প্রাণেশ্বর #জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা ৪৬।

0
119

#প্রাণেশ্বর
#জান্নাতুল_ফারিয়া_প্রত্যাশা
৪৬।

হাত পা বাঁধা তার, মুখও বাঁধা কাপড়ে। এমতাবস্থায় হাঁসফাঁস করছে রাজীব। নিজেকে ছাড়ানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু, সম্ভব না। এই হাত পায়ের বাঁধন খোলা কোনোভাবেই সম্ভব না। রাজীবের শরীর কাঁপছে রাগে। সে জানে, এই কাজ মেহতাবের। সে একবার নিজেকে ছাড়াতে পারলে, মেহতাবকে খু ন করে তবেই ফিরবে। প্রতিজ্ঞাটা খুব শক্ত ভাবে করল সে।
মেহতাব ঘরে প্রবেশ করল তখনই। মেঝেতে পড়ে থাকা রাজীবকে পা দিয়ে লাথি মেরে বলল,

‘কীরে, কেমন লাগছে?’

রাজীব তাকে দেখে জ্বলে ওঠে। পানি বিহীন মাছের মতো ছটফটাতে থাকে নিজেকে মুক্ত করার জন্য। মেহতাব হাসে তা দেখে। বলে,

‘আহারে! তোকে দেখে না বড্ড কষ্ট হচ্ছে আমার।’

রাজীব যেন চোখ দিয়েই ভস্ম করে দিতে চায়ছে মেহতাবকে। মেহতাব তার সেই চাহনি দেখে আরো একবার লাথি দেয়। চিবিয়ে চিবিয়ে বলে,

‘একটু পর তাকানোর জন্য আর ঐ চোখ দুটোও থাকবে না। তনুকে কোথায় রেখেছিস বল?’

প্রশ্ন করার পর পরই মেহতাব তার মুখ থেকে কাপড়টা খুলে দেয়। সঙ্গে সঙ্গেই গালি দিয়ে উঠে রাজীব,

‘শু য়োরের বাচ্চা, তোর সাহস হলো কী করে আমাকে আটকে রাখার? তুই জানিস না আমি তোর কী অবস্থা করব।’

মেহতাব তার পেট বরাবর আরো একবার লাথি মেরে বলে উঠে,

‘নিজের অবস্থার কথা আগে ভাব, শালা। তনুর খবর না পাওয়া অবধি জ্যান্ত লা শ বানিয়ে রেখে দিব।’

রাজীব গর্জে উঠে বলে,

‘বলব না আমি, কী করবি তুই?’

মেহতাবের রাগ আকাশ ছুঁলো। সে চেঁচিয়ে ডাকল ইশফাককে। ইশফাক ছুটে এল বাইরে থেকে। মেহতাব বলল,

‘চাপাতি নিয়ে এসো এক্ষুনি।’

ইশফাক দ্রুত চাপাতি এনে মেহতাবের হাতে দেয়। মেহতাব চাপাতিটা রাজীবের মুখ বরাবর ধরে জিজ্ঞেস করে,

‘বলবি না তনু কোথায়?’

রাজীব চোখ মুখ খিঁচে বলল,

‘না।’

মেহতাব আর বিলম্ব করল না। সঙ্গে সঙ্গেই কো প বসাল রাজীবের ডান হাতের উপর। গলগলিয়ে রক্ত পড়তে আরম্ভ করল সেখান থেকে। রাজীব আঁতকে ওঠে যেন। রেগে যায় আরো। নিজেকে ছাড়ানোর জন্য ছটফট জারি রাখে। মেহতাব ফের প্রশ্ন করে,

‘বলবি না?’

‘না।’

রাজীব এখনো তার সিদ্ধান্তে অটল। মেহতাব চোখ বোজে নিশ্বাস নেয়। তারপর ইশফাকের দিকে চেয়ে বলে,

‘এর হাতের বাঁধন খুলে বাম হাতটা চেপে ধরো।’

ইশফাক তাই করল। হাতের বাঁধন খোলার সাথে সাথেই রাজীব দ্রুত মেহতাবকে আঘাত করতে চায়ল। তবে, পারল না। ডান হাতটা চেপে ধরে ইশফাক। বাম হাতে আঘাত পেয়েছে বলে সেই হাতে আর জোর পাচ্ছে না সে। মেহতাব এগিয়ে গিয়ে তার বাম হাতটা উঁচু করে ধরে। কাটা অংশে আবার কো প বসায়। এবার চেঁচিয়ে উঠে রাজীব। প্রথমবারের আকস্মিক আঘাতটা সে বুঝে উঠতে না পারলেও এবার বেশ বড়ো সড়ো ব্যথাই অনুভব করছে সে। সে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য পাগলের মতো হাত পা ছুড়তে থাকে। মেহতাব শান্ত স্বরে শুধায়,

‘তনু কোথায়? বললে বেঁচে যাবি।’

রাজীব হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,

‘জানি না আমি।’

মেহতাব আর নিজেকে সংযত রাখতে পারে না। সে নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে তৃতীয় কো প বসায় একই জায়গায়। এইবার হাড়ে গিয়ে লাগে বোধ হয়। হাতটা বাঁকা হয়ে যায় এতে। অসহ্য যন্ত্রণায় গগনবিদারি চিৎকার দেয় রাজীব। তার ছটফটের মাত্রা আরো বেড়ে যায়। মেহতাব বলে,

‘তনু কোথায়, বল? ছেড়ে দিব তোকে।’

রাজীব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। র ক্তের বন্যা বইছে যেন। সে আর এই যন্ত্রণা সহ্য করতে পারছে না। চোখে নাকে পানি ছুটেছে। মেহতাব নরম গলায় বলল,

‘বলে দে, রাজীব। ছেড়ে দিব। অযথা কেন নিজের জীবন নিয়ে এভাবে খেলছিস?’

রাজীব বড়ো বড়ো শ্বাস নিল। দম আটকে আসছে তার। রুদ্ধশ্বাস কন্ঠে বলল,

‘আমার বাড়িতে, গোপন কক্ষে।’

মেহতাব আরো একবার আস্তে করে কো প বসাল। তারপর লাথি মেরে দূরে সরিয়ে দিল তাকে। ইশফাককে বলল,

‘ওর একটা ছেলেকে না টাকা খাইয়েছ, তাকে গিয়ে বলো তাদের ভাই বলেছে, তনুকে এখানে এনে রেখে যাওয়ার জন্য। আর শোনো, তনুকে হাতে পাওয়ার পর ঐ ছেলেটাকেও মে রে দিবে; আমি কোনো ঝামেলা রাখতে চাই না।’

ইশফাক উঠে দাঁড়ায়। মাথা নাড়িয়ে বলে,

‘ঠিক আছে।’

অতঃপর বেরিয়ে পড়ে ইশফাক। মেহতাব পায়ের উপর পা তুলে বসে। তার সম্মুখে পড়ে থাকা রাজীবের জ্ঞানহীন অসাড় শরীরটাকে দেখে আর ভাবে, “অনেকদিন হলো গরীব দুঃখী খাওয়ানো হচ্ছে না। আগামীকাল মহলে ফিরে আরেকটা আয়োজন করতে হবে।”

মেহতাবের কথা মতো সব কাজ সম্পন্ন হয়। রাজীবের সেই টাকা খাওয়া ছেলে ইশফাকের কথামতো মিথ্যে বলে তনুকাকে সেই বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসে। যদিও তনুকা আসতে চায়ছিল না তবে, গেইটের বাইরে এসে ইশফাককে দেখে আশ্বস্ত হয় সে। বুঝে যায়, মেহতাব তাকে বাঁচিয়ে নিয়েছে।

তনুকাকে দেখেই ঝাপটে জড়িয়ে ধরে মেহতাব। এত শক্ত ভাবে ধরে যে, তনুকা নিশ্বাস নেওয়ারও ফুরসত পাচ্ছে না। মেহতাব বিধ্বস্ত স্বরে বলে উঠে,

‘আমাকে ক্ষমা করো, বিবিজান। আমি তোমাকে পর্যাপ্ত সুরক্ষা দিতে পারিনি।’

‘এই গ্রামে আপনার এত বড়ো শত্রু আছে, আগে বলেননি কেন আমায়?’

‘ভাবেনি ঐ হারাম’জাদার এত বড়ো কলিজা হবে। তবে, চিন্তা করো না ওর এই সাহসের উত্তম প্রতিদান দিব আমি।’

তনুকা চিন্তিত স্বরে জিজ্ঞেস করল,

‘উনি এখন কোথায়?’

‘আমার কাছে বন্দি আছে।’

তনুকা বিস্ফোরিত চোখে চেয়ে বলল,

‘সেকী! কীভাবে করলেন এসব?’

‘ইশফাক সাহায্য করেছিল। এখন এসব বাদ দাও। আর ও তোমার সাথে কোনোপ্রকার খারাপ ব্যবহার করেনি তো?’

তনুকা ইতস্তত সুরে বলল,

‘করতে চেয়েছিল তবে, আমিও চড় মেরে একদম সোজা করে দিয়েছি।’

মেহতাবের চোয়াল তাতেই শক্ত হয়। রাজীবকে নিজ হাতে টুকরো টুকরো করা না অবধি কলিজা ঠান্ডা হবে না তার। সে তনুকার গালে হাত রাখে। নরম সুরে বলে,

‘তুমি ভেতরে গিয়ে বিশ্রাম নাও। ইশফাক ভেতরে খাবার রেখে দিয়েছে, খেয়ে নিও। আমি এক ঘন্টা বাদে আসছি।’

তনুকা উদ্বিগ্ন সুরে প্রশ্ন করে,

‘আপনি এখন কোথায় যাবেন?’

‘আশেপাশেই আছি। তুমি নিশ্চিন্তে গৃহের ভেতরে থাকতে পারো। আমি সেখানে প্রহরীর ব্যবস্থা করেছি।’

মেহতাব তনুকাকে রেখে তার অতি জরুরি কাজে যায়। তনুকা ঘরে বসে থাকে একাই। বাইরে প্রহরী আছেন দুজন। ভেতরে খাবার পানির সবকিছুর চমৎকার ব্যবস্থা আছে। সাথে চারদিক পরিপাটি করে সাজানো। তনুকা বিছানায় হেলান দিয়ে বসে। তার মন বলছে, রাজীব বোধ হয় আর বাঁচবে না।

প্রায় ঘন্টা খানিক বাদে মেহতাব তার অস্থায়ী আবাসে ফিরে আসে। তনুকা ততক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে। মেহতাব ক্লান্তি ভরা দৃষ্টিতে তার প্রেয়সীকে পরখ করে গভীর মনোযোগে। এত মায়া কেন মেয়েটার চোখে মুখে? এই মায়ার ইন্দ্রজাল’ই তো কাটিয়ে উঠতে পারছে না সে। মেহতাব তার শিউরে বসে। আলতো হাতে তার গাল স্পর্শ করে। এগিয়ে এসে কপালে চুম্বন করে। তারপর সরে আসে আবার। কিছুটা দূরত্ব রেখে বসে আনমনেই বলে উঠে,

‘আমার ভালোবাসায় এইটুকুও খাদ ছিল না, তনু। তাও তুমি আমায় ঠকালে; আমি এখন কী করে ক্ষমা করব তোমায়, বলো তো? আমি যে বড্ড পাষাণ, বড্ড পাষাণ, তনু।’

চলবে…..

(পর্ব ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত।)

ছবি: রত্নাবু❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here