গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি #পর্ব৪২ Raiha_Zubair_Ripti

0
72

#গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#পর্ব৪২
Raiha_Zubair_Ripti

সারা বাড়ি জুড়ে মিষ্টির সমাহার। রুয়াত কে সামনে বসিয়ে একের পর একজন মিষ্টি খাইয়ে দিয়ে যাচ্ছে। রুয়াত পারছে না তো এখনই উল্টি দিয়ে সব বের করে দিত৷ রুয়াতের মা মিষ্টি তুলে খাইয়ে দিতে চাইলে রুয়াত পাশে থাকা শাফায়াত এর হাত খামচে ধরে অসহায় চোখে তাকায়। ইশারায় বুঝায়- আপনার জন্য এসব সহ্য করতে হচ্ছে আমায়।

শাফায়াত ইশারায় লাস্ট মিষ্টি টা মুখে তুলে নিতে বলে। রুয়াত নিঃশ্বাস বন্ধ করে মিষ্টি মুখে তুলে নেয়। তারপর আর এক মুহূর্ত ও বসে থাকে না৷ হন্তদন্ত হয়ে রুমে চলে আসে। শাফায়াত ও রুয়াতের পেছন পেছন চলে আসে। রুমের ভেতর ঢুকে দেখে রুয়াত শরীরের ওড়না ফেলে ফুল স্পিডে ফ্যান ছেড়ে সটান হয়ে শুয়ে আছে। শাফায়াত পাশে বসে বলল-
-“ খারাপ লাগছে এখনও?
রুয়াত কিছু বললো না। শাফায়াত রুয়াতের মাথয় হাত বুলিয়ে দিলো। রুয়াত বালিশ থেকে মাথা তুলে শাফায়াতের কোলে রাখলো। তারপর চোখ বন্ধ করে বলল-
-“ ফাস্ট টাইম আজ এতো মিষ্টি খেলাম। ফিলিংস টা ভীষণ বাজে লাগছে।
-“ কত বড় খুশির খবর বলো৷ মিষ্টি মুখ করাবে না?
-“ আপনাকে করাতো৷ আপনি তো বাবা।
-“ বাচ্চা টা বুঝি আমার পেটে আছে?
-“ না আমার পেটে। কিন্তু তাতে কি? বাবা হন তো আপনি। আর আমি আপনি তো একই আত্মা এক প্রাণ। তাই না?
শাফায়াত রুয়াতের গাল টেনে বলল-
-“ হু। তোমার না শরীর খারাপ লাগছে? চুপচাপ শুয়ে থাকো। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।
রুয়াত ভালো করে শুয়ে বলল-
-“ বাবুর জন্যই এতো এক্সট্রা কেয়ার বুঝি তো।
-“ বাহ্ আস্তে আস্তে বড় হচ্ছো। সব বুঝো দেখছি গুড!
রুয়াত মুখ গুমরো করে বলল-
-“ তারমানে সত্যি! কথাই নেই আপনার সাথে হু। রুয়াত শাফায়াতের কোল থেকে মাথা সরিয়ে নিতে চাইলে শাফায়াত টেনে আগের জায়গায় নিয়ে এসে বলে-
-“ চুপচাপ শুয়ে থাকো। বিকেলে কিন্তু হসপিটালে যাব।
-“ আপনি যে চেক-আপ করার আগেই মিষ্টি খাওয়ালেন সবাই কে। চেক-আপ করার পর ডক্টর যদি বলে আমি প্রেগন্যান্ট না তখন কি হবে?
-“ আরে তুমি প্রেগন্যান্ট। দেখলে না দুটো দাগ উঠেছিল। আর তোমার শরীর তুমি বুঝো না?
-“ বুঝতে পারলে তো ঘটা করে রোমান্টিক হয়ে বলতাম।
-“ হয়েছে হয়েছে চোখ বুজো ভালো লাগবে।

রজনী সাদমান নিজেদের রুমের বেলকনিতে বসে আছে। রজনী বেশ খুশি রুয়াত মা হচ্ছে শুনে। আচ্ছা রুয়াত কি তাকে দিবে তার বাচ্চা টা? রুয়াত তো বিয়ের আগে কথা দিয়েছিল বাচ্চা হলে তাকে দিবে। কথাটা মনে আসতেই মুখে আধার নেমে আসলো। চিন্তিত হলো মুখমণ্ডল। সাদমান হটাৎ রজনীর মুখের ভঙ্গিমা পাল্টে যেতে দেখে বলল-
-“ কি হয়েছে রজনী?
রজনী তাকালো সাদমানের দিকে। বলল-
-“ আপনাকে একটা কথা বলি?
-“ হু বলুন।
-“ রুয়াত বিয়ের আগে বলেছিল বাচ্চা টা আমাকে দিয়ে দিবে। আচ্ছা ও কি সত্যি দিবে বাচ্চা টা আমায়?
সাদমান ভ্রু কুঁচকালো।
-“ রুয়াত কেনো তার বাচ্চা আপনাকে দিবে?
-“ আমি তো মা হতে পারবো না। রুয়াত সেজন্য বলেছিল তার বিয়ের পর বেবি হলে তাকে আমায় দিবে।
-“ এটা হয় না রজনী। ব্রো তার বাচ্চাকে ভীষণ ভালোবাসে। দেখছো না নিউজ টা শোনামাত্র ই কতটা খুশি। যখন পৃথিবীতে আসবে তখন না জানি তার খুশির পরিমান বেড়ে যায়। আর আমরা তো আমেরিকা চলে যাচ্ছি। বেস্ট চিকিৎসা আপনার করাবো। আমরা অবশ্যই বাবা মা হবো। তবে অন্য কারো কোল খালি করে নয়। রুয়াতে পৃথিবী তখন আপনি ছিলেন। তাই এটা বলে ফেলেছে। তবে এখন তার স্বামী সংসার আছে। এই কথাটা মনে করাবেন না তাকে। মনে থাকবে?
-“ হু মনে থাকবে।

——————

-“ তোর বোন কিন্তু একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করছে নেহাল। হুট করে এমন বদলে গেলো কেনো? ভাই দোষ টা কি আমার সেটা তো বলুক। তারপর দেখুক আমি নিজেকে বদলে ফেলি কি না ফেলি। তা না করে কি শুরু করছে তোর বোন এসব?
নেহাল চুপচাপ রোহানের কথা শুনে যাচ্ছে শুধু। রোহান নেহাল কে কিছু বলতে না দেখে নেহালের মাথার চুল টেনে ধরে বলল-
-“ শা’লা বোবার মতো বসে আছিস কেনো? মুখে বুলি কই? কিছু বল।
নেহাল রোহানের হাত মাথা থেকে সরাতে সরাতে বলল-
-“ কি বলবো আমি? নীতি এমন করছে কেনো সেটা নীতি কে গিয়ে জিজ্ঞেস কর। আমাকে করছিস কেনো?
-“ তোরই তো বোন।
-“ সো হোয়াট? তুই গিয়ে কথা বল।
-“ নিয়ে আয় তোর বোন কে।
-“ বিকেলে আনবো নি। এখন একটু মা’ল টাল বের কর। খেয়ে টাল হই।
-“ টয়লেট থেকে এনে দেই হারা’মজাদা খেয়ে টাল হয়ে থাক। তুই বন্ধু নাকি শত্রু বল তো। দেখছিস চিন্তায় আমার অবস্থা যাচ্ছে তাই। আর তুই নীরব!
-“ চিন্তা তোর মাথা তোর। আমার কি করার তাতে? কথা কম বলে নিয়ে আয়। তা না হলে কিন্তু নীতি কে আনবো না।
-“ ব্ল্যাকমেইল করছিস এখন আবার?
-“ না সু্যোগে সৎ ব্যবহার শুধু। যা নিয়ে আয়।

রোহান ড্রিংকস এনে নেহালের সামনে রাখলো। নেহাল গ্লাসে ঢেলে খেতে লাগলো। বিকেল হলে নীতি কে ফোন করে বাইপাসে আসতে বলে সাথে এটাও বলে রোহান অসুস্থ । নীতি কথাটা শোনামাত্র ই ছুটে চলে আসে। বাইপাস এসে নেহাল কে ক্রমাগত ফোন করলে হুট করে পেছন থেকে কেউ ফোন টা টেনে নিয়ে যায়। নীতি পেছন ফিরে। রোহান কে দেখে বলে-
-“ আ…আপনি ঠ..ঠিক আছেন তো? আবার জ্বর বাঁধিয়েছেন নিশ্চয়ই?
রোহান পলকহীন ভাবে তাকিয়ে রইলো নীতির দিকে। এই তো সেই চেনা চোখ। এই তো সেই অস্থিরতা তাকে ঘিরে। এই তো সেই চোখ যে চোখ বলছে তার ভালোবাসার কথা। রোহান ঠান্ডা কন্ঠে বলল-
-“ আমি ঠিক আছি। অস্থির হোস না। ভালোবাসিস আমায় বল। ট্রাস্ট মি আমি তোর মনের মতো হয়ে যাব।

নীতি সম্বিৎ ফিরে পেলো। তার মানে মিথ্যা কথা বলে তাকে ডেকে আনা হইছে!
-“ সত্যি টা শুনতে চান?
-“ হু।
-“ আমি আপনাকে ভালোবাসি, কিন্তু আপনি আমাকে কষ্ট দেন অনেক। আপনার আচরণ আমাকে খুব বাজে ভাবে আঘাত করে। আমি আপনাকে ভালোবাসি বলেই অনেক সময় কিছু বলতে পারি না। আপনাকে ভালোবেসে আমিই বেশি কষ্ট পাই। আপনাকে ভালোবাসার শাস্তি আপনি শুধু আমাকেই দেন। আমি তো ভালোবাসতে গিয়েছিলাম, কষ্ট পেতে না। ভালোবাসতে থাকি। আপনার কারণেই আপনার থেকে আমার মন উঠে গেছে। তাই এখন আর আমি আপনাকে ভালোবাসি না।
-“ মিথ্যা বলছিস।
-“ মিথ্যা কেনো বলবো?
-“ অভিমানে।
-“ অভিমান কেনো হবে? কার উপরই বা হবে?
-“ আমার উপরে।
-“ হু আর ইউ? নিজেকে এতোটা গুরত্বপূর্ণ ভাববেন আমার লাইফে।
-“ ভেবে বসে আছি অলরেডি। তাই বলছি বিয়ে টা ভেঙে দে। চল আমরা কাজি অফিসে গিয়ে বিয়ে করি। সাক্ষী হিসেবে তোর ভাই থাকবে।
-“ আমি আসছি।
-“ সমস্যা টা কি সেটা তো বল।
নীতি পেছন ফিরে বলল-
-“ ভালোবাসেন আমায়?
রোহান থমকে গেলো। ভালোবাসা! শব্দ টা তো অনেক পরিচিত। বের হচ্ছে না কেনো মুখ থেকে? নীতি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চলে যেতে নিলে রোহান পেছন থেকে বলে উঠে –
-“ শূন্যতা অনুভব করা যদি ভালোবাসা হয়। তাহলে আমি প্রতি মুহূর্তে তোকে ভালোবাসি। কারন আমি প্রতি মূহুর্তে তোকে অনুভব করি। আর ভালোবাসার মানুষটাকে অনুভব করবো এটাই তো সত্যিকারের ভালোবাসা।

নীতি আর তাকালো না দাঁড়িয়ে পরেছিল। তবে যেতে যেতে বলে গেল-
-“ এখন আর কিছু হবার নয় আপনার আর আমার মধ্যে ।
রোহান এবার রেগে বলল-
-“ ভালো হইছিলাম না? ঠিক যতটুকু ভালো হইছিলাম ততটুকু খারাপ হবো এখন আমি। তুই কি ভাবছিস এতো সহজ? তুই আমাকে ছেড়ে চলে যাবি আর আমি তাকায় তাকায় দেখবো?এতো সোজা? দেখি তোকে অন্য জায়গায় কি করে বিয়ে দেয়। তুই আমার ছিলা না? তুই আমারই থাকবি।

নীতি প্রতিত্তোরে তাচ্ছিল্যের একটা হাসি রোহান কে উপহার দিয়ে চলে গেলো।

#চলবে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here