে না যে রিদান ঠিক কি করতে চাচ্ছে।
রিদান আবার জিজ্ঞেস করলো……….
—অনেক উড়াউড়ি করেছো তুমি। আমার জীবনে তোমার মতো এমন দুঃসাহসী মেয়ে দেখিনি। আর এজন্যই তুমি আবার চোখে আটকে গেলে না চাওয়া সত্ত্বেও। You know what……তোমার দুঃসাহসীটা আমার মোটেও পছন্দ না। তুমি আমার সম্পদ আর আমার কথামতো চলবে। আমি চাইলে আজীবন তোমায় আটকে রাখবো আর আমি চাইলেই তোমায় শেষ করবো। তবুও এই জীবনে আমার থেকে তুমি ছাড়া পাবে না।
—কতদিন থাকবো? একদিন না একদিন তো তোমার থেকে ছাড়া পেয়েই যাবো।
.
রিদান হেসে ওঠে। হাসিটা মৌনির কাছে ভালো লাগলো না। কারন রিদানের এই হাসির পেছনে ভয়ঙ্কর কোনো অর্থ আছে। রিদান আচমকাই কষে একটা চড় মারে মৌনিকে। চড়টা এতই জোরে ছিলো যে মৌনির নাক থেকে রক্ত ছিটকে পড়ে। মৌনি আবারও হাইপার হয়ে উঠছে। রিদান গালটা চেপে ধরে মৌনির। চিৎকার করে বলে ওঠে…….
.
—তুই মরে যাবি তবুও আমার কাছ থেকে ছাড়া পাবিনা। তোর এই মানসিক রোগটা কখনও আমায় ভুলতে দেবে না তোকে। (একটা লম্বা নিঃশ্বাস নেয় রিদান) আমি লাস্টবার জিজ্ঞেস করবো Where is the pendrive Damm !
.
রিদানের ধমক শুনে মৌনি কেপে উঠে। রিদানকে বেশ ভয়ঙ্কর দেখাচ্ছে। যেন এই মুহূর্তে উত্তর না দিলে এখনই শেষ করে ফেলবে ওকে। মৌনি কিছুই বলবে না। দরকার পড়লে ও মরে যাবে কিন্ত পেনড্রাইভটা রিদানের হাতে দেবে না। মৌনিকে চুপ থাকতে দেখে রিদান ওর গাল ছেড়ে অন্যদিকে মুখ ফেরায়।
—বলবে না তো তাইনা…..well….
.
জ্বলন্ত সিগারেটটা এবার মৌনির হাতে চেপে ধরতেই চিৎকার দিয়ে ওঠে মৌনি। ব্যথায় ছটফট করে চলছে কিন্ত রিদানের মুখে কোনো ভাবান্তর নেই। যেন পাষাণ হৃদয় নিয়েই সে এ পৃথিবীতে জন্মিয়েছে। মৌনি চিৎকার করে বলে ওঠে…….
—ব-ব্যাথা লাগছে আমার।
—এটা তোমার আগে ভাবা উচিত ছিলো।
মৌনি আর পারছে না সহ্য করতে। চোখের সামনে সবকিছু ঘোলাটে হয়ে আসতেই মৌনি চোখ বন্ধ করে দেয়ালে হেলে পড়ে। রিদান তা দেখে সিগারেটটা নিয়ে আবার রকিং চেয়ারে গিয়ে বসলো।
—So sad মৌনি। তোমার প্রতি আমার বিন্দুমাত্র interest নেই। কিন্ত কি করবো বলো?আমাদের কালো কাজের এতবড় একটা প্রুফ তুমি যোগাড় করেছো তোমাকে কি এমনি এমনি ছেড়ে দেওয়া যাবে? অন্যান্য মেয়েদের যেমন হাল করি , তোমারও ঠিক তেমনই হাল করবো।
.
.
.
১৮.
ঘরে ভারসাম্যহীনভাবে বসে আছে নিভ্র। একপাশে রক্তের ছিটেফোটা আবার থাই ভাঙ্গা দেখে নিভ্রর শ্বাস আটকে আসছে।ঘরের এমন বেগতিক অবস্থা দেখে সোহান, লিজা , নিশু , তুর্য সবাই অবাক। তুর্য একটু সাহস করে বলে ওঠলো……
—মৌ-মৌনির য-যদি কিছু হয়ে……..
–কিছু হবে না মৌনির! আমি ওকে আবার ফিরিয়ে আনবো।
নিভ্র চিৎকার করে বললো। মৌনির চিন্তায় মাথাটা ওর ফেটে গেলেও সে বারবার নিজেকে স্বাভাবিক করার ব্যর্থ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। মৌনি কোথায় আছে , কিভাবে আছে , কে-ই বা ওকে নিয়ে গেলো নিভ্রর কিছুই জানা নেই। হঠাৎই একটু শান্ত হলো সে। পরিস্থিতি কঠিন হলে চিন্তা না করে বুদ্ধি দিয়ে কাজ করতে হবে।
লিজা এবার বললো…….
—কি ভাবছিস তুই !
—আমার ল্যাপটপটা নিয়ে আয় তো।
লিজা ল্যাপটপটা নিয়ে আসতেই নিভ্র ল্যাপটপটা খুলে ইমেইল চেক করলো। সেখানে মৌনি প্রফেসর এনায়েতউল্লাহকে যেই ডেটাবেজটা পাঠিয়েছিলো সেটার ড্রাফ্ট এখনও আছে দেখে মনে একটা আশার আলো জাগে। একে একে সব ডেটাগুলো চেক করেই নিভ্র বুঝলো আসল ঘটনা। কে এই রিদান ! মৌনির সাথে কি ওর সম্পর্ক , কি ওর রোগের এই কারন। ল্যাপটপটা রেখেই নিভ্র সোফায় নিজের গা এলিয়ে দেয়। একদৃষ্টিতে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে নিভ্র মনে সুক্ষ্ণ একটা পরিকল্পনার জাল বুনতে ব্যস্ত।
—কি ভাবছিস নিভ্র?(নিশু)
—মৌনিকে নিয়ে আসার রাস্তা পেয়ে গেছি।
—মানে? কিভাবে?(সোহান)
—খুব বেশি কঠিন না। ওই রিদানের ঠিকানাটা আগে জানতে হবে। তবেই আমার আধা কাজ হয়ে যাবে?
—ম-ম-মানে? ও-ওই রিদান শেখ? ভাই মৌনির আশা ছেড়ে দে। রিদান শেখ খুবই নির্দয়, পাষাণ আর ভয়ঙ্কর একটা মানুষ্। একবার টিভিতে একটা নিউজ দেখেছিলাম যে তার একটা সম্পত্তিতে বস্তি ছিলো বলে কিভাবে বস্তি উজাড় করে দিচ্ছিলো। পলিটিক্যাল পাওয়ার আছে বলে কেউ তার কোনো ক্ষতি করতে পারে না। আর তুই সেখান থেকে মৌনিকে নিয়ে আসবি? (সোহান)
নিভ্র প্রখর চোখে সোহানের দিকে তাকায়।
—রিদান শেখের কাছে হয়তো অনেক পাওয়ার আছে কিন্ত আমি এমন কোনো পাওয়ারই ইউজ করবো না। আমি খেলবো হচ্ছে বিরাট একটা মাইন্ড গেম যেই গেম এর খপ্পড়ে পড়ে রিদান শেখ কিছুই করতে পারবে না।
—কিন্ত কিভাবে?
—ঠান্ডা মাথায় ভাবতে হবে নিশু……….ভায়োলেন্ট মাথায় কখনোই কোনো কিছু করা যায় না।
নিভ্রর স্বাভাবিক কন্ঠ শুনে সবাই যেন ধাপে ধাপে অবাক হচ্ছে। নিজের প্রিয়জন যখন নিখোঁজ হয়ে যায় একজন স্বাভাবিক মানুষ অবশ্যই চিন্তিত হয়। কিন্ত নিভ্রর বিষয়টা সেদিকে ভিন্ন।নিভ্রর তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পর্কে সবাই ভালোমতো জানে তাই এই খেলাটা যে খুবই জমে ওঠবে সে বিষয়ে সবাই নিশ্চিত।
—একটা প্রবলেম আছে?
নিভ্রর কথা শুনে ওরা নিভ্রর দিকে তাকায়।
—কি প্রবলেম? (লিজা)
—মৌনি ! ওর মানসিক অবস্থাটা খুবই অবনতির দিকে যাচ্ছিলো। আর রিদান যদি ওকে physically বা mentally torture করে তবে……….
.
—তবে কি?
একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে নিভ্র। তারপর বলে…….”ওর মেমরি লস হতে পারে।”
.
—কি? (সবাই একসাথে)
—হ্যাঁ।
—আল্লাহই জানে মেয়েটার কি অবস্থা।
নিভ্র নিশ্চুপ। মেয়েটার মায়াবী চেহারাটা ভালোমতই দেখেছে সে। প্রতিটা রাতে ও মানসিক যন্ত্রনায় ছটফট করেছে শুধুমাত্র ওই খারাপ মানুষগুলোর জন্য। মেয়েটার জীবনকে একপ্রকার দুর্বিসহ করে তুলেছিলো। মৌনির শরীরে যদি একটা আঁচও লাগে তবে কাউকে ছাড়বে না সে। নিভ্র একদৃষ্টিতে সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠলো…….
.
— আমি চ্যালেন্জ করলাম ফ্রেন্ডস একদিনের মধ্যেই মৌনিকে ফিরিয়ে আনবো।
.
.
.
.
~চলবে