#চৈত্র_শেষে
#নাজমুন_বৃষ্টি
#পর্ব ১৫
ভোরের আজান পড়ছে। জানালার বাইরে অন্ধকারের আড়ালে হাল্কা হাল্কা আলো দেখা যাচ্ছে। ধীরে ধীরে ভোর ফুটতে শুরু করেছে। অনুর ঘুম আর এলো না। সে এদিক ওদিক নড়াচড়া করে শোয়া থেকে উঠে বসলো। পাশেই রিমা ঘুমাচ্ছে। অনু কাউকে ডাকলো না। শহুরে মানুষদের এখনো সকাল হয়নি। এমনিতেও এখনো মাত্র আলোর রেখা আসছে। ভালোমতো ভোরও হয়নি। অনু চুপচাপ গায়ে উড়না দিয়ে রুম থেকে পা বাড়ালো। সামনের দরজা খুলে সে বারান্দায় গিয়ে বসলো।
উঠানে বড়ো একটা কাঁঠালগাছ আছে। কাঁঠালগাছের বড়ো ফাঁকফোকর থেকে পাখিদের কিছিরমিচির ডাক ভেসে আসছে। গ্রামে ভোর হওয়ার সাথে সাথে এই কলরবটা অনুর ভারী পছন্দ। সারারাত তার ঘুম হয়নি। নিজের খাট, রুম ছাড়া চোখে ঘুম যেন ধরাই দিচ্ছে না। আশ্চর্য! আগে এই অভ্যাসগুলো থাকলেও বিয়ের দিন থেকে তো অভ্যাসটা পাল্টে গিয়েছিল। বিয়ের পরে থেকে তার যেকোনো জায়গায়ই ঘুম চলে আসতো। সে ছিল ভীষণ ঘুমকাতুরে একটা মেয়ে। অথচ আজ সারারাত মিলে দুঘন্টা ঘুমও তার হয়নি। নিজেরই অজান্তে তার আগের অভ্যাসগুলো যেন ফিরে আসছে।
অনু বারান্দার মেঝেতে বসে দুহাতের উপর মুখ গুঁজে উঠানের দিকে তাকিয়ে রইল।
রাতের ঘটনা চোখের সামনে ভেসে উঠল।
অনু তখন ফিরে তাকাতেই ছায়াটা এগিয়ে এলো। ছায়াটা আর কারোর নয়। স্বয়ং সাহিল ভাইয়ের।
সাহিল ভাই এগিয়ে এসে অনুর পাশে দাঁড়ালো। দাঁড়িয়ে শুধালো,
“ভালো আছো তুমি?”
“জি।” বলেই অনু চলে আসতে নিতেই সাহিল শুধালো,
“আগের অভ্যাসটা এখনো পাল্টাওনি?”
“ভুল বললেন সাহিল ভাই। অনেক কিছুই পাল্টিয়ে নিয়েছি।”
“ঘুমিয়ে পড়ুন। শুভরাত্রি।” বলেই অনু চলে এলো। সেসময় সে চলে এসেছিলো।কোনো মনকে পাত্তা দেয়নি। মনকে বুঝিয়েছে। অবাধ্য মনকে তখনই না সামলালে ঘোর পাপ হবে। যে পাপ একবার না বুঝে করেছে সে পাপ আর করবে না সে।
অনু দ-কারে বসে দুহাতের উপর মাথা রেখে ঠায় উঠানের দিকে তাকিয়ে রইল। এখানে থাকলে সে তার অবাধ্য মনকে সামলাতে পারবে না। তার চেয়ে বরং তার চলে যাওয়া উচিত। অনু উঠে দাঁড়িয়ে পুকুরপারের দিকে এগিয়ে গেল। এইবাড়িতে এই পুকুরটা অনুর ভীষণ পছন্দের ছিল। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এখন আর এসব টানে না।
সাহিল বের হতে গিয়ে দরজা খোলা দেখে চমকালো। এতো ভোর বেলায় কে উঠবে! এখানে তো কেউ এতো স্বাস্থ্য সচেতন না যে এতো তাড়াতাড়ি উঠে হাটাহাটি করবে! সাহিল এগিয়ে গেল।
বের হতে নিতেই দেখলো পুকুরপারে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে। সাহিল পেছনে দেখে বুঝতে পারলো না। সে ভাবলো রিমা।
সে এগিয়ে গেল।
“কিরে রিমা? এতো তাড়াতাড়ি কখন থেকে উঠা শিখলি?”
অনু ফিরে তাকালো। দেখলো সাহিল উৎসুক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
কতগুলো বছর পরে দুজন মুখোমুখি!পুরো ভোরের আলোয় স্পষ্ট। কিন্তু স্পষ্ট নেই সেই আগের সম্পর্কটা।
অনু চোখ নামিয়ে নিল।
সাহিল মনে মনে আওড়ালো, “কত বড়ো হয়ে গেল মেয়েটা!”
অনু চলে আসতে নিতেই সাহিল শুধালো,
“এই কী তুমি! হাঁটতে যাবে?”
“না ”
“এতো তাড়াতাড়ি উঠলে যে?”
“ঘুম ভেঙে গিয়েছে।”
“আদৌ ঘুমিয়েছো?”
অনু চমকে তাকালো। সাহিল কীভাবে জানলো যে সে ঘুমায়নি!
“না ঘুমিয়েছি।”
“তাহলে চোখ লালচে কেন?”
“চুলকিয়েছি তাই।”
“কান্না করেছো!”
অনু হাসলো। না, কারোর কথায় নয়। নিজের ভাগ্যের উপর হাসি এলো এই ভেবে যে..এতদিনে কেউ তার মন পড়তে পেরেছে কিন্তু সেই পরিস্থিতিটাই আর নেই। একটা সময় তো অনু এটাই চাইতো যে কেউ তাকে বুঝুক। না বললেও মন পড়ে নিক। অথচ আজ কেউ একজন পড়েছে, এবং সেই একজন একসময়ের অনুরই আশার মানুষ কিন্তু মাঝখানে আজ সেই সময়টা নেই। চাওয়ার সময়টা অনেক আগেই পেরিয়ে গিয়েছে।
সাহিল এগিয়ে এলো। আবার জিজ্ঞেস করল,
“কী হলো? বললে না তো!”
“না,কেন করবো?”
“দুনিয়াতে তো কেন’র উত্তর অনেক হয়। যে আসল সেই তো জানবে।”
“না কাঁদিনি।”
সাহিল আর প্রতুত্তর করলো না। সে বুঝেছে যে অনু কেঁদেছে।
অনু চলে আসতেই সাহিল জানালো,
“চলো হাটবে। ভালো লাগবে।”
অনু নিজের অবাধ্য মনকে আর বাধ্য করতে পারলো না। ইচ্ছেও হলো না। গ্রামের এই এমন একটা সকাল পাওয়ার তার তীব্র লোভ ছিল। সে অগত্যা এগিয়ে গেল।
——–
আদিত্য অ্যালার্ম এর শব্দে ঘুম থেকে উঠে বসলো। পাশে চোখ যেতেই দেখলো রিহি বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। রিহির মুখশ্রীর জায়গায় অনুর চেহারা ভেসে উঠল। আদিত্যর বুক ধক করে উঠল। মেয়েটাকে সে প্রতি পদে পদে খুঁজে চলেছে যেন!
আদিত্য খাট ছেড়ে উঠে জানালার পর্দা টেনে দিল। আগে এই কাজটা অনুই করতো। আদিত্য পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। ধীরে ধীরে সূর্য উঁকি দিচ্ছে।
ধ্যান ভাঙলো রিহির আওয়াজে। সে বিরক্তিসূচক আওয়াজের সহিত শুধালো,
“জানালার পর্দা টানো।”
“আমি অফিস যাবো।”
“তো যাও না, কে ধরে রেখেছে? পর্দা টেনে দাও। আমি ঘুমাবো। বিরক্ত করো না।” বলেই রিহি পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো।
আর আদিত্য পর্দা দিয়ে ঘর অন্ধকার করে নিল। আগে ঘুম থেকে উঠার জন্য কোনো অ্যালার্ম প্রয়োজন হতো না। অনুই ডেকে দিতো। আদিত্য ঘুম থেকে উঠে কোনোদিন অনুকে শুয়ে থাকতে দেখেনি। উঠেই নাস্তা বানিয়ে তাকে ডাকতে আসতো। রিহির জায়গায় সে থাকতো। অনু ডাকতে এলে আদিত্য বিরক্ত হতো। আর আজ! আদিত্য তার নিজেরই অজান্তে সে অনুকে মিস করে চলেছে। যে আর ফিরে আসার নয়। সময়টা হারিয়ে গিয়েছে।
সে রান্নাঘরের দিকে পা বাড়াতেই দেখলো আছিয়া বেগম রুটি বানাচ্ছে। আদিত্যর খারাপ লাগলো। বৃদ্ধ মা কাজ করছে আর এই সময়েও রিহি এভাবে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। অথচ অনু থাকাকালীন মাকে কোনোদিন রান্নাঘরে আসতে হয়নি। আর না তাকে অফিসের সময়ে এভাবে খালি পেটে বসে থাকতে হয়েছে! আদিত্য নিজের ভাগ্যের উপর হাসলো। রিহিকে তো সে আর তার মা নিজেরাই এনেছিল তবে আজ কেন এতো বিতৃষ্ণা! সে নিজেই তো স্বার্থপর হয়েছিল। এখনো নিজের স্বার্থের জন্যই তো অনুকে খুঁজে চলেছে। আদিত্য হাসলো। মানুষ বড়োই অদ্ভুত জীব! স্বার্থের বাইরে কিছু হলে তা কেউ সহ্য করতে পারে না।
#চলবে ইন শা আল্লাহ।
(আসসালামু আলাইকুম। অনেকদিন পরে আবারো। গল্প কাল দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়নি। কারণ মানুষের এই পরিস্থিতিতে গল্প লেখার মানসিকতা টানেনি। আমি জানি, আপনাদেরও হয়ত টানেনি। আর আমি অন্যায় করেছি, আমার দুইটা পরীক্ষা এই আবহাওয়ার কারণে স্থগিত হয়েছিল কিন্তু আমি সময় থাকা সত্ত্বেও গল্প দিইনি। কারণ আমাদের আশেপাশের এতো মানুষের এই অবস্থা আর আমি সেই অবস্থায় শুকনো জায়গায় বসে গল্প দিবো!এটা তে আমার লেখার মানসিকতা আসেনি। এতো এতো নিউস দেখে লেখার বিবেক টানেনি। এখনো বাধ্য হয়েই দিচ্ছি। কিন্তু মন পড়ে আছে ওই মানুষগুলোর কাছে। না জানি উনাদের কত কষ্ট হচ্ছে! আল্লাহ উনাদের পরিস্থিতি ভালো করে দিক। দেশ থেকে এরূপ পরিস্থিতি বদলে যাক। খুব তাড়াতাড়ি ভালো সময় ফিরে আসুক। আল্লাহ সবাইকে রক্ষা করুক। সবাই ভালো থাকবেন।)